করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে ঈদ উদযাপনে রাজধানী ছাড়তে গিয়ে যেন কোনো প্রাণহানি না ঘটে, সে বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ভিডিও কনফারেন্সে বৃহস্পতিবার সকালে বরিশাল, রংপুর, পাবনা ও সিলেটে নতুন চারটি মেরিন একাডেমিসহ নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ছয়টি প্রকল্পের নতুন অবকাঠামো ও জলযান উদ্বোধন করার সময় তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন করোনার সময়। আত্মীয়স্বজনের সাথে তো বেঁচে থাকলে দেখা হবেই। কিন্তু জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঈদ উপলক্ষে সবাই ছোটাছুটি না করে, যে যেখানে আছেন, সেখানেই ঈদটা উদযাপন করেন।
‘যারা বিত্তশালী আছেন, তারা পারলে দুস্থদের সহযোগিতা করেন। এটা আরও বেশি সওয়াবের কাজ হবে বলে আমি মনে করি। কাজেই নিজেরা সুরক্ষিত থাকেন।’
তিনি বলেন, ‘করোনা যাতে সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে না পড়ে, এ জন্য সবার কাছে আমার অনুরোধ, স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে চলুন। এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাতায়াত একেবারে না পারলে আপনারা করবেন না। এই যাতায়াতটা করতে গেলেই কে যে সংক্রমিত হবে, আপনি জানেন না। কিন্তু সে যখন অন্য জায়গায় যাবে অনেক লোককে এই করোনা সংক্রমিত করবে।
‘তাদের জীবন নিয়ে সংকট দেখা দেবে। সেটা যাতে না হয়, এ জন্যই আমরা এই যাতায়াতটা সীমিত করার পদক্ষেপ নিয়েছি। কিন্তু সেই সাথে যেন আর্থ-সামাজিক কর্মকাণ্ডগুলো অব্যাহত থাকে সেটিও সীমিত আকারে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সে ব্যবস্থা আমরা করে যাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যে মানুষগুলোর জীবন চলে যায়, আপনজন হারিয়ে বেঁচে থাকেন তাদের কষ্টের কথাটা আপনারা একবার চিন্তা করবেন। কাজেই এটুকু ধৈর্য্য ধরতে হবে। যেকোনো একটা বিপদ আসলে ধৈর্য্য ধরতে হবে; সবুর করতে হবে। সেই সবুরটা সকলেরই করা উচিত। নিয়মগুলো মেনে চলতে হবে।’
ঈদের এ সময়ে নৌযানে যাতায়াতকারী এবং পরিচালনাকারী সবাইকে সতর্ক থাকারও পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশ ছয় ঋতুর দেশ। প্রতি দুই মাস পরপর ঋতু পরিবর্তন হয়। এখন কালবৈশাখীর সময় যারা চলাচল করবেন একটু সাবধানে চলাচল করবেন।
‘যারা এই নৌযানগুলো চালান বা পরিচালনা করেন বা ব্যবসা করেন, যাত্রীদের সুরক্ষা যেমন তাদের দেখতে হবে, আবার যাত্রীদেরও নিজেদের সুরক্ষার কথা চিন্তা করতে হবে। একটা নৌযানে কতজন মানুষ উঠতে পারে? ঠেলাঠেলি করে একসাথে সবাই উঠতে গিয়ে তারপর একটা এক্সিডেন্ট হবে আর নিজেদের জীবনটা চলে যাবে। এ ব্যাপারে সকলকে একটু সতর্ক থাকতে হবে।’
এ সময় প্রত্যেক নৌযানেরই নিবন্ধন থাকা উচিত বলে মন্তব্য করেন সরকারপ্রধান।
তিনি বলেন, ‘আমাদের যেসব নৌযান চলাচল করে প্রত্যেকটিরই রেজিস্ট্রেশনের সিস্টেম থাকা উচিত। এই রেজিস্ট্রেশন না থাকার কারণে অনেক সময় ক্ষতিপূরণ ঠিক করা যায় না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনার জানেন আমরা অনেকগুলো পদক্ষেপ নিয়েছি। আমরা বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মেরিন একাডেমি তৈরি করে দিয়েছি। উপযুক্ত ট্রেনিং দিচ্ছি।
‘আবার উন্নত ট্রেনিং দেশে এবং বিদেশের সমুদ্রপথেও যেন কাজ করতে পারে, এ জন্য বঙ্গবন্ধু মেরিটাইম ইউনিভার্সিটিও করে দিয়েছি। উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে এই জলযান পরিচালনা আমরা যদি করতে পারি, তাহলে এক্সিডেন্ট কিন্তু কমে যাবে।’
তিনি বলেন, ‘কয়েকটি দিকে নজর দিতে আমি সবাইকে অনুরোধ জানাব। একটা হলো অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই না করা। আর নৌকা বা নৌযান চলতে গেলে কিন্তু কতগুলো নিয়মও মেনে চলতে হয়।
‘হয়তো এক জায়গায় একটা ঘটনা ঘটল। সবাই একদিকে ছুটে গেলেন সেটা দেখতে। সেখানেই কিন্তু নৌকাডুবি হয়ে যেতে পারে বা লঞ্চ ডুবে যেতে পারে। কাজেই এ নিয়মগুলো মেনে চলা অপরিহার্য। সেদিকে সবাই মিলে দৃষ্টি দেবেন।’
ভিডিও কনফারেন্সে দেয়া বক্তব্যে করোনা মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতায় সরকারের নেয়া পদক্ষেপও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আমি জানি, এই মহামারি আমাদের দেশের মানুষকে সত্যিই খুব কষ্ট দিচ্ছে। আমরা সরকারের পক্ষ থেকে যথাযথভাবে সহযোগিতা করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
‘অতি দরিদ্র কর্মহীন বা দিনমজুর বা এখন কোনো কাজ করতে পারছেন না, রিকশাভ্যান পরিবহন শ্রমিক, কৃষক এবং স্বল্প আয়ের ৩৬ লাখ ৫০ হাজার মানুষকে ইতোমধ্যে আমরা আড়াই হাজার টাকা করে নগদ সহায়তা প্রদান করেছি। এ ছাড়া এই রোজার মধ্যে আমাদের দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে খাদ্য সহায়তা দেয়া হচ্ছে। বিভিন্নভাবে আমরা এই সহযোগিতা করে যাচ্ছি।’
খনন হবে ১০ হাজার কিলোমিটার নৌপথ
২০২৪-২৫ সালের মধ্যে দেশের ১০ হাজার কিলোমিটার নৌপথ খনন করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে সর্বমোট ২৪ হাজার কিলোমিটার নৌপথ ছিল। এর মাত্র ছয় হাজার কিলোমিটার পরিবহন কাজে ব্যবহার হতো। শুষ্ক মৌসুমে সেটি অর্ধেকে নেমে এসেছিল। সারা দেশে ব্যাপক নদী খনন করতে আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে ২০২৪-২৫ সালের মধ্যে ১০ হাজার কিলোমিটার নৌপথ খনন করা হবে। এখানে একটা কথা বলে রাখি, শুধু খনন করলেই চলবে না। ক্যাপিটাল ড্রেজিং করার পর প্রতি বছর কিন্ত মেইনটেন্যান্স ড্রেজিং করতে হবে।
‘একবার খনন করে ছেড়ে দিলেই চলবে না। এর কারণ হচ্ছে সবচেয়ে বেশি পলি বহন করি আমরা বাংলাদেশ। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমাদের পদক্ষেপ নিতে হবে।’
পঁচাত্তর পরবর্তী সরকারগুলো নৌপথের উন্নয়নে কোনো কার্যকর ভূমিকা রাখেনি বলেও জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পঁচাত্তরের পরে যারা ক্ষমতায় ছিল আপনারা যদি হিসাব করে দেখেন এ মাটিতে তাদের জন্ম ছিল না। এ দেশের মানুষকেও তারা জানে না। তারা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী।
‘তারা এ দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে। মানুষের উন্নয়নে তারা কোনো কাজ করেনি বা যে পদক্ষেপগুলো জাতির পিতা নিয়েছিলেন সে পদক্ষেপগুলি যতদিন পারে শুভফলটা ভোগ করেছে। কিন্তু তা অনুসরণ করে উন্নয়নে কোনো অবদানই রাখেনি।’
তিনি বলেন, ‘একসময় আমাদের প্রধান যোগাযোগ মাধ্যম ছিল নৌপথ। সবচেয়ে অল্প খরচে আর নিরাপদে নৌপথেই পণ্য পরিবহন করা যায়। এর ফলে তার দামও কম হয় আর মানুষের কাজেও লাগে।
‘কিন্তু পঁচাত্তর পরবর্তী যারা ক্ষমতায় আসে তারা ব্যবসাটা বড় করে দেখত। তাদের নানাজনের যেমন বাসের ব্যবসা, ট্রাকের ব্যবসা এসব ব্যবসার দিকে যতটা মনোযোগ দিয়েছে তারা নৌপথে সে যত্ন নেয়নি।’
‘ঘাসিয়ার খাল বন্ধ হলে কোথায় ছিলেন’
রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরোধিতাকারীদেরও সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘একটা কথা আমি বলব। আমাদের অনেকেই সুন্দরবন নিয়ে অনেক চিন্তা-ভাবনা করেন, অনেক কথা বলেন। আমরা যখন রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র করতে গেলাম তার বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম করে যাচ্ছে।
‘তাদের কাছে আমার প্রশ্ন ঘাসিয়ার খালটা যখন বন্ধ হয়ে গেল আমাদের আন্দোলনকারীরা তখন চুপ ছিলেন কেন?’
মোংলা বন্দরে নৌযানে পণ্য আনা-নেয়ার জন্য ঘাসিয়ার খাল নামে একটি নৌপথ ব্যবহার করা হতো। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার মোংলা বন্দর বন্ধ করে দিলে খালটিও ধীরে ধীরে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারা কখনো এ কথাটা আনেননি কেন যে সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে পণ্য পরিবহন করলে জীববৈচিত্র্যও নষ্ট হবে আর পরিবেশও নষ্ট হতে পারে। যখন মোংলা বন্দরটা করা হয় তখনও যেন সুন্দরবনের কোনো ক্ষতি না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখেই কিন্তু এটি প্রতিষ্ঠা করা হয়।
‘আমরা যেটা করেছি সেটাও এখান থেকে অনেক দূরে এবং আমাদের ইউনেসকো ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ হিসেবে সুন্দরবনের যে অংশটা ঘোষণা দিয়েছে সেখান থেকেও প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে।’
তিনি বলেন, ‘এখানেই আমরা সুপার ক্রিটিক্যাল রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র করছি। আর এই একটা প্রতিষ্ঠানকে ঘিরে ওই অঞ্চলের মানুষ যাদের কোনো কাজই ছিল না। কোনো কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা ছিল না।
‘এই মোংলা বন্দরটাই তাদের আর্থিক স্বচ্ছলতা এনে দিত। এখন এই একটা প্রকল্প ঘিরে তাদের অনেক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু হয়েছে এবং জায়গাটার অনেক আধুনিকায়ন হয়েছে।’
আরও পড়ুন:বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মন্তব্য করে বলেছেন অন্তর্বর্তী সরকারকে সবাই ব্যতিব্যস্ত করে রেখেছে- যেন নির্বাচন না হয়; ভোট নিয়ে কোনো আপোষ নয়।
বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বেগুনবাড়ি ইউনিয়নের দানার হাটে এক সভাতে ইউনিয়নবাসীর সাথে মতবিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, জনগণের ভোট দেয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে নতুন করে। জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাচ্ছে। সামনের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন। বিএনপি ৩১দফায় সংস্কারের প্রস্তাব করেছে। সরকার যা এখন করছে।
তিনি আরও বলোন, কয়েকটা দল পিআর নিয়ে চিৎকার করছে। পিআর বোঝেনা কেউ। ভোট হবে এক ব্যক্তি এক ভোট। যা মানুষ বোঝেনা তা কেনো হবে? সবাই একমত হলে বিএনপি চিন্তা করে দেখবে। দাবি দাওয়া নিয়ে আলোচনা হবে নির্বাচিত সংসদে।
আইনি ভিত্তি ছাড়া জুলাই সনদে সই করবে না বলে জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে রাজধানীর বাংলামোটরে দলের অস্থায়ী কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আইনি ভিত্তি ছাড়া কোনো নাটকীয়তায় অংশ নেবে না এনসিপি।’
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান কোনো ক্ষমতা পরিবর্তনের জন্য হয়নি। বরং একটি ফ্যাসিবাদী কাঠামো সংস্কারের জন্য হয়েছিল। সেই সূত্র ধরেই আমরা একটি নতুন বাংলাদেশের কথা বলেছিলাম।’
এনসিপি আহ্বায়ক বলেন, ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ সনদ স্বাক্ষরের আগেই প্রকাশ করতে হবে। জনগণের সার্বভৌম অভিপ্রায়কে প্রাধান্য দিয়ে এ আদেশ প্রধান উপদেষ্টা জারি করবেন।’
তিনি বলেন, ‘স্বাক্ষরের আগেই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের খসড়ায় দলগুলোর ঐক্যমত হতে হবে। এর ওপর ভিত্তি করেই আমরা জুলাই সনদে স্বাক্ষরের বিষয়টা বিবেচনা করব। আদেশের টেক্সটের খসড়া আমরা আগে দেখতে চাই। প্রধান উপদেষ্টা যেহেতু জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শক্তিতে সরকার গঠন করেছেন, সেই জায়গা থেকে সেটা প্রেসিডেন্ট নয় বরং সরকার প্রধান হিসেবে তিনি সেটি জারি করবেন।’
নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, ‘গণভোট দ্বারা জনগণ সনদের পক্ষে ভোট দিলে পরের সংসদকে কনস্টিটিউট পাওয়ার দেওয়া হবে। সনদ অনুযায়ী সংবিধান সংস্কার করতে এই দাবির সঙ্গে মোটামুটি সবাই একমত। এটার সংশোধনী হবে কিনা আমাদের কাছে কিন্তু তা এখনও স্পষ্ট হয়নি।’ তিনি বলেন, ‘জুলাই সনদে ৮৪টি সংস্কারের বিষয়ে গণভোট হবে। এতে নোট অব ডিসেন্টের আলাদা কোনো কার্যকারিতা থাকবে না। গণভোটের প্রশ্ন কি হবে তা আগেই চূড়ান্ত করতে হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদিব ও আহ্বায়ক জাবেদ রাসিনসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।
২০২৬ সালে হজে যেতে ৬৬টি এজেন্সি থেকে ৫৩৭ জন প্রাক-নিবন্ধন করলেও একজনও প্রাথমিক নিবন্ধন করেননি। তাই এই এজেন্সিগুলোকে সতর্ক করেছে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এ ইস্যুতে সম্প্রতি ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
এতে বলা হয়, সৌদি সরকার ঘোষিত হজের রোডম্যাপ অনুযায়ী ২০২৬ সালের হজযাত্রী নিবন্ধনের সময় ১২ অক্টোবর শেষ হয়েছে। নিবন্ধনের সময় বিশেষ বিবেচনায় ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। কিন্তু ৬৬টি এজেন্সিতে ৫৩৭ জন প্রাক-নিবন্ধিত হজযাত্রী থাকা সত্ত্বেও অদ্যাবধি কোনো হজযাত্রীর নিবন্ধন করা হয়নি।
‘হজ প্যাকেজ ও গাইডলাইন ২০২৬’ এর অনুচ্ছেদ ১৩ (১৩) অনুযায়ী একটি এজেন্সি ন্যূনতম ৪৬ জন হজযাত্রী নিবন্ধন করবে এবং এজেন্সির যোগ্য তালিকা প্রকাশের পত্রে উল্লিখিত শর্ত অনুযায়ী কোনো এজেন্সি হজ ২০২৬ মৌসুমে যৌক্তিক কারণ ছাড়া হজযাত্রীর নিবন্ধন (প্রাক-নিবন্ধন নয়) না করলে সেই এজেন্সির বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
ধর্ম মন্ত্রণালয় চিঠিতে আরও জানিয়েছে, সংযুক্ত তালিকার ৬৬টি এজেন্সির ৫৩৭ জন প্রাক-নিবন্ধিত হজযাত্রীর মধ্যে হজে গমনেচ্ছুদের নিবন্ধন সম্পন্ন বা অন্য এজেন্সিতে স্থানান্তরপূর্বক হজে গমন নিশ্চিত করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো। এজেন্সির কারণে কোনো হজযাত্রীর হজে গমন বিঘ্নিত হলে তার দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট এজেন্সিকে বহন করতে হবে।
২০২৫ সালের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ড মিলিয়ে গড় পাসের হার ৫৮.৮৩ শতাংশ। এবার গত বছরের তুলনায় পাসের হার কমেছে ১৮ দশমিক ৯৫ শতাংশ। এ বছর জিপিএ৫ পেয়েছেন ৬৯ হাজার ৯৭ জন শিক্ষার্থী। সে হিসাবে এবার জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে ৭৬ হাজার ৮১৪ জন।
এবারের ফলাফলে বিশ্লেষণে দেখা যায়, এইচএসসি পরীক্ষায় এবার শিক্ষার্থীর তিন বিষয়ে বেশি ফেল করেছেন। এইচএসসি পরীক্ষায় এবার বেশি ফেল করেছেন হিসাব বিজ্ঞান বিষয়ে। এবার এই বিষয়ে ফেল করেছেন ৪১ দশমিক ৪৬ শতাংশ। আর ইংরেজিতে ফেল করেছেন ৩৮ দশমিক ৮ শতাংশ। আইসিটিতে ২৭ দশমিক ২৮ শতাংশ শিক্ষার্থী।
বুধবার (১৬ অক্টোবর) মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, ঢাকার সভাকক্ষে বাংলাদেশ আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি ও ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. খন্দোকার এহসানুল কবির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ফলাফল বিশ্লেষণে আরও দেখা যায়, এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফলে এ বছর বরাবরই এগিয়ে রয়েছেন ছাত্রীরা। মোট পাস এবং জিপিএ-৫ এর দিক দিয়ে এগিয়ে রয়েছেন তারা। ১১টি শিক্ষা বোর্ডে মোট ছাত্রের চেয়ে ৮৭ হাজার ৮১৪ জন বেশি ছাত্রী উত্তীর্ণ হয়েছেন। ছাত্রের চেয়ে ৫ হাজার ৯৭ জন বেশি ছাত্রী জিপিএ-৫ পেয়েছেন। ১২ লাখ ৩৫ হাজার ৬৬১ জন অংশ নেন। উত্তীর্ণ হন ৭ লাখ ২৬ হাজার ৯৬০ জন। ছাত্র উত্তীর্ণ হয়েছেন ৩ লাখ ৩৩ হাজার ৮৬৪ জন। ছাত্রী উত্তীর্ণ হয়েছেন ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৯৬ জন। ছাত্রদের পাসের হার ৫৪ দশমিক ৬০ শতাংশ। ছাত্রীদের পাসের হার ৬২ দশমিক ৯৭ শতাংশ। ৩২ হাজার ৫৩ জন ছাত্র জিপিএ-৫ পেয়ছেন, আর ৩৭ হাজার ৪৪ জন ছাত্রী জিপিএ-৫ পেয়ছেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই শাহাদাত সহ কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের ৯ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, ওবায়দুল কাদেরের সহোদর শাহাদাতসহ কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের ৯ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
তবে তাদের কী কারণে গ্রেফতার করা হয়েছে, সে বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কিছু জানা যায়নি।
জুলাই-আগস্ট আন্দোলন ঘিরে আশুলিয়ায় ছয়জনের লাশ পোড়ানোসহ সাতজনকে হত্যার দায়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় চলছে ১২তম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ।
আজ (বৃহস্পতিবার) বেলা ১১টা ৬ মিনিটে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে এ সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। ট্রাইব্যুনালের বাকি সদস্যরা হলেন— অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মঞ্জুরুল বাছিদ এবং জেলা ও দায়রা জজ নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর।
আজ ১৬ নম্বর সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিচ্ছেন সিআইডির ফরেনসিক শাখার আলোকচিত্র বিশেষজ্ঞ ওমর ফারুক খান। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে তাকে জেরা করবেন স্টেট ডিফেন্স ও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা।
ট্রাইব্যুনালে আজ প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর ফারুক আহাম্মদ। সঙ্গে রয়েছেন প্রসিকিউটর আবদুস সোবহান তরফদার ও সাইমুম রেজা তালুকদার।
গতকাল বুধবার এ মামলায় ১১তম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা শেষ হয়। ৯ অক্টোবর দশম দিনে সাক্ষ্য দেন শহীদ ওমর ফারুকের বাবা চান মিয়া। ১৪তম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দিতে গত বছরের ৫ আগস্টের বর্ণনা তুলে ধরেন তিনি। পরে তাকে জেরা করেন পলাতক আট আসামির পক্ষে স্টেট ডিফেন্স ও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা।
এ মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া আসামিরা হলেন— ঢাকা জেলার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. আব্দুল্লাহিল কাফী, ঢাকা জেলা পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত সুপার (সাভার সার্কেল) মো. শাহিদুল ইসলাম, পরিদর্শক আরাফাত হোসেন, এসআই মালেক, এসআই আরাফাত উদ্দিন, এএসআই কামরুল হাসান, আবজাল ও কনস্টেবল মুকুল। তবে সাবেক এমপি সাইফুলসহ আটজন এখনও পলাতক রয়েছেন।
গত ২ জুলাই মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জমা দেয় প্রসিকিউশন। আনুষ্ঠানিক অভিযোগের সঙ্গে অন্যান্য তথ্যসূত্র হিসেবে ৩১৩ পৃষ্ঠা, সাক্ষী ৬২, দালিলিক প্রমাণাদি ১৬৮ পৃষ্ঠা ও দুটি পেনড্রাইভ যুক্ত করা হয়। পরে এ মামলায় ১৬ জনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল।
গত বছরের ৫ আগস্ট সাভারের আশুলিয়ায় পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান ছয় তরুণ। এরপর পুলিশ ভ্যানে তাদের লাশ তুলে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। নৃশংস এ ঘটনার সময় একজন জীবিত ছিলেন। কিন্তু তাকেও বাঁচতে দেননি তারা। পেট্রোল ঢেলে জীবন্ত মানুষকেই পুড়িয়ে মারা হয়। এ ঘটনায় গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা করা হয়।
ডাকসু ও জাকসুতে ভূমিধস বিজয়ের পর এবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদেও (চাকসু) ভিপি-জিএসসহ বেশিরভাগ পদেইসলামী ছাত্রশিবির জয়ী হয়েছে। শিবির সমর্থিত প্যানেল ‘সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট’-এর প্রার্থীরা ভিপি-জিএসসহ ২৪টি পদে নির্বাচিত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) ভোর সাড়ে চারটায় সপ্তম চাকসু নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।
ভিপি (সহসভাপতি) পদে ছাত্রশিবিরের মো. ইব্রাহিম হোসেন ৭ হাজার ৯৮৩ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি সংগঠনটির চট্টগ্রাম মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ও ইতিহাস বিভাগের এমফিলের শিক্ষার্থী। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদলের প্যানেলের সাজ্জাদ হোসেন পেয়েছেন ৪ হাজার ৩৭৪ ভোট।
জিএস (সাধারণ সম্পাদক) পদে ৮ হাজার ৩১ ভোট নির্বাচিত হয়েছেন একই প্যানেলের সাঈদ বিন হাবিব। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সাহিত্য সম্পাদক ও ইতিহাস বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদলের মো. শাফায়াত পেয়েছেন ২ হাজার ৭৩৪ ভোট।
চাকসুর মোট ২৬টি পদে মধ্যে মাত্র একটি পদে নির্বাচিত হয়েছেন ছাত্রদলের প্রার্থী আইয়ুবুর রহমান। তিনি এজিএস (সহসাধারণ সম্পাদক) পদে পেয়েছেন ৭ হাজার ১৪ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রশিবির প্যানেলের সাজ্জাদ হোছন পেয়েছেন ৫ হাজার ৪৫ ভোট। এ ছাড়া সহ খেলাধুলা ও ক্রীড়া সম্পাদক পদে জয়ী হছেন তামান্না মাহবুব।
বেশিরভাগ হল সংসদে ভোটের ফলাফলেও ছাত্রশিবিরের জয়জয়কার। এফ রহমান, আলাওল, সোহরাওয়ার্দী , শাহজালাল, ফয়জুন্নেসা ও শামনুননাহার হলে ভিপি-জিএসসহ বেশিরভাগ পদে ছাত্রশিবিরের প্রার্থীর জয় অনেকটািই নিশ্চিত। দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো নিজেদের নেত্রী নামে যে হলটি, সেই দেশনেত্রী খালেদা জিয়া হলেও নিজেদের জয় ছিনিয়ে আনতে পারেনি ছাত্রদলের প্রার্থীর।সব মিলিয়ে ঢাকসু ও জাকসুর ধারাবাহিকতায় চাকসুতেও আরেকটা ভূমিধস বিজয়ের পথে এগিয়ে যাচ্ছে ইসলামী ছাত্রশিবির।
এদিকে সিংহভাগ পদে হেরে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেছে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে কারচুপির নাানা স্লোগানে তার উত্তপ্ত করে তুলেছে ক্যাম্পাস। যদিও কেন্দ্রীয়ভাবে বা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত চাকসু নিয়ে কোনো অনিয়ম, কারচুপি বা জালিয়াতি অভিযোগ ওঠেনি।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মনির উদ্দিন ফলাফল ঘোষণার সময় বলেন, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হয়েছে। প্রার্থী ও ভোটাররা নির্বাচনে অসাধারণ উৎসবমুখর অংশগ্রহণ করেছেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সোহরাওয়ার্দী হল সংসদে ভোট কারচুপির অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) মো. কামাল উদ্দিনকে অবরুদ্ধ করে রাখেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। পরে রাত সোয়া ৩টার দিকে তাকে বাসায় যেতে দেওয়া হয়।এই উপ-উপাচার্যের বিরুদ্ধে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের অভিয়োগ তিনি সোহরাওয়ার্দী হল সংসদে ছাত্রদল সমর্থিত সহ-সভাপতি (ভিপি) প্রার্থীকে কারচুপির মাধ্যমে পরাজিহ করেছেন। ভোট গণনার পুনরায় দাবি তুলে তারা তাকে প্রকৌশল অনুষদের (আইটি বিল্ডিং) ৩১২ নম্বর কক্ষে আটকে রাথেস। রাত আড়াইটার দিকে পুলিশ এসে উপ-উপাচার্যকে প্রকৌশল অনুষদ থেকে বের করে নিয়ে যায়।
সবমিলিয়ে নির্বাচনী আমাজে উৎসবে জমজমাট ক্যাম্পাসে এখন থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। যদিও এখন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন পুর্ণাঙ্গ ফলাফল ঘোষণা করেনি। এখন পর্যন্ত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪টি হল ও ১টি হোস্টেল মধ্যে ৯টি হল ও ১টি হলের ফলাফল পাওয়া গেছে। বাকি হলগুলোর ভোটের ফলাফল কি হবে, সেই আভাস এরই মধ্যে সাধারণ শিক্ষার্থী পেয়ে গেছে।
চাকসুতে বড় জয় পেলেও ইসলামী ছাত্র শিবিরের নেতাকর্মীরা বেশ সংযত আচরণ করছেন। নিজেদের মধ্যে উচ্ছ্বাস প্রকাশ ছাড়া বিজয় মিছিল বা শ্লোগান দেওয়া থেকে তারা বিরত রয়েছেন। ক্যাম্পাসে যে কোনোধরনে গোলোযোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য এরই মধ্যে অতিরিক্ত পুলিশের পাশাপািশের পাশাপাশি বিজিবি সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে।
মন্তব্য