আবারও করোনা প্রাদুর্ভাবের মধ্যে সবাইকে বাধ্যতামূলকভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার সকালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় তিনি বলেন, ‘কেউ যেন মাস্ক না পরে বাইরে না যায়। সবাইকে অবশ্যই নিরাপদ দূরত্ব মানতে হবে।
‘অনুষ্ঠান আয়োজনের ক্ষেত্রে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে করতে হবে। এটা সবার জন্য প্রযোজ্য। খোলা জায়গায় অনুষ্ঠান করলে ভালো। কারণ, এতে ভাইরাসটা ছড়াতে পারে কম।’
করোনা সংক্রমণের বিরুদ্ধে মাঠে সক্রিয় হতে দলীয় নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা। বলেন, ‘করোনার আরেকটি ধাক্কা আসছে। সবাইকে প্রস্তুতি নিতে হবে, যাতে সাধারণ মানুষের কোনো কষ্ট না হয়।
‘রাজনৈতিক দল হিসেবে মানুষের পাশে দাঁড়ানো আমাদের কর্তব্য। এ নির্দেশনা আগেও দিয়েছিলাম। আবারও বলছি মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। গরিবদের সহযোগিতা করতে হবে। নিজেরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে এবং অন্যরা যেন মেনে চলে সে ব্যবস্থা করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা স্কুল-কলেজ খুলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু হঠাৎ করে সংক্রমণ বেড়ে গেল। তাই এখন না খুলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে ঈদের পরে খুলব।’
‘এর মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের হল আমরা মেরামত করার ব্যবস্থা নিয়েছি। তাছাড়া আমাদের অন্যান্য কাজগুলোও চলতে থাকবে। অগ্রযাত্রা যেন অব্যাহত থাকে এজন্য যা করার আমরা করব।’
করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকাদান কর্মসূচি প্রসঙ্গে সরকার প্রধান বলেন, ‘ভ্যাকসিন আমরা দেয়া শুরু করেছি। আমাদের এই কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। কারণ, মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা এটা আমাদের কর্তব্য।’
‘সকলেই যেন মাস্ক পরে’
করোনা প্রাদুর্ভাবের মধ্যে দেশের প্রত্যেককে ঘরের বাহিরে যাওয়ার সময় মাস্ক পরার কঠোর নির্দেশও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘আমি আপনাদের বলবো, কেউ যেন মাস্ক না পড়ে বাহিরে না যায়। সকলেই যেন মাস্ক পরে। সেটা সকলকে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।’
‘আর যেখানে আমাদের মিটিং। আজ এখানে আপনারা এসেছেন, আগামীতে কিন্তু আরও কম সংখ্যায় থাকতে হবে। একটা নিরাপদ দূরত্ব মেনে বসতে হবে। আর প্রত্যেকটা অনুষ্ঠান সভা বা প্রশিক্ষণ যাই হোক স্বাস্থ্য বিধি মেনে করতে হবে। এটা সবার জন্য প্রযোজ্য।’
দলীয় কর্মসূচিতেও স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে প্রতিপালনের নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা। ওয়ামী লীগের সভানেত্রী বলেন, ‘যে কর্মসূচিই দেয়া হোক, প্রত্যেকটিতেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে করতে হবে। যতটুকু সম্ভব উন্মুক্ত জায়গা বা খোলা জায়গায় অনুষ্ঠানগুলো করলে….। কারণ, ঘরের ভেতর প্রাদুর্ভাবটা আরও বেশি দেখা যায়। এ বিষয়ে সকলকে দৃষ্টি দিতে হবে।’
সুবর্ণজয়ন্তীতে অংশ নেয়া অতিথিদের ধন্যবাদ
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে অংশ নেয়ায় প্রতিবেশী দেশগুলোর রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আমরা ধন্যবাদ জানাচ্ছি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে। তিনি বাংলাদেশে এসেছেন এবং আমাদের এই উৎসবে যোগ দিয়েছেন। ভারত আমাদের অকৃত্রিম বন্ধু। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে তাদের অবদান রয়েছে।
‘এছাড়াও এসেছেন মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি, নেপালের রাষ্ট্রপতি। নেপাল আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় অস্ত্র দিয়ে সহযোগিতা করেছিল। এসেছিলেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী, ভূটানের প্রধানমন্ত্রী।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘তখনও হানাদাররা আত্মসমর্পণ করেনি। ভূটান আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশ হিসেবে প্রথম স্বীকৃতি দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিল। এই ঘোষণা সেই সময় আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
‘যারা মাঠে ময়দানে মুক্তিযুদ্ধ করে যাচ্ছিলেন তাদের জন্য যেমন প্রয়োজন ছিল। সেই সঙ্গে আমরা যারা পাকিস্তানি হানাদারদের হাতে বন্দি ছিলাম এই ঘোষণা শোনার সঙ্গে সঙ্গে বন্দি থাকলেও মনে হয়েছিল, আমাদের জীবন স্বার্থক যে আজকে বাংলাদেশের স্বাধীন। প্রথম একটা দেশ ঘোষণা দিয়েছে। এরপরেই ভারত ঘোষণা দেয়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনার কারণে ভূটানের প্রধানমন্ত্রী যে আমাদের এখানে এসেছেন তার কারণে কিন্তু তাকে ফিরে গিয়ে ২১ দিন পর্যন্ত কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। এবং এয়ারপোর্ট থেকে তিনি যে থিম্পুতে পৌঁছাবেন সেখানে তিনি ড্রাইভার নেবেন না, নিজে চালিয়ে যাবেন।
‘কারণ ড্রাইভার যদি আসে তাকেও ২১ দিন কোয়ারেন্টিন করতে হবে। কতটা আত্মত্যাগ তিনি করেছেন শুধু বাংলাদেশের এই উৎসবে যোগ দেয়ার জন্য।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের প্রতিবেশী যে রাষ্ট্রগুলো আমাদের সহায়তা করেছেন আমরা তাদের সম্মাননা দিয়েছি। আমরা স্মরণ করতে চাই তাদের অবদানকে। মুক্তিকামী মানুষের পাশে তারা দাঁড়িয়েছিলেন, এককোটি মানুষের পাশে তারা দাঁড়িয়েছিলেন। যার ফলে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে বিজয় তরান্বিত হয়েছিল।
‘পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে আমরা যুদ্ধ করেছি। মিত্রবাহিনী আমাদের সহায়তা করেছে। মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেছে আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেই পাকিস্তানি শাসক বা সামরিক জান্তারা, যারা এদেশে গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট করেছে। তাদেরকে পথ দেখিয়েছে এই বাংলাদেশেরই কিছু লোক। তারা সব সময় বাংলাদেশের সঙ্গে বেইমানি করেছে মুনাফেকি করেছে। তাদের সবসময় প্রচেষ্টা ছিল বাংলদেশ যেন স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে টিকে থাকতে না পারে।
‘আর এজন্য স্বাধীনতার পরপরই নানাভাবে অপপ্রচার চালানো, নানা অঘটন ঘটানো। এসব অতিক্রম করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব যখন বাংলাদেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিচ্ছিলেন। এরা যখন দেখল যে কোনো অপপ্রচার করে কোনো বিঘ্ন সৃষ্টি করে অগ্রযাত্রা ব্যাহত করা যাচ্ছে না। ঠিক সেই সময় পঁচাত্তরের ১৫ আগষ্ট জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘যখন এই হত্যাকান্ডগুলো ঘটল। কিছু মানুষ, এই পাকিস্তানিরা আবার আসবে এ আসায় ছিল। জাতিরপিতা ৭ মার্চের ভাষণেই বলেছিলেন কেউ দাবায় রাখতে পারবা না। আমাদের কেউ দাবায় রাখতে পারেনি।
‘২১টা বছর ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধুর নামটা পর্যন্ত মুছে ফেলা হয়েছিল। ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছিল। সাত মার্চের ভাষণও নিষিদ্ধ ছিল।’
বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নই উন্নয়নের ম্যাজিক
আওয়ামী লীগকে বারবার ভোটে নির্বাচিত করায় দেশের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান শেখ হাসিনা। বলেন, ‘২০০৮ এর নির্বাচনে জয়ী হয়ে আসার পর থেকে এই পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ১২ বছর ক্ষমতায় আছে। এই ১২ বছরে বাংলাদেশের আমুল পরিবর্তন।
‘এটা হয়েছে এ কারণে যে, যে আদর্শ নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, যে আদর্শ জাতির পিতা আমাদের দিয়ে গেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর আমরা আবার সেই আদর্শ ফিরিয়ে আনি। সেই আদর্শ নিয়েই আমরা দেশ পরিচালনা করেছি। এট নতুন কিছু না, ম্যাজিক কিছু না। এটা হচ্ছে সেই আদর্শকে ধারণ করা। সেই আদর্শ নিয়েই দেশ চালানো এবং আদর্শকে বাস্তবায়ন করা। যার ফলাফল আজকের বাংলাদেশ পাচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে আমাদের প্রতিজ্ঞা হচ্ছে, আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছি, বাংলাদেশে একটি মানুষও ভূমিহীন-গৃহহীন থাকবে না। প্রত্যেকের একটা মাথা গোজার ঠাঁই হবে আমরা সে ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। জাতির পিতা আমাদের যে সংবিধান উপহার দিয়েছিলেন সেখানে যে মৌলিক অধিকারের কথাগুলো তিনি বলে গিয়েছিলেন, আমরা একে একে তা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।
‘এই করোনা হয়তো আমাদের কাজে সাময়িক বাঁধা সৃষ্টি করেছে কিন্তু তার পরেও আমরা থেমে যাইনি। আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত কাছে এবং অব্যাহত থাকবে।’
আরও পড়ুন:সরকার দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীকে প্রেস কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে মনোনীত করেছে। বৃহস্পতিবার তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপসচিব খাদিজা তাহের ববির সই করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘প্রেস কাউন্সিলের ৫ নম্বর ক্রমিকের প্রতিনিধি নিউএজ পত্রিকার সম্পাদক নুরুল কবীর পদত্যাগ করায় তার পরিবর্তে সংবাদপত্র ও সংবাদ সংস্থার সম্পাদক সমিতির প্রতিনিধি হিসেবে দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীকে প্রেস কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে মনোনয়ন প্রদান করা হলো।’
বর্তমান কাউন্সিলের অবশিষ্ট মেয়াদের জন্য এ মনোনয়ন কার্যকর থাকবে। জনস্বার্থে জারিকৃত এ প্রজ্ঞাপন অবিলম্বে কার্যকর হবে বলেও প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে।
প্রেস কাউন্সিলের বর্তমান চেয়ারম্যান বিচারপতি একেএম আব্দুল হাকিম, সচিব (উপসচিব) মো. আব্দুস সবুর।
এছাড়া ১২ জন সদস্য হচ্ছেন—১. বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন, ২. ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি মিস দৌলত আকতার মালা, ৩. ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. শহিদুল ইসলাম, ৪. ডেইলি স্টারের সম্পাদক ও প্রকাশক মাহফুজ আনাম, ৫. দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, ৬. দৈনিক বণিক বার্তার প্রকাশক ও সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ, ৭. দ্য ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ, ৮. দৈনিক পূর্বকোণের সম্পাদক ডা. রমিজ উদ্দিন চৌধুরী, ৯. নিউজপেপার্স ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (নোয়ার) উপদেষ্টা আখতার হোসেন খান, ১০. বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম, ১১. বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সচিব ড. মো. ফখরুল ইসলাম এবং ১২. বার কাউন্সিলের ভাইস-চেয়ারম্যান জয়নুল আবেদীন।
অন্তর্বর্তী সরকারের ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী মিয়া শাহবাজ শরিফের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। পাকিস্তানের ইসলামাবাদে পিএম হাউসে উভয়ের এ সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়।
বৃহস্পতিবার ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ধর্ম উপদেষ্টা ও তার প্রতিনিধিদলকে স্বাগত জানিয়ে পাকিস্তান প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক এবং সখ্যের বন্ধনে আবদ্ধ। এ সম্পর্ক আগামী দিনগুলোতে আরও জোরদার হবে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নিউইয়র্ক ও কায়রোতে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে অনুষ্ঠিত বৈঠকের কথা উল্লেখ করে দূরদর্শী নেতৃত্ব এবং দারিদ্র্য দূরীকরণে তার অবদানের প্রশংসা করেন। এছাড়া তিনি পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সম্পর্ককে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে প্রধান উপদেষ্টার আকাঙ্ক্ষাকে সাধুবাদ জানান।
এদিকে ধর্ম উপদেষ্টা বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের একটি পত্র পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন।
পাকিস্তান প্রধানমন্ত্রীকে লেখা এ পত্রে প্রধান উপদেষ্টা পাকিস্তানে নজিরবিহীন বন্যায় সে দেশের সরকার ও জনগণের প্রতি গভীর সহমর্মিতা ও আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং ভয়াবহ এ দুর্যোগে নিহতদের পরিবার ও ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।
এ পত্রে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, কঠিন এ সময়ে বাংলাদেশের জনগণ পাকিস্তানের ভ্রাতৃপ্রতিম জনগণের পাশে রয়েছে। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আপনার সুদক্ষ নেতৃত্বে পাকিস্তানের জনগণ তাদের অসাধারণ ধৈর্য ও সহনশীলতার মাধ্যমে এ চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করবে। প্রয়োজনে ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রমে বাংলাদেশ সর্বাত্মক সহযোগিতা ও সহায়তা প্রদানে প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।
সাক্ষাৎকালে ঢাকা ও করাচীর মধ্যে সরাসরি বিমান চলাচল দ্রুত পুনঃস্থাপনের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করা হয়। এছাড়া কৃষি, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, ধর্মতত্ত্ব ও চিকিৎসা বিষয়ে উভয়দেশের শিক্ষার্থী বিনিময়ে বৃত্তি প্রদানের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার, প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ, ধর্মবিষয়ক ও আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি মন্ত্রী সরদার ইউসুফ খান, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী আতা তারার, ইসলামাবাদে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. ইকবাল হোসেন খান, উপদেষ্টার একান্ত সচিব ছাদেক আহমদ ও শরীফ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের প্রভাষক মুফতি জাহিদ হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
পুলিশের একটি স্বাধীন তদন্ত সার্ভিস গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আজ বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সভায় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস সভাপতিত্ব করেন।
পরে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘উপদেষ্টা পরিষদ সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুলিশের একটি স্বাধীন তদন্ত সার্ভিস গঠন করা হবে, যাতে কোনো রাজনৈতিক বা অন্য কোনো প্রভাব ছাড়াই তদন্ত সম্পন্ন করা যায়।’ এর পাশাপাশি পুলিশের ভেতরে অভ্যন্তরীণ অভিযোগ যাচাইয়ের জন্য একটি কমিশন গঠনের বিষয়েও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও জানান, ‘এই দুই সিদ্ধান্ত দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য আইন মন্ত্রণালয় কাজ করবে। এ কাজে উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, আদিলুর রহমান খান এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বখশ চৌধুরী যুক্ত থাকবেন।’
সভায় স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করার বিষয়েও গুরুত্ব দেওয়া হয়। প্রেস সচিব বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা বারবার জোর দিয়েছেন যে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও ক্ষমতায়িত করতে হবে। ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন যেন নিজস্ব তহবিল সংগ্রহ ও স্বচ্ছভাবে পরিচালনা করতে পারে সে বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
স্বাস্থ্য খাত নিয়েও সভায় আলোচনা হয়। শফিকুল আলম জানান, ‘কিছু মেডিকেল কলেজে যোগ্য শিক্ষকের সংকট রয়েছে। তাই অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের পরামর্শক বা অন্যভাবে সম্পৃক্ত করে শিক্ষা কার্যক্রমের মান উন্নত করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
নেপালে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের বিষয়েও সভায় আলোকপাত করা হয়। প্রেস সচিব বলেন, ‘নেপালে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা ভালো আছেন, দূতাবাস তাদের দেখভাল করছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর বিশেষ ফ্লাইটে জাতীয় ফুটবল দলকে দেশে আনার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।’
এ বৈঠক প্রসঙ্গে শফিকুল আলম আরও বলেন, ‘আজকের বৈঠকের প্রতিটি সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের অর্থনীতি, শাসনব্যবস্থা ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমাদের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করবে।’
ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।
ক্যাডার কর্মকর্তাদের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণের মেয়াদ ছয় মাস থেকে কমিয়ে চার মাস করা হয়েছে। এর মধ্যে তিন মাস প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে এবং এক মাস মাঠপর্যায়ে ওরিয়েন্টেশন ও গ্রাম সংযুক্তি অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
আজ বুধবার প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে জাতীয় প্রশিক্ষণ কাউন্সিলের নবম সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সভায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোখলেস উর রহমান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান উপস্থিত ছিলেন।
সভায় আরও সিদ্ধান্ত হয়, কর্মকর্তাদের মাস্টার্স ও পিএইচডি কোর্সে ভর্তির সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৪৫ থেকে বাড়িয়ে ৪৭ বছর করা হবে। পিএইচডি কোর্সে অধ্যয়নকালে প্রতি বছর তত্ত্বাবধায়কের অগ্রগতিমূলক প্রত্যয়ন মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে হবে, অন্যথায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বেতন বন্ধ রাখা হবে।
সভায় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘সরকারি যত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আছে সেগুলোর ওপর মূল্যায়ন করতে হবে। কী ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, প্রশিক্ষণের ধরন-মান ইত্যাদির মানদণ্ড নির্ধারণ করে ক্যাটাগরিভিত্তিক প্রতিটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রকে র্যাংকিং করতে হবে এবং নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘একটি স্বাধীন ইউনিট গঠন করতে হবে। তারা সমস্ত গবেষণা প্রতিষ্ঠানের ওপর পদ্ধতিগতভাবে, স্বাধীনভাবে মূল্যায়ন করবে। গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর সামগ্রিক দর্শন জানতে হবে। সেগুলো সঠিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে কি না দেখতে হবে। সরকারি কর্মকর্তারা যারা বিদেশ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছেন তাদের তথ্য সেখানে থাকবে।’
সভায় সঞ্জীবনী প্রশিক্ষণের নাম পরিবর্তন করে ‘দক্ষতা নবায়ন প্রশিক্ষণ’ করার সিদ্ধান্ত হয়। এ প্রশিক্ষণ হালনাগাদকৃত কারিক্যুলামে মাঠপর্যায়ে সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে আয়োজন করা হবে। এছাড়া উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে কর্মকর্তারা আংশিক বৃত্তিপ্রাপ্ত হলেও প্রেষণ অনুমোদন করা যাবে।
কর্মচারীদের সততা ও নৈতিকতা বিকাশ এবং দুর্নীতি বিরোধী মনোভাব তৈরিতে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কোর্সে সদ্গুণ, নৈতিকতা, আচরণবিজ্ঞান ও আচরণবিধি অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়। পাশাপাশি প্রশিক্ষণ ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলোর সার্বিক মূল্যায়ন এবং প্রশিক্ষণ বিষয়ক সিদ্ধান্ত গ্রহণের লক্ষ্যে গবেষণা, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন কার্যক্রম পরিচালনারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সভায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদকে সভাপতি করে একটি নির্বাহী কমিটি (ইসিএনটিসি) গঠন করা হয়।
জাতীয় লেখক ফোরাম আয়োজিত সাপ্তাহিক সাহিত্য আড্ডা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাজধানীর ধানমন্ডিতে হওয়া এ সাহিত্য আড্ডায় উপস্থিত ছিলেন সংগঠেনর সভাপতি ড. দেওয়ান আযাদ রহমান, মহাসচিব কবি-কথাসাহিত্যিক জাহাঙ্গীর হোসাইন এবং উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য মো. আবদুল মান্নানসহ বাংলাদেশের খ্যাতিমান লেখকরা। অনুষ্ঠানটি একটি সাধারণ প্রাণবন্ত আড্ডার মধ্যেই শুরু হয়। অনুষ্ঠানটি ৩টি পর্বে সাজানো হয়েছে। প্রতি পর্বে চারজন কবিকে মঞ্চে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তারা তাদের গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য এবং কবিতা পাঠ করেছেন। পুরো অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেছেন কবি-কথা সাহিত্যিক জাহাঙ্গীর হোসাইন।
শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি পরিশোধের জন্য সরকার প্রদত্ত সুদমুক্ত ঋণ যথাসময়ে ফেরত না দিলে সংশ্লিষ্ট শিল্প কারখানার মালিকদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
বুধবার সচিবালয়ে আয়োজিত এক সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব, ব্যাংকিং ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধি, বিজিএমইএ-এর সভাপতি এবং সংশ্লিষ্ট ঋণগ্রহীতা কারখানার মালিকদের নিয়ে এ সভার আয়োজন করা হয়।
ড. এম সাখাওয়াত হোসেন জানান, বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকরা শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় শ্রম অসন্তোষ নিরসনের লক্ষ্যে সরকার বার্ডস গ্রুপ, টিএনজেড গ্রুপ, বেক্সিমকো গ্রুপ, ডার্ড গ্রুপ, নায়াগ্রা টেক্সটাইলস লিমিটেড, রোয়ার ফ্যাশন লিমিটেড, মাহমুদ জিন্স লিমিটেড, স্টাইল ক্রাফট লিমিটেড এবং গোল্ডস্টার গার্মেন্টস লিমিটেডকে অর্থ বিভাগ এবং কেন্দ্রীয় তহবিল, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে সুদমুক্ত ঋণ প্রদান করে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণ চুক্তির আওতায় উক্ত অর্থ পরিশোধ করছেন না।
তিনি বলেন, তাদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর অবস্থানে যাবে। তাদের পাসপোর্ট জব্দের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
ইতোমধ্যে কয়েকজন পলাতক মালিকের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তিনি পলাতক মালিক ও প্রতিষ্ঠানের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের পাসপোর্ট স্থগিত রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার নির্দেশনা দেন।
উপদেষ্টা বলেন, "এই ঋণের টাকা শ্রমিকের টাকা এবং জনগণের ট্যাক্সের টাকা। এ টাকা আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে।"
তিনি বলেন, এই ক্ষেত্রে কোনোরকম ছাড় দেওয়া হবে না।
তিনি সংশ্লিষ্ট শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিক ও প্রতিনিধিদের সংশ্লিষ্ট লিয়েন ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করে প্রতিষ্ঠানের জমি, কারখানা, যন্ত্রপাতি বিক্রি করে হলেও ডিসেম্বর মাসের মধ্যে ঋণের সকল টাকা পরিশোধ করতে বলেন।
এ বিষয়ে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ-কে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা সভায় উপস্থিত ছিলেন।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি, ইসরাইলের নৃশংসতার জন্য জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এবং ওই অঞ্চলে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছেন।
বাংলাদেশে সফররত ফিলিস্তিনের প্রধান বিচারপতি ড. মাহমুদ সিদকি আল-হাব্বাশের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় গতকাল মঙ্গলবার এক বৈঠকে উপদেষ্টা এ মন্তব্য করেন। আজ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ বিষয়ে জানানো হয়।
বৈঠকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ফিলিস্তিনের জনগণের প্রতি বাংলাদেশের অবিচল সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন এবং ১৯৬৭ সালের আগের সীমানা অনুযায়ী দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের প্রতি সমর্থন জানান।
ফিলিস্তিনের প্রধান বিচারপতি ড. আল-হাব্বাশ বাংলাদেশের নেতৃত্ব ও জনগণের স্থায়ী সমর্থনের জন্য গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ঐক্য আরও সুদৃঢ় করার গুরুত্বের ওপরও জোর দেন।
ফিলিস্তিনিদের নিরন্তর সমর্থনের জন্য দেশটির প্রধান বিচারপতি বাংলাদেশের নেতৃত্ব ও জনগণের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি এ বিষয়ে মুসলিম উম্মাহর মধ্যে বৃহত্তর ঐক্যের ওপরও জোর দেন।
বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির আমন্ত্রণে ড. আল-হাব্বাশ তিন দিনের সরকারি সফরে বাংলাদেশে এসেছেন।
মন্তব্য