ধর্মভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের তিন দিনের বিক্ষোভ আর হরতালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মুক্তিযুদ্ধের স্মারক সব স্থাপনায় হামলা চালানো হয়েছে। ভাঙচুর করা হয়েছে শহিদ মুক্তিযোদ্ধাদের নামফলকও। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার কার্যালয়েও দেয়া হয়েছে আগুন।
হামলাকারীরা মাদ্রাসা থেকে মিছিল বের করার সময় পাত্রে করে পেট্রল নিয়ে গেছে। সঙ্গে ছিল হাতুড়িসহ দেশীয় নানা অস্ত্রশস্ত্র।
যেখানেই তারা গেছে, চালানো হয়েছে ভাঙচুর, সেই পেট্রল ঢেলে দেয়া হয়েছে আগুন।
এসব ঘটনায় আওয়ামী লীগ, মুক্তিযোদ্ধা, সামাজিক আন্দোলনের কর্মীরা ভীষণ ক্ষুব্ধ। তারা বলছেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীকে সহযোগিতা করে আসা এই শক্তি এখনও তাদের অবস্থান পাল্টায়নি। এই ঘটনাই তার প্রমাণ।
আরও পড়ুন: মাদ্রাসাছাত্রদের হামলায় ট্রেন বন্ধ ঢাকা-চট্টগ্রাম-সিলেট রুটে
১৯৭১ সালে কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক রাজনৈতিক দলের মধ্যে সবচেয়ে বড় নেজামে ইসলামসহ অন্যরাও পাকিস্তানকে সমর্থন দিয়েছে। হেফাজত নেতা মামুনুল হকের বাবা শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হকের ৯০ দশকে দেয়া একটি সাক্ষাৎকার সম্প্রতি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে, যেখানে তিনি বলেছেন, ‘৭১-এ আমগো অবস্থান ছিলো নিরপেক্ষভাবে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে।’
শুক্রবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের কান্দিপাড়া এলাকার জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুসিয়া মাদ্রাসা থেকে কয়েক হাজার ছাত্রের মিছিল বের হয়। তারা শহরের কেন্দ্রস্থল বঙ্গবন্ধু স্কয়ারে গিয়ে হামলে পড়ে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে। সেখানে ভাঙচুর করে পেট্রল দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। এতে ম্যুরালটির বেশ ক্ষতি হয়েছে।
রোববারও হামলা হয় একই ম্যুরালে। এবারও হাতুড়ি পেটা করে সেখানে পেট্রল ঢেলে আগুন দেয়া হয়।
শনিবার বিকেল পর্যন্ত মাদ্রাসার ছাত্ররা ছিল শান্ত। বিকেলে ওই মাদ্রাসারা সামনে দিয়ে আওয়ামী লীগের একটি মিছিল যাওয়াকে কেন্দ্র করে ছাত্ররা বের হয়ে জড়ায় সংঘর্ষে। পরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে নন্দনপুর এলাকায়।
রোববার হরতালের দিন সকালে একই মাদ্রাসা থেকে মিছিল বের হয়। পরে আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকেও হেফাজত সমর্থকরা এসে যোগ দেন তাদের সঙ্গে।
আরও পড়ুন: ব্রাহ্মণবাড়িয়াজুড়ে ত্রাসের পর সংঘর্ষে নিহত ৩
বিকেল পর্যন্ত শুক্রবারের মতোই বিভিন্ন সরকারি স্থাপনার পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন এবং মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কার্যালয়ে তারা বিনা উসকানিতে হামলে পড়ে।
কেবল এবার নয়, এর আগেও নানা সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একই চিত্র দেখা গেছে।
মুক্তিযুদ্ধের একটি স্থাপনাও বাদ যায়নি
বিভিন্ন যানবাহনে হামলা শেষে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর আধুনিক সুপার মার্কেটের সামনে যায় মাদ্রাসাছাত্ররা। সেখানে থাকা বঙ্গবন্ধুর আরও একটি ম্যুরালে লাঠিসোঁটা ও হাতুড়ি দিয়ে ভাঙচুর চালায় তারা।
এরপর হেফাজত সমর্থকরা যায় পাশের ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষা চত্বরে। সেখানে গত দুই দিন ধরে চলছিল উন্নয়ন মেলা। তবে হরতালের কারণে স্টলগুলো বন্ধ ছিল।
মাদ্রাসাছাত্ররা সেখানে স্টলগুলো ভাঙচুরের পাশাপাশি ধরিয়ে দেয় আগুন। চত্বর মঞ্চে যেখানে নানা সময় জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠানমালা ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করা হয়, সেখানে পেট্রল ঢেলে দেয়া হয় আগুন।
বাঙালির মুক্তি সংগ্রামে ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের নাম বরাবর শ্রদ্ধার সঙ্গে উচ্চারিত হয়। পাকিস্তান আমলে এই নেতাই প্রথম বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দিতে পাকিস্তান গণপরিষদে দাবি তোলেন।
১৯৪৮ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ওই দাবি তোলা এই রাজনীতিক বাংলাদেশের স্বাধিকার আন্দোলনেও রাখেন ভূমিকা। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে তাকে ধরে নিয়ে হত্যা করে পাকিস্তানি বাহিনী।
যুদ্ধ শেষে এই সংগ্রামীর স্মরণে জেলার বিভিন্ন সড়কসহ এই ভাষা চত্বরটি তৈরি করা হয়।
আরও পড়ুন: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আবার সহিংস হেফাজত, নীরব পুলিশ
এটি ভাঙচুর শেষে হামলাকারীরা যায় বীর মুক্তিযোদ্ধা আল মামুন সরকারের কার্যালয়ে। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকও।
ওই কার্যালয়েও ব্যাপক ভাঙচুর করে পেট্রল ঢেলে আগুন দেয়া হয়। উন্মত্ত মাদ্রাসাছাত্রদের বাধা দেয়ার মতো কোনো পরিস্থিতিই ছিল না।
এখানে ভাঙচুর শেষে হেফাজত কর্মীরা যায় একই এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ভবনে। সেটি ছিল তালাবদ্ধ। সেখানে ইটপাটকেল দিয়ে ঢিল ছোড়া হয় ফাঁকা সেই ভবনে। এতে ভবনের জানলার কাচগুলো ভেঙে যায়।
সেখান থেকে মাদ্রাসাছাত্ররা যায় শহরের কাউতলী এলাকায়। সেখানে আছে শহিদ মুক্তিযোদ্ধাদের নামফলক। হাতুড়ি দিয়ে সেই ফলকও ভাঙচুর করা হয়।
এরপর হেফাজত সমর্থকরা যায় শহরের কুমারশীল মোড়ে। সেখানে হামলা চালানো হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি গণ গ্রন্থাগারে।
ভবনের জানলার কাঁচ ভাঙচুরের পাশাপাশি গ্রন্থাগারের ভেতরে পেট্রলের বোতল ছুড়ে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। এতে পুড়ে যায় বইয়ের বেশির ভাগ।
মাদ্রাসা ছাত্ররা ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর স্মৃতিবিজড়িত দুটি স্থাপনায়।
শহরের কুমারশীল এলাকায় সুর সম্রাট দি আলাউদ্দিন সঙ্গীতাঙ্গনে গিয়ে তারা ভাঙচুরের পাশাপাশি ধরিয়ে দেয় আগুন। পুড়ে যায় আলাউদ্দিন খাঁর ব্যবহৃত গামছা, নামাজের বিছানা, তবলাসহ নানা ঐতিহাসিক জিনিসপত্র।
এই সঙ্গীতাঙ্গনে বছর কয়েক আগেও ব্যাপক হামলা চালিয়েছিল একই মাদ্রাসার ছাত্ররা। তখনও বাংলাদেশের অন্যতম সেরা এই সঙ্গীতজ্ঞের নানা স্মৃতি নষ্ট হয়ে যায়।
প্রতিষ্ঠানটিতে দ্বিতীয় দফা হামলা চালানোর পাশাপাশি মাদ্রাসা ছাত্ররা ভাঙচুর করে ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ মিলনায়তনেও। পৌরসভার পাশে এই মিলনায়তনে নানা সাংস্কৃতির অনুষ্ঠান হয়ে থাকে।
সেখানে গিয়ে পাঁচ থেকে ছয়শ চেয়ার ছাড়াও মঞ্চে ভাঙচুর করে আগুন দেয়া হয়।
বেলা ১১টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত তাণ্ডব চালানোর পর মাইকে ‘কর্মসূচি’ শেষ ঘোষণা করে মাদ্রাসায় ফিরে যায় ছাত্ররা।
বিরূপ প্রতিক্রিয়া
হেফাজত কর্মীদের এই ধ্বংসযজ্ঞে ভীষণ ক্ষুব্ধ মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের জন্য অস্ত্র তুলে নেয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা রতন কান্তি দত্ত। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া মুক্তিযুদ্ধের একটি অন্যতম স্থান। এখানে মুক্তিযুদ্ধে স্মৃতিবিজড়িত অনেক কিছুই আছে। বারবার তারা এগুলোতে হামলা চালায়। আমি তাদের তাণ্ডবের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
শহীদ ধীরেন্দ্র নাথ দত্ত ভাষা চত্বরে হামলার সমালোচনা করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক স্বপন মিয়া বলেন, ‘বাংলা ভাষা রক্ষায় শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের রয়েছে অতুলনীয় ভূমিকা। যারা আজ এ কাজ করেছে তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী নয়। এটা তারা অতীতেও বারবার প্রমাণ দিয়েছে, আজও দিয়েছে।’
জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার হারুন অর রশিদ বলেন, ‘যদি তারা মনে-প্রাণে মুক্তিযুদ্ধকে লালন করত, তাহলে এভাবে ধ্বংসযজ্ঞ চালাত না।’
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আল মামুন সরকার বলেন, হামলার ধরন দেখে বোঝা যায়, তারা ইচ্ছা করেই এই স্থাপনাগুলোতে হামলা করেছে। তারা মূলত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আগুন দিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত বাংলার গৌরব। তার নামেই শহরের মূল ফটকে ধীরেন্দ্র নাথ দত্ত ভাষা চত্বর তৈরি করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সকল সভা ও অনুষ্ঠান করা হয়।
‘কাউতলীর শহীদদের নামফলক, বঙ্গবন্ধ ম্যুরাল ভাঙচুর করা হয়েছে, গণগ্রন্থাগার যেখানে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের অনেক বই রয়েছে, পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। বইগুলো অভাবে মুক্তিযুদ্ধের অনেক ইতিহাস থেকে বঞ্চিত হবে নতুন প্রজন্ম।’
আরও পড়ুন:আজ ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখ দুপুর ১২টায় বেবিচক সদরদপ্তরে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) এর চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মোঃ মোস্তফা মাহমুদ সিদ্দিক, বিএসপি, জিইউপি, এনডিসি, এএফডব্লিউসি, এসিএসসি, পিএসসি (Air Vice Marshal Md Mostafa Mahmood Siddiq, BSP, GUP, ndc, afwc, acsc, psc) এর সাথে পাকিস্তান সিভিল এভিয়েশন অথরিটির মহাপরিচালক জনাব নাদির শাফি দার (Mr. Nadir Shafi Dar) এক সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
সাক্ষাৎকালে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে সরাসরি বিমান চলাচল পুনঃস্থাপন বিষয়ে ফলপ্রসূ মতবিনিময় হয় এবং উভয় পক্ষই এ বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন। বৈঠকে ভবিষ্যতে বিমান চলাচল খাতে প্রযুক্তি ও অভিজ্ঞতা বিনিময়, সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং পারস্পরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলো আরও সুদৃঢ় করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
উভয় পক্ষ আশা প্রকাশ করেন যে, বিমান চলাচল পুনঃস্থাপন হলে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, পর্যটন ও জনগণের পারস্পরিক যোগাযোগ আরও বৃদ্ধি পাবে।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন বেবিচক এর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ এবং PIA এর CEO ।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আজ বিকেল ৫টায় সাতটি রাজনৈতিক দল ও একটি সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে, বৈঠকে অংশ নেন- এবি পার্টি, নাগরিক ঐক্য, গণসংহতি আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদ, এলডিপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, জাতীয় গণফ্রন্ট এবং হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ।
এরআগে গত রোববার প্রধান উপদেষ্টা বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি’র সঙ্গে বৈঠক করেন।
ধারাবাহিক এই বৈঠক আসন্ন নির্বাচনের প্রস্তুতিতে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হিসেবে দেখা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-৩ গঠন করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।
আজ সকালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ভবন ও সংলগ্ন এলাকা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
এ সময় আইন উপদেষ্টা বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি আমরা। বিগত সরকারের হত্যা, গুম, নির্যাতনসহ সব ধরনের অপরাধের বিচারের বিষয়ে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আইন উপদেষ্টা বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ভবন সংলগ্ন টিনশেড ভবন খালি হয়ে গেলে আমরা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-৩ গঠন করতে পারি। এটি করা গেলে গুমসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক অপরাধের বিচার কাজ দ্রুত করা যাবে।
তিনি আরো বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা নিয়ে বেশ আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছেন আমাদের বিচারকসহ প্রসিকিউশন ও তদন্ত টিম।
আইন উপদেষ্টা বলেন, দেশের ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের স্বার্থে আমাদের যে ন্যায়বিচার আছে, আইনের শাসন আছে ও মানবাধিকার আছে এটাকে প্রতিষ্ঠিত করার স্বার্থে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে এক হাজারেরও বেশি ছাত্র-জনতাকে হত্যা এবং হাজারও মানুষকে পঙ্গু করার ভয়াবহ মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার অপরিহার্য-অনিবার্য। সেই বিচারকার্যের প্রথম থেকেই আমরা অবিচল আছি। বিচারের যে গতি আছে সেটা নিয়েও আমরা সন্তুষ্ট আছি।
অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ভবন আজ পরিদর্শন করেন। এসময় তাদের সঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলামসহ অপর প্রসিকিউটররা উপস্থিত ছিলেন।
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, এর দলীয় ক্যাডার ও সরকারের অনুগত প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে একের পর এক অভিযোগ জমা পড়ে। দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এসব অপরাধের বিচার কাজ চলছে।
অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে জনগণই মুখ্য ভূমিকা রাখবে বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.)।
উপদেষ্টা আজ সিলেট জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এক মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন।
মতবিনিময় সভায় সিলেট বিভাগের সকল জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি), আনসার-ভিডিপি, কারা অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর, ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সিলেট জেলার বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থার কর্মকর্তাবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।
উপদেষ্টা বলেন, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে জনগণের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নই বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান লক্ষ্য। তিনি বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু করতে মাঠ প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য শুধু নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি যথেষ্ট নয়, মাঠ প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে যথাযথ প্রস্তুতি নিতে হবে। জনগণ যেন নির্ভয়ে নির্বাচন কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে ভোট প্রদান করতে পারে সেরকম পরিবেশ তৈরি করতে প্রশাসন এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে একযোগে কাজ করতে হবে। সকলের সহযোগিতায় সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভবপর হবে।
পুলিশসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়োগ ও পদায়ন সম্পর্কে উপদেষ্টা বলেন, এবার বিভিন্ন বাহিনীর নিয়োগ প্রক্রিয়া ও পদায়ন অনেক স্বচ্ছ হয়েছে। তাই সবাইকে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। মাদককে দেশের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য অন্যতম হুমকি উল্লেখ করে তিনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে মাদক ব্যবসায়ীদের প্রতি জিরো টলারেন্স দেখানোর নির্দেশনা দেন। এছাড়া পরিবেশ রক্ষায় সিলেটের পাথরখেকোদের বিরুদ্ধে সবসময় সজাগ থাকার কথা বলেন।
দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে কৃষির গুরুত্ব তুলে ধরে লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) বলেন, কৃষকরাই এদেশের খাদ্য নিরাপত্তার মূল কারিগর। তাই উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি কৃষকেরা যেন তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পায় সেটি নিশ্চিত করতে হবে। উপদেষ্টা এসময় পতিত কৃষিজমিগুলো আবাদের আওতায় আনার জন্য সংশ্লিষ্টদের আহ্বান জানান।
সভায় উপস্থিত কর্মকর্তাবৃন্দ সিলেটের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও এর চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরে বিভিন্ন মতামত প্রদান করেন। উপদেষ্টা সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যৌক্তিক পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস প্রদান করেন। মতবিনিময় সভা শেষে উপদেষ্টা উপস্থিত সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন।
উপদেষ্টা এর আগে বিজিবি'র সিলেট সেক্টর হেডকোয়ার্টার্স এবং সিলেট পুলিশ লাইন পরিদর্শন করেন।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা (রোডম্যাপ) আগামীকাল বৃহস্পতিবার ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ।
আজ বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে এক ব্রিফিংয়ে সচিব সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, ‘আমরা যে কর্মপরিকল্পনা (রোডম্যাপ) করেছি, সে কর্মপরিকল্পনাটা আপনাদের জানাবো। আমি ঢাকার বাইরে থাকায় একটু পিছিয়ে পড়েছি। এটা আমার টেবিলে এখন আছে। আগামীকাল পর্যন্ত একটু অপেক্ষা করেন।’
এদিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসি সচিব আজ এক বৈঠকে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা (রোডম্যাপ) অনুমোদন করেছে কমিশন।
এখন যেকোনো সময় নির্বাচনের এই রোডম্যাপ আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করা হতে পারে বলে ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে একজন নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘কর্মপরিকল্পনার সবকিছু চূড়ান্ত হয়ে গেছে। অনুমোদন হয়েছে, এখন শুধু টাইপিং চলছে।’
উল্লেখ্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ইসির পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে দল নিবন্ধন, সীমানা নির্ধারণ, নির্বাচন পর্যবেক্ষক, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংস্কার, বিধিমালা ও নীতিমালা জারি, প্রবাসীদের জন্য আইটি সাপোর্টেড নিবন্ধন ও পোষ্টাল ব্যালট পদ্ধতি ও নির্বাচনী সরঞ্জাম কেনাকাটা বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে রোডম্যাপে।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা (রোডম্যাপ) অনুমোদন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
যে কোনো সময় এই নির্বাচনের রোডম্যাপ আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করতে পারে ইসি।
আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন, চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসি সচিব এ নিয়ে বৈঠকও করেছেন।
বৈঠকে কর্মপরিকল্পনার (রোডম্যাপ) অনুমোদন দিয়েছে কমিশন। এখন, যে কোনো সময় নির্বাচনের এই রোডম্যাপ আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করা হতে পারে বলে ইসি’র কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘কর্মপরিকল্পনার সবকিছু চূড়ান্ত হয়ে গেছে। অনুমোদন হয়েছে, এখন শুধু টাইপিং চলছে।’
এদিকে সংসদীয় আসনের পুনঃনির্ধারিত সীমানার বিষয়ে ইসি’র শুনানি আজ বিকেলে শেষ হচ্ছে।
শুনানি শেষে বিকেলে সার্বিক বিষয় নিয়ে ইসি’র সিনিয়র সচিব আকতার আহমেদের ব্রিফিং করার কথা রয়েছে।
এ বিষয়ে ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেন, ‘আমরা ব্রিফিংয়ে আসব। তখন সীমানার শুনানির বিষয়টির পাশাপাশি এ বিষয়টিও (রোডম্যাপ) দেখা যাবে।’
এর আগে গত বৃহস্পতিবার ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা নিয়ে চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসি কর্মকর্তা বৈঠক করেন।
ওই দিন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেছিলেন, বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনার বিষয়ে ইসি সচিব ব্রিফ করবেন।
গত ১৮ আগস্ট ইসি’র সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ জানিয়ে ছিলেন, ‘একটা কর্মপরিকল্পনার (নির্বাচনী রোডম্যাপ) বিষয়ে বলেছিলাম, আমরা এই সপ্তাহে এটা করবো। কর্মপরিকল্পনার তো আমাদের আন্তঃঅনুবিভাগ সম্পর্কিত এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো নিয়ে। কর্মপরিকল্পনার ড্রাফ্ট করা হয়েছে। ড্রাফ্টটি এখন কমিশনে দিয়ে আমরা অ্যাপ্রুভ করবো।’
শ্রম আইন, ২০০৬ সংশোধনের লক্ষ্যে ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদ (টিসিসি)-এর ৮৯তম সভায় শ্রমিক, মালিক ও সরকারের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। গত এক বছরের পর্যালোচনা ও সকল পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে শ্রম আইন ২০০৬ সংশোধনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
আজ মঙ্গলবার ঢাকার এক হোটেলে অনুষ্ঠিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, "শ্রমিক ও মালিক পক্ষের পরামর্শের ভিত্তিতে শ্রম আইন যুগোপযোগী করা হবে। এটি বাংলাদেশের শ্রমখাতের জন্য একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হবে এবং আন্তর্জাতিক মানের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হবে।’
সভায় শ্রমিক ও মালিক পক্ষের প্রতিনিধিরা তাদের মতামত তুলে ধরেন। একটি সুসমন্বিত ও আন্তর্জাতিক মানের শ্রম আইন প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা উপস্থিত সকলেই করেন। অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত এ সভায় সংশোধিত শ্রম আইন দ্রুত সম্পন্ন করার তাগিদ দেওয়া হয়।
সভায় বিশেষ পর্যবেক্ষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মার্কিন দূতাবাস, কানাডা হাই কমিশন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)-এর প্রতিনিধিরা। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত জনাব লুৎফে সিদ্দিকী।
এছাড়াও মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব, বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিলস) এর নির্বাহী পরিচালক এবং শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান, বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশন (বিইএফ)-এর সভাপতি, টিসিসি সদস্যবৃন্দের মধ্যে তাসলিমা আক্তার, কোহিনুর মাহমুদ, বাবুল আকতার , নাজমা আক্তার, রাজেকুজ্জামান রতন, এডভোকেট আতিকুর রহমান, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর এবং শ্রম অধিদপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বিশ্লেষকদের মতে, এই সংশোধনী বাংলাদেশের শ্রমবাজারকে আরও গতিশীল ও আন্তর্জাতিক মানসম্মত করবে এবং শ্রমিক-মালিক সম্পর্কের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
মন্তব্য