২০১৯ সালের কথা। বৈশ্বিক অভিযোজন কমিশনের সম্মেলনে যোগ দিতে ঢাকা সফরে আসেন মার্শাল দ্বীপপুঞ্জের প্রেসিডেন্ট হিল্ডা হেইনে। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি-মুনকে সঙ্গে নিয়ে আমি এই সম্মেলনের আয়োজন করেছিলাম।
আমরা সবচেয়ে বেশি কার্বন নিঃসরণকারীদের সতর্ক করে বলেছিলাম, যে হারে ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে, সে তুলনায় বৈশ্বিক অভিযোজন তৎপরতা একেবারেই অপ্রতুল। এর ফলে জলবায়ু শরণার্থীর সংখ্যা বেড়েই চলছে, যাদের আশ্রয় দিতে চায় না কেউই। আমরা তাদের এ বলে সতর্ক করেছিলাম যে, দিনশেষে জলবায়ুর এ আক্রোশ থেকে কোনো দেশ বা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রেহাই পাবে না।
জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা ৪৮টি দেশের বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব নিয়ে গঠিত ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) সভাপতি হিসেবে প্রেসিডেন্ট হেইনে তার দ্বীপরাষ্ট্রের জলবায়ু সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় যে সাহস ও নেতৃত্ব দেখিয়েছিল, তাতে আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম।
জলবায়ু সংকটের কেন্দ্রে থাকা এবং অভিযোজনে বৈশ্বিক পর্যায়ে নেতৃত্বে দেয়া বাংলাদেশকে ২০২০ সালে তিনি সিভিএফ সভাপতির দায়িত্ব নেয়ার প্রস্তাব দিলে আমি তা ফেলতে পারিনি।
২০০৯ সালে মালদ্বীপের নেতৃত্বে বাংলাদেশসহ জলবায়ু পরিবর্তনে বিপর্যস্ত ১০টি দেশ মিলে এই ফোরাম গঠন করার পর আমি দ্বিতীয় দফায় এর দায়িত্ব নিলাম। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতার সামান্যতম বৃদ্ধি, নিয়ত ঘূর্ণিঝড়ের আঘাত কিংবা দ্রুতগতিতে মরুকরণে যাদের অস্তিত্ব হুমকিতে পড়ে, সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা বিশ্বের সেই ১০০ কোটির বেশি মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে সিভিএফ।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের ‘গ্রাউন্ড জিরো’ হিসেবে প্রায়ই উল্লেখ হওয়া বাংলাদেশের জন্য জলবায়ু পরিবর্তন লাখ লাখ সহিষ্ণু মানুষের সাহসিকতার সঙ্গে টিকে থাকার লড়াই। প্রকৃতির রুদ্ররোষে পড়ে বারবার বাড়িঘর, জমিজমা ও ফসল হারাচ্ছেন তারা।
চরমভাবাপন্ন আবহাওয়াজনিত দুর্যোগের কারণে প্রতি বছর মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২ শতাংশ হারায় আমার দেশ। এ শতাব্দী শেষে হারানোর এ হার হবে ৯ শতাংশ।
২০৫০ সালের মধ্যে আমাদের উপকূল এলাকার ১৭ শতাংশ তলিয়ে যাবে, যাতে বাস্তুচ্যুত হবে তিন কোটি মানুষ। এরই মধ্যে জলবায়ু উদ্বাস্তু হয়েছে ৬০ লাখ বাংলাদেশি। এরপরও আমরা মিয়ানমার থেকে আসা ১১ লাখ রোহিঙ্গার ভার বহন করে চলেছি। এতে বিপর্যস্ত হচ্ছে কক্সবাজারের পরিবেশ-প্রতিবেশ। এই ক্ষতিপূরণ কে দেবে?
বাংলাদেশের মতো সিভিএফভুক্ত প্রতিটি দেশের জলবায়ু পরিবর্তনের অপূরণীয় ক্ষতি নিয়ে বলার মতো গল্প আছে। অথচ বৈশ্বিক মোট কার্বন নিঃসরণের খুবই সামান্য অংশ করে তারা। জলবায়ুজনিত এই অবিচার তুলে ধরার সময় এসেছে।
কপ-২৬সহ বৈশ্বিক জলবায়ু সংক্রান্ত যেকোনো আয়োজনে আমার সভাপতিত্বে থাকা সিভিএফের কণ্ঠস্বর উচ্চকিত করা ও ফোরামটির স্বার্থ তুলে ধরাকে মিশন হিসেবে নিয়েছি।
কঠিন এক সময়ে বাংলাদেশ সিভিএফের সভাপতিত্ব পেয়েছে।
২০২০ সালে বৈশ্বিক উষ্ণতা দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যাওয়ার দ্বারপ্রান্তে ছিল বিশ্ব। অর্থনৈতিকভাবে অগ্রসর দেশগুলো ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় জাতীয় পরিকল্পনা তথা এনডিসি পূরণে হিমশিম খাচ্ছিল। ওই বছরসহ বিগত কয়েক বছর জলবায়ু নিয়ে আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় অগ্রাধিকার কমিয়ে দেয় যুক্তরাষ্ট্র। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় প্যারিস সম্মেলনে প্রতিশ্রুত অর্থের অনেক কম আদায় হয়।
ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোতে কম কার্বন নিঃসরণ হওয়া প্রকল্পে সহায়তার অংশ হিসেবে অন্তর্বর্তী কার্বন মার্কেটগুলোতে অর্থায়নে রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব আছে বিশ্বব্যাপী কার্বন নির্গমনের প্রায় ৮০ শতাংশের জন্য দায়ী জি-২০ জোটভুক্ত দেশগুলোর। ক্ষয়ক্ষতি তো অনেক দূরের বিষয়।
এমন বাস্তবতায় কোভিড-১৯ খুব বাজেভাবে আঘাত হানল আমাদের ওপর। এটি একই সঙ্গে জলবায়ু, স্বাস্থ্য ও প্রকৃতির ত্রিমুখী বিপর্যয় নিয়ে এলো।
এই রূঢ়ভাবে হুঁশ ফেরার মধ্য দিয়ে অবশেষে বিশ্ব আমার সতর্কবার্তায় (জলবায়ু সংকট জরুরি অবস্থা) কান দিল। এ থেকে পরিত্রাণের যেকোনো পথ হতে হবে পরিবেশবান্ধব, প্রকৃতিভিত্তিক ও জলবায়ু সহিষ্ণু।
সিভিএফ সভাপতি হিসেবে আমার প্রথম কাজ ছিল জলবায়ু পরিবর্তনকে ‘গ্রহের জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা করা এবং বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিকে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখতে সবাইকে যুদ্ধাবস্থার প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানানো।
২০২০ সালের শরৎ নাগাদ আমি খুব কমসংখ্যক এনডিসি এবং কপ২৬-এর শর্ত পূরণ হতে দেখেছি। এমন পরিস্থিতিতে আমি সিভিএফ নেতাদের শীর্ষ সম্মেলনে ‘মিডনাইট সারভাইভাল ডেডলাইন ফর দ্য দ্য ক্লাইমেট’ নামের উদ্যোগ ঘোষণা করেছি। প্রত্যেক দেশের প্রত্যেক নেতার প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছি, ‘নেতৃত্ব প্রদর্শনে ব্যর্থ হবেন না, ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে বর্ধিত এনডিসি ঘোষণা করুন।’ এটি ছিল কার্যত আমাদের (সিভিএফ) বেঁচে থাকার সময়সীমা।
আমার আহ্বানে সাড়া দিয়ে ৬০ দেশের সরকার ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে হালনাগাদ করা এনডিসি ঘোষণা করে।
যুক্তরাজ্যের এনডিসি আপডেট ছিল সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য। বড় অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাজ্যই প্রথম তাপমাত্রা বৃদ্ধি দেড় ডিগ্রির মধ্যে রাখা এবং ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে আনায় সম্মত হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্যারিস চুক্তিতে ফিরে আসাও ছিল প্রেরণাদায়ক। তবে যারা সিভিএফের ‘মিডনাইট ডেডলাইন’ পূরণে ব্যর্থ, তাদের প্রতি আমার আহ্বান থাকবে, কোপ২৬-এর আগে উচ্চাকাঙ্ক্ষী এনডিসি জমা দিন।
সিভিএফের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে বার্বাডোজ, কোস্টারিকা ও মালদ্বীপ ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ শূন্যের কোটার কাছাকাছি আনার অঙ্গীকার করে। সর্বাধিক জনসংখ্যার সিভিএফ সদস্য বাংলাদেশ মিথেন নির্গমণ কমাতে প্যারিস সম্মেলন অনুসারে অন্তর্বর্তী এনডিসি আপডেট জমা দেয়।
বাংলাদেশ ও সিভিএফের জন্য টিকে থাকার প্রধানতম অগ্রাধিকার জলবায়ু অভিযোজন ও জলবায়ু অর্থায়ন।
সত্যি বলতে, জলবায়ুর ঝুঁকি মোকাবিলায় আমার দর্শন হলো কাণ্ডজ্ঞানের ব্যবহার। সেটি হলো নিজেকে সাহায্য করা এবং কারও উদ্ধারের আশায় বসে না থাকা। কারণ নিষ্ক্রিয়তার জন্য জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের কাউকে ছাড় দেবে না।
২০২০ সালে ক্যাটাগরি-৫ ঘূর্ণিঝড় আম্ফান নিদারুণভাবে বাংলাদেশ ও ভারতের ওপর আঘাত করে। সে সময় আমার দেশ পাঁচ দিনেরও কম সময়ের মধ্যে ২৪ লাখ মানুষ ও ৫ লাখ গবাদি পশুকে নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে সক্ষমতার প্রমাণ দেখায়।
একই বছর মহামারির মধ্যেই আকস্মিক বন্যায় দেশের দুই-তৃতীয়াংশ এলাকা তলিয়ে যায়। এই দুই দুর্যোগে আমাদের জিডিপির প্রায় সাড়ে ৩ বিলিয়ন ডলার ক্ষতিগ্রস্ত হলেও দুর্যোগের প্রস্তুতি থাকায় লাখো জীবন রক্ষা পেয়েছে।
জলবায়ু প্রকল্পগুলোতে নিজস্ব অর্থায়নের কৌশল শিখেছে বাংলাদেশ। আমাদের ঝুঁকিপূর্ণ উপকূল এলাকাগুলোতে প্রায় ৮০০ জলবায়ু অভিযোজন ও সহিষ্ণুতা সংক্রান্ত প্রকল্পে আর্থিক সহায়তা দিতে আমার সরকার ৪৫ কোটি ডলারের বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করেছে। বর্তমানে আমরা জলবায়ু অভিযোজন ও সহিষ্ণুতা অর্জনে বছরে গড়ে জিডিপির ২.৫ শতাংশ তথা পাঁচ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করছি।
সমুদ্র উপকূলে ১৬.৪ কিলোমিটার দীর্ঘ বেড়িবাঁধ, ১২ হাজার ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র এবং দুই লাখ হেক্টর জমিতে উপকূলীয় বৃক্ষরোপণ করেছি আমরা। উপকূলের দুর্গত মানুষের কথা ভেবে আমাদের বিজ্ঞানীরা প্রকৃতিভিত্তিক কিছু সমাধান খুঁজে বের করেছেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে লবণাক্ততা এবং খরাসহিষ্ণু ফসল উৎপাদন, বৃষ্টির পানি ধরে রাখার জলাধার, পুকুর-বালু-ফিল্টার, ভাসমান কৃষি প্রযুক্তি ও ভ্রাম্যমাণ পানি শোধনাগার।
জলবায়ু সহিষ্ণুতা নিয়ে আমাদের অর্জনে অনুপ্রাণিত হয়ে বান কি-মুন, ক্রিস্টালিনা জর্জিভা ও বিল গেটসের নেতৃত্বাধীন গ্লোবাল সেন্টার ফর অ্যাডাপটেশন (জিসিএ) আমাকে ঢাকায় জিসিএর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া কেন্দ্র স্থাপনে উৎসাহ জুগিয়েছেন। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে কেন্দ্রটি সিভিএফের সঙ্গে যুক্ত হয়ে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব জোরদারের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার ঝুঁকিপূর্ণ মানুষের জন্য অভিযোজন তৎপরতাকে ত্বরান্বিত করতে কাজ করছে।
বাংলাদেশে আমরা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সমৃদ্ধি অর্জন করছি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর সময় ‘মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি দশক ২০৩০’ পরিকল্পনা নিয়ে আমি সিভিএফ দেশগুলোকে ‘জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনার’ শুরুর আহ্বান জানিয়েছি। আমরা এরই মধ্যে পরিকল্পনা অনুযায়ী ১ কোটি ১৫ লাখ গাছ লাগিয়েছি। উল্লিখিত পদক্ষেগুলো আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সমৃদ্ধি ধরে রাখতে জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনার সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ কৌশলগত ও কম কার্বন নিঃসরণ উপযোগী বিনিয়োগ।
তবে সিভিএফ নিজে থেকে এতটুকু পর্যন্ত করতে পারে। অভিযোজনেরও একটা সীমা আছে।
সিভিএফ-কপের মধ্যে জোর ঐক্য গড়ে তোলাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নভেম্বরের বৈঠক অনুযায়ী আমরা ঢাকা-গ্লাসগো-সিভিএফ-কপ২৬ ঘোষণা চাই।
জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে আমরা কপ২৬-এর আগেই জি২০ দেশগুলোর কাছে উচ্চাভিলাষী এনডিসি চাই।
আমরা জলবায়ু অর্থায়নকে শুধু কম-কার্বন অর্থনীতি বিনির্মাণে নিবেদিত দেখতে চাই না। আমরা চাই এ অর্থ প্রতিশ্রুত ১০০ বিলিয়ন ডলারের তহবিল গঠনে ব্যয় হোক এবং সে তহবিলের অর্থের ৫০ শতাংশ ব্যয় হোক জলবায়ু সহিষ্ণুতা অর্জনে।
আন্তঃদেশীয় জলবায়ু সহযোগিতা এবং আমাদের ব্যাপক ক্ষতি ও জলবায়ু বৈষম্য সমাধানে আমরা আন্তর্জাতিক কার্বন বাজারগুলো চালু দেখতে চাই।
ঐক্যবদ্ধ না হলে প্রকৃতির সঙ্গে এই লড়াইয়ে আমরা হেরে যাব। যে সহায়ক ব্যবস্থা আমাদের বাঁচিয়ে রাখে, তা আমরা সচেতনভাবে ধ্বংস করছি। গ্রেটা থুনবার্গ বা বাংলাদেশ কোস্টাল ইয়ুথ অ্যাকশন হাবের জন্য আমরা কোন গ্রহ রেখে যাচ্ছি? কোপ২৬-এ আমরা তাদের ব্যর্থ হতে দিতে পারি না।
লেখক: বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী
লেখাটি দ্য ডিপ্লোম্যাট সাময়িকীর এপ্রিল সংখ্যায় প্রকাশ হয়েছে
আরও পড়ুন:
দারিদ্র্য বিমোচনে গত পাঁচ দশকে ব্যাপক সাফল্য দেখিয়েছে বাংলাদেশ। যদিও সম্প্রতি বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, গত দু-তিন বছরে দারিদ্র্য বেড়েছে। দেশের উন্নয়নের সামগ্রিক চিত্র ইতিবাচক হলেও কিছু উপজেলা এখনো আর্থসামাজিক সংকটে আছে। কর্মসংস্থান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবায় বৈষম্য গভীর; নদীভাঙন; চরাঞ্চলের অনিশ্চয়তা; কৃষি নির্ভরতার সীমাবদ্ধতা ইত্যাদি এই অঞ্চলের মানুষকে অনিশ্চিত জীবনে ঠেলে দেয়।
সরকারের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি, এনজিওগুলোর উদ্যোগসহ নানা প্রচেষ্টা চলমান থাকলেও তা এখনো যথেষ্ট নয় বলে মনে করা হয়। দারিদ্র্যের হার বেশি থাকায় ওই সব উপজেলায় লক্ষ্যভিত্তিক কর্মসংস্থান, যোগাযোগে উন্নয়ন, নারী শ্রমশক্তির অংশগ্রহণ বৃদ্ধি এবং শিক্ষা-স্বাস্থ্যব্যবস্থায় দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ জরুরি হয়ে পড়েছে।
এই প্রতিবেদনে দেখানো হলো দেশের সবচেয়ে দরিদ্র ১০টি উপজেলা কোনগুলো। শীর্ষ ১০টি উপজেলার ৫টিই মাদারীপুরের উপজেলা। অবশ্য জেলা পর্যায়ে মাদারীপুরের দারিদ্র্য হার সবচেয়ে বেশি।
গত জানুয়ারি মাসে প্রকাশিত সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ দারিদ্র্য মানচিত্র থেকে তথ্য-উপাত্ত নিয়ে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।
১. ডাসার: এই উপজেলা মাদারীপুর জেলায় অবস্থিত। এই উপজেলায় দারিদ্র্যের হার ৬৩ দশমিক ২ শতাংশ। এই হার সারা দেশের উপজেলা পর্যায়ে সর্বোচ্চ। ডাসার উপজেলায় প্রতি তিনজনে দুজন গরিব। বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন অনুসারে, বালিগ্রাম, কাজীবাকাই, গোপালপুর, ডাসার ও নবগ্রাম—এই পাঁচ ইউনিয়ন নিয়ে ডাসার উপজেলা গঠিত।
২: হালুয়াঘাট: ময়মনসিংহ জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা হালুয়াঘাট। এই উপজেলার দারিদ্র্য হার ৫৯ দশমিক ৬ শতাংশ। এটি দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দারিদ্র্য হারের উপজেলা। এখানে প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষ দরিদ্র। সীমান্তবর্তী উপজেলা হওয়ায় আর্থসামাজিক পরিস্থিতি কিছুটা নাজুক। এই এলাকার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড অনেকটাই গোবরাকূড়া-কড়ইতলি স্থলবন্দরের ওপর নির্ভরশীল।
৩. কালকিনি: এই উপজেলা মাদারীপুর জেলায় অবস্থিত। এই উপজেলায় দারিদ্র্য হার ৫৬ দশমিক ৩ শতাংশ। এই হার সারা দেশের উপজেলা পর্যায়ে তৃতীয় সর্বোচ্চ। এই উপজেলার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড মূলত কৃষিনির্ভর। শিল্পকারখানা নেই বললেই চলে।
৪. রাজৈর: এই উপজেলাও মাদারীপুর জেলায় অবস্থিত। এই উপজেলায় দারিদ্র্য হার ৫৫৬ শতাংশ। টেকেরহাট এই উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ হাটবাজার। পদ্মা সেতু হয়ে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের যোগাযোগের ক্ষেত্রে এ উপজেলার গুরুত্ব অপরিসীম। এ উপজেলায় অনেক খাল, বিল, পুকুর ছাড়াও ছোট ছোট নদী-নালা রয়েছে। এই উপজেলাও কৃষিপ্রধান।
৫. শিবচর: সবচেয়ে দরিদ্র শীর্ষ ১০টি উপজেলায় মাদারীপুরের শিবচর উপজেলা আছে। এই উপজেলার দারিদ্র্য হার ৫৫ দশমিক ১ শতাংশ। পদ্মা নদীর তীরবর্তী এই উপজেলা অবস্থিত। চরাঞ্চলও আছে। পদ্মা সেতুর চালু আগে পর্যন্ত যোগাযোগের দিক থেকে বেশ পিছিয়ে ছিল শিবচর উপজেলা। তবে পদ্মা সেতু চালুর পর যোগাযোগের দিক বেশ এগিয়ে গেছে, যা জীবনমানের উন্নতিতে ভূমিকা রাখছে।
৬. নলছিটি: ঝালকাঠি জেলার অবস্থিত এই নলছিটি উপজেলা। এই উপজেলার দারিদ্র্য হার ৫৩ দশমিক ৮ শতাংশ। বরিশাল বিভাগের মধ্যে সর্বোচ্চ দারিদ্র্য হার এই উপজেলায়। নদীঘেরা এই উপজেলায় কৃষিনির্ভর অর্থনীতি বিরাজমান। শীতলপাটি, পান, মৃৎশিল্প এই উপজেলার অন্যতম অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড।
৭. গৌরীপুর: এই উপজেলা ময়মনসিংহ জেলায় অবস্থিত। এই উপজেলার দারিদ্র্যের হার ৫২ দশমিক ৯ শতাংশ। ময়মনসিংহ জেলা সদরের পূর্ব দিকে এই উপজেলা অবস্থিত। মইলাকান্দা, গৌরীপুর, অচিন্ত্যপুর, মাওহা, সহনাটি, বোকাইনগর, রামগোপালপুর, ডৌহাখলা, ভাংনামারী, সিধলা—এই ১০টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত উপজেলাটি। কৃষি ও মৎস্য খাতই এই উপজেলার মানুষের প্রধান জীবিকা।
৮. মাদারীপুর সদর: মাদারীপুর জেলার সদর উপজেলায় অর্ধেক মানুষ দরিদ্র। এই উপজেলার দারিদ্র্য হার ৫০ শতাংশ। সর্বোচ্চ দারিদ্র্য এমন ১০টি উপজেলার মধ্যে মাদারীপুর সদর ছাড়া আর কোনো জেলার সদর উপজেলা নেই। মাদারীপুর সদর উপজেলায় উল্লেখযোগ্য শিল্পকারখানা নেই। এই উপজেলা মূলত কৃষিনির্ভর কর্মকাণ্ডের ওপর নির্ভরশীল। তবে পদ্মা সেতু চালুর পর থেকে সেখানে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়ছে।
৯. বেলাব: এটি ঢাকার পাশে নরসিংদী জেলায় অবস্থিত। বেলাব উপজেলার দারিদ্র্য হার সাড়ে ৪৯ শতাংশ। এই উপজেলার অধিবাসীরা কৃষিকাজের ওপর জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। এখানকার সবজি, কাঁঠাল, কলা, লটকন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় নেওয়া হয়। এমনকি দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হয়।
১০. বোদা: একসময় দারিদ্র্য বলতেই উত্তরবঙ্গের জেলা-উপজেলাকে বোঝাতো। কিন্তু সময় পাল্টে গেছে। দেশের সবচেয়ে দরিদ্র উপজেলার মধ্যে মাত্র একটি উপজেলা রংপুর বিভাগের তথা উত্তরবঙ্গের। এটি হলো সবচেয়ে উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলা। এই উপজেলার দারিদ্র্য হার ৪৮ দশমিক ২ শতাংশ। এই উপজেলা কৃষিপ্রধান। চাষ হয় ধান, পাট, গম, আলু, বাদাম, আখ, ভুট্টা ইত্যাদি।
আজ দুপুরে বাংলাদেশ সচিবালয়ে কমনওয়েলথ ইলেকটোরাল সাপোর্ট সেকশনের প্রতিনিধিদল স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ছবি: পিআইডি
অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে সরকারের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে আজ দুপুরে বাংলাদেশ সচিবালয়ে তার দপ্তরে কমনওয়েলথ ইলেকটোরাল সাপোর্ট সেকশন এর প্রতিনিধিদল সাক্ষাৎ করতে এলে তিনি একথা জানান।
দুই সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন কমনওয়েলথ (ইএসএস) এর লিগ্যাল অ্যাডভাইজার ন্যান্সি কানিয়াগো। আরও উপস্থিত ছিলেন কমনওয়েলথ (ইএসএস) এর এক্সিকিউটিভ অফিসার ম্যাডোনা লিঞ্চ। এসময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
কমনওয়েলথ প্রতিনিধিদলকে স্বাগত জানিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনমুখী এবং এজন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছে। নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করা হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় আট লাখ সদস্য এতে দায়িত্ব পালন করবে। তাছাড়া সশস্ত্র বাহিনীর প্রায় ৮০ হাজার সদস্য নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করবে।
তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সকল সদস্যদের জন্য নির্বাচনী মহড়া ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধারের জন্য বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, প্রতিটি নির্বাচন কেন্দ্রের সঙ্গে সুষ্ঠু ও সময়োপযোগী যোগাযোগের জন্য পুলিশ সদর দপ্তর এবং প্রতিটি জেলায় ‘নির্বাচন নিয়ন্ত্রণ কক্ষ’ স্থাপন করা হবে। প্রতিটি নির্বাচন কেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা (সম্ভব হলে) এবং কর্তব্যরত পুলিশের জন্য বডি ওর্ণ ক্যামেরা এবং প্রয়োজনীয় সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত থাকবে।
তিনি বলেন, নির্বাচনে গণমাধ্যম অবাধে সংবাদ সংগ্রহ করতে পারবে। নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দলকে অনুমতি দেওয়া হবে। তাছাড়া নির্বাচনী এলাকায় শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য মোবাইল টিম এবং স্ট্রাইকিং ফোর্স নিয়োগ করা হবে।
কমনওয়েলথ এর সঙ্গে বাংলাদেশের বিশেষ সুসম্পর্ক রয়েছে উল্লেখ করে কমনওয়েলথ প্রতিনিধি ন্যান্সি কানিয়াগো বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীনতার পরপরই কমনওয়েলথ এর সদস্যপদ লাভ করে। তিনি বলেন, কমনওয়েলথ এর নির্বাচন পর্যবেক্ষক গ্রুপ রয়েছে। বাংলাদেশ আমন্ত্রণ জানালে কমনওয়েলথ নির্বাচন পর্যবেক্ষক গ্রুপ আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবে।
উপদেষ্টা বলেন, আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্বাচন পরিচালনার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা রয়েছে। বিশেষ করে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে কর্মরত আমাদের দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন দেশে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করে এসেছে।
তিনি বলেন, নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রে কমনওয়েলথ এর কাছে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সংক্রান্ত সহযোগিতার চেয়ে আর্থিক সহযোগিতা বেশি প্রয়োজন। কমনওয়েলথ চাইলে আমাদেরকে সিসিটিভি, বডি ওর্ণ ক্যামেরা ও নির্বাচন সংক্রান্ত সরঞ্জাম দিয়ে সহযোগিতা করতে পারে। কমনওয়েলথ প্রতিনিধি এ সময় জানান, তারা পুলিশ সদস্যদের মানবাধিকার বিষয়ক প্রশিক্ষণে সহযোগিতা করতে পারে।
ন্যান্সি কানিয়াগো নির্বাচন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে নতুন নিয়োগ সম্পর্কে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচনের সময় দায়িত্ব পালনের জন্য নতুন করে ১০ হাজার ২৬৪ জন পুলিশ, ২ হাজার ১৪৫ জন আনসার ও ভিডিপি, ৫ হাজার ৫১৩ জন বিজিবি, ৬৩৪ জন কোস্টগার্ড নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
কমনওয়েলথ প্রতিনিধি জুলাই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিচারে জুলাই শহীদ পরিবারগুলোর বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের দাবির বিষয়ে প্রশ্ন করলে উপদেষ্টা বলেন, আইন মন্ত্রণালয় চাইলে এ বিষয়ে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারে। তবে জুলাই হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। উপদেষ্টা এ সময় আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে জনগণ অবাধে, নির্ভয়ে এবং স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোটকেন্দ্রে আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। সূত্র: বাসস
পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম। ফাইল ছবি
ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশ পুলিশের পূর্ণ সক্ষমতা রয়েছে।
তিনি বলেন, “সংসদ নির্বাচন পুলিশ বাহিনীর জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় পুলিশ প্রস্তুত রয়েছে।”
আজ পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের ‘হল অব প্রাইড’-এ অনুষ্ঠিত বিশেষ অপরাধ পর্যালোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সভায় উপস্থিত ছিলেন ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী, র্যাব মহাপরিচালক এ কে এম শহিদুর রহমান, এসবি প্রধান মো. গোলাম রসুল, অতিরিক্ত আইজিগণ, ঢাকার বিভিন্ন ইউনিটের প্রধানরা, সকল পুলিশ কমিশনার ও রেঞ্জ ডিআইজিরা। এছাড়া সকল জেলা পুলিশ সুপার সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন।
আইজিপি বলেন, “নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অতীতে পুলিশের বিরুদ্ধে জনমনে যে নেতিবাচক ইমেজ তৈরি হয়েছিল, তা থেকে বেরিয়ে আসার একটি বড় সুযোগ আগামী নির্বাচন। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে জনগণের আস্থা অর্জনে সবাইকে সচেষ্ট থাকতে হবে।”
সভায় অতিরিক্ত আইজি (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) খোন্দকার রফিকুল ইসলাম দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা ও অপরাধ পরিস্থিতির চিত্র তুলে ধরেন।
নির্বাচনকে সামনে রেখে আইজিপি পুলিশের লুন্ঠিত অস্ত্র উদ্ধারে তৎপরতা জোরদার করার নির্দেশ দেন। তিনি গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের ওপর গুরুত্বারোপ করেন এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘোষিত অস্ত্র উদ্ধারে পুরস্কার সম্পর্কে প্রচারণা বাড়ানোর নির্দেশনা দেন।
আইজিপি চলমান নির্বাচনী প্রশিক্ষণ কার্যক্রম নিবিড়ভাবে পরিচালনার জন্য ইউনিট প্রধানদের নির্দেশ দেন। তিনি জেলা পুলিশ সুপারদের উদ্দেশে বলেন, “কোনো ধরনের হয়রানি ছাড়া পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট যথাসময়ে প্রদান নিশ্চিত করতে হবে।”
তিনি গুম কমিশনে প্রাপ্ত অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা রুজু করার জন্য মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেন। এছাড়া বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন থেকে উদ্ভূত মামলাগুলো বিশেষ গুরুত্বসহ তদন্ত ও নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন এবং মামলা তদন্তের গুণগত মান বৃদ্ধির ওপর জোর দেন।
সভায় উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তারা এবং অনলাইনে সংযুক্ত জেলা পুলিশ সুপারগণ প্রশাসনিক ও অপারেশনাল নানা বিষয়ে আইজিপির সঙ্গে মতবিনিময় করেন। সূত্র: বাসস
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী রোববার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির ১৫তম বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন। ছবি: বাসস
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা হবে।
আজ রোববার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির ১৫তম বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো নিজেরা ঐক্যবদ্ধ হলে নির্বাচনে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা সহজ হবে । আর নির্বাচনের সময় সবার জন্য সমান সুযোগ থাকবে ।
তিনি বলেন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড আগেও ছিল, এখনও আছে।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, দেশের পরিস্থিতি ও সার্বিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ হওয়া অনেক ঘটনা সত্য নয়, তবে গণমাধ্যমের তথ্য সঠিক থাকে।
তিনি বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে মোবাইল ফোনের সিমকার্ড নিয়ন্ত্রণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। অনেক অপরাধে সিমকার্ড ব্যবহার হয় অন্যের নামে। নির্বাচনের আগেই সিমকার্ডের সংখ্যা কমানো হবে। এক ব্যক্তির নামে ১০টা থেকে ৫টা/৭টা, পরে ২টায় নিয়ে যাওয়া হবে।
এছাড়া বৈঠকে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি, সারাদেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও অভিযান পরিচালনা, মাদক নিয়ন্ত্রণ এবং সহিংসতা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা ও নির্দেশনা দেয়া হয় বলে তিনি উল্লেখ করেন।
রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের সুযোগ-সুবিধা কিভাবে বাড়ানো যায় সে বিষয়েও আলোচনা হয়েছে বলে তিনি জানান।
নিরাপত্তা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, রাজনৈতিক দল কিছু সমস্যার সমাধান করলে এবং জনগণ সচেতন থাকলে নির্বাচন সুন্দর হবে। রাঙ্গুনিয়া ও রাউজান এলাকায় গণ্ডগোল বা অপরাধ প্রবণতা আগের চেয়ে কমেছে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, 'পদায়নের ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম হচ্ছে না। নিয়োগের ক্ষেত্রেও সমস্যা নেই।’
নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দর হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। সূত্র: বাসস
আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, গুম হত্যার চেয়েও নিকৃষ্টতম অপরাধ। গুম প্রতিরোধে শুধু আইনগত সংস্কার নয়, প্রয়োজন প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারও।
গতকাল শনিবার রাজধানীর গুলশানের হোটেল আমারিতে অনুষ্ঠিত ‘ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণ: জোরপূর্বক গুম মোকাবিলায় বিচার বিভাগের ভূমিকা’ শীর্ষক দিনব্যাপী কর্মশালার উদ্বোধনী পর্বে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
কর্মশালাটি গুম সংক্রান্ত কমিশন অফ ইনকোয়ারির উদ্যোগে এবং ঢাকাস্থ জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়ের সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত হয়।
ড. আসিফ নজরুল বলেন, অনেক প্রাণ ও ত্যাগের বিনিময়ে আমরা আজ একটি পরিবর্তিত পরিবেশে অবস্থান করছি। এই পরিবর্তন স্থায়ী করতে হলে গুমের বিচার নিশ্চিত করা অপরিহার্য।
বিচারকদের উদ্দেশে আসিফ নজরুল বলেন, গুমের বিচার বাস্তবায়নে বিচারকদের সাহসী ও ন্যায্য ভূমিকা রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা ও দৃঢ় অবস্থানই একদিন বাংলাদেশ থেকে গুমের সংস্কৃতি নির্মূল করবে।
সেমিনারের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের সময় কমিশনের সভাপতি বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, বিচার লিখা একটি সৃজনশীল শিল্প। তাই বিচারকরা হলেন সৃজনশীল শিল্পী। তাদের শিল্পকর্মই তাদের বিচার। তাদের এই প্রস্তাবটি মনে রাখা উচিত।
তিনি বলেন, গুম প্রতিরোধে বিচার বিভাগ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও মানবাধিকার কাঠামোর মধ্যে সমন্বিত সহযোগিতা অপরিহার্য। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন, সাক্ষ্য-প্রমাণ বিশ্লেষণ ও আধুনিক প্রযুক্তির যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে বিচার বিভাগ ও তদন্ত সংস্থার সক্ষমতা বৃদ্ধি গুমের বিচার নিশ্চিতের মূল চাবিকাঠি।
কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. ফরিদ আহমেদ শিবলী বলেন, গুম-সংক্রান্ত মামলাগুলোর কার্যকর তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করতে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার এখন সময়ের দাবি। তিনি জানান, কমিশন ইতোমধ্যে বিদ্যমান আইনি কাঠামো পর্যালোচনা করে গুম সংক্রান্ত মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি, সাক্ষী সুরক্ষা ও ভুক্তভোগী পরিবারের আইনি সহায়তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় আইন সংশোধনের প্রস্তাব প্রস্তুত করছে।
গুম সংক্রান্ত কমিশন অফ ইনকোয়ারির জনসংযোগ কর্মকর্তা কে এম খালিদ বিন জামান জানান, কর্মশালায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রেখেছেন, আইন ও বিচার বিভাগের সচিব লিয়াকত আলী মোল্লা এবং ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ মানবাধিকারবিষয়ক উপদেষ্টা হুমা খান। ওয়ার্কিং সেশন পরিচালনা করেন কমিশনের সদস্য মো. সাজ্জাদ হোসেন।
কর্মশালাটি সঞ্চালনা করেন কমিশনের সদস্য ড. নাবিলা ইদ্রিস। এই পর্বে গুম-সংক্রান্ত মামলায় প্রমাণ সংগ্রহ, সাক্ষ্যগ্রহণ, মানবাধিকার মানদণ্ডের প্রয়োগ ও বিচার প্রক্রিয়ার জবাবদিহি নিশ্চিতের বিভিন্ন দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
আলোচনায় গুম প্রতিরোধে একটি স্থায়ী গুম প্রতিরোধ কমিশন গঠন, গুম প্রতিরোধে আইন প্রণয়ন, বিচার বিভাগের আওতায় স্বতন্ত্র তদন্ত সংস্থা প্রতিষ্ঠা, গুম সংক্রান্ত মামলার জটিলতা নিরসনে মনিটরিং সেল গঠন, জনসচেতনতা বৃদ্ধি, বিচারকদের জন্য বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ আয়োজন, ভিক্টিমদের সাইকোলজিক্যাল ও লিগ্যাল সহযোগিতা নিশ্চিতকরণ, ভিকটিমদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন, সন্ত্রাসবিরোধী আইনসহ অস্ত্র ও বিস্ফোরকদ্রব্য আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন, অনলাইন জিডি সহজীকরণ, চিহ্নিত মামলাগুলো অগ্রাধিকারভিত্তিতে নিষ্পন্ন করা, বিচারক ও ম্যাজিস্ট্রেটদের কাছে ভিক্টিমদের সহজে পৌঁছানোর ব্যবস্থা গ্রহণ, ম্যাজিস্ট্রেটদের মিথ্যা মামলা নিরসন সংক্রান্ত ক্ষমতা প্রদান এবং বিচার বিভাগ ও কমিশনের মধ্যে তথ্য বিনিময়ের কাঠামো উন্নয়নের মতো গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ উঠে আসে।
দেশের বিভিন্ন আদালত ও ট্রাইব্যুনালে কর্মরত বিচারকসহ প্রায় ৯০ জন প্রশিক্ষণার্থী এতে অংশগ্রহণ করেন।
নির্বাচন কমিশন কারও কোনো অন্যায় চাপের কাছে নতি স্বীকার করবে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষে উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের (ইউএনও) নির্বাচন ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত (টিওটি) প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়। গতকাল বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচনি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (ইটিআই)-এ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য সিইসি এ কথা বলেন।
এ এম এম নাসির উদ্দিন উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের উদ্দেশে করে বলেন, ‘এই ম্যাসেজটা আপনাদের দিতে চাই যে, আপনারা কোনো চাপের কাছে নতি স্বীকার করবেন না। সম্পূর্ণভাবে আইন অনুযায়ী নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকবেন। আমাদের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা দেওয়া হবে। নির্বাচন কমিশনও কারও কোনো অন্যায় চাপের কাছে নতি স্বীকার করবে না। তা ছাড়া আমরাও আপনাদের অন্যায় কোনো আদেশ দেব বা হুকুম দেব না। আপনারা ধরে রাখতে পারেন, রিলেভেন্ট টু ইলেকশন (নির্বাচন সম্পর্কিত) যে আইন প্রচলিত আছে সেই আইন অনুযায়ী আমাদের নির্দেশনা যাবে বা আপনারা সেভাবে দায়িত্ব পালন করবেন। একটা সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে পারার চেষ্টা করবেন।’
সিইসি বলেন, আমরা কামনা করি, আপনারা আইনসম্মতভাবে, নিরপেক্ষভাবে এবং পেশাদারিত্বের সঙ্গে (প্রফেশনালি) কাজ করবেন। আমরা নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছি। এই দেশের এই দুরবস্থার মূল কারণ হলো, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না থাকা। যে জাতি আইনের প্রতি যতটা শ্রদ্ধাশীল, সেই জাতি তত সভ্য। সভ্য দুনিয়া আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকে। আমাদের এই কালচারটা কাল্টিভেট করতে হবে।’
সিইসি আরও বলেন, ‘আমরা চাই সর্বস্তরের মানুষ আইন মেনে চলবে। আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবে এবং সর্বক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠা করবে। যে গন্ডির মধ্যে আমার কাজ থাকবে সেখানেই আমি আইনকে বাস্তবায়ন করব। আমরা চাইব আপনারা আইনদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে আপনাদের দায়িত্ব পালন করবেন।’
সিইসি আরও বলেন, নির্বাচনের মধ্যে সমন্বয়টা একটা বড় জিনিস। আপনারা যেহেতু উপজেলা পর্যায়ে নিয়োজিত আছেন। সমন্বয়ের দায়িত্বটা মূলত আপনাদের উপরে নির্ভর করে। সুতরাং নির্বাচনের সময়ও এই সমন্বয়টা খুবই জরুরি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রিসাইডিং অফিসার ও কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেলের সাথে সমন্বয় করতে হবে। জেলার যে ইলেকশন মনিটরিং সেল থাকবে ওটার সাথে সমন্বয়। এই সার্বিক সমন্বয়টা আপনাদের খুব সিরিয়াসলি করতে হবে। এই দায়িত্বটা আপনাদের কাঁধে নিতে হবে। যেকোনো ক্রাইসিস হলে আপনারা চেষ্টা করবেন শুরুতেই যাতে এটার সমাধান করা যায়।
ইসি সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন আব্দুর রহমানেল মাছউদ, নির্বাচন কমিশনার বেগম তাহমিদা আহমদ, নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার এবং নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ।
বেগম তাহমিদা আহমদ বলেন, আমরা সাহসী হব, তবে অতি সাহসী না। অতীতে অতি উৎসাহী হয়ে অনেকে অনেক কিছু করেছেন। এবার এসব করা যাবে না।
তিনি বলেন, আগের প্রশিক্ষণ ভুলে গিয়ে এখন যেই প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে সেটি নিতে হবে। আগের নির্বাচন আমরা সবাই মিলে নষ্ট করেছি।
নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের আপনাদের প্রতি ম্যাসেজ হচ্ছে সামনের নির্বাচন নিয়ে ভয়ের কোনো কারণ নেই। সঠিক কাজ করবেন, ইসি আপনাদের সঙ্গে আছে। কিন্তু উদ্দেশ্যমূলক কোনো কাজ করলে সাংঘাতিক পেরেশানিতে পড়বেন। আর সঠিকভাবে কাজ করার জন্য যা যা সহায়তা লাগে তা আমরা দেব।’
তিনি আরও বলেন, ‘সাহসের সঙ্গে নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে হবে। চাকরির মান-মর্যাদা রক্ষার জন্য এবং অস্তিত্বের প্রশ্নে আমাদের না করার কোনো বিকল্প নেই। নির্বাচনের একটা আবহ সৃষ্টি করতে হবে।’
মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, সুশৃঙ্খল পরিবেশ ভালো নির্বাচনের জন্য অপরিহার্য। মোবাইল কোর্ট আয়নার মতো স্বচ্ছ হতে হবে। পক্ষপাতিত্ব করা যাবে না। এখন থেকে মোবাইল কোর্ট রেগুলার করতে হবে। এই নির্বাচনে যারা ভালো দায়িত্ব পালন করবে তাদের জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থা করা হবে।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ‘নির্বাচন মাঠে যারা আছেন তারা যেন তাদের আচরণবিধি মেনে চলেন। প্রশাসন কঠোরভাবে নিরপেক্ষভাবে কাজ করে যাবে। এবারের নির্বাচনে সমন্বিতভাবে মাঠ প্রশাসন যে, একটা দৃষ্টান্তমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে পারি তা আমরা দেখিয়ে দেব।’
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেছেন, তামাকমুক্ত সমাজ গঠনে জনমত ও জনসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। এক্ষেত্রে চিকিৎসকরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন।
গতকাল বুধবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ আয়োজিত ‘অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও তরুণদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা, ‘তরুণ চিকিৎসকদের ভূমিকা ও প্রত্যাশা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, একজন ধূমপায়ী চিকিৎসক রোগীকে ধূমপানে বাঁধা দিলে তিনি গ্রহণ করবেন না। তাই চিকিৎসকদেরকে ধূমপান পরিহার করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের সময় ও এসেম্বলিতে তামাকের ক্ষতিকারক দিকগুলো তুলে ধরতে হবে। এছাড়া শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের সময়েও এ বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। এ সময় উপদেষ্টা তামাকমুক্ত বিদ্যালয় ক্যাম্পাস গড়ে তুলতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
অধ্যাপক ডা. খন্দকার আব্দুল আউয়াল রিজভীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের কর্মসূচি পরিচালক শেখ মোমেনা মনি, ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার সরফ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের মহাপরিচালক মো. আখতারুজ্জামান, সিটিএফকে, বাংলাদেশের লিড পলিসি অ্যাডভাইজার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।
ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল ও রিসার্চ ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক ডা. ফারজানা রহমান মুনমুন অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
মন্তব্য