কলাবাগানে ফারদিন ইফতেখার দিহানের বাসায় ‘ও’ লেভেলপড়ুয়া মাস্টারমাইন্ড ছাত্রীর মৃত্যুর কারণ ছিল ‘অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ’। ভিসেরা পরীক্ষাতেও বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার দাবি করেছে পুলিশসহ তদন্তসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি দুপুরে নিজ বাসায় ডেকে নিয়ে ওই ছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগ রয়েছে দিহানের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ৭ জানুয়ারি রাতেই ছাত্রীর বাবা দিহানকে একমাত্র আসামি করে কলাবাগান থানায় মামলা করেন। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে করা এ মামলায় ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগ আনা হয়।
ঘটনার দিনই দিহানকে আটকের পর গ্রেপ্তার দেখায় কলাবাগান থানা-পুলিশ। আদালতে তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে দাবি করেন, যৌন সম্পর্কের একপর্যায়ে রক্তক্ষরণে ওই ছাত্রীর মৃত্যু হয়।
তবে এই দাবিকে নাকচ করছে ছাত্রীর পরিবার। এ ছাড়া, ওই ছাত্রীর স্কুলের শিক্ষার্থীরাও ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগ তুলে আন্দোলনে নামেন। দিহান ছাড়া তার আরও তিন বন্ধু এ ঘটনায় জড়িত বলেও তাদের অভিযোগ।
এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ওই ছাত্রীর ময়নাতদন্তের পর ভিসেরার নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। অভিযুক্ত দিহানের ডোপ টেস্ট ও ডিএনএর নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদনও চূড়ান্ত হয়েছে।
সিআইডির ফরেনসিক বিভাগ, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগ ও কলাবাগান থানার একাধিক সূত্র নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছে, কোনো পরীক্ষাতেই ধর্ষণ বা নেশাদ্রব্য খাইয়ে শারীরিক সম্পর্কের প্রমাণ মেলেনি। ঘটনার সময় ওই বাড়িতে দিহান ও মেয়েটি ছাড়া তাদের কোনো বন্ধুর উপস্থিতি ডিএনএ পরীক্ষায় পাওয়া যায়নি। ফলে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগেরও প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
ভিসেরাসহ বেশ কিছু পরীক্ষার প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তদন্তসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, অপ্রস্তুত শারীরিক মিলনের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণেই ওই স্কুলছাত্রী মারা যান।
ভিসেরা পরীক্ষার রিপোর্ট প্রস্তুত
দিহানের বাসায় ছাত্রীর মৃত্যুর পর ময়নাতদন্ত করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগ। এই বিভাগের তখনকার প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ প্রাথমিকভাবে তখন দুজনের যৌন সম্পর্কের তথ্য সংবাদ মাধ্যমকে জানান।
ময়নাতদন্তের সময় মৃত্যুর সঠিক কারণ নিশ্চিত হতে ভিসেরা পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় নমুনা পাঠানো হয় মালিবাগে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফরেনসিক ল্যাবে। প্রায় তিন মাস পর সেই নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদন তৈরি করেছে সিআইডির ফরেনসিক বিভাগ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিআইডির ফরেনসিক বিভাগের এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে জানান, ওই ছাত্রীর পাকস্থলিতে কোনো ধরনের বিষাক্ত উপদানের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি, এর অর্থ হলো তাকে কোনো ধরনের নেশাজাতীয় দ্রব্য বা যৌন উত্তেজক ওষুধ খাওয়ানো হয়নি।
ময়নাতদন্তের পর ডা. সোহেল মাহমুদ প্রাথমিকভাবে ‘বিকৃত যৌনাচারের’ সম্ভাবনা সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছিলেন। সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যৌনাঙ্গের নমুনার প্যাথলজি পরীক্ষাও করা হয়েছে। তাতে যৌনাঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার প্রমাণ মিললেও ‘বিকৃত যৌনাচারের’ বিষয়ে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এই রিপোর্ট অনুযায়ী, যৌনাঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের মুখে পড়েন ওই ছাত্রী।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে গত মার্চে বদলি হয়ে এখন স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধানের দায়িত্বে আছেন ডা. সোহেল মাহমুদ। তবে নিয়ম অনুযায়ী, তিনিই ওই ছাত্রীর ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করবেন।
ফরেনসিক প্রতিবেদন সম্পর্কে জানতে চাইলে ডা. মাহমুদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ভিসেরা নমুনার কেমিক্যাল অ্যানালাইসিসের রিপোর্ট সিআইডির ফরেনসিক ল্যাব থেকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এসেছে, তবে ডিএনএ রিপোর্টটি এখনও পৌঁছায়নি। ডিএনএ টেস্টের রিপোর্টটি মামলার তদন্ত কর্মকর্তার কাছে চাওয়া হয়েছে, সেটা পেলে চূড়ান্ত ময়নাতদন্ত রিপোর্ট দেয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘মরদেহের যৌনাঙ্গের ক্ষতির মাত্রা দেখে প্রাথমিকভাবে সেক্সটয় ব্যবহারের একটা ধারণা করেছিলাম, কিন্তু রিপোর্ট অনুযায়ী এখনও সে রকম কিছু নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না। আমরা এটা নিয়ে আলোচনা করছি, সব রিপোর্ট পেলে একটা সিদ্ধান্তে আসা যাবে।’
ডিএনএ ও ডোপ টেস্টের প্রতিবেদন পুলিশের কাছে
দিহান মাদকাসক্ত ছিলেন কিনা এবং ঘটনাস্থলে অন্য কারও উপস্থিতি ছিল কি না, তা নিশ্চিত হতে আদালতের অনুমতি নেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আ ফ ম আসাদুজ্জামান। এরপর ডিএনএর নমুনা পরীক্ষা হয় সিআইডির ফরেনসিক ল্যাবে।
সম্প্রতি ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদনটি পেয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা। এই পরীক্ষায় ওই ছাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের কোনো প্রমাণ মেলেনি। রিপোর্টে মেয়েটির শরীরে শুধু দিহানের ডিএনএর উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
এ ছাড়া, ডোপ টেস্টে দিহানের মাদকাসক্তিরও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। প্রতিবেদন অনুযায়ী, দিহান মাদকাসক্ত ছিলেন না, তবে তিনি ধূমপান করতেন। কলাবাগান থানার দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ছাত্রীর পরিবার চায় পিবিআইয়ের তদন্ত
পুলিশের তদন্তে আস্থা না পাওয়ার অভিযোগ তুলে মামলার তদন্তের দায়িত্ব পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) দেয়ার আবেদন করেছে ওই ছাত্রীর পরিবার।
এ বিষয়ে আদালতে ৭ এপ্রিল শুনানির কথা থাকলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে সেটি পিছিয়ে গেছে। পরবর্তী শুনানির কোনো তারিখ এখনও দেয়া হয়নি।
এই ছাত্রীর বাবা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা থানা থেকে কোনো সহযোগিতা পাচ্ছি না, তদন্ত কর্মকর্তা মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য দেন না। আমাদের পক্ষ থেকে যারা সাক্ষ্য দিয়েছেন তাদের জবানবন্দিকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা। তা ছাড়া দিহানের তিন বন্ধুর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আ ফ ম আসাদুজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটা যেহেতু একটি আলোচিত মামলা, প্রতিটি বিষয় আমাদের সর্বোচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা অবহিত আছেন। এ মামলা প্রভাবিত করার কোনো সুযোগ নেই। আমরা খুব গুরুত্ব সহকারে সব মোটিভ, তথ্যপ্রমাণ খতিয়ে দেখেছি।’
তিনি বলেন, ‘বাদীপক্ষের দাবি ছিল সেদিন হাসপাতালে উপস্থিত থাকা দিহানের তিন বন্ধুকে মামলায় অন্তর্ভুক্ত করে গ্রেপ্তার করা। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে ঘটনায় জড়িত থাকার কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ ও চাক্ষুষ সাক্ষী পাওয়া যায়নি। এরপরেও বাদীপক্ষের জবানবন্দি রেকর্ড করার সময় তাদের কয়েকজন তিন বন্ধুর সেখানে উপস্থিত থাকা ও সংঘবদ্ধ ধর্ষণের কথা উল্লেখ করতে চেয়েছেন।
‘তবে সাক্ষীদের কেউই ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না, তাদের কেউ দিহানের তিন বন্ধুকে নিজ চোখে ঘটনাস্থলে দেখেননি। তাই আমি তাদের বলেছিলাম, তাদের তিনজনের কী ভূমিকা ছিল সেটা আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব, আপনারা নিজ চোখে যা যা দেখেছেন জবানবন্দিতে শুধু তাই উল্লেখ করুন।’
আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আমরা সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণসহ আসামি, তার বাড়ির দারোয়ানের বক্তব্য অনুযায়ী দিহানের তিন বন্ধুর কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতা পাইনি। তারা ঘটনার পর দিহানের ফোন পেয়ে আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে গিয়েছিল। মামলা তদন্ত করতে গিয়ে আমার দায়িত্ব যেমন অপরাধী শনাক্ত করা, তেমনি এটাও খেয়াল রাখতে হয় যেন নিরাপরাধ কেউ শাস্তি না পায়।’
মামলার অভিযোগপত্র জমা দিতে এখন পর্যন্ত দুই দফা আদালত থেকে সময় নেয়া হয়েছে, আর কত সময় প্রয়োজন জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আমার তদন্ত শেষ, শুধু ময়নাতদন্ত রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছি, সেটি পেলেই অভিযোগপত্র দিতে পারব।’
আরও পড়ুন:
কক্সবাজারের টেকনাফে রোহিঙ্গাবাহী নৌকাডুবির পর উদ্ধারে গিয়ে নিখোঁজ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সিপাহী মো. বিল্লাল হাসানের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিমপাড়ায় বঙ্গোপসাগর থেকে রবিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
বিল্লাল শাহপরীর দ্বীপ বিজিবি সীমান্ত চৌকির অধীনে সিপাহী ছিলেন। তিনি কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার কাজিরতলা গ্রামের বজলুর রহমানের ছেলে।
এর আগে গত শুক্রবার গভীর রাতে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের সময় কক্সবাজারের টেকনাফে সমুদ্রে রোহিঙ্গাদের বহনকারী নৌকাডুবির ঘটনায় নারী-শিশুসহ ২৫ জন রোহিঙ্গাকে জীবত উদ্ধার করে। সে সময় বিজিবির সদস্যের পাশাপাশি বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা নিখোঁজ হন।
ঘটনার পরের দিন শনিবার পর্যন্ত পাঁচজনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. আশিকুর রহমান বলেন, ‘নিখোঁজ থাকার দুই দিন পর সাগর থেকে বিজিবি সদস্যের মৃতদেহ পাওয়া গেছে। এর আগে সমুদ্রে অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টাকালে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিম পাড়ায় বহনকারী নৌকায় উদ্ধার অভিযানে যায় বিজিবি সদস্য। ওই সময় নৌকাডুবির ঘটনায় সমুদ্রে নিখোঁজ হন তিনি। অবশেষে তার মৃতদেহ পাওয়া গেছে।’
তিনি বলেন, ‘এ ছাড়া ঘটনার দিন খবর পেয়ে বিজিবি সদস্যরা স্থানীয় জেলেদের সহায়তায় উদ্ধার অভিযানে যান এবং শিশুসহ ২৫ জনকে উদ্ধার করতে সক্ষম হন। আমাদের উদ্ধার অভিযান চলছে।’
এদিকে নিহত বিজিবি সদস্যের ভাই আবু বকর বলেন, ‘ভাইকে খোঁজার জন্য টেকনাফের উদ্দেশে রওনা হয়েছিলাম। এর মধ্য খবর আসে সাগরে চরের মধ্য ভাইয়ের মৃতদেহ পাওয়া গেছে।
‘গত শুক্রবার সাগরে রোহিঙ্গা বহনকারী নৌকা উদ্ধার অভিযানে গেলে নৌকাডুবির ঘটনায় নিখোঁজ ছিল ভাই। ওই সময় আমাদের জানানো হয়েছিল তিনিসহ ৩৩ জন নিখোঁজ ছিল। এ নিয়ে আমাদের ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল।’
নিখোঁজ বিজিবি সদস্যের মরদেহ উদ্ধারের কথা জানিয়ে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, ‘এর আগে রোহিঙ্গা বহনকারী নৌকাডুবির ঘটনায় শিশুসহ চার রোহিঙ্গার মৃতদেহ ভাসমান পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় আরও বেশ কিছু রোহিঙ্গা নিখোঁজ রয়েছে। তাদের বিষয়ে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে।’
স্থানীয়রা জানান, গত ২২ মার্চ রাতে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাবাহী একটি নৌকা টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিমপাড়া এলাকায় সাগরে ভাসতে দেখেন বিজিবির সদস্যরা। তারা স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ আমিনের মালিকাধীন মাছ ধরার নৌকায় শাকের মাঝির নেতৃত্বে রোহিঙ্গা বহনকারী নৌকাটি থামানোর সংকেত দেন সমুদ্রে। পরে ওই নৌকাতে ওঠেন বিজিবি সদস্য।
ওই সময় উত্তাল সাগরের ঢেউয়ে নৌকাটি ডুবে যায়। সেখানে চিৎকারে নারী-শিশুসহ ২৫ জন রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করে স্থানীয় জেলে ও বিজিবি। পরে নিখোঁজ বিজিবি সদস্যসহ রোহিঙ্গাদের সন্ধানে সাগরে তল্লাশি চালানো হয়।
ডুবে যাওয়া নৌকায় অর্ধশতাধিক লোকজন ছিল বলে জানিয়েছেন উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গারা।
মানব পাচারকারী চক্রের সক্রিয় সদস্য ঈমান হোসাইন ও আবুল মনছুর মিলে মিয়ানমারের থেকে রোহিঙ্গা পারাপার করছেন বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।
আরও পড়ুন:সিলেটের কানাইঘাট সীমান্তের ওপারে ভারতীয় খাসিয়াদের গুলিতে নিহত শাহেদ আহমদের মরদেহ ফেরত দিয়েছে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ।
পতাকা বৈঠকের পর বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যদের কাছে শনিবার রাত সাড়ে সাতটার দিকে মরদেহ হস্তান্তর করে তারা।
পুলিশ জানায়, বাংলাদেশ-ভারতের সীমান্তবর্তী বড়ছড়া এলাকায় বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের পর ভারতের মেঘালয় রাজ্য পুলিশের হেফাজতে থাকা গুলিবিদ্ধ শাহেদ আহমদের মরদেহ বিজিবির কাছে হস্তান্তর করে বিএসএফ।
পতাকা বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন জকিগঞ্জ বিজিবি ১৯ ব্যাটালিয়নের কোম্পানি কমান্ডার গোলাম কবির, কানাইঘাট থানার ওসি (তদন্ত) মো. আবু সায়েম এবং ভারতের পক্ষে বিএসএফ ও সেখানকার পুলিশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা।
কানাইঘাট থানার ওসি (তদন্ত) মো. আবু সায়েম জানান, পতাকা বৈঠক শেষে শাহেদ আহমদের মরদেহ বিজিবির কাছে হস্তান্তর করা হয়। মরদেহ থানায় নিয়ে আসার পর আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
গত বৃহস্পতিবার রাতে ভারতীয় খাসিয়ার গুলিতে নিহত হন শাহেদ আহমদ। তিনি লক্ষীপ্রসাদ পূর্ব ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী মঙ্গলপুর আলুবাড়ি গ্রামের মশাহিদ আলীর পুত্র।
তার মরদেহ উদ্ধার করে সেখানকার পুলিশ ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করে। খবর পেয়ে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী ও থানা পুলিশকে অবহিত করে পরিবার। পরে বিএসএফের সঙ্গে যোগাযোগ করে মরদেহ আনার উদ্যোগ নেয় বিজিবি।
আরও পড়ুন:টানা তিন দিন ধরে নিত্যপ্রয়োজনীয় পানির সংকটে ছিল কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল। তবে সোমবার রাতে নতুন মোটর লাগানোর পর পানির সংকট কেটেছে।
গত তিন দিন পানি না থাকায় ভোগান্তিতে ছিলেন চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন গড়ে ৩০০ থেকে ৩৫০ জন রোগী চিকিৎসাসেবা নিতে ভর্তি থাকেন হাসপাতালে। ২৫০ শয্যার এ হাসপাতালে রোগী ও স্বজনসহ সহস্রাধিক মানুষ অবস্থান করেন।
প্রতিদিন এখানে ২০ হাজার লিটার পানি প্রয়োজন। হাসপাতালে পানির সংকটের কারণে অন্তত ৩০ জন রোগী অন্যত্র চলে গেছে বলেও খবর পাওয়া যায়।
পানির মোটর বিকল হয়ে যাওয়ায় হাসপাতালটিতে শনিবার বেলা ১১টা থেকে শৌচাগারসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। পানি সংকটে শৌচাগার থেকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে হাসপাতালে।
টানা দুই দিন বিকল হয়ে যাওয়া মোটরটি সচল করার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয় কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে ফায়ার সার্ভিস ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের মাধ্যমে পানি সরবরাহের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তাতে প্রয়োজন মেটেনি।
কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের (ভারপ্রাপ্ত) তত্ত্বাবধায়ক ডা. নূর মোহাম্মদ শামসুল আলম বলেন, ‘বিগত তিন দিনে রোগীদের অনেক ভোগান্তি হয়েছে, এটা সত্য। তবে আমরা আমাদের অবস্থান থেকে সমস্যা সমাধানে সর্বোচ্চ চেষ্টাটুকু করেছি।
‘গতকাল রাতে একটি নতুন মোটর লাগানোর পর পানি সরবরাহ স্বাভাবিক হয়েছে।’
আরও পড়ুন:মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলাধীন মেঘনা নদীতে ইঞ্জিনচালিত ট্রলারের সঙ্গে স্পিডবোটের সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়েছেন।
এ ঘটনায় আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে ছয়জনকে।
হতাহত সবাই নৌ ডাকাত নয়ন বাহিনীর সক্রিয় সদস্য বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
প্রাণ হারানো চারজন হলেন গজারিয়া উপজেলার গুয়াগাছিয়া ইউনিয়নের জামালপুর গ্রামের মোহাম্মদ আলী বেপারীর ছেলে ওদুদ বেপারী (৩৬), মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা চরঝাপ্টা রমজানবেগ গ্রামের বাচ্চু সরকারের ছেলে বাবুল সরকার (৪৮), চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার সাকিব (২৬) ও একই এলাকার নয়াকান্দি বড়ইচর গ্রামের মোহন ভান্ডারের ছেলে নাঈম (২৫)।
মেঘনা নদীর কালীপুরা ঘাট সংলগ্ন এলাকায় শুক্রবার রাত ১০টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়রা জানান, হতাহত সবাই নৌ ডাকাত নয়ন বাহিনীর সক্রিয় সদস্য। তারা সবাই অবৈধ বালুমহাল পরিচালনার কাজে নিয়োজিত ছিলেন। নিহত ওদুদ বেপারি নৌ ডাকাত নয়ন বাহিনীর সেকেন্ড ইন কামান্ড পিয়াসের বড় ভাই।
স্থানীয় ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গজারিয়া উপজেলার গুয়াগাছিয়া ইউনিয়নের জামালপুর গ্রামসংলগ্ন মেঘনা নদীতে অবৈধ একটি বালুমহাল পরিচালনা করতেন নৌ ডাকাত নয়ন বাহিনীর লোকজন। দিনের আলোতে নদীর ওই অংশে বালুমহালের অস্তিত্ব না থাকলেও সন্ধ্যা হলেই সেখানে চালু করা হতো বালুমহাল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অসংখ্যবার অভিযান চালিয়েও অবৈধ বালুমহালটি বন্ধ করতে পারেনি।
সন্ধ্যায় অবৈধ বালুমহাল চালুর পর আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে তিন থেকে চারটি স্পিডবোট ও ট্রলার নিয়ে নদীতে মহড়া দেয় নয়ন বাহিনীর লোকজন। এ বাহিনীর সাথে বিগত কয়েক মাসে কয়েকবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রতিপক্ষের গোলাগুলির ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়দের দাবি, শুক্রবার রাতে অবৈধ বালুমহালের জন্য বাল্কহেড আটক করতে একটি স্পিডবোট ও ইঞ্জিনচালিত একটি ট্রলার নিয়ে যাচ্ছিল নয়ন বাহিনীর লোকজন। ওই সময় নৌযান দুটিতে ১০ থেকে ১১ জন আরোহী ছিল। রাতে ঘন কুয়াশার কারণে দ্রুতগতির স্পিডবোটটি দিক ভুলে ট্রলারে ধাক্কা দিলে ট্রলারটি তলিয়ে যায় এবং স্পিডবোটটি দুমড়েমুচড়ে যায়।
এ ঘটনায় শুক্রবার রাতে তিনজনের লাশ উদ্ধার হলেও নাঈম (২৫) নামে একজন নিখোঁজ হন।
তার সন্ধানে উদ্ধার অভিযান শুরু করে ফায়ার সার্ভিস, কোস্ট গার্ড ও বিআইডব্লিউটিএ। পরবর্তী সময়ে শনিবার দুপুর দুইটার দিকে নাঈমের লাশ উদ্ধার করা হয়।
উদ্ধার ইউনিট প্রত্যয় নারায়ণগঞ্জের কমান্ডার ও বিআইডব্লিউটিএর উপপরিচালক ওবায়দুল করিম খান বলেন, ‘শুক্রবার রাতে আমরা শুনেছিলাম বাল্কহেডের সাথে স্পিডবোটের সংঘর্ষ হয়েছে। তবে ঘটনাস্থলে আসার পরে আমরা নিশ্চিত হয়েছি, স্পিডবোটের সাথে একটি ইঞ্জিনচালিত ট্রলারের সংঘর্ষ হয়েছে। দুর্ঘটনায় ট্রলারটি তলিয়ে যায় এবং স্পিডবোটটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমার ধারণা, যারা মারা গেছে, তারা সবাই ট্রলারের যাত্রী ছিল।
‘এ ঘটনায় একজন নিখোঁজ ছিল। উদ্ধার অভিযানের একপর্যায়ে শনিবার দুপুর দুইটার দিকে দুর্ঘটনাস্থলের অদূরে ঝোঁপ থেকে নিখোঁজ নাঈমের লাশ উদ্ধার করি আমরা।’
নিহত ওদুদ বেপারীর স্ত্রী ফেরদৌসীর দাবি, অবৈধ বালুমহাল পরিচালনা নয়, পার্শ্ববর্তী মতলব উত্তর উপজেলার একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ শেষে ফেরার পথে দুর্ঘটনার শিকার হন তারা। এ ঘটনায় চারজন নিহত হন। আহত হন পাঁচ থেকে ছয়জন।
গজারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনোয়ার আলম আজাদ বলেন, ‘ঘন কুয়াশার কারণে নদীতে একটি ট্রলারের সঙ্গে দ্রুতগতির স্পিডবোটের সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় চারজন নিহত হয়েছে। বিস্তারিত পরে বলতে পারব।’
আরও পড়ুন:ঝালকাঠি সদর উপজেলার রামপুর জোড়াপোল এলাকায় ৬ জানুয়ারি সুদেব হালদার (২৮) নামের ব্যবসায়ীকে গলা কেটে হত্যার ঘটনায় জড়িতরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্বজন ও স্থানীয়রা।
সুদের হত্যার দিনই ঝালকাঠি সদর থানায় একটি মামলা করেন তার বাবা সুব্রত হালদার। কিন্তু ঘটনার তৃতীয় দিনেও হত্যায় জড়িত কাউকেই গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
এমন বাস্তবতায় ক্ষোভ জানিয়েছে নিহতের পরিবার, স্বজন ও এলকাবাসী। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা প্রতিবাদ করতে বৃহস্পতিবার দোকান বন্ধ রেখে রাস্তায় নামেন।
সকালে ঝালকাঠির বাউকাঠি বাজারের সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এক ঘণ্টার জন্য বন্ধ করে প্রতিবাদ জানান ব্যবসায়ীরা।
সকাল ১০টার দিকে সুদেব হালদারের বাউকাঠি বাজারের মোবাইল ফোনের দোকানের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন ব্যবসায়ীরা।
মানববন্ধন চলাকালে বক্তৃতা করেন নবগ্রাম ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও ব্যবসায়ী সরদার মো. শহিদুল্লাহ, বাউকাঠি বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. রুহুল আমিন ফকির, সাধারণ সম্পাদক মো. সিরাজুল ইসলাম, ব্যবসায়ী রাহুল রাড়ী, রফিকুল ইসলাম, আলতাফ হোসেন মোল্লা, আলী হায়দার রাড়ী, মো. আবু বক্কর, সৈয়দ রুহুল আমিন, মো. বেল্লাল খান, মো. আনিস সিকদার এবং নিহতের সহোদর সাগর হালদার সুকেশসহ অনেকে।
বক্তাদের একজন বলেন, ‘দ্রুত সময়ের মধ্যে সুদেব হত্যায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে। অন্যথায় লাগাতার কর্মসূচি দেওয়া হবে।’
ঘণ্টাব্যাপী বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচিতে শতাধিক ব্যবসায়ী অংশ নেন।
গত ৬ জানুয়ারি রাতে সুদেব হালদার দোকান বন্ধ করে বাড়ির পথে রওনা হলে দুর্বৃত্তরা তার গলা কেটে হত্যা করে পালিয়ে যায়। সকালে স্থানীয়রা মরদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেয়।
আরও পড়ুন:বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকে সচিবালয়ে আগুন ধরেছিল বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গণি।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে মঙ্গলবার প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন হস্তান্তর শেষে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।
নাসিমুল গণি বলেন, ‘আমাদের প্রাথমিক তদন্তে যেটা উঠে এসেছে, এটা বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণেই আগুন লেগেছে। প্রাথমিক তদন্তে কোনো ধরনের নাশকতার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।’
গত ২৬ ডিসেম্বর সচিবালয়ের একটি ভবনের চারটি ফ্লোর পুড়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। ৭ নম্বর ভবনের এসব ফ্লোরে পাঁচটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের আংশিক কার্যালয় এবং একটি বিভাগের পুরো কার্যালয়ের অবকাঠামোর সঙ্গে সব নথিপত্রও পুড়ে যায়।
তদন্ত কমিটির অন্যতম সদস্য বুয়েটের অধ্যাপক ড. মাকসুদ হেলালী জানান, প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টার কাছে দাখিল করা হয়েছে। তার সঙ্গে প্রাথমিক তদন্ত কমিটির রিপোর্ট নিয়ে প্রায় এক ঘণ্টা বিস্তারিত আলোচনা হয়। প্রধান উপদেষ্টা বিশেষজ্ঞ দলের কাছে বিভিন্ন বিষয়ে খুঁটিনাটি জেনে নিয়ে ভবিষ্যতে করণীয় সম্পর্কে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ বলেন, কোনো বিস্ফোরক ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের দেয়া নমুনাতেও কোনো বিস্ফোরক ব্যবহারের আলামত পাওয়া যায়নি। ডগ স্কোয়াডের সার্চেও মেলেনি বিস্ফোরকের আলামত।
আরও পড়ুন:পরিবহন শ্রমিকদের ডাকা কর্মবিরতির কারণে সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।
সড়ক দুর্ঘটনায় এক কিশোরের মৃত্যুর জেরে একাধিক বাস ভাঙচুরের প্রতিবাদে সোমবার থেকে বাস চলাচল বন্ধ রাখেন শ্রমিকরা। মঙ্গলবারও ওই সড়কটিতে বাস চলাচল করেনি।
বাস বন্ধের কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন জকিগঞ্জ ও বিয়ানীবাজারগামী যাত্রীরা।
জকিগঞ্জের কামালগঞ্জ এলাকায় বাসের ধাক্কায় এক স্কুলছাত্রের নিহতের ঘটনার জেরে বাস ভাঙচুরের ঘটনায় সিলেট জেলা বাস মিনিবাস কোচ মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়ন অনির্দিষ্টকালের এ কর্মবিরতির ডাক দেয়। এর আগে সোমবার বিকেলে মঙ্গলবার থেকে সিলেটজুড়ে কর্মবিরতির ডাক দিলে রাতে ওই অবস্থান থেকে সরে আসেন শ্রমিকরা। কেবল সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কে কর্মবিরতি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন তারা।
কদমতলী বাস টার্মিনালে মঙ্গলবার দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, টার্মিনাল থেকে কোনো বাস জকিগঞ্জের উদ্দেশে ছেড়ে যায়নি। একইভাবে জকিগঞ্জ থেকেও সিলেটের উদ্দেশে কোনো বাস ছেড়ে আসেনি। বাস চলাচল বন্ধ থাকায় যাত্রীরা পড়েন মারাত্মক দুর্ভোগে।
টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, অনেক যাত্রী সেখানে বসে আছেন বাসের অপেক্ষায়। বাস ছেড়ে যাবে না জানার পরও তারা অপেক্ষা করছেন ধর্মঘট প্রত্যাহারের।
জকিগঞ্জ যাওয়ার জন্য টার্মিনালে অপেক্ষা করছিলেন কালিগঞ্জের যাত্রী বদরুল ইসলাম। তিনি জানান, পরিবার নিয়ে তিনি সকালে কদমতলী টার্মিনালে এসেছেন, কিন্তু কোনো বাস ছেড়ে যাচ্ছে না। তাই মারাত্মক বিপাকে পড়েছেন।
তিনি আরও জানান, বিকেল নাগাদ ধর্মঘট প্রত্যাহার না হলে মাইক্রোবাস রিজার্ভ করে তাকে বাড়ি ফিরতে হবে।
গত রোববার সকালে জকিগঞ্জের কামালগঞ্জ আব্দুল মতিন কমিউনিটি সেন্টারের নিকটে সড়কের পাশে শিশু-কিশোররা ফুটবল খেলছিল। হঠাৎ বল সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কে চলে গেলে সেটি আনতে আবির আহমদ (১৪) নামের এক কিশোর দৌড় দেয়। সে সময় দ্রুতগামী একটি গেটলক বাসের ধাক্কায় সে গুরুতর আহত হয়।
পরে তাকে হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার পর স্থানীয় বিক্ষুব্ধ জনতা বাসটি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন।
পরিবহন শ্রমিকদের অভিযোগ, অন্তত তিনটি বাস ভাঙচুর করা হয় ওই সময়। এর প্রতিবাদে সোমবার পরিবহন শ্রমিকরা সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কে বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন। মঙ্গলবারও এ সড়কে বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন তারা।
জেলা বাস মিনিবাস কোচ মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মুহিত বলেন, ‘আমাদের বাসের চালক অন্যায় করলে আইন অনুযায়ী তার শাস্তি হবে, কিন্তু আইন হাতে তুলে নিয়ে বাস ভাঙচুর করা ও পোড়ানো সন্ত্রাসী কাজ।
‘আমরা এর বিচার চাই। এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত বাসের চালক বাদী হয়ে জকিগঞ্জ থানায় মামলা দায়েরের আবেদন করেছেন।’
জকিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহিরুল ইসলাম মুন্না বলেন, ‘বাস ভাঙচুরের দাবি করে রোববার রাতে হেলাল মিয়া নামের একজন লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। সেটি আমরা তদন্ত করে দেখছি। সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কে এখন বাস, মিনিবাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য