বীর মুক্তিযোদ্ধা হুমায়ূন কবীরের প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট। অক্সিজেন লাগবে। করোনার এই সময়ে অক্সিজেন পাওয়া কঠিন।
তবে মুক্তিযোদ্ধার ছেলে শুনতে পারেন এক বিশেষ উদ্যোগ ‘জয় বাংলা অক্সিজেন সেবার’ কথা। সেখানে ফোন দিতেই ঘরেই পৌঁছে গেল সিলিন্ডার।
ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডের বাসায় অক্সিজেন আসার পর অবাক এই মুক্তিযোদ্ধা।
সিলিন্ডার নিয়ে যাওয়া স্বেচ্ছাসেবক তানভীর আলম চৌধুরীকে সামনে রেখে ছেলের কাছে এই মুক্তিযোদ্ধা প্রশ্ন রাখেন, দাম হিসেবে কত টাকা দিতে হবে।
তবে তানভীর বলেন, ‘আংকেল, ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে এটি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে দেয়া হচ্ছে।’
মুক্তিযোদ্ধা হুমায়ুন কবীর তাকে বলেন, ‘বাবা, পাকিস্তান আমলে আমিও ছাত্রলীগ করেছি। শেষ বয়সে এসে আমার প্রাণের সংগঠনের কাছ থেকে এমন কার্যক্রম আর উপকার পেয়ে খুব ভালো লাগছে।’
করোনাকালে অক্সিজেন লাগতে পারে যখন তখন। জয় বাংলা অক্সিজেন সেবার স্বেচ্ছাসেবকদের তাই আয়েশের সুযোগ নেই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার শারমীন জাহান বুধবার রাতে নিজের ফেসবুকে লিখেন, ‘জরুরি একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার প্রয়োজন। কোনো সহৃদয় ব্যক্তির সহযোগিতা চাচ্ছি।’
রাত দুইটায় তার বাসাতেও পৌঁছে দেয়া হয় বিনামূল্যের অক্সিজেন সিলিন্ডার।
গত বছরের ২৫ জুন এই সেবা কার্যক্রম শুরু করেন ছাত্রলীগের তিন নেতা। তখন থেকে এভাবেই রাতদিন করোনায় আক্রান্ত রোগীদের অক্সিজেন সেবা দিয়ে আসছেন তারা। বর্তমানে ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, ময়মনসিংহে এই সেবা চলছে৷
গত বছরের জুন থেকে আজ শনিবার পর্যন্ত পাঁচ হাজার রোগীকে বিনামূল্যে এই অক্সিজেন সরবরাহ করেছেন ছাত্রলীগের নেতারা।
কেবল অক্সিজেনের জন্য কারও কাছে টাকা নেন না তা নয়, কেউ আর্থিক সহায়তা করতে চাইলেও কারও কাছ থেকে নগদে অর্থ নেয়া হয় না। সহায়তা করতে আগ্রহীদেরকে অক্সিজেন কিনে দিতে বলেন ছাত্রলীগ নেতারা।
তিন ছাত্রলীগ নেতা হলেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাদ বিন কাদের চৌধুরী, উপ-বিজ্ঞানবিষয়ক সম্পাদক সবুর খান কলিন্স এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম সবুজ।
তারা ‘অক্সিজেন ফেরিওয়ালা’ হিসেবেও পরিচিতি পেয়েছেন।
কেন শুরু এই উদ্যোগ?
সাদ বিন কাদের তাদের এই সেবা কার্যক্রম শুরুর প্রেক্ষাপট জানান নিউজবাংলাকে।
তিনি বলেন, ‘গত বছর মার্চ মাসে করোনা শুরু হয়। জুন, জুলাইয়ে প্রকট আকার ধারণ করলে বাজার থেকে অক্সিজেন সিলিন্ডার উধাও হয়ে যায়। পত্রিকার মাধ্যমে আমরা জানতে পারি, এক শ্রেণির মানুষ অক্সিজেনের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বিভিন্ন হাসপাতালে ২০ মিনিটের অক্সিজেন সেবার দাম ৬০ থেকে ৮০ হাজার টাকা করে নিচ্ছে। তখনই মূলত আমরা এই সেবা কার্যক্রম শুরু করার চিন্তা করি।’
তিনি বলেন, ‘প্রথম দিন ১২টা অক্সিজেন সিলিন্ডার দিয়ে ঢাকাতে আমাদের সেবা কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে আমাদের ৯০টি সিলিন্ডার আছে। সারা বাংলাদেশে ১৪০ জনের বেশি স্বেচ্ছাসেবক রয়েছে। এদের প্রত্যেককে আমরা প্রশিক্ষণ দিয়েছি কীভাবে অক্সিজেন চালাতে হয়।
এই সেবা কার্যক্রমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছাড়াও বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীও স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেন বলে জানান সাদ।
শুরুর ১২টি অক্সিজেন সিলিন্ডারের ছয়টি নিজেদের টাকা দিয়ে কেনেন তিন ছাত্রলীগ নেতা। বাকি ছয়টি এক ‘বড় ভাই’ উপহার দেন।
শুরুর দিকে প্রত্যেকটি সিলিন্ডারের দাম ছিল ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা৷ পরে এগুলোর দাম কমে।
সাদ বলেন, ‘সংকট বাড়লে রিফিল সেন্টারগুলোও সংকট তৈরি করে৷ ফলে প্রতিটি সিলিন্ডার রিফিল করতে ৩০০ টাকা থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্তও আমাদের খরচ হয়েছে।’
যেভাবে জোগাড় হয় অর্থ
এই টাকাটা কীভাবে যোগাড় হয় -জানতে চাইলে ছাত্রলীগের এই নেতা বলেন, ‘আমরা কারও কাছ থেকে সরাসরি টাকা নেয়া নিরুৎসাহিত করি। তবে কেউ রিফিল কস্ট (খরচ) দিতে চাইলে আমরা তাদের রিফিল সেন্টারের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেই। তারা সেখানেই মূল্যটা পরিশোধ করেন।
‘মাঝে মাঝে রোগীরা সিলিন্ডারগুলো ফেরত পাঠানোর সময় রিফিল করে দেয়। এছাড়া আমাদের এ কাজে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ এগিয়ে আসে। এসব আমরা প্রতিমাসে ফেইসবুক লাইভে হিসাব দেই। তারপরও কোনো সময় কোথাও আটকে গেলে ছাত্রলীগ থেকে আমাদের সর্বোচ্চ সাহায্য করা হয়।’
সাদ বিন কাদের বলেন, ‘শুরুর দিকে আমাদের জন্য কাজটি সহজ ছিল না। আমরা যখন শুরু করি তখন মানুষের মাঝে বিরাজ করছিল করোনার মারাত্মক ভীতি। কোনো বাড়িতে অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে গেলে আশপাশের মানুষের হাজারো প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হতো। এমনও হয়েছে অক্সিজেন নিয়ে যাওয়া হয়েছে, ছেলে সামনে আসেনি। তার বাবাকে আমরাই অক্সিজেন সেট করে দিয়ে এসেছি।’
বেশি ফোন রাতে, তাই ঘুম শুরু সকালে
অক্সিজেন সরবরাহ শুরুর পর থেকে ঘুমের রুটিন পাল্টে গেছে স্বেচ্ছাসেবকদের।
সাদ বলেন, ‘রাতের একটা নির্দিষ্ট সময়ে যখন অক্সিজেনের দোকানগুলো বন্ধ হয়ে যায় তখনই মূলত আমাদের কাছে বেশি ফোন আসে। আর সেজন্য আমরা অনেকে সকাল হলে তারপর ঘুমাতে যাই, আর বাকিরা তখন সজাগ থাকে৷ এভাবে প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টা আমাদের এই সেবা চলছে।’
গভীর রাতে অক্সিজেন সেবা পেয়ে ফেসবুকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন ঢাকার তানভীর রহমান। তিনি লেখেন, ‘গত রাতে কিছুক্ষণের জন্য হঠাৎ করেই মনে হচ্ছিল মৃত্যুকে আলিঙ্গন করছি। হঠাৎ প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। অক্সিজেন নেয়াটা জরুরি হয়ে পরে। ফোন দেই জয়বাংলা অক্সিজেন সার্ভিসের সাদ বিন কাদের ভাইকে।
‘কিন্তু কোনো সিলিন্ডার ফাঁকা ছিল না, অনেকক্ষণ চেষ্টার পর আমার বাসায় সিলিন্ডারটি পৌঁছে দেয়া হয়। অক্সিজেন নেয়ার পর আমি এখন স্বাভাবিক।’
কখনও অক্সিজেন সংকট হয়েছে কি না জানতে চাইলে সাদ বলেন, ‘শুরুর পর থেকে এ বছরের এপ্রিল মাসের আগ পর্যন্ত শুধু এক রাতের জন্য আমাদের অক্সিজেন সংকটে পড়েছে। তবে পরের দিন আমরা সেটি রিকাভার করে ফেলি।
‘তবে এই এপ্রিল থেকে আমাদের প্রচুর সংকট৷ যেভাবে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে সে অনুপাতে আমরা পেরে উঠছি না। তবে খুব জরুরি হলে কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে আমরা অক্সিজেন ভাড়া নিয়ে রোগীকে সেবা দেই। আর আমরাই টাকাটা পরিশোধ করি।’
করোনারা দ্বিতীয় ঢেউয়ে বেড়েছে চাহিদা
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা যখন বেড়ে চলেছে, তখন অক্সিজেনের চাহিদাও তুঙ্গে।
সাদ বলেন, ‘শুক্রবার আমরা ১৭ জনকে সেবা দিয়েছি। আজ ভোর থেকে বিকাল পর্যন্ত ১১টা কল পেয়েছি। কিন্তু আমরা দিতে পারছি না। কারণ, আমাদের সব সিলিন্ডার বিভিন্ন রোগীদের কাছে৷ তাদের কাছ থেকে নিয়ে আমরা বাকিদের কাছে পৌঁছাব।
‘এমনও হয়েছে, অ্যাম্বুলেন্সে অক্সিজেন শেষ হয়ে গিয়েছে, আমরা সেখানেও আমাদের সেবা পৌঁছিয়ে দিয়েছি৷’
সেবার নামে জয় বাংলা কেন?
অক্সিজেন সেবার এই নাম রাখার কারণ জানতে চাইলে সাদ বলেন, “মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ‘জয় বাংলা’ সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছে৷ ‘জয় বাংলা’ আমাদের শক্তি৷ ‘জয় বাংলা’ মানে মুক্তি। এই সংকট থেকে মুক্তির জন্য আমরা ‘জয় বাংলা’ নামটা ব্যবহার করেছি।”
আরও পড়ুন:র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি), অতিরিক্ত আইজিপি এ কে এম শহিদুর রহমান বলেছেন, মব ভায়োলেন্স বা মব সন্ত্রাস করে এ দেশের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত করা যাবে না। অপরাধী যেই হোক বা যে দলেরই হোক, আমরা তাদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করব।
শনিবার (১২ জুলাই) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের সামনে ঘটে যাওয়া ব্যবসায়ী হত্যাকাণ্ডে ব্যবস্থা গ্রহণের অগ্রগতিসহ আরও কয়েকটি ঘটনায় অপরাধীদের গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে প্রেস ব্রিফিং করেন র্যাবের ডিজি। ব্রিফিংকালে তিনি এসব কথা বলেন।
এ কে এম শহিদুর রহমান বলেন, ‘র্যাব এবং দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেকোনো ধরনের অপরাধ সংঘটনের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারের বিষয়ে তৎপর রয়েছে। দেশে বিগত কয়েক মাসে ঘটে যাওয়া অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের র্যাব গ্রেপ্তার করেছে। তাদের যেন শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়, সে ব্যাপারে আমরা দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছি। মব ভায়োলেন্স সৃষ্টির অপরাধে এ পর্যন্ত প্রায় ২০ জন অপরাধীকে র্যাব আইনের আওতায় নিয়ে এসেছে।’
‘গত ২ জুলাই লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম থানায় সন্ত্রাসী কর্তৃক মব সৃষ্টির মাধ্যমে পুলিশ সদস্যদের আহত করে আসামিদের ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আমরা ৩ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছি। এ ছাড়াও গত ৩ জুলাই কুমিল্লার মুরাদনগরে ট্রিপল মার্ডারের ঘটনায় একই পরিবারের মা ও দুই সন্তানের ওপর মব ভায়োলেন্সের অযাচিত ঘটনায় ৬ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
সলিমুল্লাহ মেডিকেলের সামনে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন ও জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে র্যাব কার্যক্রম শুরু করে। পরবর্তীতে ঘটনার সঙ্গে জড়িত এজাহারনামীয় ৪ নম্বর আসামি আলমগীর (২৮) এবং ৫ নম্বর আসামি মনির ওরফে লম্বা মনিরকে (৩২) আমরা গতকাল (শুক্রবার) রাজধানীর কেরানীগঞ্জ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি।’
‘এ ঘটনায় আমরা ছায়া তদন্ত করছি, আর পুরো বিষয়টি দেখছে ডিএমপির তদন্ত বিভাগ।’
র্যাবের এই অভিযান অব্যাহত থাকবে এবং অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান তিনি।
রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ভাঙারি পণ্যের ব্যবসায়ী লাল চাঁদ সোহাগকে (৩৯) নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনাকে খুবই দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
শনিবার (১২ জুলাই) রাজধানীর পুরান ঢাকার মিল ব্যারাকে পুলিশের বিশেষ কল্যাণ সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ব্যবসায়ী হত্যা ও মব সহিংসতা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র বলেন, ‘ঢাকায় যে হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছে, সেটা খুবই দুঃখজনক। এ ঘটনায় এরই মধ্যে পাঁচজনকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। গতকালও র্যাব দুজন ও ডিএমপি দুজনকে ধরেছে। পরে আরও একজনকে ধরা হয়েছে।’
বাকিদেরও আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) সতর্ক অবস্থায় আছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘আমরা মোটামুটি অসহিষ্ণু হয়ে পড়েছি। ছোটখাট ঘটনায়ও সংঘাতে জড়িয়ে পড়ি। এই জিনিসটা বন্ধ করতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। এর আগে চাঁদপুরে, খুলনা ও চট্টগ্রামের ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। যেগুলো হচ্ছে, আমরা সঙ্গে সঙ্গে পদক্ষেপ নিচ্ছি।’
পুলিশের মিল ব্যারাক এলাকা পরিদর্শন নিয়ে তিনি বলেন, ‘এখানে পরিদর্শনের উদ্দেশ্য হচ্ছে তাদের সঙ্গে একটু কথা বলা। তাদের থাকা ও খাবারের মান দেখা। আগামী নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে আয়োজনে তাদের একটি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করব এখানে।’
আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে আমরা নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে চাই বলেও এ সময় মন্তব্য করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কবে হবে, সেটা আমরা জানি না। সেটা জানাবে নির্বাচন কমিশন।’
অভিযানে গৌরবময় অবদান রাখায় প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের টাগবোট ‘বিসিজিটি প্রমত্ত’ এবং এর ক্রুদের ‘প্রশংসাপত্র’ দিয়েছে আন্তর্জাতিক মেরিটাইম অর্গানাইজেশন (আইএমও)।
শনিবার সকালে কোস্টগার্ড সদর দপ্তরের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার হারুন-অর-রশীদ বাসস’কে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে অবস্থানকালে গত বছর ৫ অক্টোবর রাতে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) মালিকানাধীন তেলবাহী জাহাজ ‘এমটি বাংলার সৌরভ’-এ ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। দ্রুত ও কার্যকর অগ্নিনির্বাপণ এবং সামুদ্রিক পরিবেশগত বিপর্যয় রোধে ‘বিসিজিটি প্রমত্ত’ অসাধারণ ভূমিকা রাখে।
ঘটনার সময় ট্যাংকারটিতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে এবং আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, যা সামুদ্রিক জীববৈচিত্র ও পরিবেশের জন্য বড় ধরনের হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। তৎক্ষণাৎ জরুরি উদ্ধার অভিযান শুরু করে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড।
‘বিসিজিটি প্রমত্ত’ এবং এর সাহসী নাবিকরা ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সফল অভিযান পরিচালনা করেন। সেই অভিযানে ৪৮ জন নাবিককে উদ্ধার করা হয়। পাশাপাশি তেল ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে কার্যকর ব্যারিয়ার স্থাপন ও বর্জ্য সংগ্রহের মাধ্যমে গভীর সমুদ্রে দূষণরোধ করা হয়।
এই দৃষ্টান্তমূলক ও সাহসিকতাপূর্ণ অভিযানের জন্য আন্তর্জাতিক মেরিটাইম অর্গানাইজেশন (আইএমও) ‘বিসিজিটি প্রমত্ত’ এবং এর ক্রুদের ‘লেটার অব কমান্ডেশন' দিয়েছে।
আইএমও এই অভিযানে প্রদর্শিত পেশাদারিত্ব, দক্ষতা, পরিবেশ রক্ষায় ভূমিকা এবং আন্তর্জাতিক নৌ নিরাপত্তা নীতিমালা অনুসরণের বিষয়গুলোকে গুরুত্বের সঙ্গে মূল্যায়ন করেছে।
বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আইএমও’র এই স্বীকৃতি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও দেশের জন্য বড় অর্জন। এটি শুধু কোস্টগার্ড নয়, পুরো দেশের জন্যই গর্বের। এই স্বীকৃতি প্রমাণ করে, কোস্টগার্ড একটি আধুনিক ও দক্ষ বাহিনী হিসেবে যেকোন দুর্যোগে সাহসিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম।
লেফটেন্যান্ট কমান্ডার হারুন-অর-রশীদ আরো বলেন, ‘বাংলাদেশ কোস্টগার্ড সর্বদা সমুদ্রসীমায় নিরাপত্তা বিধান, বিপদগ্রস্তদের উদ্ধার, সমুদ্র দূষণ প্রতিরোধ ও পরিবেশ সুরক্ষার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ভবিষ্যতেও বাহিনী দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী দায়িত্ব পালনে বদ্ধপরিকর থাকবে।
টানা চার দিনের মুষলধারে বৃষ্টিপাতের পর টানা দুদিন নোয়াখালীতে রোদ্রৌউজ্জ্বল আবহাওয়া বিরাজ করছে। এতে অধিকাংশ উপজেলায় জলাবদ্ধতা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে বেগমগঞ্জ উপজেলার হাজীপুর, দুর্গাপুর ও লক্ষীনারায়ণপুর গ্রামসহ কয়েকটি গ্রামে পানি বেড়েছে। স্থানীয়দের ধারণা ফেনীর পানি ঢুকে বৃষ্টি না থাকলে এ অঞ্চলে পানি বেড়েছে।
শনিবার (১১ জুলাই) সকালে জেলার সদর, সুবর্ণচর, কোম্পানীগঞ্জ ও কবিরহাট উপজেলার বাসিন্দারা জানায় তাদের এলাকায় পানি নামছে ধীর গতিতে। এজন্য বেশিরভাগ এলাকায় এখনো বন্যার পানি জমে থাকায় জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে জেলার ছয়টি উপজেলার ৫৭টি ইউনিয়ন বন্যাকবলিত হয়েছে। এতে ৪৬ হাজার ৭০টি পরিবারের প্রায় ১ লাখ ৯২ হাজার ৫০৩ মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। কবিরহাট ও সুবর্ণচর উপজেলায় আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪৫টি বসতঘর। সুবর্ণচরে একটি বসতঘর সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
স্থানীয়দের অভিযোগ,পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থার অভাব এবং পানি নিষ্কাশনের নালা ও জলাশয় গুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় শহরবাসীর এ দুর্ভোগ। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাকে দায়ী করছেন অনেকে। হালকা বৃষ্টিতেই নোয়াখালী পৌরসভা এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এদিকে মাইজদীর লক্ষ্মীনারায়ণপুর, সেন্ট্রাল রোড, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, জেলা শিল্পকলা একাডেমিসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় এখনো রাস্তাঘাট পানিতে ডুবে রয়েছে। আশপাশের অনেক বাসাবাড়িতেও পানি জমে রয়েছে। টানা বৃষ্টির বিরতিতে মানুষ কিছুটা স্বস্তি পেলেও জলাবদ্ধতা ও বন্যা পরিস্থিতির তেমন কোনো উন্নতি হয়নি।
জেলা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় নোয়াখালীতে তেমন কোনো বৃষ্টিপাত হয়নি। আপাতত ভারী বৃষ্টিরও সম্ভাবনা নেই। তবে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হতে পারে।
জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা মো. মাসুদুর রহমান বলেন, পাঁচটি উপজেলায় ৪৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে ১ হাজার ৮৫০ জন মানুষ এবং ১৭১টি গবাদি পশু। দুর্গতদের চিকিৎসায় ৫১টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে, যার মধ্যে ২৯টি কাজ শুরু করেছে। বন্যার ক্ষয়ক্ষতির প্রতিবেদন ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ বলেন, পানি নিষ্কাশনে সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হচ্ছে। বৃষ্টি না হলে জলাবদ্ধতা পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি হবে।
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, মিটফোর্ডের নারকীয় হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচারে সরকার বদ্ধপরিকর। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আইনের অধীনে দ্রুততম সময়ে বিচার শেষ করা হবে।
উপদেষ্টা শনিবার তার ভেরিফায়েড ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, মিটফোর্ডের নারকীয় হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচারে সরকার বদ্ধপরিকর। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ৫ জনকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত শুরু করেছে।
তিনি আরো বলেন, এই পাশবিক হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। দায়ীদের বিরুদ্ধে মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হবে এবং ধারা ১০-এর অধীনে দ্রুততম সময়ে বিচার নিশ্চিত করা হবে।
গত বুধবার রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় ভাঙারি পণ্যের ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে (৩৯)। হত্যার আগে তাকে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে ও ইট-পাথরের আঘাতে মাথা ও শরীর থেঁতলে দেওয়া হয়।
এই ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ, মামলার এজাহার, নিহতের স্বজন ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা এবং তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে হত্যাকাণ্ডের এমন বর্ণনা উঠে এসেছে।
মিটফোর্ড (স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ) হাসপাতালের সামনের ব্যস্ত সড়কে প্রকাশ্যে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। তদন্তকারী কর্মকর্তারা ও স্থানীয় সূত্র জানায়, হত্যাকাণ্ডের মূল কারণ চাঁদাবাজি। নিহত লাল চাঁদ একসময় যুবদলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।
এদিকে, অভিযুক্ত নেতা-কর্মীদের দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করেছে বিএনপি। পাশাপাশি ঘটনার নিন্দা জানিয়ে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে। বিএনপি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির কথা পুনর্ব্যক্ত করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুরে সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে আসকর আলী (২৪) নামে এক বাংলাদেশি যুবক নিহত হয়েছেন।
শনিবার (১২ জুলাই) ভোরে উপজেলার মিনাপুর সীমান্তের ৩৫৩ নম্বর প্রধান পিলারের কাছে ভারতের অভ্যন্তরে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত আসকর আলী হরিপুর উপজেলার জীবনপুর গ্রামের কানুরার ছেলে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
স্থানীয় সূত্র ও বিজিবি জানায়, শনিবার ভোর আনুমানিক চারটার দিকে আসকর আলীসহ কয়েকজন মিনাপুর সীমান্তের ৩৫৩ নম্বর প্রধান পিলার সংলগ্ন এলাকা দিয়ে ভারতের অভ্যন্তরে কাঁটাতারের বেড়ার কাছে যান। এ সময় ভারতের কিষাণগঞ্জ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এতে আসকর আলী ঘটনাস্থলেই গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। তার মরদেহ ভারতের প্রায় ২০০ গজ অভ্যন্তরে পড়ে আছে বলে জানা গেছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সীমান্তে অতিরিক্ত বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। অপরদিকে, ভারতের সীমান্তেও অতিরিক্ত বিএসএফ সদস্য মোতায়েন রয়েছে বলে জানা গেছে।
দিনাজপুর ৪২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা ঘটনাটি সম্পর্কে অবগত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিএসএফের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা শুরু করেছে। নিহত যুবকের লাশ ফেরত আনার জন্য বিএসএফকে পতাকা বৈঠকে বসার আহ্বান জানানো হয়েছে।
৪২ বিজিবি জানিয়েছে, "আমরা বিএসএফের সঙ্গে যোগাযোগ করে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে লাশটি ফেরত আনার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)-এর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক কার্যালয়ের আঞ্চলিক পরিচালক সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে অনির্দিষ্টকালের ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে পুতুলের বিরুদ্ধে প্রতারণা, জালিয়াতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের গুরুতর অভিযোগের তদন্ত চলাকালীন শুক্রবার এ সিদ্ধান্ত নেয় সংস্থাটি।
ডব্লিউএইচও’র এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে বাংলাদেশ সরকার বলেছে, আমরা এটিকে জবাবদিহিতার পথে গুরুত্বপূর্ণ প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে দেখি।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম শনিবার তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে সরকারের এই বক্তব্য তুলে ধরেন।
সায়মা ওয়াজেদকে পদ থেকে অপসারণ প্রসঙ্গে তিনি লেখেন, আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এর একটি স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন, যেখানে সায়মা ওয়াজেদকে তার পদ থেকে অপসারণ করা হবে, তার সকল সুযোগ-সুবিধা বাতিল করা হবে এবং এই মর্যাদাপূর্ণ দায়িত্বের সততা ও জাতিসংঘ ব্যবস্থার বিশ্বাসযোগ্যতা পুনরুদ্ধার করা হবে।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের জনগণ ও বিশ্ববাসী স্বচ্ছতা, সততা ও ন্যায়বিচারের আবির্ভাবে আনন্দিত।
মন্তব্য