সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম স্ট্রিমকার বাংলাদেশে নিষিদ্ধ হলেও ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্কের (ভিপিএন) মাধ্যমে অনেকেই এই অ্যাপে যুক্ত হয়ে লাইভ চ্যাট করছেন ও খেলছেন অনলাইন জুয়া। এর মাধ্যমে দেশ থেকে প্রতিদিনই কোটি টাকার বেশি পাচার হয়ে যাচ্ছে। এই ফাঁদে পড়ে অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি সর্বস্বান্ত হয়েছেন। নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহেও।
পুলিশের অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ) বুধবার জানিয়েছে, ডিজিটাল মাধ্যমে মুদ্রা পাচারের এই কারবারে যুক্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য জানা গেছে।
এটিইউ এবং সিআইডি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্ট্রিমকার অ্যাপ বাংলাদেশে নিষিদ্ধ হলেও ভিপিএনের মাধ্যমে ব্যবহার করা হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, দেশ-বিদেশের লক্ষাধিক বাংলাদেশি এই অ্যাপ ব্যবহার করছেন। সেলিব্রেটি ও তরুণীদের সঙ্গে আড্ডা দিতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে কর্মরত বাংলাদেশি শ্রমিকরা। তাদের অনেকেই এই অ্যাপের মাধ্যমে তরুণীদের ঘনিষ্ঠ হতে গিয়ে চাকরির টাকা খুইয়ে চলেছেন। ফলে বিপুল অঙ্কের রেমিট্যান্স থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দেশ।
এটিইউ-এর সাইবার ক্রাইম বিভাগের পুলিশ সুপার মাহিদুজ্জামান নিউজবাংলাকে জানান, নিষিদ্ধ স্ট্রিমকার অ্যাপের মাধ্যমে প্রতিদিনই কোটি টাকার বেশি পাচার হচ্ছে। এই অ্যাপের মাধ্যমে যারা টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন, এমন একটি চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করে সাভার থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এই অ্যাপের মাধ্যমে মানি লন্ডারিং হয় বিধায় বিষয়টি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) তদন্ত করবে।
তিনি আরও জানান, বাংলাদেশ থেকে এই অ্যাপের মাধ্যমে যারা অর্থ পাচার করছেন তাদের অন্যতম মাসুদ আর খান এজেন্সির মালিক মাসুদ রানাসহ অন্তত ছয়জন, যারা সবাই পলাতক রয়েছেন। রাজধানী ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে এই চক্রের চারজনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ।
তদন্তে যুক্ত পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, স্ট্রিমকার অ্যাপের ইউজার হওয়ার জন্য মোবাইল ব্যাংকিং বা অর্থ স্থানান্তরের অনলাইন প্লাটফর্ম পেপালের মাধ্যম টাকা নিয়ে থাকেন এজেন্টরা। সেখানে ইউজাররা প্রবেশ করে অসংখ্য হোস্ট আইডিধারী তরুণী ও সেলিব্রেটির সঙ্গে লাইভে কথা বলার সুযোগ পান। এসব হোস্টের মধ্যে কেউ গান শোনান। কেউ কবিতা শোনান। এজন্য তাদের উপহার হিসেবে দিতে হয় বিন্স নামের ভার্চুয়াল মুদ্রা, যে মুদ্রা মোবাইল ব্যাংকিং বা পেপালের মাধ্যমে কিনতে হয়। এই অ্যাপে ছয় ধরনের জুয়া খেলার সুযোগ রয়েছে। হোস্টরা নানা কৌশলে ইউজারদের সেই জুয়ার বোর্ডে নিয়ে যান।
বাংলাদেশি ইউজারদের অধিকাংশই প্রবাসী শ্রমিক, যারা সৌদি আরব, কুয়েত, কাতারসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে থাকেন। প্রবাসী এই শ্রমিকদের কাছে অবসরে সুন্দরী তরুণীদের সঙ্গে লাইভে কথা বলার জনপ্রিয় মাধ্যম এই অ্যাপ। দেশীয় ইউজাররা ভিপিএনের মাধ্যমে এই অ্যাপ ব্যবহার করেন।
অ্যাপটির বৈশিষ্টের বর্ণনা দিয়ে কর্মকর্তারা জানান, এ এটি বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় ভিডিও ও অডিও স্ট্রিমিং সোশ্যাল অ্যাপ। বৈশ্বিক বন্ধুত্বের প্লাটফরম হিসেবে এই অ্যাপ দিয়ে ভিডিও প্রচার ও ভিডিও চ্যাট করা যায়। বিশ্বজুড়ে বন্ধুত্ব করা যায়।
এই অ্যাপের ইউজার বাড়ানোর জন্য অনলাইনে অসংখ্য বিজ্ঞাপন প্রচার করে থাকে প্রতারক চক্র। যেমন- ‘অনলাইন থেকে ঘরে বসেই টাকা কামান। ইনকাম করুন প্রতিদিন এক হাজার টাকা। সময় নষ্ট আর নয়, সাথে সাথেই পেমেন্ট। আগ্রহ থাকলে অবশ্যই আমার ইনবক্সে join লিখে পাঠান।‘
কোনো কোনো বিজ্ঞাপনে বলা হয়, we are hiring broadcaster. Who can do: Talkative Live, Lipsing woth music, Reciting poem, singing, Gossiping.
আবার কোনো কোনো বিজ্ঞাপনে থাকে, ঘরে বসে টাকা ইনকামের সুযোগ শুধুমাত্র লাইভ করে। মাসে মাত্র ১৫ দিনে ৪০ ঘণ্টা লাইভ করে আয় করুন হাজার হাজার টাকা।
আগ্রহীদের শর্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয়, মাসে ১৫ দিনে ৪০ ঘণ্টা লাইভ করতেই হবে। কথোপকথনের অভ্যাস থাকতে হবে। নাচ, গান, কবিতা আবৃত্তির অভ্যাস থাকতে হবে। লাইভগুলো হবে অনেকটা ফেসবুক লাইভের মতো। বেতন নির্ধারিত হবে আইডিতে ‘জেমস’ কয়েন জমা হওয়ার ওপর।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, ‘স্ট্রিমকার’ অ্যাপটিতে দুই ধরনের ভার্চুয়াল কারেন্সি থাকে। এদের একটিকে ‘বিন্স’ আরেকটিকে ‘জেমস’ বলা হয়। ইউজাররা হোস্টের (সুন্দরী তরুণী) সঙ্গে কথোপকথনের সময় ‘উপহার হিসেবে’ ভার্চুয়াল কারেন্সি ‘বিন্স’ দিয়ে থাকেন। এই উপহার আসলে বাধ্যতামূলক। ইউজারের বিন্স তরুণীর আইডিতে জমা হওয়ার পর সেটি জেমস হিসেবে বিবেচিত হয়। এক বিন্স সমান এক জেমস। এ ক্ষেত্রে এক লাখ জেমসের দাম ৬০০ টাকা ধরা হয়।
এই অ্যাপে এজেন্সি দুই ধরনের। বিন্স এজেন্সি ও হোস্ট এজেন্সি।
বিন্স এজেন্সি
বিন্স এজেন্সিগুলো অ্যাপের অ্যাডমিনের কাছ থেকে বিন্সগুলো কিনে থাকে। পরে সেগুলো তারা ইউজারদের কাছে সরবরাহ করে। দেশে বর্তমানে ১০-১২টি বিন্স এজেন্সি রয়েছে, যাদের মধ্যে তিন-চারটির বিরুদ্ধে মুদ্রা পাচারে জড়িত থাকার তথ্য পেয়েছে পুলিশের অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট।
কর্মকর্তারা জানান, মুদ্রা পাচারে জড়িত এই এজেন্সিগুলোর সম্পর্ক রয়েছে।
হোস্ট এজেন্সি
একটি হোস্ট এজেন্সির অবশ্যই ১৫টি সক্রিয় হোস্ট আইডি থাকতে হয়। না থাকলে হোস্ট এজেন্সি হিসেবে অনুমোদন দেয় না স্ট্রিমকার অ্যাপের অ্যাডমিন।
এটিইউয়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আসলাম খান জানিয়েছেন, বর্তমানে দেশে ২০০ থেকে ৩০০ হোস্ট এজেন্সি রয়েছে, যাদের প্রত্যেকের ১০০ থেকে ৪০০ পর্যন্ত সক্রিয় হোস্ট রয়েছে। সেই হিসাবে দেশে বর্তমানে প্রায় অর্ধ লক্ষ মানুষ হোস্টিং করছে। ইউজার আছে লক্ষাধিক।
দুই ধরনের আইডি: একটি ইউজার আইডি, আরেকটি হোস্ট আইডি।
ইউজার আইডি
যেকোনো ব্যক্তি ইউজার আইডি খুলতে পারেন ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার কিংবা গুগল অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে। বিন্স কিনে এবং তা উপহার হিসেবে সরবরাহ করে একজন পুরুষ কিংবা নারী একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন; সময় কাটাতে পারেন হোস্টের সঙ্গে।
হোস্ট আইডি
প্রত্যেক হোস্টকে প্রত্যেক দিন অন্তত এক ঘণ্টা এবং প্রত্যেক মাসে অন্তত ৪০ ঘণ্টা লাইভ স্ট্রিমিংয়ে থাকতে হয়। এই সময়ের স্ট্রিমিংয়ের মাধ্যমে একজন হোস্টকে ন্যূনতম ‘পেমেন্ট’ পাওয়ার জন্য ২০ লাখ জেমস উপহার হিসেবে পেতে হয়।
পেমেন্ট সাইকেল
যুক্তরাষ্ট্রের বংশোদ্ভূত জিমি নামে এক ব্যক্তির মালিকানাধীন এই অ্যাপের অ্যাডমিন হিসেবে ভারত ও পাকিস্তানের নাগরিকরা রয়েছেন। এই অ্যাডমিনদের কাছ থেকে দেশীয় এজেন্সিগুলো কম দামে বিন্স কিনে থাকে। তারপর তা বেশি দামে ইউজারদের কাছে বিক্রি করে। ইউজাররা হোস্ট আইডিধারী ব্যক্তিদের সঙ্গে নানা ধরনের সম্পর্ক স্থাপনের বিনিময়ে বিন্সগুলো দেন। জুয়া খেলায়ও লাগে এই ভার্চুয়াল মুদ্রা।
বিন্সগুলো হোস্ট আইডিতে জেমস হিসেবে জমা হয়। সেই জেমস আবার হোস্ট এজেন্সির মাধ্যমে অ্যাপ অ্যাডমিনদের কাছে চলে যায়।
কর্মকর্তারা জানান, এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রতি মাসে বাংলাদেশ থেকে প্রায় শত কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। এর বাইরে প্রবাসীরাও এই অ্যাপের মাধ্যমে প্রতারণার শিকার হয়ে কোটি কোটি টাকা খোয়াচ্ছেন। অ্যাপের মূল ইউজার প্রবাসীরা হওয়ায় রেমিট্যান্সের ওপর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এই অ্যাপের ক্ষতিকর দিক থেকে প্রবাসীদের ফিরিয়ে আনতে পারলে রেমিট্যান্স আরও বাড়বে বলে তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মনে করছেন।
ইউজারকে এই বিন্স কিনতে হয় এজেন্সিগুলোর কাছ থেকে। এজেন্সিগুলো এক লাখ ‘বিন্স’-এর দাম নিয়ে থাকে ১০৮০ টাকা। যদিও এজেন্সি ওই এক লাখ বিন্স ১০৩২ টাকায় কেনে অ্যাপ অ্যাডমিনদের কাছ থেকে।
ভার্চুয়াল কারেন্সি কাগুজে মুদ্রায় কীভাবে স্থানান্তর হয়- এমন প্রশ্নে এটিইউয়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আসলাম খান জানান, একটি বিদেশি ব্যাংক ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে কনভার্ট করার তথ্য পাওয়া গেছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
কর্মকর্তারা আরও জানান, হোস্ট তরুণীর সঙ্গে লাইভে গল্প করতে করতে প্রলোভনে পড়ে ইউজাররা বিপুল পরিমাণ বিন্স সরবরাহ করে থাকেন উপহার হিসেবে। কখনো কখনো স্ট্রিমকার অ্যাপ থেকে বেরিয়ে ব্যক্তিগত হোয়াটসঅ্যাপ কিংবা অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একে অপরের ঘনিষ্ঠ হওয়ার হাতছানি থাকে। এজন্যও বিন্স জমা দিতে হয় হোস্টের আইডিতে। যেগুলো জেমস হিসেবে গণ্য হয়ে তরুণীর মাসিক আয়ের পথ তৈরি করা হয়।
কর্মকর্তারা জানান, এই হোস্টরাও অ্যাপের অ্যাডমিন কিংবা এজেন্সিগুলোর মাধ্যমে প্রতারিত হয়ে থাকেন। যেসব শর্তের হোস্টিংকে যে পরিমাণ অর্থ দেয়ার কথা বলা হয়, তা দেয়া হয় না। এভাবে প্রতারণার মাধ্যমে পুরো টাকাই হাতিয়ে নিচ্ছে অ্যাপভিত্তিক এই প্রতারক চক্র।
অ্যাপে চলে যেসব জুয়া: প্রতারক চক্রের গ্রেপ্তার সদস্যদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য ও এটিইউয়ের নিজস্ব অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কর্মকর্তারা জানান, এই অ্যাপে ছয় ধরনের জুয়া খেলার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সেগুলো হলো- তিনপাত্তি, ক্রিকেট স্টারস, ট্রেজারহান্ট, এসকে ডার্বি, ফ্রুট লুপস, লাকি ডিপ ও বিনস ব্যাগ।
কর্মকর্তাদের তথ্যমতে, শুধু তিনপাত্তির মাধ্যমেই বাংলাদেশ থেকে প্রতি তিন মিনিটে এক লাখ টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। একই কারণে মধ্যপ্রাচ্য থেকে যে পরিমাণ টাকা বাংলাদেশে আসার কথা তা আসছে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এটিইউর এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে জানান, অনেক প্রবাসী যুবক বিন্স কিনে ও জুয়ার ফাঁদে পড়ে তার মাসিক আয়ের পুরোটাই খুইয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করছেন। আবার কেউ কেউ বাড়ি থেকে টাকা পাঠানোর জন্য চাপ দিচ্ছেন।
তিনি বলেন, এই চক্রের সন্ধান পাওয়ায় ও তাদের গ্রেপ্তারের ফলে হাজার হাজার তরুণ-তরুণী প্রতারণার হাত থেকে রক্ষা পাবেন। দেশ থেকে মুদ্রা পাচারও বন্ধ হবে।
সিআইডির সাইবার ক্রাইম বিভাগের অ্যাডিশনাল ডিআইজি কামরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, স্ট্রিমকার অ্যাপ ছাড়াও সামাজিক যোগাযোগের আরও কিছু মাধ্যমে অর্থ পাচারের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। নিয়মিত ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরের কোনো মাধ্যমে অর্থ লেনদেন হচ্ছে। এ বিষয়ে বিশদ তদন্ত চলছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে তথ্য পাওয়া ও তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে মুদ্রা পাচার আইনে মামলা করা হবে।
আরও পড়ুন:রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে ২ হাজার ৫৬৭টি মামলা করেছে ঢাকা
মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ।
এছাড়াও অভিযানকালে ৩২০টি গাড়ি ডাম্পিং ও ১৩৫টি গাড়ি রেকার করা হয়েছে।
ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সোমবার এ তথ্য জানানো হয়।
এতে আরও বলা হয়, রোববার ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে এসব মামলা করে।
ঢাকা মহানগর এলাকায় ট্রাফিক শৃঙ্খলা রক্ষায় ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার বড়মানিকা ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডে পরকীয়ার অভিযোগে এক নারীকে প্রকাশ্যে অমানবিকভাবে গলায় জুতার মালা ও চুল কেটে নির্যাতনের অভিযোগে ৪ জনকে আটক করেছে বোরহানউদ্দিন থানা পুলিশ।
রবিবার (৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ওই ৪ জনকে আটক করা হয়েছে। এর আগে রবিবার সকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, বড়মানিকা ইউনিয়ন বিএনপির ৫নং ওয়ার্ড সভাপতি মো. হুমায়ুন কবির নিজ হাতে ওই নারীর গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেন। এ সময় তার সঙ্গে আরও ২০-২৫ জন উপস্থিত থেকে ভিডিও ধারণ করাসহ ওই নারীর মাথার চুল কাটছে।
স্থানীয়রা জানান, পরকীয়ার অভিযোগে শাস্তি দেওয়ার নামে এ নারীকে প্রকাশ্যে চুল কেটে জুতার মালা পড়ানো হয়।
তবে ঘটনাটিকে অনেকেই বিচারবহির্ভূত নির্যাতন বলে আখ্যা দিয়ে নিন্দা প্রকাশ করেছেন।
মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এ ধরনের ঘটনা সমাজে নারী নির্যাতনের প্রবণতা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।
অভিযুক্ত ওয়ার্ড সভাপতি হুমায়ুন কবির ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ওরা বহুদিন ধরেই অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত। কয়েক মাস আগেও হাতেনাতে ধরা পড়েছিল। তাই এবার বিচার করেছি ও চুল কেটে জুতার মালা দিয়েছি। এরপর তাদের বিয়ে হবে।
এ বিষয়ে বোরহানউদ্দিন থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান জনান, নারীকে প্রকাশ্যে হেনস্থার ঘটনায় ব্যবস্থা গ্রহনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
বরিশাল পুলিশের রেঞ্জ ডিআইজি জনাব মঞ্জুর মোর্শেদ আলম জানান, এখন পর্যন্ত চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলা প্রক্রিয়াধীন। অন্য আসামীদের শীঘ্রই গ্রেপ্তার করা হবে।
রাজশাহী মহানগরীতে অভিযান চালিয়ে ১৩ মাদক কারবারিকে আটক করেছে র্যাব-৫।
রোববার দিবাগত রাত সোয়া ১২টার দিকে নগরীর রাজপাড়া থানাধীন দাসপুকুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।
আটককৃতরা হলেন, সেলিম রেজা (৫৫), বুলেট অরফে রুবেল (৩০), রিদয় (২৫), শিহাব আহমেদ শিশির (২২), আনোয়ার হোসেন (৪৭), জয়নাল আবেদীন জনি (২৫), জীবন বিশ্বাস (২৩), সাজিদ আলী (২২), জাফর সাদিক অভি (২২), সৌরভ হোসেন (২৪), আরিফুল ইসলাম (৩৬), আলমগীর হোসেন (৫০) ও ইউনূস আলী (৪২)।
আটককৃতদের মধ্যে অধিকাংশ রাজপাড়া থানার বাসিন্দা। এছাড়া একজন পুঠিয়া উপজেলা ও একজন চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট এলাকার বাসিন্দা। এ সময় তাদের কাছ থেকে গাঁজা, মোবাইল ও টাকা জব্দ করা হয়।
আজ সোমবার সকালে র্যাব-৫ এর মিডিয়া সেল থেকে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
র্যাব জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব-৫, সিপিএসসি এর একটি দল জানতে পারে দাসপুকুর এলাকায় ব্যাপকহারে মাদকের কেনাবেচা চলছে। পরবর্তীতে র্যাবের গোয়েন্দা দল ওই স্থানে নজরদারি বাড়ায় ও রাত সোয়া ১২টার দিকে অভিযান চালিয়ে ১৩ মাদক কারবারিকে আটক করে। এ সময় তাদের কাছ মাদক জব্দ করা হয়।
র্যাব আরও জানায়, আটককৃতরা এলাকার সংঘবদ্ধ মাদক চক্রের সদস্য। তারা দীর্ঘদিন ধরে গাঁজা, ট্যাপেন্টাডল ট্যাবলেট, ফেন্সিডিলসহ বিভিন্ন ধরণের মাদক সংগ্রহ করে রাজশাহী মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় খুচরা ও পাইকারি বিক্রি করে আসছিল। তাদের বিরুদ্ধে রাজপাড়া থানায় মাদকদ্রব্য আইনে মামলা করা হয়েছে।
নানা সমস্যা নিয়ে ধুঁকে ধুঁকে চলছে জয়পুরহাটের মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র। দীর্ঘদিন ধরে নেই ওষুধ সরবারাহ। নেই পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিভিন্ন যন্ত্রপাতি। একই সঙ্গে অ্যানেসথেসিয়া বিশেষজ্ঞ ও প্রয়োজনীয় জনবল না থাকায় এ প্রতিষ্ঠানটির চিকিৎসাসেবায় একেবারেই ধস নেমেছে।
অন্যদিকে দীর্ঘদিনের পুরনো ভবন জরাজীর্ণ হওয়ায় ঝুঁকি নিয়েই চলছে স্বাস্থ্যসেবা। তাই দ্রুত সমস্যাগুলো সমাধান করে কাঙ্খিত সেবা নিশ্চিত করার দাবি রোগী ও স্বজনদের। আর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, নানা সংকট থাকায় কাঙ্খিত সেবা দেওয়া যাচ্ছে না। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সমস্যাগুলো সমাধান করলে রোগীদের কাঙ্খিত সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ১৯৭৯ সালে মা ও শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে জয়পুরহাট শহরের ধানম-ি এলাকায় প্রতিষ্ঠা করা হয় সরকারি মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র। এটি জয়পুরহাট মাতৃমঙ্গল হাসপাতাল নামেও বেশ পরিচিত। চিকিৎসাসেবায় হাসপাতালটি এক সময় ব্যাপক সুনাম কুড়ালেও বর্তমানে নানা সমস্যায় চিকিৎসাসেবায় ধস নেমেছে। এ হাসপাতালটিতে গত ৮ মাস ধরে নেই কোনো ওষুধ সরবরাহ। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি না থাকায় বন্ধ রয়েছে পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা। আর প্রয়োজনীয় জনবল সংকটসহ অ্যানেসথেসিয়া বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় প্রায় দুই বছর ধরে সব ধরনের অপারেশনও বন্ধ রয়েছে। শুধুমাত্র নরমাল ডেলিভারি করানো হচ্ছে এখানে। এছাড়া পুরনো ভবনটি জরাজীর্ণ হওয়ায় তৈরি হয়েছে ঝুঁকি। ভবনের অনেক জায়গায় ফাটল ধরেছে। কিছু জায়গায় খুলে পড়েছে পলেস্তেরা। এতে রোগীদের পাশাপাশি চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে হাসপাতালের স্টাফদের। দ্রুত সমস্যাগুলো সমাধান করার দাবি রোগী ও স্বাস্থ্যকর্মীদের।
জয়পুরহাট শহরের সবুজ নগরের বাসিন্দা রিয়াজ উদ্দিন বলেন, আমার স্ত্রীকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে এসেছিলাম। এ পর্যন্ত চারবার চেকআপ করালাম, কিন্তু একবারও ওষুধ পাইনি। মেশিন না থাকায় আলট্রাসনোগ্রাম করাতে পারিনি। রক্ত পরীক্ষাও করাতে পারিনি। এক কথায় এখানে ল্যাবই নেই। নামে শুধু হাসপাতাল।
জয়পুরহাট শহরের আমতলী এলাকার রিমা আক্তার বলেন, এ হাসপাতালে আগে যে সেবা পাওয়া যেত, এখন তার কিছুই পাওয়া যায় না। আগে ওষুধ পাওয়া যেত, সিজার হতো, এখন কিছুই হয় না। এখানে ওষুধ লিখে দেয়, আর বাইরে থেকে কিনে নিয়ে আসতে হয়।
পাঁচবিবির রতনপুর গ্রামের লাভলী খাতুন বলেন, আমার মেয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছে। এখানে ভালো কোনো চিকিৎসা পাচ্ছে না। আমরা গরিব মানুষ, বাইরে থেকে ওষুধ কিনে খেতে হচ্ছে। এছাড়া ভবনের অবস্থা খুবই খারাপ, কখন যে ভেঙে পড়বে তা বলা যায় না। তাই ভবনটি নতুন করে তৈরিসহ সব সমস্যা সমাধান করা হলে হাসপাতালটি আবার আগের অবস্থানে ফিরে আসবে।
ক্ষেতলালের বানিয়াপাড়ার মিনহাজুল ইসলাম বলেন, মাতৃমঙ্গল হাসপাতাল মানে জয়পুরহাটে বিখ্যাত একটি হাসপাতাল বলে সবাই চিনত। এখন হাসপাতালের নাম থাকলেও সেবার মান একেবারেই ধ্বংস। এখানে এলেই শুনি কিছুদিনের মধ্যে সব ঠিক হবে, কিন্তু কিছুই হয় না। গুরুত্বপূর্ণ এই হাসপাতালটিকে কেউ গুরুত্ব দেয় না। এটি ভালো করে চালু করা হোক, না হলে বন্ধ করে দেওয়া হোক।
হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স চম্পা পারভিন বলেন, দীর্ঘদিন থেকে আমরা বেতনভাতা পাই না। হাসপাতালে ওষুধ নেই। পরীক্ষা-নিরীক্ষার কোনো ব্যবস্থা নেই। অ্যনেসথেসিয়া বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। এজন্য সিজারিয়ান সেকশন থেকে রোগীরা বঞ্চিত হচ্ছেন। আগে রোগীরা অনেক ভিড় করলেও এখন আর রোগী তেমন আসে না। জনবল কম হওয়ায় দায়িত্বপ্রাপ্ত স্টাফদের অনেক সময় ডাবল ডিউটি করতে হয়। এতে রোগীদের পাশাপাশি চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে হাসপাতালের স্টাফদের।
প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেডিকেল চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. শাহানা পারভীন বলেন, অ্যানেসথেসিয়া বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় এখানে দেড় বছর ধরে কোনো অপারেশন করতে পারছি না। জনবল সংকটের কারণে রোগীদের কাক্সিক্ষত সেবা দিতে পারছি না। ওষুধের সরবারহ এখনো পাইনি। এখন শুধু আমরা রোগীদের পরামর্শ ও ব্যবস্থাপত্র লিখে দিচ্ছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যদি এসব বিষয়ে দৃষ্টি দেয় তাহলে আমরা আগের অবস্থায় ফিরে যেতে পারব।
দেশের বাজারে আবারও বেড়েছে স্বর্ণের দাম। নতুন করে ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণে ২ হাজার ৭১৮ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে এখন ২২ ক্যারেট স্বর্ণের নতুন দাম দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৮১ হাজার ৫৫০ টাকা, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
রবিবার (৭ সেপ্টেম্বর) বাজুসের ‘স্ট্যান্ডিং কমিটি অন প্রাইসিং অ্যান্ড প্রাইস মনিটরিং’ কমিটি বৈঠকে বসে দাম বাড়ানোর এ সিদ্ধান্ত নেয়।
পরে কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) থেকে নতুন দাম কার্যকর হবে।
এর আগে গত ৪ ও ২ সেপ্টেম্বর এবং ৩১ ও ২৭ আগস্ট স্বর্ণের দাম চার দফায় বাড়ানো হয়। মাত্র চার দিনের ব্যবধানে আবারও দাম বাড়ানোর বিষয়ে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) জানিয়েছে, স্থানীয় বাজারে তেজাবী স্বর্ণের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।
রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলার চর হরিনাডাঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির মেধাবী ছাত্র নাজমুল হোসেন দুরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে এখন শয্যাশায়ী। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তাকে দ্রুত রাজধানীর একটি বিশেষায়িত হাসপাতালে ভর্তি করে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। সে উপজেলার পাট্টা ইউনিয়নের মুছিদাহ গ্রামের মো. ইসলাম মন্ডলের ছেলে।
দরিদ্র পরিবারের পক্ষে নাজমুলের চিকিৎসার বিপুল ব্যয়ভার বহন করা সম্ভব নয়। তার পিতা মো. ইসলাম মন্ডল একজন সাধারণ ভ্যানচালক সংসারের দৈনন্দিন খরচ চালাতেই যেখানে হিমশিম খেতে হয়, সেখানে সন্তানের ক্যান্সারের চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করা তাদের পক্ষে একেবারেই অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ছোটবেলা থেকেই নাজমুলের লেখাপড়ার প্রতি প্রবল আগ্রহ। স্বপ্ন ছিল একদিন ডাক্তার হয়ে সমাজের সেবা করবে। কিন্তু আজ সেই স্বপ্ন থেমে যেতে বসেছে শুধুমাত্র অর্থের অভাবে।
তাই সমাজের সকল সহৃদয় ও বিত্তবান ব্যক্তিদের প্রতি পরিবারটি সহানুভূতি এবং সহযোগিতা কামনা করেছেন।আপনারা যদি যার যার সাধ্য অনুযায়ী সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন, তাহলে হয়তো নাজমুল আবারও নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখতে পারবে।
নাজমুলের চিকিৎসার জন্য যারা সাহায্য করতে ইচ্ছুক, তারা বিকাশ নাম্বারে অর্থ পাঠাতে পারেন: বিকাশ নম্বর: 01874802351 (নাজমুল হোসেনের পিতা – মো. ইসলাম মন্ডল)। আপনাদের সামান্য সহযোগিতা একটি জীবন বাঁচাতে পারে। সাহায্য পাঠানোর আগে যাচাই করে নিতে পারেন।
কুমিল্লা নগরীতে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী ও তার মায়ের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। সোমবার ভোরে নগরীর কালিয়াজুড়ি খেলার মাঠের পাশের একটি ভবনের দ্বিতীয় তলা থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়। তবে তাদের মৃত্যুর সময় এখনো নিশ্চিত করা যায়নি।
নিহতরা হলেন গৃহিনী তাহমিনা আক্তার ফাতেমা (৫২) ও তার মেয়ে সুমাইয়া আক্তার রিন্তি (২৩)। সুমাইয়া কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের ১৬ ব্যাচের তৃতীয় বষের শিক্ষার্থী ছিলো।
বাড়ির মালিক আনিছুল ইসলাম রানা জানিয়েছেন, চার বছর আগে কুমিল্লার আদালতের কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বাড়িটি ভাড়া নেন। গত বছর তার মৃত্যুর পর স্ত্রী তাহমিনা আক্তার ফাতেমা (৫০), কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মেয়ে সুমাইয়া আফরিন রিন্তি (২৪) তার আরও দুই ছেলে বাড়িটিতে থাকছেন।
বাড়ির মালিক আনিছুল ইসলাম রানা জানিয়েছেন, বাড়িতে তারা থাকতেন। তারা অন্য কারো সাথে তেমন কথা বলতেন না। গতকাল রাতে তার দুই ছেলে ঢাকা থেকে বাসায় আসলে তারা ঘরের দরজা খোলা দেখে। এই সময় তারা ভাবে তাদের মা ও বোন ঘুমিয়ে আছে। কিন্তু বাসায় ঢুকার পর দীর্ঘ সময় কেটে গেলেও তাদের কোন সারা শব্দ না পেলে জাগাতে গিয়ে দেখেন তারা নড়ছে না। পরে ৯৯৯ এ কল পেয়ে সোমবার ভোরবেলা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে এবং কুমিল্লা মেডিকেল এর মর্গে পাঠায়।
তিনি আরো জানান, টিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে একজন ব্যক্তি রবিবার দিনের বেলায় তাদের বাসায় আসা-যাওয়া করেছিল। পুলিশকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
নিহত তাহমিনার বড় ছেলে মোঃ তাজুল ইসলাম ফয়সাল (৩৪) জানান, তারা দুই ভাই এক বোন। ছোট ভাই কুমিল্লা ইপিজেড
চাকুরী করে। সে ঢাকায় আইন পেশায় নিযুক্ত। গতকাল ঢাকা থেকে বাড়ি ফিরে নিজের ঘরে যান। তার ভাইও বাসায় ফিরে নিজের রুমে গিয়ে বিশ্রাম নেন৷ তখন তার মাকে বার বার ডেকেও সাড়া না পেয়ে মায়ের রুমে যান। সেখানে তার মায়ের নিথর দেহ দেখতে পান। পরে বোনের কক্ষে গিয়েও বোনের মরদেহ দেখতে পান। পরে পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে।
তাজুল ইসলাম আরো জানান, দূর্বৃত্তরা তার মা ও বোনকে হত্যা করে মোবাইল ল্যাপটম, কানের দুল নিয়ে যায়।
কুমিল্লার কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মহিনুল ইসলাম বলেন, এটি একটি হত্যাকাণ্ড। তবে কিভাবে এ হত্যাকাণ্ড হয়েছে তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। ময়নাতদন্তের পর এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে।
মন্তব্য