মামুনুল হকের রিসোর্ট-কাণ্ড এবং দুই নারীর সঙ্গে তার ব্যক্তিগত সম্পর্কের পর বিয়ের প্রশ্নবিদ্ধ দাবি নিয়ে হেফাজতে ইসলামের মধ্যে বিভক্তি স্পষ্ট। একটি পক্ষ মামুনুলকে বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছে কেন্দ্রের কাছে।
সংগঠনের সহপ্রচার সম্পাদক মুফতি শরীফ উল্লাহর সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা ফজলুল করিম কাসেমীর মধ্যকার আলাপনে মামুনুলকে বহিষ্কারের বিষয়ে কথা হয়েছে।
১১ এপ্রিল চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসায় হেফাজতের শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনার কথা জানিয়েছেন নেতারা। যদিও বৈঠক শেষে হেফাজতের আমির জুনায়েদ বাবুনগরী বিষয়টি স্বীকার না করে দাবি করেছেন, মামুনুলের ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে কেউ কথা তোলেনি।
তবে হেফাজতসংশ্লিষ্ট ও তাদের বিষয়ে খোঁজখবর রাখা বিভিন্ন ব্যক্তি ফেসবুকে সেদিনের আলোচনার বিষয়বস্তু তুলে ধরে বলছেন উল্টো কথা।
হেফাজতের প্রচার সম্পাদক জাকারিয়া নোমান ফয়েজী এখন বলছেন, সেদিন নায়েবে আমির আবদুল আউয়াল প্রসঙ্গটি তোলেন। তবে আলোচনা আর আগায়নি।
৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁর রয়্যাল রিসোর্টে জান্নাত আরা ঝর্ণা নামে এক নারীকে নিয়ে গিয়ে অবরুদ্ধ হন মামুনুল। স্থানীয় লোকজনের জিজ্ঞাসাবাদে তিনি সঙ্গীনির নাম বলেন আমিনা তাইয়্যেবা। তবে প্রকৃতপক্ষে এটি তার চার সন্তানের জননী স্ত্রীর নাম।
পরে মামুনুল দাবি করেন, ঝর্ণাকে তিনি দুই বছর আগে বিয়ে করেছেন। যদিও এই দাবির সত্যতা দুই সপ্তাহ পরও বড় প্রশ্নের মুখে।
এর মধ্যে জান্নাতুল ফেরদৌস লিপি নামে আরও এক নারীর সঙ্গে মামুনুলের সম্পর্কের বিষয়টি সামনে আসে। আর মামুনুল সেই নারীর ভাইকে ডেকে নিয়ে তাকেও বিয়ের দাবি করেন বলে মোহাম্মদপুর থানায় করা একটি সাধারণ ডায়েরিতে (জিডি) বলা হয়েছে। সেই নারীর বাড়ি গাজীপুরের কাপাসিয়ায়। সেখানে গিয়ে স্বজনদের কাছ থেকে কথিত বিয়ের বিষয়ে কোনো তথ্যই পাওয়া যায়নি।
এসব ঘটনায় হেফাজত কতটা বিব্রত সেটি যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা ফজলুল করিম কাসেমী ও সহপ্রচার সম্পাদক মুফতি শরীফ উল্লাহর আলোচনাতেই স্পষ্ট।
দুইজনই একমত যে মামুনুলকে সংগঠনে রাখা যাবে না।
দুইজনের কথোপকথনের অডিও রেকর্ড এখন সামাজিক মাধ্যমে ভেসে বেড়াচ্ছে।
এতে কাসেমীকে বলতে শোনা যায়, ‘এটা কোন ধরনের বিয়ে? এমন বিয়ে তো আমগো করা দরকার।… ঝামেলা শেষ হোক। তারে (মামুনুল) এই পদে রাখা যাবে না।’
মুফতি শরীফ উল্লাহ বলেন, ‘এটা আমারও কথা এটা। তারে (মামুনুল) এখানে রাখা কোনো অবস্থাতেই সঠিক হবে না।’
কাসেমী আবার বলেন, ‘না না তারে (মামুনুল) এই পদে রাখা যাবে না।’
মুফতি শরীফ উল্লাহ বলেন, ‘তারে অবশ্যই এই পদ থেকে সরাইতে হবে।’
এর মধ্যে মামুনুল ফেসবুক লাইভে এসে ৩২ মিনিট বক্তব্য দিয়ে আরও বিপাকে পড়েন। তার রিসোর্ট-কাণ্ডের পর ফেসবুকে যেসব ফোনালাপ পাওয়া যাচ্ছিল, তার সমর্থকরা সেগুলোকে বানোয়াট বলে দাবি করে আসছিলেন। তবে মামুনুল কার্যত স্বীকার করে নেন ফোনালাপগুলো সঠিক।
এরপর থেকে মামুনুলের কোনো সাড়াশব্দ নেই। আর তিনি সেই ভিডিও তার ফেসবুক পেজ থেকে ডিলিট করে দিয়েছেন।
এর মধ্যে ১১ এপ্রিল হাটহাজারী মাদ্রাসায় ডাকা হয় জরুরি বৈঠক। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে সোয়া ৪টা পর্যন্ত চলা বৈঠক শেষে হেফাজতের আমির জুনাইদ বাবুনগরী দাবি করেন, মামুনুলের বিষয়টি নিয়ে কোনো আলোচনাই হয়নি।
তবে বৈঠকে উপস্থিত অন্য নেতারা বলছেন ভিন্ন কথা। নাম প্রকাশে না করার শর্তে নিউজবাংলাকে তারা বলেন, ঢাকাকেন্দ্রিক একটি পক্ষ মামুনুল হককে আরও সময় দেয়ার অনুরোধ জানায়। তবে হাটহাজারী মাদ্রাসাকেন্দ্রিক পক্ষটি চেয়েছিল মামুনুল হককে যেন হেফাজত থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। তবে শেষ পর্যন্ত মামুনুল হক টিকে যান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিস্তারিত কিছু বলতে না চাইলেও হেফাজতের প্রচার সম্পাদক জাকারিয়া নোমান ফয়েজী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ও নারায়ণগঞ্জ জেলার কমিটির সভাপতি মাওলানা আবদুল আউয়াল হুজুর মামুনুল হককে নিয়ে আলোচনা শুরু করতে চান। কিন্তু আমিরে হেফাজত জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, মামুনুল হকের বিষয়টি ব্যক্তিগত। তাই এই বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা না করাই উত্তম।’
তবে হেফাজতের বিষয়ে খোঁজখবর রাখা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের মুখপাত্র উসামা মাদানী ফেসবুকে লিখেছেন, বৈঠকের একপর্যায়ে মামুনুল হককে অব্যাহতির বিষয়ে একমত হন অধিকাংশ নেতা। তারা মনে করছেন, এই বিষয়টিকে ঘিরে মিডিয়া হেফাজত ইসলামকে জড়িয়ে নানা লেখালেখি করার সুযোগ পাচ্ছে।
তবে মামুনুলের রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির মাওলানা খোরশেদ আলম কাসেমী কিছুটা সময় চেয়ে বলেন যে, মামুনুল হক সাহেব নিজে থেকেই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। তার সম্মান রক্ষার্থে অব্যাহতি না দিয়ে এই সুযোগ করে দেয়া হোক। পরে হেফাজতের ঢাকা মহানগর শাখার আমির জুনায়েদ আল হাবিব এই বক্তব্যে সমর্থন করেন।
এরপর মামুনুল হকের বিষয়টি নিয়ে আর কেউ কথা বলেনি।
মাওলানা খোরশেদ আলম কাসেমী বৈঠকে অনুরোধ করেছেন কি না, জানতে চাইলে হেফাজতের প্রচার সম্পাদক জাকারিয়া নোমান ফয়েজী অবশ্য একে অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘তিনি এই বিষয়ে কোনো কথা বলেননি। যদি কেউ এটা বলে থাকে তাহলে সেটি সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং বানোয়াট তথ্য।’
হেফাজতের নায়েবে আমির ও নারায়ণগঞ্জ শাখা কমিটির সভাপতি মাওলানা আবদুল আউয়ালও স্বীকার করেন, তাদের বৈঠকে মামুনুলকে নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলতে রাজি হননি তিনি।
আউয়াল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মজলিশে (সভায়) তো কত কথাই হয়। সব কথাই তো সবাই শুনে না, সবাই মানে না। তারপরও বলব, দলের সিদ্ধান্ত, আমার সিদ্ধান্ত।’
মামুনুলকে ছাঁটাইয়ে আপনার প্রস্তাব তোলায় আপনার তো অবমূল্যায়ন হয়েছে এমন মন্তব্যে তিনি বলেন, ‘আমি কিছু বলব না, আমি শুধু শুনব, তারা কী বলতে চায়।’
কাসেমী-বশিরের মধ্যে কী সে আলোচনা
মাওলানা ফজলুল করিম কাসেমী: কাদের ভাই (নায়েবে আমির আহমাদ আবদুল কাদের) কালকে... আমার তো যাওয়ার ইচ্ছা নাই সেখানে। অনেক কথা বলল আসলে সে (মামুনুল হক) এই কাজটা কেন করল বা তার ...?
মুফতি শরীফ উল্লাহ: কাদের ভাই তো বেশ কিছু কথা বলছে কিন্তু।
মাওলানা কাসেমী: এগুলি আমার সাথে আগে বলছে। আমি বললাম না যে, আপনাকে আসতে হবে, আসি আপনার কথাগুলো বলতে হবে। কাদের ভাইয়ের অনেক কথা আমার কথার সাথে কিছু কিছু পয়েন্ট মিলছে না?
মুফতি শরীফ: হ্যাঁ, হ্যাঁ।
মাওলানা কাসেমী: আপনাকে (কাদের ভাই) আসতে হবে। কথাগুলি বলতে হবে। মধুপুরের পীরও বলবে না। নুরুল ইসলাম সাব তো আরেক ইয়ে। সে তো এগুলি বলবে না। কারও মুখ থেকে এই কথাগুলি আসেনাই।
এই কথাগুলি বলার কারণে তার (মামুনুল হক) যে হিস্ট্রির কথা যে বলল। এটা একটা ছেলেখেলার মতো না?
মুফতি শরীফ: শুধু ছেলেখেলা না, এটারে তো আপনার একেবারে আপনার বস্তিতে যারা বসবাস করে, হেরা এটা করলে এটা মানায়। একেবারের যে সমস্ত শব্দ ব্যবহার করছে, যেসব জায়গা ঘুরাইছে… এগুলোতে আমরা আলোচনা করতেও লজ্জা লাগে।
মাওলানা কাসেমী: এই যে তার ... তারা তো জানে না, তাই না।
মুফতি শরীফ: নাহ, কিচ্ছু জানে না।
মাওলানা কাসেমী: তার বউ আগের বউ যেটা, সেটা হইলো ভালো ফ্যামিলি। কিন্তু সেই ফ্যামিলির সাথে ... রাস্তার মেয়েটারে নিয়া এই করল! এই যে আইয়ুবী টাইয়ুবীর নাম কইল না? শয়তানগুলো তো ... অলি উল্লাহ আরমান, পাগলের বাচ্চা এরাই করাইছে। হেরা জানে কিন্তু ভাইয়েরা (মামুনুলের ভাইয়েরা) জানে না। এটা কোন ধরনের বিয়ে? এমন বিয়ে তো আমগো করা দরকার। এহ, কথা কন না কা।
মুফতি শরীফ: হ্যাঁ, এটাই। এখন অনেকে এটা বলবে যে কালকে অনেকে আমাকে ফোন করছে। বলতেছে শরীফ ভাই আপনারা যেটা করছেন আজকে। এটা কিন্তু আপনারা সামনে মাথায় রাইখেন। একজন নিম্নমানের মানে হেফাজতের মানুষ যদি কিছু করে তখন কিন্তু আপানারা মাথায় রাইখেন। আমরা তখন দেখব আপনারা কী করেন, সিদ্ধান্ত নেন।
মাওলানা কাসেমী: নাহ ইয়াটা, ঝামেলা শেষ হোক। তারে (মামুনুল) এই পদে রাখা যাবে না।
মুফতি শরীফ: এটা আমারও কথা এটা। তারে (মামুনুল) এখানে রাখা কোনো অবস্থাতেই সঠিক হবে না।
মাওলানা কাসেমী: না না তারে (মামুনুল) এই পদে রাখা যাবে না।
মুফতি শরীফ: তারে (মামুনুল) অবশ্যই এই পদ থেকে সরাইতে হবে।
আরও পড়ুন:অধিভুক্ত কলেজের শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে স্নাতকে (অনার্স) তথ্য প্রযুক্তি ও ইংরেজি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
আধুনিক পাঠ্যক্রম প্রণয়নের পাশাপাশি তা বাস্তবায়নে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রয়োজনীয় সহায়তা ও শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা দেওয়া হবে।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজে গতকাল বুধবার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারের এটুআই প্রকল্পের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম আমানুল্লাহ এসব কথা বলেন।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন শিক্ষাক্রমের আইসিটি বিষয়ের ‘টিচিং, লার্নিং অ্যান্ড অ্যাসেসমেন্ট স্ট্র্যাটেজি’ শীর্ষক এ কর্মশালার প্রথম সেশনে সভাপতিত্ব করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ও এটুআই প্রোগ্রামের প্রকল্প পরিচালক মো. রশিদুল মান্নাফ কবীর।
উপাচার্য বলেন, কলেজগুলোতে তথ্য প্রযুক্তি শিক্ষাদানে শিক্ষক সংকটসহ নানা সমস্যা রয়েছে। এ বিষয়ে সহায়তার জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় দেশের সব টেকনিক্যাল কলেজ ও কম্পিউটার কাউন্সিলের সাথে আলোচনা করছে।
তিনি আরও বলেন, দেশের কলেজ শিক্ষার্থীদের মেধার ঘাটতি নেই। সঠিক দিকনির্দেশনা পেলে তারা সহজেই তথ্য প্রযুক্তিতে দক্ষ হয়ে উঠবে।
শিক্ষার্থীদের জন্য আধুনিক, সময়োপযোগী ও কর্মমুখী তথ্য প্রযুক্তি পাঠ্যক্রম প্রণয়নে সরকারের এটুআই প্রোগ্রাম ও শিক্ষাবিদদের প্রতি আহ্বান জানান অধ্যাপক এ এস এম আমানুল্লাহ।
কর্মশালার দ্বিতীয় সেশনে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. নুরুল ইসলাম।
দিনব্যাপী এ কর্মশালায় দেশের বিভিন্ন কলেজের ৮টি বিভাগের ৪০ জন তথ্য প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অংশগ্রহণ করেন। প্রশিক্ষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ড. নাজমা তারা এবং মির্জা মোহাম্মদ দিদারুল আনাম।
এছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দপ্তরের পরিচালক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আজ ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখ দুপুর ১২টায় বেবিচক সদরদপ্তরে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) এর চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মোঃ মোস্তফা মাহমুদ সিদ্দিক, বিএসপি, জিইউপি, এনডিসি, এএফডব্লিউসি, এসিএসসি, পিএসসি (Air Vice Marshal Md Mostafa Mahmood Siddiq, BSP, GUP, ndc, afwc, acsc, psc) এর সাথে পাকিস্তান সিভিল এভিয়েশন অথরিটির মহাপরিচালক জনাব নাদির শাফি দার (Mr. Nadir Shafi Dar) এক সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
সাক্ষাৎকালে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে সরাসরি বিমান চলাচল পুনঃস্থাপন বিষয়ে ফলপ্রসূ মতবিনিময় হয় এবং উভয় পক্ষই এ বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন। বৈঠকে ভবিষ্যতে বিমান চলাচল খাতে প্রযুক্তি ও অভিজ্ঞতা বিনিময়, সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং পারস্পরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলো আরও সুদৃঢ় করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
উভয় পক্ষ আশা প্রকাশ করেন যে, বিমান চলাচল পুনঃস্থাপন হলে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, পর্যটন ও জনগণের পারস্পরিক যোগাযোগ আরও বৃদ্ধি পাবে।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন বেবিচক এর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ এবং PIA এর CEO ।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আজ বিকেল ৫টায় সাতটি রাজনৈতিক দল ও একটি সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে, বৈঠকে অংশ নেন- এবি পার্টি, নাগরিক ঐক্য, গণসংহতি আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদ, এলডিপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, জাতীয় গণফ্রন্ট এবং হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ।
এরআগে গত রোববার প্রধান উপদেষ্টা বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি’র সঙ্গে বৈঠক করেন।
ধারাবাহিক এই বৈঠক আসন্ন নির্বাচনের প্রস্তুতিতে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হিসেবে দেখা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-৩ গঠন করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।
আজ সকালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ভবন ও সংলগ্ন এলাকা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
এ সময় আইন উপদেষ্টা বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি আমরা। বিগত সরকারের হত্যা, গুম, নির্যাতনসহ সব ধরনের অপরাধের বিচারের বিষয়ে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আইন উপদেষ্টা বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ভবন সংলগ্ন টিনশেড ভবন খালি হয়ে গেলে আমরা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-৩ গঠন করতে পারি। এটি করা গেলে গুমসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক অপরাধের বিচার কাজ দ্রুত করা যাবে।
তিনি আরো বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা নিয়ে বেশ আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছেন আমাদের বিচারকসহ প্রসিকিউশন ও তদন্ত টিম।
আইন উপদেষ্টা বলেন, দেশের ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের স্বার্থে আমাদের যে ন্যায়বিচার আছে, আইনের শাসন আছে ও মানবাধিকার আছে এটাকে প্রতিষ্ঠিত করার স্বার্থে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে এক হাজারেরও বেশি ছাত্র-জনতাকে হত্যা এবং হাজারও মানুষকে পঙ্গু করার ভয়াবহ মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার অপরিহার্য-অনিবার্য। সেই বিচারকার্যের প্রথম থেকেই আমরা অবিচল আছি। বিচারের যে গতি আছে সেটা নিয়েও আমরা সন্তুষ্ট আছি।
অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ভবন আজ পরিদর্শন করেন। এসময় তাদের সঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলামসহ অপর প্রসিকিউটররা উপস্থিত ছিলেন।
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, এর দলীয় ক্যাডার ও সরকারের অনুগত প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে একের পর এক অভিযোগ জমা পড়ে। দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এসব অপরাধের বিচার কাজ চলছে।
অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে জনগণই মুখ্য ভূমিকা রাখবে বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.)।
উপদেষ্টা আজ সিলেট জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এক মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন।
মতবিনিময় সভায় সিলেট বিভাগের সকল জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি), আনসার-ভিডিপি, কারা অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর, ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সিলেট জেলার বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থার কর্মকর্তাবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।
উপদেষ্টা বলেন, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে জনগণের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নই বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান লক্ষ্য। তিনি বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু করতে মাঠ প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য শুধু নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি যথেষ্ট নয়, মাঠ প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে যথাযথ প্রস্তুতি নিতে হবে। জনগণ যেন নির্ভয়ে নির্বাচন কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে ভোট প্রদান করতে পারে সেরকম পরিবেশ তৈরি করতে প্রশাসন এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে একযোগে কাজ করতে হবে। সকলের সহযোগিতায় সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভবপর হবে।
পুলিশসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়োগ ও পদায়ন সম্পর্কে উপদেষ্টা বলেন, এবার বিভিন্ন বাহিনীর নিয়োগ প্রক্রিয়া ও পদায়ন অনেক স্বচ্ছ হয়েছে। তাই সবাইকে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। মাদককে দেশের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য অন্যতম হুমকি উল্লেখ করে তিনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে মাদক ব্যবসায়ীদের প্রতি জিরো টলারেন্স দেখানোর নির্দেশনা দেন। এছাড়া পরিবেশ রক্ষায় সিলেটের পাথরখেকোদের বিরুদ্ধে সবসময় সজাগ থাকার কথা বলেন।
দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে কৃষির গুরুত্ব তুলে ধরে লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) বলেন, কৃষকরাই এদেশের খাদ্য নিরাপত্তার মূল কারিগর। তাই উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি কৃষকেরা যেন তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পায় সেটি নিশ্চিত করতে হবে। উপদেষ্টা এসময় পতিত কৃষিজমিগুলো আবাদের আওতায় আনার জন্য সংশ্লিষ্টদের আহ্বান জানান।
সভায় উপস্থিত কর্মকর্তাবৃন্দ সিলেটের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও এর চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরে বিভিন্ন মতামত প্রদান করেন। উপদেষ্টা সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যৌক্তিক পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস প্রদান করেন। মতবিনিময় সভা শেষে উপদেষ্টা উপস্থিত সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন।
উপদেষ্টা এর আগে বিজিবি'র সিলেট সেক্টর হেডকোয়ার্টার্স এবং সিলেট পুলিশ লাইন পরিদর্শন করেন।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা (রোডম্যাপ) আগামীকাল বৃহস্পতিবার ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ।
আজ বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে এক ব্রিফিংয়ে সচিব সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, ‘আমরা যে কর্মপরিকল্পনা (রোডম্যাপ) করেছি, সে কর্মপরিকল্পনাটা আপনাদের জানাবো। আমি ঢাকার বাইরে থাকায় একটু পিছিয়ে পড়েছি। এটা আমার টেবিলে এখন আছে। আগামীকাল পর্যন্ত একটু অপেক্ষা করেন।’
এদিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসি সচিব আজ এক বৈঠকে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা (রোডম্যাপ) অনুমোদন করেছে কমিশন।
এখন যেকোনো সময় নির্বাচনের এই রোডম্যাপ আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করা হতে পারে বলে ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে একজন নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘কর্মপরিকল্পনার সবকিছু চূড়ান্ত হয়ে গেছে। অনুমোদন হয়েছে, এখন শুধু টাইপিং চলছে।’
উল্লেখ্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ইসির পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে দল নিবন্ধন, সীমানা নির্ধারণ, নির্বাচন পর্যবেক্ষক, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংস্কার, বিধিমালা ও নীতিমালা জারি, প্রবাসীদের জন্য আইটি সাপোর্টেড নিবন্ধন ও পোষ্টাল ব্যালট পদ্ধতি ও নির্বাচনী সরঞ্জাম কেনাকাটা বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে রোডম্যাপে।
মন্তব্য