করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সোমবার থেকে দেশে এক সপ্তাহের লকডাউনের পরিকল্পনা করেছে সরকার। শনিবার দুই মন্ত্রী গণমাধ্যমে এ তথ্য জানিয়েছেন।
তবে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা পায়নি মাঠ পর্যায়ের প্রশাসন। ফলে তাড়াহুড়ো করে লকডাউন বাস্তবায়ন কতোটা সম্ভব হবে এ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া হঠাৎ এমন ঘোষণায় জনভোগান্তি বাড়ারও শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
তবে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, সরকারি নির্দেশনা পেলে লকডাউন কার্যকর করতে তারা প্রস্তুত রয়েছেন।
শনিবার বিকেল সাড়ে ৫টায় সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার মশিউর রহমান বলেন, ‘লকডাউনের খবর টিভিতে শুনেছি। তবে এখন পর্যন্ত কোনো নির্দেশনা পাইনি। নির্দেশনা পেলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
একদিনের প্রস্তুতিতে লকডাউন কার্যকর সম্ভব হবে কী না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনা না পেলে এ ব্যাপারে কিছু বলতে পারব না। কারণ লকডাউনে কী কী বন্ধ থাকবে, কী কী খোলা থাকবে এসব ব্যাপারে এখনও কিছু জানি না। সরকারি নির্দেশনা পাওয়ার পর বুঝতে পারব নির্দেশনাগুলো কীভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।’
দেশে কয়েকদিন ধরে বাড়ছে করোনার সংক্রমণ। বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। আবার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হবে কী না এ নিয়ে কয়েকদিন ধরেই আলোচনা চলছে। ২৬ মার্চ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন শেষে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্তের কথাও জানিয়েছিলেন সংশ্লিষ্টরা।
সুবর্ণজয়ন্তীর আয়োজন শেষে গত ২৯ মার্চ জরুরি সেবাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া সব অফিস ও কারখানা অর্ধেক জনবল দিয়ে পরিচালনা, উপাসনালয়ে স্বাস্থ্যবিধি মানা, জনসমাগম সীমিত করা, গণপরিবহনে ধারণক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী পরিবহনসহ ১৮ দফা নির্দেশনা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার।
মাঠ প্রশাসন যখন এই নির্দেশনা বাস্তবায়নে ব্যস্ত, তখন শনিবার সকালে হঠাৎ করে লকডাউনের তথ্য জানান সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
নিজ বাসভবন থেকে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের বলেন, সোমবার থেকে সাতদিনের জন্য লকডাউন ঘোষণা করা হচ্ছে। এরপর দুপুরে জনপ্রশাসন প্রাতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনও একই তথ্য জানান। শনিবার সন্ধ্যার দিকে লকডাউনের প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে বলেও জানান তিনি।
সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী মনে করেন, এই ঘোষণা আরও দুএকদিন আগে দিলে ভালো হতো। তাতে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা আরও প্রস্তুতি নিতে পারতেন। জনগণের কাছে লকডাউনের বার্তা পৌঁছানো সম্ভব হতো।
তিনি বলেন, ‘আমরা যারা স্থানীয় সরকারে আছি, আমরা সবসময় সরকারের নির্দেশনা মানতে বাধ্য। তবে লকডাউনের প্রজ্ঞাপন আরও দুএকদিন আগে হলে সবার জন্যই সুবিধা হতো।’
তিনি বলেন, হঠাৎ করে লকডাউনের কারণে জনগণও ভোগান্তিতে পড়তে পারে। কারণ তারাও প্রস্তুতির সময় পায়নি। বিশেষত দরিদ্র জনগোষ্ঠী সংকটে পড়তে পারে।
একই সঙ্গে মেয়র এও মনে করেন, করোনা যেভাবে বাড়ছে তাতে এ ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া ছাড়া সরকারের কাছে কোনো বিকল্প ছিল না।
তবে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গির হোসেন বলেন, সরকার চাইলে সবই সম্ভব। লকডাউন বাস্তবায়নও অসম্ভব নয়।
তিনি বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে ১৮ দফা নির্দেশনা জারির পর থেকেই আমরা ব্যবসায়ী, পরিবহন মালিক-শ্রমিকসহ বিভিন্ন গোষ্ঠীর সঙ্গে বসেছি। তারা আমাদের সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। ফলে লকডাউনের প্রাথমিক কাজ কিছুটা আমরা ইতোমধ্যে সেরে রেখেছি। সরকারি নির্দেশনা পেলে দ্রুত সংশ্লিষ্ট সবার কাছে তা পৌঁছে দেয়া হবে।’
জেলা প্রশাসক বলেন, ‘আমরা সরকারের সব নির্দেশনা মানতে প্রস্তুত। তবে এক্ষেত্রে জনগণকেও সহায়তা করতে হবে। জনগণ সহযোগিতা না করলে কোনো কাজেই শতভাগ সফল হওয়া যাবে না।’
এদিকে, লকডাউন হচ্ছে এমন খবর জানার পর সাধারণ মানুষের মধ্যে বাড়তি তৎপরতা দেখা দিয়েছে। শনিবার দুপুরের পর থেকে রাজশাহী, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জেলার বাজারগুলোতে ভিড় দেখা গেছে। লকডাউনের সময়ের জন্য নিত্যপণ্য মজুত করার প্রবণতা দেখা গেছে বাজারে আসা ক্রেতাদের মধ্যে।
আনুষ্ঠানিক নির্দেশনা না পেলেও গণমাধ্যমের খবর দেখে বিভিন্ন জেলায় এরইমধ্যে লকডাউন বাস্তবায়নের প্রস্তুতি শুরু করেছে। শনিবার বিকেলেই এ ব্যাপারে জরুরি বৈঠক করার কথা জানিয়েছেন একাধিক জেলা প্রশাসক।
রংপুর জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (গণমাধ্যম) মাহমুদুল হাসান মৃধা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দেশের যে ২৯ জেলাকে রেড জোন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে, তার মধ্যে রংপুর রয়েছে। এরইমধ্যে রংপুরের মানুষকে সচেতন করতে ১৫ দিনের জন্য ৮টি নির্দেশনা আবশ্যিকভাবে মেনে চলার অনুরোধ জানিয়েছি আমরা। এসব মানতে কঠোর রয়েছে জেলা প্রশাসন।’
তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার (১ এপ্রিল) সন্ধ্যায় থেকে ওই নির্দেশনা কার্যকর শুরু হয়েছে।
ওই নির্দেশনায় বলা আছে, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় ১ এপ্রিল থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত রংপুরে সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয়সহ সব ধরনের জনসমাগম বন্ধ থাকবে। বিয়ে-জন্মদিনসহ যে কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে জনসমাগম বন্ধ থাকবে। মসজিদসহ সব ধর্মীয় উপাসনালয়ে মাস্ক পরিধানসহ যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন করতে হবে।
পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্রে যে কোনো প্রকার জনসমাগম ও মাস্কবিহীন প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকবে। সকল ধরনের মেলা ও সিনেমা হল বন্ধ থাকবে।
গণপরিবহনে মাস্ক পরিধানসহ অন্যান্য সব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে এবং ধারন ক্ষমতার ৫০ ভাগের বেশি যাত্রী পরিবহন করা যাবে না। স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানসমূহে এবং শপিং মলে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েরই মাস্ক পরিধান করা ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
হোটেল-রেস্তোরাঁয় ধারনক্ষমতার ৫০ ভাগের বেশি মানুষ একসঙ্গে প্রবেশ বা অবস্থান করতে পারবে না এবং এসব স্থানে অবশ্যই মাস্ক পরতে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।
মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘মানুষ যাতে সচেতন হয়, সেজন্য আমরা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছি। সর্বশেষ, ৩ এপ্রিল দুপুরে রংপুর মহানগরীর জাহাজকোম্পানি মোড় এলাকায় একটি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। এর আগে ২ এপ্রিল নগরীর পায়রা চত্বর ও সুপার মার্কেট এলাকাতেও ভ্রাম্যমাণ আদালত চালানো হয়েছে। মাস্ক না পরায় এই দুই দিনে ২ হাজার ১০০ টাকা আর্থিক জরিমানা করা হয়। এ ছাড়া বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণ করা হয়েছে।’
রংপুর জেলা প্রশাসক আসিব আহসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কীভাবে লকডাউন কার্যকর হবে আমরা এখনও সরকারি সেই নির্দেশনা পাইনি। তবে দুস্থ, অসহায় মানুষদের পাশে এর আগেও রংপুর জেলা প্রশাসন দাঁড়িয়েছে, এটি অব্যাহত আছে এবং থাকবে।’
লকডাউনের নির্দেশনা এখনও না পাওয়ার কথা জানিয়েছেন রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল। তিনি বলেন, ‘সংবাদ মাধ্যমে এ বিষয়ে দেখেছি। চিঠি পেলে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
জেলা প্রশাসক বলেন, ‘লকডাউন বলতে আমরা যেটা বুঝি, তা হলো, কাঁচাবাজার বা জরুরি সেবা ছাড়া সব কিছু বন্ধ। এখন সরকারি সিদ্ধান্ত কী হচ্ছে, সে বিষয়ে চিঠি আসার পরই আমরা বলতে পারব। যেমন নির্দেশনা আসবে, সেটাই বাস্তবায়নের জন্য আমরা মাঠে নেমে পড়ব। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি রয়েছে।
কী ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে, জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাওয়ায় রাজশাহীতে আমরা গত কয়েকদিন ধরেই মাঠ পর্যায়ে কাজ করছি। মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছি। এ ছাড়া অযথা ঘোরাঘুরি বা আড্ডাবাজি বন্ধে আমরা কঠোর অবস্থান নিয়েছি।
‘রাজশাহীর কেন্দ্রীয় উদ্যানসহ বিনোদন কেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। নদীর ধারসহ সিএন্ডবি মোড় ও কয়েকটি এলাকায় সন্ধ্যার পর ছেলেমেয়েরা বেশি ঘোরাফেরা করে। আমরা ওইসব জায়গার দোকানপাট সন্ধ্যা ৭টার পর বন্ধের নির্দেশনা দিয়েছি। এখন সরকারি নির্দেশনা হাতে পাওয়ার পরই লকডাউনের বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু হবে।’
বরিশাল জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দিন হায়দার বলেন, সরকারি নির্দেশনা অনুসারে বরিশালেও লকডাউন করা হবে। এরইমধ্যে গণপরিবহন মালিক শ্রমিকদের অর্ধেক যাত্রী নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। প্রতিদিন মোবাইল কোর্ট চলছে। মানুষকে সচেতন করতে জেলা প্রশাসনের একাধিক টিম প্রতিদিন কাজ করছে। সচেতনতামূলক প্রচার চালানো হচ্ছে। লকডাউনের নির্দেশনা আসলে তাও বাস্তবায়ন করা হবে।’
লকডাউন কার্যকর করতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার কথা জানিয়েছেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মমিনুর রহমান। তিনি বলেন, লকডাউনে পুলিশের টহল জোরদার থাকবে। নগরে সিটি করপোরেশন এবং জেলায় উপজেলা প্রশাসন তদারকির দায়িত্ব থাকবে। এ ছাড়া দরিদ্র জনগোষ্ঠির জন্য ত্রাণ সহায়তা আসলে তালিকা করে সেগুলো বিতরণ করা হবে।
প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহায়তা করেছেন আহসান হাবীব অপু, রাজশাহী; রফিকুল ইসলাম, রংপুর; তন্ময় দাস, বরিশাল ও সিফায়াত উল্লাহ, চট্টগ্রাম ।
আরও পড়ুন:ফেনীতে বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। এর সঙ্গে দেখা দিয়েছে নতুন এক আতঙ্ক। বন্যার কবল থেকে রক্ষা পেতে মানুষের বাড়িঘরে আশ্রয় নিয়েছিল নানা প্রজাতির সাপ। এখন ঘরে ফিরলেও সাপ আতঙ্ক বিরাজ করছে স্থানীয়দের মাঝে। এরই মধ্যে পরশুরামে বিষধর সাপের কামড়ে রোকেয়া আক্তার রিনা (৫০) নামে এক গৃহবধুর মৃত্যু হয়েছে।
শুক্রবার (১১ জুলাই) বিকাল ৫টার দিকে ফেনীর পরশুরামের পৌর এলাকার সলিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত রিনা পৌর এলাকার সলিয়া গ্রামের শফিকুল ইসলাম শহীদের স্ত্রী। তার এক ছেলে দুই মেয়ে রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, বন্যার পানি শুকিয়ে গেলে রান্না করার জন্য রান্নাঘরে গেলে সেখানে একটি অজ্ঞাত বিষধর সাপ রিনাকে কামড় দেয়। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। এরপর ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের স্বামী শফিকুল ইসলাম জানান, শুক্রবার বিকাল ৫টার দিকে রিনা রান্না ঘরে যায়। এ সময় রান্নাঘরের একটি গর্ত থেকে বিষধর একটি সাপ বের হয়ে তার পায়ে কামড় দেয়। তার চিৎকার শুনে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্রেক্স নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার কোনো চিকিৎসা না হওয়ায় ফেনী সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাক্তার রেদোয়ান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, হাসপাতালে আনার আগেই ওই গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছিল।
টানা ৩ দিনের বৃষ্টিতে বেনাপোল বন্দর এলাকায় জলবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বন্দর অভ্যন্তরের অনেক স্থানে হাটু পানি জমায় মারাত্বক ভাবে ব্যহত হচ্ছে পণ্য খালাস প্রক্রিয়া। যানবাহন ও নিরাপত্তাকর্মীদের চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়ায় বন্দরের ৯.১২.১৫.১৬ ও ১৮ নম্বর সেড থেকে লোড আনলোড বন্ধ হয়ে আছে।
ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টি হলেই বন্দরে হাটু পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে থাকে। কয়েক বছর ধরে এ দূর্ভোগ হলেও নজর নাই বন্দর কর্তৃপক্ষের। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছেন, রেলকর্তৃপক্ষ কালভাট না রেখে মাটি ভরাট করায় পানি নিষ্কাসনে বাধা গ্রুস্থ্য হচ্ছে।
তবে এসব শেড ও ওপেন ইয়ার্ড অধিকাংশই দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে তৈরী হয়নি। বন্দর সড়কের উচ্চতার চেয়ে পণ্যগারগুলো নিচু হওয়ায় একটু বৃষ্টিপাত বেশি হলে পানি নিষ্কাষনের অভাবে পণ্যগার ও ইয়াডে জলবদ্ধতা তৈরী হয়। এতে পানিতে ভিজে যেমন পণ্যের গুনগত মান নষ্ট হয় তেমনি চলাচলের বিঘ্ন ঘটছে। তবে আজ সকাল থেকে সেচ যন্ত্র চালিয়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
বেনাপোল বন্দর পরিচালক শামিম হোসেন জানান, বন্দরের জলবদ্ধতা প্রতি বছরে তৈরী হয়। বিশেষ করে রেল বিভাগ কালভাট না রেখে মাটি ভরাট করায় সমস্যার সন্মুখিন হতে হচ্ছে। বন্দরের পানি নিষ্কাসন ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে পড়েছে। তবে দ্রুত এ অবস্থা কাটিয়ে তুলতে পাশ্ববর্তী হাওড়ের সাথে বন্দরের ড্রেন তৈরীর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রেরক: রাশেদুর রহমান রাশু, বেনাপোল যশোর ।
কক্সবাজারের চকরিয়ায় গত রোববার (৬ জুলাই) মালুমঘাট বাজার থেকে পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে এক যুবক পালিয়ে যায়। পালিয়ে যাওয়া সে যুবক সাজ্জাদ হোসেন (২০) কে কক্সবাজারের ডিবি পুলিশ কলাতলীর একটি আবাসিক হোটেল থেকে আটক করে।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) দিবাগত রাত তিনটায় কক্সবাজারের একটি আবাসিক হোটেল (ওয়ার্ল্ড বিচ রিসোর্ট) অভিযান পরিচালনা করে কক্সবাজারের ডিবি পুলিশ। রাত প্রায় তিনটায় নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ওই হোটেলের একটি কক্ষ থেকে তাকে আটক করা হয়।
চকরিয়া থানা পুলিশের বিশেষ নজরদারি ও কক্সবাজারের গোয়েন্দা পুলিশের শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে আসামি সাজ্জাদ হোসেন কে আটক করতে সক্ষম হয় কক্সবাজার ডিবি পুলিশ।
এবিষয়ে চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, পলাতক আসামি সাজ্জাদ কে কক্সবাজার ডিবি পুলিশ আটক করেছে। প্রাথমিকভাবে সদর মডেল থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর চকরিয়া থানায় নিয়ে আসা হবে। তার বিরুদ্ধে একটি পুলিশ এসল্ট মামলা করা হয়েছে।
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে করতোয়া নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগে যৌথবাহিনীর অভিযানে একজনকে দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) রাত ৯টার দিকে শালডাঙ্গা ইউনিয়নের ধুলাঝাড়ি বাজারের করতোয়া নদীসংলগ্ন এলাকায় অভিযানটি চালানো হয়।
দেবীগঞ্জ সেনা ক্যাম্পের ক্যাম্প কমান্ডার মেজর জুবায়ের হোসেন সিয়ামের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী ও দেবীগঞ্জ থানা পুলিশের সমন্বয়ে এ অভিযান পরিচালিত হয়।
অভিযানে বালু উত্তোলনের কাজে ব্যবহৃত দুইটি ট্রাক্টরসহ চালক রাজু ইসলাম ও শান্ত আহমেদকে আটক করা হয়। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুল হাসান ঘটনাস্থলে এসে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন।
আদালতের রায়ে রাজু ইসলামকে বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনের ধারা লঙ্ঘন করায় দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়, অনাদায়ে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন বিচারক। তবে রাজু ইসলাম অর্থদণ্ডের অর্থ পরিশোধ করায় ট্রাক্টর দুটি ছেড়ে দেওয়া হয়।
স্থানীয় প্রশাসন জানায়, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন রোধে যৌথবাহিনীর অভিযান চলমান থাকবে।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় মাত্র এক মাসের ব্যবধানে একই ক্লিনিকে সিজারিয়ান ডেলিভারির সময় দুই প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে। সর্বশেষ সোমবার (৭ জুলাই) রাতে মুন্নি খাতুন (২৫) নামে এক অন্তঃসত্ত্বা নারী সিজারিয়ান অপারেশনের সময় মারা যান। এর আগে ৮ জুন ওই ক্লিনিকেই আখি খাতুন (২২) নামের আরেক প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে। পরপর এমন দু’টি মৃত্যুর ঘটনায় এলাকায় চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ক্লিনিক মালিকের ছেলে মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি হওয়ায় প্রভাব খাটিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেস্টা করছে বলে জানাগেছে।
সোমবার রাতে মুন্নির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ক্লিনিক মালিক আবুল হোসেনের ব্রাকপাড়া এলাকার বাড়িতে হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ। পরে তারা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
নিহত মুন্নি খাতুন উপজেলার তারাগুনিয়া ব্রাকপাড়া এলাকার মঞ্জু হোসেনের মেয়ে। আর নিহত আখি খাতুন পূর্ব কবিরাজপাড়া গ্রামের ইমনের স্ত্রী।
মুন্নির পরিবারের সদস্যরা জানান, গর্ভাবস্থায় জটিলতা দেখা দিলে সোমবার তাকে উপজেলার বিভিন্ন ক্লিনিকে নেওয়া হয়। কিন্তু চিকিৎসকরা ঝুঁকির কথা বলে কুষ্টিয়া বা রাজশাহীতে রেফার করার পরামর্শ দেন। সন্ধ্যায় তাকে তারাগুনিয়া থানার মোড় বাজারের আবুল হোসেনের মালিকানাধীন তারাগুনিয়া ক্লিনিক নামের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে নেওয়া হলে কর্তৃপক্ষ সিজারিয়ানে সম্মত হয়। কিন্তু রাত ৯টার দিকে অপারেশনের সময়ই মুন্নির মৃত্যু হয়।
এ বিষয়ে তারাগুনিয়া ক্লিনিকের মালিক আবুল হোসেন বলেন, “রোগী কীভাবে মারা গেছে সেটা ডাক্তাররাই ভালো বলতে পারবেন। আমি নিজে অপারেশনে ছিলাম না, তাই কিছু জানি না। টাকা দিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।”
অপারেশনকারী চিকিৎসক ডা. সফর আলী বলেন, “রোগীকে ওটিতে আনার আগে অ্যানেসথেসিয়া চিকিৎসক ওষুধ প্রয়োগ করেন। আমরা ওটিতে ঢুকেই দেখি রোগী স্ট্রোক করেছে। এরপর দ্রুত নবজাতকের প্রাণ রক্ষায় সিজারিয়ান সম্পন্ন করি।”
এ বিষয়ে দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তৌহিদুল হাসান তুহিন বলেন, “একই প্রতিষ্ঠানে পরপর দুই প্রসূতির মৃত্যু অত্যন্ত উদ্বেগজনক। আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখছি। আজই ক্লিনিকটি পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হুদা বলেন, “গতকাল রাতে তারাগুনিয়া এলাকার একটি ক্লিনিকে প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনায় ক্লিনিক এলাকায় উত্তেজনা ও হট্টগোলের আশঙ্কায় আমি তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ পাঠাই। পরে জানতে পারি, নিহত নারীর এলাকা থেকে কিছু লোকজন ক্লিনিক মালিকের বাড়িতে হামলা চালায়। আমরা দ্রুত সেখানে পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনায় এখন পর্যন্ত থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি। শুনেছি দুই পক্ষ নিজেদের মধ্যে বিষয়টি সমাধান করে নিয়েছে।”
এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল হাই সিদ্দিকী বলেন, এক মাসের মধ্যে দুইজন রোগীর মৃত্যু অত্যান্ত দুঃখজনক। ঘটনায় কর্তৃপক্ষকে বলবো তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য।
একই ক্লিনিকে এক মাসের ব্যবধানে দুই প্রসূতির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে এলাকায় চরম ক্ষোভ ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ ঘটনায় স্থানীয়রা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে দ্রুত তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি'র জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ভোলা-২ (বোরহানউদ্দিন-দৌলতখানের) সাবেক সংসদ সদস্য মো: হাফিজ ইব্রাহিমের নামে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে সেলিম নামে এক ব্যক্তির দেওয়া অভিযোগটি মিথ্যা, বানোয়াট ও ষড়যন্ত্রমূলক বলে দাবি করা হয়েছে।
রোববার বিকেলে বোরহানউদ্দিন উপজেলার বড়মানিকায় শহীদ জিয়া স্মৃতি সংসদের আয়োজনে বৃক্ষরোপন কর্মসূচিতে গণমাধ্যমকর্মীদের দেয়া স্বাক্ষাতকারে এ দাবি করেন হাফিজ ইব্রাহিম।
এর আগে দৈনিক ইত্তেফাক, সমকাল, যায়যায়দিন সহ বেশ কয়েকটি পত্রিকার ডিজিটাল প্লাট ফরমে একটি সংবাদে দেখা যায়, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে হাফিজ ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক জমি দখলের অভিযোগ তুলে সেলিম নামে এক ব্যক্তি অভিযোগ করছেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে গণমাধ্যমকর্মীদের হাফিজ ইব্রাহিম বলেন, সংবাদটি ডিজিটাল প্লাট ফরমে প্রকাশ হওয়ার পর আমার নজরে আসে। আমি মনোযোগ দিয়ে তার অভিযোগ শুনি। যে ব্যক্তি আমার নামে জমি দখলের অভিযোগ তুলেছেন। তিনি আমার নির্বাচনী এলাকার বাসিন্দা না। আমি খবর নিয়ে জেনেছি, তিনি ভোলা-১ সদর আসনের বাসিন্দা ভোলা সদর আসনের সাবেক এমপি ও মন্ত্রী মরহুম মোশারেফ হোসেন শাহজাহানের বাড়ির পাশে তার বাড়ি। আমি খোঁজ নিয়ে জানতে পারি সেলিম নামে ওই ব্যক্তির সাথে তার আপন ভাতিজি জামাইয়ের দীর্ঘদিন ধরে জমি-জমা নিয়ে বিরোধ রয়েছে তার ভাতিজি জামাই তাকে হুমকি ধামকি দিয়ে থাকতে পারে এ বিষয়ে আমার কিছুই জানা নেই। এমনকি ওই বিষয়ে ভোলা সদর থানায় মামলা রয়েছে।
হাফিজ ইব্রাহিম আরও বলেন, আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি মহল আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। পতিত সরকারের পলাতক একটি কুচক্রী মহল বিএনপির নামে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে ও দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন আপনারা এই ঘটনার পেছনে যে আসল সত্য রয়েছে তা উদঘাটন করুন।
জুলাই-আগস্ট ছাত্র আন্দোলনের সময় রাজশাহী মহানগরীর একটি থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র, ম্যাগাজিন ও গুলি উদ্ধার করেছে র্যাব-৫।
রোববার রাত সাড়ে ১২টার দিকে নগরীর টিকাপাড়া এলাকার একটি বালুর স্তূপের আনুমানিক ২ ফুট গভীর থেকে এগুলো উদ্ধার করা হয়।
সোমবার সকালে র্যাব-৫ এর মিডিয়া সেল থেকে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
অভিযানে একটি ৭.৬২ মি.মি. বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন এবং এক রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে।
র্যাব জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব-৫; সিপিএসসি’র একটি আভিযানিক দল জানতে পারে, ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন লুট হওয়া অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র, ম্যাগাজিন ও গুলি দুষ্কৃতকারীরা বোয়ালিয়া থানাধীন টিকাপাড়া এলাকায় লুকিয়ে রেখেছে। পরে নিরপেক্ষ সাক্ষীদের উপস্থিতিতে অভিযান চালিয়ে বালুর স্তূপের ভেতর থেকে বিদেশি পিস্তল, ম্যাগাজিন ও গুলি উদ্ধার করে র্যাবের গোয়েন্দা দল।
এ বিষয়ে বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বাসস’কে জানান, এটি পুলিশের ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র। তবে কোন থানার অস্ত্র সেটি নিশ্চিত করা যায়নি। কারণ পিস্তলের গায়ে বাট নম্বর ঘষা-মাজার চিহ্ন স্পষ্ট। উদ্ধারকৃত বিদেশি পিস্তল, ম্যাগাজিন ও গুলি বোয়ালিয়া থানায় জিডির পর হস্তান্তর করা হয়েছে।
মন্তব্য