নিজেদের বারবার অরাজনৈতিক দাবি করা হেফাজতে ইসলামের বিলুপ্ত কমিটির সিংহভাগ সদস্যই ছিলেন বিএনপি-জামায়াত জোটের শরিক দলের নেতা। তারা হেফাজতকে ব্যবহার করে তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের চেষ্টা করার অভিযোগের মধ্যে এই কমিটি ভেঙে দেয়ার পর এবার রাজনীতি থেকে দূরে থাকা কওমি আলেমদের নিয়ে কমিটি গঠনে মনযোগী হয়েছে সংগঠনটি।
গত মার্চ ও এপ্রিলের শুরুতে দেশের নানা স্থানে তাণ্ডবের পর ১১ এপ্রিল থেকে সরকার গ্রেপ্তার অভিযান শুরু করলে একাধিকবার হেফাজতের পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা রাজনৈতিক সংগঠন না। ক্ষমতায় কে থাকল না থাকল, তা নিয়ে তাদের মাথাব্যথা নেই।
হেফাজত আমিরের বারবার বক্তব্যের পাশাপাশি গত ১৯ এপ্রিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের সঙ্গে বৈঠক করেও এই বিষয়টি তুলে ধরা হয়।
তবে সরকার অভিযোগ করে আসছে, হেফাজতের যেসব নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের রাজনৈতিক অভিলাষ ছিল। বিশেষ করে, যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের চক্রান্ত করেছিলেন উগ্রবাদ ছড়িয়ে।
সমঝোতার চেষ্টায় মরিয়া হেফাজত আমির জুনায়েদ বাবুনগরী এর মধ্যে রোববার রাতে ১৫১ সদস্যের সেই কমিটি ভেঙে দেন। সাড়ে তিন ঘণ্টার মধ্যেই অবশ্য পাঁচ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে।
তবে এই আহ্বায়ক কমিটির সবাই বিলুপ্ত কমিটির নেতা হলেও একটি বিষয় লক্ষ্যণীয় যে এদের কেউই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নন।
এই কমিটি হেফাজতের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার উদ্যোগ নেবে।
হেফাজতে ইসলামের সদ্য বিলুপ্ত কেন্দ্রীয় কমিটির এক কেন্দ্রীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমাদের ওপর উপর থেকে চাপ আছে যে রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি সংশ্লিষ্ট কাউকে হেফাজতের কমিটিতে না রাখার জন্য। পরবর্তীতে অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের নিয়ে কমিটি করব।’
বিলুপ্ত ও আহ্বায়ক কমিটির মহাসচিব নুরুল ইসলাম জিহাদীর কাছ থেকে অবশ্য এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। ফোন করলে তিনি লাইন কেটে দেন।
তবে তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘অরাজনৈতিক ব্যক্তি যারা আছেন, তাদের বা মুরুব্বী ও বয়স্ক নেতাদের নিয়ে আহ্বায়ক কমিটি করা হয়েছে। যদি এটার কোনো সম্প্রসারণ হয়, তাহলে একই ক্যাটাগরির লোক দিয়ে তা করা হবে।’
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে সদ্য বিলুপ্ত হেফাজতে ইসলামের দাওয়াহ সম্পাদক ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসান কাসেমীও কোনো কিছু বলতে রাজি হননি।
আহ্বায়ক কমিটিতে যারা, তারা কারা
হেফাজত বরাবর নিজেদের অরাজনৈতিক সংগঠন দাবি করলেও বিলুপ্ত কমিটির শতাধিক নেতারই রাজনৈতিক পরিচয় আছে। তারা কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক বিভিন্ন দলের নেতা ছিলেন।
তবে বিলুপ্ত ও আহ্বায়ক কমিটির আমির জুনায়েদ বাবুনগরী কোনো রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। মহাসচিব নূরুল ইসলাম জিহাদীরও রাজনৈতিক কোনো পরিচয় নেই। তিনি রাজধানীর খিলগাঁও মাখজানুল উলুম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ।
আহ্বায়ক কমিটির প্রধান উপদেষ্টা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী এক সময় ইসলামী ঐক্যজোটের সহ-সভাপতি থাকলেও, ২০১৮ সালে তিনি পদত্যাগ করেন।
সদস্য সালাহউদ্দীন নানুপুরী চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির জামিয়া ওবায়দিয়া নানুপুর মাদ্রাসার মহাপরিচালক। তবে কখনও কোনো দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না।
আরেক সদস্য মিজানুর রহমান (পীরসাহেব দেওনা) গাজীপুরের কাপাসিয়ার মাদ্রাসা দাওয়াতুল হকের প্রতিষ্ঠাতা। ২০১৩ সাল পর্যন্ত তিনি বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত থাকলেও, বিএনপি নেতা আ স ম হান্নান শাহের মৃত্যুর পর আর রাজনীতি করেননি। তিনি কাপাসিয়ার শহীদ তাজ উদ্দিন আহমেদ কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন।
বিলুপ্ত কমিটিতে বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গী যারা
নতুন কমিটিকে যাদেরকে রাখা হয়, তাদের মধ্যে যাদের রাজনৈতিক পরিচয় আছে, তারা সবাই বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন জোট ২০ দলের শরিক।
ওই কমিটির মহাসচিব করা হয় নূর হোসাইন কাসেমীকে। তিনি বিএনপি জামায়াত জোটের শরিক জমিয়তে উলামায়ে ইসলামীর একাংশের নেতা। পরে তিনি মারা যান।
দলের নেতা মাওলানা জিয়াউদ্দীন, মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক জায়গা পান সংগঠনের উপদেষ্টামণ্ডলীতে।
নায়েবে আমির পদে জমিয়তের ছয়জন নেতা জায়গা পান। তারা হলেন মাওলানা আব্দুল হামিদ (মধুপুর), মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ সাদী, মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী, মাওলানা বাহাউদ্দীন যাকারিয়া, মাওলানা আনোয়ারুল করিম (যশোর) ও মাওলানা নুরুল ইসলাম খান (সুনামগঞ্জ)।
নতুন চার যুগ্ম মহাসচিব ছিলেন এই দলের। তাদের দুজন হলেন মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব ও মাওলানা নাসির উদ্দিন মুনির।
সহকারী মহাসচিব হন মাওলানা ফজলুল করীম কাসেমী ও মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী।
সহকারী সাংগঠনিক সম্পাদক হন মাওলানা মাসউদুল করীম, মাওলানা শামসুল ইসলাম জিলানী ও মাওলানা তাফহিমুল হক।
অর্থ সম্পাদক হন মুফতি মুনির হোসাইন কাসেমী ও সহকারী অর্থসম্পাদক মাওলানা লোকমান মাজহারী।
সহকারী প্রচার সম্পাদক হন মাওলানা মুহাম্মদ ইয়াকুব ওসমানী, মুফতি শরীফুল্লাহ ও মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান।
আইন বিষয়ক সম্পাদক হন মাওলানা শাহীনুর পাশা চৌধুরী। তিনি বিএনপি-জামায়াত জোটের হয়ে ধানের শীষ প্রতীকে সংসদ নির্বাচন করেছেন।
দাওয়াহ সম্পাদক হন মাওলানা নাজমুল হাসান, সহকারী আন্তর্জাতিক সম্পাদক হন মাওলানা শুয়াইব আহমদ, মাওলানা গোলাম কিবরিয়া, সহকারী দপ্তর সম্পাদক হন মাওলানা সিদ্দিকুল ইসলাম তোফায়েল।
কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে মনোনীত হন জামিল আহমদ চৌধুরী, বশির আহমদ, তাফাজ্জল হক আজিজ, আলী আকবর সাভার, আবু আব্দুর রহিম, আব্দুল কুদ্দুস, মুহাম্মদ উল্লাহ জামি, মাওলানা হাবিবুল্লাহ মাহমুদ কাসেমী।
বিএনপি-জামায়াত জোটের শরিক খেলাফত মজলিসেরও ছয়জন নেতা স্থান পান কমিটিতে। এদের মধ্যে উপদেষ্টামণ্ডলীতে ছিলেন দলের আমির মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক। নায়েবে আমির হন আহমাদ আবদুল কাদের, যিনি ছাত্রজীবনে ইসলামী ছাত্র শিবিরের সভাপতি ছিলেন।
এই দলের মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন হন নায়েবে আমির।
সহকারী আন্তর্জাতিক সম্পাদক হন মাওলানা আবদুল কাদের সালেহ ও আহমদ আলী কাসেমী।
মামুনুলের দলের যারা ছিলেন
সাম্প্রতিক সময়ে তুমুল আলোচিত হয়ে ওঠা মামুনুল হকের রাজনৈতিক দল খেলাফত মজলিসের আরেক অংশও ১৯৯৯ সালে বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হয় ইসলামী ঐক্যজোটের শরিক হিসেবে।
তবে ২০০৬ সালে বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করলেও ২০১৩ সালের দিকে আবার সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে দুই দলের। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে জোটবদ্ধ আর হয়নি তারা।
২০১৩ সালের শাপলা চত্বরে অবস্থানের সময় মামনুল হকই সকালে নতুন সরকারের ঘোষণা দিয়েছিলেন।
এই দলের আমির মাওলানা ইসমাঈল নূরপুরীকে বিলুপ্ত কমিটির উপদেষ্টা করা হয়। নায়েবে আমির হন সাবেক মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক। যুগ্ম মহাসচিব হন মামুনুল হক।
মাওলানা খোরশেদ আলম কাসেমী ও মাওলানা জালালুদ্দিন হন সহকারী মহাসচিব। যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন হন সহকারী সাংগঠনিক সম্পাদক। মওলানা ফয়সাল আহমদ হন সহ প্রচার সম্পাদক।
দলটির বেশ কয়েকজন ভক্ত ও অনুসারী আলেম জায়গা পেয়েছেন হেফাজতের বিভিন্ন পদে।
হেফাজতের উত্থান যেভাবে
২০১০ সালে নারীনীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনের অংশ হিসেবে কওমি ঘরানার সব দল ও সংগঠন মিলে গঠন করে হেফাজতে ইসলাম। আমির করা হয় চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসার প্রধান শাহ আহমেদ শফীকে। কওমি আলেমদের মধ্যে তিনি মুরুব্বি হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
তবে সংগঠনটি আলোচিত হয়ে উঠে ২০১৩ সালের এপ্রিল-মে মাসে।
ওই বছর যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে গণজাগরণমঞ্চ নামে যে আন্দোলন গড়ে ওঠে, সেই আন্দোলনের নেতাদের ধর্মদ্রোহী আখ্যা দিয়ে তাদের ফাঁসি দাবি করে হেফাজত। তারা নানা কর্মসূচি দিয়ে ৫ মে ঢাকা অবরোধের ঘোষণা দেয়।
সেদিন বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষের পর হঠাৎ করে বিকেলে সংগঠনটি শাপলা চত্বরে সমাবেশের ঘোষণা দেয়। আর বিকেলে সেখানে জড়ো হওয়ার পর সেখান থেকে সরে দাঁড়াতে অস্বীকার করে। একপর্যায়ে তারা সরকার পতনের দাবি করতে তাকে।
দিনভর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হামলা চালায় হেফাজত কর্মীরা। ওই সমাবেশে অংশ নিয়ে পরদিন থেকে নতুন সরকারের ঘোষণাও দেয়া হয়।
সেই সমাবেশকে ঘিরে হেফাজত সে সময়ের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির সঙ্গে বৈঠক করেছিল বলে হেফাজতের গ্রেপ্তার এক নেতা আদালতে জানিয়েছেন। তিনি জানান, বিএনপির এক নেতা তাদের পাঁচ কোটি টাকা সহায়তা দিয়েছিলেন। পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, সেই নেতা হলেন আবদুল আউয়াল মিন্টু।
যদিও হেফাজতের পক্ষ থেকে এই অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।
তবে হেফাজত যখন শাপলা চত্বরে অবস্থান করে, সে সময় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া তার কর্মী-সমর্থকদের রাজপথে নেমে আসার আহ্বান জানান। যদিও বিএনপির সেই স্বপ্ন সে সময় পূরণ হয়নি।
ওই রাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের মুখে হেফাজত কর্মীরা শাপলা চত্বর ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। আর অভিযানের পর হাজার হাজার মানুষকে হত্যার গুজব ছড়িয়ে পড়ে।
বিএনপি ঘরানা ত্যাগ করে সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক
যদিও পরে কারও নাম দিতে পারেননি হেফাজত আর সংগঠনের সে সময়ের শীর্ষ নেতারা। পরে বিএনপি-জামায়াত জোটের সঙ্গ ত্যাগ করে সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলেন।
এর একপর্যায়ে কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ ডিগ্রি দাওরায়ে হাদিসকে ইসলামিক স্টাডিজে মাস্টার্সের সমমান দিয়ে কওমি অঙ্গনের দীর্ঘ বছরের দাবি পূরণ করে সরকার। এই সনদের স্বীকৃতির আশায় ১৯৯৯ সালে বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়েছিল কওমি রাজনৈতিক দলগুলোর জোট ইসলামী ঐক্যজোট।
পরিস্থিতি পাল্টে যায় গত সেপ্টেম্বরে
গত সেপ্টেম্বরে হাটহাজারী মাদ্রাসায় হাঙ্গামায় আল্লামা শফীর মৃত্যুর পর পরিস্থিতি আবার ঘোলাটে হয়।
গত ১৫ নভেম্বর বাবুনগরীকে আমির করে হেফাজতের ইসলামের ১৫১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়।
সংগঠনটি বরাবর নিজেদের অরাজনৈতিক দাবি করে আসলেও এই ১৫১ জনের সিংহভাগেরই রাজনৈতিক পরিচয় আছে। আর এদের বেশির ভাগই বিএনপি-জামায়াত জোটের শরিক।
এবার কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে ২০ দলীয় জোট ছেড়ে আসা দলগুলোর নেতাদের বাদ দেয়ার পরই হেফাজতের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়।
গোপালগঞ্জের গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসার মাওলানা রুহুল আমিন দুটি কওমি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান। তাকেও কোনো পদে রাখা হয়নি, যদিও বাকি চারটি বোর্ডের চেয়ারম্যানদের রাখা হয়েছে।
রুহুল আমিন আওয়ামী ঘনিষ্ঠ আলেম হিসেবে পরিচিত। তিনিও কওমি সনদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি আদায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন।
বাদ পড়েছেন বিএনপি-জামায়াত জোট থেকে বের হয়ে যাওয়া ইসলামী ঐক্যজোটর মহাসচিব মুফতি মোহাম্মদ ফয়জুল্লাহ। তিনি আগের কমিটির যুগ্ম মহাসচিব ছিলেন।
তবে ২০ দল ছাড়ার পর ইসলামী ঐক্যজোট থেকে বের হয়ে অন্য দলে যোগ দেয়া জুনায়েদ আল হাবিবকে ঠিকই কমিটিতে রাখা হয়েছে।
রাজনীতি নিয়ে নাক গলানো শুরু
হেফাজতের নতুন কমিটি গঠন হওয়ার পরেই সংগঠনের নেতারা রাজনৈতিক বিষয়ে নানা বক্তব্য দিতে থাকেন।
হেফাজত নেতারা নানা সভা সমাবেশ ও ওয়াজে বলতে থাকেন, তাদের কথা শুনে দেশ চালাতে হবে। এমনকি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য নির্মাণের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় তারা। এমন বক্তব্যও আসে যে ভাস্কর্য নির্মাণ করা হলে, তা টেনে ফেলে দেয়া হবে। আবার শাপলা চত্বর পরিস্থিতি তৈরি করা হবে।
তবে হেফাজত সহিংস হয়ে ওঠে গত ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে মুক্তিযুদ্ধের বন্ধু ভারতের সরকারপ্রধান নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে।
মোদি ঠেকাতে হঠাৎ করেই মাঠে নামে সংগঠনটি। যদিও সফরের চার দিন আগে ২২ মার্চ ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে সংগঠনটি ঘোষণা দেয়, মোদির সফরের বিরোধী হলেও তারা কোনো কর্মসূচি দেবে না।
তবে হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক ২৫ মার্চ বায়তুল মোকাররমের সামনের সমাবেশে ঘোষণা করেন, মোদি দেশে এলে সরকার পতনের ক্ষেত্র তৈরি করবেন তারা।
আরও পড়ুন:
সরকার দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীকে প্রেস কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে মনোনীত করেছে। বৃহস্পতিবার তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপসচিব খাদিজা তাহের ববির সই করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘প্রেস কাউন্সিলের ৫ নম্বর ক্রমিকের প্রতিনিধি নিউএজ পত্রিকার সম্পাদক নুরুল কবীর পদত্যাগ করায় তার পরিবর্তে সংবাদপত্র ও সংবাদ সংস্থার সম্পাদক সমিতির প্রতিনিধি হিসেবে দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীকে প্রেস কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে মনোনয়ন প্রদান করা হলো।’
বর্তমান কাউন্সিলের অবশিষ্ট মেয়াদের জন্য এ মনোনয়ন কার্যকর থাকবে। জনস্বার্থে জারিকৃত এ প্রজ্ঞাপন অবিলম্বে কার্যকর হবে বলেও প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে।
প্রেস কাউন্সিলের বর্তমান চেয়ারম্যান বিচারপতি একেএম আব্দুল হাকিম, সচিব (উপসচিব) মো. আব্দুস সবুর।
এছাড়া ১২ জন সদস্য হচ্ছেন—১. বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন, ২. ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি মিস দৌলত আকতার মালা, ৩. ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. শহিদুল ইসলাম, ৪. ডেইলি স্টারের সম্পাদক ও প্রকাশক মাহফুজ আনাম, ৫. দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, ৬. দৈনিক বণিক বার্তার প্রকাশক ও সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ, ৭. দ্য ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ, ৮. দৈনিক পূর্বকোণের সম্পাদক ডা. রমিজ উদ্দিন চৌধুরী, ৯. নিউজপেপার্স ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (নোয়ার) উপদেষ্টা আখতার হোসেন খান, ১০. বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম, ১১. বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সচিব ড. মো. ফখরুল ইসলাম এবং ১২. বার কাউন্সিলের ভাইস-চেয়ারম্যান জয়নুল আবেদীন।
অন্তর্বর্তী সরকারের ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী মিয়া শাহবাজ শরিফের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। পাকিস্তানের ইসলামাবাদে পিএম হাউসে উভয়ের এ সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়।
বৃহস্পতিবার ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ধর্ম উপদেষ্টা ও তার প্রতিনিধিদলকে স্বাগত জানিয়ে পাকিস্তান প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক এবং সখ্যের বন্ধনে আবদ্ধ। এ সম্পর্ক আগামী দিনগুলোতে আরও জোরদার হবে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নিউইয়র্ক ও কায়রোতে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে অনুষ্ঠিত বৈঠকের কথা উল্লেখ করে দূরদর্শী নেতৃত্ব এবং দারিদ্র্য দূরীকরণে তার অবদানের প্রশংসা করেন। এছাড়া তিনি পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সম্পর্ককে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে প্রধান উপদেষ্টার আকাঙ্ক্ষাকে সাধুবাদ জানান।
এদিকে ধর্ম উপদেষ্টা বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের একটি পত্র পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন।
পাকিস্তান প্রধানমন্ত্রীকে লেখা এ পত্রে প্রধান উপদেষ্টা পাকিস্তানে নজিরবিহীন বন্যায় সে দেশের সরকার ও জনগণের প্রতি গভীর সহমর্মিতা ও আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং ভয়াবহ এ দুর্যোগে নিহতদের পরিবার ও ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।
এ পত্রে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, কঠিন এ সময়ে বাংলাদেশের জনগণ পাকিস্তানের ভ্রাতৃপ্রতিম জনগণের পাশে রয়েছে। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আপনার সুদক্ষ নেতৃত্বে পাকিস্তানের জনগণ তাদের অসাধারণ ধৈর্য ও সহনশীলতার মাধ্যমে এ চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করবে। প্রয়োজনে ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রমে বাংলাদেশ সর্বাত্মক সহযোগিতা ও সহায়তা প্রদানে প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।
সাক্ষাৎকালে ঢাকা ও করাচীর মধ্যে সরাসরি বিমান চলাচল দ্রুত পুনঃস্থাপনের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করা হয়। এছাড়া কৃষি, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, ধর্মতত্ত্ব ও চিকিৎসা বিষয়ে উভয়দেশের শিক্ষার্থী বিনিময়ে বৃত্তি প্রদানের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার, প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ, ধর্মবিষয়ক ও আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি মন্ত্রী সরদার ইউসুফ খান, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী আতা তারার, ইসলামাবাদে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. ইকবাল হোসেন খান, উপদেষ্টার একান্ত সচিব ছাদেক আহমদ ও শরীফ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের প্রভাষক মুফতি জাহিদ হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
পুলিশের একটি স্বাধীন তদন্ত সার্ভিস গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আজ বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সভায় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস সভাপতিত্ব করেন।
পরে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘উপদেষ্টা পরিষদ সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুলিশের একটি স্বাধীন তদন্ত সার্ভিস গঠন করা হবে, যাতে কোনো রাজনৈতিক বা অন্য কোনো প্রভাব ছাড়াই তদন্ত সম্পন্ন করা যায়।’ এর পাশাপাশি পুলিশের ভেতরে অভ্যন্তরীণ অভিযোগ যাচাইয়ের জন্য একটি কমিশন গঠনের বিষয়েও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও জানান, ‘এই দুই সিদ্ধান্ত দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য আইন মন্ত্রণালয় কাজ করবে। এ কাজে উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, আদিলুর রহমান খান এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বখশ চৌধুরী যুক্ত থাকবেন।’
সভায় স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করার বিষয়েও গুরুত্ব দেওয়া হয়। প্রেস সচিব বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা বারবার জোর দিয়েছেন যে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও ক্ষমতায়িত করতে হবে। ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন যেন নিজস্ব তহবিল সংগ্রহ ও স্বচ্ছভাবে পরিচালনা করতে পারে সে বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
স্বাস্থ্য খাত নিয়েও সভায় আলোচনা হয়। শফিকুল আলম জানান, ‘কিছু মেডিকেল কলেজে যোগ্য শিক্ষকের সংকট রয়েছে। তাই অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের পরামর্শক বা অন্যভাবে সম্পৃক্ত করে শিক্ষা কার্যক্রমের মান উন্নত করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
নেপালে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের বিষয়েও সভায় আলোকপাত করা হয়। প্রেস সচিব বলেন, ‘নেপালে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা ভালো আছেন, দূতাবাস তাদের দেখভাল করছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর বিশেষ ফ্লাইটে জাতীয় ফুটবল দলকে দেশে আনার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।’
এ বৈঠক প্রসঙ্গে শফিকুল আলম আরও বলেন, ‘আজকের বৈঠকের প্রতিটি সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের অর্থনীতি, শাসনব্যবস্থা ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমাদের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করবে।’
ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।
ক্যাডার কর্মকর্তাদের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণের মেয়াদ ছয় মাস থেকে কমিয়ে চার মাস করা হয়েছে। এর মধ্যে তিন মাস প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে এবং এক মাস মাঠপর্যায়ে ওরিয়েন্টেশন ও গ্রাম সংযুক্তি অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
আজ বুধবার প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে জাতীয় প্রশিক্ষণ কাউন্সিলের নবম সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সভায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোখলেস উর রহমান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান উপস্থিত ছিলেন।
সভায় আরও সিদ্ধান্ত হয়, কর্মকর্তাদের মাস্টার্স ও পিএইচডি কোর্সে ভর্তির সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৪৫ থেকে বাড়িয়ে ৪৭ বছর করা হবে। পিএইচডি কোর্সে অধ্যয়নকালে প্রতি বছর তত্ত্বাবধায়কের অগ্রগতিমূলক প্রত্যয়ন মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে হবে, অন্যথায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বেতন বন্ধ রাখা হবে।
সভায় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘সরকারি যত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আছে সেগুলোর ওপর মূল্যায়ন করতে হবে। কী ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, প্রশিক্ষণের ধরন-মান ইত্যাদির মানদণ্ড নির্ধারণ করে ক্যাটাগরিভিত্তিক প্রতিটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রকে র্যাংকিং করতে হবে এবং নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘একটি স্বাধীন ইউনিট গঠন করতে হবে। তারা সমস্ত গবেষণা প্রতিষ্ঠানের ওপর পদ্ধতিগতভাবে, স্বাধীনভাবে মূল্যায়ন করবে। গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর সামগ্রিক দর্শন জানতে হবে। সেগুলো সঠিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে কি না দেখতে হবে। সরকারি কর্মকর্তারা যারা বিদেশ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছেন তাদের তথ্য সেখানে থাকবে।’
সভায় সঞ্জীবনী প্রশিক্ষণের নাম পরিবর্তন করে ‘দক্ষতা নবায়ন প্রশিক্ষণ’ করার সিদ্ধান্ত হয়। এ প্রশিক্ষণ হালনাগাদকৃত কারিক্যুলামে মাঠপর্যায়ে সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে আয়োজন করা হবে। এছাড়া উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে কর্মকর্তারা আংশিক বৃত্তিপ্রাপ্ত হলেও প্রেষণ অনুমোদন করা যাবে।
কর্মচারীদের সততা ও নৈতিকতা বিকাশ এবং দুর্নীতি বিরোধী মনোভাব তৈরিতে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কোর্সে সদ্গুণ, নৈতিকতা, আচরণবিজ্ঞান ও আচরণবিধি অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়। পাশাপাশি প্রশিক্ষণ ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলোর সার্বিক মূল্যায়ন এবং প্রশিক্ষণ বিষয়ক সিদ্ধান্ত গ্রহণের লক্ষ্যে গবেষণা, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন কার্যক্রম পরিচালনারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সভায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদকে সভাপতি করে একটি নির্বাহী কমিটি (ইসিএনটিসি) গঠন করা হয়।
জাতীয় লেখক ফোরাম আয়োজিত সাপ্তাহিক সাহিত্য আড্ডা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাজধানীর ধানমন্ডিতে হওয়া এ সাহিত্য আড্ডায় উপস্থিত ছিলেন সংগঠেনর সভাপতি ড. দেওয়ান আযাদ রহমান, মহাসচিব কবি-কথাসাহিত্যিক জাহাঙ্গীর হোসাইন এবং উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য মো. আবদুল মান্নানসহ বাংলাদেশের খ্যাতিমান লেখকরা। অনুষ্ঠানটি একটি সাধারণ প্রাণবন্ত আড্ডার মধ্যেই শুরু হয়। অনুষ্ঠানটি ৩টি পর্বে সাজানো হয়েছে। প্রতি পর্বে চারজন কবিকে মঞ্চে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তারা তাদের গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য এবং কবিতা পাঠ করেছেন। পুরো অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেছেন কবি-কথা সাহিত্যিক জাহাঙ্গীর হোসাইন।
শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি পরিশোধের জন্য সরকার প্রদত্ত সুদমুক্ত ঋণ যথাসময়ে ফেরত না দিলে সংশ্লিষ্ট শিল্প কারখানার মালিকদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
বুধবার সচিবালয়ে আয়োজিত এক সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব, ব্যাংকিং ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধি, বিজিএমইএ-এর সভাপতি এবং সংশ্লিষ্ট ঋণগ্রহীতা কারখানার মালিকদের নিয়ে এ সভার আয়োজন করা হয়।
ড. এম সাখাওয়াত হোসেন জানান, বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকরা শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় শ্রম অসন্তোষ নিরসনের লক্ষ্যে সরকার বার্ডস গ্রুপ, টিএনজেড গ্রুপ, বেক্সিমকো গ্রুপ, ডার্ড গ্রুপ, নায়াগ্রা টেক্সটাইলস লিমিটেড, রোয়ার ফ্যাশন লিমিটেড, মাহমুদ জিন্স লিমিটেড, স্টাইল ক্রাফট লিমিটেড এবং গোল্ডস্টার গার্মেন্টস লিমিটেডকে অর্থ বিভাগ এবং কেন্দ্রীয় তহবিল, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে সুদমুক্ত ঋণ প্রদান করে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণ চুক্তির আওতায় উক্ত অর্থ পরিশোধ করছেন না।
তিনি বলেন, তাদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর অবস্থানে যাবে। তাদের পাসপোর্ট জব্দের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
ইতোমধ্যে কয়েকজন পলাতক মালিকের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তিনি পলাতক মালিক ও প্রতিষ্ঠানের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের পাসপোর্ট স্থগিত রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার নির্দেশনা দেন।
উপদেষ্টা বলেন, "এই ঋণের টাকা শ্রমিকের টাকা এবং জনগণের ট্যাক্সের টাকা। এ টাকা আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে।"
তিনি বলেন, এই ক্ষেত্রে কোনোরকম ছাড় দেওয়া হবে না।
তিনি সংশ্লিষ্ট শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিক ও প্রতিনিধিদের সংশ্লিষ্ট লিয়েন ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করে প্রতিষ্ঠানের জমি, কারখানা, যন্ত্রপাতি বিক্রি করে হলেও ডিসেম্বর মাসের মধ্যে ঋণের সকল টাকা পরিশোধ করতে বলেন।
এ বিষয়ে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ-কে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা সভায় উপস্থিত ছিলেন।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি, ইসরাইলের নৃশংসতার জন্য জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এবং ওই অঞ্চলে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছেন।
বাংলাদেশে সফররত ফিলিস্তিনের প্রধান বিচারপতি ড. মাহমুদ সিদকি আল-হাব্বাশের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় গতকাল মঙ্গলবার এক বৈঠকে উপদেষ্টা এ মন্তব্য করেন। আজ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ বিষয়ে জানানো হয়।
বৈঠকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ফিলিস্তিনের জনগণের প্রতি বাংলাদেশের অবিচল সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন এবং ১৯৬৭ সালের আগের সীমানা অনুযায়ী দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের প্রতি সমর্থন জানান।
ফিলিস্তিনের প্রধান বিচারপতি ড. আল-হাব্বাশ বাংলাদেশের নেতৃত্ব ও জনগণের স্থায়ী সমর্থনের জন্য গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ঐক্য আরও সুদৃঢ় করার গুরুত্বের ওপরও জোর দেন।
ফিলিস্তিনিদের নিরন্তর সমর্থনের জন্য দেশটির প্রধান বিচারপতি বাংলাদেশের নেতৃত্ব ও জনগণের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি এ বিষয়ে মুসলিম উম্মাহর মধ্যে বৃহত্তর ঐক্যের ওপরও জোর দেন।
বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির আমন্ত্রণে ড. আল-হাব্বাশ তিন দিনের সরকারি সফরে বাংলাদেশে এসেছেন।
মন্তব্য