হেফাজত নেতা মামুনুল হকের রিসোর্টকাণ্ড কেন্দ্র করে ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ উপজেলায় ব্যাপক তাণ্ডব চালান হেফাজত কর্মীরা। রয়্যাল রিসোর্টের পাশাপাশি ভাঙচুর করা হয় স্থানীয় আওয়ামী লীগ কার্যালয়, বাজারের দোকানপাট। হামলা হয় আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাড়িতেও।
এই সহিংসতায় হেফাজত কর্মীদের সঙ্গে জাতীয় পার্টির স্থানীয় সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকার অনুসারীরা সরাসরি অংশ নেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সেই সঙ্গে হামলায় যোগ দেন বিএনপি, জামায়াতের কর্মীরাও।
ক্ষতিগ্রস্তদের অভিযোগ, নারায়ণগঞ্জে শামীম ওসমান ও সেলিনা হায়াত আইভীর দ্বন্দ্বের জেরে সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগও বিপর্যস্ত। এ কারণে ৩ এপ্রিলের সংঘাতময় পরিস্থিতিতে কোনো প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা।
রয়্যাল রিসোর্টে মামুনুল হককে তার কথিত স্ত্রীর বিষয়ে জেরা করেছিলেন উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নু ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেকসহ সভাপতি সোহাগ রনি। পরে এ দুজনের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা করেন হেফাজত কর্মীরা।
যুবলীগ নেতা রফিকুল ইসলাম নান্নু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘স্থানীয় কয়েকজন ইউটিউবার ও সাংবাদিক আমাকে টেলিফোনে পরনারীসহ মামুনুল হকের রিসোর্টে অবস্থানের কথা জানালে, আমি সেখানে ছুটে যাই। আমার মতো ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি সোহাগ রনিও সেখানে যান। আমাদের এলাকায় এমন ঘটনা ঘটলে আমাদের তো যেতে হবেই। সেখানে সাংবাদিক-পুলিশ তাদের জেরা করেছে, সেসব ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পরলে হেফাজত কর্মীরা ভেবেছে আমরা ঘটনায় নেতৃত্ব দিয়েছি। এরপর তারা আমার ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান আর বাসায় ভাঙচুর করে, হামলা করে আমার সবকিছু শেষ করে দেয়।’
ওই দিনের হামলায় হেফাজতের সঙ্গে অন্য কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরাও অংশ নেন দাবি করে নান্নু বলেন, ‘তারা অতর্কিত হামলা করেছিল, আমরা বুঝতেই পারিনি এমন হামলা হবে। হামলা প্রতিহত করার কোনো প্রস্তুতিই আমাদের ছিল না। হেফাজত, বিএনপি ও জামাত-শিবিরের কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে স্থানীয় জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকার আত্মীয়-স্বজন আমার বাড়ি ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে হামলা-লুটপাট করেছে।’
জাতীয় পার্টির এমপির স্বজন-সমর্থকদের জড়িত হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তারা প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে হামলা করেছে। এখানে জাতীয় পার্টির এমপি আওয়ামী লীগের বিরোধী দল হিসেবে কাজ করে। তিনি বিএনপি-জামাতকে সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করতে সব সময় তৎপর থাকেন।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদেরও বিষয়টি জানানো হয়েছে উল্লেখ করে নান্নু বলেন, ‘তাদের জানানোর পরই ঘটনাস্থল সরেজমিনে দেখতে এসেছেন। তখনও আমরা সামনাসামনি সব কিছু বলেছি, এরপর তারা বলেছেন কাউকেই আর ছাড় দেয়া হবে না।’
তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি সোহাগ রনি বিষয়টি নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি। তবে তার বাবা মোগড়াপাড়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার শাহ জামাল তোঁতা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘হেফাজতের কর্মীদের সঙ্গে বিএনপি ও জাতীয় পার্টির কর্মীরা এসে আমাদের বাড়ি ও পাশের বাজারে হামলা চালায়।’
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা জনগণের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি নন, তাই তিনি এখানকার মানুষের জন্য রাজনীতি করেন না। তিনি নিজের স্বার্থের কারণে বিএনপি-জামাতকে নিয়ে রাজনীতি করতে চান। আমাদের বাড়িতে হামলা হলো, কই তিনি তো একবার দেখতেও এলেন না!’
শাহ জামাল তোঁতা বলেন, ‘আমার ছেলে নিয়মিত মাদ্রাসার ছাত্রদের খোঁজ খবর রাখে, নিয়মিত তাদের খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা করে, তাদের সঙ্গে আমার ছেলের সম্পর্ক ভালো, তারপরেও তারা আমার ছেলের বাসায় ভাঙচুর করল কীভাবে!’
তবে অভিযোগ মানছেন না নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির নেতা লিয়াকত হোসেন খোকা। তিনি পাল্টা অভিযোগ তোলেন নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল্লাহ আল কায়সারের বিরুদ্ধে।
খোকা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছেন আবদুল্লাহ আল কায়সার। তার আসনে আমি নির্বাচিত হওয়ায় প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে আমার বিরুদ্ধে তার কর্মীদের দিয়ে এসব কথা বলাচ্ছেন।’
৩ এপ্রিলের ঘটনার বিষয়ে খোকা বলেন, ‘আমি বা আমার কর্মীরা কোনোভাবেই হেফাজতের সঙ্গে ছিলাম না। পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে ধারণা করে আমি আমার কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছিলাম, তারা যেন রাস্তায় নেমে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে ফেরত পাঠায়। কোনো ধরনের সহিংসতা না করতে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের অনুরোধ করতে তাদের মাঠে নামতে বলেছিলাম।
‘মামুনুল হকের বিষয়টি শোনার সঙ্গে সঙ্গেই একজন দায়িত্বশীল সংসদ সদস্য হিসেবে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছি, যেন এ নিয়ে কোনো উত্তেজনা সৃষ্টি না হয়। কিন্তু উল্টো এখন আমার ঘাড়ে দোষ চাপানো হচ্ছে।’
হামলার পর সংসদ সদস্য হিসেবে ক্ষতিগ্রস্ত আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে দেখা না করার কারণ ব্যাখ্যা করে খোকা বলেন, ‘তারা তো সবাইকে আমার বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ করে তুলেছিল, এমন পরিস্থিতিতে আমি কীভাবে সেখানে যাই!’
লিয়াকত হোসেন খোকার অভিযোগের বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল্লাহ আল কায়সারের বক্তব্য জানতে চায় নিউজবাংলা। তিনি বলেন, ‘তার (খোকা) প্রতি আমার প্রতিহিংসার কিছু নাই। তিনি তার মতো নিজেকে সেভ করতে মনগড়া কথা বলতেই পারেন। আপনারা সাংবাদিক নিজেরা তদন্ত করে দেখুন, সব উত্তর পেয়ে যাবেন।’
৩ এপ্রিলের পর আবদুল্লাহ আল কায়সার এক সমাবেশে বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি না আলেম সমাজ এই হামলায় জড়িত, এই হামলা করেছে জাতীয় পার্টি, বিএনপির কর্মীরা।’
এ বক্তব্যের বিষয়ে আবদুল্লাহ আল কায়সার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি সত্যিই বিশ্বাস করি না, কারণ স্থানীয় আলেমদের সঙ্গে আমাদের বোঝাপড়া অনেক ভালো। ২০১৩ সালের ৫ মের আন্দোলনের সময় স্থানীয় আলেমরা আমার অনুরোধে শাপলা চত্বরে যাননি। আমি তখন এই আসনের সংসদ সদস্য, পরে আমি খেয়াল রেখেছি তাদের বিরুদ্ধে যেন হয়রানিমূলক কোনো মামলা না হয়।’
সোনারগাঁয়ে তাণ্ডবের ঘটনায় যে তিনটি মামলা হয়েছে তার একটির বাদি সোনারগাঁ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) জিয়াউর রহমান। সে মামলায় প্রধান আসামি মামুনুল হকের পাশাপাশি সোনারগাঁ পৌরসভা জাতীয় পার্টির সভাপতি এম এ জামান ও সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলামকেও আসামি করা হয়েছে। একই মামলায় আসামি হিসেবে আছেন স্থানীয় হেফাজত, বিএনপি, জামাত-শিবির কর্মীরাও।
আওয়ামী লীগ কেন কোণঠাসা?
মামুনুল হকের রিসোর্টকাণ্ড ঘিরে সোনারগাঁ উপজেলার মোগড়া পাড়া এলাকায় আওয়ামী লীগের কার্যালয়সহ দুই নেতার বাড়িতে হামলার সময় ন্যূনতম প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি স্থানীয় আওয়ামী লীগ।
উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক শামছুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা ভাবতেই পারিনি এমন কিছু ঘটবে। হঠাৎ করেই সহিংসতা শুরু হল। কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছ থেকে কোনো নির্দেশনা ছিল না, তাই আমাদের কোনো প্রস্তুতিও ছিল না।’
সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল্লাহ আল কায়সার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য একটি শিক্ষা। এখানে কমিউনিকেশন গ্যাপ হয়েছে, সেই সঙ্গে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের দুই নেতারও ভুল আছে। মামুনুল হক তো আর কোনো ছোট নেতা নন। তিনি সাম্প্রতিক সময়ে দেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছেন। তাই সেখানে ছুটে যাবার আগে তাদের অবশ্যই সিনিয়র নেতাদের জানানো দরকার ছিল।’
প্রশাসনও কালক্ষেপণ করে হামলাকারীদের সুসংগঠিত হবার সুযোগ করে দিয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘প্রশাসনের উচিত ছিল মামুনুল হককে নিরাপদ কোথাও সরিয়ে নেয়া, তারা সেটা করেনি।’
রিসোর্টে যাবার আগে সিনিয়র নেতাদের কেন জানাননি- জানতে চাইলে যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সেটা আমার ভুল হয়েছে, আমি আসলে বুঝেতে পারিনি।’
প্রশাসনের অবহেলার অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি সোনারগাঁ পুলিশের কোনো কর্মকর্তা। তবে সোনারগাঁ থানার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই ধরনের রাজনৈতিক সিচ্যুয়েশন ডিল করতে হলে আমাদের পলিটিক্যাল ডিসিশনের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। ধরে নিন সেখান থেকে আমরা কোনো সিদ্ধান্ত পাচ্ছিলাম না।’
২৫ বছর কমিটি ছাড়া সোনারগাঁ আওয়ামী লীগ
সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামী লীগের সবশেষ সম্মেলন হয়েছিল ১৯৯৬ সালে। এ নিয়ে ক্ষোভ আছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগ করতে করতে বুড়ো হয়ে গেলাম, এখনও কোনো পদ পেলাম না। আমার বয়স ৬১ চলছে, কবে কমিটি হবে আর কবেই বা পদ পাব! সারাজীবন আওয়ামী লীগকে দিয়েই গেলাম, পেলাম না কিছুই।’
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করেন, ‘এত লম্বা সময়ে কমিটি না হওয়ায় দলীয় কোন্দলের মাত্রা বেড়েছে। তৈরি হয়েছে নেতৃত্বের সংকট।
১৯৯৬ সালে সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য আবুল হাসনাত। তিনি মারা যাবার পর ২০১৭ সাল পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন বর্তমান উপজেলা আহ্বায়ক শামছুল ইসলাম।
এত সময় ধরে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি থাকার পরেও কেন উপজেলা কমিটি করতে পারলেন না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি জেলা আওয়ামী লীগ থেকে তখন সহযোগিতা পাইনি। জেলা আওয়ামী লীগের আগ্রহের অভাব ছিল। এখন আর কোনো সমস্যা নাই, সব কিছু গোছানো আছে, করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে আমরা সম্মেলন করব।’
এ অভিযোগ নিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাই নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শামছুল ইসলাম সাহেব কেন জেলা থেকে সহযোগিতা পাননি, সে বিষয়ে আমরা সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলতে পারব না। কারণ সে সময়ে আমরা দায়িত্ব ছিলাম না।’
জেলা আওয়ামী লীগে হেফাজত ও জাতীয় পার্টি ‘প্রীতি’
সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা জানান, নারায়ণগঞ্জে কখনওই হেফাজত বা জাতীয় পার্টির আধিপত্য ছিল না। তবে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের বড় ভাই সেলিম ওসমান নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য হওয়ায় জাতীয় পার্টির প্রতি তার মৌন সমর্থন কাজ করে। তাছাড়া শামীম ওসমান অনেকবার হেফাজত নেতাদের প্রকাশ্য সমর্থন দিয়েছেন।
সোনারগাঁ উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নু অভিযোগ করেন, ‘শামীম ওসমান সাহেব জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকাকে প্রশ্রয় দেন। সেজন্যই তিনি বাড়াবাড়ি করার সাহস পাচ্ছেন। আমরা আওয়ামী লীগের কর্মীরা নানাভাবে নির্যাতিত। আমি নিজেসহ অন্য আওয়ামী লীগ নেতারা খোকা সাহেবের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ করেও তার (শামীম ওসমান) কাছ থেকে কোনো সমাধান পাইনি।’
সোনারগাঁয়ের স্থানীয়রা জানান, তাদের এলাকায় সম্প্রতি অনেক মাদ্রাসা স্থাপিত হয়েছে, যেগুলোর পৃষ্ঠপোষকতায় আছেন শামীম ওসমান ও তার সমর্থকেরা।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল ও ক্ষুদেবার্তা পাঠানো হলেও তিনি সাড়া দেননি।
জেলায় দলীয় বিরোধের জের উপজেলায়
সোনারগাঁ উপজেলার রাজনীতিক, ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ বলছে, নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগে বছরের পর বছর ধরে চলা কোন্দলের কারণে উপজেলা পর্যায়েও আওয়ামী লীগ সংগঠিত হতে পারছে না। আর সোনারগাঁয়ে এই সুযোগটাই নিয়েছে হেফাজত আর জাতীয় পার্টি।
তাদের অভিযোগ, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান আর নারায়ণগঞ্জ পৌর মেয়র সেলিনা হায়াত আইভীর মধ্যে দা-কুমড়া সম্পর্কের প্রভাব জেলা থেকে উপজেলা পর্যায়ের নেতার্মীদের মধ্যেও পড়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সোনারগাঁ উপজেলার এক আওয়ামী লীগ নেতা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শামীম ওসমান ও সেলিনা হায়াত আইভীর দ্বন্দ্ব এতটাই চরমে যে তারা কারও মুখোমুখি হন না। এমনকি কোনো দলীয় অনুষ্ঠানে একজন গেলে অন্যজন যান না। তাই আমরাও সুসংগঠিত হতে পারছি না। আমাদের নেতাদের পক্ষ থেকে সরাসরি কোনো নির্দেশ না থাকায় হেফাজতের তাণ্ডবের সময় নিশ্চুপ ছিলাম।’
হেফাজতের তাণ্ডবের চিত্র সরেজমিনে দেখতে বুধবার ঢাকা থেকে ঘটনাস্থলে যায় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের একটি দল। সেখানে শামীম ওসমান উপস্থিত থাকলেও যাননি মেয়র সেলিনা হায়াত আইভী। তবে আইভী সমর্থকদের একটি অংশ উপস্থিত ছিলেন।
ঘটনাস্থলে না যাওয়ার কারণ জানতে মোবাইল ফোনে আইভীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই ইস্যু নিয়ে আমি কথা বলতে চাই না।’
এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল্লাহ আল কায়সার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দলে যতই কোন্দল থাকুক, জাতীয় ইস্যুতে আমরা সবসময় ঐক্যবদ্ধ। এর আগেও আমরা এক হয়ে অনেক আন্দোলন করেছি। সেদিনের হেফাজত তাণ্ডবে দলীয় কোন্দলের কোনো প্রভাব ছিল না। এটা ভুল কথা।’
অন্যদিকে, উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক শামসুল ইসলাম বলেন, ‘এখন আমরা সুসংগঠিত। আমাদের মাঝে আর কোনো সমস্যা নেই। কেন্দ্রীয় নেতারা এসেছেন, তারা আমাদের নির্দেশনা দিয়ে গেছেন, এখন আমরা ঐক্যবদ্ধ, আর কোনো সমস্যা হবে না।’
আরও পড়ুন:সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশীদ বলেছেন, আমাদের দেশের ছেলেমেয়েরা সত্যের মুখে দাঁড়িয়ে লড়তে পারে। দীর্ঘদিনের পুঞ্জিভূত উশৃঙ্খলতা নিরসনে মাঠে নেমে পরলে এদেশের ছেলেমেয়েরা শুরু হতে লাগলো পরিবর্তনের হাওয়া। তিনি বলেন, আমাদের লজ্জা হওয়া উচিৎ কেনো আমরা বড়রা এই উশৃঙ্খলতা নিরসন করতে পারিনি, যা ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে আমাদের ছোট ছোট বাচ্চারা তা আমাদেরকে শিখিয়ে দিয়েছে। ওই গণঅভ্যুত্থানে ৭০% মেয়ে অংশ নিয়েছিল, তারা সাইবার বুলিং এর শিকার হচ্ছে। সাইবার স্পেসকে নারী ও শিশুদের জন্য নিরাপদ করতে তরুণদের সহযোগিতা দরকার।
তিনি গত শনিবার নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের রয়েল রিসোর্টে ক্যাপিটাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের উদ্যোগে উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হতে ২০২৫ সালে অনুষ্ঠিত এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচন যথা সময়ে হবে। নির্বাচনের পথে যদি অতিরিক্ত সহিংসতা হয়, তাহলে নির্বাচন ভঙ্গুর হয়ে যাবে। ফলে সেটা যেনো না হয় সে কারণে পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে জনগনকেও সরকারের পাশে এগিয়ে আসতে হবে। নির্বাচনী এলাকায় যেনো সহিংসতা না হয় সে খেয়াল রাখা আপনাদের দায়িত্ব, রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব। সবাই বসে আছি কবে নির্বাচন হবে, সবাই মিলে যদি আমরা সহযোগিতার হাত বাড়ায় তাহলে নির্বাচন সহজ হবে। ড. ইউনূসের নেতৃত্বে সরকার দেশ গঠনে কাজ করে যাচ্ছে। পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের কাছে আমাদের দায়িত্ব অর্পণ করে যাবো, যাতে তারা সুনামের সঙ্গে মাথা উঁচু করে এদেশের মর্যদা রক্ষা করে কাজ করতে পারে।
বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক লি. নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান মো. মহসিন মিয়ার সভাপতিত্বে আরও উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নাইমা ইসলাম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা রহমান, সোনারগাঁ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. রাশেদুল হাসান খান, সোনারগাঁ ক্যাপিটাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সভাপতি আক্তার হোসেন, পরিচালক খায়রুল ইসলাম প্রমুখ। অনুষ্ঠানে ২০২৫ সালে অনুষ্ঠিত এসএসসি পরিক্ষায় অংশ নেওয়া ১৯৯ জন জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।
নির্বাচনের চলাকালীন ও পরে তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করার গুরুত্ব উল্লেখ করে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেছেন, এ দায়িত্ব পালনে কোনো গণমাধ্যমকে বাধাঁ দেওয়া হবে না।
রোববার রাজধানীর তথ্য ভবনে ‘নির্বাচনে গণমাধ্যমের ভূমিকা’ বিষয়ক মতবিনিময়সভায় তিনি এ কথা বলেন।
সভায় অংশ নেন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রকাশক, সম্পাদক ও সাংবাদিকরা। সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে অতীতের দুঃসহ অভিজ্ঞতা শেয়ার করে তারা ভবিষ্যৎ নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
বিশেষ করে নির্বাচনকালে সংবাদকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানান তারা।
এ সময় উপদেষ্টা মাহফুজ আলম অভিযোগ করেন, গত ১৫ বছরে গণমাধ্যম আস্থা হারিয়েছে। সেই আস্থা পুনরুদ্ধারে নির্বাচনকালীন সময়ে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশের ওপর জোর দেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘আগামী জাতীয় নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে।
জনগণ ভোট দিতে গিয়ে সহিংসতার শিকার হবে না, সরকার সেই চিন্তা প্রতিষ্ঠা করবে। গণমাধ্যমও যেন এ চিন্তার বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখে।’
তিনি আরও আহ্বান জানান, যদি কোনো সহিংসতা ঘটে, তবে গণমাধ্যম যেন তার মূল কারণ ও দায়দায়িত্ব খুঁজে বের করে প্রকাশ করে।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, জাতীয় স্বার্থে বস্তুনিষ্ঠ ও জবাবদিহিমূলক গণমাধ্যম অপরিহার্য।
রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন প্রতিবেদন পর্যালোচনা বিষয়ক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে সরকার ইতোমধ্যে একটি কমিটি গঠন করেছে। এই কমিটিতে পাঁচজন উপদেষ্টা রয়েছেন, যারা শুধু এ কমিশনের সুপারিশ নয়, সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় পর্যালোচনা করছেন।
তিনি বলেন, যতটুক সংস্কার জনসমর্থন, রাজনৈতিক সমর্থন ও সংশ্লিষ্ট সেক্টরের ঐকমত্যের ভিত্তিতে হবে, ততটুকুই টেকসই হবে।
তিনি আরও বলেন, বস্তুনিষ্ঠ গণমাধ্যম অন্তর্বর্তী সরকারের একটি চাওয়া। গণমাধ্যমকে জাতীয় স্বার্থেই জবাবদিহিতার জায়গা তৈরি করতে হবে।
পরিবেশ উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, গণমাধ্যমের প্রতি জনগণের আস্থা ও গ্রহণযোগ্যতা বাড়লেই এর স্থায়িত্ব আসবে। তাই গণতন্ত্রের স্বার্থে গণমাধ্যমকে বস্তুনিষ্ঠ ও জবাবদিহিমূলক হতে হবে। শুধুমাত্র কাগজে পরিবর্তন আনলে স্থায়িত্ব আসবে না, এর জন্য প্রয়োজন মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন। সরকার গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখে বলেই আলাদা গণমাধ্যম কমিশন গঠন করেছে। সুপারিশের সারাংশ ও বাস্তবায়নের রূপরেখা তৈরির কাজ চলছে। সাংবাদিকদের পেশাগত উৎকর্ষ, সেল্ফ-রেগুলেশন, সেক্টরাল ইউনিটি এবং গণমাধ্যমকে অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার সুযোগ তৈরির বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে আলোচিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, সরকার মব জাস্টিসের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে এবং সংশ্লিষ্টদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। একই সঙ্গে তিনি গণমাধ্যমে নৈতিকতা, দায়িত্বশীলতা ও জনআস্থার গুরুত্ব তুলে ধরেন।
পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, ‘গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ যদি আমরা সবাই মিলে বাস্তবায়ন করতে পারি, তাহলে সেটিই হবে টেকসই। সরকার সহায়তা করবে, কিন্তু টিকিয়ে রাখার দায়িত্ব গণমাধ্যমকেই নিতে হবে।’
সভায় বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) অনারারি নির্বাহী পরিচালক ব্যারিস্টার সারা হোসেন। ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টারের ট্রাস্টি সায়িদ আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন সেন্টারের সদস্যসচিব ইলিয়াস হোসেন এবং বিবিসি মিডিয়া অ্যাকশনের কান্ট্রি ডিরেক্টর মো. আল মামুন।
প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে স্বনির্ভর ও আর্থিকভাবে শক্তিশালী করে তোলার লক্ষ্যেই সরকার কাজ করছে। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে মাঠপর্যায়ে প্রাণিসম্পদ খাতকে আরও কার্যকর করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। রবিবার সকালে কেরানীগঞ্জ মডেল থানাধীন আটি ভাওয়াল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত প্রাণী ও প্রাণিখাদ্য বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আক্তার এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, প্রত্যেক পরিবারকে আর্থিকভাবে শক্তিশালী ও স্বনির্ভর করাই সরকারের মূল লক্ষ্য। আমরা চাই গ্রামের সাধারণ মানুষ যেন ছোট পরিসরে হাঁস-মুরগি, ছাগল বা ভেড়া পালন করে নিজেদের সংসার চালাতে পারে, অতিরিক্ত আয় করতে পারে এবং ধীরে ধীরে সমাজের অন্যদেরও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে। প্রাণিসম্পদ খাত কেবল খাদ্য নিরাপত্তা নয়, দারিদ্র্য বিমোচন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের বড় ভরসা।
অনুষ্ঠানে মোট ২১৭টি পরিবারের মাঝে প্রাণিসম্পদ বিতরণ করা হয়। এর মধ্যে ৬৪টি পরিবারকে ২১টি করে হাঁস, ৬৯টি পরিবারকে ২৫টি করে মুরগি, ১০টি পরিবারকে ২টি করে ছাগল, ৭৪টি পরিবারকে ৩টি করে ভেড়া বিতরণ করা হয়। এর পাশাপাশি উপযুক্ত প্রাণিখাদ্যও প্রদান করা হয় যাতে উপকারভোগীরা তাৎক্ষণিকভাবে খামার কার্যক্রম শুরু করতে পারেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মোঃ আবু সুফিয়ান ও প্রকল্প পরিচালক ড. রহিম। আরও উপস্থিত ছিলেন কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রিনাত ফৌজিয়া, সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা কারিশমা আহমেদ এবং উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. সাত্তার বেগ, কৃষি কর্মকর্তা মহুয়া শারমিন মুনমুনসহ অনেকে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. আবু সুফিয়ান বলেন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মাঝে প্রাণিসম্পদ বিতরণ কার্যক্রম সরকারের এক যুগান্তকারী উদ্যোগ। এ কার্যক্রমের মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে, পুষ্টির চাহিদা পূরণ হবে এবং একই সঙ্গে মানুষের জীবনমানও উন্নত হবে।
স্বচ্ছতা বজায় রেখে ক্যালেন্ডার অনুযায়ী প্রতিবছর নির্দিষ্ট সময়ে বিসিএস পরীক্ষা আয়োজনের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
রোববার রাষ্ট্রীয় অতিথিভবন যমুনায় সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা এ নির্দেশ দিয়েছেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘ক্যালেন্ডার অনুযায়ী প্রতি বছর নির্দিষ্ট সময়ে পরীক্ষা ও নিয়োগ সম্পন্ন করতে হবে। বিসিএস পরীক্ষা হলো এন্ট্রি পয়েন্ট।
যারা এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবে তারাই সরকার চালাবে। কাজেই এন্ট্রি পয়েন্টে যদি কোনো ধরনের অনিয়ম হয় তাহলে গোটা সিস্টেমে সেটার প্রভাব থেকে যাবে।’
দায়িত্ব নিয়ে সমস্যা ও সংকটগুলো সমাধান করে ফেলতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রয়োজনীয় সংস্কারের জন্য সবাই মিলে চেষ্টা করতে হবে। যারা ভবিষ্যতে সরকার চালাবে তাদের জন্যও এটা প্রয়োজন।’
বৈঠকে সরকারি কর্ম কমিশনের আর্থিক স্বায়ত্তশাসন ও প্রশাসনিক স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার বিষয়ে আলোচনা করেন কমিশন চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোবাশ্বের মোনেম।
তিনি জানান, কমিশন ইতোমধ্যেই পাঁচ বছরের রোডম্যাপ দিয়েছে এবং প্রতিবছর নভেম্বর থেকে পরের বছরের অক্টোবর মধ্যেই পরীক্ষা ও নিয়োগ সম্পন্ন হবে।
কমিশন সদস্যরা জানান, গত ১৫ বছর রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে বিসিএস পরীক্ষায় নানা ধরনের অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি, প্রশ্ন ফাঁসের মতো ঘটনা ঘটেছে। পিএসসিতে যেন আর কখনো অনিয়ম ফিরে না আসে, এটি যেন সবার আস্থার জায়গা হয় সেটি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সংস্কারকাজ সম্পন্ন করা হয়েছে।
প্রশ্নপত্রের মান এমনভাবে উন্নীত করা হচ্ছে যাতে এই পরীক্ষার প্রস্তুতি দিয়ে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতাতেও চাকরিপ্রত্যাশীরা প্রতিযোগিতা করতে পারেন।
মুক্তিকামী মানুষের আন্দোলন সংগ্রামের অন্যতম অগ্রনায়ক, রাজনীতিবিদ, প্রগতিশীল চিন্তাবিদ, সমাজবিজ্ঞানী ও লেখক বদরুদ্দীন উমরের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।
আজ রোববার এক শোকবার্তায় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে পেশাজীবন শুরু করে পরবর্তী সময়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেয়া বদরুদ্দীন উমর ছিলেন আমাদের মুক্তবুদ্ধি ও প্রগতি সংগ্রামের এক উজ্জ্বল বাতিঘর। ভাষা আন্দোলনে তাঁর সক্রিয় ভূমিকা, গবেষণা, ঔপনিবেশিক মানসিকতার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ এবং সমাজতান্ত্রিক দর্শনের প্রতি তাঁর অবিচল নিষ্ঠা আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করেছে।
তিনি ফ্যাসিবাদী ও স্বৈরাচারী সরকারের পরিবর্তনের জন্য গোড়া থেকেই গণঅভ্যুত্থানের কথা বলেছেন এবং জুলাই আন্দোলনকে উপমহাদেশের একটি অভূতপূর্ব গণ-অভ্যুত্থানের স্বীকৃতি দিয়েছেন।
প্রফেসর ইউনূস বলেন, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সভাপতি বদরুদ্দীন উমর শুধু একজন তাত্ত্বিক ছিলেন না, ছিলেন একজন সংগ্রামী, যিনি আজীবন অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার থেকেছেন।
জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য লেখক ও বুদ্ধিজীবী বদরুদ্দীন উমরকে স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য মনোনীত করে সরকার।
বদরুদ্দীন উমরের মৃত্যু জাতির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের চিন্তাশীল মানুষদের জন্য তাঁর লেখনী ও জীবনদর্শন এক অনন্য পথনির্দেশ হিসেবে কাজ করবে।
শোকবার্তায় বদরউদ্দীন উমরের শোকসন্তপ্ত পরিবার, সহকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান প্রধান উপদেষ্টা।
প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় আক্রান্ত ৯৪ বছর বয়সী বদরুদ্দীন উমর আজ সকালে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে সরকারি সফর করেছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। শুক্রবার তাকে বহনকারী হেলিকপ্টার উপজেলার গোপীনাথপুর উচ্চবিদ্যালয় মাঠে অবতরণ করে। হেলিকপ্টার থেকে নামার পর জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন ও গোপীনাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষে তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। সেখানে তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, আগামী এক মাসের ভেতর আলুর দাম কিছুটা বাড়তে পারে। আমরা আলু রপ্তানীতে প্রণোদনা দিচ্ছি এবং রপ্তানিতে সহযোগিতা করছি। চাহিদা তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে।
গোপীনাথপুর থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে বগুড়ার দুঁপচাচিয়া উপজেলার মর্তুজাপুর গ্রামে গিয়ে উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন জুম্মার নামাজ আদায়ের পর তার শ্বশুর মরহুম আব্দুর রাজ্জাক আকন্দের কবর জিয়ারত করেন।
বাণিজ্য উপদেষ্টাককে ও হেলিকপ্টার দেখতে উৎসুক লোকজনের ভিড়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসছেন এমন খবর গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জানাজানি হয়।
সরকারি সফরসূচি অনুযায়ী, বাণিজ্য উপদেষ্টার হেলিকপ্টার শুক্রবার সকাল ১১ টায় গোপীনাথপুর উচ্চবিদ্যালয় মাঠে অবতরণ করে। সকাল থেকে প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত হন। সকাল ১০টার আগেই গণমাধ্যম কর্মীরাও গোপীনাথপুর উচ্চবিদ্যালয় মাঠে আসেন। তখন থেকেই উৎসুক জনতা গোপীনাথপুর উচ্চবিদ্যালয়ের দুটি ফটকে বাণিজ্য উপদেষ্টা ও হেলিকপ্টার দেখতে ভিড় করছিলেন। তবে দেড় ঘন্টা বিলম্বে দুপুর পৌঁনে একটার দিকে উপদেষ্টাকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি উচ্চবিদ্যালয় মাঠে অবতরণ করে।
গোপীনাথপুর এলাকার আবু রায়হান তার দুই বছরের নাতিকে কাঁধে নিয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টাকে ও হেলিকপ্টার দেখতে আসেন। তিনি বলেন, আমার নাতি হেলিকপ্টার দেখার বয়না ধরেছে। নাতিকে কাঁধে নিয়ে হেলিকপ্টার দেখতে এসেছি। বাণিজ্য উপদেষ্টা গোপীনাথপুরে এসেছেন। গোপীনাথপুরের বাসিন্দা হিসেবে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি। আগে কখনও সরকারের কোনা মন্ত্রী গোপীনাথপুরের এসেছিল কি না তা জানি না।
মন্তব্য