করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এক সপ্তাহের লকডাউন শুরুর চতুর্থ দিন বৃহস্পতিবার সকালে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস একাডেমির ৭১তম বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ সমাপনী অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সে দেয়া বক্তব্যে তিনি এমন ইঙ্গিত দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনাভাইরাস এখন একটা মহামারি আকারে দেখা দিয়েছে এবং আমরাও সেই ধাক্কা দেখতে পাচ্ছি। আমাদের তাৎক্ষণিক কিছু ব্যবস্থা আমরা নিলেও হয়তো ভবিষ্যতে আরও কঠোর পদক্ষেপ আমাদের নিতে হবে মানুষকে বাঁচানোর জন্য। সেটা আমরা নেব।
‘আপনারাও এ ব্যাপারে সতর্ক থাকবেন। নিজেকে সুরক্ষিত রাখবেন; স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন। জনগণও যেন সুরক্ষিত থাকে সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি দেবেন। আমি সমগ্র দেশবাসীকে বলব প্রত্যেকে আপনারা স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধিটা মেনে যাতে চলেন সে ব্যবস্থাটা নেবেন।’
তিনি বলেন, ‘মানুষের জীবন-জীবিকা চলতে হবে। মানুষকে আমরা কষ্ট দিতে পারি না। সেখানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা একান্তভাবে অপরিহার্য। সেদিকে সকলে আন্তরিকতার সাথে কাজ করবেন।’
এ সময় সবাইকে মাস্ক পড়ার তাগিদও দেন সরকার প্রধান।
‘মানুষ মানুষই’
প্রশাসনে দায়িত্ব পালনের সময় সব মানুষের প্রতি একই আচরণ করতে জনপ্রশাসনের নবীন কর্মকর্তাদের তাগিদ দিয়েছেন সরকারপ্রধান।
তিনি বলেন, ‘সিভিল সার্ভিসে যারা কাজ করেন তাদের এটাই মনে রাখতে হবে যে দেশের মানুষের জন্যই আপনাদের কাজ করতে হবে।
‘আমাদের মহান মুক্তিসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে দল-মত নির্বিশেষে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেছে। ধর্ম-বর্ণ, ধনী-দরিদ্র কোনো ভেদাভেদ না। মানুষ মানুষই।
‘মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখে তাদের সার্বিক উন্নয়নের কথা চিন্তা করে তাদেরকে সমান অধিকার দিয়ে কাজ করতে হবে এবং সেই মানসিকতা নিয়েই জনগণের সেবা করবেন, এটাই আমি চাই।’
তিনি বলেন, ‘কারণ দরিদ্র কেউ তো ইচ্ছা করে হয় না। তার দরিদ্র ঘরে জন্মালেই তাকে আমরা অপবাদ দিয়ে দিতে পারি না বা কেউ প্রতিবন্ধী হলেই তাকে অপবাদ দিতে পারি না। কিন্তু তাদেরকে সাহায্য করা দরকার যেন তারাও সমাজে উঠে দাঁড়াতে পারে, মাথা উঁচু করে চলতে পারে। সেইভাবেই আমরা কাজ করতে চাই।
‘বাংলাদেশের জনগণই বাংলাদেশের মালিক। সে একেবারে হতদরিদ্র হোক, একজন কৃষক-শ্রমিক হোক বা একজন ভিখারি হোক। সেও কিন্তু এ দেশের মালিক। আমাদের সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদেও কিন্তু এ কথাই বলা আছে যে, প্রজাতন্ত্রের মালিক কিন্তু জনগণ। আপনারা তাদের সেবা দেবেন, এটাই আমি চাই।’
‘উন্নয়নের অর্জন সরকারের একার নয়’
সরকারে এক যুগে দেশের যে উন্নয়ন হয়েছে তার কৃতিত্ব দেশের সব মানুষকে দিতে চান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘আমাদের যে অর্জন আমরা এ পর্যন্ত করেছি এটা আমি বলব না যে এটা আমার একার বা আমার দলের বা আমার সরকারের।
‘আমি সবাইকে সাধুবাদ জানাই যে আমাদের এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মাঠ পর্যায়ের সকলে প্রশাসন বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী প্রত্যকে আন্তরিকতার সাথে কাজ করেছে। হয়তো সব নাম আমি বলতে পারছি না। কিন্তু প্রত্যেকে যাকে যেখানে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে প্রত্যেকে আন্তরিকতার সাথে কাজ করেছে বলেই মাত্র ১২ বছরের মধ্যে বাংলাদেশে আমরা বিরাট পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘২০০৮-এর নির্বাচনে জয়ী হয়ে ২০০৯-এ যখন আমরা সরকার গঠন করি। আমরা ২০০৯ থেকে এ পর্যন্ত একটানা সরকারে আছি বলেই দেশের উন্নয়নের কাজগুলো ত্বরান্বিত করতে সক্ষম হয়েছি।
‘করোনাভাইরাস নামে একটি ভাইরাস আজকে সারা বিশ্বকে তোলপাড় করে দিয়েছে। সারা বিশ্বের অর্থনীতি স্থবির হয়ে গেছে। সমস্ত ব্যবসা-বাণিজ্য সবকিছুতেই একটা বাধা আসছে। তারপরেও আমাদের প্রচেষ্টা রয়েছে আমরা এর ভেতরেও আমরা বাজেট প্রণয়ন করে যাচ্ছি।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘পরিকল্পনাগুলি হাতে নিচ্ছি এবং হয়তো কিছুদিনের জন্য সবকিছু থমকে গিয়েছিল। তারপরেও আমরা পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রকল্পের কাজ অব্যাহত রেখেছি। কারণ আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়তে চাই।
‘আমি জানি, এখন আমার যে বয়স তাতে ২০৪১ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্রপরিচালনা করা বা বেঁচে থাকার কোনো সম্ভাবনা নেই। কিন্তু আজকে যারা নবীন অফিসার, যারা প্রশিক্ষণ নিয়ে স্ব স্ব দায়িত্ব পালনে কাজে যাবেন, আপনাদের ওপরেই কিন্তু এ দায়িত্ব পড়বে। আমি বলব, একচল্লিশের উন্নত বাংলাদেশ গড়বার সৈনিক হচ্ছে আজকের এ নতুন প্রজন্ম, যারা রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে যোগ দেবেন।’
তিনি বলেন, ‘এ কথাটা সবসময় মনে রাখতে হবে। আত্মবিশ্বাস নিয়ে সততার সাথে, নিষ্ঠার সাথে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে হবে। সবসময় মনে রাখতে হবে বাংলাদশে আমাদের মাতৃভুমি, আমরা বাঙালি, আমরা যুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করেছি।
‘আমরা বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে সম্মানের সাথে চলব। পঁচাত্তরের পর সে সম্মান আমরা হারিয়েছিলাম। কিন্তু ২০০৯ এর পর থেকে এ পর্যন্ত নিরলস পরিশ্রম করে সে সম্মান আমরা আবার ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। ভবিষ্যতে যেন আর কখনো এ সম্মান নষ্ট না হয় সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মনে করি, এখনকার নতুন প্রজন্ম এত বেশি প্রযুক্তির বিকাশের কারণে আজকে তাদের চিন্তা-ভাবনা, শিক্ষা অনেক বেশি অগ্রগামী। কাজেই এগুলি কাজে লাগিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। সবসময় দেশের মানুষের জন্য যে একটা কর্তব্যবোধ সেটা অবশ্যই থাকতে হবে।’
‘২১টা বছর সময় নষ্ট হয়েছে’
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে অবৈধ ক্ষমতা দখল করে দেশকে আদর্শ বিচ্যুত করা হয়েছিল বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘একটা যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের দায়িত্ব তিনি (বঙ্গবন্ধু) হাতে নিয়েছিলেন। বলতে গেলে একেবারে ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব যাত্রা শুরু করেন।
‘হাতে সময় পেয়েছিলেন মাত্র সাড়ে ৩ বছর। একটি জাতির জন্য এটি অত্যন্ত স্বল্প একটি সময়। কিন্তু এই সাড়ে তিন বছর সময়ে তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে গড়ে তুলেছিলেন। একটি প্রদেশকে রাষ্ট্রীয় কাঠামোয় গড়ে তোলার সব আইন, নীতি, বিধি সব কিছু করে দিয়েছিলেন। মাত্র ৯ মাসের মধ্যে আমাদের একটি সংবিধান উপহার দিয়েছিলেন।’
তিনি বলেন, ‘আমরা যখন রাষ্ট্র রাষ্ট্রপরিচালনা করতে যাই তখন দেখি, এত অল্প সময়ের মধ্যে আমার মনে হয় পৃথিবীর কোনো দেশের কোনো নেতা এভাবে করতে পারেননি, যে একটা রাষ্ট্রীয় কাঠামোকে তিনি কীভাবে দাঁড় করিয়েছিলেন।
‘শুধু তাই না, অর্থনৈতিকভাবেও বাংলাদেশকে স্বাবলম্বী করার জন্য তিনি খেতে-খামারে, কল-কারখানায় উৎপাদন বৃদ্ধির…আহ্বান জানিয়েছিলেন।’
আরও পড়ুন:চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোস্তামি এলাকায় একটি বহুজাতিক কোম্পানির জুতার কারখানায় অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। ফায়ার সার্ভিসের বেশ কয়েকটি ইউনিটের প্রায় দুই ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে।
ফায়ার সার্ভিসের কন্ট্রোল রুম সূত্র জানায়, শুক্রবার বিকেল ৪টা ১০ মিনিটে কারখানাটিতে আগুন লাগে। খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে ফায়ার সার্ভিসের বেশ কয়েকটি ইউনিট। অবশেষে সন্ধ্যা ৬টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওসি সঞ্জয় কুমার সিনহা জানান, বায়েজিদ বোস্তামি এলাকায় টেক্সটাইল মোড়ের রংদা ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি কারখানায় জুতার সোল তৈরি করা হয়। এটি চীনের একটি বহুজাতিক কোম্পানির মালিকানাধীন। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একাধিক টিম আগুন নিয়ন্ত্রণে দ্রুত কাজ শুরু করে।
সোমালি জলদস্যুদের হাতে জিম্মি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ থাকা খাবার কমে আসছে। এ কারণে জলদস্যুরা বাইরে থেকে জাহাজে খাবার নিয়ে আসা শুরু করেছে। ফলে খাবার নিয়ে তেমন সমস্যা না হলেও বিশুদ্ধ পানির সমস্যা দেখা দিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে কেএসআরএম সূত্র জানিয়েছে, দস্যুদের সঙ্গে সমঝোতার বিষয়টিও এগিয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে ২৩ নাবিক ও জাহাজ উদ্ধারে করণীয় সবকিছুই করা হচ্ছে বলে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শাখাওয়াত হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘সাধারণত জাহাজে দুই ধরনের খাবার থাকে। এগুলো হচ্ছে, হিমায়িত খাবার ও শুকনো খাবার। যাত্রাপথের সময় অনুযায়ী জাহাজে খাবার মজুত রাখা হয়। তবে শুকনো খাবার অনেক দিনের জন্য মজুত থাকে।’
তিনি বলেন, ‘জাহাজ জিম্মি করলে জলদস্যুরা সাধারণত খাবার সরবরাহ করে। তবে সুপেয় পানি নিয়ে সমস্যা হয়। সেক্ষেত্রে রেশনিং করে পরিস্থিতি সামাল দিতে হয়।’
তিনি আরও জানান, জলদস্যুরা সম্প্রতি জাহাজের বাইরে থেকে খাবার আনছে- এরকম খবর তারা পেয়েছেন।
জাহাজের মালিক প্রতিষ্ঠান কেএসআরএম গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘খাবার এখনও শেষ হয়নি, তবে কমে আসছে। জলদস্যুরা তাদের নিজেদের জন্য বাইরে থেকে খাবার এনেছে বলে আমরা জেনেছি।’
তিনি বলেন, ‘আটক জাহাজ এবং জিম্মি ২৩ নাবিককে দ্রুত উদ্ধারে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে।
‘এমভি আবদুল্লাহকে জিম্মি করার সময় জাহাজটিতে নাবিকদের জন্য ২৫ দিনের খাবার ও ২০০ টন বিশুদ্ধ পানি ছিল। এই পানি দিয়ে এক মাস পর্যন্ত চালানো যাবে বলে তখন নাবিকরা জানিয়েছিলেন। তারা বলেছিলেন, তবে রেশনিং করলে অনেক দিন চালানো যাবে। পানি বাঁচাতে এখন শুধু রান্না ও খাবারের জন্য বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করছেন তারা।’
১২ মার্চ ভারত মহাসাগরে ২৩ জন বাংলাদেশি নাবিকসহ এমভি আবদুল্লাহকে জিম্মি করে সোমালি দস্যুরা। পরে তারা জাহাজটিকে সোমালিয়া উপকূলের কাছে নিয়ে যায়। চট্টগ্রামের কবির গ্রুপের মালিকানাধীন জাহাজটি বর্তমানে সোমালিয়ার গদভজিরান জেলার জিফল উপকূল থেকে দেড় নটিক্যাল মাইল দূরে নোঙর করে আছে।
প্রায় ১৩ বছর আগে ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর এমভি জাহান মণি নামের একই গ্রুপের মালিকানাধীন একটি জাহাজ জিম্মি করেছিল সোমালি জলদস্যুরা। জাহাজটি ১০০ দিন পর সব নাবিকসহ উদ্ধার করা হয়েছিল।
অপরদিকে, জলদস্যুদের কবল থেকে জিম্মি ২৩ নাবিককে উদ্ধার ও জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ ফেরত আনার বিষয়ে আলোচনা অনেকদূর এগিয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদও।
বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।
এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যোগাযোগের মধ্যে আছি। আমাদের উদ্দেশ্য হলো, নাবিকদের অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা। একইসঙ্গে জিম্মি জাহাজটি উদ্ধার করাও আমাদের উদ্দেশ্য। শুধু এতটুকু বলতে চাই, আমরা অনেক দূর এগিয়েছি।’
জাহাজে খাবার সংকটের বিষয়ে এক প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, ‘অতীতে যখন জাহাজ অপহরণ হয়েছে, কখনও খাবারের সংকট হয়নি। তিন বছর ছিল, তখনও হয়নি; ১০০ দিন ছিল, তখনও হয়নি। আশা করি, এক্ষেত্রেও হবে না।’
আরও পড়ুন:নীলফামারীতে জমির জন্য বাবার মরদেহ দাফন করতে বাধা দিয়েছেন ছেলে। বাবার কবরে শুয়ে কবর দিতে বাধা প্রদান করেন তিনি। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে দাফনকার্য সম্পন্ন হয়।
শুক্রবার নীলফামারী সদর উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের যাদুরহাট বাটুলটারিতে এ ঘটনা ঘটে।
শুক্রবার রাতে মারা যান ওই এলাকার বাসিন্দা মজিবুর রহমান। জমি রেজিস্ট্রির করার আগে বাবার মৃত্যু হওয়ায় ছেলে নওশাদ আলী মরদেহ দাফনে বাধা দেন ছেলে নওশাদ আলী।
স্থানীয়রা জানান, সদ্য প্রয়াত মুজিবুর রহমানের দুই স্ত্রী রয়েছেন। মৃত্যুর আগে দ্বিতীয় স্ত্রীকে ২ শতাংশ ও ছোট ছেলেকে ৫ শতাংশ জমি লিখে দেন তিনি। প্রথম স্ত্রীর তিন ছেলের মধ্যে ওয়াজেদ আলী, খয়রাত আলী ও নওশাদ আলীকে মৌখিকভাবে ৩ শতাংশ জমি প্রদান করেন বাবা মজিবুর রহমান। কিন্তু মৃত্যুর আগে প্রথম পক্ষের তিন ছেলেকে দেয়া জমি রেজিস্ট্রি করে না দেয়ায় বাবার মরদেহ দাফনে বাধা দেন নওশাদ। এক পর্যায়ে কবরে শুয়ে পড়েন তিনি।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে চাপড়া ইউনিয়নের পরিষদের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বার) মাহাবুল ইসলাম বলেন, ‘জমি লিখে না দেয়ায় বাবাকে কবর দিতে বাধা প্রদানের ঘটনাটি আসলেই দুঃখজনক। পুলিশের হস্তক্ষেপে পরে তার দাফন সম্পন্ন হয়েছে।’
রাঙামাটির সাজেক উপত্যকায় পণ্য পরিবহনের সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাহাড়ের খাদে পড়ে এক মাহেন্দ্র চালক নিহত হয়েছেন।
শুক্রবার দুপুরে সাজেকের কংলাক পাহাড়ে যাওয়ার সময় প্রাণ কোম্পানির পণ্যবাহী মাহেন্দ্রটি খাদে পড়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত ৩৫ বছর বয়সী চাঁন মিয়া দীঘিনালা উপজেলার উত্তর রশিক নগর এলাকার তৈয়ব আলীর ছেলে।
জানা যায়, গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারালে প্রাণ কোম্পানির ২ প্রতিনিধি লাফ দিয়ে নেমে গেলেও রক্ষা হয়নি চালকের। অন্তত ১৫০ ফুট পাহাড়ের নিচে পড়ে গাছের সঙ্গে আটকে যায় গাড়িটি। এতে মাথা ফেটে মগজ বের হয়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হন চাঁন মিয়া।
সাজেক থানার ওসি আবুল হাসান খান দুর্ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, আইনগত প্রক্রিয়া শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে হাজার হাজার মৃত জেলিফিশের পর এবার ভেসে এলো দুটি মৃত কচ্ছপ। এদের একটির ওজন প্রায় ৪০ কেজি, অন্যটির ৩৫ কেজি।
বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে কুয়াকাটার জিরো পয়েন্টের পশ্চিম দিকে কচ্ছপ দুটিকে দেখতে পান কুয়াকাটা ডলফিন রক্ষা কমিটির সদস্য কেএম বাচ্চু। পরবর্তীতে সেগুলোকে মাটিচাপা দেয়া হয় বলে নিশ্চিত করেন তিনি।
বাচ্চুর ধারণা, ডিম ছাড়তে কচ্ছপগুলো উপকুলে এসেছিল। তবে শক্ত কোনো কিছুর সঙ্গে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে এগুলো মারা গিয়েছে।
কচ্ছপ দুটির মৃত্যুর সঠিক কারণ উদঘাটনের জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে বলেও জানান কুয়াকাটা ডলফিন রক্ষা কমিটির এ সদস্য।
এ বিষয়ে ইকোফিশ-২ বাংলাদেশ প্রকল্পের সহযোগী গবেষক সাগরিকা স্মৃতি বলেন, ‘মূলত কদিন ধরে সমুদ্রে জেলিফিশের আধিক্য বেড়ে যাওয়ার কারণে কচ্ছপ দুটি তীরে আসতে পারে। কারণ এই কচ্ছপগুলো জেলিফিশ খেতে পছন্দ করে।’
তিনি জানান, যে দুটি কচ্ছপ এসেছে, এদের বৈজ্ঞানিক নাম লেপিডোসেলিস ওলিভেসিয়া (Lepidochelys Olivacea)। এরা সাধারণত ৫০ বছরের বেশি বেঁচে থাকে।
কুয়াকাটা ডলফিন রক্ষা কমিটির সদস্য আবুল হোসেন রাজু বলেন, ‘একটি কচ্ছপের লেজে আঘাতের চিহ্ন ছিল এবং সেখান থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। সম্ভবত, কোনো কিছুর সঙ্গে আটকে তাদের মৃত্যু হয়েছে।’
তিনি জানান, এর আগে ২০২৩ সালের মাঝামাঝি বেশকিছু কচ্ছপের দেখা মিলছিল এই সৈকতে। তবে ২০২৪ সালে এই প্রথম মৃত কচ্ছপ এসেছে কুয়াকাটায়। এসব সামুদ্রিক প্রাণীর মৃত্যু সমুদ্রের পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ বলে জানান রাজু।
কলাপাড়া উপজেলার বনবিভাগ মহিপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ নিউজবাংলাকে বলেন, খবর পেয়ে ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে দ্রুত চলে আসি। মৃত কচ্ছপ থেকে দূর্গন্ধ ছড়ানোর কারণে তাৎক্ষণিক সেগুলোকে মাটিচাপা দেয়ার ব্যবস্থা করেছি।’
প্রসঙ্গত, গত প্রায় এক মাসেরও বেশি সময় ধরে কুয়াকাটা সৈকতজুড়ে হাজার হাজার মৃত জেলিফিশের কারণে পর্যটকসহ জেলেদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। গত এক যুগের তুলনায় এ বছর অস্বাভাবিক হারে মৃত জেলিফিশ সৈকতে ভেসে আসছে।
কেন প্রতি বছর ঠিক এই সময়টাতেই সৈকতে মৃত জেলিফিশের আবির্ভাব ঘটে, সেটি নিয়ে বিভিন্ন দপ্তর গবেষণা করলেও আজ অবধি এর সদুত্তর মেলেনি।
আরও পড়ুন:ইতালি নেয়ার কথা বলে লিবিয়ায় আটকে রেখে অমানবিক নির্যাতন করে ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবির আলোচিত ঘটনায় ৭ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন ভুক্তভোগীর বাবা। মামলার পর মানবপাচার দলের প্রধান মুকুল ঠাকুরের মেয়ে-জামাতা ফরিদপুরের সালথা উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি এসএম শাকিল হোসাইনকে গ্রেপ্তার করেছে সালথা থানা পুলিশ।
গ্রেপ্তার হওয়া এসএম শাকিল হোসাইন উপজেলার আটঘর ইউনিয়নের বিভাগদী গ্রামের মৃত নওফেল মাতুব্বরের ছেলে। বর্তমানে তিনি সালথা উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। কয়েক মাস আগে তিনি বিয়ে করেন পার্শ্ববর্তী রামকান্তপুর ইউনিয়নের রামকান্তপুর গ্রামের মুকুল ঠাকুর নামক এক ব্যক্তির মেয়েকে।
শুক্রবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন সালথা থানার ওসি মোহাম্মাদ ফায়েজুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘মুক্তিপণের দাবিতে লিবিয়ায় ভিকটিম শাকিলকে আটকে রেখে নির্যাতন করা হচ্ছে। এ ঘটনায় শাকিলের বাবা টিটুল মিয়া প্রথমে মামলা করতে চাননি। অবশেষে বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) বিকেলে মানবপাচার দমন আইনে ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন তিনি।’
ওসি বলেন, ‘মামলার পর শুক্রবার সকালে আসামি শাকিলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি মামলার প্রধান আসামি মুকুল ঠাকুরের মেয়ে-জামাতা। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শাকিল অনেক তথ্য দিয়েছেন।’
ফরিদপুরের সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল নগরকান্দা) মো. আছাদুজ্জামান বলেন, ‘লিবিয়ায় শাকিলের ওপর নির্মম নির্যাতন ও মুক্তিপণের বিষয়টি প্রথম থেকেই আমরা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে আসছি। এ ঘটনায় জড়িত প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনা হবে। পাশাপাশি ভিকটিমকে উদ্ধারে সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।’
প্রসঙ্গত, অভাবের সংসারে পরিবারের মুখে একটু হাসি ফোটাতে লেখাপড়া বাদ দিয়ে চার মাস আগে প্রতিবেশী মুকুল ঠাকুর নামের এক দালালের মাধ্যমে ১২ লাখ টাকার বিনিময়ে ইতালির উদ্দেশ্য রওয়ানা হন শাকিল মিয়া। কিন্তু দালালরা তাকে ইতালির বদলে লিবিয়ায় নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে তাকে আটকে রেখে দালালরা আরও ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। একইসঙ্গে শাকিলের ওপর চলতে থাকে নির্মম নির্যাতন।
আরও পড়ুন:আওয়ামী লীগকে ভারতীয় পণ্য উল্লেখ করে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, ‘এই দলকে বর্জন করলেই জাতির মুক্তি মিলবে। সব পণ্য বর্জনের প্রয়োজন হয় না।’
শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় এমন মন্তব্য করেন তিনি। ‘মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ জিয়াউর রহমানের ভূমিকা ও আজকের বাংলাদেশ’ শীর্ষক এই আলোচনার আয়োজন করে ‘অন্তরে মম শহীদ জিয়া’ নামের একটি সংগঠন।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে উদ্দেশ করে গয়েশ্বর রায় বলেন, ‘আপনি তো ভেজাল লাগালেন! বললেন, সারা বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশের লোক আমাদের বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিল। ভারত পাশে না থাকলে ৭ জানুয়ারির নির্বাচন সম্পন্ন করতে পারতাম না।
‘এখানে কী বুঝব? আজকে সবাই পণ্য বর্জনের কথা বলছে। তাহলে ভারতের সবচেয়ে বড় পণ্য হচ্ছে আওয়ামী লীগ (সরকার), শেখ হাসিনা (প্রধানমন্ত্রী)। এই সরকারকে বর্জন তো করছেই, এটা ফেলে দিলেই শেষ। এই একটা পণ্য বর্জন করলেই তো জাতি মুক্ত হয়, সব পণ্য বর্জনের প্রয়োজন হয় না।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘চিকিৎসাসহ নানা কারণে প্রতিদিন বাংলাদেশ থেকে ভারতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে দশ হাজার মানুষ পাসপোর্ট জমা দেন। গড়ে ৮’শ টাকা করে হলেও প্রতিদিন ৮০ কোটি টাকা লাগে এ জন্য। একটা মানুষের সীমান্ত অতিক্রম করতে প্রতিদিন খরচ গড়ে ৫ হাজার টাকা। আসার সময় আবার ৫০ হাজার টাকার বাজার করেও আনে।’
প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘তাহলে পণ্য বর্জন কিসের? বাংলাদেশের মানুষ যদি বলে যে কাল থেকে ভারতে যাব না, তাহলে দিল্লি বলবে- শেখ হাসিনা তোমাকে রাখতে গেলে আমরা বাঁচতে পারব না।’
গয়েশ্বর রায় বলেন, ‘ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ও থিংকট্যাংক আগামী এক’শ বছর পর দেশের কী হবে তা নিয়ে হিসাব কষে। তারা দেশের মধ্যে মাতব্বরি করে না। আর আমাদের দেশের গোয়েন্দা সংস্থা আমাদের (বিরোধী দল) পেছনে লেগে আছে। তারা দেশের জন্য কাজ করতে পারে না।’
আয়োজক সংগঠনের উপদেষ্টা ঢালী আমিনুল ইসলাম রিপনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাছের মোহাম্মদ রহমতুল্লাহ প্রমুখ।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য