ঈদ সামনে রেখে ঘরমুখী মানুষের পাশাপাশি যানবাহন পারাপারে মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটে চলছে সবগুলো ফেরি।
এর ফলে ঘাট নিয়ে বিধিনিষেধের সিদ্ধান্তে বারবার পরিবর্তন এবং নিষেধাজ্ঞা দিয়েও তা শিথিল করে রাখায় কয়েক দিন ধরে যাত্রীদের যে ভোগান্তি হচ্ছিল, তা অনেকটা কমেছে।
মঙ্গলবার শিমুলিয়া ঘাটে যাত্রীদের চাপ থাকলেও সব ফেরি চলায় ছিল না দীর্ঘ অপেক্ষা। সকাল থেকে একের পর এক কয়েকটি ফেরি যানবাহন ও যাত্রী নিয়ে বাংলাবাজার ঘাটের উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
কিছু পণ্যবাহী যান সকালে অপেক্ষায় থাকলেও দেখা যায়নি কোনো হট্টগোল কিংবা যানজট।
শিমুলিয়া ঘাটের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) সাফায়েত আহমেদ জানান, সকাল থেকে তাদের বহরে থাকা সবগুলো ফেরি দিয়ে যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে। সকাল থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত ফেরিতে প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজার মানুষ শিমুলিয়া ঘাট ছেড়ে গেছে। সোমবার রাতভর ফেরি চলাচল করেছে।
এ কারণে ঘাটের যানবাহন এবং যাত্রীর চাপ অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে এসেছে।
এ ঘাটের ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (টিআই) হিলাল উদ্দিন বলেন, ঘাট এলাকার কাছে কয়েকটি পয়েন্টে পণ্যবাহী ট্রাক ও ব্যক্তিগত গাড়ি আটকে আছে। আগে ঘাটের গাড়িগুলো পার করে তারপর এগুলো ছাড়া হবে।
বিআইডব্লিউটিসির আরিচা কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক জিল্লুর রহমানের দাবি, লাশবাহী, অ্যাম্বুলেন্স ও জরুরি কাজে নিয়োজিত যানবাহনের সঙ্গে কিছু মানুষ ফেরিতে পার হচ্ছে। তবে ঘাটে গিয়ে এই দাবির সত্যতা দেখা যায়নি। ফেরিতে যাত্রীদের ভিড়ে যানবাহনগুলোই ঢাকা পড়ে গেছে।
জিল্লুর রহমান বলেন, ‘যাত্রী যাতে পার না হয়, সেজন্য ঘাটের লোকজনকে বলা আছে। কিন্তু যাত্রী ও মানুষ তো আমাদের লোকজনের কথা শোনে না।
‘লাশবাহী, অ্যাম্বুলেন্স ও জরুরি কাজে নিয়োজিত যানবাহন নিয়ে ঘাট থেকে যাচ্ছে ফেরি।’
তিনি আরও জানান, এই নৌপথে ১৬টি ফেরির মধ্যে মঙ্গলবার সকালে একটি ছাড়া হয়েছে। দিনে ছয়টি ফেরি চালানো হবে। অতিরিক্ত চাপ পড়লে আটটা ফেরি চালানো হবে। তাতেও কাজ না হলে প্রয়োজন অনুযায়ী ফেরি চালানো হবে। তবে যাত্রী পারাপারের বিষয়ে নিষেধ আছে।
ঘাটে এলাকায় মঙ্গলবার সকালে দেখা যায়, নদী পাড়ি দিতে অপেক্ষায় রয়েছে কয়েক শ যাত্রী, ব্যক্তিগত ছোট গাড়ি ও দুই শরও বেশি পণ্যবাহী ট্রাক। ঘাটেও জটলা যাত্রীদের।
ঘাট সূত্রে জানা যায়, একটি ফেরি পন্টুনে ভিড়লেই তাতে হুমড়ি খেয়ে যাত্রীরা উঠে যায়। সেটি ছেড়ে গেলে কিছু সময়ের জন্য ঘাট কিছুটা ফাঁকা হলেও পরে ফেরির অপেক্ষায় দুই-তিন ঘণ্টায় আবার জটলা বেড়ে যায় যাত্রীদের।
ঘাট নিয়ে সিদ্ধান্ত ও শিথিল বিধিনিষেধ
ঈদের আগে প্রতিটি ঘাটে উপচে পড়া ভিড়ের মধ্যে যাত্রী নিয়ে ফেরি চলাচলের অনুমতি দেয়ার কিছুক্ষণ পরই সোমবার আবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কথা জানায় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি)।
বিআইডব্লিউটিসির পাটুরিয়া ঘাটের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) জিল্লুর রহমান সোমবার সন্ধ্যায় নিউজবাংলাকে সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘প্রথমে নির্দেশ এসেছিল যাত্রী নিয়ে সবগুলো ফেরি চলবে। কিন্তু কিছুক্ষণ পরে আবার জানানো হয়, আগের মতোই জরুরি প্রয়োজনে সন্ধ্যার পর থেকে ফেরি চলবে। তবে বাড়ানো হয়েছে দুইটি ফেরি। জরুরি প্রয়োজনে আরও ফেরি বাড়ানো হতে পারে।’
বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান সৈয়দ তাজুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দিনের বেলা ফেরি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত বলবৎ আছে। তবে দিনের বেলা আমাদের জরুরি সার্ভিস রোগী আর অ্যাম্বুলেন্স পার করা, সেটা ২৪ ঘণ্টা চালু আছে। বর্তমানে জরুরি সার্ভিস আরও দুটি বাড়িয়েছি।’
পাটুরিয়া ঘাটের ডিজিএম জিল্লুর রহমান সোমবার বিকেলে নিউজবাংলাকে জানিয়েছিলেন, ঈদের আগে প্রতিটি ঘাটে উপচে পড়া ভিড়ের মধ্যে যাত্রী নিয়ে ফেরি চলাচলে অনুমতি দিয়েছে সরকার। সে নির্দেশ আসামাত্র সব ফেরি চালুও করে দেয় পাটুরিয়া ঘাট কর্তৃপক্ষ।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে চলা লকডাউন কয়েক দফা বাড়িয়ে ১৬ মে পর্যন্ত করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ৬ মে থেকে শহরগুলোতে গণপরিবহন চলার অনুমতি দেয়া হলেও বন্ধ রয়েছে আন্তজেলা বাস, ট্রেন ও লঞ্চ। শুধু পণ্য পরিবহনের জন্য চালু রাখা হয়েছিল ফেরি।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) শুক্রবার রাতে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছিল, শনিবার থেকে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ও শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌপথে দিনে ফেরি চলাচল বন্ধ থাকবে। রাতে শুধু পণ্যবাহী পরিবহন পারাপারের জন্য ফেরি চলবে।
এরপর শনিবার বিজিবির পরিচালক (অপারেশন) লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফয়জুর রহমান ঘোষণা দেন, ফেরিতে যাত্রী পারাপার ঠেকাতে ঘাটে থাকবে তাদের টহল দল।
তবে এসব বিধিনিষেধে থেমে ছিল না ঈদযাত্রা। শিমুলিয়া ও পাটুরিয়ায় দিনেও চলেছে ফেরি। পণ্যবাহী ও জরুরি সেবায় নিয়োজিত গাড়ি পারাপারের জন্য সেগুলো ছাড়া হচ্ছে বলে ঘাট কর্তৃপক্ষ দাবি করলেও প্রতি ফেরিতে যাত্রীদের ভিড়ে চোখেই পড়েনি যানবাহন।
বিজিবি ও পুলিশের টহলের মধ্যেও ঘাটে এসেছেন হাজার হাজার যাত্রী। ঘাটে ফেরি ভিড়লেও যে যেভাবে পেরেছেন উঠেছেন সেগুলোতে।
আরও পড়ুন:আয়কর অফিসসহ সরকারি বিভিন্ন অফিসে ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের জন্য বিএনপির নামে আন্দোলন চালিয়ে একটি ‘কুচক্রী মহল’র বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টার সমালোচনা করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, ‘যারা আয়কর অফিসে বা অন্যান্য বিভাগে বিএনপির নামে আন্দোলন করছেন—তারা বিএনপির অংশ নয়। তারা নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্যই এটা করছে।’
শুক্রবার (২৭ জুন) রথযাত্রা উৎসব উপলক্ষে রাজধানীর নয়াপল্টনের ভাসানী ভবনে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন ফ্রন্ট আয়োজিত এক আলোচনা সভায় রিজভী এই মন্তব্য করেন।
তিনি সতর্ক করে বলেন, কিছু ব্যক্তি বিভিন্ন ক্ষেত্র এবং সরকারি অফিসে তাদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার জন্য বিএনপির নামে নতুন নতুন কার্যকলাপ শুরু করার চেষ্টা করছে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘যারা জাতীয়তাবাদী আদর্শে বিশ্বাসী তাদের সকলেরই তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকা উচিত। তারেক রহমান তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছেন। কিন্তু তারপরও অনেকে বিএনপির নাম ব্যবহার করে বিএনপির ভাবমূর্তি নষ্ট করছেন।’
রিজভী বলেন, তিনি এমন একজনের কথা শুনেছেন যিনি বিএনপির নাম ব্যবহার করে আয়কর অফিসে আন্দোলন করছেন।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘তিনি (সেই ব্যক্তি) এখন (এনবিআর) চেয়ারম্যানকে অপসারণের চেষ্টা করছেন এবং ভবিষ্যতে অন্য কাউকে অপসারণের চেষ্টা করবেন। কে তাকে এই দায়িত্ব দিয়েছে? আমি বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব—আমি এ বিষয়ে জানি না। আপনি নিজেই বিএনপির নাম ব্যবহার করে একটি অফিসে আন্দোলন শুরু করেছিলেন। সেখানে আরও অনেক বিএনপি নেতা আছেন, কেউ এ সম্পর্কে জানেন না।’
বিএনপির নামে যারা অপকর্ম করছে তাদের সম্পর্কে সতর্ক থাকার জন্য বিএনপি নেতা-কর্মীদের আহ্বান জানান রিজভী। বলেন, ‘রক্তপাত এবং সংগ্রামের মাধ্যমে সৃষ্ট সুযোগ আগামী দিনে একটি উন্নত রাজনৈতিক পরিবেশ গড়ে তুলতে সাহায্য করবে। প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে।’
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের ত্রুটি-বিচ্যুতির সমালোচনা করলেও সরকারের ভালো কাজের প্রতি সমর্থন জানায় বিএনপি।
লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে আলোচনা অনুসারে, সরকার যুক্তিসঙ্গত সময়ে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান করবে বলে আশা প্রকাশ করেন রিজভী।
তিনি বলেন, গ্রেপ্তার সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার হাবিবুল আউয়াল স্বীকার করেছেন যে, ২০২৪ সালের নির্বাচন ছিল একটি ভুয়া নির্বাচন। ‘তার এই মন্তব্য স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে (শেখ) হাসিনার আমলে সমস্ত নির্বাচন অবৈধভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।’
বিএনপি নেতা দাবি করেন, প্রশাসনের ভেতরে লুকিয়ে থাকা কিছু লোক—যারা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী। তারা বিভিন্ন বিভাগে বিভিন্নভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের তাদের সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে।’
দেশব্যাপী ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’ যথাযথভাবে উদযাপনে অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য জেলা পর্যায়ে বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করেছে সরকার।
বৃহস্পতিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (কমিটি ও অর্থনৈতিক) মো. হুমায়ুন কবির স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, দেশের প্রতিটি জেলায় জেলা প্রশাসককে সভাপতি করে ৩৫ সদস্যের একটি বাস্তবায়ন কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
কমিটির সদস্য হিসেবে থাকবেন-জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (সভাপতি); পুলিশ সুপার, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা পরিষদ, সিভিল সার্জন, উপপরিচালক, স্থানীয় সরকার; নির্বাহী প্রকৌশলী, গণপূর্ত বিভাগ; নির্বাহী প্রকৌশলী, সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ; উপপরিচালক, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর; নির্বাহী প্রকৌশলী, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর; নির্বাহী প্রকৌশলী, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, জেলা কমান্ড্যান্ট, আনসার ও ভিডিপি/অধিনায়ক, আনসার ব্যাটালিয়ন, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাহী অফিসার (সকল), জেলা সদরের সরকারি কলেজের একজন প্রতিনিধি (অধ্যক্ষ মনোনীত), সরকারি মহিলা কলেজের একজন প্রতিনিধি (অধ্যক্ষ মনোনীত), বেসরকারি কলেজের একজন অধ্যক্ষ (জেলা প্রশাসক মনোনীত), মাদ্রাসার একজন অধ্যক্ষ (জেলা প্রশাসক মনোনীত), জেলা শিক্ষা অফিসার, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, উপপরিচালক, সমাজসেবা অধিদপ্তর; উপপরিচালক, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর; উপপরিচালক, ইসলামিক ফাউন্ডেশন; জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একজন প্রধান শিক্ষক (জেলা প্রশাসক মনোনীত), বালিকা বিদ্যালয়ের একজন প্রধান শিক্ষক (জেলা প্রশাসক মনোনীত), কওমি মাদ্রাসার একজন অধ্যক্ষ (জেলা প্রশাসক মনোনীত), জেলা কালচারাল অফিসার, জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা, জেলা বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি, চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি, জেলা প্রেসক্লাব সভাপতি. ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’-এ শহিদ পরিবারের দু’জন সদস্য (যদি থাকে, জেলা প্রশাসক মনোনীত), আহত দু’জন সদস্য (যদি থাকে, জেলা প্রশাসক মনোনীত), জেলার পাঁচজন রাজনৈতিক নেতা/গণ্যমান্য ব্যক্তি (একজন মহিলা অন্তর্ভুক্তসহ, জেলা প্রশাসক মনোনীত), কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক)।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’ উদযাপন উপলক্ষ্যে জাতীয় নির্বাহী কমিটির পরিকল্পনা ও কর্মসূচি বাস্তবায়ন, জেলা পর্যায়ের বাস্তবতা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রদান এবং জাতীয় কমিটি ও নির্বাহী কমিটি কর্তৃক অর্পিত কাজ করবে জেলা বাস্তবায়ন কমিটি।
কমিটি প্রয়োজনে নতুন সদস্য কো-অপ্ট করতে পারবে এবং প্রয়োজন অনুসারে সভা আহ্বান করা যাবে। এই প্রজ্ঞাপন অবিলম্বে কার্যকর হবে।
বিগত তিনটি বিতর্কিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে ওঠা অভিযোগ তদন্ত এবং ভবিষ্যতে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সুপারিশ প্রণয়নের জন্য একটি কমিটি গঠন করেছে সরকার।
বৃহস্পতিবার রাতে এই বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
সেখানে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশে ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচনগুলো নিয়ে দেশ-বিদেশে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে। এসব নির্বাচনে নানা কৌশলে জনগণের ভোটাধিকার হরণ করে একটি নির্দিষ্ট দল আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনার অভিযোগ রয়েছে। সংবিধানে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনার বাধ্যবাধকতা থাকলেও, এই নির্বাচনে তা লঙ্ঘনের গুরুতর অভিযোগও রয়েছে। এতে দেশে আইনের শাসন, গণতন্ত্র ও মৌলিক মানবাধিকার হুমকির মুখে পড়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।’
প্রজ্ঞাপনে আরো বলা হয়, ‘এই প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ভবিষ্যতে জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা, দেশে গণতন্ত্রকে রক্ষা করা এবং ফ্যাসিবাদ ও কর্তৃত্ববাদী শাসনের আশঙ্কা প্রতিহত করার লক্ষ্যে এই তিন নির্বাচনে সংঘটিত অনিয়ম, দুর্নীতি ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেই লক্ষ্যেই সরকার ‘বিগত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে উত্থাপিত অভিযোগের তদন্ত এবং ভবিষ্যতে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সুপারিশ প্রণয়ন কমিটি’ গঠন করেছে।’
পাঁচ সদস্যের এই কমিটির সভাপতি করা হয়েছে হাইকোর্ট বিভাগের সাবেক বিচারপতি শামীম হাসনাইনকে।
কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন, সাবেক অতিরিক্ত সচিব শামীম আল মামুন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মাহফুজুল হক, আইনজীবী ব্যারিস্টার তাজরিয়ান আকরাম হোসাইন ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞ মো. আবদুল আলীম।
কমিটির কার্যপরিধিতে যা রয়েছে, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে দেশি-বিদেশি নির্বাচন পর্যবেক্ষক, তদারকি প্রতিষ্ঠান ও নাগরিক সংগঠনের প্রতিবেদন এবং গণমাধ্যমে প্রকাশিত অভিযোগ বিশ্লেষণ; এসব নির্বাচনে সংঘটিত দুর্নীতি, অনিয়ম ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের নিরপেক্ষতা ও গ্রহণযোগ্যতা সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের মতামত গ্রহণ ও বিশ্লেষণ; রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণ সীমিত করা, ভোটাধিকার হরণ এবং তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের ভূমিকা পর্যালোচনা; তৎকালীন নির্বাচন কমিশন, সচিবালয়, প্রশাসন এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার ভূমিকা বিশ্লেষণ এবং নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্ট আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ যাচাই ও অনুসন্ধান।
কমিটি এসব বিশ্লেষণের ভিত্তিতে দায়-দায়িত্ব নির্ধারণ করবে এবং ভবিষ্যতের নির্বাচনকে সুষ্ঠু করতে প্রযোজ্য আইন, বিধি-বিধান, নির্বাচন কমিশনের কাঠামো ও প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয় পরিবর্তনের বিষয়ে সুপারিশ দেবে।
আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখের মধ্যে সরকারের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবে কমিটি।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা এবং নির্বাচন কমিশন লজিস্টিক ও তথ্য সহায়তা দেবে।
কমিটি প্রয়োজনে যেকোনো সরকারি দপ্তরের দলিল-দস্তাবেজ তলব করতে এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে। প্রয়োজনে কমিটি অতিরিক্ত সদস্য কো-অপ্টও করতে পারবে।
এই প্রজ্ঞাপন অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে জানানো হয়েছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, সামাজিক ব্যবসা (সোশ্যাল বিজনেস) শুধু বাংলাদেশ নয়, বরং পুরো বিশ্বকে বদলে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।
তিনি আরও বলেন, পৃথিবীতে সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার একমাত্র সঠিক পথ হল সামাজিক ব্যবসা। এর মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবার চ্যালেঞ্জগুলো সফলভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব।
শুক্রবার সাভারের জিরাবো সামাজিক কনভেনশন সেন্টারে দু’দিনের ‘সোশ্যাল বিজনেস ডে’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
‘সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সামাজিক ব্যবসা সর্বোত্তম পন্থা’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে এবারের সোশ্যাল বিজনেস ডে উদযাপন করা হচ্ছে।
এবারের সম্মেলনে বিশ্বের ৩৮টি দেশ থেকে ১ হাজার ৪০০ জনেরও বেশি প্রতিনিধি অংশ নিয়েছেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, সরকারের সিনিয়র কর্মকর্তা, বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক এবং বিদেশি অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন।
১৫তম সোশ্যাল বিজনেস ডে উপলক্ষে বিশ্বজুড়ে সামাজিক ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত নেতা ও উদ্যোক্তাদের নিয়ে আয়োজিত কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত রয়েছেন তিনি। পাশাপাশি মূল প্রবন্ধও উপস্থাপন করবেন নোবেলজয়ী এই অর্থনীতিবিদ।
শুক্রবার (২৭ জুন) সকালে সাভারের জিরাবোতে সামাজিক কনভেনশন সেন্টারে এই কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। একটি সংক্ষিপ্ত সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মাধ্যমে আজ প্রথম দিনের অনুষ্ঠান শুরু হয়।
ইউনূস সেন্টার ও গ্রামীণ গ্রুপ আয়োজিত এবারের সোশ্যাল বিজনেস ডে-র মূল প্রতিপাদ্য: ‘সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সোশ্যাল বিজনেসই সর্বোত্তম পথ।’
প্রথম দিনের উদ্বোধনী পর্বে আরও বক্তব্য দেন বিশ্ব ব্যাংকের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট (১৯৯২–২০০০) ড. ইসমাইল সেরাগেলদিন, গ্রামীণ গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. আশরাফুল হাসান ও ইউনূস সেন্টারের রিলেশনস ম্যানেজার জিনাত ইসলাম।
দুদিনব্যাপী এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনের লক্ষ্য হলো, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন খাতে বৈষম্য ও সীমাবদ্ধতা মোকাবিলা করে একটি টেকসই, ন্যায়ভিত্তিক ও মানবিক বিশ্ব গড়ে তোলা।
এই আয়োজনে রয়েছে পাঁচটি প্লেনারি ও আটটি ব্রেকআউট সেশন, যেখানে বৈচিত্র্যময় মত ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের সুযোগ পাবেন অংশগ্রহণকারীরা। ৩৪টি দেশের ১৮০ জনের বেশি বিদেশি প্রতিনিধিসহ সহস্রাধিক অংশগ্রহণকারী এতে যোগ দিয়েছেন।
আলোচকদের মধ্যে রয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ সহকারী অধ্যাপক মো. সাইদুর রহমান, মেডট্রনিকের সাবেক সিইও ও চেয়ারম্যান এবং ইন্টেল করপোরেশনের সাবেক বোর্ড চেয়ারম্যান ওমর ইশরাক, জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচির সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও নরওয়ের সাবেক পরিবেশ ও জলবায়ুমন্ত্রী এরিক সোলহেইম। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টারাও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের সম্প্রসারিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে আগামী ২৯ জুন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সঙ্গে যৌথভাবে অনুষ্ঠিত হবে বিশেষ অ্যাকাডেমিয়া ডায়লগ, যেখানে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও গবেষকেরা অংশ নিয়ে সমাজে অগ্রগতির চালিকাশক্তি হিসেবে সামাজিক ব্যবসায়ের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করবেন।
এ ছাড়া, সেদিন ৩-জিরো ক্লাব কনভেনশন অনুষ্ঠিত হবে। এই কনভেনশনের উদ্দেশ্য হলো ‘তিন শূন্য’ বা ‘থ্রি জিরো’ অর্জন: শূন্য নিট কার্বন নিঃসরণ, শূন্য সম্পদ কেন্দ্রীকরণ ও শূন্য বেকারত্ব।
টানা চার দিন ‘মাঝারি’ শ্রেণিতে থাকার পর ছুটির দিনে অনেকটা অবাক করে দিয়ে ঢাকার বাতাসের মানে অবনতি হয়েছে। সেইসঙ্গে বায়ুদূষণে শীর্ষ শহরগুলোর তালিকাতেও লম্বা লাফ দিয়ে উপরের দিকে চলে এসেছে বাংলাদেশের রাজধানী শহর।
শুক্রবার (২৭ জুন) সকাল ৯টায় ঢাকার বাতাসের একিউআই সূচক ছিল ১০২। বায়ুমানের শ্রেণি অনুযায়ী, সংবেদনশীল গোষ্ঠীর মানুষের জন্য এই মান অস্বাস্থ্যকর বলে বিবেচিত হয়।
সবশেষ গত ২১ জুন এই শ্রেণিতে নেমেছিল ঢাকার বায়ুমান। তার পরের চার দিন ‘মাঝারি’ শ্রেণিতে থাকার পাশাপাশি দূষিত বায়ুর শহরগুলোর তালিকাতেও বেশ নিচে অবস্থান করছিল শহরটি।
এর মধ্যে ২১ জুন সকাল সাড়ে ৯টার দিকে দশম, ২২ জুন একই সময়ে ১৭তম, ২৩ জুন সকাল ৯টায় ২১তম, ২৪ জুন ২৯তম, ২৫ জুন ৩১তম এবং গতকাল ২৬ জুন ঢাকার অবস্থান ছিল ৩৮তম। অর্থাৎ ক্রমেই উন্নতি হচ্ছিল ঢাকার বায়ুমানে।
গত কয়েক দিনে একটু একটু করে দূষণ থেকে দূরে সরলেও আজ (শুক্রবার) ফের শীর্ষ দশ শহরের মধ্যে স্থান করে নিয়েছে ঢাকা। শহরটির অবস্থান আজ দশম।
এই সময়ে ১৭৩ একিউআই স্কোর নিয়ে দূষিত বায়ুর শহরগুলোর মধ্যে শীর্ষস্থান দখল করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই, স্কোর ১৬৫ নিয়ে পাকিস্তানের লাহোরের অবস্থান দ্বিতীয় এবং গতকাল এই সময়ে শীর্ষে থাকা কঙ্গোর কিনশাসা রয়েছে আজ তিন নম্বরে; শহরটির একিউআই স্কোর ১৫৯।
এ ছাড়া ১৫৪ ও ১৫২ স্কোর নিয়ে শীর্ষ পাচ শহরের অপর দুটি স্থানে রয়েছে যথাক্রমে ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা ও চিলির সান্তিয়াগো।
এর মধ্যে আজ লক্ষণীয় উন্নতি হয়েছে দিল্লির বাতাসের। ৭৯ স্কোর নিয়ে ভারতের শহরটির বায়ুমান ‘মাঝারি’, আর তালিকায় রয়েছে ২১তম স্থানে।
কণা দূষণের একিউআই মান যদি ০ থেকে ৫০-এর মধ্যে থাকে, তবে তা ‘ভালো’ হিসেবে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০-এর মধ্যে হলে সেটি ‘মাঝারি’।
একিউআই স্কোর ১০১ থেকে ১৫০ হলে ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ বলে গণ্য করা হয়। এই পর্যায়ে সংবেদনশীল ব্যক্তিদের দীর্ঘ সময় বাইরে পরিশ্রম না করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
এ ছাড়া ১৫১ থেকে ২০০ হলে তা ‘অস্বাস্থ্যকর’, ২০১ থেকে ৩০০ হলে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ এবং ৩০১-এর বেশি হলে তা ‘বিপজ্জনক’ হিসেবে বিবেচিত হয়, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি করে।
বাংলাদেশে একিউআই সূচক নির্ধারিত হয় পাঁচ ধরনের দূষণের ভিত্তিতে— বস্তুকণা (পিএম১০ ও পিএম২.৫), নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড (এনও₂), কার্বন মনো-অক্সাইড (সিও), সালফার ডাই-অক্সাইড (এসও₂) ও ওজোন।
ঢাকা দীর্ঘদিন ধরেই বায়ুদূষণজনিত সমস্যায় ভুগছে। শীতকালে এখানকার বায়ুমান সাধারণত সবচেয়ে খারাপ থাকে, আর বর্ষাকালে তুলনামূলকভাবে উন্নত হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, বায়ুদূষণের কারণে প্রতিবছর বিশ্বে আনুমানিক ৭০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। এসব মৃত্যুর প্রধান কারণ হলো স্ট্রোক, হৃদরোগ, দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসকষ্ট (সিওপিডি), ফুসফুসের ক্যান্সার এবং শ্বাসযন্ত্রের তীব্র সংক্রমণ।
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তিনি সাক্ষাৎ করেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এ কথা জানিয়েছে।
মন্তব্য