‘ট্রাভেল ডকুমেন্ট’ হিসেবে বাংলাদেশের পাসপোর্ট এখন বিশ্বের সব দেশের জন্য বৈধ।
পাসপোর্টে ‘ইসরায়েল ছাড়া এই পাসপোর্ট বিশ্বের সব দেশের জন্য বৈধ’ (দিস পাসপোর্ট ইজ ভ্যালিড ফর অল কান্ট্রিজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড এক্সসেপ্ট ইসরায়েল) কথাটি বদলে এখন লেখা হচ্ছে, ‘এই পাসপোর্ট বিশ্বের সব দেশের জন্য বৈধ (দিস পাসপোর্ট ইজ ভ্যালিড ফর অল কান্ট্রিজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড)।’
‘ইসরায়েল ছাড়া’ শব্দ দুটি বাদ পড়ার মধ্য দিয়ে ভ্রমণের জন্য সব দেশ উন্মুক্ত হয়ে গেছে বলে মনে করেন কূটনীতিক বিশ্লেষকরা। তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, বাংলাদেশি নাগরিকরা ইসরায়েল ভ্রমণ করতে পারবেন না।
তাহলে কেন এই পরিবর্তন
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, ই-পাসপোর্টের আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করতে নেয়া হয়েছে এই সিদ্ধান্ত।
পাসপোর্টে কবে থেকে এ পরিবর্তন আনা হয়েছে নির্দিষ্ট করে দিন, তারিখ বলতে না পারলেও মন্ত্রী বলেন, ‘এটা অনেক দিন ধরে হয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল পাসপোর্টে তো এগুলো লেখা থাকে না। সে জন্য ইন্টারন্যাশনাল পাসপোর্টে যেভাবে থাকে আমরা সেভাবেই করেছি।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের কণ্ঠেও ধ্বনিত হয় একই সুর। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘এটা আমি শুনেছি। শোনার পরে আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করেছি। এটা প্রায় ছয় মাস আগে নতুন পাসপোর্ট যখন অর্ডার দেয়া হয়, তখন টু মেইনটেইন স্ট্যান্ডার্ড, অনেকগুলো পাসপোর্ট তারা দেখেছেন।
দুনিয়ার কোনো পাসপোর্টে ‘এক্সসেপ্ট’-এর মতো বিষয়টি নেই দাবি করে মোমেন আরও বলেন, ‘পৃথিবীর আর কোনো দেশের পাসপোর্টে এ রকম লেখা থাকে না। সে জন্য এটা উঠিয়ে দেয়া হয়েছে।’
ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. আইয়ুব চৌধুরীও বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনার আলোকে পাসপোর্টের আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখার স্বার্থে এটা বাদ দেয়া হয়েছে।’
ওই মুহূর্তে তিনি অফিসে না থাকায় ঠিক কবে থেকে বাদ দেয়া হয়েছে, সেটি নিশ্চিত করে জানাতে পারেননি আইয়ুব।
তিনি বলেন, ‘এটা আগেই বাদ দেয়া হয়েছে। ইমপ্লিমেন্ট হতে তো এক বছর সময় লেগে যায়।’
আধুনিক পাসপোর্টে এসব কথা লেখা থাকা না থাকা তেমন কোনো প্রভাব ফেলে না বলে দাবি করেন ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।
তিনি বলেন, ‘আমাদের পাসপোর্ট আছে দুইটা। পাসপোর্ট রিড করা হয়, রিডিং পড়ে নয়। আপনি যখন ভিসার জন্য অ্যাপ্লাই করেন, একটা আছে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট। মেশিন রিড করে। সেখানে এ ধরনের কোনো কিছু নাই।
‘আরেকটা আছে ই-পাসপোর্ট। সেটা ইলেক্ট্রনিক চিপ থেকে রিড করে। সেখানেও নেই। আইসিএও নিয়ম অনুযায়ী, যেগুলো থাকার কথা সেগুলো আছে। আপনার পরিচয়, আপনার বায়োমেট্রিক-সেগুলো আছে।’
পাসপোর্টে অনেক কিছু লেখা থাকলেও সেগুলো দেখা হয় না বলে দাবি করেন তিনি।
এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশি নাগরিকরা ইসরায়েলে যেতে পারবেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘না। এটার সঙ্গে ইসরায়েলে যাওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই।’
ভিন্নমত কূটনীতিকদের
সাবেক পররাষ্ট্রসচিব ও কূটনীতি বিশ্লেষক তৌহিদ হোসেন বলেন, এই পরিবর্তনের ফলে পাসপোর্ট অনুযায়ী ইসরায়েল যেতে কোনো বাধা থাকল না বাংলাদেশিদের।
তার মতে, ‘সেটা সরকার সিদ্ধান্ত নেবে, যেতে পারবেন কি না। কিন্তু পাসপোর্টটা অ্যালাউ করে যেতে। ডিপ্লোম্যাটিক পাসপোর্টে কখনো এটা লেখা ছিল না।’
আরেক কূটনীতি বিশ্লেষক ও সাবেক রাষ্ট্রদূত নাসিম ফেরদৌসও মনে করেন, এতে ইসরায়েলে প্রবেশে বাধা কাটল।
তিনি বলেন, ‘লেখা নেই যেহেতু ইসরায়েলে প্রবেশ করতে পারবেন, এখন এটা ইসরায়েলের ওপর নির্ভর করে তারা যেতে দেবে কি দেবে না। দুটো দেশ একে অপরকে রিকগনাইজ না করলে সাধারণত যাওয়া-আসার সুবিধাটা দেয়া হয় না।’
সাবেক পররাষ্ট্রসচিব তৌহিদ হোসেনের কাছে জানা গেল, ইসরায়েল, তাইওয়ান ও সাউথ আফ্রিকার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পাসপোর্টের বৈধতা ছিল না।
তিনি বলেন, ‘বর্ণবৈষম্যের অবসান হলে সাউথ আফ্রিকাকে আমরা স্বীকৃতি দিয়েছি। তাইওয়ানকে কিন্তু আমরা স্বীকার করি না। স্বীকৃতি দিই না আলাদা দেশ হিসেবে; চীনের অংশ হিসেবে মনে করা হয়। কিন্তু প্র্যাকটিক্যাল কারণে তাইওয়ানের নিষেধাজ্ঞা আমরা তুলে দিয়েছি।’
পাসপোর্টে যতক্ষণ ওই কথাটি লেখা ছিল, ততক্ষণ ইসরায়েলে যাওয়ার উপায় ছিল না বলে জানান তৌহিদ হোসেন।
তিনি বলেন, ‘সরকার কী সিদ্ধান্ত নেয় সেটা দেখতে হবে। ইসরায়েল কী সিদ্ধান্ত নেয় সেটাও দেখতে হবে। বাংলাদেশিদের তারা ঢুকতে দেয় কি না। যেহেতু বাংলাদেশ তাদের স্বীকার করে না, স্বীকৃতি দেয় না।’
বিদেশে নিযুক্ত কোনো ইসরায়েলি দূতাবাস থেকে যদি কোনো বাংলাদেশি নাগরিক আবেদন করে ভিসা নিয়ে দেশটিতে যায়, সেটা রাষ্ট্র অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করবে কি না, জানতে চাওয়া হয় কূটনীতিকদের কাছে।
তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘রাষ্ট্র যদি স্পেসিফিক নিষেধাজ্ঞা জারি রাখে, অর্থাৎ কোনো নাগরিক ইসরায়েলে যেতে পারবেন না, এ রকম যদি কোনো নিষেধাজ্ঞা থাকে, তাহলে সেটা হতে পারে। এগুলো তো ইলেকট্রনিক পাসপোর্টের সব তথ্য। আপনি কোথায় যাচ্ছেন, না যাচ্ছেন অন্য দেশের মতো বাংলাদেশের কাছেও চলে আসবে। নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও যদি আপনি যান, তাহলে সরকার ব্যবস্থা নিতেই পারে আপনার বিরুদ্ধে।’
নাসিম ফেরদৌস বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ না থাকলে এটাতে ধরার খুব একটা সুযোগ নেই। কারণ, আপনি বলতে পারবেন, ডিফেন্ড করতে পারবেন যে, এখানে তো লেখা নেই ইসরায়েল যেতে পারব না।’
বহাল আছে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা
বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের ইসরায়েলে ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
রোববার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, বাংলাদেশের পাসপোর্ট থেকে এক্সসেপ্ট ইসরায়েল শব্দটি তুলে নেয়া হয়েছে পাসপোর্টের আন্তর্জাতিক মান রক্ষার জন্য এবং এর মানে এই নয় যে, বাংলাদেশের মধ্যপ্রাচ্য নীতিতে কোনো পরিবর্তন করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সরকার ইসরায়েলের ব্যাপারে তার অবস্থান থেকে সরে আসেনি এবং এ ব্যাপারে বাংলাদেশ তার দীর্ঘদিনের অবস্থানে অটল আছে।
ফলে পাসপোর্টে ভ্রমণ জটিলতা দূর হলেও নিষেধাজ্ঞা থাকায় বাংলাদেশি নাগরিকরা যেতে পারবেন না ইসরায়েলে।
তবে কি কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন প্রক্রিয়া
বাংলাদেশের পাসপোর্ট থেকে এক্সসেপ্ট ইসরায়েল শব্দ তুলে দেয়ার ঘটনায় ঢাকার প্রতি কৃতজ্ঞতা ও সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছে তেল আবিব।
এক টুইটবার্তায় রোববার ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের উপমহাপরিচালক গিলাড কোহেন এ সন্তোষ প্রকাশ করেন।
তিনি লিখেন, ‘অনেক বড় খবর। বাংলাদেশ ইসরায়েলের সঙ্গে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নিয়েছে। এবার বাংলাদেশ ও ইসরায়েলের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করলে উভয় দেশের জনগণ লাভবান হবে। কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে আমরা বাংলাদেশকে স্বাগত জানাচ্ছি।’
কিন্তু এটা কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন প্রক্রিয়া নয় বলে জোর গলায় বলছে সরকার।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘ইট ডাজনট মিন, এর ফলে বাংলাদেশ এবং ইসরায়েলের সম্পর্কের কোনো পরিবর্তন হয়েছে। আমরা এখনও তাদের রিকগনাইজ করি না। এখনও আমাদের আগের যে অবস্থান, সে অবস্থানে আছি।’
রোববার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘ইসরায়েল নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান অপরিবর্তিত আছে এবং যত দিন পর্যন্ত সেখানে দুই রাষ্ট্র নীতি (ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলিদের জন্য আলাদা রাষ্ট্র) বাস্তবায়ন না হচ্ছে, তা অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।’
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে সাবেক পররাষ্ট্রসচিব তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘কোনো দেশের পাসপোর্টে সম্ভবত এই রেস্ট্রিকশনটা আর নেই। এ কারণেই হয়তো আমাদের সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তার মানে এই না যে, আমরা ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিয়ে দিচ্ছি।’
পাসপোর্টের মর্যাদা কি বাড়বে
এই পরিবর্তনের ফলে আন্তর্জাতিক বিশ্বে বাংলাদেশের পাসপোর্টের মর্যাদা বাড়বে বলে মনে করেন না কূটনীতিকরা।
তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘আমার মনে হয় না ইসরায়েলের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা উঠে যাচ্ছে কি না, তার সঙ্গে র্যাঙ্কিংয়ের কোনো সম্পর্ক আছে।’
তিনি বলেন, ‘র্যাঙ্কিংটা হয়, যে দেশগুলো এমন ফিল করে বাংলাদেশি কেউ এসে তার এখানে ইলিগ্যাল থেকে যাবে না, তারা অন অ্যারাইভাল ভিসা দেয়। যে পাসপোর্ট দিয়ে বেশিসংখ্যক দেশে অন অ্যারাইভাল ভিসা দেয়, তার র্যাঙ্কিং তত বেশি।’
গ্লোবাল পাসপোর্ট ইনডেক্সের র্যাঙ্কিংয়ে দেখা যায়, এই মুহূর্তে বাংলাদেশের পাসপোর্টের অবস্থান ৭৩।
আরও পড়ুন:রং, সংগীত আর তরুণদের উদ্দীপনায় তিন দিন ধরে মুখর ছিল গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ-এর ক্যাম্পাস। বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম জনপ্রিয় এই আয়োজন ‘গ্রিন ফেস্ট ২.০’ অনুষ্ঠিত হয় গত ১৫ থেকে ১৭ অক্টোবর। শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা, সাংস্কৃতিক বন্ধন আর পরিবেশ সচেতনতাকে একসূত্রে গেঁথে তৈরি এই উৎসব ছিল আনন্দ আর শিক্ষার এক অপূর্ব সমন্বয়।
১৫ অক্টোবর এক বর্ণাঢ্য ফ্ল্যাশ মবের মাধ্যমে শুরু হয় উৎসব, যা মুহূর্তেই গোটা ক্যাম্পাসে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে দেয়। ১৬ অক্টোবরের আয়োজন ছিল আরও বৈচিত্র্যময়। ‘আমার ক্লাস, আমার থিম’ শিরোনামে শিক্ষার্থীরা নিজেদের শ্রেণিকক্ষ ও বিভাগ সাজিয়েছিলেন নানা সৃজনশীল উপায়ে। দিনের অন্যতম আকর্ষণ ছিল শিক্ষার্থী ও এলামনাইদের মধ্যে ক্রিকেট ম্যাচ, যা নতুন-পুরাতনের এক উৎসাহ ও বন্ধুত্বের মেলবন্ধন। সন্ধ্যায় ‘ওপেন মাইক’ সেশনে শিক্ষার্থীরা গান, কবিতা আর কৌতুক দিয়ে মাতিয়ে রেখেছিলেন সবাইকে। দিনের শেষে অনুষ্ঠিত হয় এক ভিন্নধর্মী ‘খাদ্য প্রস্তুতি প্রতিযোগিতা’।
উৎসবের শেষ দিন, ১৭ অক্টোবর, শুরু হয় ‘কালচারাল ফিউশন’ ও ক্লাসরুম প্রদর্শনী দিয়ে। শিক্ষার্থীরা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) নিয়ে তাদের চিন্তাভাবনা তুলে ধরেন ‘এসডিজি ক্যানভাস’-এ। পরিবেশ ও স্থায়িত্ব নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে আয়োজন করা হয় বিশেষ সেমিনার। বিশ্ববিদ্যালয়ের এলামনাইদের আকর্ষণীয় পরিবেশনাও পায় শিক্ষার্থী-শিক্ষক এবং আমন্ত্রিত অতিথিদের অকুণ্ঠ প্রশংসা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের দশটি বিভাগের মধ্যে ইইই বিভাগ ‘আমার ক্লাস, আমার থিম’ প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন এবং সিএসই বিভাগ রানার-আপ হবার গৌরব অর্জন করে। ক্রিকেট খেলায়, নিয়মিত শিক্ষার্থীদের দল চ্যাম্পিয়ন এবং এলামনাইদের দল রানার-আপ হয়।
সন্ধ্যার মূল আকর্ষণ ছিল আমন্ত্রিত শিল্পীদের অনুষ্ঠান। প্রথমে মঞ্চে আসেন খ্যাতনামা লোকসংগীত শিল্পী শাহ মুহাম্মদ শিপন ও তার দল। তাদের বাউল ও লোকসংগীতের সুরে মুগ্ধ হন দর্শকরা। উৎসবের সমাপ্তি ঘটে দেশের জনপ্রিয় ব্যান্ড ‘লেভেল ফাইভ’-এর প্রাণচঞ্চল ও উদ্দীপনাময় পরিবেশনার মধ্য দিয়ে।
গ্রিন ফেস্ট ২.০-এর এই সফল আয়োজনে গ্রিন ইউনিভার্সিটির উপাচার্য প্রফেসর ড. মো: শরীফ উদ্দিন বলেন, "এই উৎসব আমাদের শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা, সাংস্কৃতিক সম্প্রীতি ও পরিবেশ সচেতনতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। আমরা শুধুমাত্র ক্লাসরুমভিত্তিক একাডেমিক কার্যক্রমই নয়, শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা, নেতৃত্বের গুণাবলী, উদ্যম ও মেধার বিকাশেও নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি।
‘গ্রিন ফেস্ট ২.০’ কেবল একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানই ছিল না, বরং এটি ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সবুজ ক্যাম্পাস’ চেতনারই প্রতীক। এই আয়োজন শিক্ষার্থীদের মধ্যে দলগত কাজ, সাংস্কৃতিক সম্প্রীতি ও পরিবেশ সচেতনতার বার্তা ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে, যা গ্রিন ইউনিভার্সিটির মূল আদর্শের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। এই উৎসব নিঃসন্দেহে শিক্ষার্থীদের প্রাণবন্ত ও সৃজনশীল মনেরই স্বাক্ষর বহন করে।
কিশোরগঞ্জের ইটনায় ধনু নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজের ৪৮ ঘণ্টা পর এক জেলের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
রবিবার সকাল ৮টার দিকে উপজেলার শিমুলবাঁক গ্রামের পাশে ধনু নদী থেকে শ্রীকৃষ্ণ দাস (৫০) নামের ওই জেলের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
তিনি ইটনা উপজেলার এলংজুরী ইউনিয়ন সদরের বড়হাটি গ্রামের মৃত রসিক দাসের ছেলে।
ইটনা ধনপুর নৌপুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) নিখিল চন্দ্র দাস বলেন, “রবিবার সকালে স্থানীয়রা নদীতে মরদেহটি ভাসতে দেখে আমাদের খবর দেয়। পরে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করি।”
এর আগে শুক্রবার সকাল ৭টার দিকে শ্রীকৃষ্ণ দাস নিজের বাড়ির পাশের ধনু নদীতে একটি ডিঙি নৌকায় করে মাছ ধরতে যান। সকাল ৮টার দিকে অন্যান্য জেলেরা দেখতে পান, তার নৌকায় জাল ও মোবাইল ফোন পড়ে আছে, কিন্তু তিনি নেই। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও তার কোনো সন্ধান মেলেনি।
স্থানীয় বাসিন্দা আশিক দাস জানান, “দুই বছর আগে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে শ্রীকৃষ্ণ দাসের স্ত্রী মারা যান। তিনি একটি মেয়ে ও দুই ছেলেকে নিয়ে জীবনযাপন করছিলেন।”
স্বজনদের বরাতে এসআই নিখিল চন্দ্র দাস আরও জানান, শ্রীকৃষ্ণ দাস কয়েকদিন ধরে জ্বরে ভুগছিলেন। তারপরও জীবিকার তাগিদে মাছ ধরতে বের হন। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, মাছ ধরার সময় দুর্বল শরীরের কারণে তিনি নদীতে পড়ে যান এবং ডুবে মারা যান।
শেরপুর জেলার শ্রীবরদী উপজেলার খড়িয়া কাজিরচর ইউনিয়নের লংগরপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত ভবনে এক মানসিক ভারসাম্যহীন নারী সাবানার কোলে জন্ম নিয়েছে এক নবজাতক কন্যা শিশু। পরে অসুস্থ ওই নারীকে ভর্তি করা হয়েছে হাসপাতালে। এ শিশুটিকে দত্তক নিতে আসছে অনেকেই। নিয়মানুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস স্থানীয় প্রশাসনের।
মানসিক ভারসাম্যহীন নারী সাবানা দীর্ঘদিন ধরে শ্রীবরদী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছিলো। তাকে বিভিন্ন সময় রাতে লংগরপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত ভবনে ঘুমাতে দেখা যায়। ১৮ অক্টোবর শনিবার সন্ধ্যায় হঠাৎ স্কুলের পরিত্যক্ত ভবন থেকে নবজাতকের কান্নার শব্দ শুনে এলাকাবাসী ছুটে যান সেখানে। পরে তারা দেখতে পান, ওই নারীর কোলে জন্ম নিয়েছে একটি কন্যা শিশু। পরে স্থানীয়রা দ্রুত মা ও নবজাতককে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যান এবং তাদের খাবার ও প্রাথমিক সেবা দেন। শিশুটি সুস্থ থাকলেও মানসিক ভারসাম্যহীন মায়ের শারীরিক অবস্থা অবনতি হলে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীদের সহায়তায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে।
এদিকে অসহায় নবজাতককে দত্তক নিতে অনেকেই এগিয়ে এসেছে। বলতে গেলে প্রতিযোগিতাই শুরু হয়েছে।
এঘটনায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তবে কেউ ওই নারীর পরিচয় জানেনা। এতে এলাকাবাসীর মধ্যে নানা প্রশ্ন ও আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
শ্রীবরদী সমাজসেবা অফিসার মো. কামরুজ্জামান বলেন, আমরা বিষয়টি জানার পর ঘটনাস্থলে প্রতিনিধি পাঠিয়েছি। হাসপাতালে সমাজসেবা শাখা রয়েছে। তারাই চিকিৎসা সহায়তা দেবে। এরপর নবজাতক ও ওই নারীর পূনর্বাসনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শ্রীবরদী উপজেলা ভারপ্রাপ্ত নিবার্হী অফিসার ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. হাসিব-উল-আহসান বলেন, মা ও নবজাতকের নিরাপত্তা ও সেবা নিশ্চিত করতে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সমাজসেবা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছেন। তাদের নিয়মিত খোঁজখবর রাখা হবে। এছাড়াও ওই নারীর ঠিকানা সম্পর্কে খোঁজ নিতে প্রশাসনিক তৎপরতা শুরু হয়েছে।
শেরপুর জেলা হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার ডা: তানবির আহমেদ জানান, নবজাতক ভাল আছে। তবে মানষিক ভারসাম্যহীন মহিলার অবস্থা খারাপ থাকায় তার উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। তার চিকিৎসা চলছে।
মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে ফাঁসির আসামিদের কনডেম সেলে বন্দি রাখা যাবে না, হাইকোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল শুনানির জন্য আগামী ২৮ অক্টোবর দিন ধার্য করেছেন সর্বোচ্চ আদালত।
রোববার (১৯ অক্টোবর) বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এই দিন ধার্য করেন।
আদালতে বিষয়টি শুনানির জন্য উপস্থাপন করেন রিটকারীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির।
এর আগে ২০২৪ সালের ১৫ মে মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে ফাঁসির আসামিদের কনডেম সেলে বন্দি রাখা যাবে না, এ রায় স্থগিত করেন হাইকোর্ট। পরে এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।
এর আগে ২০২৪ সালের ১৩ মে, মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে আসামিদের কনডেম সেলে বন্দি রাখা অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণা করেন হাইকোর্ট।
এ বিষয়ে জারি করা রুল নিষ্পত্তি বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো. বজলুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। দীর্ঘ সাড়ে ৩ ঘণ্টাব্যাপী রায় ঘোষণা করা হয়।
রায়ে বলা হয়েছে, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির আপিল, রিভিউ, রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার ধাপগুলো নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আসামিকে কনডেম সেলে রাখা যাবে না। বর্তমানে মৃত্যুদণ্ড চূড়ান্ত হওয়ার আগে সারা দেশে যত আসামিকে কনডেম সেলে রাখা হয়েছে, তাদের দুই বছরের মধ্যে ক্রমান্বয়ে সাধারণ সেলে রাখার কথা বলা হয়েছে। তবে, বিশেষ কারণে (স্বাস্থ্যগত কারণ, সংক্রামক রোগ) কোনো ব্যক্তিকে নির্জন কারাকক্ষে রাখতে পারবে কারা কর্তৃপক্ষ। সেক্ষেত্রে ওই ব্যক্তির উপস্থিতিতে শুনানি হতে হবে।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট আসাদ উদ্দিন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার। সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এমএমজি সারোয়ার পায়েল, নাসিম ইসলাম রাজু।
আইনজীবীরা বলেছেন, এটি একটি ঐতিহাসিক রায়।
২০২৩ সালের ১২ ডিসেম্বর মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে আসামিদের কনডেম সেলে বন্দি রাখা কেন বেআইনি হবে না এবং কেন জেলকোডের ৯৮০ বিধি অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না, এই মর্মে জারি করা রুলের শুনানি শেষ হয়।
বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো. বজলুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ শুনানি শেষে মামলাটি রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমাণ রাখেন।
২০২৩ সালের ৫ এপ্রিল এ বিষয়ে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে কনডেম সেলে থাকা বন্দিদের বিষয়ে ছয় মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয় সেদিন। বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই আদেশ দেন।
এর আগে ২০২২ সালের ৩ সেপ্টেম্বর মামলা চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি হওয়ার আগে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে কনডেম সেলে রাখার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়।
চট্টগ্রাম কারাগারে কনডেম সেলে থাকা জিল্লুর রহমানসহ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিন বন্দির পক্ষে আইনজীবী শিশির মনির এ রিট দায়ের করেন।
রিট আবেদনকারীরা হলেন– চট্টগ্রাম কারাগারের কনডেম সেলে থাকা সাতকানিয়ার জিল্লুর রহমান, সিলেট কারাগারে থাকা সুনামগঞ্জের আব্দুল বশির ও কুমিল্লা কারাগারে থাকা খাগড়াছড়ির শাহ আলম। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এই তিন আসামির আপিল হাইকোর্ট বিভাগে বিচারাধীন রয়েছে।
চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার মেঘনা নদীতে মা ইলিশ সংরক্ষণে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করেছেন মোহনপুর নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা। এ অভিযানে অবৈধভাবে ইলিশ মাছ ধরার অভিযোগে ১৬ জন জেলেকে আটক করা হয়।
শুক্রবার রাতে উপজেলার মেঘনা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়। এসময় ৬টি ইঞ্জিনচালিত নৌকা ও প্রায় ৬ লাখ মিটার অবৈধ কারেন্টজাল জব্দ করা হয়। পরে উদ্ধারকৃত কারেন্টজাল আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়েছে।
আটককৃত জেলেরা হলেন রিপন মোল্লা (২৫), মো. রিপন দেওয়ান (৪৪), মো. মফিজুল (৩৫), মো. জসিম মিজি (৩৫), মো. আকাশ (২০), মো. উজ্জল (৪৫), স্বপন সিকদার (২৪), মো. শান্ত মাদবর (২০), মো. শাহিন সরদার (৩৪), আল আমিন (৩৫), মো. জব্বার সিকদার (৪৫), মো. বিল্লাল গাজী (৪০), মো. নাসির ঢালী (৩২), আব্দুর রাজ্জাক (২০), মো. আরিফ (১৯) ও মো. জাহাঙ্গীর মোল্লা (৩৭)। তাদের বিরুদ্ধে মৎস্য সংরক্ষণ আইনে ৬টি পৃথক মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এ বিষয়ে মোহনপুর নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোহাম্মদ আলী বলেন, মা ইলিশ রক্ষায় আমরা দিন-রাত নদীতে টহল ও অভিযান চালাচ্ছি। কেউ নিষিদ্ধ সময়ে মাছ ধরলে ছাড় দেয়া হবে না। আইন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, সরকার ঘোষিত মা ইলিশ সংরক্ষণের সময় নদীতে অভিযান অব্যাহত থাকবে। অবৈধভাবে মাছ ধরার সরঞ্জাম পেলেই ধ্বংস করা হবে।
আগামী ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন।
গতকাল শনিবার বিকেলে বরিশাল সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।
এর আগে, তিনি বরিশাল বিভাগ এবং জেলা প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা সভা করেন।
এএমএম নাসির উদ্দিন বলেন, যেহেতু আওয়ামী লীগের সকল কর্মকাণ্ড সরকার নিষিদ্ধ করেছে, তাই বিচার সম্পন্ন হওয়ার আগে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। তবে, যদি নির্বাচনের আগে বিচার সম্পন্ন হয় তখন সেটা দেখা যাবে।
এনসিপির শাপলা প্রতীকের দাবির প্রশ্নে সিইসি বলেন, নির্বাচন কমিশনের তালিকায় না থাকায় শাপলা প্রতীক দেওয়ার সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, কোনো গোয়েন্দা সংস্থা দ্বারা প্রভাবিত হবে না নির্বাচন কমিশন। সভায় বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার, ছয় জেলার জেলা প্রশাসকসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊধ্বর্তন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, ‘রাজধানীর মতিঝিলে শাপলা চত্বরে ২০১৩ সালের হেফাজতে ইসলামের শহীদদের নামে স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করা হবে। যাতে দেশের মানুষ তাদের আজীবন স্মরণ করে।
গতকাল শনিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে হেফাজত ইসলামের মহাসমাবেশ ও মোদিবিরোধী আন্দোলনে শহীদদের পরিবারকে আর্থিক অনুদান প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আসিফ মাহমুদ বলেন, ২০১৩ সালে হেফাজত ইসলামের আন্দোলনেই ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল। সেদিন সরকার নিরপরাধ ও নিরীহ হেফাজত কর্মীদের হত্যা করে ভেবেছিল, দেশ থেকে ইসলামকে নিশ্চিহ্ন করা যাবে। জুলুম-নির্যাতনের বিরুদ্ধে গণমানুষের আন্দোলনকে স্তব্ধ করে হত্যা করা যাবে। কিন্তু এই অনুষ্ঠান প্রমাণ করে, জুলুম ও নির্যাতন কখনো স্থায়ী হয় না।
তিনি আরও বলেন, হেফাজত ইসলামের সেই আন্দোলনের সূত্র থেকেই ২০২৪ সালে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের জন্ম। ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে ফ্যাসিবাদের নেত্রী শেখ হাসিনা পালিয়ে যেতে বাধ্য হন।
উপদেষ্টা বলেন, ২০১৩ সালে নবম শ্রেণিতে পড়তাম। টেলিভিশনে দেখেছি লাখো জনতা কীভাবে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। কিন্তু সেদিনের প্রকৃত তথ্য জাতিকে জানানো হয়নি।
তিনি আরও জানান, হেফাজত ইসলামের শহীদদের নামের তালিকা সম্বলিত একটি স্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভ শাপলা চত্বরে তৈরি করা হবে। এতে এই আন্দোলন আগামী প্রজন্মের জন্য প্রেরণা যোগাবে।
অনুষ্ঠানে ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞে শহীদ ৫৮ জন এবং ২০২১ সালের মার্চে মোদিবিরোধী বিক্ষোভ কর্মসূচিতে শহীদ ১৯ জনের পরিবারের কাছে ১০ লাখ টাকা করে অনুদানের চেক হস্তান্তর করা হয়।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ. ফ. ম. খালিদ হোসেন বলেন, ২০১৩ সালে শাপলা চত্বরে হেফাজত কর্মীদের নৃশংসভাবে হত্যা করে তৎকালীন সরকার মনে করেছিল জুলুম-নির্যাতনবিরোধী আন্দোলন দমন করা যাবে।
ওই আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের একটি তালিকা প্রস্তুত করার হেফাজত ইসলামের নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। এ বিষয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয় সব ধরনের সহযোগিতা করবে বলেও আশ্বাস দেন।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, সেদিন শাপলা চত্বরে সাত হাজারের বেশি পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির সদস্যরা হেফাজত কর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছিল। প্রায় দেড় লাখ গুলি খরচ করা হয়েছিল। তারপরও ইতিহাস থেকে সেই ঘটনা মুছে ফেলা যায়নি।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব রেজাউল মাকসুদ জাহিদী। আরও উপস্থিত ছিলেন হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশের আমীর মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী, মহাসচিব মাওলানা মাজেদুর রহমান, জামায়াত ইসলামের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরোয়ার, খেলাফতে ইসলামের নেতা মাওলানা মামুনুল হক, গণধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূর প্রমুখ।
মন্তব্য