ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ১০ রাষ্ট্রের জোট অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথইস্ট এশিয়ান নেশনসের (আসিয়ান) শীর্ষ সম্মেলন বসছে শনিবার। সম্মেলনে রোহিঙ্গা সংকট নিয়েও আলোচনা প্রত্যাশা করছে বাংলাদেশ। এ বিষয়ে মিয়ানমারের ওপর চাপ চায় ঢাকা।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সিএনবিসির কাছে এই আশা প্রকাশ করেন বাংলাদেশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
জাকার্তায় আসিয়ানভুক্ত ১০ দেশের এই সম্মেলনে মিয়ানমারের ছায়া সরকারের পক্ষে যোগ দেবেন দেশটির সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং।
করোনার কারণে এবারের জাকার্তা সম্মেলনে সব দেশের সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধান উপস্থিত থাকছেন না। তবে জোটের ১০ দেশের কয়েকজন শীর্ষ নেতা উপস্থিত থাকবেন বলে নিশ্চিত করেছে থাইল্যান্ড।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে সেনা অভিযানের মুখে পালিয়ে এসে বাংলাদেশের অস্থায়ী ক্যাম্পগুলোতে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করা প্রয়োজন। সংকট নিরসনে আসিয়ানভুক্ত দেশগুলো মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে বলে আমি মনে করি।’
তিনি বলেন, ১১ লাখেরও বেশি মিয়ানমারের নাগরিক আশ্রিত রয়েছে। বাংলাদেশের প্রধান উদ্দেশ্য হলো, তাদের মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করা।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর সেনাবাহিনীর নির্যাতন শুরু হলে তারা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। তারা প্রাথমিকভাবে কক্সবাজার জেলায় স্থাপিত অস্থায়ী ক্যাম্পগুলোতে আশ্রয় নেয়। তাদের মধ্য থেকে কয়েক দফায় প্রায় ১৮ হাজার রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তর করেছে বাংলাদেশ সরকার।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে বারবার উদ্যোগ নেয়া হলেও মিয়ানমারের সদিচ্ছার অভাবে তা আলোর মুখ দেখেনি।
এদিকে, জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন রাখাইনের ওই ঘটনাকে জাতিগত নিধনযজ্ঞের ‘পাঠ্যপুস্তকীয় উদাহরণ’ বলে আখ্যা দিয়েছে।
রাখাইনের সহিংসতাকে জাতিগত নিধন আখ্যা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রও। এ ছাড়া তুমুল সমালোচনা করছে যুক্তরাজ্য, কানাডা, কুয়েত, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ পুরো বিশ্ব।
জাতিসংঘের নির্দেশনা
ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জন্য নেয়া সরকারের পদক্ষেপে সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছে জাতিসংঘের টেকনিক্যাল টিম। তবে, ভাসানচর পরিদর্শন নিয়ে তাদের দেয়া সুপারিশে সরকারের জন্য চারটি করণীয় ঠিক করে দিয়েছে জাতিসংঘ।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন সম্প্রতি নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জাতিসংঘ বাংলাদেশ সরকারকে ভাসানচরের চারপাশের বেড়িবাঁধ আরও মজবুত ও উঁচু করা, দুর্যোগকালে রোহিঙ্গাদের মূল ভূখণ্ডে যাতায়াতের ব্যবস্থা করা, শিশুদের শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘জাতিসংঘের পর্যবেক্ষণ খুব ভালাে ও ইতিবাচক। তারা ১০ পৃষ্ঠার একটি ইতিবাচক পর্যবেক্ষণ দিয়েছে। এর দুই পৃষ্ঠার সার সংক্ষেপ আমাদের কাছে সম্প্রতি জমা দিয়েছে। পুরো প্রতিবেদন দ্রুত সময়ে জমা দেবে বলে জানিয়েছে।’
১ লাখ রােহিঙ্গার জন্য আবাসনসুবিধা সম্পর্কে সরাসরি ধারণা লাভ করতে জাতিসংঘের ১৮ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল গত মার্চে ভাসানচর পরিদর্শন করে।
মােমেন বলেন, ‘রােহিঙ্গাদের শিক্ষার বিষয়ে আমাদের তো কোনো সমস্যা নেই। তবে, তাদের যেহেতু তাদের দেশে ফেরত যেতেই হবে এবং বাংলাদেশ যেহেতু মানবিক কারণে তাদের সাময়িক আশ্রয় দিয়েছে তাই তাদের শিক্ষাটা মিয়ানমারের ভাষাতেই হওয়া উচিত। এতে তারা দেশে ফিরলে সহজেই তাদের সমাজে মিশতে পারবে এবং উচ্চশিক্ষার জন্য মিয়ানমারের পাঠ্যক্রমের শিক্ষা তাদের সহায়তা করবে।'
বেড়িবাঁধের উচ্চতা বাড়ানাের বিষয়ে মােমেন বলেন, ‘এটা তো আমরা আমাদের প্রয়োজনেই করব। সেখানে তো কেবল রোহিঙ্গা নয়, আমাদেরও হাজারো লোকজন, গবাদিপশু, পুলিশ স্টেশন, নেভি, কোস্টগার্ড, কৃষিজমি, মৎস্য খামার, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থাকবে।
‘ভাসানচরের সাথে যােগাযােগের ক্ষেত্রে কোনাে সমস্যা হবে না। তারা সন্দ্বীপ হয়ে ভাসানচরে যেতে পারবেন। এই পথে সময় লাগবে ৩০ মিনিট। ভাসানচর বাংলাদেশের ৭৫টি দ্বীপের একটি এবং এটি সেন্টমার্টিন দ্বীপের চেয়েও ১০ গুণ বড়।'
৩ এপ্রিল রোহিঙ্গাদের জন্য ভাসানচরে নেয়া সরকারি পদক্ষেপ ও ব্যবস্থাপনা সরেজমিনে দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন ঢাকার ১০ বিদেশি মিশনপ্রধান। তারা সরকারের উদ্যোগকে সুপরিকল্পিত ও কার্যকর বলেও আখ্যা দেন। সাড়ে চার ঘণ্টার ওই সফরে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ ১০টি দেশ ও জোটের রাষ্ট্রদূতেরা অংশ নেন।
এদিকে বাংলাদেশ সরকারের আয়োজনে ১৭–২০ মার্চ পর্যন্ত জাতিসংঘের কারিগরি প্রতিনিধিদলটি ভাসানচরে যায়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেয়া তথ্যমতে, বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর দুটি হেলিকপ্টারে মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলার, যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার রবার্ট ডিকসন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত রেনসে টেরিঙ্ক ছাড়াও জার্মানি, ফ্রান্স, জাপান, তুরস্ক, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূতেরা ভাসানচরে যান।
সফর সম্পর্কে ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট ডিকসন ১৮ এপ্রিল একটি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ভাসানচরে নেয়া সরকারের পদক্ষেপ ও নির্মাণকৌশল যথেষ্ট পরিকল্পিত ও কার্যকর। তবে আমরা আরও দুটি বিষয়ে জানতে চেয়েছি। তা হলো রোহিঙ্গাদের কর্মসংস্থান এবং বর্ষায় মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যোগাযোগ। সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের জানানো হয়েছে। আমরা সন্তুষ্ট। তবে এখানকার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে জাতিসংঘের টেকনিক্যাল টিম।'
জার্মান রাষ্ট্রদূত ওই টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘ভাসানচরের সার্বিক ব্যবস্থাপনা চমৎকার। এখানে সরাসরি ঘুরে আসায় বিষয়টি আমার কাছে পরিষ্কার। আমরা সবকিছু কাছে গিয়ে দেখে এসেছি। রোহিঙ্গাদের সঙ্গেও কথা বলেছি। এখন জাতিসংঘসহ বিভিন্ন ফোরামে এটা নিয়ে কথা বলা সহজ হবে।'
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, সেখানে কূটনীতিকরা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। সেই সঙ্গে কক্সবাজার থেকে ভাসানচরে সরিয়ে নেয়া রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তায় জড়িত সরকারি–বেসরকারি প্রতিনিধিদের সঙ্গেও কথা বলেছেন।
কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরে চাপ কমাতে বাংলাদেশ সরকার নিজস্ব অর্থায়নে ভাসানচরে এক লাখ রোহিঙ্গাকে স্থানান্তরের পরিকল্পনা করেছে। পরিবেশগত ঝুঁকি, সামগ্রিক অবকাঠামো নিয়ে প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের তাদের নিজেদের ইচ্ছায় পাঠানো হচ্ছে কি না, এ বিষয়গুলো সামনে এনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো শুরু থেকেই ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের বিরোধিতা করে এসেছে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বিরোধিতার মধ্যেই বাংলাদেশ সরকার গত বছরের ৪ ডিসেম্বর কক্সবাজার থেকে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর শুরু করে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরে তুরস্কের সহায়তা চেয়েছিল বাংলাদেশ। ঢাকা সফরের সময় গত বছরের শেষের দিকে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেবলুৎ সাবু সোলু বিভিন্ন দেশের সরকারে কাছে ভাসানচরের ছবি ও বিভিন্ন সুযোগসুবিধা এবং নির্মাণকৌশলের বিস্তারিত পাঠানোর পরামর্শ দেন। সেই মোতাবেক কাজ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ওই সফর তারই ফল।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশ অর্থনীতি আবারও স্থিতিশীলতার নতুন ইঙ্গিত দিচ্ছে। এর পেছনে রয়েছে শক্তিশালী ডিজিটাল লেনদেন, বৈদেশিক খাতে ভারসাম্যের উন্নতি ও রপ্তানি বৃদ্ধি।
পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) প্রকাশিত সর্বশেষ অর্থনৈতিক হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, কিছু সূচকে অর্থনৈতিক কার্যক্রম পুনরুদ্ধারের চিত্র স্পষ্ট হয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (এমএফএস) খাতে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে। আগের বছরের তুলনায় লেনদেনের পরিমাণ ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে, বিশেষ করে ব্যবসায়ী লেনদেন ও বেতন প্রদানের মতো খাতে লেনদেন বেড়েছে।
২০২৫ সালের মার্চ মাসে সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে। উৎসব-সংক্রান্ত ব্যয়ের কারণে এ সময় লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১৫ লাখ ৩৭ হাজার ৫৭৯.৮ মিলিয়ন টাকা থেকে ১৭ লাখ ৮১ হাজার ২৭৯.২ মিলিয়ন টাকার মধ্যে। একইভাবে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ই-কমার্স লেনদেন আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ৬৪ শতাংশ বেড়েছে।
২০২৪ সালের জুলাইয়ে মাসিক লেনদেন ছিল ১৪ হাজার ৪৮৭.৯ মিলিয়ন টাকা, যা ২০২৫ সালের মে মাসে ২৩ হাজার ৬৫৪.২ মিলিয়ন টাকায় দাঁড়ায়। এটি ডিজিটাল বাণিজ্যে ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধির প্রতিফলন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৫ সালের মে মাসে কৃষিঋণ বিতরণ সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৬৫৪ কোটি ৭৪ লাখ টাকায় পৌঁছায়, যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরের চেয়েও বেশি। শিল্পোৎপাদনে অস্থিরতা সত্ত্বেও স্থিতিশীলতা দেখা গেছে, যেখানে বছরওয়ারি প্রবৃদ্ধি ২০২৪ সালের আগস্টের নিম্নগতি কাটিয়ে ওই বছরের অক্টোবর মাসে সর্বোচ্চ ১১.৩৯ শতাংশে পৌঁছায়।
জিইডি জানায়, বৈদেশিক খাতে উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে চলতি হিসাবের ভারসাম্য ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার উদ্বৃত্ত হয়েছে, যা গত পাঁচ বছরে প্রথম ইতিবাচক অঙ্ক। সামগ্রিক ভারসাম্যেও ৩.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের রেকর্ড উদ্বৃত্ত হয়েছে, যা ২০২২-২৩ অর্থবছর থেকে চলমান ঘাটতির বিপরীত প্রবণতা। বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাস, শক্তিশালী রেমিট্যান্স প্রবাহ এবং সেবা খাতের স্থিতিশীল আয়ের ফলে এ পরিবর্তন এসেছে।
রপ্তানিও নতুন গতি পেয়েছে। ২০২৫ সালের জুলাই মাসে রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ৪,৭৭০.৫৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ২৫ শতাংশ বেশি। মে ও ডিসেম্বর মাসেও উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে, যা প্রতিযোগিতা সক্ষমতা ও বৈশ্বিক চাহিদা বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়।
আমদানি খাতেও ইতিবাচক পুনরুদ্ধার হয়েছে। মূলধনী পণ্যের আমদানি স্থিতিশীল থাকায় বিনিয়োগে আগ্রহের প্রতিফলন ঘটেছে।
রেমিট্যান্স প্রবাহ অর্থনীতিতে আরেকটি বড় সহায়ক ভূমিকা রেখেছে। ২০২৫ সালের জুলাইয়ে মাসিক রেমিট্যান্স প্রবাহ ছিল ২ হাজার ৪৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ২০২৪ সালের একই মাসের তুলনায় ২৯.৫ শতাংশ বেশি। মার্চ, মে ও ডিসেম্বরে মৌসুমি প্রবাহে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও গৃহস্থালি আয় আরও বাড়িয়ে দেয়, যা নীতিগত প্রণোদনা এবং অর্থ প্রেরণের উন্নত চ্যানেলের কারণে সম্ভব হয়েছে।
জিইডি জানায়, এসব ইতিবাচক প্রবণতা এবং বিচক্ষণ নীতি ব্যবস্থাপনা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনায় আস্থার বার্তা দিচ্ছে।
তবে প্রতিবেদনে বলা হয়, চালের দাম খাদ্য ও সামগ্রিক মূল্যস্ফীতির ওপর এখনও উল্লেখযোগ্য চাপ সৃষ্টি করছে। মে মাসে যেখানে খাদ্য মূল্যস্ফীতিতে চালের অবদান ছিল ৪০ শতাংশ, জুলাই মাসে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫১.৫৫ শতাংশে। এর মধ্যে মাঝারি ও মোটা চালের অবদান সবচেয়ে বেশি, যথাক্রমে ২৪ শতাংশ এবং ১৮.৩৯ শতাংশ। চিকন, মাঝারি ও মোটা—সব ধরনের চালেই জুলাই মাসে প্রায় ১৫ শতাংশ হারে মূল্যস্ফীতি হয়েছে।
সরবরাহ পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার ২০২৫ সালের ২৪ এপ্রিল থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ১৪ লাখ মেট্রিক টন বোরো চাল সংগ্রহের লক্ষ্য নির্ধারণ করে। তবে ২০২৫ সালের জুলাই মাসে চাল বিতরণ হয় ৬২ হাজার ৮৮৯ মেট্রিক টন, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৬ শতাংশ কম।
বাজার স্থিতিশীল করতে খাদ্য মন্ত্রণালয় ২৩ জুলাই বেসরকারি খাতকে চাল আমদানির আবেদন করার আহ্বান জানায়, যার সময়সীমা শেষ হয় ৭ আগস্ট। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এসব আমদানির প্রভাব বাজারে পড়তে আরও কয়েক মাস সময় লাগতে পারে।
জিইডি সতর্ক করেছে, আগামী মাসগুলোতে অনিয়মিত আবহাওয়ার ধরন দেখা দিতে পারে, যা চালের দাম বাড়িয়ে তুলতে পারে। এজন্য স্বল্পমেয়াদে মূল্যস্ফীতির চাপ নিয়ন্ত্রণে আমদানি ত্বরান্বিত করা, সংগ্রহ কার্যক্রম বাড়ানো এবং ওপেন মার্কেট সেল (ওএমএস) কর্মসূচির আওতায় চাল বিতরণ বিস্তৃত করার পরামর্শ দিয়েছে জিইডি।
তবে জিইডি বলেছে, সামান্য ঊর্ধ্বগতি বড় ধরনের উদ্বেগের কারণ নয়। কারণ ২০২৪ সালের আগস্টে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার সময় মূল্যস্ফীতি ছিল দুই অঙ্কে, তখন অনুমান করা কঠিন ছিল যে অর্থবছর শেষে তা প্রায় ৮.৫ শতাংশে নেমে আসবে।
হালনাগাদ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধে সামষ্টিক অর্থনীতির বহুমুখী চ্যালেঞ্জগুলো ‘ভারসম্যাপূর্ণ উপায়ে’ মোকাবিলা করা হয়েছে। এটি ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারির পর টানা দ্বিতীয় মাস সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের নিচে এবং খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশের নিচে ছিল।
সরবরাহ-সংক্রান্ত চাপ থাকা সত্ত্বেও জিইডি জানায়, রাজস্ব ও আর্থিক নীতির সমন্বিত পদক্ষেপ কার্যকর হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে একটি মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে, যার লক্ষ্য ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশের নিচে নামানো এবং সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খাদ্য বহির্ভূত খাতে গত অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি স্থিতিশীল ছিল। খাদ্যপণ্যের মধ্যে শাকসবজি ও কন্দজাত ফসলের অবদান যথাক্রমে ৬.৪৮ শতাংশ এবং ১০.৩৪ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে, যা খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমাতে সহায়তা করেছে।
আরও সূক্ষ্ম বিশ্লেষণে দেখা যায়, ইলিশ, বেগুন, টমেটো, সয়াবিন তেল ও পাঙ্গাসও মূল্যস্ফীতি কমাতে কিছুটা ভূমিকা রেখেছে। অন্যদিকে আলু ও পেঁয়াজের অবদান যথাক্রমে ১৫.৭১ শতাংশ এবং ৭.৯৩ শতাংশ কমেছে।
আগামী দিনে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কৃষি উপকরণের সময়মতো সরবরাহ এবং বাজার পরিস্থিতির নিবিড় পর্যবেক্ষণের ওপর জোর দিয়েছে জিইডি।
দেশের মৎস্যসম্পদের সম্প্রসারণ, সংরক্ষণ, উন্নয়ন এবং টেকসই ব্যবহারে জনসচেতনতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ‘অভয়াশ্রম গড়ে তুলি, দেশি মাছে দেশ ভরি’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ১৮ থেকে ২৪ আগস্ট জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ ২০২৫ দেশব্যাপী উদ্যাপিত হতে যাচ্ছে।
জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ ২০২৫-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠান ১৮ আগস্ট সোমবার সকাল ১০টায় বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এতে সভাপতিত্ব করবেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মৎস্য খাতে অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৬ জন ব্যক্তি ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে জাতীয় মৎস্য পদক ২০২৫ প্রদান করা হবে। প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পুরস্কার হিসেবে যথাক্রমে স্বর্ণ, রৌপ্য ও ব্রোঞ্জের পদক বিতরণ করা হবে।
২০২৫ সালের মৎস্য সপ্তাহের কর্মসূচিতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। কেন্দ্রীয়ভাবে সারাদেশে সপ্তাহব্যাপী র্যালি, সেমিনার, প্রযুক্তি প্রদর্শন, আলোচনা সভা, প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন, মতবিনিময় সভা, সমাপনী এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় কর্মসূচি হিসেবে থাকছে: ১৮ আগস্ট বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে সকাল ১০টায় জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ ২০২৫ এর আনু্ষ্ঠানিক শুভ উদ্বোধন ও মৎস্য পদক বিতরণ অনুষ্ঠান। ১৯ আগস্ট সকাল ৮:৩০টায় মানিক মিয়া এভিনিউ-এ সড়ক র্যালি, সকাল ১০টায় বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে প্রযুক্তি প্রদর্শন ও ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আলোচনা সভা। ২০ আগস্ট সকাল ১০টায় বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি)-এ মৎস্য অভয়াশ্রমের গুরুত্ব ও ভবিষ্যৎ করণীয় বিষয়ক সেমিনার। ২১ আগস্ট সকাল ১০টায় কারওয়ান বাজার মৎস্য আড়তে মৎস্য বিষয়ক আলোচনা সভা ও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন। ২২ আগস্ট সকাল ১০টায় চট্টগ্রামে মৎস্য ও মৎস্যপন্য রপ্তানি বৃদ্ধিতে সম্ভাবনা ও করণীয় শীর্ষক আলোচনা সভা। ২৩ আগস্ট সকাল ১০টায় মৎস্যভবনে মৎস্যজীবী, মৎস্যচাষী, জেলে এবং আড়ৎদারদের সাথে মতবিনিময় সভা ও ভ্রাম্যমাণ প্রচার প্রচারণা। ২৪ আগস্ট বিকাল ৪টায় কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি)-এ জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ ২০২৫ এর মূল্যায়ন, সমাপনী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশনের মাধ্যমে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ ২০২৫ এর সমাপ্তি হবে।
জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কর্মসূচি হিসেবে থাকছে: প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় র্যালি, উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, সফল মৎস্য উদ্যোক্তাদের পুরস্কার প্রদান, পোনা অবমুক্তকরণ, মতবিনিময় সভা, প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন, নিরাপদ মাছ চাষ ক্যাম্পেইন, তরুণদের অংশগ্রহণে কর্মশালা, কুইজ ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা এবং মৎস্যজীবীদের নিয়ে ক্রীড়া আয়োজনসহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সপ্তাহের শেষ দিনে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ ২০২৫ এর মূল্যায়ন, সমাপনী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশনের মাধ্যমে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ ২০২৫ এর সমাপ্তি হবে।
জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ ২০২৫ সফলভাবে উদ্যাপনে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সকল সংগঠন, মৎস্যজীবী, উদ্যোক্তা ও জনগণের সহযোগিতা কামনা করছে।
উল্লেখ্য, রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ি এলাকায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে সংঘটিত মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনার কারণে ২২ জুলাই জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ ২০২৫-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানসহ সকল কর্মসূচি স্থগিত করা হয়। এ ঘটনায় নিহতদের প্রতি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় গভীর শোক ও শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছে।
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) আজ ৯ হাজার ৩৬১ কোটি ৯২ লাখ টাকা ব্যয় সম্বলিত ১১ টি প্রকল্প অনুমোদন করেছে।
অনুমোদিত প্রকল্পে সরকারি অর্থায়ন ৬ হাজার ৬৭৭ কোটি টাকা, প্রকল্প ঋণ ২ হাজার ৪২৮ কোটি ৪ লাখ টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ২৫৬ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে নতুন প্রকল্প ৫টি, সংশোধিত প্রকল্প ২টি এবং ব্যয় বৃদ্ধি ব্যতিরেকে মেয়াদ বৃদ্ধির ৩টি প্রকল্প রয়েছে।
একনেক চেয়ারপার্সন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে গতকাল রোববার শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় এ অনুমোদন দেওয়া হয়।
বৈঠকে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, স্বরাষ্ট্র এবং কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.), শিল্প এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ, সড়ক পরিবহন ও সেতু এবং রেলপথ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সভায় অংশগ্রহণ করেন।
আজকের সভায় অনুমোদিত ১১ প্রকল্পসমূহ হলো: কৃষি মন্ত্রণালয়ের ‘আধুনিক প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে রংপুর অঞ্চলে টেকসই কৃষি উন্নয়ন’ প্রকল্প, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ‘বাপবিবোর বিদ্যমান শিল্পসমৃদ্ধ এলাকার ৩৩/১১ কেভি আউটডোর উপকেন্দ্রের আধুনিকায়ন ও ক্ষমতা বর্ধন’ প্রকল্প, শিল্প মন্ত্রণালয়ের ‘বিএমআর অব কেরু অ্যান্ড কোং (বিডি) লি. (২য় সংশোধিত)’ প্রকল্প, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ‘রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ স্থাপন’ প্রকল্প, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ‘৫টি নির্ধারিত মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (সিলেট, বরিশাল, রংপুর, রাজশাহী এবং ফরিদপুর) বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট স্থাপন (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্প, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ‘ঢাকাস্থ আজিমপুর সরকারি কলোনির ভেতরে সরকারি কর্মচারীদের জন্য বহুতল আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ (জোন-সি)’ প্রকল্প, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ‘ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য ২টি বহুতল আবাসিক ভবন নির্মাণ’ প্রকল্প, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের ‘ঢাকা এনভায়রনমেন্টাল সাসটেনেবল ওয়াটার সাপ্লাই (তৃতীয় সংশোধিত)’ প্রকল্প ও ‘বান্দরবান পৌরসভা এবং বান্দরবান জেলার ৩টি উপজেলা সদরসহ পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতে নিরাপদ পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্প, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের ‘চট্টগ্রামের মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক স্থাপন’ প্রকল্প, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের ‘উপজেলা পর্যায়ে মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ (দ্বিতীয় পর্যায়) (প্রস্তাবিত প্রথম সংশোধিত)’ প্রকল্প।
সভায় পরিকল্পনা উপদেষ্টা কর্তৃক ইতোমধ্যে অনুমোদিত ৯টি প্রকল্প সর্ম্পকে একনেক সদস্যদের অবহিত করা হয়। সেগুলো হলো ১. হাতিয়া দ্বীপ, নিঝুম দ্বীপ ও কুতুবদিয়া দ্বীপ শতভাগ নির্ভরযোগ্য ও টেকসই বিদ্যুতায়ন (২য় সংশোধিত), ২. রাজশাহী এবং রংপুর বিভাগে নেসকোর আওতাধীন এলাকায় স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটার স্বাপন (১ম সংশোধিত) প্রকল্প, ৩. বরগুনা জেলার ২টি পৌরসভা অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প, ৪. তিন পার্বত্য জেলায় দুর্যোগ ক্ষতিগ্রস্ত পল্লী সড়ক উন্নয়ন (২য় সংশোধিত) প্রকল্প, ৫. লাঙ্গলবন্দ মহাষ্টমী পুণ্যস্নান উৎসবের অবকাঠামো উন্নয়ন (২য় সংশোধিত), ৬. তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি (২য় সংশোধিত), ৭. সিলেট বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন (২য় সংশোধিত) প্রকল্প, ৮. কপোতাক্ষ নদ ও তৎসংলগ্ন এলাকার জলাবদ্ধতা দূরীকরণ (২য় পর্যায়) (১ম সংশোধিত), ৯. বিদ্যালয় বহির্ভূত কিশোর-কিশোরীদের জন্য দক্ষতা কেন্দ্রিক সাক্ষরতা (২য় সংশোধিত) প্রকল্প।
দেশে প্রতিদিন প্রায় ছয় কোটি ডিম উৎপাদন হলেও তা দিয়ে চাহিদা পূরণ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।
পুষ্টি নিরাপত্তা প্রসঙ্গে এই উপদেষ্টা বলেন, ‘বর্তমানে দেশে মাথাপিছু গড় মাংস খেতে পারে মাত্র ২০০ গ্রাম। এখনো বহু পরিবার আছে যারা সপ্তাহে বা মাসে একদিন মাংস খায়।”
গতকাল শনিবার সকালে ঢাকা সেন্ট্রাল গার্লস হাই স্কুলে নবনির্মিত ছয় তলা একাডেমিক ভবনের উদ্বোধন ও এসএসসি-২০২৫ সালের কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, মাছ উৎপাদনের ক্ষেত্রে
বাংলাদেশ তুলনামূলক ভালো অবস্থানে আছে। মাছ, মাংস, দুধ, ডিম আমাদের পুষ্টির উৎস। তাই শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পাশাপাশি পুষ্টির দিকটিও বিবেচনায় রাখতে হবে।'
তিনি বলেন, ‘চব্বিশের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে বহু তরুণ শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ শহীদ হয়েছেন। অনেকে হাত-পা-চোখ হারিয়ে আজীবন পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। তাদের ত্যাগকে স্মরণ রেখে এমন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে, যেখানে মানুষের অধিকার কখনো ক্ষুণ্ণ হবে না।'
তিনি বলেন, “বেগম রোকেয়া মুসলিম মেয়েদের জন্য স্বাধীন পরিবেশ দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন, সেখানে পড়ালেখার পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিচালিত হতো। কেবল বই পড়া দিয়ে সবকিছু জানা সম্ভব নয়, কারণ ইতিহাস বারবার বিকৃত হয়েছে। তাই শিক্ষকদের দায়িত্ব হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের প্রকৃত শিক্ষা দিয়ে দেশ ও জাতি সম্পর্কে সচেতন করে তোলা।”
নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, 'স্কুলের ভেতরে ও বাইরে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের দায়িত্ব নিতে হবে। ইভটিজিংয়ের কারণে মেয়েদের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে—নতুন বাংলাদেশে এটা হতে দেওয়া যাবে না।
পরিবেশ সুরক্ষায় শিক্ষার্থীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, 'সপ্তাহে অন্তত একদিন স্কুল ও এলাকায় পরিবেশ রক্ষায় কার্যক্রম চালাতে হবে। পাশাপাশি পলিথিন ও প্লাস্টিকের ব্যবহার কমাতে হবে। কারণ এগুলো মানব স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।'
নারী শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাসী আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে ওঠার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, 'নারী নির্যাতন আইন সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে হবে এবং বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে শিক্ষক, অভিভাবক ও সমাজকে একসঙ্গে সচেতন হতে হবে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে আজ পরিকল্পনা কমিশনে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার চিত্রকোট ইউনিয়নে গোয়ালখালি এলাকায় বিসিকের অধিগ্রহণকৃত ৪০ একর জমির উপর নির্মিত হবে 'ভ্যাকসিন প্লান্ট'। যেখানে ঔষধের পাশাপাশি তৈরি হবে অ্যান্টিভেনম।
প্রকল্পটি গোপালগঞ্জে বাস্তবায়ন করার কথা থাকলেও সেই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা হয়েছে বলে জানান স্বাস্থ্য উপদেষ্টা।
শনিবার সকালে প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনে এসে এসব তথ্য জানান স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম।
এসময় তিনি জমি রেজিষ্ট্রেশন সংক্রান্ত কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা প্রদান করেন।
উপদেষ্টা বলেন, গোপালগঞ্জে ভ্যাকসিন প্লান্ট একদম একপাশে হয়ে গেছে। ভ্যাকসিনটা যখন তৈরি হবে তখন এটা ফ্রিজিং করে সারা বাংলাদেশে পাঠাতে হবে। সেজন্য আমার এমন একটা জায়গা দরকার যেখান থেকে সহজে যাতায়াত ব্যবস্থা নিয়ে আমরা পাঠাতে পারবো। সেক্ষেত্রে গোপালগঞ্জটা সেজন্য আমাদের জন্য উপযুক্ত হয় না।
আর এখানে যে সমস্ত টেকনোলজিস্ট, বিশেষজ্ঞ লাগবে এটা সবসময় সেখানে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না। তাই এটা আমরা এখানে করার চেষ্টা করছি। এবং এখানে ৪০ একর জমি বিসিকের কাছ থেকে নিয়েছি। সে অনুযায়ী আমাদের একটা প্ল্যান্ট- এটা এখানেই হবে যাতে করে আমাদের সমস্ত ঔষধ তৈরি করতে পারি, ভ্যাকসিন আমরা এখানে তৈরি করতে পারি এবং একইসাথে আমরা চিন্তা করছি- অ্যান্টিভেনম যেটা হয়, যেটা আমাদেরকে পাশের দেশগুলো থেকে আনতে হয়। অনেক সময় সাপের ভ্যারাইটি একরকম না, কোন কোন সময় সাপের কারণে যে ভ্যাকসিনটা দেয়া হয় ওটা কখনো কাজ করে, কখনো করে না। কাজেই আমরা এখন চেষ্টা করছি- আমাদের যেহেতু অনেক সাপ আছে, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে সাপের বিষ এনে এখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে এন্টিভেনম তৈরি করা হবে। আমাদের দেশের সাপ দিয়ে দেশেই ভ্যাকসিন-অ্যান্টিভেনম তৈরি হবে।
ভ্যাকসিন প্লান্ট নির্মাণে সময় প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, এটা সিস্টেমের ব্যাপার। বর্তমানে হাসপাতালগুলোতে দেশের মধ্যে উৎপাদিত প্রায় ৭০ শতাংশ ঔষধ সরবরাহ করা হচ্ছে। কোয়ালিটিতে দেশের বাইরের তুলনায় এটি কোন অংশেই কম না। এটাকে ১০০ শতাংশে উন্নিত করতে হলে আমাদের আরও কিছু মেশিনারিজ আনতে হবে। মেশিনারিজগুলো আমরা চেষ্টা করবো যত দ্রুত আনা যায়। সবকিছু মিলিয়ে এগুলো আনতে প্রায় ৬ মাসের মত লেগে যাবে।
তিনি বলেন, জমি আমাদের নামে রেজিষ্ট্রি করে দেয়া হবে, পাশের নদী শাসন করতে হবে। এরপরে মেশিনারিজ, প্ল্যান এগুলো পাশ করাতে হবে। ধরে নেন আগামী আড়াই থেকে তিন বছর লাগতে পারে। পরে উপদেষ্টা ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিদর্শন করেন।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ইডিসিল এর গোপালগঞ্জ প্লান্টের ভ্যাকসিন ইউনিট এবং মানিকগঞ্জ প্ল্যান্ট স্থানান্তর করে এখানে আনা হবে। এজন্য ৪০ একর জায়গার সংস্থান করা হয়েছে। এসময় স্বাস্থ্য উপদেষ্টা চট্টগ্রামে প্রক্রিয়াধীন এন্টি ভেনম প্ল্যান্টও এখানে স্থানান্তরের নির্দেশনা প্রদান করেন। এটি সামগ্রিক বিবেচনায় লাভজনক হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যাক্ত করেন।
এসময় ইডিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সামাদ মৃধাসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
পরিকল্পনা কমিশন থেকে জানা গেছে, ৩ হাজার ১২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ভ্যাকসিন প্লান্টটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এই কারখানায় ১৫ ধরনের টিকা উৎপাদন করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্লান্টটিতে ২০২৮ সালের মধ্যে ছয় ধরনের ও ২০২৯ সালে আরও ৯ ধরনের টিকা উৎপাদনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। ২০৩০ সালে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।
বাংলাদেশে ধর্ম, জাতি ও গোত্রের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ থাকবে না বলে মন্তব্য করেছেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।
শনিবার (১৬ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে জন্মাষ্টমীর শোভাযাত্রা উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। বক্তব্যে উৎসবে আমন্ত্রণের জন্য সেনাপ্রধান আয়োজনকারীদের ধন্যবাদ জানান।
সেনাপ্রধান বলেন, ‘বাংলাদেশ সম্প্রীতির দেশ। শত বছর ধরে এখানে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, পাহাড়ি, বাঙালি, উপজাতি সবাই মিলে অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করে আসছে। এই দেশ সবার। আমরা সবাই এই দেশের নাগরিক। এখানে কোনো ধর্ম, জাতি বা গোত্রের মধ্যে ভেদাভেদ থাকবে না। এই দেশের প্রতিটি বিষয়ে আমাদের সমান অধিকার। সেইভাবেই আমরা সামনের সোনালি দিনগুলো দেখতে চাই।’
অনুষ্ঠানে নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান এবং বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খানসহ অন্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সেনাপ্রধান আরও বলেন, ‘আজকের এই দিনে আমাদের অঙ্গীকার হবে— আমরা সবসময় শান্তিপূর্ণ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখব এবং সবাই মিলে শান্তিতে বসবাস করব। সারা বাংলাদেশে স্বশস্ত্র বাহিনী মোতায়েত রয়েছে। আমরা সব সময় জনগণের পাশে থাকব এবং এক হয়ে আপনাদের সাথে কাজ করে যাব।’
তিনি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা নিশ্চিন্তে এ দেশে বসবাস করবেন এবং আপনারা আপনারা ধর্মীয় উৎসব আনন্দের সঙ্গে উদযাপন করবেন। আমরা একসঙ্গে এই আনন্দ ভাগাভাগি করব।’
সেনাপ্রধান আশাপ্রকাশ করেন, ‘জন্মাষ্টমীর এই দিনে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আদর্শ দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়বে। এই আদর্শের ভিত্তিতেই আমরা একসঙ্গে সুন্দরভাবে বসবাস করব।’
মন্তব্য