রাষ্ট্রীয় গোপনীয় নথি চুরির অভিযোগে করা মামলায় গ্রেপ্তার প্রথম আলোর সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে পাল্টা নির্যাতন মামলা করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।
তিনি মনে করেন, রোজিনা পাল্টা মামলা করতে পারবেন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। কারণ, তাকে বেআইনিভাবে পাঁচ ঘণ্টা আটক করা হয়েছে। সেখানে মানসিক নির্যাতনও করা হয়েছে।
এই গণমাধ্যমকর্মীর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, সেটা সত্য হলেও তাকে পাঁচ ঘণ্টা মন্ত্রণালয়ের আটকে রাখার কোনো আইনি সুযোগ ছিল না বলে নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন তিনি।
এটি ২০১৩ সালে করা হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যু নিবারণ আইন অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলেই মনে করেন তিনি।
সোমবার বিকেলে এই গণমাধ্যমকর্মী স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে গিয়ে গোপন নথি সরানোর অভিযোগে আটক হন। বেলা দুইটা ৫৫ মিনিটের দিকে এই ঘটনা ঘটে বলে শাহবাগ থানায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে করা মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে।
রোজিনাকে থানায় নেয়া হয় রাত সাড়ে আটটার পরে। অর্থাৎ প্রায় পাঁচ ঘণ্টা তিনি মন্ত্রণালয়েই ছিলেন।
পরে রাত ১১টার পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের করা অভিযোগটি মামলা হিসেবে নিবন্ধন করে রোজিনাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের যে জায়গাটা কথা বলা দরকার, সেটা হলো সাংবাদিক রোজিনাকে যে পাঁচ ঘণ্টা আটকে রাখলেন, এই আটকে রাখার আইনি এখতিয়ার কেবল সচিব কেন, তার ওপরেও যদি হয়, মন্ত্রীও যদি হয়, তার আছে কি না। এই ধরনের কোনো আইনি এখতিয়ারই তাদের ছিল না। তারা সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে তাকে আটক রেখেছেন এবং এটা ফৌজদারি অপরাধ।’
তিনি বলেন, ২০১৩ সালে হেফাজতে নির্যাতন এবং মৃত্যু নিবারণ আইনে বলা হয়েছে, যেকোনো সরকারি কর্মকর্তা বা তার অফিস যদি নির্যাতন করে তাহলে সেটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আর এই নির্যাতন বলতে কেবল শারীরিক নির্যাতন হতে হবে, তা নয়, মানসিক নির্যাতনকেও আইনে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে।
এই আইনজীবী বলেন, ‘রোজিনার উচিত হবে এদের বিরুদ্ধে তার আইনি প্রতিকার চাওয়া।
‘আমি যদি ধরেও নেই যে রোজিনা নথি চুরিও করে থাকেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত ছিল সাথে সাথে। তাকে পাঁচ ঘণ্টা আটক রাখার কোনো এখতিয়ার তাদের ছিল না। তারা প্রমাণ করতেন, রোজিনা তার বক্তব্য আদালতে উপস্থাপন করতেন। কিন্তু তাকে নির্যাতন যখন করা হলো তিনি নিজে ভিকটিম হয়ে গেলেন। তিনি আর একিউজড (অভিযুক্ত) নন।’
জ্যোতির্ময় বলেন, ‘তিনি (রোজিনা) প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারেন।
রোজিনাকে মন্ত্রণালয়ে অবরুদ্ধ করার পরই গণমাধ্যমকর্মীরা ফেসবুকে নানা প্রতিক্রিয়া জানাতে থাকেন। তাকে শাহবাগ থানায় নেয়া হলে সেখানেও জড়ো হন সাংবাদিকরা। তারা তার মুক্তির দাবিতে নানা স্লোগান দিতে থাকেন।
মন্ত্রণালয়ের যে অভিযোগ
রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে যেসব নথি সরানোর অভিযোগ আনা হয়েছে, সেগুলোতে রাষ্ট্রীয় গোপনীয় তথ্য ছিল বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
বলা হয়, বিভিন্ন দেশের সাথে বাংলাদেশের ভ্যাকসিন ক্রয় সংক্রান্ত আলোচনা চলছে। এর খসড়া সমঝোতা স্মারক ও নন ডিসক্লোজার এগ্রিমেন্ট প্রণয়ন কাজ চলমান রয়েছে। সমঝোতা স্মারক নিয়ে পক্ষদ্বয়ের মধ্যে প্রতিনিয়ত পত্র ও ইমেইলের মাধ্যমে যোগাযোগ হচ্ছে। যেখানে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সন্নিবেশিত রয়েছে।
সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম যেসব নথিপত্রের ছবি তুলেছিল, তার মধ্যে উল্লেখিত গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ছিল বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
বলা হয়, ‘এ সকল তথ্য জনসম্মুখে প্রচার হলে সংশ্লিষ্ট দেশসমূহের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’
আরও বলা হয়, বিকেল দুইটা ৫৫ মিনিটে রোজিনা ইসলাম স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে সচিবের একান্ত সচিবের দপ্তরে ঢোকেন। তখন একান্ত সচিব দাপ্তরিক কাজে সচিবের কক্ষে অবস্থান করছিলেন। সে সময় রোজিনা ইসলাম দাপ্তরিক গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র শরীরের বিভিন্ন স্থানে লুকানোর পাশাপাশি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ছবি তোলেন।
সচিবের দপ্তরে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য মিজানুর রহমান খান বিষয়টি দেখতে পেয়ে রোজিনাকে বাধা দেন। আর নির্ধারিত কর্মকর্তার অনুপস্থিতে তিনি ওই কক্ষে কী করছেন, তা জানতে চান। এ সময় রোজিনা নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দেন।
অতিরিক্ত সচিব কাজী জেবুন্নেছা বেগম তল্লাশি করে রোজিনার কাছ থেকে বেশ গুরুত্বপূর্ণ কাজগপত্র এবং নথির ছবি সংবলিত মোবাইল উদ্ধার করেন।
সর্বোচ্চ সাজা কী?
রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে মামলায় অভিযোগ আনা হয়েছে মোট চারটি ধারায়। এগুলো হলো দণ্ডবিধির ৩৭৯ ও ৪১১ এবং অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের ৩ ও ৫ ধারা।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া জানিয়েছেন, এই চারটি ধারায় সর্বোচ্চ সাজা আছে তিন বছর এবং সঙ্গে জরিমানা হতে পারে।
আরও পড়ুন:বরেণ্য সংগীতশিল্পী, গবেষক ও লেখক মুস্তাফা জামান আব্বাসীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।
শনিবার এক শোকবার্তায় মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, একুশে পদকপ্রাপ্ত এই গুণী শিল্পী বাংলাদেশের সংগীত জগতে যে অবদান রেখেছেন তা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
প্রধান উপদেষ্টা মুস্তাফা জামান আব্বাসীর আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “উপমহাদেশের খ্যাতনামা সংগীত পরিবারে জন্ম নেয়া বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী এই শিল্পীর গান ও গবেষণা বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে নিত্যনতুন চিন্তা ও সৃষ্টির খোরাক জোগাবে।”
প্রসঙ্গত, মুস্তাফা জামান আব্বাসী ৮৭ বছর বয়স আজ সকালে মৃত্যুবরণ করেন।
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধসহ তিন দাবিতে হওয়া শাহবাগ অবরোধ কর্মসূচিসহ নানা কর্মসূচি এখন থেকে 'ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য' ব্যানারে পালিত হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ।
তিনি বলেন, এই আন্দোলন কোনো একক দলের বা মতের নয়।
বাংলাদেশের সর্বস্তরের ছাত্র-জনতা, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনসমূহ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে একত্রিত হয়েছে বলে উল্লেখ করেন হাসনাত।
শনিবার দুপুরে নিজের ভ্যারিফাইড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে তিনি এই ঘোষণা দেন।
ফেসবুকে হাসনাত লিখেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে গত দুই দিন ধরে ছাত্র-জনতা রাস্তায় অবস্থান করছে। এখনো পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ফ্যাসিস্ট ও সন্ত্রাসী দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে পারেনি।
বিভিন্ন মহল থেকে এই আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে দাবি করেন হাসনাত আবদুল্লাহ।
তিনি বলেন, নানাভাবে আন্দোলনকে বিতর্কিত ও বিভক্ত করার প্রচেষ্টা চলছে। আমরা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিচ্ছি, এই আন্দোলন কোনো একক দলের বা মতের নয়। সবার ঐক্যমতের ভিত্তিতে এখন থেকে আমাদের সব কর্মসূচি "ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য" ব্যানারে পালিত হবে।
ঢাকাসহ সারাদেশের ছাত্র-জনতাকে রাজপথে নেমে আসার আহবান জানিয়ে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, আসুন, আমরা সবাই জুলাইয়ের চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হই। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত গণঅভ্যুত্থানপন্থী সকল মত ও দল একত্রে আন্দোলন চালিয়ে যাবে।
তিনি বলেন, জুলাই এখনো শেষ হয়ে যায়নি। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের প্রশ্নে গণঅভ্যুত্থানের শক্তিগুলো ঐক্যবদ্ধ থাকবে, ইনশাআল্লাহ।
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে ছাত্র জনতার শাহবাগ অবরোধ কর্মসূচি গতকাল বিকেল পাঁচটা থেকে শুরু হয়ে এখন পর্যন্ত চলছে। আজ বিকেল থেকে আর দুইটি দাবি যোগ করে আন্দোলন কর্মসূচি পালিত হবে বলে ঘোষণা দেন হাসনাত।
দাবিগুলো হলো—আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা করে নিষিদ্ধ করা; আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে আওয়ামী লীগের দলগত বিচারের বিধান যুক্ত করা এবং জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করা।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরাতে ইন্টারপোলের মাধ্যমে চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ।
শনিবার (১০ মে) সকালে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন ব্যবস্থা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘শেখ হাসিনাকে ফেরাতে সবসময়ই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তবে, ইন্টারপোল তো আমার কথা অনুযায়ী কাজ করবে না! এক্ষেত্রে তারা (ইন্টারপোল) তাদের আইন-কানুন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।’
এসময় সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের দেশত্যাগের ঘটনা প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছেন, ‘প্রাথমিকভাবে কয়েকজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ঘটনার তদন্তে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে।’
‘তিন কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। রিপোর্টে আরও কারও সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে,’ যোগ করেন তিনি।
উপদেষ্টা বলেন, ‘আব্দুল হামিদের দেশত্যাগের নিষেধাজ্ঞা চেয়ে জেলা ডিএসবির আবেদনের বিষয়টি আমার জানা নেই।’
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘দাবি-দাওয়ার বিষয়ে রাস্তায় আন্দোলন করলে জনদুর্ভোগ হয়। এ বিষয়টি মাথায় রেখে রাস্তা ছেড়ে অন্য কোথাও আন্দোলন করলে ভালো হয়।’
এ ব্যাপারে জনগণকে সতর্ক করার জন্য সাংবাদিকদের সাহায্য চান উপদেষ্টা।
গতকাল (শুক্রবার) যমুনার সামনে ছিলেন আন্দোলনকারীরা। পরে বলার পর তারা শাহবাগে গেছেন। সেখানেও দুর্ভোগ হচ্ছে। তবে তারা ইমার্জেন্সিগুলো দেখছেন,’ বলেন জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
বরেণ্য সংগীতশিল্পী, গবেষক ও লেখক মুস্তাফা জামান আব্বাসী আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
আজ শনিবার সকালে বনানীর একটি হাসপাতালে তিনি মারা যান।
তাঁর মেয়ে শারমিনী আব্বাসী সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর। মৃত্যুকালে তিনি দুই কন্যা এবং বহু ভক্ত, অনুরাগী, শুভাকাঙ্ক্ষী রেখে গেছেন। তিনি ছিলেন পল্লিগীতির অগ্রপথিক আব্বাসউদ্দীন আহমেদের পুত্র।
বেশ কিছুদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন মুস্তাফা জামান আব্বাসী। তিনি গতকাল শুক্রবার শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। আজ ভোর সাড়ে ৫ টায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
গুলশান আজাদ মসজিদে আজ বাদ জোহর তাঁর নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী মুস্তাফা জামান আব্বাসী ১৯৩৬ সালের ৮ ডিসেম্বর উপমহাদেশের খ্যাতনামা সংগীত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা আব্বাসউদ্দীন আহমেদ ছিলেন পল্লীগীতির অগ্রপথিক এবং দেশের পল্লীসংগীতকে তিনিই প্রথম বিশ্বের দেশে দেশে জনপ্রিয় করেছেন।
মুস্তাফা জামান আব্বাসীর চাচা আবদুল করিম ছিলেন পল্লীগীতি ও ভাওয়াইয়া-ভাটিয়ালির জনপ্রিয় শিল্পী। বড় ভাই মোস্তফা কামাল ছিলেন প্রধান বিচারপতি। বোন ফেরদৌসী রহমান ও ভাতিজি নাশিদ কামালও সংগীতাঙ্গনে সুপ্রতিষ্ঠিত। তাঁর স্ত্রী আসমা আব্বাসী ছিলেন একজন প্রথিতযশা শিক্ষক ও লেখক। তিনি গত বছর মারা গেছেন।
ভারতের কোচবিহারের বলরামপুর গ্রামে জন্ম নেওয়া আব্বাসী শৈশব কাটিয়েছেন কলকাতায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ, এমএ ডিগ্রি অর্জনের পর হার্ভার্ড গ্রুপ থেকে মার্কেটিং বিষয়ে উচ্চশিক্ষা নেন। দীর্ঘ কর্মজীবনে তিনি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের নানা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।
লোকসংগীত গবেষণা ও সংগ্রহে তার অবদান অনন্য। তিনি দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে ফোক মিউজিক রিসার্চ গ্রুপের নেতৃত্ব দিয়েছেন।
মুস্তাফা জামান আব্বাসী ২৫টির বেশি দেশে ভাটিয়ালি, ভাওয়াইয়া, নজরুলগীতি পরিবেশন করে বাংলাদেশের সংগীতকে পৌঁছে দিয়েছেন বিশ্ব পরিমণ্ডলে। তিনি ছিলেন একজন গবেষক।
মুস্তাফা জামান আব্বাসীর উপস্থাপনায় বিটিভির ‘ভরা নদীর বাঁকে’, ‘আমার ঠিকানা’, ‘আপন ভুবন’ প্রভৃতি অনুষ্ঠান জনপ্রিয়তা পেয়েছে।সমাজসেবায়ও তিনি ছিলেন সক্রিয়, রোটারি ক্লাবের গভর্নর হিসেবে বহু উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন মুস্তাফা জামান আব্বাসী।
মুস্তাফা জামান আব্বাসী রচিত গ্রন্থের মধ্যে অন্যতম ‘লোকসঙ্গীতের ইতিহাস’, ‘ভাটির দ্যাশের ভাটিয়ালি’, ‘রুমির অলৌকিক বাগান’, উপন্যাস ‘হরিণাক্ষি’, স্মৃতিকথা ‘স্বপ্নরা থাকে স্বপ্নের ওধারে’ এবং ইংরেজি জীবনী।
বাংলা সংস্কৃতিতে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি একুশে পদকসহ অসংখ্য সম্মাননা লাভ করেছেন।
ঢাকা থেকে খুলনাগামী জাহানাবাদ এক্সপ্রেস ট্রেনের দুটি কোচ ভাঙ্গা বামনকান্দা জংশন এলাকায় লাইনচ্যুত হওয়ায় ১২ ঘন্টা ধরে বন্ধ রয়েছে দক্ষিণাঞ্চলের রেল চলাচল। পয়েন্টম্যানের ভুল সিগন্যাল দেওয়ার কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। ঘটনাটি তদন্তে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং পয়েন্টম্যানকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার (০৯ মে) রাত সাড়ে ৯টা দিকে দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ঢাকা-খুলনা, ঢাকা-বেনাপোল ও ঢাকা- রাজবাড়ী রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয় যায়। ফলে দুর্ভোগে পড়েন কয়েকশ যাত্রী। তবে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
এদিকে, লাইনচ্যুত কোচ ২টি উদ্ধারে ঈশ্বরদী ও খুলনা থেকে ২টি রিলিফ ট্রেন বা ক্রেনসহ শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উদ্ধার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে পাকশি বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা হাচিনা খাতুন বলেন, ‘গতকাল (শুক্রবার) রাত থেকে লাইনচ্যুত কোচ ২টি উদ্ধারে রাজবাড়ী ও খুলনা থেকে ২টি ক্রেন এনে লাইন সচল করতে কাজ করছি।’
হাচিনা খাতুন বলেন, ‘পয়েন্টম্যান নজরুল ইসলাম কতৃপক্ষ থেকে অনুমতি না নিয়েই সিগনাল বা পয়েন্ট পরিবর্তন করেছে। তার ভুল করার বিষয় সত্যতা পেয়েছি। একারণে তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে।’
এছাড়া এ ঘটনায় ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আশা করছি দুপুর নাগাদ লাইনটি সচল করা সম্ভব হবে।’
এ বিষয় ভাঙ্গা জংশনের সহকারী রেল স্টেশন মাস্টার সুমন বাড়ৈ জানান, ঢাকা থেকে খুলনা গামী জাহানাবাদ এক্সপ্রেসটি ভাঙ্গা রেল জংশন থেকে বের হওয়ার কিছুদূর পরে গিয়ে ইঞ্জিন সহ একটি বগি লাইনচ্যুত হয়ে যায়। সামনের ইঞ্জিন ও লাগেজ ভ্যান দুইটি এক লাইন থেকে অন্য লাইনে চলে যায়।
তিনি আরও বলেন, ‘পয়েন্টম্যান নজরুলের ভুলের কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে।’
সুমন বাড়ৈ বলেন, এ দুর্ঘটনার পরে গতকাল (শুক্রবার) রাত নয়টা দশ মিনিট থেকে এখন পর্যন্ত পদ্মা সেতু হয়ে দক্ষিণাঞ্চলের ৩টি রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। রাজবাড়ী ও খুলনা থেকে উদ্ধারকারী ক্রেন সহ কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা কাজ করছেন। দুপুর পর্যন্ত লাইনটি সচল করা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
এ ব্যাপারে ভাঙ্গা বামনকান্দা রেল জংশনের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ খায়রুজ্জামান সিকদার জানান, ট্রেনটি লাইনচ্যুত হওয়াতে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। রাতে সকল যাত্রী বিভিন্ন পরিবহনে চলে গিয়েছে।
বাংলাদেশের ৪টি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের ইউটিউব সম্প্রচার ভারতে বন্ধ করা হয়েছে। দেশটির সরকারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত উদ্বেগের কারণ দেখিয়ে চ্যানেলগুলো জিও ব্লক করে দিয়েছে ইউটিউব।
বন্ধ হওয়া চ্যানেলগুলো হলো—যমুনা, একাত্তর, বাংলাভিশন এবং মোহনা টেলিভিশন।
শুক্রবার (৯ মে) তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান ডিসমিসল্যাব তাদের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।
ভারতের ভূ-অবস্থান থেকে এই চ্যানেলগুলোতে প্রবেশের চেষ্টা করলে একটি বার্তা সামনে আসে। তাতে বলা হয়, ‘এই কনটেন্টটি বর্তমানে এই দেশে প্রবেশযোগ্য নয়। কারণ, এটি জাতীয় নিরাপত্তা বা জনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত সরকারি আদেশের আওতায় রয়েছে।’
এ বিষয়ে ইউটিউব থেকে আনুষ্ঠানিক বার্তা পাওয়ার কথা ডিসমিসল্যাবকে নিশ্চিত করেছে যমুনা টেলিভিশন। ভারত সরকারের অনুরোধে তাদের সব পুরোনো ও ভবিষ্যতের অনুষ্ঠান দেশটির দর্শকদের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
ডিসমিসল্যাব এই চার চ্যানেলের ইউটিউব লিংক নয়াদিল্লি ও কলকাতাভিত্তিক দুইজন সাংবাদিককে পাঠায়। তারাও নিশ্চিত করেন যে চ্যানেল চারটিতে প্রবেশ করা যাচ্ছে না।
জিও ব্লকিং মানে দর্শকের ভৌগোলিক অবস্থানের ভিত্তিতে কনটেন্ট অ্যাক্সেস সীমাবদ্ধ করা। এই ক্ষেত্রে, ব্লক করা বাংলাদেশি চ্যানেলগুলো বিশ্বব্যাপী অ্যাক্সেসযোগ্য (দেখা গেলেও) থাকলেও ভারতের ব্যবহারকারীরা দেখতে পাবেন না।
গত ২২ এপ্রিল পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার প্রতিক্রিয়ায় ৬ মে দিবাগত রাতে ভারতীয় সেনাবাহিনী পাকিস্তানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে পরিচালিত এই হামলা নিয়ে দেশ দুটির মধ্যে উত্তেজনা চরমে। এরই মধ্যে বাংলাদেশের চ্যানেলগুলোর সম্প্রচার ভারতে বন্ধ করা হলো।
এর আগে এক্স জানায়, ভারত সরকার আট হাজারের বেশি অ্যাকাউন্ট ব্লক করার নির্দেশ দিয়েছে, যার মধ্যে মাক্তুব মিডিয়া, দ্য কাশ্মিরিয়াত ও ফ্রি প্রেস কাশ্মিরের মতো স্বাধীন সংবাদমাধ্যমের অ্যাকাউন্টও রয়েছে।
গত মাসে ভারতের নির্দেশে বেশকিছু পাকিস্তানি ইউটিউব চ্যানেল এবং রাজনীতিবিদ ও তারকাদের ইনস্টাগ্রাম আইডি ভারতে ব্লক করা হয়েছে বলেও ডিসমিসল্যাবের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
এদিকে, ভারতের এই পদক্ষেপে দেশটিতে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিক—যারা এসব চ্যানেল নিয়মিত দেখেন তাদের অধিকার ক্ষুণ্ন হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, ‘এ ধরনের কাজ ভোক্তা অধিকারের আন্তর্জাতিক রীতির পরিপন্থি।’
এ ব্যাপারে ইউটিউবের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হবে বলে জানান ফয়েজ আহমদ। তিনি বলেন, ‘আমরা ইউটিউবের কাছে এর সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা চাইব। যদি সন্তোষজনক ব্যাখ্যা না পাই, তাহলে পাল্টা পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হব।’
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধসহ তিনদফা দাবিতে শাহবাগে গণসমাবেশের ডাক দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এসসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ।
শুক্রবার ( ৯ মে) রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে এক পোস্টে এই কর্মসূচী ঘোষণা দেন তিনি। আজ (শনিবার) বিকাল ৩টা থেকে এই সমাবেশ শুরু হবে বলে জানান তিনি।
এছাড়াও, দেশের বিভিন্ন স্থানে জুলাই অভ্যুত্থানের সঙ্গে সম্পর্কিত স্থানগুলোতে শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনগণ জড়ো হওয়ার জন্য আহ্বান জানান হাসনাত।
দাবিগুলো হলো— আওয়ামী লীগকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা করে নিষিদ্ধ করা, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে আওয়ামী লীগের দলগত বিচার সংক্রান্ত ধারা অন্তর্ভুক্ত করতে করা এবং জুলাইয়ের ঘোষণাপত্র জারি করা।
এর আগে শুক্রবার ( ৯ মে) জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) হাসনাত আবদুল্লাহ বিকাল ৪টা ৪০ মিনিটের দিকে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ ঘোষণা দেন হাসনাত। পরে সেখানে অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন তারা।
তিনি বলেন, ‘ইন্টেরিমের (অন্তর্বর্তী সরকারের) কানে আমাদের দাবি পৌঁছায়নি। তাই আমরা সমাবেশস্থল থেকে শাহবাগ অবরোধে যাচ্ছি। দাবি না আদায় পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করব।’
মন্তব্য