করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে গণপরিবহনে অর্ধেক যাত্রী নেয়ার নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। এ কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হয় সাধারণ যাত্রীদের।
সরকারি, বেসরকারি অফিস-আদালত সবকিছু স্বাভাবিক নিয়মে চলায় বাসে নিয়মিত যাত্রীর সংখ্যা আগের মতোই রয়ে গেছে। কিন্তু সরকারি নির্দেশনায় বাসের অর্ধেক সিটে যাত্রী পরিবহনের কথা বলায় সংকট দেখা দিয়েছে।
বুধবার সকাল থেকে অফিসগামী সাধারণ মানুষ বাসের সংকটে ভুগেছেন। দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থেকেও তারা বাসে উঠতে পারেননি। আবার যারা উঠতে পেরেছেন, তাদের সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী দিতে হয়েছে ৬০ শতাংশ বেশি ভাড়া। কোনো কোনো গণপরিবহনে ৬০ শতাংশেরও বেশি ভাড়া নেয়ার অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা।
আবার কিছু কিছু পরিবহন কোনো নির্দেশনার তোয়াক্কা না করে প্রতি আসনে যাত্রী বহনের পাশাপাশি দাঁড়িয়েও যাত্রী নিচ্ছে। অতিরিক্ত ভাড়া তো আদায় করছেই।
সংক্রমণ দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকার গত সোমবার জনসমাগমে বিধিনিষেধ দিয়ে ১৮টি নির্দেশনা জারি করে। সেই সঙ্গে গণপরিবহনে অর্ধেক যাত্রী নেয়ার শর্তে ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়ানো হয়। যা কার্যকর হয় বুধবার।
রাজধানীর বাড্ডা, রামপুরা, মালিবাগ, ধানমন্ডি, জিগাতলা, সায়েন্স ল্যাব, শাহবাগ, প্রেস ক্লাব, পল্টন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অফিসগামী সাধারণ যাত্রীরা বেশি ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন। অন্যদিনের মতো তারা গণপরিবহনে সময়মতো উঠতে পারেননি। অধিকাংশ বাস অর্ধেক যাত্রী বহন করায় বহু যাত্রী বাসে উঠতেই পারেননি। যে কারণে দীর্ঘ সময় বিভিন্ন স্টপেজে দাঁড়িয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে তাদের।
উত্তরা থেকে খিলক্ষেত পর্যন্ত হাজারো যাত্রী বুধবার সকালে রাস্তায় দাঁড়িয়েছিলেন। সবকিছু খোলা রেখে বাসে অর্ধেক আসন নির্ধারণ করে দেয়ার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে খিলক্ষেতে বিক্ষোভ করেছেন যাত্রীরা।
রামপুরা ব্রিজ থেকে মতিঝিল যাওয়ার জন্য প্রায় এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও কোনো বাসে উঠতে না পেয়ে সিএনজিতে অফিস পৌঁছেছেন বেসরকারি একটি অফিসের কর্মচারী নাইম হাসান। তিনি বলেন, ‘সাধারণত রামপুরা ব্রিজ থেকে গাড়ি ফাঁকা পাই। আজকে কোনো গাড়িতে সিট খালি নেই। বাসগুলোতে অর্ধেক যাত্রী নেয়ায় কারণে সিট ফাঁকা পাওয়া যাচ্ছে না।’
জিগাতলা বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রেস ক্লাবে যাওয়ার জন্য দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থেকেও বাসে উঠতে পারেননি বৃদ্ধ আনিস মিয়া। তিনি বলেন, ‘আমি বয়স্ক মানুষ। কোনো গাড়ি এলেই সবাই ধাক্কাধাক্কি করে উঠে যায়। আমি গেট পর্যন্তই পৌঁছাতে পারি না।’
অর্ধেক সিট ফাঁকা রাখার কারণে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে যাত্রীদের এ দুর্ভোগ দেখা গেছে। আবার কিছু পরিবহন স্বাস্থ্যবিধি না মেনে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন এবং একই সঙ্গে ৬০ শতাংশের বেশি ভাড়া আদায় করছে বলে অভিযোগ জানিয়েছেন যাত্রীরা।
মিরপুর চিড়িয়াখানা সড়ক থেকে ফার্মগেট নিয়মিত যাতায়াত করেন জসিম উদ্দিন। বুধবার বাসে উঠতে তাকে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে। আবার বাসে উঠার পর তাকে গুনতে হয়েছে দ্বিগুণ ভাড়া। নিউ ভিশনের একটি গাড়িতে করে ফার্মগেট আসেন তিনি। জসিম বলেন, ‘আমার নিয়মিত ভাড়া ছিল ১৫ টাকা, আজকে রাখছে ৩০ টাকা। ওরা বলছে, যাত্রী অর্ধেক, তাই ভাড়া ডবল।’
যদিও পরিবহন মালিকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়ানো হলেও তা আদায়ে সমস্যা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পরিবহন শ্রমিকরা। তারা বলছেন, যাত্রীরা বাড়তি ভাড়া দিতে চায় না। ঝগড়া করে।
সাভার ইপিজেড থেকে যাত্রাবাড়ী লিংকরোডগামী গাবতলী এক্সপ্রেসের একটি গাড়ির কন্ডাক্টর ইমরান। তিনি বলেন, ‘আমাদের গাড়িতে আজকে থেকে অর্ধেক যাত্রী নিচ্ছি। কিন্তু যাত্রীরা বাড়তি ভাড়া দিতে চাচ্ছে না। ২০ জন যাত্রী উঠলে ১৫ জনের সঙ্গেই তর্ক হচ্ছে।’
এক বাস চালিয়ে উসুল করা হচ্ছে দুই বাসের ভাড়া
করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে গণপরিবহনে অর্ধেক যাত্রী বহন এবং ৬০ শতাংশ বেশি ভাড়া নেয়ার কথা থাকলেও কিছু কিছু পরিবহনে কোনোটাই মানা হচ্ছে না। অতিরিক্ত যাত্রী উঠানো হচ্ছে। বাড়তি ভাড়াও নেয়া হচ্ছে।
দুই সিটে একজন যাত্রী উঠানোর নিয়ম করা হলেও তা মানা হচ্ছে না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা গেছে, সিটপ্রতি একজন করে বসানোর পরও দাঁড়িয়ে যাত্রী বহন করা হচ্ছে। খালি নেই ইঞ্জিনকাভারও। সে হিসেবে সুযোগ পেয়ে একটি বাস চালিয়ে দুটি বাসের ভাড়া আদায় করছেন কিছু পরিবহন শ্রমিক।
রাজধানীর মোহাম্মদ টু বনশ্রীর তরঙ্গ প্লাস বাসে যাত্রী পরিবহনে এমন চিত্রই দেখা গেল।
৪২ সিটের বাসটিতে ২১ জন যাত্রী নিয়ে ছাড়ার কথা থাকলেও শুরুতেই নিয়ম ভঙ্গ করে ৩২ জন যাত্রী ওঠান সুপারভাইজার ইকরাম আলী। এরপর শঙ্কর বাসস্ট্যান্ড থেকে উঠে পাঁচজন যাত্রী। বাসটি ধানমন্ডি ১৫ নম্বর এসে পৌঁছালে উঠানো হয় আরও চারজন যাত্রী।
এমন অবস্থার মধ্যে বেশির ভাগ সিটে দুজন করে বসলেও ৬০ শতাংশ বেশি ভাড়া দেয়ার কারণে আপত্তি করে বসেন কেউ কেউ। কিন্তু চালকের সহকারী নির্বিকার।
ধানমন্ডি-১৫ নম্বর থেকে ওঠা যাত্রী আরাফাত হোসেন অভিযোগ করেন, ‘আজব এক দেশে বাস করছি। করোনার জন্য সরকার ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়াল বুঝলাম, কিন্তু বেশি ভাড়া নেয়ার পরও আগের মতো সিটপ্রতি একজন করে বসছে। এ আবার কেমন কথা! তাহলে ভাড়া বাড়ানোর মানে কী? কিসের স্বাস্থ্যবিধি কিসের কী? উল্টো বাসওলারা ফায়দা নিচ্ছে।’
বনশ্রীগামী ফারজানা রহমান জানান, ‘সিটি কলেজ থেকে বনশ্রী পর্যন্ত যেতে দুদিন আগেও ভাড়া ছিল ৩৫ টাকা। কিন্তু সুপার ভাইজার আজ আমার কাছ থেকে ভাড়া নিল ৭০ টাকা। দ্বিগুণ ভাড়ায়। অথচ করোনার জন্য সরকার ৬০ ভাগ ভাড়া বাড়িয়েছে। সেই হিসেবে ভাড়া হওয়ার কথা সর্বোচ্চ ৫৫ টাকা। আবার দুই সিটে একজন যাওয়ার নিময় কিন্তু প্রতি সিটে যাত্রী বসানো হয়েছে। তাহলে তো বলাই যায়, সুযোগ পেয়ে এক বাস চালিয়ে দুই বাসের ভাড়া উসুল করা হচ্ছে।’
এমন অভিযোগে সুপার ভাইজার একরাম আলী বলেন, ‘যাত্রী জোর করে উইঠা পড়ছে আমরা কি ধাক্কা দিয়া ফালাইয়া দিমু? আমরা তো বাসা থাইকা যাত্রী আনতাছি না। যাত্রীরা দেইখা হুইনাই উঠতাছে। আমাগো কি দোষ? যত জন যাত্রী উঠবো ততজন থেইকাই তো ভাড়া লমু, তাই না?’
নিয়মের বাইরে গিয়ে দ্বিগুণ ভাড়া নেয়ার ব্যাখা হিসেবে ইকরাম জানান, ‘এ রুটের যাত্রীদের বেশির ভাগই মেরুলবাড্ডা গিয়া নাইমা পড়ে। ধানমন্ডি থেকে মেরুলের ভাড়া ৫৫ ট্যাকা। এই করোনার সময় মেরুল থেকে বনশ্রী একজন যাইতে গেলে লাগব ১৫ টাকা। সে হিসেবে ৭০ ট্যাকা কইরা লইতাছি। যদিও জিনিসটা ঠিক হয় নাই। সরকারের নিয়ম মানা উচিত।’
সচিবালয়ের উপস্থিতির চিত্র
৫০ শতাংশ উপস্থিতি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াধীন। নিজ নিজ মন্ত্রণালয় তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সেভাবেই নির্দেশ দিয়েছে। এবং কারা সশরীরে অফিস করবেন, কারা বাসায় থেকে অফিস করবেন, তা নির্ধারণ চলছে। যেহেতু গত সোমবার বিকেলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার এবং মঙ্গলবার ছুটি ছিল, একাধিক মন্ত্রণালয়ে সরকারের নির্দেশনা কর্মীদের কাছে পৌঁছায়নি। যার ফলে অনেকেই বুধবার অফিসে চলে এসেছেন। পরবর্তী কার্যদিবস থেকে সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়ন হবে বলে সংশ্লিষ্টদের আশা।
অসুস্থ, বয়স্ক ও প্রসূতিদের বাসায় থেকে অফিস করার নির্দেশনা এমনিতেই রয়েছে।
সরকার দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীকে প্রেস কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে মনোনীত করেছে। বৃহস্পতিবার তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপসচিব খাদিজা তাহের ববির সই করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘প্রেস কাউন্সিলের ৫ নম্বর ক্রমিকের প্রতিনিধি নিউএজ পত্রিকার সম্পাদক নুরুল কবীর পদত্যাগ করায় তার পরিবর্তে সংবাদপত্র ও সংবাদ সংস্থার সম্পাদক সমিতির প্রতিনিধি হিসেবে দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীকে প্রেস কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে মনোনয়ন প্রদান করা হলো।’
বর্তমান কাউন্সিলের অবশিষ্ট মেয়াদের জন্য এ মনোনয়ন কার্যকর থাকবে। জনস্বার্থে জারিকৃত এ প্রজ্ঞাপন অবিলম্বে কার্যকর হবে বলেও প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে।
প্রেস কাউন্সিলের বর্তমান চেয়ারম্যান বিচারপতি একেএম আব্দুল হাকিম, সচিব (উপসচিব) মো. আব্দুস সবুর।
এছাড়া ১২ জন সদস্য হচ্ছেন—১. বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন, ২. ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি মিস দৌলত আকতার মালা, ৩. ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. শহিদুল ইসলাম, ৪. ডেইলি স্টারের সম্পাদক ও প্রকাশক মাহফুজ আনাম, ৫. দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, ৬. দৈনিক বণিক বার্তার প্রকাশক ও সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ, ৭. দ্য ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ, ৮. দৈনিক পূর্বকোণের সম্পাদক ডা. রমিজ উদ্দিন চৌধুরী, ৯. নিউজপেপার্স ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (নোয়ার) উপদেষ্টা আখতার হোসেন খান, ১০. বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম, ১১. বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সচিব ড. মো. ফখরুল ইসলাম এবং ১২. বার কাউন্সিলের ভাইস-চেয়ারম্যান জয়নুল আবেদীন।
অন্তর্বর্তী সরকারের ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী মিয়া শাহবাজ শরিফের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। পাকিস্তানের ইসলামাবাদে পিএম হাউসে উভয়ের এ সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়।
বৃহস্পতিবার ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ধর্ম উপদেষ্টা ও তার প্রতিনিধিদলকে স্বাগত জানিয়ে পাকিস্তান প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক এবং সখ্যের বন্ধনে আবদ্ধ। এ সম্পর্ক আগামী দিনগুলোতে আরও জোরদার হবে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নিউইয়র্ক ও কায়রোতে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে অনুষ্ঠিত বৈঠকের কথা উল্লেখ করে দূরদর্শী নেতৃত্ব এবং দারিদ্র্য দূরীকরণে তার অবদানের প্রশংসা করেন। এছাড়া তিনি পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সম্পর্ককে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে প্রধান উপদেষ্টার আকাঙ্ক্ষাকে সাধুবাদ জানান।
এদিকে ধর্ম উপদেষ্টা বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের একটি পত্র পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন।
পাকিস্তান প্রধানমন্ত্রীকে লেখা এ পত্রে প্রধান উপদেষ্টা পাকিস্তানে নজিরবিহীন বন্যায় সে দেশের সরকার ও জনগণের প্রতি গভীর সহমর্মিতা ও আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং ভয়াবহ এ দুর্যোগে নিহতদের পরিবার ও ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।
এ পত্রে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, কঠিন এ সময়ে বাংলাদেশের জনগণ পাকিস্তানের ভ্রাতৃপ্রতিম জনগণের পাশে রয়েছে। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আপনার সুদক্ষ নেতৃত্বে পাকিস্তানের জনগণ তাদের অসাধারণ ধৈর্য ও সহনশীলতার মাধ্যমে এ চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করবে। প্রয়োজনে ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রমে বাংলাদেশ সর্বাত্মক সহযোগিতা ও সহায়তা প্রদানে প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।
সাক্ষাৎকালে ঢাকা ও করাচীর মধ্যে সরাসরি বিমান চলাচল দ্রুত পুনঃস্থাপনের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করা হয়। এছাড়া কৃষি, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, ধর্মতত্ত্ব ও চিকিৎসা বিষয়ে উভয়দেশের শিক্ষার্থী বিনিময়ে বৃত্তি প্রদানের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার, প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ, ধর্মবিষয়ক ও আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি মন্ত্রী সরদার ইউসুফ খান, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী আতা তারার, ইসলামাবাদে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. ইকবাল হোসেন খান, উপদেষ্টার একান্ত সচিব ছাদেক আহমদ ও শরীফ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের প্রভাষক মুফতি জাহিদ হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
পুলিশের একটি স্বাধীন তদন্ত সার্ভিস গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আজ বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সভায় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস সভাপতিত্ব করেন।
পরে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘উপদেষ্টা পরিষদ সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুলিশের একটি স্বাধীন তদন্ত সার্ভিস গঠন করা হবে, যাতে কোনো রাজনৈতিক বা অন্য কোনো প্রভাব ছাড়াই তদন্ত সম্পন্ন করা যায়।’ এর পাশাপাশি পুলিশের ভেতরে অভ্যন্তরীণ অভিযোগ যাচাইয়ের জন্য একটি কমিশন গঠনের বিষয়েও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও জানান, ‘এই দুই সিদ্ধান্ত দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য আইন মন্ত্রণালয় কাজ করবে। এ কাজে উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, আদিলুর রহমান খান এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বখশ চৌধুরী যুক্ত থাকবেন।’
সভায় স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করার বিষয়েও গুরুত্ব দেওয়া হয়। প্রেস সচিব বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা বারবার জোর দিয়েছেন যে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও ক্ষমতায়িত করতে হবে। ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন যেন নিজস্ব তহবিল সংগ্রহ ও স্বচ্ছভাবে পরিচালনা করতে পারে সে বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
স্বাস্থ্য খাত নিয়েও সভায় আলোচনা হয়। শফিকুল আলম জানান, ‘কিছু মেডিকেল কলেজে যোগ্য শিক্ষকের সংকট রয়েছে। তাই অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের পরামর্শক বা অন্যভাবে সম্পৃক্ত করে শিক্ষা কার্যক্রমের মান উন্নত করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
নেপালে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের বিষয়েও সভায় আলোকপাত করা হয়। প্রেস সচিব বলেন, ‘নেপালে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা ভালো আছেন, দূতাবাস তাদের দেখভাল করছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর বিশেষ ফ্লাইটে জাতীয় ফুটবল দলকে দেশে আনার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।’
এ বৈঠক প্রসঙ্গে শফিকুল আলম আরও বলেন, ‘আজকের বৈঠকের প্রতিটি সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের অর্থনীতি, শাসনব্যবস্থা ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমাদের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করবে।’
ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।
ক্যাডার কর্মকর্তাদের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণের মেয়াদ ছয় মাস থেকে কমিয়ে চার মাস করা হয়েছে। এর মধ্যে তিন মাস প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে এবং এক মাস মাঠপর্যায়ে ওরিয়েন্টেশন ও গ্রাম সংযুক্তি অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
আজ বুধবার প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে জাতীয় প্রশিক্ষণ কাউন্সিলের নবম সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সভায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোখলেস উর রহমান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান উপস্থিত ছিলেন।
সভায় আরও সিদ্ধান্ত হয়, কর্মকর্তাদের মাস্টার্স ও পিএইচডি কোর্সে ভর্তির সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৪৫ থেকে বাড়িয়ে ৪৭ বছর করা হবে। পিএইচডি কোর্সে অধ্যয়নকালে প্রতি বছর তত্ত্বাবধায়কের অগ্রগতিমূলক প্রত্যয়ন মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে হবে, অন্যথায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বেতন বন্ধ রাখা হবে।
সভায় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘সরকারি যত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আছে সেগুলোর ওপর মূল্যায়ন করতে হবে। কী ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, প্রশিক্ষণের ধরন-মান ইত্যাদির মানদণ্ড নির্ধারণ করে ক্যাটাগরিভিত্তিক প্রতিটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রকে র্যাংকিং করতে হবে এবং নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘একটি স্বাধীন ইউনিট গঠন করতে হবে। তারা সমস্ত গবেষণা প্রতিষ্ঠানের ওপর পদ্ধতিগতভাবে, স্বাধীনভাবে মূল্যায়ন করবে। গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর সামগ্রিক দর্শন জানতে হবে। সেগুলো সঠিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে কি না দেখতে হবে। সরকারি কর্মকর্তারা যারা বিদেশ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছেন তাদের তথ্য সেখানে থাকবে।’
সভায় সঞ্জীবনী প্রশিক্ষণের নাম পরিবর্তন করে ‘দক্ষতা নবায়ন প্রশিক্ষণ’ করার সিদ্ধান্ত হয়। এ প্রশিক্ষণ হালনাগাদকৃত কারিক্যুলামে মাঠপর্যায়ে সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে আয়োজন করা হবে। এছাড়া উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে কর্মকর্তারা আংশিক বৃত্তিপ্রাপ্ত হলেও প্রেষণ অনুমোদন করা যাবে।
কর্মচারীদের সততা ও নৈতিকতা বিকাশ এবং দুর্নীতি বিরোধী মনোভাব তৈরিতে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কোর্সে সদ্গুণ, নৈতিকতা, আচরণবিজ্ঞান ও আচরণবিধি অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়। পাশাপাশি প্রশিক্ষণ ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলোর সার্বিক মূল্যায়ন এবং প্রশিক্ষণ বিষয়ক সিদ্ধান্ত গ্রহণের লক্ষ্যে গবেষণা, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন কার্যক্রম পরিচালনারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সভায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদকে সভাপতি করে একটি নির্বাহী কমিটি (ইসিএনটিসি) গঠন করা হয়।
জাতীয় লেখক ফোরাম আয়োজিত সাপ্তাহিক সাহিত্য আড্ডা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাজধানীর ধানমন্ডিতে হওয়া এ সাহিত্য আড্ডায় উপস্থিত ছিলেন সংগঠেনর সভাপতি ড. দেওয়ান আযাদ রহমান, মহাসচিব কবি-কথাসাহিত্যিক জাহাঙ্গীর হোসাইন এবং উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য মো. আবদুল মান্নানসহ বাংলাদেশের খ্যাতিমান লেখকরা। অনুষ্ঠানটি একটি সাধারণ প্রাণবন্ত আড্ডার মধ্যেই শুরু হয়। অনুষ্ঠানটি ৩টি পর্বে সাজানো হয়েছে। প্রতি পর্বে চারজন কবিকে মঞ্চে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তারা তাদের গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য এবং কবিতা পাঠ করেছেন। পুরো অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেছেন কবি-কথা সাহিত্যিক জাহাঙ্গীর হোসাইন।
শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি পরিশোধের জন্য সরকার প্রদত্ত সুদমুক্ত ঋণ যথাসময়ে ফেরত না দিলে সংশ্লিষ্ট শিল্প কারখানার মালিকদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
বুধবার সচিবালয়ে আয়োজিত এক সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব, ব্যাংকিং ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধি, বিজিএমইএ-এর সভাপতি এবং সংশ্লিষ্ট ঋণগ্রহীতা কারখানার মালিকদের নিয়ে এ সভার আয়োজন করা হয়।
ড. এম সাখাওয়াত হোসেন জানান, বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকরা শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় শ্রম অসন্তোষ নিরসনের লক্ষ্যে সরকার বার্ডস গ্রুপ, টিএনজেড গ্রুপ, বেক্সিমকো গ্রুপ, ডার্ড গ্রুপ, নায়াগ্রা টেক্সটাইলস লিমিটেড, রোয়ার ফ্যাশন লিমিটেড, মাহমুদ জিন্স লিমিটেড, স্টাইল ক্রাফট লিমিটেড এবং গোল্ডস্টার গার্মেন্টস লিমিটেডকে অর্থ বিভাগ এবং কেন্দ্রীয় তহবিল, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে সুদমুক্ত ঋণ প্রদান করে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণ চুক্তির আওতায় উক্ত অর্থ পরিশোধ করছেন না।
তিনি বলেন, তাদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর অবস্থানে যাবে। তাদের পাসপোর্ট জব্দের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
ইতোমধ্যে কয়েকজন পলাতক মালিকের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তিনি পলাতক মালিক ও প্রতিষ্ঠানের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের পাসপোর্ট স্থগিত রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার নির্দেশনা দেন।
উপদেষ্টা বলেন, "এই ঋণের টাকা শ্রমিকের টাকা এবং জনগণের ট্যাক্সের টাকা। এ টাকা আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে।"
তিনি বলেন, এই ক্ষেত্রে কোনোরকম ছাড় দেওয়া হবে না।
তিনি সংশ্লিষ্ট শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিক ও প্রতিনিধিদের সংশ্লিষ্ট লিয়েন ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করে প্রতিষ্ঠানের জমি, কারখানা, যন্ত্রপাতি বিক্রি করে হলেও ডিসেম্বর মাসের মধ্যে ঋণের সকল টাকা পরিশোধ করতে বলেন।
এ বিষয়ে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ-কে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা সভায় উপস্থিত ছিলেন।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি, ইসরাইলের নৃশংসতার জন্য জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এবং ওই অঞ্চলে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছেন।
বাংলাদেশে সফররত ফিলিস্তিনের প্রধান বিচারপতি ড. মাহমুদ সিদকি আল-হাব্বাশের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় গতকাল মঙ্গলবার এক বৈঠকে উপদেষ্টা এ মন্তব্য করেন। আজ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ বিষয়ে জানানো হয়।
বৈঠকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ফিলিস্তিনের জনগণের প্রতি বাংলাদেশের অবিচল সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন এবং ১৯৬৭ সালের আগের সীমানা অনুযায়ী দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের প্রতি সমর্থন জানান।
ফিলিস্তিনের প্রধান বিচারপতি ড. আল-হাব্বাশ বাংলাদেশের নেতৃত্ব ও জনগণের স্থায়ী সমর্থনের জন্য গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ঐক্য আরও সুদৃঢ় করার গুরুত্বের ওপরও জোর দেন।
ফিলিস্তিনিদের নিরন্তর সমর্থনের জন্য দেশটির প্রধান বিচারপতি বাংলাদেশের নেতৃত্ব ও জনগণের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি এ বিষয়ে মুসলিম উম্মাহর মধ্যে বৃহত্তর ঐক্যের ওপরও জোর দেন।
বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির আমন্ত্রণে ড. আল-হাব্বাশ তিন দিনের সরকারি সফরে বাংলাদেশে এসেছেন।
মন্তব্য