চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানায় হামলা করা হেফাজত কর্মীদের চারজন পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন। সংঘর্ষে আহত হওয়ার পর চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর তাদের মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।
আরও বেশ কয়েজন গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
নিউজবাংলাকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জহিরুল হক ভুঁইয়া। তবে তাৎক্ষণিকভাবে তিনি কারও নাম জানাতে পারেননি।
তবে হেফাজতের ইসলামের সাংগঠনিক সম্পাদক মওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী দাবি করেছেন, পুলিশের গুলিতে নিহতদের মধ্যে তিন জন হাটহাজারী মাদ্রাসার ছাত্র ও এক জন স্থানীয় একটি দোকানের দর্জি। দর্জির পরিচয় নির্দিষ্ট করে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
তার দাবি অনুযায়ী নিহতরা হলেন রবিউল ইসলাম, মো. মেহরাব, মো. আবদুল্লাহ ও মো. জামিল হোসেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে মুক্তিযুদ্ধের বন্ধু ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের দিন শুক্রবার জুমার নামাজের পর ঢাকায় বায়তুল মোকাররমে সংঘর্ষ হয়। এর প্রতিক্রিয়ায় দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ থেকে মিছিল বের করেন হেফাজতের নেতা-কর্মীরা।
তারা মসজিদ থেকে আনুমানিক ৫০০ গজ দূরে হাটহাজারী থানায় হামলা করেন। এ সময় পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করে। তাতেও কাজ না হওয়ায় পরে রাবার বুলেট ও বুলেট নিক্ষেপ করে।
হাটহাজারী থানায় হেফাজত কর্মীরা ইট-পাটকেল ছোড়ার পর পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও গুলি ছুড়ে প্রতিরোধ করে। ছবি: নিউজবাংলা
প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী, হেফাজত অনুসারীদের পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে দেখা যায়। পুলিশ প্রথমে কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে ছত্রভঙ্গের চেষ্টা চালায়।
একপর্যায়ে পুলিশ সদস্যরা রাবার বুলেট ও শটগানের গুলি ছুড়তে শুরু করে। প্রায় এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ চলে।
সংঘর্ষের পর হেফাজতের আহত বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মীকে রিকশাভ্যানে করে নিরাপদে সরিয়ে নিতে দেখা যায়। এদের একজনের শরীর থেকে রক্ত ঝরছিল।
হেফাজতের প্রচার সম্পাদক জাকারিয়া নোমান ফয়েজী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পুলিশ হেফাজত কর্মীদের ওপর গুলি চালিয়েছে। আমাদের একাধিক কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।’
তবে রাত ৮টার দিকে তিনি দাবি করেন, শুক্রবার দুপুরে হাটহাজারীতে মিছিলে হেফাজতে ইসলামের কেউ ছিল না।
নোমান ফয়েজী বলেন, ‘মিছিলটি বের করেছিল হাটহাজারী মাদ্রাসার ছাত্ররা। এর সঙ্গে হেফাজতের কোনো সম্পর্ক ছিল না।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন পুলিশ সদস্য ও স্থানীয়রা জানান, দুপুরে জুমার নামাজের সময় থানায় ১০/১৫ জন পুলিশ সদস্য ছিলেন। মূলত এই সুযোগে থানা আক্রমণ করতে আসে ছাত্ররা।
মোদির ঢাকা সফরের প্রতিবাদে হেফাজতের রাজপথে কোনো কর্মসূচি ছিল না। গত ২২ মার্চ তারা ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে নিশ্চিত করে যে, কোনো ধরনের সংঘর্ষে যাচ্ছেন না তারা।
তার পরেও হাটহাজারীতে হেফাজতের কর্মীরা সহিংস হয়ে ওঠে ঢাকায় বায়তুল মোকাররমের সংঘর্ষের ঘটনায়।
জুমার নামাজের পর বায়তুল মোকাররম থেকে ধর্মভিত্তিক দলের নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভের চেষ্টা করলে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। এতে ৫০ জনেরও বেশি আহত হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়।
এই খবর হাটহাজারী পৌঁছার পর উত্তেজিত হয়ে ওঠেন হেফাজতের নেতা-কর্মীরা। গত এক দশকে আলোচিত হয়ে ওঠা সংগঠনটির সদরদপ্তর সেখানেই অবস্থিত।
আরও পড়ুন:চলতি মৌসুমের শুরুতে না থাকলেও মৌসুমের শেষ দিকে এসে কৃষি নির্ভর মেহেরপুর জেলার আমে অজানা এক পচন রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে।
পরিপক্ব আম গাছ থেকে সংগ্রহ করার ২-৩ দিনের মধ্যেই ডাঁটার (বোটার) দিক থেকে পচতে শুরু করছে, ফলে আম দ্রুতই খাওয়ার অযোগ্য হয়ে পড়ছে।
এতে আম চাষী ও ব্যাবসায়ীদের মাঝে দেখা দিয়েছে চরম হতাশা ও উদ্বেগ।
কৃষি বিভাগ বলছে, এই রোগটিকে ছত্রাকজনিত ‘স্টেম-এন্ড রট’ বলে ধারণা করা হচ্ছে। “গাছ থেকেই এমন পচন শুরু হচ্ছে, যা আগে কখনও এ অঞ্চলে এমনটি দেখা যায়নি।”
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, মেহেরপুরে মোট ২৩৬৬ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়ে থাকে এবং এ বছর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৫,৫১০ মেট্রিক টন। এরমধ্যে যদি মাত্র এক হাজার মেট্রিক টন আমও পচে যায়, তাহলে প্রতি মনের দাম ১৫০০ টাকা ধরলে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় দেড়শ কোটি টাকা।
আম চাষিদের সাথে কথা বলে জানা যায়,সপ্তাহ খানেক হচ্ছে গাছ থেকে আম সংরক্ষণের দুই দিনের মধ্যেই পচে যাচ্ছে।” তিনি ধারণা করছেন এটি আবহাওয়াজনিত কোনো ভাইরাস বা ছত্রাকের সংক্রমণ।
বিভিন্ন বাজার ও বাড়িতে দেখা যাচ্ছে, আম কিনে নিয়ে যাওয়ার দুইদিন পরই পচন ধরা শুরু হচ্ছে। অনেকেই আম ফেলে দিচ্ছেন। শহরের গড়পাড়া এলাকার বাসিন্দা শিখা বেগম জানান, “বাজার থেকে হিমসাগর আম কিনে এনেছিলাম, দু’দিনের মাথায় সব পচে যায়। শেষে বাধ্য হয়ে ডাস্টবিনে ফেলতে হয়েছে।”
কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে প্রিয়জনদের কাছে পাঠানো আমও নষ্ট হয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেছেন অনেক ভোক্তা।
জেলার গাংনী উপজেলার নিশিপুর গ্রামের আম বাগান মালিক হোসেন আলী বলেন, আম গাছে থাকা অবস্থায় গায়ে কালো আবরন পড়ে যাচ্ছে। আর সেই আম গাছ থেকে পাড়ার পরে রেখে দিলেই দুই এক দিনের মধ্যে পচে যাচ্ছে। আর সব আম এক সাথেই পেকে যাচ্ছে। যার ফলে শেষ সময়ে আমের দাম একটু বাড়তি পাবো ভেবে ছিলাম এখন দেখি উল্টো আম পচে সব নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এই আম বাগান থেকে হেঠাতে পারলি বাচি।
আম ব্যাবসায়ী সিহাব বলেন,আমরা বাগান মালিকদের কাছ থেকে আম সংগ্রহ করে থাকি। বতর্মানে এলাকার বাগান গুলোতে এখন হিমসাগর,ন্যাংড়া,আম্রপালি আম পাওয়া যাচ্ছে। তবে তা নিয়ে এসে বিক্রি করতে গেলে লোকশানে পড়তে হচ্ছে। আম এক থেকে দুইদিন রাখতেই সব পচে কালো হয়ে গলে যাচ্ছে। বিশ কেজি আমে দুই কেজি পচা আম বের হচ্ছে। এমন ভাবে আসলে ব্যাবসা করা কঠিন।
আম ক্রেতা রাজিবুল হক বলেন, আমি বাড়ির জন্য তিনদিন আগে দশ কেজি কাচা-পাকা মিলিয়ে আম কিনে গিয়েছিলাম। সেগুলোর মধ্যে অধিকাংশই আধাপাকা ছিলো অথচ আম না পেকে পচন ধরতে শুরু করে।তিনদিন পরে দেখি অধিকাংশ আম পচে শেষ।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সামসুল আলম বলেন, আবহাওয়াজনিত ছত্রাকবাহিত (স্টেম-এন্ড রট) রোগে এমনটা হয়ে থাকতে পারে। তবে আম সংগ্রহের অন্তত ১৫ দিন আগে গাছে ওষুধ ব্যবহার বন্ধ রাখতে হয়। তিনি আরও বলেন, “কোনো চাষি বা ভোক্তা থেকে লিখিত অভিযোগ না পাওয়ায় এখনো মাঠপর্যায়ে কারিগরি টিম প্রেরণ করা হয়নি। তবে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এখনই দ্রুত রোগনির্ণয় ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে পরবর্তী মৌসুম গুলোতেও আম উৎপাদন হুমকির মুখে পড়বে। প্রয়োজন মাঠ পর্যায়ে নজরদারি, কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও সচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণ। যেহেতু এ অঞ্চলের হিমসাগর আম এখন জিআই পণ্য হিসেবে শিকৃতি লাভ করেছে। দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে আম রপ্তানির শুরুতেই হোচট খাবে।
রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানার শিশুমেলা থেকে আগারগাঁও রোডের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কার্যালয় ও আশপাশের এলাকায় সব ধরনের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
আগামীকাল রবিবার (২২ জুন) থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই নির্দেশনা কার্যকর হবে। শনিবার (২১ জুন) ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) এক গণবিজ্ঞপ্তিতে এমন তথ্য দেওয়া হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, ‘শেরেবাংলা নগর থানার অন্তর্গত শিশুমেলা থেকে আগারগাঁও রোডে অবস্থিত এনবিআর কার্যালয় (জাতীয় রাজস্ব বোর্ড), বিডা কার্যালয় (বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ) ও আশেপাশের এলাকায় সব ধরনের সভা, সমাবেশ, মিছিল, শোভাযাত্রা ও বিক্ষোভ প্রদর্শন ইত্যাদি নিষিদ্ধ করা হলো।’
ডিএমপি জানিয়েছে, জনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অধ্যাদেশের ২৯ ধারায় অর্পিত ক্ষমতাবলে আগামী রবিবার (২২ জুন) সকাল ৬টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই নির্দেশনা কার্যকর থাকবে।
গণবিজ্ঞপ্তিতে সই করেন ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী।
দেশে ২০২৪ সালে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ—এফডিআই আগের বছরের চেয়ে ১৩ শতাংশ কমেছে। গত বছর প্রকৃত এফডিআই এসেছে ১২৭ কোটি ডলার। স্থানীয় মুদ্রায় যা প্রায় সাড়ে ১৫ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ। ২০২৩ সালে নিট এফডিআই ছিল ১৪৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার।
গত বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়নবিষয়ক সংস্থা আঙ্কটাডের বিশ্ব বিনিয়োগ রিপোর্টে বিদেশি বিনিয়োগ আসার ওই পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হয়েছে।
বাংলাদেশে ২০২৪ সাল শেষে বিদেশি বিনিয়োগের স্থিতি ১ হাজার ৮২৯ কোটি ডলার, যা দেশের জিডিপির মাত্র ৪ শতাংশ। দক্ষিণ এশিয়ায় এ ক্ষেত্রে গড় হার ১৩ শতাংশ।
ভারতের হার ১৪ শতাংশ। ভুটানের মতো দেশে এ হার ১৭ শতাংশ। বাংলাদেশে ২০২৪ সালে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নতুন প্রকল্পে বিনিয়োগে অর্থের ঘোষণার পরিমাণও কমেছে।
ঘোষিত অর্থের পরিমাণ ১৭৫ কোটি ডলার। গত বছরের তুলনায় যা ৩৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। ২০২৪ সালে বাংলাদেশ থেকে বৈধভাবে বিদেশে মাত্র ৭০ লাখ ডলারের বিনিয়োগ হয়েছে। স্থানীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ৮৫ কোটি টাকা।
গত পাঁচ বছরের মধ্যে ২০২১ সালে দেশের বাইরে সর্বাধিক ৮ কোটি ডলারের বিনিয়োগ করেন বাংলাদেশি উদ্যোক্তারা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্ব যখন আরো গভীর সহযোগিতা ও বিস্তৃত সুযোগ সৃষ্টির দিকে এগিয়ে যাওয়ার কথা, তখন ঘটছে তার বিপরীত। ২০২৪ সালে বৈশ্বিকভাবে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) ১১ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ডলার, যা বৈশ্বিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য একটি বড় ধাক্কা। অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগে মন্দা, শিল্প খাতে চাপ এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতি কম মনোযোগ উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। বাণিজ্য উত্তেজনা, নীতিগত অনিশ্চয়তা এবং ভূরাজনৈতিক বিভাজন বৈশ্বিক বিনিয়োগ পরিবেশকে আরো জটিল করে তুলছে।
তবে অন্ধকারে কিছুটা আশার আলোও রয়েছে। ডিজিটাল অর্থনীতিকে সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও এর প্রবৃদ্ধি এখনো অসম। ডিজিটাল বিভাজন দূর করতে ডিজিটাল পরিকাঠামোয় বিনিয়োগ অত্যন্ত জরুরি। কারণ, ডিজিটাল সংযুক্তি হতে পারে অন্তর্ভুক্তিমূলক অগ্রগতির একটি শক্তিশালী চালিকাশক্তি, যদি তা সবার কাছে পৌঁছানো যায়। প্রতিবেদনটি সরকারগুলোকে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগের মাধ্যমে গ্লোবাল ডিজিটাল কমপ্যাক্ট এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজিএস) অর্জনে সহায়তা করার বিষয়ে ব্যবহারিক নির্দেশনা দিয়েছে। এ সময়টাই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন একসঙ্গে কাজ করার, যাতে আরো সহনশীল ও টেকসই বিশ্ব গড়ে তোলা যায়। সে লক্ষ্যে প্রতিবেদনটি বিভিন্ন নীতিগত ধারণা ও পরামর্শ তুলে ধরেছে।
উল্লেখ্য, গত বছরের আগস্টে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন এবং এর আগ থেকে জ্বালানি সংকটের কারণে বিদেশি বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করে। যার প্রভাব কিছুটা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করা হলেও সেটি বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য সন্তোষজনক নয় বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
ওয়ার্ল্ড ইনভেস্টমেন্ট রিপোর্ট ২০২৪ এ প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, ২০২০ সালের চেয়ে ২০২১ সালে এফডিআই প্রবাহ বেড়েছিল ১২ দশমিক ৯৪ শতাংশ। ২০২২ সালে প্রবাহ ২০ দশমিক ১৬ শতাংশ বেড়ে ছিল ৩৪৮ কোটি ডলার। ২০২৩ সালে ১৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ কমে প্রবাহ হয়েছে ৩০০ কোটি ৪০ লাখ ডলারের। ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে ভিয়েতনামে বেড়েছে ৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ। কম্বোডিয়ায় এফডিআই প্রবৃদ্ধি ২০২৩ সালে হয়েছে ১০ দশমিক ৬১ শতাংশ। পাকিস্তানে এফডিআই প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৪ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
২০২৩ সালে ৪৫টি স্বল্পোন্নত দেশে (এলডিসি) এফডিআই ১৭ শতাংশ বেড়ে ৩১ বিলিয়ন ডলারে দাড়িয়েছে। এর প্রায় ৫০ শতাংশ প্রবাহ কেন্দ্রীভূত ছিল কম্বোডিয়া, ইথিওপিয়া, বাংলাদেশ, উগান্ডা এবং সেনেগাল—এ পাঁচ দেশে। গত এক দশকে স্বল্পোন্নত দেশের বহিঃখাতগুলোয় অর্থায়নের অন্যান্য উৎসের তুলনায় এফডিআই প্রবৃদ্ধিই পিছিয়ে আছে। সামগ্রিকভাবে উন্নয়ন সহায়তা এবং রেমিট্যান্স হার স্বল্পোন্নত দেশের তুলনায় উন্নয়নশীল অর্থনীতিগুলোর তুলনায় বেশি। ওই বছর বৈশ্বিকভাবে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) প্রবাহ ১০ শতাংশের বেশি কমে ১ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলারে স্থবির ছিল।
তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে যখন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত পৌঁছে গেছে বিদ্যুৎ ও আধুনিক সুযোগ-সুবিধা, তখনও শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলার সদর ইউনিয়নের সারিকালীনগর গ্রামের নামাপাড়ায় কিছু মানুষ বাস করছেন বিদ্যুৎবিহীন অন্ধকারে। ওই গ্রামের ৯৩ বছর বয়সি বৃদ্ধ আবুল কাশেম এবং তার বাড়ির তিনটি পরিবার আজও কুপি বাতি ও হারিকেনের আলোতেই দিন কাটাচ্ছেন। ২০২৫ সালে দাঁড়িয়ে এই বাস্তবতা যেন এক অসম্ভব কাহিনী।
এই তিনটি পরিবার বছরের পর বছর ধরে বিদ্যুৎ ছাড়াই জীবন যাপন করছেন। ঘরে নেই একটি বৈদ্যুতিক বাল্ব, নেই সৌর প্যানেল, এমনকি নেই চলাচলের উপযোগী রাস্তা পর্যন্ত। বর্ষা মৌসুমে ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে যায়। জলাবদ্ধ অবস্থায় কেটে যায় দিনের পর দিন। বিশুদ্ধ পানি ও স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগারেরও নেই কোনো ব্যবস্থা।
বৃদ্ধ আবুল কাশেম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন,
‘৯৩ বছর বয়স আমার। মুক্তিযুদ্ধের আগ থেইকা এইখানে আছি। কিন্তু এখনও নিজের ঘরে বিদ্যুতের আলো দেখিনাই। হারিকেনেই চলি। রাস্তা না থাকায় অন্যের জমির আইল দিয়া হাটতে হয়। আমার বড় পোলা মারা গেল, কিন্তু জায়গা না থাকায় ঘরের মেঝেতেই কবর দিছি। মানুষজন ছবি তুলে যায়, কিন্তু আর কোনো খোঁজ নেয় না।’
চরম জমির সংকটে পড়া এই পরিবারে মৃত্যুর পর মরদেহ দাফনের জন্য পর্যন্ত জায়গা মেলে না। কাশেমের বড় ছেলের মৃত্যুর পর ভাঙা ঘরের মেঝে খুঁড়ে তাকে দাফন করতে হয়েছে। এখন আর দাফনের মতোও কোনো স্থান অবশিষ্ট নেই। জীবনে যেমন আলো নেই, মৃত্যুতেও নেই নিজের জায়গায় কবরের নিশ্চয়তা।
এই পরিবারে কেউই শিক্ষা লাভ করতে পারেনি। ছোট-বড় সবার জীবন কেটে যায় কুপি বাতির আলোয়। রান্না, সেলাই, গৃহস্থালির প্রতিটি কাজ চলে কেরোসিন-জ্বালানো হারিকেনের আলোতে। রাতে নিয়ম করে হারিকেন পরিষ্কার, কেরোসিন ভরা, রেশা বদলানোর কাজ করতে হয়—এ যেন কুড়ি বছরের পুরোনো গ্রামীণ জীবনের প্রতিচ্ছবি।
এ বিষয়ে ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুল আলম রাসেল বলেন,
‘ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। দ্রুত খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ওই পরিবারগুলো যেন বিদ্যুৎ, রাস্তা ও পানির সুবিধা পায়, তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে জানানো হবে।’
এদিকে সেচ্ছাসেবী ও তরুণ সমাজও এই পরিবারটির পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
‘ব্লাডচাই’-এর প্রতিষ্ঠাতা শান্ত শিফাত বলেন,
‘আমরা যখন উন্নয়নের গল্প বলি, তখন এমন একটি পরিবার বিদ্যুৎহীন অন্ধকারে বাস করছে—এটা মেনে নেওয়া যায় না। দ্রুত সেখানে বিদ্যুৎ ও মৌলিক সেবা পৌঁছে দিতে হবে।’
স্বেচ্ছাসেবী মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন,
‘ওই পরিবার কেবল আলো থেকেই নয়, বেঁচে থাকার মৌলিক অধিকার থেকেও বঞ্চিত। এটা কেবল সামাজিক নয়, সরকারি হস্তক্ষেপের দাবিও রাখে।’
স্থানীয় তরুণ শুভ বলেন,
‘শৈশব থেকেই দেখে আসছি ওই বাড়িতে কুপি বাতি জ্বলছে। বিদ্যুৎ সংযোগ নেওয়ার মতো সামর্থ্যও নেই ওই বৃদ্ধের। আমরা চাই, এই অবহেলা অবিলম্বে বন্ধ হোক।’
এক সময় গ্রামীণ জীবনের চিরচেনা দৃশ্য ছিল কুপি বাতি ও হারিকেন। অথচ আজও নামাপাড়ার এই পরিবারগুলো সেই আলো আঁকড়ে বাঁচতে বাধ্য হচ্ছে। উন্নয়নের জোয়ারে এগিয়ে যাওয়া ঝিনাইগাতীর বুকে এমন একটি নিভৃত অন্ধকার যেন এক নির্মম বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি।
কৃষকের অন্যতম জনপ্রিয় খেলা হচ্ছে ষাড়ের মই দৌড় প্রতিযোগিতা। কিন্তু নানা কারণে এ খেলাটি দিন দিন হারিয়ে যেতে বসেছে। তবে শুকনো মৌসুমে শেরপুর জেলার বিভিন্ন স্থানে আয়োজন করা হয়ে থাকে এ খেলা। শেরপুর সদরের চরশেরপুর নাগপাড়ায় মই দৌড় খেলার আনন্দে মেতে উঠে কৃষক সহ সাধারণ মানুষ।
শেরপুর জেলার কৃষকদের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা হচ্ছে ষাড়ের মই দৌড় খেলা। শুকনো মৌসুমে মাঝে মাঝেই জেলার বিভিন্ন স্থানে আয়োজন করা হয় ষাড়ের মই দৌড় প্রতিযোগিতা। যেখানেই আয়োজন করা হয় এ মই দৌড় খেলা, সেখানেই হাজির হয় হাজার হাজার বয়স্ক, যুবক শিশু-কিশোরসহ সর্বস্তরের মানুষ।
গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী এ খেলাকে অনেকেই এখনো দেখেই নি। নতুন করে এ খেলা দেখে তারা খুব আনন্দ পেয়ে থাকে। যে এলাকায়ই ষাড়ের মই দৌড় খেলা অনুষ্ঠিত হয় সেখানেই উৎসবের আমেজ বয়ে যায়। ১৯ জানুয়ারি এমনই এক খেলার আয়োজন করে উৎসবে মেতে উঠে শেরপুর সদরের চরশেরপুর নাগপাড়া এলাকার মানুষ।
একটি মইয়ে ৪টি ষাড় গরু থাকে। আর এরকম দুটি করে মই দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। অনেক সময় নির্ধারিত দাগের বাইরে চলে যায় ষাড়ের মই। এতে আউট ধরা হয় ওই মইকে। এখানে থাকে দুজন মইয়াল। আরো থাকে ৩ জন ধরাল। রেফারীরর বাশিঁ ফুকানোর সঙ্গে সঙ্গেই মইগুলোর ষাড়েরা দৌড়ানো শুরু করে। যে মই বিজয়ী হয় তখন তারা মেতে ওঠে আনন্দে। আর চারদিকে দাঁড়িয়ে থাকা হাজার হাজার নারী, পুরুষ, শিশুর উল্লাস ধ্বনিতে মূখরিত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। এ খেলা দেখাতে পেরে ময়ালরাও অনেক খুশি।
গ্রামবাংলার ষাড়ের দৌড় খেলা হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে এবং নতুন প্রজন্মকে জানান দিতে নাগপাড়ায় প্রথমবারের মতে এ খেলার আয়োজন করা হয়। স্থানীয়দের আগ্রহের কারণে পরবর্তীতেও আয়োজন করা হবে ঐতিহ্যবাহী ষাড়ের মই দৌড় প্রতিযোগিতা। এমনটাই জানালেন আয়োজকরা।
বিভিন্ন স্থান থেকে ৮টি মই দৌড় দল এ খেলায় অংশ গ্রহণ করে। এতে জামালপুর জেলা ইসলামপুরের চন্দনপুরের হাবু বেপারি চ্যাম্পিয়ন হয়।
খেলাশেষে বিজয়ী ও বিজিতদের মাঝে পুরষ্কার বিতরণ করবে ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী। সফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠানে জেলা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব সোহানুর রহমান সাইম, শিক্ষক আসমত আলীসহ আরো অনেকে।
আয়োজক আসমত আলী বলেন, ‘এ খেলার প্রতি কৃষক শ্রমিক মেহনতি মানুষের আগ্রহ আছে, তাই আমরা প্রতিবছর এ খেলার আয়োজন করব।’
কোরবানি ঈদের পর বাজারে মুরগি ও ডিমের দাম কিছুটা কমেছে। সবজির দামও আগের মতোই। তবে চালের দাম কিছুটা বেড়েছে।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।
বাজারগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঈদের আগের তুলনায় বর্তমানে খুচরায় মোটা চাল (বিআর-২৮, পারিজা) মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৫৮ থেকে ৬২ টাকা প্রতি কেজিতে। সরু চালের মধ্যে জিরাশাইল বিক্রি হচ্ছে ৭৪ থেকে ৭৮ টাকা, মিনিকেট ৭৬ থেকে ৮০ টাকা এবং কাটারিভোগ ৭০ থেকে ৭৫ টাকা কেজি দরে।
পুরান ঢাকার নয়াবাজারের পাইকারি চাল ব্যবসায়ী নিজাম জানান, ঈদের পর থেকে চালের দাম বস্তাপ্রতি ৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। তিনি বলেন, ‘মিল মালিকদের দাবি অনুযায়ী, ধানের দাম বৃদ্ধির ফলে চালের দাম বেড়েছে এবং ভবিষ্যতে তা আরও বাড়তে পারে।’
অলিগলির ছোট মুদি দোকানগুলোতে চালের দাম কিছুটা বেশি দেখা গেছে। বংশাল এলাকার মুদি দোকানদার মজিদ মিয়া বলেন, ‘এই ধরনের দোকানে বাকির পরিমাণ বেশি। আমাদের বেশি ইনভেস্ট করতে হয়, তাই কিছুটা বাড়তি দামে চাল বিক্রি করি।’
চালের উচ্চমূল্য ক্রেতাদের মাঝে অস্বস্তি সৃষ্টি করলেও মুরগি, ডিম ও সবজির দাম কিছুটা কমে ক্রেতাদের স্বস্তি দিয়েছে। মুদি পণ্যগুলোর দামেও তেমন কোনও উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি দেখা যায়নি। পেঁয়াজ, আলু ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীও কম দামে বিক্রি হচ্ছে।
এক সপ্তাহ ধরে ব্রয়লার মুরগির দাম প্রতি কেজি ১৫০ টাকায় নেমে এসেছে, যেখানে ঈদের আগে তা ছিল ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা। ডিমের দামও কমে প্রতি ডজন ১২০ থেকে ১৩০ টাকায় এসেছে। বিক্রেতারা বলছেন, ঈদের পর বাজারে ক্রেতার সংখ্যা কম এবং চাহিদা হ্রাস পাওয়ায় দাম কমেছে।
বাজারে আগত বেশ কয়েকজন ক্রেতা জানান, কোরবানির ঈদের পর অনেক ঘরেই এখনো মাংস রয়েছে। ফলে ডিম ও মুরগির চাহিদা কম। তবে তারা আশঙ্কা করছেন, কিছু দিন পর চাহিদা বাড়লে মুরগির দাম আবারও বেড়ে যেতে পারে।
পুরান ঢাকার রায় সাহেব বাজার ও নয়াবাজারে দেখা গেছে, ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একইসঙ্গে সোনালি মুরগির দামও কিছুটা কমেছে—বর্তমানে তা প্রতি কেজি ২৬০ থেকে ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে মাছের বাজারে উল্লেখযোগ্য কোনও পরিবর্তন দেখা যায়নি; বড় ইলিশসহ অন্যান্য মাছের দাম তুলনামূলক বেশি।
সবজির বাজারেও দেখা গেছে ইতিবাচক প্রবণতা। পুঁইশাক, বেগুন, পেঁপে, চিচিঙ্গা, ঝিঙ্গে ও মিষ্টি কুমড়ার মতো সবজি ৫০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যেই বিক্রি হচ্ছে। ঈদের আগে এসব সবজির দাম কেজিতে ১০ থেকে ৪০ টাকা বেশি ছিল। বড় বাজারের তুলনায় ভ্রাম্যমাণ দোকানগুলোতে দাম আরও কিছুটা কম।
প্রযুক্তির অপব্যবহারে শ্যামনগরের যুবসমাজ আজ অনলাইন জুয়ার ভয়াল ফাঁদে বন্দি। ঘরে বসেই মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সহজেই জড়িয়ে পড়ছে এই নিষিদ্ধ খেলায়। দিন দিন বেড়েই চলেছে আসক্তির মাত্রা। নষ্ট হচ্ছে সময়, টাকা আর সম্পর্ক।
জানা গেছে, অনলাইন জুয়া এখন শুধুই তাস বা ক্যাসিনো নয়। পরিবর্তনশীল গেমের ধরনে যুক্ত হয়েছে ক্রিকেট, ফুটবল বেটিং, তিন পাত্তি, রামি, রঙের খেলা, এভিয়েটর গেম এমনকি জনপ্রিয় লুডুও। এসব গেমে প্রতিদিন বাজি ধরছে হাজার হাজার টাকা। জেতার আনন্দে শুরু হলেও এক সময় তা ভয়াবহ আসক্তিতে পরিণত হয়, যার শেষ পরিণতি প্রায়শই ঋণ, মানসিক বিপর্যয় ও সামাজিক ভাঙন।
স্থানীয়ভাবে জানা গেছে, ‘এসব জুয়ার আসর বসছে গ্রামের চায়ের দোকান, চালের দোকান বা সুতার দোকানে। দিনের বেলায় সাধারণ ব্যবসার আড়ালে, আর রাতে দোকান বন্ধের পর শুরু হয় মোবাইলের স্ক্রিনে টাকার লড়াই। আড্ডার ছলে একে একে হাজির হয় নির্দিষ্ট গেমাররা, চোখ থাকে মোবাইলের পর্দায়—আর বাজি চলতে থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে বছরের পর বছর চলছে এই নিষিদ্ধ কর্মকাণ্ড।
অনলাইন জুয়ায় আসক্ত একজন যুবক (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন,
‘প্রথমে বন্ধুদের দেখে খেলতে শুরু করি। লুডু দিয়ে শুরু, পরে দিনে দিনে হাজার টাকার বাজি লাগত। এখন প্রায় ৫০ হাজার টাকার ঋণে জর্জরিত, ঘুম পর্যন্ত হারাম হয়ে গেছে।’
সবচেয়ে বিপর্যয়ে পড়ছে পরিবারগুলো। ঘরে অশান্তি, বাবা-মায়ের সঙ্গে সন্তানের দূরত্ব, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সন্দেহ, ভাইয়ের সঙ্গে ভাইয়ের সম্পর্ক ছিন্ন—এ যেন সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার চক্র।
সন্তানরা পড়ালেখার পরিবর্তে দিনভর মোবাইলেই মুখ গুঁজে থাকে। যুবকরা হারাচ্ছে কাজের আগ্রহ, মুছে যাচ্ছে ভবিষ্যতের স্বপ্ন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘অনলাইন জুয়ার এই ভয়াবহ বিস্তার রোধে এখনই কঠোর আইন প্রণয়ন ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি, না হলে অচিরেই ধ্বংসের মুখে পড়বে দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম।
মন্তব্য