করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে চলমান লকডাউন ১৬ মে পর্যন্ত বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে, যার অর্থ চলমান বিধিনিষেধের মধ্যেই কাটবে এবারের ঈদুল ফিতর।
সরকারের এ সিদ্ধান্ত জানিয়ে বুধবার প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এতে বলা হয়েছে, দূরপাল্লা বা আন্তনগর বাস, ট্রেন ও লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখা হলেও খুলে দেয়া হচ্ছে শহরকেন্দ্রিক বাস। ৬ মে থেকে জেলার মধ্যে গণপরিবহন চলাচলে আর বাধা নেই।
প্রজ্ঞাপনে রয়েছে যেসব নির্দেশনা:
০১. সকল সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ঈদের ছুটিতে আবশ্যিকভাবে স্ব-স্ব কর্মস্থলে (অধিক্ষেত্রে) অবস্থান করবেন।
০২. দোকানপাট ও শপিং মলগুলো পূর্বের মতো সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা রাখা যাবে। সকল দোকানপাট ও শপিং মলে স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে প্রতিপালন নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় দোকানপাট ও শপিং মল তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ করে দেয়া হবে।
০৩. আন্তজেলা গণপরিবহন বন্ধ থাকবে। তবে ৫ মের পর যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন সাপেক্ষে জেলার অভ্যন্তরে গণপরিবহন চলাচল করতে পারবে। উল্লেখ্য, ট্রেন ও লঞ্চ চলাচল আগের মতোই বন্ধ থাকবে।
০৪. মাস্ক ব্যবহার শতভাগ নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
০৫. জনসমাবেশ হয় এ ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান বন্ধ রাখতে হবে।
০৬. কোভিড-১৯ প্রতিরোধে সিটি করপোরেশন, জেলা সদর, পৌরসভা এলাকাগুলোতে বাধ্যতামূলক মাস্ক পরিধান, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনের জন্য তথ্য মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট সিটি করপোরেশন, পৌরসভায় মাইকিংসহ ব্যাপক প্রচার-প্রচারণার ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে গত ৫ থেকে ১১ এপ্রিল সাত দিনের লকডাউন ঘোষণা করে সরকার। শুরুতে গণপরিবহন বন্ধ রাখা হলেও পরে মহানগরগুলোতে চলাচলের অনুমতি দেয়া হয়।
শেষ দিকে এসে সময় বেঁধে দিয়ে দোকানপাট ও শপিং মল খোলা রাখারও সিদ্ধান্ত আসে। পরে সরকার আরও দুই দিনের জন্য বিধিনিষেধের সময় বাড়ায়।
কিন্তু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় সংক্রমণ প্রতিরোধে ১৪ থেকে ২১ এপ্রিল ‘কঠোর’ বিধিনিষেধসহ ‘সর্বাত্মক’ লকডাউন আরোপ করা হয়। পরে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে সারা দেশে সর্বাত্মক লকডাউন আরও এক সপ্তাহ অর্থাৎ ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ায় সরকার।
এর মধ্যে আরও এক দফা বাড়িয়ে লকডাউনের মেয়াদ করা হয় ৫ মে মধ্য রাত পর্যন্ত। তা শেষ হওয়ার দুই দিন আগে ১৬ মে পর্যন্ত এই লকডাউন বর্ধিত করার সিদ্ধান্ত জানাল সরকার।
কঠোর লকডাউন নিশ্চিতে আরোপ করা হয় ১৩ দফা বিধিনিষেধ। তবে ঈদ ঘিরে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং মানুষের জীবন-জীবিকা বিবেচনায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে শপিং মল, দোকানপাট নির্দিষ্ট সময়ের জন্য শপিং মল ও দোকানপাট খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয় ২৫ এপ্রিল থেকে।
শপিং মল ও দোকানপাটগুলোতে কেনাকাটানায় স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত না করা হলে ‘স্ট্রং অ্যাকশন’ নেয়ার নির্দেশ রয়েছে সরকারের।
এ বিষয়ে সোমবার মন্ত্রিপরিষদের বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেছিলেন, ‘পুলিশ, সিটি করপোরেশন, ম্যাজিস্ট্রেট এবং অ্যাডমিনিস্ট্রেশন তারা দেশের প্রত্যেক মার্কেটগুলোতে সুপারভাইজ করবে। মাস্ক ছাড়া যদি মানুষ ঘোরাফেরা করে প্রয়োজনে আমরা সেসব মার্কেট বন্ধ করে দেব। ক্লিয়ারলি এটা বলে দেয়া হয়েছে।
‘দোকান মালিক সমিতির সভাপতি এ বিষয়ে আমাদের কো-অপারেট করবে বলে আশ্বস্ত করেছে। তারা নিজেরাও বিষয়টা সুপারভাইজ করবেন।’
আরও পড়ুন:মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ২০২৫ সালের মানবপাচার (টিআইপি) বিষয়ক প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে দ্বিতীয় স্তরে স্থান দেওয়া হয়েছে। দেশের শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন এবং বিশ্বব্যাপী অভিবাসনের চাপ সংশ্লিষ্ট চলমান চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও মানবপাচার মোকাবিলায় বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য এবং টেকসই অগ্রগতির স্বীকৃতি এটি।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকার মানবপাচার নির্মূলের সর্বনিম্ন মান সম্পূর্ণরূপে পূরণ না করলেও আগের তুলনায় এখন উল্লেখযোগ্য প্রচেষ্টা চলছে। বর্তমান সরকার পূর্ববর্তী প্রতিবেদনের সময়ের তুলনায় সামগ্রিকভাবে ক্রমবর্ধমান প্রচেষ্টা প্রদর্শন করেছে। সে কারণে বাংলাদেশের অবস্থান এই তালিকায় দ্বিতীয় স্তরে।
প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশ মানবপাচার রোধে ভুক্তভোগীদের সুরক্ষা, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং আন্তঃসংস্থা সমন্বয়ের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখিয়েছে।
ভুক্তভোগী শনাক্তকরণ এবং সুরক্ষা পরিষেবা বৃদ্ধি, সম্মুখ সারির কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ সম্প্রসারণ এবং আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ‘ন্যাশনাল রেফারেল মেকানিজম’ গ্রহণের জন্য সরকারের প্রশংসা করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
সরকার ১ হাজার ৪৬২ জন পাচারের শিকারকে শনাক্ত করেছে। শনাক্ত হওয়াদের মধ্যে ১৪৪ জন যৌনকর্মী হিসেবে পাচারের শিকার হয়েছে এবং ২৮৫ জনকে জোরপূর্বক শ্রম দিতে বাধ্য করা হয়েছে। এছাড়া ১ হাজার ৩৩ জন অন্যান্য ধরনের পাচারের শিকার হয়েছে। পূর্ববর্তী প্রতিবেদনে একই সময়ে ১ হাজার ২১০ জন ভুক্তভোগীকে শনাক্ত করা হয়েছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভুক্তভোগীদের শনাক্ত করার পর সরকার তাদের সুরক্ষার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছে।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক, সমাজকল্যাণ, প্রবাসী কল্যাণ এবং বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় পরিচালিত কেন্দ্রগুলোর মাধ্যমে এসব ভুক্তভোগীদের স্বাস্থ্যসেবা, আইনি সহায়তা ও আশ্রয়ের সুযোগও প্রদান করা হচ্ছে।
সরকার সুশীল সমাজের সঙ্গে সমন্বয় করে ভুক্তভোগীদের সেবার ব্যাপারে পুলিশ, অভিবাসন কর্মকর্তা ও শ্রম পরিদর্শকদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে। এই পদক্ষেপগুলো আন্তর্জাতিক মানবপাচার-বিরোধী মানদণ্ডের সঙ্গে জাতীয় চর্চাকে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার মূল পদক্ষেপ হিসেবে প্রশংসিত হয়েছে।
আন্তর্জাতিক মানবপাচার নেটওয়ার্ক তদন্তে ইন্টারপোল, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকাসহ বৈশ্বিক অংশীজনদের সঙ্গে বাংলাদেশের চলমান সহযোগিতার কথাও স্বীকার করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
পাচারবিরোধী পক্ষগুলোকে শক্তিশালী করার এবং অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এবং কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)-এর মধ্যে সমন্বয় সুদৃঢ় করার জন্য সরকারের অব্যাহত প্রচেষ্টার কথাও তুলে ধরা হয়েছে এতে।
সরকার জাতীয় মানবপাচার বিরোধী কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে শক্তভাবে পাচার প্রতিরোধ প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পাচার প্রতিরোধ ও সচেতনতামূলক কার্যক্রমের জন্য এ বছর ৬২১ দশমিক ৪৯ মিলিয়ন টাকা বরাদ্দ করে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ২০১৮-২০২৫ বাস্তবায়ন অব্যাহত রেখেছে। আগের বছরের তুলনায় এবার উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বরাদ্দ বৃদ্ধি পেয়েছে।
জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের পাচার-বিরোধী কমিটি বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় মুদ্রিত পত্রিকা, রেডিও এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সচেতনতামূলক প্রচারণা অব্যাহত রেখেছে।
এভাবে প্রচারের মাধ্যমে নিরাপদ অভিবাসন, শ্রম অধিকার এবং প্রতারণামূলক নিয়োগের ঝুঁকি সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে।
জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো ১০৪টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পরিচালনা অব্যাহত রেখেছে এবং বিদেশগামী কর্মীদের জন্য প্রস্থান-পূর্ব প্রশিক্ষণ সেশন চালু করেছে। এর মধ্যে নারী গৃহকর্মীদের জন্য ৩০ দিনের একটি বিশেষায়িত কোর্সও রয়েছে।
বিদেশে আমাদের দেশ থেকে যাওয়া শ্রমিকদের শোষণের ঝুঁকি কমানোই এসব পদক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য।
সরকার মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও ব্রুনাইয়ের মতো প্রধান গন্তব্যস্থলের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক শ্রম চুক্তি জোরদার করেছে। এছাড়া, অভিবাসী শ্রমিকদের অতিরিক্ত ফি থেকে বাঁচানোর জন্য নিয়োগকর্তা প্রদত্ত নিয়োগ মডেল প্রতিষ্ঠা করেছে।
অভিবাসীদের ভবিষ্যত বিবেচনায় জাতীয় একটি নীতিও চালু করা হয়েছে। প্রত্যাগত অভিবাসী কর্মীদের সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য গৃহীত একটি সমন্বিত পরিকল্পনা এটি। পাচার থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিরাও এর অন্তর্ভুক্ত, যেন প্রত্যাবর্তনের পর তারা জীবিকার সুযোগ পায়।
ক্ষতিগ্রস্তদের প্রত্যাবাসন এবং আন্তঃসীমান্ত সহযোগিতা সহজ করার জন্য ২০১৫ সালে ভারতের সঙ্গে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের আওতায় বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে কাজ অব্যাহত রেখেছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশ বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলে পাচারবিরোধী সমন্বয় জোরদার করার জন্য ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ডের সঙ্গে কাজ করছে।
প্রতিবেদনে জোর দিয়ে বলা হয়েছে, দেশের চলমান সংস্কার, প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়ন এবং আন্তর্জাতিক সম্পৃক্ততা সব ধরনের মানবপাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করার দৃঢ় রাজনৈতিক ইচ্ছার প্রতিফলন।
বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্তরে স্থান পাওয়ার বিষয়টি আইনের শাসন জোরদার, অভিবাসী কর্মীদের সুরক্ষা এবং পাচারের শিকারদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার প্রতি দেশটির ক্রমবর্ধমান প্রতিশ্রুতিকে নির্দেশ করে। সরকার মানবপাচার রোধে কাঠামোগত উন্নয়নে বিনিয়োগ অব্যাহত রেখেছে। সূত্র : বাসস
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, বিশ্বে বিরাজমান অস্থিতিশীল অবস্থা দূরীকরণ ও বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় বুদ্ধের শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
আগামীকাল ৫ অক্টোবর বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব ‘শুভ প্রবারণা পূর্ণিমা ও কঠিন চীবর দান’ উপলক্ষ্যে আজ দেয়া এক বাণীতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীকে তিনি আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, মহামতি গৌতম বুদ্ধ আজীবন মানুষের কল্যাণে এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় অহিংসা, সাম্য ও মৈত্রীর বাণী প্রচার করেছেন। শান্তি ও সম্প্রীতির মাধ্যমে আদর্শ সমাজ গঠনই ছিল তাঁর মূল লক্ষ্য। তাঁর আদর্শ মানবিকতা ও ত্যাগের মহিমায় সমুজ্জ্বল। তাঁর অহিংস বাণী ও জীবপ্রেম আজও বিশ্বব্যাপী সমাদৃত।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের সাথে হাজার বছরের বৌদ্ধ ঐতিহ্য মিশে আছে। প্রাচীনকালে বর্তমান বাংলাদেশের অঞ্চলটি এশিয়ার বৌদ্ধধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিল, যার প্রমাণ হিসেবে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার দেখা যায়।
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। আবহমানকাল ধরে এদেশে বিভিন্ন ধর্ম, বর্ণ ও গোত্রের মানুষ সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে বসবাস করে। জাতি হিসেবে আমাদের সকল অর্জন ও প্রাপ্তিতে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের অবদান রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী নতুন বাংলাদেশের মানুষের মাঝে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সহিষ্ণুতা আরো দৃঢ় ও অটুট হবে এবং জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের সম্মিলিত প্রয়াসে একটি বৈষম্যহীন, ন্যায়ানুগ ও মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন রাষ্ট্র গঠনের অভিযাত্রা মসৃণ ও সাফল্যমন্ডিত হবে-এটাই আমার প্রত্যাশা।’
প্রধান উপদেষ্টা ‘শুভ প্রবারণা পূর্ণিমা ও কঠিন চীবর দান’ উৎসবের সার্বিক সফলতা কামনা করেন। সূত্র : বাসস
জুলাই আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও এনসিপি'র উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম মন্তব্য করেছেন অভ্যুত্থান পরবর্তী নতুন বাংলাদেশ গঠনে এবং সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার গুলোতে বিএনপি ‘নোট অব ডিসেন্ট’ (ভিন্নমত পোষণ) দিয়েছে। গত শুক্রবার রাতে ঠাকুরগাঁও জেলা মুক্তিযুদ্ধ কসপ্লেক্স ভবনে এনসিপির সাংগঠনিক সমন্বয়ক সভা শেষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।
উত্তরে সারজিস আলম বলেন, অনেকগুলো সংস্কার প্রস্তাব ছিলো। তার মধ্যে এই জায়গায় গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারগুলোতে বিএনপি ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছে। মনে করেন ৫০ টি সংস্কারের চেয়ে ৫ টি সংস্কার বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বিএনপি সেখানে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছে।
তিনি বলেন, কিন্তু ‘নোট অব ডিসেন্ট’ মানে এমন না যে ঐক্যমত কমিশন সেগুলো বাদ দিয়ে দিবে। এখন পর্যন্ত আমরা ওগুলোকে পাচ্ছি, দেখছি। যেগুলো ঐক্যমত কমিশনে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে এগুলো তারা জুলাই সনদে দেখতে চায় এবং জুলাই সনদের ড্রাফট(খসড়া) তৈরি হয়েছে। আমরা মনে করি ওইগুলো যদি আইনগত ভিত্তি দেয়া হয়।
নির্বাচনী প্রতীক শাপলার ব্যপারে সার্জিস আলম বলেন, নির্বাচন কমিশন কোন একটি রাজনীতিক দলের চাপে পড়েছে। শাপলা প্রতীক হিসেবে দিতে আইনগত কোন বাঁধা নেই। যদি আমাদের শাপলা না দেয়া হয় প্রয়োজনে রাজনীতিক ভাবে আমরা সেটি মোকাবিলা করবো।
জাতীয় পার্টি ইস্যুতে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগকে স্বৈরাচার প্রতিষ্ঠিত করতে সহযোগিতা করেছে জাতীয় পার্টি। এখন জাতীয় পার্টি সাধু সাজলে বাংলাদেশের মানুষ সেটি মেনে নেবে না। দলটির রাজনীতিকে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করতে হবে।
আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন প্রসঙ্গে এনসিপির এ নেতা বলেন, আমরা মনে করি পিআর উচ্চকক্ষে প্রসঙ্গিক। কিন্তু এ মুহূর্তে বাংলাদেশে নিম্নকক্ষে পিআর হওয়ার মতো অবস্থা নেই।
এ সময় এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক গোলাম মুর্তজা সেলিমসহ দলটির অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল মাওলানা এটিএম মোহাম্মদ মাসুম বলেছেন, বাংলাদেশের মাটিতে আর যেন কোনো ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরাচার আসতে না পারে সেজন্য পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন, জুলাই সনদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি, খুনি ফ্যাসিস্টদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে।অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে বিদ্যমান রাষ্ট্র কাঠামোর সংস্কার করলেই অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত হবে। প্রয়োজনে পিআর বাস্তবায়নের জন্য গণভোট দিন। রায় পিআরের পক্ষে আসে নাকি বিপক্ষে আসে যাচাই করুন। জনগণ যদি পিআর মানে তাহলে আপনাদেরও মানতে হবে। আর জনগণের রায় যদি পিআরের বিপক্ষে যায় তাহলে আমরা জামায়াতে ইসলামী মেনে নেব। গত শুক্রবার বিকালে কুমিল্লা নগরীর আইটি কনভেনশন হলে কুমিল্লা মহানগরী জামায়াত আয়োজিত
পি আর পদ্ধতি ও জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে নির্বাচনসহ ৫দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্য সেমিনারে একথা প্রধান অতিথি বক্তব্য তিনি বলেন।
কুমিল্লা মহানগরী জামায়াতের আমীর ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য কাজী দ্বীন মোহাম্মদ এর সভাপতিত্বে মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারী মু.মাহবুবর রহমান এর পরিচালনায় সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কুমিল্লা মহানগরী জামায়াতের নায়েবে আমীর অধ্যাপক এ কে এম এমদাদুল হক মামুনসহ অন্যান্যরা।
প্রধান অতিথি আরো বলেন, ছাত্র আন্দোলন চলাকালে অনেক শিক্ষার্থী জীবন দিয়েছে, পঙ্গু হয়েছে এবং চোখ হারিয়েছে একটি সুন্দর দেশ পাওয়ার জন্য। প্রচলিত নির্বাচন পদ্ধতি কালো টাকার দৌরাত্ম্য, পেশিশক্তি এবং ভোট জালিয়াতির সুযোগ করে দেয়, যা দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার ও চাঁদাবাজির জন্ম দেয়। তাই এই নির্বাচন পদ্ধতি আর বাংলার জমিনে দেখতে চাই না।
সেমিনার এসময় উপস্থিত ছিলেন, মহানগরীর জামায়াতে সহকারী সেক্রেটারী যথাক্রমে মু. কামারুজ্জামান সোহেল,সাবেক কাউন্সিল মোশারফ হোসাইন, নাছির আহম্মেদ মোল্লা, দপ্তর সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, অর্থ সম্পাদক
আমির হোসাইন ফরায়েজী, মহানগরী জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য, অধ্যাপক মজিবুর রহমান, মোহাম্মদ হোসাইন, কাজী নজির আহম্মেদ প্রমুখ।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য আওয়ামী লীগের ঘাঁটি বলে পরিচিত গোপালগঞ্জ-৩ (কোটালীপাড়া-টুঙ্গিপাড়া) আসনে গণঅধিকার পরিষদ থেকে প্রার্থী হতে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন আবুল বসার ও কাজী রনি।
আবুল বসার গণঅধিকার পরিষদের কোটালীপাড়া উপজেলা শাখার আহবায়ক ও কাজী রনি ঢাকা মহানগর উত্তরের দপ্তর সম্পাদক।
আবুল বসার দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে গণঅধিকার পরিষদের পল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কর্যালয় থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন তিনি। আবুল বসার কোটালীপাড়া উপজেলার মাঝবাড়ি গ্রামের মৃত ধলা দাড়িয়ার ছেলে ও স্থানীয় প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী।
এর আগে কাজী রনি সংগ্রহ করেন মনোনয়ন ফরম। কাজী রনি কোটালীপাড়া উপজেলার কুরপালা গ্রামের মৃত. কাজী নজরুল ইসলামের ছেলে। পেশায় একজন ব্যাংকার। ঢাকায় একটি বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত।
আবুল বসার বলেন, গণঅধিকার পরিষদ গণমানুষের দল। জনসাধারণের কল্যাণে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। গণঅধিকার পরিষদে কোন সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ ও দুর্নীতিবাজদের ঠাঁই নাই। গোপালগঞ্জ-৩ একটি ভিআইপি আসন। এ আসনের মানুষ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বর্তমান কর্মকান্ড অনুযায়ী গণঅধিকার পরিষদকেই বেছে নিবে বলে আমি আশাবাদী। আমি মনোনয়ন চেয়েছি, দল যদি আমাকে মনোনয়ন দেয় তাহলে আমি আশাকরি দলের সম্মান বজায় রাখতে পারব।
বৈষম্যহীন ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে এবং প্রতিহিংসামূলক রাজনীতি বন্ধ করতে জনসাধারণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। ইতোমধ্যে গণঅধিকার পরিষদের পক্ষ থেকে কোটালীপাড়া উপজেলায় লিফলেট বিতরণসহ বিভিন্ন সাংগঠনিক কর্মকান্ড নিয়মিত পরিচালিত হচ্ছে। আগামী সংসদ নির্বাচনে আমাকে যদি গোপালগঞ্জ-৩ (কোটালীপাড়া-টুঙ্গীপাড়া) আসনে গণ অধিকার পরিষদের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেয় তাহলে আমি নির্বাচনে অংশ নিতে চাই।
গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর বিভিন্ন সন্ত্রাসবিরোধী মামলায় গ্রেফতারের ভয়ে এলাকাছাড়া আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। অনেকে রয়েছেন জেলে। এদিকে অন্তর্ন্তীকালীন সরকার আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার পর থেকেই আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় সরব হয়ে উঠেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। সম্ভাব্য প্রার্থীরা চষে বেড়াচ্ছেন উপজেলার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে।
চট্টগ্রামে দরপত্রের মাধ্যমে রেলস্টেশনের গণশৌচাগার ইজারা দেওয়ার সময় দরপত্র বাক্স খোলা ও যাচাই-বাছাইসহ সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষের পর হঠাৎ মধ্যরাতে দরপত্র প্রক্রিয়া স্থগিত করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। দরপত্রে অংশগ্রহণকারী ঠিকাদারেরা অভিযোগ করছেন- নিয়ম মেনে সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর হঠাৎ স্থগিতাদেশ দেওয়ার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। তারা মনে করছেন, কর্তৃপক্ষ ইচ্ছাকৃতভাবে প্রভাব খাটিয়ে নির্দিষ্ট কোনো পক্ষকে সুবিধা দিতে এই দরপত্র হঠাৎ স্থগিত করেছে। এমন সিদ্ধান্ত রেলওয়ে কর্মকর্তাদের দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির ফসল। এর আগে গত ১৫ সেপ্টেম্বর পাহাড়তলীতে অবস্থিত বাংলাদেশ রেলওয়ে বিভাগীয় প্রকৌশল-১ এর কার্যালয় চট্টগ্রাম রেলস্টেশনের গণশৌচাগার ইজারা দেওয়ার আহবান জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি দেয়। ইজারায়- নতুন রেলস্টেশনে থাকা ৬টি টয়লেট, বেসিন, ৩টি ওজুখানা ও ২টি প্রস্রাবখানা ইজারা দেওয়ার আহবান করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দরপত্রের শিডিউল ক্রয়ের শেষদিন ও ৩০ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টায় দরপত্র শিডিউল জমা দেওয়ার শেষদিন উল্লেখ করা হয়। একইদিন সাড়ে ১২ টায় দরপত্রে অংশগ্রহণকারীদের উপস্থিতিতে দরপত্র বাক্স খোলার কথা বলা হয়।
রেল কর্তৃপক্ষ জানায়, গত ২৯ সেপ্টেম্বর দরপত্র কেনার শেষ দিন পর্যন্ত ৯টি সিডিউল বিক্রি হয়েছিল। নির্ধারিত তারিখ ৩০ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টায় সকলের উপস্থিতিতে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল পাহাড়তলী বিভাগীয় প্রকৌশলী ডিইএন-১ (ভারপ্রাপ্ত) আব্দুর রহিমের কার্যালয়ে রাখা দরপত্র বাক্সটি খোলা হয়। ওই বাক্সে সাতটি দরপত্র জমা পড়ে।
দরপত্রে অংশগ্রহণকারী ঠিকাদারেরা জানান, বাক্সে থাকা সাতটি দরপত্র শিডিউল সকলের উপস্থিতিতে খোলা হয়। এ সময় রেলওয়ে কর্মকর্তাদের পাশাপাশি দরপত্রে অংশগ্রহণকারীরা, রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
পরে দরপত্র যাচাই-বাছাই শেষে ৫ লক্ষ ৫ হাজার টাকার সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে দেখানো হয় মেসার্স এম আর ইন্টারন্যাশনালকে। পর্যায়ক্রমে সাবির মোটরস সর্বোচ্চ দর আড়াই লক্ষ টাকা ও ব্লু প্রিন্ট ছিল ২ লাখ ২০ হাজার টাকা ছিল। কিন্তু রাত ১০টায় হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ওই দরপত্র কার্যক্রম স্থগিত করে বিভাগীয় প্রকৌশলী কার্যালয়। স্থগিতের নোটিশে স্বাক্ষর ছিল বিভাগীয় প্রকৌশলী-১- (ভারপ্রাপ্ত) মো. আব্দুর রহিম। চিঠির অনুলিপি সংশ্লিষ্ট ঊর্ধতনদের কাছে পাঠানো হয়। তবে ওই চিঠিতে দরপত্র স্থগিতের বিষয়ে কোনো কারণ উল্লেখ করা হয়নি।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. তানভীরুল ইসলাম বলেন, যিনি দরপত্র কার্যক্রম স্থগিত করেছেন ওনার কাছে বিষয়টি জেনে নেন। বিভাগীয় প্রকৌশলী আব্দুর রহিম বলেন, আমি এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে পারব না। এসময় প্রতিবেদককে অফিসে আসতে বলেন।
দরপত্রে অংশগ্রহণকারী মেসার্স এম আর ইন্টারন্যাশনালের স্বত্ত্বাধিকারী মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, রেলওয়ে শ্রমিক লীগের একজন নেতা এই গণশৌচারগারটি অবৈধভাবে দখল করে ব্যবসা করে আসছে। নির্ধারিত সময়ে এটার টেন্ডার হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি।
আমরা ধারণা করছি, এবারও গণশৌচাগারটি ওই ফ্যাসিস্টের দখলে দিতে দরপত্র নিয়ে এমন কারসাজি করেছে রেল কর্মকর্তারা। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দরপত্র খোলার পর বৈধ কারণ ছাড়া প্রক্রিয়া স্থগিত করা পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস-২০০৮ অনুযায়ী স্বচ্ছতার পরিপন্থি।
রেলওয়ের ভেতরের অনেকেই নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, রেলওয়ের বিভিন্ন ইজারা ও টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ রয়েছে। এবারও একই কৌশলে দরপত্র স্থগিত করে সুবিধাভোগী পক্ষকে সুযোগ দেওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের সমতল ভূমিতে লেবু জাতীয় ফসল ‘মালটা’ চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। চা, পান এবং কমলার মতো বাণিজ্যিকভাবে মাল্টা চাষে ঝুঁকছেন এখানকার কৃষকেরা। দেশের সর্ববৃহৎ মাল্টার বাগানও রয়েছে এ জেলায়। ইতোমধ্যে উত্তরবঙ্গের সীমান্তবর্তী এ জেলার মাটি ও আবহাওয়ার কারণে চা চাষের জন্য তৃতীয় স্থানে জায়গা করে নিয়েছে। শুধু চা নয়, বাণিজ্যিকভাবে নানা রকম ফল ও ফসল চাষ হচ্ছে এ জেলায়। এদিকে পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলায়ও দেশি মালটা চাষেরও ব্যাপক সাফল্য দেখা দিয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পঞ্চগড় বোদা উপজেলার ২ নং ময়দানদিঘী ইউনিয়নের ভিমপুকুর এলাকার কৃষক সাদেকুল ইসলাম নিজস্ব দুই বিঘা জমিতে প্রায় ২১৭টি মালটা গাছ রোপণ করেছে। দেশি প্রজাতির প্রতিটি মালটা গাছে ফলন হয় ৫০ থেকে ৮০ কেজি।
কৃষক সাদেকুল ইসলাম বলেন, মালটা গাছ রোপণ করার দুই বছরের মধ্যে বিক্রি করেছেন প্রায় দুই লক্ষ টাকা। চলতি বছরে তিনি ৪ লক্ষ টাকার মালটা বিক্রি করার আশা করছেন।
ভিমপুকুর এলাকার কৃষক সাদেকুল আরও জানান, গত ২০২২ সালে বোদা উপজেলা কৃষি অফিস থেকে প্রায় ২১৭টি দেশি মালটা গাছ ফ্রী পান। সেই সাথে মালটা বাগান করতে রাসায়নিক সারসহ পরিচর্যা করার বিষয় নিয়ে একটি ট্রেনিংও করান উপজেলা কৃষি অফিস।
এদিকে, উপজেলার ৩নং বনগ্রাম বেংহাড়ী ইউনিয়নের তেপুখুরিয়া টোকরা পাড়া এলাকার কৃষক শাহিনুর বলেন, ২১ একর জমিতে দেশি মালটার চাষ করি, এবং দেশি মালটার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
কৃষক শাহিনুর আরো বলেন, আগামী নভেম্বর মাসে ২৫০০ টাকা দরে মণ বিক্রি যাওয়ার কথা, প্রতি বছর এ মাসে ফলের দাম বেশি থাকে, তাই আমি নভেম্বর মাসে বিক্রি করবো।
কৃষি বোদা উপজেলা কৃষি অফিসার আহমেদ রাশেদ উন-নবী বলেন, মালটা চাষের জন্য এলাকার মাটি ও আবহাওয়া অত্যন্ত উপযোগী। তারা কৃষকদের মালটা ও অন্যান্য বাণিজ্যিক ফলের চাষে উৎসাহিত করে যাচ্ছেন। এতে কৃষকদের আয় যেমন বাড়ছে, তেমনি স্থানীয় বাজারে দেশি ফলের চাহিদাও পূরণ হচ্ছে। এ বছর ৪৭ হেক্টর মালটা চাষ হচ্ছে বোদা উপজেলায়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরো বলেন, এবছর আবহাওয়া ভালো থাকায় প্রচুর ফলন হয়েছে। দেশের সর্ববৃহৎ মাল্টা বাগান গড়ে উঠেছে পঞ্চগড়ে। মাল্টা চাষ আরও সম্প্রসারিত হচ্ছে। আমরা চাষিদের নানাভাবে সহযোগিতা করছি।
এদিকে, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, এই জেলায় রয়েছে দেশের সর্ববৃহৎ মাল্টা বাগান। পঞ্চগড়ে প্রতিনিয়ত বাড়ছে মাল্টা বাগান। খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু হওয়ায় পঞ্চগড়ের মাল্টার চাহিদাও বাড়ছে।
সৈয়দ মাহফুজার রহমান সেলিম নামের অপর আরেক কৃষক জানান, ২০১৯ সালের জুন মাসে তিনি ১৫ বছরের জন্য ৬০ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে বারি ১ মাল্টা চাষ শুরু করেন। এরপর ৯ হাজার গাছ লাগিয়েছেন তিনি।
প্রতিবছর প্রত্যেক গাছ থেকে ২০ কেজি মাল্টা পান। প্রতিবছর তিনি ১ লক্ষ ৮০ হাজার কেজি মাল্টা উৎপাদন করতে পারবেন।
তিনি আরও জানান, পঞ্চগড়ের স্থানীয় ফল ব্যবসায়িরা বাগান থেকে মাল্টা কিনছেন।
পঞ্চগড়ের আবহাওয়া এবং মাটির গুণাগুণ বিচার করে কৃষি অধিদপ্তর বলছে, এই জেলায় মাল্টা চাষের সম্ভাবনা রয়েছে। তাই প্রতিনিয়ত বাড়ছে মাল্টা চাষ। অনেকে চা বাগানে মাল্টা চাষ করছেন। অনেকে আবার মাল্টা বাগানে পেপে, কলাসহ অন্যান্য আবাদ করে বাড়তি আয়ও করছেন। প্রথমদিকে বাড়ির আঙ্গিনা বা খোলা যায়গায় নিতান্ত শখের বসেই মাল্টা চাষ করছিলেন এই জেলার অধিবাসিরা। পরে মাল্টা চাষ বাণিজ্যিক আকারে সম্প্রসারিত হচ্ছে।
বোদা উপজেলার অবসরপ্রাপ্ত এক শিক্ষক জানান, শখের বসেই ৪০টি মাল্টা গাছ লাগিয়ে শুরু করেছিলাম। ভালো ফল পেয়ে এখন প্রায় ১ একর জমিতে মাল্টা চাষ করেছি।
ভিটামিন সি এবং ব্যাপক পুষ্টিগুণ থাকার কারণে বাজারে মাল্টার চাহিদাও বাড়ছে দিন দিন। খুব অল্প সময়ে গাছে ফল ধরে। আর ব্যবসায়িরা বাগান থেকেই কিনে নিয়ে যায় মাল্টা। পঞ্চগড়ের মাল্টা এখন রপ্তানি হচ্ছে সারাদেশে।
মন্তব্য