সারা দেশে সোমবার থেকে এক সপ্তাহের জন্য লকডাউন ঘোষণা করছে সরকার।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের শনিবার সকালে তার সরকারি বাসভবন থেকে নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান।
শনিবার সন্ধ্যার মধ্যে লকডাউন নিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বিস্তারিত তথ্য জানাবে জানিয়ে কাদের বলেন, ‘শিল্প কলকারখানা শর্তসাপেক্ষ চালু থাকতে পারে।’
করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার দ্রুত বেড়ে যাওয়ায় সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং মাস্ক পরা জরুরি কর্তব্য বলে মনে করে সেগুলো পালন করার আহবান জানান তিনি।
কাদের বলেন, ‘করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় সরকার ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। কিন্তু এখনো অনেকেই মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্যবিধির প্রতি অনিহা দেখাচ্ছে, যা প্রকারান্তরে ভয়াবহ পরিস্থিতি নিয়ে আসতে পারে।’
নিজেদের সুরক্ষায় সবাইকে সর্বোচ্চ সতর্কতা মেনে চলারও আহ্বান জানান কাদের।
ওবায়দুল কাদেরের পাশাপাশি লকডাউন দেয়ার কথা জানান জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।
তিনি এক ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘দ্রুত বেড়ে যাওয়া করোনার সংক্রমণ রোধ করার স্বার্থে সরকার দু-তিন দিনের মধ্যেই সারাদেশে লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে এক সপ্তাহের জন্য।
‘লকডাউন চলাকালে শুধু জরুরি সেবা দেয়, সে ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলো খোলা থাকবে।’
এসবের পাশাপাশি আরও কিছু প্রতিষ্ঠান খোলা থাকার কথা জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আর শিল্প-কলকারখানা খোলা থাকবে। যাতে করে শ্রমিকরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবং বিভিন্ন শিফটিং এর মাধ্যমে তারা কলকারখানায় কাজ করতে পারেন।’
ব্রিফিংয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের করোনা মহামারিতে জনগণের পাশে না দাঁড়িয়ে ঘরে বসে মিডিয়ায় ঝড় তোলা আর সরকারের অন্ধ সমালোচনা ও মিথ্যাচার করাকে বিএনপির সফলতা হিসেবে উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ‘একবার লকডাউন নিয়ে অপপ্রচার, আবার করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে মিথ্যাচার, কখনও সরকারের ব্যর্থতা খোঁজা বিএনপির রোজনামচা হয়ে গেছে। একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হয়েও দুর্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর ন্যূনতম মূল্যবোধ তারা হারিয়ে ফেলেছে।’
জনগণের সম্পদ বিনষ্ট আর নৈরাজ্য সৃষ্টির মাধ্যমে বিএনপি এবং তার সহযোগীরা যে তাণ্ডবলীলা চালিয়েছে তার জন্য বিএনপিকেই জনগণের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে বলে মন্তব্য করেন কাদের।
গণপরিবহনের মালিকদের হুঁশিয়ারি দিয়ে সড়কমন্ত্রী বলেন, ‘দুর্যোগের মধ্যে জনগণের দুর্ভোগ বাড়াবেন না। কথা দিয়ে কথা না রাখলে আপনাদের ভালো হবে না।’
রমজান এলেই এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বাড়িয়ে দেয়, যা শাস্তি যোগ্য অপরাধ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অহেতুক মূল্যবৃদ্ধি ও মজুদদারিতা নিয়ন্ত্রণে সরকার সতর্ক রয়েছে। ইতোমধ্যে সরকার নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে।’
বাজার অস্থির করার যেকোনো অপপ্রয়াস সরকার মেনে নেবে না, কোনো ধরনের সিন্ডিকেটের কাছে সরকার বাজার ব্যবস্থাকে জিম্মি হতে দেবে না বলেও হুঁশিয়ার করে দেন ওবায়দুল কাদের।
শনাক্তে রেকর্ড
গত কিছুদিন ধরেই দেশে করোনা সংক্রমণ বেড়ে চলেছে। প্রতিদিনই শনাক্ত রোগী বাড়ছে রেকর্ড পরিমাণ। গত সাত মাস পরে আবারও করোনা শনাক্ত হয় রেকর্ড পরিমাণ। কয়েকদিন থেকে শনাক্ত ছাড়িয়ে গেছে পাঁচ হাজারের ঘর। এরপর উঠেছে ছয় হাজারের ঘরে।
দেশে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড ৬ হাজার ৮৩০ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে। এ সময়ে আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যু হয় ৫০ জনের।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে শুক্রবার পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশে এই নিয়ে করোনা শনাক্ত হয়েছে ৬ লাখ ২৪ হাজার ৫৯৪ জনের শরীরে। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৯ হাজার ১৫৫ জনের।
গত এক দিনে দেশের ২২৬টি ল্যাবে ২৯ হাজার ৩২৯টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ২৩ দশমিক ২৮। সংক্রমণ বিবেচনায় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
অর্থাৎ দেশে শকান্তের হার যেমন গত কয়েকদিনে বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে মৃত্যুর হারও। এমন অবস্থায় গত ২৯ মার্চ সরকার বেশ কিছু বিষয়ে বিধিনিষেধ দিয়ে ১৮ দফা নির্দেশনা জারি করে।
সে সময় অবশ্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী সারা দেশে একবারে লকডাউন দেয়া হবে না এমন কথা জানিয়েছিলেন।
যা আছে নির্দেশনায়
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ২৯ মার্চে দেয়া প্রজ্ঞাপনের ১৮ দফা নির্দেশনা অবিলম্বে সারা দেশে কার্যকর করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এ সিদ্ধান্ত পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বলবৎ থাকবে বলেও জানানো হয়।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, করোনার উচ্চ সংক্রমণ থাকা এলাকায় সব ধরনের জনসমাগম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ ছাড়াও সীমিত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে সব ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয়সহ অন্যান্য জনসমাগম।
বিয়ে-জন্মদিনসহ যেকোনো সামাজিক অনুষ্ঠান উপলক্ষে জনসমাগম নিরুৎসাহিত করতে হবে বলেও জানানো হয়েছে এতে।
নির্দেশনায় বলা হয়, মসজিদসহ সব ধর্মীয় উপাসনালয়ে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন নিশ্চিত করতে হবে। পর্যটন ও বিনোদনকেন্দ্রে জনসমাগম সীমিত করতে হবে। এ ছাড়াও সব ধরনের মেলা আয়োজনও নিরুৎসাহ দিতে হবে।
নির্দেশনায় গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে ধারণক্ষমতার ৫০ ভাগের বেশি যাত্রী পরিবহন করা যাবে না বলে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সংক্রমিত এলাকাতে আন্তজেলা যান চলাচল সীমিত ও প্রয়োজনে বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।
বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের ১৪ দিন পর্যন্ত প্রাতিষ্ঠানিক বা নিজ খরচে হোটেলে কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্রয়-বিক্রয়ের নির্দেশ দেয়া হয়েছে প্রজ্ঞাপনে। এ ছাড়াও ওষুধের দোকানে মানতে বলা হয়েছে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি। পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোতে মাস্ক পরাসহ যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
শপিং মলে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়কেই যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বলা হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে। অপ্রয়োজনে ঘোরাফেরা বা আড্ডা দেয়া যাবে না। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া রাত ১০টার পর বাইরে বের হওয়া নিয়ন্ত্রণ করতে বলা হয়েছে।
ঘরের বাইরে মাস্ক পরা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে নির্দেশ দিয়ে বলা হয়েছে, এটা নিশ্চিত করা না হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
করোনায় আক্রান্ত ও করোনা লক্ষণযুক্ত ব্যক্তিদের আইসোলেশন নিশ্চিত করার পাশাপাশি তাদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদেরও কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
জরুরি সেবায় নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান ছাড়া সব সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, শিল্পকারখানা ৫০ ভাগ জনবল দিয়ে পরিচালনা করতে বলা হয়েছে। ৫৫ বছর বয়সের বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঘর থেকে কাজ করার ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে।
এ ছাড়াও সভা-সেমিনার, প্রশিক্ষণ, কর্মশালা যথাসম্ভব অনলাইনে আয়োজনের তাগিদ দেয়া হয়েছে এতে। স্বশরীরে উপস্থিত হতে হয় এমন যেকোনো ধরনের গণপরীক্ষার ক্ষেত্রে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
হোটেল-রেস্তোরাঁয় ধারণক্ষমতার ৫০ ভাগের বেশি মানুষের প্রবেশ বন্ধ করতে বলা হয়েছে। কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ ও অবস্থানের সময় মাস্ক পরা ও অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন:নওগাঁর পত্নীতলা সীমান্ত দিয়ে ১৬ বাংলাদেশি নাগরিককে পুশইন করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)।
শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টায় নওগাঁর পত্নীতলা ১৪ বিজিবির ক্যাম্প থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
এরআগে ভোরে উপজেলার শীতলমাঠ বিওপির সীমান্ত পিলার ২৫৪/১-এস এর কাছ দিয়ে তাদের বাংলাদেশে পুশইন করা হলে বিজিবি সদস্যরা তাদের আটক করে।
আটককৃতরা হলেন- নাটোর জেলার মোতালেব শেখ (৪৫), শফিকুল ইসলাম (৩৫), মজনু বিশ্বাস (৪৮), নয়ন খাঁ (২৫), মুকুল শেখ (২৫), মৃধুল শেখ (২০), সামির (১১), বিনা খাতুন (২৯), মিম (৮), মরিয়ম খাতুন (১০), রোজিনা খাতুন (১৮), মিরা খাতুন (৮ মাস), এলিনা খাতুন (২৮), জান্নাতুল সরকার (১০), জোছনা বেগম (৫০) এবং পাবনা জেলার মিরাজ শেখ (১৮)।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়- ভোরে পত্নীতলা ১৪ বিজিবির শীতলমাঠ বিওপির সীমান্ত পিলার ২৫৪/১-এস এর কাছ দিয়ে তাদের পুশইন করে। পরে বিজিবির টহল দল ঘুরকী গ্রামের পাকা রাস্তা সংলগ্ন চা দোকানের পাশে ঘোরাফেরা করতে দেখে তাদের আটক করে। আটকদের মধ্যে সাতজন পুরুষ, পাঁচ শিশু ও চার জন নারী।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরো জানানো হয়- আটককৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় তারা বেশ কয়েক বছর পূর্বে রাজশাহী সীমান্ত দিয়ে ভারতে গিয়েছিল। আটকের পর তাদেরকে পত্নীতলা থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
ইউনিভার্সাল পোস্টাল ইউনিয়নের (ইউপিইউ) প্রশাসনিক কাউন্সিল (সিএ)-এ বাংলাদেশ পুনর্নির্বাচিত হওয়ায় সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিদলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এক বার্তায় এ তথ্য জানায়।
বৃহস্পতিবার দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত ইউপিইউ কাউন্সিলের নির্বাচনে বাংলাদেশ ১৫৭ ভোটের মধ্যে ৯৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়। ১০ সদস্যের মধ্যে নবম স্থান অর্জন করে দেশটি। ফলে টানা দ্বিতীয়বারের মত চার বছরের জন্য কাউন্সিলের সদস্যপদ পেল বাংলাদেশ।
এর আগের মেয়াদে বাংলাদেশ সীমিত ভূমিকা রেখেছিল। ২০২১ সালের নভেম্বরে মাত্র একটি সরাসরি বৈঠকে অংশ নেয়, বাকি কার্যক্রমে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিল। তাই উল্লেখযোগ্য অবদান রাখার সুযোগ কম ছিল।
এ কারণে আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল যে, সীমিত অংশগ্রহণ পুনর্নির্বাচনের পথে বাধা হতে পারে। তবে সমন্বিত কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে বাংলাদেশ সেই চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ এ ফলাফলকে ‘কূটনৈতিক সাফল্য’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, বাংলাদেশ ও চীন তাদের ব্যাপক কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্বকে এগিয়ে নিতে একসাথে এগিয়ে যাবে, যা উভয় দেশ ও বিশ্বের জনগণের জন্য শান্তি, সমৃদ্ধি ও সুখ বয়ে আনবে।
গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের ৭৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী এবং বাংলাদেশ-চীন কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০তম বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে বুধবার রাতে রাজধানীর একটি হোটেলে চীনা দূতাবাস আয়োজিত এক জমকালো সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা এক ভিডিও বার্তায় এই মন্তব্য করেন।
গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার ৭৬তম বার্ষিকী এবং বাংলাদেশ-চীন কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০তম বার্ষিকীতে উষ্ণ অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বাংলাদেশের প্রতি চীনের দীর্ঘস্থায়ী আস্থা, সহায়তা ও সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
তিনি অর্থনৈতিক উন্নয়ন, প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন, দারিদ্র্য বিমোচন এবং জনগণের সেবার মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে অর্জিত উল্লেখযোগ্য সাফল্যের পাশাপাশি গ্লোবাল সাউথ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি এর অনুপ্রেরণা ও অবদানের প্রশংসা করেন।
চীনকে বাংলাদেশের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য অংশীদার উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশের প্রতি চীনের দীর্ঘস্থায়ী আস্থা, সহায়তা ও সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন অনুষ্ঠানে বলেন, ২০২৫ সাল কেবল গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের ৭৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী নয়, বরং জাতিসংঘের ৮০তম বার্ষিকীও।
তিনি আট দশক আগে বিশ্ব শান্তি রক্ষায় চীনের অপরিসীম ত্যাগের কথা স্মরণ করেন এবং শান্তি ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে শক্তিশালী রেকর্ডসহ একটি প্রধান শক্তিতে রূপান্তরিত হওয়ার কথা তুলে ধরেন।
রাষ্ট্রদূত বলেন, “চীনের কমিউনিস্ট পার্টির শক্তিশালী নেতৃত্বে, চীনা জনগণ নিরঙ্কুশ দারিদ্র্য দূরীকরণের অলৌকিক সাফল্য অর্জন করেছে। চীন সর্বদা বিশ্বে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও অগ্রগতির জন্য একটি শক্তি হিসেবে থাকবে।”
রাষ্ট্রদূত ইয়াও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের গ্লোবাল গভর্নেন্স ইনিশিয়েটিভের উপর জোর দিয়ে বলেন, বাংলাদেশ সহ বিভিন্ন দেশের কাছ থেকে তিনি ব্যাপক আন্তর্জাতিক সমর্থন পেয়েছেন, যা বহুপাক্ষিক সহযোগিতা জোরদার করার একটি নজির।
ঢাকা-বেইজিং সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে তিনি বলেন, দুই দেশ শ্রদ্ধা, আন্তরিকতা, কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন ও সমান সমান সহযোগিতার দ্বারা পরিচালিত সুসম্পর্কেও ভিত্তিতে সর্বদা "ভালো প্রতিবেশী, আন্তরিক বন্ধু ও নির্ভরযোগ্য অংশীদার হয়ে থাকবে।"
তিনি আরও বলেন, "চীন বাংলাদেশকে তার আধুনিকীকরণের যাত্রায় সহায়তা ও সমর্থন অব্যাহত রাখতে এবং ভবিষ্যতে একটি চীন-বাংলাদেশ সম্প্রদায় গঠনে একটি নতুন অধ্যায় লিখতে প্রস্তুত।"
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশের উন্নয়ন অবকাঠামো, শিক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং স্বাস্থ্যসেবাতে চীনের অবদানের প্রশংসা করেন এবং জোর দিয়ে বলেন যে, এই ধরনের সহযোগিতা বাংলাদেশী জনগণের জন্য বাস্তব সুবিধা প্রদান করেছে।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, দুটি দেশ জনগণের মধ্যে গভীর বন্ধন গড়ে তুলেছে। চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক এখন সর্বকালের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান, প্রধান রাজনৈতিক দলের জ্যেষ্ঠ নেতা, বিদেশী কূটনীতিক, আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধি, চীনা সম্প্রদায়ের সদস্য, শিক্ষাবিদ, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব এবং থিঙ্ক ট্যাঙ্ক বিশেষজ্ঞ সহ ৬০০ জনেরও বেশি অতিথি উপস্থিত ছিলেন।
সন্ধ্যায় ইউনান গোল্ডেন অ্যান্ড সিলভার বার্ড আর্ট ট্রুপ এবং কোয়ানঝো আর্ট ট্রুপের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, জাতিগত নৃত্য, অ্যাক্রোব্যাটিক্স এবং ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্রের সঙ্গীত পরিবেশিত হয়। দর্শকদের কাছে তা খুবই উপভোগ্য ছিল।
অতিথিরা চীন-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর উদযাপন এবং জাপানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে চীনা জনগণের প্রতিরোধ যুদ্ধ এবং বিশ্ব ফ্যাসিবাদ বিরোধী যুদ্ধে বিজয়ের ৮০তম বার্ষিকী উদযাপনের প্রদর্শনীও পরিদর্শন করেন।
অনুষ্ঠানস্থলে এন্টারপ্রাইজ বুথ, পর্যটন প্রচারণা এবং সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতা কর্নারও ছিল, যা দর্শকদেরও ব্যাপক মনোযোগ আকর্ষণ করেছিল।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, পিআরের (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পক্ষে নয় বিএনপি। এটার কোনো ভিত্তি নেই। সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে গতকাল বৃহস্পতিবার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, দেশের সিদ্ধান্ত নিজেদেরই নিতে হবে এবং সেটা ঐক্যবদ্ধভাবে। যেকোনো বিষয় আলোচনার মধ্য দিয়ে সমাধান হবে মনে করে বিএনপি।
মির্জা ফখরুল বলেন, আলোচনার মধ্যে কর্মসূচি দেওয়ার অর্থ হচ্ছে অহেতুক চাপ সৃষ্টি করা। এটি গণতন্ত্রের জন্য শুভ নয়। রাজপথে নামলেই সমস্যার সমাধান হবে কি? আলোচনার মাধ্যমেই সমস্যার সমাধান সম্ভব।
মির্জা ফখরুল বলেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর বিএনপি কোনো ইস্যুতেই আন্দোলনে যায়নি। আলোচনার মাধ্যমেই সমস্যার সমাধান সম্ভব। এ সময় বিএনপি কোনও রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের পক্ষে নয় বলেও জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, জাতিসংঘের আগামী অধিবেশনে যোগ দেব। কিন্তু এজেন্ডা নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
অনুমোদিত ১,২০০ মেট্রিক টন ইলিশের মধ্যে সরবরাহ সীমিত থাকায় গত দুই দিনে মোট ৫৬.২৫ মেট্রিকটন ইলিশ রপ্তানি হয়েছে। এর মধ্যে গত মঙ্গলবার রাতে ৩৭.৪৬ মেট্রিক টন এবং বৃহস্পতিবার ১৮.৭৯ মেট্রিক টন ইলিশ ভারতে পাঠানো হয়েছে।
বেনাপোল মৎস্য কোয়ারেন্টিন অফিসার সজীব সাহা, মাছের স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে তাদের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আমরা নিশ্চিত করেছি যে রপ্তানির জন্য নির্বাচিত প্রতিটি ইলিশ স্বাস্থ্যসম্মত, রোগমুক্ত এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী যোগ্য। এই পরীক্ষা ও মান নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আমরা নিশ্চিত করতে চাই, যে প্রতিটি চালান নিরাপদ ও উচ্চমানের। এছাড়া সরবরাহ সীমিত থাকায় দুই দিনের রপ্তানি অনুমোদিত পরিমাণের তুলনায় কম হলেও আমাদের মূল লক্ষ্য মানসম্পন্ন ইলিশ রপ্তানি বজায় রাখা।
এর আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত বছর ৭৯টি প্রতিষ্ঠানকে ৩,৯৫০ টনের অনুমতি দিয়েছিল। কিন্তু বেনাপোল ও আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে সব মিলিয়ে ইলিশ রপ্তানি হয়েছে প্রায় ৮০২ টন। এর মধ্যে বেনাপোল বন্দর দিয়ে একাই রপ্তানি হয়েছে ৫৩২.৩ মেট্রিক টন।
স্থানীয় ইলিশ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান সততা ফিশের ব্যবস্থাপক রেজাউল করিম বলেন, দুর্গাপূজা ও আসন্ন উৎসবের কারণে ইলিশের চাহিদা বেশি। আমরা চেষ্টা করছি বাজার চাহিদা অনুযায়ী ইলিশ সরবরাহ বজায় রাখতে। তবে মাছের সীমিত পরিমাণ রপ্তানিতে কিছুটা বাধা থাকলেও আমাদের কার্যক্রম সচল রয়েছে।
"একজন শিক্ষার্থী অন্য শিক্ষকের কাছে পড়লে আপনি তাকে কম মার্কস দিবেন, আপনার কাছে পড়লে প্র্যাক্টিক্যালে ভালো মার্কস দিবেন, তার সাথে ভালো আচরণ করবেন এটাও কিন্তু এক ধরণের দুর্নীতি। দুর্নীতি কিন্তু শুধু টাকা খাওয়া না, শুধু অন্যায় করা না। শিক্ষার্থী যে শিক্ষকের কাছেই পড়ুক না কেন তার খাতাটি আপনি নিরপেক্ষভাবে দেখবেন। আপনারা কখনোই শিক্ষার্থীদের সাথে পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণ করবেন না। দুর্নীতি করে কিন্তু কেউই বেশি দূর এগোতে পারে না। পরকালের কথা বাদ দিয়ে ইহকালেও কিন্তু দুর্নীতি করে কেউ সফল হতে পারেনি। কাজেই আপনার শিক্ষার্থীদের সাথে ন্যায়সঙ্গত আচরণ করুন।"
এসময় পরীক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “ভালো ফলাফল পেতে হলে তোমাদেরকে পরিশ্রম করতে হবে। পরীক্ষা ভয় পাওয়ার বিষয় নয়, এটি জীবনের একটি ধাপ মাত্র। নিয়মিত পড়াশোনা, সঠিক সময় ব্যবস্থাপনা ও আত্মবিশ্বাসই সাফল্যের মূল চাবিকাঠি। তোমাদের পরিশ্রম, সততা ও অধ্যবসায় একদিন পরিবার, সমাজ ও দেশের জন্য গর্বের কারণ হবে।”
অভিভাবকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, "আপনারা আপনাদের বাচ্চাদেরকে সময় দিন। অফিস থেকে এসে রিলাক্স মুডে মোবাইল দেখবেন না, ঘণ্টার পর ঘণ্টা আত্মীয়-স্বজনের সাথে কথা বলবেন না। আপনি সন্তানের সামনে মোবাইল ব্যবহার করলে ও কিন্তু ভালো কিছু শিখবে না।"
বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১১ টায় রাজবাড়ীর পাংশায় এস.এস.সি-২০২৬ পরীক্ষার প্রস্তুতি, শিক্ষার মান উন্নয়ন, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ এবং মাদকাসক্তির কুফল সম্পর্কে সচেতনতার লক্ষ্যে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষক মন্ডলীর উপস্থিতিতে অভিভাবক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক ও বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সুলতানা আক্তার এসব কথা বলেন।
পাংশা পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে অংশগ্রহণ করেন পাংশা পৌরসভার পাংশা পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, কাজী আব্দুল মাজেদ একাডেমি ও এয়াকুব আলী চৌধুরী বিদ্যাপীঠের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকবৃন্দ।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস.এম. আবু দারদা'র সভাপতিত্বে সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, পাংশা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সালাউদ্দিন ও পাংশা পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের অভিভাবক সদস্য মো. বাহারাম হোসেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবুল কালাম আজাদ।
সঞ্চালনায় ছিলেন উদয়পুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সামসুল আলম (সোহরাব)। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির উদ্দেশে মানপত্র পাঠ করেন পাংশা পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সান্ত্বনা দাস।
শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকেও পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের প্রস্তুতি, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ ও মাদকমুক্ত সমাজ গঠনের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখা হয়।
অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন তেলওয়াত ও পবিত্র গীতা পাঠ করা হয়। আলোচনা শেষে জেলা প্রশাসক ৩টি বিদ্যালয়ের মাঝে বিভিন্ন ক্রীড়া সামগ্রী বিতরণ করেন।
মন্তব্য