তিনি থাকেন চার তলা বাড়িতে, গেঞ্জি কারখানাও আছে। এটুকু সত্য। কিন্তু এর পেছনে আরও অনেক কাহিনি আছে।
সেই কারখানা বন্ধ এক বছরেরও বেশি সময় ধরে। পরে সংসার চালাতে সেই ব্যক্তি কাজ নিয়েছেন আরেক কারখানায়, কিন্তু চোখের সমস্যায় সেই কাজও করতে পারেন না। সংসারের আয় নেই। আর তিনি যে বাসায় থাকেন, সেটি তাদের ছয় ভাই-বোনের। নিজের অংশ কমই।
এসব কথা না জেনেই ৩৩৩ নম্বরে ফোন করে খাদ্য চাওয়ায় কেবল বাড়ি দেখে আর কারখানা থাকার খবর শুনে তাকে ১০০ জনকে খাবার বিতরণে বাধ্য করল প্রশাসন।
তাকে খাদ্য বিতরণে বাধ্য করা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এখন বলছেন, তাদের ভুল হলে যে টাকার ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে, সেটি সেই ব্যক্তিকে ফেরত দেয়া হবে।
তবে ইউএনওর ভুলের এই খেসারত রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে মেটানো হবে কি না, এ নিয়ে আছে প্রশ্ন।
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার কাশীপুর ইউনিয়নের দেওভোগ নাগবাড়ি এলাকায় বাসা তার। নাম ফরিদ আহমেদ।
বৃহস্পতিবার ৩৩৩ নম্বরে ফোন করে খাদ্য সহায়তা চান তিনি। খাবার নিয়ে আসেন উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন, অফিস সহকারী কামরুল ইসলাম। পরে তারা ভবন দেখে ফোন দিলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফা জহুরা আসেন ঘটনাস্থলে। দেন শাস্তির ঘোষণা।
জানান, সরকার প্রতি প্যাকেটে যে পরিমাণ খাবার দেয় দুস্থদের, সেই পরিমাণ খাবারসহ ১০০ প্যাকেট করে বিতরণ করতে হবে।
নির্দেশ মতো শনিবার বিকালে ফরিদ আহমেদ সেই খাবার বিতরণও করেন। আর সেখানে উপস্থিত ছিলেন ইউএনও স্বয়ং।
ঘটনাস্থলে গিয়ে ফরিদের জীবনের কাহিনি জেনেছে নিউজবাংলা। কিন্তু জানেননি ইউএনও।
ফরিদ আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাগো বাড়ি আছে। কিন্তু এই বাড়ি ছয় ভাই ও এক বোনের। আমাগো সবার আংশিক ভাগ আছে। এর মধ্যে আমি নিচ তলায় থাকি। আমার ১৬ বছর বয়সী প্রতিবন্ধী ছেলে আছে। মেয়ে মহিলা কলেজে পড়ে। তাদের নিয়া আমার সংসারে অনেক টানাটানি।’
নিজের কারখানার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘গত বছর করোনা মহামারি থেকে আমি বসা। বর্তমানে আমার কারখানা চলে না। এই করোনার কারণে আমি আরও সমস্যার মুখে পড়ছি। এখন নানা সমস্যায় জর্জরিত।
‘কারখানা দেয়ার আগে যে হোসিয়ারিতে দীর্ঘদিন কাটিং মাস্টার ছিলাম। এখন আবার সেখানে কাজ করি। আমার দুই চোখে অনেক কম দেখি।’
৩৩৩ নম্বরে কেন ফোন
ইউএনও আরিফা জহুরা দাবি করেছেন ৩৩৩ নম্বরে ফোন করে আসলেই খাবার পাওয়া যায় কি না, সেটি যাচাই করতেই ফোন করেছিলেন ফরিদ।
তবে ফরিদ বলেন উল্টো কথা।
তিনি বলেন, ‘প্রতি ঘণ্টা আমি এফএম রেডিও শুনি। সেখান শুনছি ৩৩৩ নম্বরে ফোন করলে খাবার আসে। এ জন্য ফোন করছি। কিন্তু জানতাম না এটা নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য। তবে আমিও তো পেটের দায়ে অভাবে পইড়াই ফোন করছি।
‘আমার খাদ্য প্রয়োজন ছিল বলেই ফোন করছি। সেখান থেকে তারা বলছে আপনার আবেদন গ্রহণ করা হইল। পরে তারা ফোন করে নাম, ঠিকানাসহ আমার ব্যক্তিগত তথ্য জিজ্ঞাসা করছে, আমি সব বলছি। এরপর তারা আইসা খাদ্য না দিয়া বরং আমারে ফাইন করে দিয়ে গেছে।’
জরিমানার আদেশের বর্ণনা করে তিনি বলেন, ‘কাশিপুর ইউনিয়নে পরিষদের (ইউপি) সদস্য আইয়ুব আলী আমাকে ডেকে নিয়ে বলেন, আপনি এই খাদ্য পাওয়ার উপযুক্ত নন। এই কথা বলে আমাকে নানাভাবে ধমকাতে থাকেন।
‘পরে আমি ভুলও স্বীকার করেছি। তার কিছুক্ষণ পর ইউএনও স্যার আসেন এবং আমাকে ডেকে নিয়ে নানা প্রশ্ন করার পর ১০০ মানুষকে খাদ্য সহায়তা করার জন্য নির্দেশ দেন। ইউএনও স্যার চলে যাওয়ার পর ইউপি সদস্যসহ অনেকে খাদ্য সহায়তা করা না হলে তিন মাসের সাজা হবে বলে’-সেদিনের ঘটনার এমন বর্ণনা দেন ফরিদ।
টাকা যোগাড় করলেন যেভাবে
ফরিদ আহমেদ জানালেন, কারাভোগের ভয়ে তিনি স্ত্রীর স্বর্ণ বন্ধক রেখে সুদে টাকা এনে খাদ্যসামগ্রী কিনেছেন।
তিনি বলেন, ‘তারা যেভাবে বলছে আমি সেভাবে ১০০ প্যাকেট বানিয়ে দিসি। এগুলো দিতে আমার ৬০ থেকে ৬৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আমার এই খাদ্য সহায়তা দিতে অনেক কষ্ট হইছে।’
কাঁদলেন ফরিদ আহমেদের স্ত্রী
নিউজবাংলার সঙ্গে আলাপকালে কেঁদে ফেলেন এই প্রবীণ ব্যবসায়ীর স্ত্রী হিরণ বেগম। তিনি বলেন, ‘গত দুইদিন বহু চেষ্টা করছি স্বামীরে জেলের হাত থেকে বাঁচাতে। নিজের স্বর্ণসহ আত্মীয়স্বজনের সোনার গয়না জুয়েলারি দোকানে বন্ধক রাইখা চড়া সুদে ঋণ করছি। মেম্বার আইযুব আলীর কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা ধার নিছি। মোট ৬৫ হাজার টাকার খাদ্যসামগ্রী কিনতে হয়েছে আমাগো।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের পরিবার নিজেরাই চলতে পারি না। প্রতিবন্ধী ছেলে, পুরো পরিবার এমনিতেই আমরা সংকটে।’
বলতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
ফরিদ আহমেদ ছোট ভাই সেলিম খানের স্ত্রী বিলকিস বেগম বলেন, ‘বড় ভাসুর ফরিদ আহমেদ ব্রেন স্ট্রোক করেছেন দুই বার। এ কারণে ওনি গুছিয়ে কথা বলতে পারেন না। তার মানসিক সমস্যাও রয়েছে। গতরাতে তিনি দুই বার আত্মহত্যার চেষ্টা করছেন। আমরা তাকে সারারাত পাহারা দিয়ে রাখছি। টাকা পয়সা জোগাড় করতে সহায়তা করছি।’
তিনি বলেন, ‘আমাগো বাড়ি আছে ঠিকই, কিন্তু কাম নাই, আমাগো ঘরে খাওন নাই। সরকারের কাছে খাদ্য চাইয়া উল্টো জরিমানা দিতে হইলো। আমাগো উপর জুলুম করল তারা।’
উচিত হয়নি, বলছেন জনপ্রতিনিধি
কাশীপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আইয়ুব আলী বলেন, ‘আমি উপজেলা প্রশাসনকে বার বার বলছি ফরিদ আহমেদের ১০০ প্যাকেট খাদ্য বিতরণ করার শাস্তি দেয়া ঠিক হয় নাই। কিন্তু তারা মানে নাই। পরে বাধ্য হয়ে আমি নিজেও তারে ১০ হাজার টাকা দিছি।’
ইউএনওর দাবি, তাকে কিছু জানাননি ফরিদ আহমেদ
ফরিদ আহমেদকে নিয়ে এত বড় ভুল কীভাবে হলো, জানতে চাইলে ইউএনও আরিফা জহুরা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি নিজে ফরিদ আহমেদ এর বাড়িতে গিয়েছি। তখনো তিনি বলেনি তার সমস্যার কথা।
‘তিনি ফোন করার পর আমরা তার তথ্য যাচাই বাছাই করেছি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের তথ্য অনুযায়ী জানতে পারি তিনি চার তলা বাড়ির মালিক ও পোশাক কারখানাও রয়েছে। ওই এলাকার স্থানীয় মেম্বারও তাই জানিয়েছে। তাই তাকে তখন অযথা সরকারি লোকজনকে হয়রানির করার দায়ে শাস্তি হিসেবে ১০০ পরিবারকে খাদ্য সহায়তা করার জন্য অনুরোধ জানাই।’
আপনি বাসায় গিয়েও জানতে পারেননি?- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘তিনি তখনও আমাকে জানিয়েছেন তিনি চার তলা বাড়ির মালিক ও পোশাক কারখানার ব্যবসা করেন। তাকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করা হয়নি। তাকে সরকারি কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টির দায়ে শাস্তি হিসেবে আশেপাশের ১০০ গরিব পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দেয়ার অনুরোধ করেছি। তিনি তা মেনে নিয়েছেন।’
বিপাকে পড়া মানুষটি যে সুদে টাকা নিয়ে ত্রাণ বিতরণ করতে বাধ্য হয়েছেন, এখন তার সেই ক্ষতিপূরণ কে দেবে- এমন প্রশ্নে ইউএনও বলেন, ‘যদি তিনি কারও ভয়ে তথ্য গোপন করে থাকেন তাহলে সে বিষয়টি আমরা যাচাই-বাছাই করব। যদি তার অভিযোগ সত্য হয় তাহলে তিনি যে পরিমাণ টাকা খাদ্য সহায়তা করেছেন তার অর্থ ফিরিয়ে দেয়া হবে।’
আরও পড়ুন:নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী পৌর এলাকায় ড্রেন নির্মাণে ঢালাইতে সিলেকশন বালু না দেওয়া, পরিমাণে সিমেন্ট, রড কম ও নিম্ন মানের সামগ্রী দেওয়াসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে পৌর প্রশাসক চিঠি দিয়ে কাজ বন্ধ করার নির্দেশ দিলেও ঠিকাদার তা উপেক্ষ করে নির্মাণকাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে স্থানীয়দের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গেলে সোনাইমুড়ী পৌর সভার নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ সাইফুল আজিম জানান, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় জনস্বাস্থ্য বিভাগের প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে পৌর এলাকায় ড্রেন নির্মাণের টেন্ডার হয়। ৩২টি পৌর সভায় পানি সরবরাহ ও মানববর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ এনভায়রনমেন্টাল সেনিটেশন প্রকল্পের ৪ কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণের কাজ পায় তৎকালীন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ছেলে আনোয়ার হোসেন। ওই ঠিকাদার দলীয় প্রভাব খাটিয়ে যেন-তেনভাবে ড্রেনের নির্মাণকাজ চালিয়ে যায়। বিগত সরকার পতনের পর ওই ঠিকাদার গা ঢাকা দেয়। গত দেড় বছর পূর্বে এই কাজটি পুনঃটেন্ডার হয়। নোয়াখালী জনস্বাস্থ্য বিভাগের ঠিকাদার রিদি এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকার আবু তাহের কাজটি পায়।
পৌর বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ড্রেন নির্মাণে শিডিউল ও ড্রয়িং মোতাবেক কাজ করছেনা ঠিকাদার। রড কম, সিলেকশন বালু না দেয়, নিম্নমানের কনক্রিট, সিমেন্ট তুলনামূলক কম দিয়ে যেন-তেনভাবে ড্রেন নির্মাণ করছে ঠিকাদার। হাটু পরিমাণ পানির মধ্যে ড্রেনের সাইট ঢালাই করছে। আবার ঢালাই খোলার পর বিভিন্ন স্থানে রড দেখা যাচ্ছে।
এ নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা কয়েকবার নির্মাণকাজ বন্ধ করলেও ঠিকাদার মানছে না।
নোয়াখালী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মচারী জানান, ড্রেন নির্মাণে নিম্নমানের নিম্ন সামগ্রী দেওয়ার অভিযোগ সত্য। তা অল্প দিনেই বিনষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সোনাইমুড়ী পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী (পানি) নুরুল আলম মানিক জানান, তাদের কাছে এই কাজের কোনো শিডিউল ও ডিজাইন নেই। তিনি পৌরসভা থেকে মৌখিক তদারকি করছেন। ড্রেনের কাজ শেষে পৌর কর্তৃপক্ষ বুঝে নেবেন। তবে তিনি ড্রেন নির্মাণে অনিয়মের সত্যতা স্বীকার করেন।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রিদি এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আবু তাহেরের বক্তব্য নিতে একাধিকবার করেও তাকে পাওয়া যায়নি। প্রকল্প এলাকায়ও তিনি নেই।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন বলেন, নির্মাণ কাজে কোনো অনিয়ম হচ্ছে না। কেউ পৌর প্রাশাসক ও নোয়াখালী জেলা প্রশাসকের কাছে এই বিষয়ে কোনো অভিযোগ করলেও কাজ হবে না। তিনি তাদের কোনো তোয়াক্কা করেন না বলে জানান।
সোনাইমুড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পৌর প্রশাসক নাছরিন আক্তার বলেন, ড্রেন নির্মাণে অনিয়ম হচ্ছে এ সত্য। কয়েকবার ঠিকাদারকে কাজ বন্ধ করতে বললেও শোনেনি। তাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দিয়ে অবহিত করলেও তারা কর্ণপাত করছে না। বৃহস্পতিবার স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে ড্রেন নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী দেওয়ায় কাজ বন্ধ করতে বললেও তা উপেক্ষা করে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে ঠিকাদার।
নোয়াখালী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, নির্মাণ কাজে অনিয়ম হচ্ছে তিনি শুনেছেন। অভিযোগ পেয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রকল্প এলাকায় লোক পাঠিয়েছেন।
সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলায় সপ্তম শ্রেণির মাদ্রাসা ছাত্রী ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি নাইম হোসেনকে (২০) কুমিল্লা থেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-১২)। চাঞ্চল্যকর এই মামলার ৬ আসামির মধ্যে প্রধান আসামি নাঈমসহ গ্রেপ্তার হয়েছে চারজন। গত বুধবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে র্যাব-১২ ও র্যাব-১১-এর যৌথ অভিযানিক দল তিতাস থানার জিয়ারকান্দি এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তার নাইম হোসেন সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার চর কামারখন্দ গ্রামের রহমত আলীর ছেলে। বৃহস্পতিবার সকালে র্যাব-১২-এর সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এতথ্য জানানো হয়।
র্যাব-১২-এর উপঅধিনায়ক মো. আহসান হাবিব বলেন, ধর্ষণ মামলা হওয়ার পর থেকে নাইম পলাতক ছিল। পরে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় তার অবস্থান শনাক্ত করা হয়। এরপর কুমিল্লার তিতাস এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব সদস্যরা। গ্রেপ্তার নাইমকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
জানা যায়, গত ১৯ অক্টোবর উপজেলার কর্ণসূতি গ্রামের বাসিন্দা ৭ম শ্রেণির মাদ্রাসা ছাত্রী ওই কিশোরী (১৪) মাদ্রাসা থেকে বাইরে বের হলে ওই কিশোরীকে ছয়জন যুবক জোরপূর্বক অটোরিকশায় তুলে নেয়। তাকে জামতৈল সেন্ট্রাল পার্কের পাশে ডেরা ফাস্টফুড অ্যান্ড চাইনিজ রেস্টুরেন্টে নিয়ে ধর্ষণ করে নাইম। কিশোরীর চিৎকার যেন বাইরে না যায় সে জন্য বাকি আসামিরা সাউন্ডবক্সে উচ্চ স্বরে গান বাজায়। পাশবিক নির্যাতনে কিশোরী জ্ঞান হারিয়ে ফেললে ধর্ষক ও তার বন্ধুরা হাসপাতালে নিয়ে সেখানে রেখে পালিয়ে যায়। পরে ওইদিন রাত সাড়ে ১২টার দিকে শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। পরদিন অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তার বিশেষ অঙ্গ রিপায়ার করা হয়েছে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। এ ঘটনায় ভিকটিমের মা বাদী হয়ে ৬ জনকে আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করেন। ওইদিনই মামলার এজাহার নামীয় তিন আসামি মো. আকাশ (২১), মো. আতিক (২৩) ও মো. নাজমুল হক নয়নকে (২৩) গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
ফরিদপুর শহরের ঐতিহ্যবাহী হালিমা গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের হলরুমে প্রফেসর এবিএম সাত্তার ফাউন্ডেশন ট্রাস্টবিষয়ক শিক্ষা সেমিনার গত বুধবার বেলা ১১টায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। শিক্ষা সেমিনার অনুষ্ঠানে ফরিদপুর হালিমা গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ সেলিম মো. বদরুদ্দোজার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ জাতীয় দৈনিকের সম্পাদক প্রফেসর এবিএম সাত্তার। শিক্ষা সেমিনার অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের সাবেক উপাধ্যক্ষ প্রফেসর তারিক হোসেন খান। পবিত্র কোরআন তেলওয়াতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। এরপর সেমিনার প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ফরিদপুর হালিমা গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তানজিনা সিরাজী। পরে শুরু হয় আলোচনা সভা। আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন হালিমা গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ গার্হস্থ্য বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শাহনাজ পারভীন, সহকারী শিক্ষক প্রতিমা বিশ্বাস, লাইব্রেরিয়ান মোছা. আশশেফা নাসরীন, সমাজকর্ম বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র মণ্ডল, আইসিটি সহকারী শিক্ষক আলমগীর মোল্লা, সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী শিক্ষক রেহেনা বেগম, হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুহা. আতাউর রহমান, প্রভাষক অ বা ভূ মশিউর রহমান মিয়া, অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আরিফ হোসেন ইসলাম শিক্ষা বিভাগের সরকারি অধ্যাপক মো. মুবিনুর রহমান। এরপর শুরু হয় প্রশ্নোত্তর পর্ব। প্রশ্নোত্তর পর্বে বক্তব্য রাখেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি প্রধান যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান শিক্ষাবিদ প্রফেসর এবিএম সাত্তার। বিশেষ অতিথি সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের সাবেক উপাধ্যক্ষ প্রফেসর তারিক হোসেন খান। এবং অনুষ্ঠানের সভাপতি হালিমা গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ সেলিম মো. বদরুদ্দোজার সমাপনী বক্তব্যের মধ্যে শিক্ষা সেমিনার অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয়।
গাজীপুরের টঙ্গী থেকে নিখোঁজ হওয়া বিটিসিএল জামে মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা মুহিবুল্লাহ মাদানীর সন্ধান পাওয়া গছে বলে জানিয়েছেন তার ছেলে আব্দুল্লাহ। বৃহস্পতিবার সকালে পঞ্চগড় জেলা সদরের হেলিপ্যাড বাজার এলাকার একটি রাস্তার পাশে গাছের সাথে লোহার শিকল দিয়ে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় তাকে পাওয়া যায়।
খবর পেয়ে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। এর আগে গত বুধবার ফজর নামাজের পর হাটাহাটি করতে গিয়ে নিখোঁজ হন তিনি। দিনভর খোঁজে না পেয়ে রাতে তার স্বজনরা টঙ্গী পূর্ব থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
এলাকাবাসী জানান, মাওলানা মুহিবুল্লাহ জুমার নামাজে সনাতন সম্প্রদায়ের সংগঠন ইসকন ও হিন্দু ছেলেদের মাধ্যমে প্রেমের ফাঁদে ফেলে মুসলিম মেয়েদের সতীত্ব নষ্টকরাসহ সামাজিক অবক্ষয় নিয়ে জুমার খুতবায় নিয়মিতভাবে সচেতনতামূলক বয়ান রাখতেন। এরপর থেকে তাকে হুমকি দিয়ে বেশ কয়েকটি উড়ো চিঠি দেওয়া হয়। তিনি বিষয়টি নিয়ে মসজিদ কমিটি ও এলাকাবাসীর সাথে কথা বলেন। একপর্যায়ে গত বুধবার সকাল থেকে তিনি নিখোঁজ হন। বেলা ১১টা পর্যন্ত তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি খোলা থাকলেও সোয়া ১১টার পর মোবাইলটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এরপর বৃহস্পতিবার সকালে পঞ্চগড় জেলা সদরের হেলিপ্যাড বাজার এলাকায় তাকে গাছের সাথে হাত-পা লোহার শিকল দিয়ে বাঁধা অজ্ঞান অবস্থায় দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেয় স্থানীয়রা। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করে বলে নিশ্চিত করেন মাওলানা মুহিবুল্লাহের ছেলে আব্দুল্লাহ।
এ ব্যাপারে পঞ্চগড় সদর থানার ওসি মো. আব্দুল্লাহিল জামান বলেন, মাওলানা মুহিবুল্লাহ মাদানীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সেখানে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন।
এ বিষয়ে টঙ্গী পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, উদ্ধারকৃত স্থান থেকে ইমাম সাহেবকে নিরাপদে নিয়ে আসতে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। থানার অসার পর তার সাথে কথা বলে বিস্তারিত জানাতে পারব।
নবীন প্রজন্মকে কৃষির প্রতি আগ্রহী করে তুলতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ‘তারুণ্যের উৎসব ২০২৫’। গত বুধবার সকালে উপজেলা কৃষি অফিসের আয়োজনে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মোস্তফা এমরান হোসেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. জাহাঙ্গীর আলম লিটন, এবং সঞ্চালনা করেন সহকারী কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা জনাব শাহআলম মজুমদার।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, তরুণ উদ্যোক্তা, কৃষক ও জুলাই শহীদ পরিবারের সদস্যরা।
শহীদ কামরুল মিয়ার পিতা জনাব নান্নু মিয়া বলেন, ‘সরকারের এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়। তরুণদের কৃষিতে সম্পৃক্ততা খাদ্য উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’
অন্যদিকে সাইফুল্লাহ বলেন, ‘তরুণদের কৃষিতে আগ্রহী করতে এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম অত্যন্ত ইতিবাচক। এই ধরনের সামাজিক উদ্যোগ দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে সহায়ক হবে।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. জাহাঙ্গীর আলম লিটন বলেন, ‘তরুণ প্রজন্মকে কৃষির সঙ্গে সম্পৃক্ত করতেই এই বীজ বিতরণ কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তি ও নবীন চিন্তাধারার সংযোজন ভবিষ্যতের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।’
এ সময় প্রধান অতিথি ড. মোস্তফা এমরান হোসেন বলেন, ‘সরকার আধুনিক কৃষিতে তরুণ ও শিক্ষিত শ্রেণিকে আকৃষ্ট করতে নানামুখী পদক্ষেপ নিচ্ছে। বাণিজ্যিক কৃষিতে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে কৃষি মন্ত্রণালয় সর্বাত্মক সহযোগিতা দেবে।’
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, অনুষ্ঠানে উপস্থিত তরুণ উদ্যোক্তা, কৃষক ও শহীদ পরিবারের সদস্যসহ মোট ২০ জনের মাঝে উন্নত মানের বীজ বিতরণ করা হয়।
শেরপুরের সজবরখিলার হরিজন পল্লীর পাচঁ শতাধিক বাসিন্দাদের মাঝে শাড়ি ও লুঙ্গী বিতরণ করা হয়েছে। ড্যাবের কেন্দ্রীয় নেত্রী ও শেরপুর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. সানসিলা জেবরিন প্রিয়াঙ্কা ২২ অক্টোবর রাতে এসব শাড়ি ও লুঙ্গী বিতরণ করেন।
এ সময় জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অধ্যক্ষ মামুনুর রশীদ পলাশ, সদর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক হযরত আলী, সদস্য সচিব সাইফুল ইসলাম ও শহর বিএনপির সদস্য সচিব জাফর আলীসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
২১ অক্টোবর রাতে হরিজন পল্লীর সামনে ২০১৮ সালের বিএনপির আলোচিত এমপি প্রার্থী ডা. সানসিলা জেবরিন প্রিয়াঙ্কার এক নির্বাচনী পথ সভায় হরিজন পল্লীর গৃহবধূ অরুনা ভাস্কর চোখের জলে তাদের দুঃখ দুর্দশার গল্প তুলে ধরেন। আর তার এ বক্তব্য ভাইরাল হয়ে যায়। পরে ২২ অক্টোবর রাতে ডা. সানসিলা জেবরিন প্রিয়াঙ্কা হরিজন পল্লীর সবার জন্য একবেলা খাবার খাওয়ান এবং সবাইকে শাড়ি ও লুঙ্গি উপহার দেন।
এ সময় তিনি বলেন, সামনে নির্বাচনে যদি বিএনপি ক্ষমতায় আসে আর তিনি এমপি নির্বাচিত হন, তবে হরিজন পল্লীকে আধুনিক পল্লী হিসেবে গড়ে তুলা হবে এবং তাদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবেন।
এতে খুশি হন হরিজন পল্লীর বাসিন্দারা। এ সময় অরুনা ভাস্কর বলেন, ‘আমরা আজ খুশি হয়েছি। আমাদের দুঃখ প্রিয়াঙ্কা আপা বুঝতে পেরেছেন। আমি বলব, আপা আমাদের ভুইলা যাইয়েন না।’
জবাবে সানসিলা জেবরিন প্রিয়াঙ্কা বলেন, ‘আমরা হরিজন পল্লীর লোকজনকে কাছে টেনে নিয়েছি। এমপি হই আর না হই কখনো দূরে ঠেলে দেব না।’
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক ফোরামের কার্যনির্বাহী কমিটি ২০২৫-এর নবীন সদস্যদের মূল্যায়ন অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে। গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি ভবনের ৫ম তলায় সাংবাদিক ফোরামের অফিস কক্ষে নতুন সদস্যদের ভাইভা অনুষ্ঠিত হয়। ভাইভা বোর্ডে সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি শাকিল বাবু, প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক রোকন বাপ্পি, সাধারণ সম্পাদক আবু ইসহাক অনিকসহ ও বিভিন্ন কার্যকরী সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। প্রতি বছরের মতো এবারও সাংবাদিক ফোরামের ৪র্থ নবীন সদস্য আহ্বানের মাধ্যমে একগুচ্ছ প্রতিভাবান ও প্রচণ্ড গতিশীল, ক্যাম্পাস সাংবাদিকতায় আগ্রহী নতুন মুখ নিয়ে সম্পন্ন হয় নব্য সদস্যদের এ মৌখিক ভাইভা পর্ব। ২০২৫ সালের ৬ থেকে ২০ অক্টোবর পর্যন্ত অনলাইনে নতুন সদস্য সংগ্রহের আহ্বান করা হয়েছিল। ফোরামের পথ চলায় চিরকাল স্বপ্ন সারথি হয়ে কাজ করে যাবে।’
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক ফোরাম স্বীকৃতি লাভ করে ২০২৩ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর। সংগঠনটির সদস্যরা স্বাধীনভাবে ও নিষ্ঠার সঙ্গে দেশের বিভিন্ন জনপ্রিয় জাতীয় দৈনিক, টিভি চ্যানেল ও মাল্টিমিডিয়াগুলোতে কাজ করে চলেছে অবিরাম। বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখালেখি, ফটো বা ভিডিওগ্রাফি এবং গ্রাফিক্স বা পোস্টার ডিজাইনের মাধ্যমে সাংবাদিকতা করতে আগ্রহী এমন নবীন শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে সাংবাদিক ফোরামের সাথে যুক্ত করে নতুন দিগন্ত উন্মোচনে ভূমিকা রাখে এ সংগঠন।
উল্লেখ্য, সাংবাদিকতার মান বজায় রাখা এবং নতুন প্রজন্মকে পেশাদার সাংবাদিক হিসেবে তৈরি করতে সাংবাদিক ফোরামে ৪র্থ বারের মতো এ নবীন সদস্য সংগ্রহ ও তাদের মূল্যায়ন অনুষ্ঠান আয়োজন করে।
মন্তব্য