করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সোমবার থেকে দেশে এক সপ্তাহের লকডাউনের পরিকল্পনা করেছে সরকার। শনিবার দুই মন্ত্রী গণমাধ্যমে এ তথ্য জানিয়েছেন।
তবে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা পায়নি মাঠ পর্যায়ের প্রশাসন। ফলে তাড়াহুড়ো করে লকডাউন বাস্তবায়ন কতোটা সম্ভব হবে এ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া হঠাৎ এমন ঘোষণায় জনভোগান্তি বাড়ারও শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
তবে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, সরকারি নির্দেশনা পেলে লকডাউন কার্যকর করতে তারা প্রস্তুত রয়েছেন।
শনিবার বিকেল সাড়ে ৫টায় সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার মশিউর রহমান বলেন, ‘লকডাউনের খবর টিভিতে শুনেছি। তবে এখন পর্যন্ত কোনো নির্দেশনা পাইনি। নির্দেশনা পেলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
একদিনের প্রস্তুতিতে লকডাউন কার্যকর সম্ভব হবে কী না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনা না পেলে এ ব্যাপারে কিছু বলতে পারব না। কারণ লকডাউনে কী কী বন্ধ থাকবে, কী কী খোলা থাকবে এসব ব্যাপারে এখনও কিছু জানি না। সরকারি নির্দেশনা পাওয়ার পর বুঝতে পারব নির্দেশনাগুলো কীভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।’
দেশে কয়েকদিন ধরে বাড়ছে করোনার সংক্রমণ। বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। আবার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হবে কী না এ নিয়ে কয়েকদিন ধরেই আলোচনা চলছে। ২৬ মার্চ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন শেষে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্তের কথাও জানিয়েছিলেন সংশ্লিষ্টরা।
সুবর্ণজয়ন্তীর আয়োজন শেষে গত ২৯ মার্চ জরুরি সেবাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া সব অফিস ও কারখানা অর্ধেক জনবল দিয়ে পরিচালনা, উপাসনালয়ে স্বাস্থ্যবিধি মানা, জনসমাগম সীমিত করা, গণপরিবহনে ধারণক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী পরিবহনসহ ১৮ দফা নির্দেশনা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার।
মাঠ প্রশাসন যখন এই নির্দেশনা বাস্তবায়নে ব্যস্ত, তখন শনিবার সকালে হঠাৎ করে লকডাউনের তথ্য জানান সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
নিজ বাসভবন থেকে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের বলেন, সোমবার থেকে সাতদিনের জন্য লকডাউন ঘোষণা করা হচ্ছে। এরপর দুপুরে জনপ্রশাসন প্রাতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনও একই তথ্য জানান। শনিবার সন্ধ্যার দিকে লকডাউনের প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে বলেও জানান তিনি।
সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী মনে করেন, এই ঘোষণা আরও দুএকদিন আগে দিলে ভালো হতো। তাতে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা আরও প্রস্তুতি নিতে পারতেন। জনগণের কাছে লকডাউনের বার্তা পৌঁছানো সম্ভব হতো।
তিনি বলেন, ‘আমরা যারা স্থানীয় সরকারে আছি, আমরা সবসময় সরকারের নির্দেশনা মানতে বাধ্য। তবে লকডাউনের প্রজ্ঞাপন আরও দুএকদিন আগে হলে সবার জন্যই সুবিধা হতো।’
তিনি বলেন, হঠাৎ করে লকডাউনের কারণে জনগণও ভোগান্তিতে পড়তে পারে। কারণ তারাও প্রস্তুতির সময় পায়নি। বিশেষত দরিদ্র জনগোষ্ঠী সংকটে পড়তে পারে।
একই সঙ্গে মেয়র এও মনে করেন, করোনা যেভাবে বাড়ছে তাতে এ ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া ছাড়া সরকারের কাছে কোনো বিকল্প ছিল না।
তবে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গির হোসেন বলেন, সরকার চাইলে সবই সম্ভব। লকডাউন বাস্তবায়নও অসম্ভব নয়।
তিনি বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে ১৮ দফা নির্দেশনা জারির পর থেকেই আমরা ব্যবসায়ী, পরিবহন মালিক-শ্রমিকসহ বিভিন্ন গোষ্ঠীর সঙ্গে বসেছি। তারা আমাদের সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। ফলে লকডাউনের প্রাথমিক কাজ কিছুটা আমরা ইতোমধ্যে সেরে রেখেছি। সরকারি নির্দেশনা পেলে দ্রুত সংশ্লিষ্ট সবার কাছে তা পৌঁছে দেয়া হবে।’
জেলা প্রশাসক বলেন, ‘আমরা সরকারের সব নির্দেশনা মানতে প্রস্তুত। তবে এক্ষেত্রে জনগণকেও সহায়তা করতে হবে। জনগণ সহযোগিতা না করলে কোনো কাজেই শতভাগ সফল হওয়া যাবে না।’
এদিকে, লকডাউন হচ্ছে এমন খবর জানার পর সাধারণ মানুষের মধ্যে বাড়তি তৎপরতা দেখা দিয়েছে। শনিবার দুপুরের পর থেকে রাজশাহী, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জেলার বাজারগুলোতে ভিড় দেখা গেছে। লকডাউনের সময়ের জন্য নিত্যপণ্য মজুত করার প্রবণতা দেখা গেছে বাজারে আসা ক্রেতাদের মধ্যে।
আনুষ্ঠানিক নির্দেশনা না পেলেও গণমাধ্যমের খবর দেখে বিভিন্ন জেলায় এরইমধ্যে লকডাউন বাস্তবায়নের প্রস্তুতি শুরু করেছে। শনিবার বিকেলেই এ ব্যাপারে জরুরি বৈঠক করার কথা জানিয়েছেন একাধিক জেলা প্রশাসক।
রংপুর জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (গণমাধ্যম) মাহমুদুল হাসান মৃধা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দেশের যে ২৯ জেলাকে রেড জোন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে, তার মধ্যে রংপুর রয়েছে। এরইমধ্যে রংপুরের মানুষকে সচেতন করতে ১৫ দিনের জন্য ৮টি নির্দেশনা আবশ্যিকভাবে মেনে চলার অনুরোধ জানিয়েছি আমরা। এসব মানতে কঠোর রয়েছে জেলা প্রশাসন।’
তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার (১ এপ্রিল) সন্ধ্যায় থেকে ওই নির্দেশনা কার্যকর শুরু হয়েছে।
ওই নির্দেশনায় বলা আছে, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় ১ এপ্রিল থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত রংপুরে সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয়সহ সব ধরনের জনসমাগম বন্ধ থাকবে। বিয়ে-জন্মদিনসহ যে কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে জনসমাগম বন্ধ থাকবে। মসজিদসহ সব ধর্মীয় উপাসনালয়ে মাস্ক পরিধানসহ যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন করতে হবে।
পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্রে যে কোনো প্রকার জনসমাগম ও মাস্কবিহীন প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকবে। সকল ধরনের মেলা ও সিনেমা হল বন্ধ থাকবে।
গণপরিবহনে মাস্ক পরিধানসহ অন্যান্য সব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে এবং ধারন ক্ষমতার ৫০ ভাগের বেশি যাত্রী পরিবহন করা যাবে না। স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানসমূহে এবং শপিং মলে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েরই মাস্ক পরিধান করা ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
হোটেল-রেস্তোরাঁয় ধারনক্ষমতার ৫০ ভাগের বেশি মানুষ একসঙ্গে প্রবেশ বা অবস্থান করতে পারবে না এবং এসব স্থানে অবশ্যই মাস্ক পরতে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।
মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘মানুষ যাতে সচেতন হয়, সেজন্য আমরা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছি। সর্বশেষ, ৩ এপ্রিল দুপুরে রংপুর মহানগরীর জাহাজকোম্পানি মোড় এলাকায় একটি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। এর আগে ২ এপ্রিল নগরীর পায়রা চত্বর ও সুপার মার্কেট এলাকাতেও ভ্রাম্যমাণ আদালত চালানো হয়েছে। মাস্ক না পরায় এই দুই দিনে ২ হাজার ১০০ টাকা আর্থিক জরিমানা করা হয়। এ ছাড়া বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণ করা হয়েছে।’
রংপুর জেলা প্রশাসক আসিব আহসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কীভাবে লকডাউন কার্যকর হবে আমরা এখনও সরকারি সেই নির্দেশনা পাইনি। তবে দুস্থ, অসহায় মানুষদের পাশে এর আগেও রংপুর জেলা প্রশাসন দাঁড়িয়েছে, এটি অব্যাহত আছে এবং থাকবে।’
লকডাউনের নির্দেশনা এখনও না পাওয়ার কথা জানিয়েছেন রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল। তিনি বলেন, ‘সংবাদ মাধ্যমে এ বিষয়ে দেখেছি। চিঠি পেলে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
জেলা প্রশাসক বলেন, ‘লকডাউন বলতে আমরা যেটা বুঝি, তা হলো, কাঁচাবাজার বা জরুরি সেবা ছাড়া সব কিছু বন্ধ। এখন সরকারি সিদ্ধান্ত কী হচ্ছে, সে বিষয়ে চিঠি আসার পরই আমরা বলতে পারব। যেমন নির্দেশনা আসবে, সেটাই বাস্তবায়নের জন্য আমরা মাঠে নেমে পড়ব। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি রয়েছে।
কী ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে, জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাওয়ায় রাজশাহীতে আমরা গত কয়েকদিন ধরেই মাঠ পর্যায়ে কাজ করছি। মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছি। এ ছাড়া অযথা ঘোরাঘুরি বা আড্ডাবাজি বন্ধে আমরা কঠোর অবস্থান নিয়েছি।
‘রাজশাহীর কেন্দ্রীয় উদ্যানসহ বিনোদন কেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। নদীর ধারসহ সিএন্ডবি মোড় ও কয়েকটি এলাকায় সন্ধ্যার পর ছেলেমেয়েরা বেশি ঘোরাফেরা করে। আমরা ওইসব জায়গার দোকানপাট সন্ধ্যা ৭টার পর বন্ধের নির্দেশনা দিয়েছি। এখন সরকারি নির্দেশনা হাতে পাওয়ার পরই লকডাউনের বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু হবে।’
বরিশাল জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দিন হায়দার বলেন, সরকারি নির্দেশনা অনুসারে বরিশালেও লকডাউন করা হবে। এরইমধ্যে গণপরিবহন মালিক শ্রমিকদের অর্ধেক যাত্রী নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। প্রতিদিন মোবাইল কোর্ট চলছে। মানুষকে সচেতন করতে জেলা প্রশাসনের একাধিক টিম প্রতিদিন কাজ করছে। সচেতনতামূলক প্রচার চালানো হচ্ছে। লকডাউনের নির্দেশনা আসলে তাও বাস্তবায়ন করা হবে।’
লকডাউন কার্যকর করতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার কথা জানিয়েছেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মমিনুর রহমান। তিনি বলেন, লকডাউনে পুলিশের টহল জোরদার থাকবে। নগরে সিটি করপোরেশন এবং জেলায় উপজেলা প্রশাসন তদারকির দায়িত্ব থাকবে। এ ছাড়া দরিদ্র জনগোষ্ঠির জন্য ত্রাণ সহায়তা আসলে তালিকা করে সেগুলো বিতরণ করা হবে।
প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহায়তা করেছেন আহসান হাবীব অপু, রাজশাহী; রফিকুল ইসলাম, রংপুর; তন্ময় দাস, বরিশাল ও সিফায়াত উল্লাহ, চট্টগ্রাম ।
আরও পড়ুন:পালকি ছিল এক সময় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য, বর-কনের বাহন। এটা ছাড়া বিয়ের কথা ভাবাই যেত না। সারা দেশের মতো রূপগঞ্জেও একই অবস্থা ছিল। কালের বির্বতনে চিরায়ত গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের ধারক পালকি রূপগঞ্জে আজ আর চোখে পড়ে না। পালকি এখন মিউজিয়াম পিস হয়ে কালের সাক্ষী হয়ে আছে জাদুঘরে। বেহারাদের সুর করে সেই গ্রাম ঘুরে মাঠ-ঘাট-প্রান্তর পেরিয়ে গন্তব্যের কাছে দূর থেকে সেই ছয় বেহারাদের আর দেখা যাচ্ছে না। তাদের ছন্দিত লয়ে হাঁটার সঙ্গে সঙ্গে এ গাঁ থেকে ওগাঁয়ে নাইয়র, বিয়ের কনে বর কিংবা মান্যগন্য ব্যক্তিদের নিয়ে যাওয়ার এ চক্রবিহীন যান সম্ভবত তার অন্তিম যাত্রা করেছে। ছন্দের জাদুকর সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের ভাষায়, রবীন্দ্রনাথের কবিতায়, হেমন্তের গানে কিংবা ভুপেন হাজারিকার মাদল তালে চলা পালকি এখন ঐতিহ্যের খাতায় নাম লিখিয়েছে।
সেই ন্যাংটা পুঁটো ছেলেটা আর বলে না পালকি চলে পালকি চলে.....আদুল গাঁয়ে যাচ্ছে কারা হনহনিয়ে। রবি ঠাকুরের ‘বীর পুরুষ’ কবিতার খোকা তার মাকে পালকিতে নিয়ে যাওয়ার সময় ডাকাতদের সাথে লড়ে যখন ওরা আসে তেড়ে ‘হারে রে রে’ বলে। সেই ভীষণ যুদ্ধের বর্ণনাও দিতে পারে না মাকে। মাও বলতে পারে না, ভাগ্যেস খোকা ছিল তার সঙ্গে। দাদা তার সদ্য বিয়ে হওয়া দিদিকে আর বলে না, আর কটাঁ দিন থাক না দিদি, কেঁদে কেটে কঁকিয়ে, দুদিন বাদে তো নিয়েই যাবে পালকি করে সাজিয়ে। ‘মৈমনসিং গীতিকার’ দেওয়ানা মদিনা ও ছুটবে না পালকিতে আবের পাংখা নিয়ে আর পালকি বহরের সেই পরিচিত দৃশ্য এখন আর দেখা যায় না।
আধুনিক যোগাযোগের গোগ্রাসে পালকি হারিয়ে যাচ্ছে বিস্মৃতির অতল তলে প্রাচীন বাংলার এ বাহনটি। এক সময় গ্রাম-বাংলার হাটবাজারে পালকি সাজিয়ে রাখা হত। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতার আগেই পালকিওয়ালাদের কাছে ছুটে যেতেন বরের লোকজন। পালকি কাঠ দিয়ে তৈরি করা হতো। ছয়জন মিলে পালকি বহন করতো। সামনে পেছনে দুজন ও মাঝখানে দুজন করে পালকি কাঁদে নিত। প্রথমে বরকে পালকিতে করে তার নিজ বাড়ি থেকে কনের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হতো। বিয়ের কার্যক্রম সম্পূর্ণ হওয়ার পর বর-কনেকে এক সঙ্গে আবার বরের বাড়িতে নিয়ে আসতো।
আসলে পালকি নামটির উৎপত্তি ফারসি ও সংস্কৃত উভয় ইন্দো ভারতীয় ভাষা থেকে আর সেই সঙ্গে ফরাসি থেকেও। পল্লীকবি জসিম উদ্দিন তাঁর স্মৃতি কথায় এ গাঁ থেকে ওগাঁয়ে যাওয়া বেহারাদের পালকি নিয়ে চলার যে বিবরণ দিয়েছেন তা আমাদের আবহমান গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের অংশ। বিলুপ্ত এ পালকি এখন বিভিন্ন জাদুঘরে শোভা পাচ্ছে। বিয়ে বাড়িতে নব বর-বধুদের আনা নেয়ায় পালকি ব্যবহার করা হতো। চক্রযানের বিপ্লবে পালকির জায়গা দখল করে নিয়েছে আধুনিকতার এ যুগে প্রাইভেটকার, নোহা, বাস ও মাইক্রোবাস। হালের লাঙ্গল যেমন গ্রামেও অচল তেমনি ধনী গরিব নির্বিশেষে সকলের নানা অনুষ্ঠানে ব্যবহার করছে আধুনিক যান্ত্রিক যানবাহন। এসব যানের রমরমা ব্যবসাও এ কারণেই জমে ওঠেছে।
আধুনিকতার ছোঁয়ায় ইদানিং বর-কনের বাহনে যোগ হয়েছে হেলিকপ্টারও। রূপগঞ্জের মুড়াপাড়া এলাকা থেকে হেলিকপ্টারে করে বর যাত্রা গিয়েছেন সফিক মিয়া। হেলিকপ্টারে বর-কনে বহনের ঘটনা তখন পুরো এলাকায় বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। ছড়ায় বলা হতো বউ সাজবে কালকি, চড়বে সোনার পালকি! সোনার বরনী কন্যা এখন আর পালকিবদ্ধ পরিবেশে যাবে না, উঠবে আসল বা নকল ফুলের সাজানো এয়ারকন্ডিশন গাড়িতে।
মঙ্গলবার (১৭ জুন) ভোর সাড়ে চারটার দিকে পাবনা বাইপাস মহাসড়কের ইয়াকুব ফিলিং স্টেশন এর সামনে দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত ট্রাকচালক সেলিম হোসেন (৩৮) মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার সাহারবাটি গ্রামের মৃত আব্দুল গনির ছেলে।
আহতরা হলেন- বাসের হেলপার তারেক (৩৫) ট্রাকের হেল্পার আলামিন (৩৫)। তাদের রাজশাহী মেডিকেল। কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সালাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, ট্রাকচালক সেলিম সুনামগঞ্জ থেকে পাথর ভর্তি করে মাওয়া যাচ্ছিলেন।অপরদিক পাবনা এক্সপ্রেস বাসটি ঢাকা থেকে পাবনা বাস টার্মিনালে যাত্রী নামিয়ে হেলপার আলামিন গাড়ি গ্যারেজ করার জন্য দ্রুতগতিতে গাড়ি চালিয়ে ইয়াকুব ফিলিং স্টেশনের সামনে পৌঁছালে ট্রাকের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।
স্থানীয় লোকজন ফায়ার সার্ভিসকে জানালে তাৎক্ষিনক ফায়ার সার্ভিসের একটি টিম আহত তিনজনকে উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ট্রাক চালক সেলিম কে মৃত ঘোষণা করেন।
অপরদিকে আহত ট্রাকের হেলপার ও বাসের হেলপারের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্থানান্তর করা হয়।
পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সালাম জানান, খবর পেয়ে পুলিশ নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে সদর থানা হেফাজতে আনা হয়েছে। দুর্ঘটনাকবলিত ট্রাক ও বাসটি জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় কেউ অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সাতক্ষীরার শ্যামনগরে নজির গাজী (৪৯) ও দিদারুল ইসলাম (৩৮) নামে দুই ’জলদস্যুকে’ আটক করেছে পুলিশ। সোমবার রাত সাড়ে ৯টা ও ১১টার দিকে উপজেলার উপকুলবর্তী যতীন্দ্রনগর ও মীরগাং এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়। এসময় আটক দুই জলদস্যুর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাদের ব্যবহৃত নৌকা থেকে একটি একনলা বন্দুক উদ্ধার করে পুলিশ। মঙ্গলবার সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করে শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. হুমায়ুন কবির মোল্যা।
এর আগে সোমবার রাত আটটার দিকে সুন্দরবন থেকে লোকালয়ে উঠে আসার সময় স্থানীয়দের ধাওয়ার মুখে অপর কয়েক সহযোগিসহ এসব জলদস্যুরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। আটকরা হলেন— শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের কদমতলা গ্রামের নওশাদ গাজী এবং আশাশুনি উপজেলার চাকলা গ্রামের শফিকুল ইসলামের ছেলে দিদারুল ইসলাম।
আবু হামজা, সিদ্দিক হোসেন ও আকবর আলীসহ স্থানীয়রা জানায়, রাত সাড়ে আটটার দিকে অপরিচিত পাঁচ/সাত জন ব্যক্তি সুন্দরবন তীরবর্তী যতীন্দ্রনগর বাজারে যায়। এসময় নির্দিষ্ট গন্তব্যে যাওয়ার জন্য তারা মাইক্রো বা ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলের জন্য কথা বলছিলেন। একপর্যায়ে সন্দেহের বশবর্তী হয়ে নাম—পরিচয়সহ সুন্দরবন এলাকায় আসার কারণ জানতে চাইলে তারা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এসময় যতীন্দ্রনগর বাজারে উপস্থিত লোকজন ধাওয়া করে দিদারুলকে ধরে পুলিশকে খবর দেয়। পরবর্তীতে শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ হুমায়ুন কবির ঘটনাস্থলে পৌঁছে নজীরকে আটকের পাশাপাশি তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওই চক্রের ব্যবহৃত মাছ শিকারের নৌকার মধ্যে থেকে একটি একনলা বন্দুক ও একটি দা উদ্ধার করে।
এদিকে স্থানীয়রা জানিয়েছে, জোনাব বাহিনী এখন সুন্দরবনে খুব বেশি তৎপর না। বরং নজীর, তার ভাই নবাব ও ছেলে আব্দুর রহিম এবং মুন্সিগঞ্জ আটিরউপর এলাকার আছাদুলসহ কয়েকজনকে নিয়ে জোনাবের নামে সুন্দরবনে দস্যুতায় লিপ্ত। সোমবার রাতে নজীর আলীকে আটকের পরপরই তার ছেলে আব্দুর রহিম ও ভাই নবাব ঘটনাস্থল থেকে সটকে পড়েন।
আটক নজীর আলীর ভাষ্য, তিনি সুন্দরবনের ত্রাস কুখ্যাত জোনাব বাহিনীর সদ্যদের উপরে তুলে দেওয়া এবং সুন্দরবনে নামিয়ে দেয়ার কাজ করেন। সোমবার ১০ হাজার টাকার চুক্তিতে জোনাব বাহিনীর দুই সদস্যকে যতীন্দ্রনগর বাজার পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্বে ছিলেন। বনবিভাগের অনুমতি নিয়ে সুন্দরবনে যেয়ে মাছ শিকারের পাশাপাশি তারা পরিচিত জলদস্যুদের উপরে নিচে উঠানামার কাজ করেন বলেও দাবি তার। উপরে উঠে যাওয়া দুই জলদস্যু উদ্ধারকৃত অস্ত্রটি তার নৌকার মধ্যে রেখে যায় বলেও তিনি দাবি করেন।
দিদারুল জানান, তিনি নজীর আলীর শ্রমিক হিসেবে সুন্দরবনে যাওয়া জেলেদের জিম্মি করারসহ মুক্তিপণ আদায়ের কাজ করেন। লোকারয়ে পৌঁছে দেওয়া দুই জলদস্যুকে সুন্দরবনের পুটেরদুনে এলাকা থেকে নিয়ে আসার কথাও নিশ্চিত করেন তিনি। তবে তার কাছে মোবাইলের পাওয়ার ব্যাঙ্কসহ নানান সরঞ্জামাদির বিষয়ে জানতে চাইলে নিরুত্তর থাকেন।
এদিকে অস্ত্র উদ্ধারসহ দু’জনকে আটকের বিষয়ে শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. হুমায়ুন কবির মোল্যা জানান, নজীরের দেওয়া তথ্যে নৌকায় থাকা ককসিটের নিচে বিশেষ কায়দায় লুকানো অবস্থায় একটি একনলা বন্দুক উদ্ধার হয়েছে। আটকের পর উভয়কে শ্যামনগর থানায় নেওয়া হয়েছে। তারা মাছ শিকারির ছদ্মবেশে সুন্দরবনে প্রবেশ করতেন বলে প্রাথমিক তথ্য মিলেছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বাহিনীর নাম—পরিচয়সহ বিস্তারিত তথ্য জানানো হবে।
কুমিল্লায় চার জনের শরীরে নতুন ভ্যারিয়েন্টের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে এক নারী চিকিৎসকসহ তিনজন পুরুষ রয়েছেন।
শনিবার (১৪ জুন) কুমিল্লা সিটি স্ক্যান এমআরআই স্পেশালাইজড অ্যান্ড ডায়ালাইসিস সেন্টারে করোনা পরীক্ষা শেষে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া যায়। রাত সাড়ে ৯টার দিকে কুমিল্লা সিভিল সার্জন ডা. আলী নূর বশির এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
করোনায় আক্রান্তরা হলেন, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার আবদুল মোমিন (৭০), কুমিল্লা সিটি করপোরেশন এলাকার ডা. সানজিদা (৩০), বুড়িচং উপজেলার মো. হেলাল আহমেদ (৩৮) এবং সদর উপজেলার মো. ইবনে যুবায়ের (৩৯)।
সিভিল সার্জন ডা. আলী নূর বশির বলেন, গত তিন দিনে কুমিল্লায় ১৩ জন রোগীর নমুনা সংগ্রহ করা কয়। পরীক্ষা শেষে তাদের মধ্যে চারজনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং বাকিদের নগরীর একটি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নমুনা পরীক্ষায় রিপোর্ট পজিটিভ আসে।
তিনি বলেন, চারজনই বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এদের মধ্যে একজন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। দুজন এরই মধ্যে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় চলে গেছেন।
তবে আরেকজনের বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেননি সিভিল সার্জন।
করোনার প্রথম ধাক্কা কেটে যাওয়ার পর এতদিন কুমিল্লায় নতুন করে কেউ শনাক্ত হয়নি। ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরে এসেছিল। কিন্তু এখন আবার নতুন করে করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ায় জনমনে উদ্বেগ বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি দ্বিতীয় ধাপের শুরু হতে পারে এবং এখনই সতর্ক না হলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করতে পারে।
চট্টগ্রামে নতুন করে আরো একজনের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে গত ছয় দিনে মোট ৯ জনের শরীরে এ ভাইরাসের জীবাণু শনাক্ত হয়েছে। শনিবার (১৪ জুন) সকালে সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় (শুক্রবার সকাল আটটা থেকে শনিবার সকাল আটটা) ২৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে একজনের করোনা পজিটিভ পাওয়া যায়। ৪০ বছর বয়সী আক্রান্ত ওই ব্যক্তি চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার ফতেহাবাদ এলাকার বাসিন্দা। তিনি শুক্রবার নগরের এভারকেয়ার হাসপাতালে করোনার পরীক্ষা করান। সেখানেই তার শরীরে করোনার জীবাণু শনাক্ত হয়।
এদিকে সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, আক্রান্ত নয়জনের মধ্যে পুরুষ ৫ জন এবং নারী ৪ জন। এদের মধ্যে ৭ জন নগরের এবং ২ জন উপজেলার বাসিন্দা।
অন্যদিকে, চট্টগ্রামে এখন পর্যন্ত বেসরকারি পর্যায়ে করোনা শনাক্তকরণের পরীক্ষা চালু আছে। তবে শিগগিরই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসে (বিআইটিআইডি) আরটি–পিসিআর পরীক্ষা শুরু করা যাবে বলে আশা করছেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম।
কুমিল্লার দাউদকান্দি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। দূর্ঘটনায় বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেনি। তবে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় রোগীদের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। আগুন নেভাতে গিয়ে হাসপাতালের তিনজন কর্মী আহত হয়েছেন। খবর পেয়ে স্থানীয় ফায়ারসার্ভিস কর্মীরা ছুটে আসে এবং স্বল্প সময়ের মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। আহতরা হলেন ইয়াসিন, মেহেদি ও মুছা। আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে পাঠানো হয়েছে।
শনিবার (১৪জুন) বেলা ১১টায় দাউদকান্দি উপজেলা গৌরীপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৩য় তলায় ষ্টোর রুমে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে হাসাপাতালের ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীদের এবং বহিঃবিভাগে চিকিৎসা সেবা প্রায় দুই ঘন্টা বন্ধ থাকে৷ খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে স্থানীয় এবং হাসপাতালে কর্মরত স্টাফদের সহযোগিতায় অল্প সময়ের মধ্যেই আগুন নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বেলা ১১ টার দিকে হাসপাতালের তিনতলার ষ্টোর রুমে আগুনের ধোয়া দেখা যায়। ধোয়া দেখে পাশের ওয়ার্ডের রোগীর স্বজন ও নার্সরা আগুন আগুন বলে চিৎকার শুরু করে। এ সময় হাসপাতালে থাকা রোগী ও তাদের স্বজনরা দৌঁড়াদৌড়ি শুরু করেন। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পল্লী বিদ্যু ও ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে হাসপাতালের আউটসোর্সিংয়ে কর্মরত ইয়াসিন, মেহেদি ও মুছা নামে তিন কর্মচারী আহত হয়েছেন। আহতদের ঢাকা মেডিকেলের বার্ণ ইউনিটে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে দাউদকান্দি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন অফিসার মোঃ ইদ্রিস বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসার পর স্থানীয় এবং হাসপাতালে কর্মরত স্টাফদের সহযোগিতায় অল্প সময়ের মধ্যেই আগুন নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। প্রাথমিক ধারনা বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনে সূত্রপাত, পরবর্তীতে তদন্ত সাপেক্ষে মূল কারণ জানা যাবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. হাবিবুর রহমান বলেন, হাসপাতালের ৩য় তলায় ডেঙ্গু রোগীদের ওয়ার্ডের পাশের কক্ষে ষ্টোর রুমে ঔষধসহ রোগীদের সেবার কাজে ব্যবহৃত সব ধরনের মালামালের সাথে কিছু দামী সরঞ্জামও ছিল। ওই কক্ষে আগুনে অধিকাংশ মালামালই পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। কিছু মালামাল বের করতে পারলেও তা ভালো আছে কিনা পরবর্তীতে যাচাই করে বলেতে পারবো । আগুনে ক্ষতির পরিমান এখন নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। আর আগুন নিয়ন্ত্রণ এবং মালামাল বিশেষ করে অক্সিজেন সিলিন্ডার বের করতে গিয়ে আমাদের আউটসোর্সিংয়ে কাজ করা তিনজন আহত হয়েছেন। তাদেরকে ঢাকা মেডিকেলের বার্ণ ইউনিটে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে হাসপাতালে অগ্নিকান্ডের খবর পেয়ে দাউদকান্দি উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) রেদওয়ান ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন৷
ঈদের ছুটিতে সিলেটে বেড়াতে এসে হেনস্তার শিকার হয়েছেন পর্যটকরা। একদিনের ব্যবধানে জাফলংয়ে পর্যটকদের উপর হামলা ও কোম্পানীগঞ্জে পর্যটনকেন্দ্র থেকে পর্যটকদের বের করে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। দুটি ক্ষেত্রেই পর্যটকদের বিরুদ্ধে অশ্লীলতা ও পরিবেশ নষ্টের অভিযোগ তোলা হয়েছে। যদিও স্থানীয় একটি অংশের অভিযোগ, নির্বিঘ্নে চোরাচালান ও পাথর লুট করতেই পর্যটকদের বাধা দেয়া হচ্ছে। পর্যটক সমাগম বাড়লে লুটপাট ও চোরাকারবারে সমস্যা হয়। তাই পর্যটকদের আসতে বাধা দেয়া হচ্ছে বলে দাবি তাদের।
অশ্লীলতার অভিযোগ এনে সোমবার রাতে মৌলভীবাজারের রাজনগরে “রাজনগর রিসোর্ট এন্ড কফি হাউজে” তালা দিয়েছে স্থানীয় একদল লোক। এসময় স্থানীয় থানার পুলিশ সদস্যদেরও ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকতে দেখা গেছে। সিলেটে বেড়াতে আসা পর্যটকদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় দুটি স্থান জাফলং ও কোম্পানীগঞ্জ। সবসময়ই এই দুই এলাকায় পর্যটকদের ভিড় থাকে। ঈদের মতো বড় ছুটিতে ভিড় কয়েকগুণ বেড়ে যায়। সীমান্তবর্তী এই দুই এলাকা দিয়েই ভারত থেকে দেদারছে চোরাই পণ্য আসে। এছাড়া এসব এলাকার পাথুরে নদী ও ছড়া থেকে পাথর লুটপাটও নিত্তকার ঘটনা। গত বছরের ৫ আগস্টের পর চোরাচালান ও পাথর লুট অনেকটা বেড়ে গেছে। প্রশাসনও লুটপাটকারী ও চোরাকারবারীদের ঠেকাতে পারছে না।
জানা যায়, ঈদের পরদিন রোববার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার উত্তর রনিখাই ইউনিয়নের পাহাড় থেকে নেমে আসা পাথুরে ছড়া উৎমাছড়া পর্যটনকেন্দ্রে ভিড় করেন অনেক পর্যটক। বিকেলে সেখানে কিছু সংখ্যক মাদ্রাসা শিক্ষার্থী ও স্থানীয় কিছু লোক জড়ো হয়ে পর্যটকদের বের করে দেয়। এ রকম একটি ভিডিও সোমবার রাত থেকে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। জড়ো হওয়া যুবকরা পর্যটকদের বিরুদ্ধে অশ্লীলতা, মদ্যপান ও এলাকার পরিবেশ নষ্টের অভিযোগ করেন।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া পর্যটকদের বের করে দেয়ার একটি ভিডিওতে এক যুবককে বলতে শোনা যায়, 'এই এলাকা আলিমদের এলাকা, দ্বীনদার এলাকা। কিন্তু এইখানে অনেকে অনেক পরিবেশে থেকে আসে। এসে মদ খায়, আরও অনেককিছু করে, এতে এলাকার পরিবেশ নষ্ট হয়। তাই আমাদের আবেদন, আপনারা এখানে আর আসবেন না। তাছাড়া এটি পর্যটনভুক্ত এলাকাও নয়'।
ভিডিওতে আরও বলতে শোনা যায়, ‘এই এলাকার আলেম-ওলামা ও স্থানীয়রা সিদ্ধান্ত নিয়েছে উৎমাছড়াকে পর্যটন করা যাবে না। তাই আপনারা যারা এখানে এসেছেন দয়া করে এখান থেকে চলে যান। আপনারা এখানে থেকে এখানের পরিবেশ নষ্ট করবেন না। এই এলাকার পরিবেশ ঠিক রাখার জন্য আমরা এখানে পর্যটকদের আসতে নিরুৎসাহিত করছি আজকের পর আপনারা এখানে আর কোনদিন আসবেন না’।
পর্যটকদের বের করে দেয়ার এই ভিডিও যুক্ত করে পরিবেশবাদী সংগঠন ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা), সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম ফেসবুকে লিখেন, ‘একদিকে চলবে পর্যটক সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা অন্যদিকে পর্যটনে বাঁধা! দেশের ভেতরে সরকার ঘোষিত সংরক্ষিত এলাকা ও ব্যক্তি বা গোষ্ঠী মালিকানাধীন জায়গা ব্যতীত কোথাও জনসাধারণের প্রবেশে বাঁধা দেয়া মানুষের মৌলিক অধিকারে হস্তক্ষেপ। মানুষের চলাচলে বাঁধা প্রদান ও হুমকি প্রদান দণ্ডনীয় অপরাধ। কিন্তু সিলেটে এই অপরাধ ইতিপূর্বেও ঘটেছে।
কিম লিখেন, 'বছর কয়েক পূর্বে গোয়াইনঘাট উপজেলায় এক ঈদে মায়াবন নামে পরিচিত যুগীরকান্দি জলারবনে পর্যটকদের উপর হামলা করা হয়েছিল। এরপর থেকে ওই বনে কোন পর্যটক আর পা রাখেনি। স্থানীয় মাদ্রাসা ওই জলার বনের মাছ ভোগ করে বলে এখানে পর্যটক আসুক তা চায় না। অশ্লীলতার দোহাই দিয়ে যুগীরকান্দি বন বা মায়াবন সবার দৃষ্টির আড়ালে নিয়ে যাওয়া হয়। উতমাছড়ার পাথর লুটে ওই মাদ্রাসার সম্পৃক্ততা রয়েছে কিনা তা জানা প্রয়োজন।'
কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উজায়ের আল মাহমুদ বলেন, ‘উৎমাছড়ায় বেড়াতে যাওয়া জন্য নির্দিষ্ট কিংবা উপযুক্ত রাস্তা নেই। এ জন্য পর্যটকেরা স্থানীয় বাসিন্দাদের বাড়িঘর মাড়িয়ে যাতায়াত করেন। এতে তারা অসুবিধায় পড়েন। বৈঠকে এমন দাবি করা হয়েছে। এ ছাড়া ওই এলাকায় মাদক সেবন ও অশ্লীলতা হয়, এমনটিও দাবি করা হয়েছে’।
উৎমাছড়ায় পর্যটকদের বাধা দেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ বলেন, ‘এ অঞ্চলে এমন ঘটনা আগে কখনোই ঘটেনি। বিষয়টি ইউএনওকে তদন্ত করতে বলা হয়েছে। তিনি তদন্ত করে দেখছেন। ইউএনও জানার চেষ্টা করছেন, বিষয়টি কী?’
এদিকে, সিলেটের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলংয়ে পর্যটকদের উপর হামলা চালিয়েছে স্থানীয় কিছু লোক। হামলাকারীরা চোরাকারবারের সাথে সম্পৃক্ত বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। সোমবার বিকেলে জাফলং বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
এ বিষয়ে গোয়াইনঘাট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কবির হোসেন বলেন, স্থানীয় বখাটেরা পর্যটকদের ওপর হামলা করেছে। পরে সাংবাদিক ও ইউপি সদস্য মিলে ঘটনাস্থলেই বিষয়টি মীমাংসা করে দিয়েছেন। এ ব্যাপারে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রতন কুমার অধিকারী বলেন, ‘তুচ্ছ বিষয় নিয়ে পর্যটকদের সঙ্গে ভুল–বোঝাবুঝি হয়েছিল। বিষয়টি সঙ্গে সঙ্গেই সমাধান হয়ে গেছে। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় অনেকের ভুল ধারণা হয়েছে।’
মন্তব্য