মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণের লক্ষ্যে ২৫ বছর আগে সেগুনবাগিচায় ছোট্ট পরিসরের একটি ভাড়া বাড়িতে একেবারে ব্যক্তি পর্যায়ের উদ্যোগে যাত্রা শুরু হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের।
একেবারে সূচনালগ্নে বহু মানুষ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন স্মৃতিরক্ষার এই উদ্যোগে। ছোট-বড় নানা সহযোগিতা এই প্রতিষ্ঠানটিকে সার্থকতা দিয়েছিল যাত্রার শুরুর দিন থেকেই।
এরপর আগারগাঁওয়ে স্থায়ী ভবন নির্মাণে তহবিল সংগ্রহের জন্য ১০ হাজার টাকায় প্রতীকী ইট কিনতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর কর্তৃপক্ষ। এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে হাজারের বেশি প্রতীকী ইট কিনে নেয় স্কুলশিক্ষার্থীসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ।
আগারগাঁওয়ে প্রায় তিন বিঘা জায়গার ওপর তিনটি বেজমেন্ট ও পাঁচটি ফ্লোর নিয়ে জাদুঘরের স্থায়ী ভবন নির্মাণে ব্যয় হয় শত কোটি টাকার বেশি, যার অর্ধেকের জোগান আসে এসব সাধারণ মানুষের কাছ থেকেই।
এভাবেই বাংলাদেশের অগণিত মানুষের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহায়তায় বিস্মৃতির বিরুদ্ধে স্মৃতির ধারক ও বাহক হয়ে ওঠার নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
নির্মাণ কাজ ও আনুসঙ্গিক প্রস্তুতি শেষ হওয়ার পর ২০১৭ সালের ১৬ এপ্রিল মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অত্যাধুনিক ও নান্দনিক স্থাপত্যশৈলীর ভবনটি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এই জাদুঘরে চারটি স্থায়ী গ্যালারি আছে। যার প্রতিটির আয়তন ২১ হাজার স্কয়ার ফুট। চারটি গ্যালারিতে তুলে ধরা হয়েছে স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের নানা দিক, স্মৃতিচিহ্ন; সেখানে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বাঙালি জাতির হাজার বছরের এবং মুক্তিযুদ্ধের সময়ের মূল্যবোধের নানা দিক।
দুটি অস্থায়ী গ্যালারিও রয়েছে জাদুঘরে, যার একটিতে কোনো গ্যালারিতে স্থান না পাওয়া স্মৃতিস্মারক রাখা হয়েছে। আরেকটিতে আছে পৃথিবীর নানা দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস।
কথা হয় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অন্যতম ট্রাস্টি মফিদুল হকের সঙ্গে। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ট্রাস্টি বোর্ড স্থায়ী ভবন নির্মাণের সময় একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে, স্বদেশের অর্থায়নেই এই জাদুঘর নির্মিত হবে। যে কারণে নতুন ভবন নির্মাণের জন্য কোনো বিদেশি সহযোগিতা নেয়া হয়নি। এই কাজে দেশের মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাই ছিল আমাদের লক্ষ্য।’
এ ব্যাপারে জাদুঘরের ব্যবস্থাপক (কর্মসূচি) রফিকুল ইসলাম জানান, ‘মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টিরা প্রথম থেকেই সচেষ্ট ছিলেন প্রতিষ্ঠানটিকে সার্বজনীন করে তুলতে। যে কারণে তারা সবসময় জাদুঘরের সঙ্গে জনসাধারণের একটি যোগসূত্র তৈরির চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। এভাবেই মূল্যবান স্মারক থেকে শুরু করে বিপুল অর্থদানের ভেতর দিয়ে জনগণ এই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেছে। দেহাবশেষ, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদদের ব্যবহৃত সামগ্রী, অস্ত্র, দলিল, চিঠিপত্র ইত্যাদি মিলিয়ে ১৭ হাজারের বেশি নিদর্শন এখন এই জাদুঘরের সংগ্রহে আছে।’
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রচলিত ধারার কোনো জাদুঘর নয়। এখানে নানা আয়োজনের ভেতর দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বহুমাত্রিক কর্মযজ্ঞ তুলে ধরা হয়েছে। এ কাজেও বিভিন্ন সময় সহায়তার উন্মুক্ত হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন দেশের বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী ও শিল্পীরা।
এভাবেই সময় পরিক্রমায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর পরিণত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের সর্ববৃহৎ সংগ্রহশালায়। এর মধ্যে শহীদ ও মুক্তিযোদ্ধাদের অমূল্য স্মারকের বাইরেও আছে একাত্তরের দেশ-বিদেশের সংবাদপত্র এবং জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্রের অবমুক্ত দলিলাদি।
এসবের বাইরে নতুন প্রজন্মের মনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জাগিয়ে রাখা এবং যুদ্ধের ইতিহাসের সঙ্গে তাদের পরিচয় করিয়ে দিতে কিছু কর্মসূচিও চালিয়ে যাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। এর মধ্যে অন্যতম মুক্তিযুদ্ধের কথ্য ইতিহাস সংগ্রহ।
জাদুঘরের ব্যবস্থাপক রফিকুল ইসলাম জানান, ২০০৯ সাল থেকে শুরু হওয়া এই কর্মসূচির আওতায় দেশের প্রতিটি জেলার স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ এলাকার মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধে হতাহতের শিকার পরিবারের সদস্য, স্বজন ও প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে তাদের অভিজ্ঞতা শুনে লিখে পাঠিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে। এতে ৬৪ জেলার ১৫ হাজার স্কুলের ১ লাখের বেশি শিক্ষার্থী ৪০ হাজারের বেশি প্রত্যক্ষদর্শীর ভাষ্য লিখে পাঠিয়েছে। যা সংরক্ষিত আছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে।
এ ছাড়া ১৯৯৭ সাল থেকে চালু হওয়া আউটরিচ কর্মসূচির আওতায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের পক্ষ থেকে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের জাদুঘরে আনা হয়। তারা জাদুঘর পরিদর্শন করে। একটি করে প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়। কুইজ প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। বিজয়ীদের পুরস্কার দেয়া হয়। এই কর্মসূচিতেও সব মিলিয়ে হাজারখানেক স্কুলের দুই লাখের বেশি শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছে। এর সঙ্গে আছে জেলায় জেলায় ঘুরে ভ্রাম্যমাণ জাদুঘরের কার্যক্রম।
আধুনিক সময়ের সহযাত্রী
এদিকে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গেও নিজেদের খাপ খাইয়ে নিচ্ছে জাদুঘর কর্তৃপক্ষ। অন্যতম ট্রাস্টি মফিদুল হক যেমন বললেন, ‘আমাদের প্রোগ্রামগুলো এখন সব অনলাইনে চলে যাচ্ছে। এতে করে নাম্বার অব ভিউয়ার বেড়েছে। একটা প্রদর্শনী করলে আগে যে পরিমাণ দর্শক হতো, তা অনেক বেড়েছে। কিন্তু আবার আমরা পারসন টু পারসন কন্ট্রাক্টটা মিস করছি। ওটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাই ভবিষ্যতে দুটোই থাকবে।’
এ ছাড়া কিছু দিনের মধ্যেই ঘরে বসে জাদুঘরের বিভিন্ন স্মারক ও কার্যক্রম পরিদর্শনের জন্য ভার্চুয়াল ট্যুর চালু করার পরিকল্পনার কথাও জানান মফিদুল হক। বলেন, ‘যে কোনো ধরনের জাদুঘরের জন্য কমিউনিটি ইনভলবমেন্টটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমরা সব সময়ই এ ব্যাপারে সচেষ্ট থাকার চেষ্টা করেছি। যার ফলাফল হিসেবেই হয়তো একটা ছোট্ট পরিসর থেকে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর আজ একটা মহিরুহে পরিণত হয়েছে।’
একই সঙ্গে ১৯৯৬ সালে যে ভাবনা থেকে এমন একটা জাদুঘর নির্মাণের স্বপ্ন তারা দেখেছিলেন, সে বিষয়েও কথা বলেন এই লেখক। বলেন, ‘তখন তো একটা কৃষ্ণ সময়। নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ঠিকঠাক পৌঁছাচ্ছিল না। ইতিহাস সংরক্ষণেরও কোনো কাজ হচ্ছিল না। সে জন্যই আমাদের মনে হয়েছিল, এই চাহিদাতো কোনো সরকার পূরণ করতে পারবে না। সবা বিভ্রান্তির মধ্যেই থাকবে। তখন মনে হয়েছিল একটা উদ্যোগ যদি নেয়া যায় সমাজের পক্ষে, নাগরিকদের পক্ষে।’
গত ২২ মার্চ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে লেখা এক নিবন্ধে প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলেছেন আরেক ট্রাস্টি সারওয়ার আলী। সেখানে তিনি দেখিয়েছেন কীভাবে নানা প্রতিকূলতা অতিক্রম করে আপামর জনসাধারণকে সঙ্গে নিয়ে এমন একটা অসাধ্য সাধন করেছেন তারা।
সারওয়ার আলী লিখেছেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রতিষ্ঠার কয়েক বছর পর ব্রিটিশ হাইকমিশনের একজন ইতিহাসবিদ কর্মকর্তা জাদুঘর পরিদর্শনের পর এক গবেষণা প্রতিবেদনে জানান, বিশ্বের বহু দেশে বেসরকারি উদ্যোগে উৎসাহী ব্যক্তিরা জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করেন, কিন্তু বহু ক্ষেত্রে প্রাথমিক উৎসাহে ভাটা পড়ে এবং অর্থাভাবে এ ধরনের জাদুঘর পাঁচ বছরের বেশি টেকে না। অধিকাংশ জাদুঘর বিত্তশালীদের ট্রাস্ট ফান্ড ও নিবেদিতপ্রাণ ট্রাস্টি ও কর্মকর্তাদের ওপর নির্ভরশীল। তদুপরি চ্যালেঞ্জ রয়েছে, বাংলাদেশে মতাদর্শগত কারণে সমাজে বিভক্তি গভীর ও বিস্তীর্ণ। সরকার পরিবর্তন হলে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত ও পরিবর্তিত হয়। এ সত্য মেনেও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর তার ২৫ বছর পূর্ণ করছে।’
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না বলেই স্বাধীনতার মর্মার্থকে অকার্যকর করতে চায়।
বৃহষ্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি একথা বলেন। বিএনপি নেতাদের মিথ্যা, বানোয়াট ও দুরভিসন্ধিমূলক বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাতে এই বিবৃতি দেয়া হয়। খবর বাসসের
ওবায়দুল কাদের বলেন, দেশের প্রত্যেক মানুষ এখন স্বাধীনতার সুফল পাচ্ছে। অগণতান্ত্রিক ও উগ্র-সাম্প্রদায়িক অপশক্তির প্রতিভূ বিএনপির ফ্যাসিবাদী দর্শনে জনগণ কখনো সাড়া দেয়নি, দেবেও না। তাই বিএনপি সর্বদা জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।
তিনি বলেন, পাকিস্তানি ভাবাদর্শকে পুঁজি করে রাজনীতি করা বিএনপির একান্ত কাম্যই হলো যে কোনো উপায়ে ক্ষমতা দখল, জনকল্যাণ নয়। তারা ক্ষমতায় গিয়ে নিজেদের আখের গুছিয়ে নিয়েছিল। বাংলার জনগণ তাদের দ্বারা প্রতারণার শিকার হয়েছিল। সুতরাং বাংলার জনগণ এই প্রতারক গোষ্ঠীকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না।
‘বিএনপি নেতাকর্মীদের ঘর-বাড়ি, ব্যবসা-বাণিজ্য দখল করে নেয়া হচ্ছে’- বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এমন বক্তব্যের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘তিনি (মির্জা ফখরুল) সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য-প্রমাণ না দিয়ে ঢালাওভাবে বানোয়াট ও ভিত্তিহীন বক্তব্য দিয়েছেন। বরং আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, বিএনপির নেতাকর্মীরা বহাল তবিয়তে ব্যবসা-বাণিজ্য করছে। কোথাও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হচ্ছে না।’
তিনি বলেন, ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসীন হওয়ার পর রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে লাখ লাখ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে ঘর-বাড়ি ছাড়তে হয়েছিল, নৌকায় ভোট দেওয়ার অপরাধে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের নির্মম অত্যাচার নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছিল। বিএনপি-জামাতের ক্যাডারবাহিনী দ্বারা হাজার হাজার নারী ধর্ষিত হয়েছিল। সারা দেশে আওয়ামী লীগের ২১ হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছিল।
ওবায়দুল কাদের বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবিসংবাদিত নেতৃত্বে দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রামের পথ-পরিক্রমায় বাঙালি জাতি ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে সশস্ত্র লড়াইয়ের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করে। স্বাধীনতা অর্জনের পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় পরিচালিত হতে থাকে।
তিনি আরও বলেন, জাতির পিতা মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের ভিত্তিতে জাতিকে সংবিধান উপহার দেন। ধর্মের ভিত্তিতে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর খুনি জিয়া-মোশতাক চক্র মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ধূলিসাৎ করে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, সামরিক স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমান নিজের অবৈধ ও অসাংবিধানিক ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করতে ধর্মের কার্ড ব্যবহার করে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি প্রচলন করে। স্বৈরাচার জিয়া রাষ্ট্র ও সমাজের সকল স্তরে সাম্প্রদায়িকতার বিষবৃক্ষের বীজ বপন ও উগ্র-সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করে। তখন থেকে বিভেদের রাজনীতির গোড়াপত্তন হয়। বিরোধী দল বিশেষ করে আওয়ামী লীগকে নির্মূল করার লক্ষ্যে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় অত্যাচার-নির্যাতনের স্টিম রোলার চালানো হয়।
মানিকগঞ্জ শহরের প্রবেশপথে যানজট নিরসনে ও পথচারীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হয়েছে।
পৌরসভা কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে বৃহস্পতিবার ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড ও পৌর সুপার মার্কেটের সামনের সড়ক ও ফুটপাত থেকে শতাধিক হকার ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান করা হয়।
প্যানেল মেয়র তসলিম মিয়া জানান, দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ অস্থায়ী কিছু ব্যবসায়ীরা ফুটপাত ও সড়কের একাংশ দখল করে ব্যবসা করে আসছেন। এতে করে শহরে যানজটের সৃষ্টি হয় এবং পথচারীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। পথচারীদের সুবিধার্থে যানজট দূর করতেই এই উচ্ছেদ অভিযান।
উচ্ছেদ অভিযানে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জহিরুল আলম, পৌরসভার প্যানেল মেয়র-২ মো. তসলিম মিয়া ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর রাজিয়া সুলতানাসহ থানা পুলিশ ও পৌরসভার কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
ঝালকাঠির রাজাপুরে নদীর তীর থেকে এক ভ্যানচালকের মরদেহ উদ্ধার করেছে থানা পুলিশ।
স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।
প্রাণ হারানো যুবকের মামুন হোসেন, যার বয়স ২৫ বছর। তিনি রাজাপুরের পশ্চিম সাতুরিয়া গ্রামের মোকসেদ আলীর ছেলে।
ভ্যানচালক মামুন দুই দিন আগে নিখোঁজ হয়েছিলেন জানিয়ে রাজাপুর থানার ওসি আতাউর রহমান বলেন, ‘স্থানীয়দের কাছ থেকে সংবাদ পেয়ে সাতুরিয়া গ্রামের ইদুরবাড়ি এলাকায় কচা নদীর তীর থেকে মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নেয়া হয়। লাশের ময়নাতদন্তসহ পরবর্তী সময়ে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে, তবে এটি হত্যা নাকি দুর্ঘটনা, সেটি তদন্তে বের হবে।’
এ পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, যুবকের পরিবারের পক্ষ থেকে এখনও কেউ অভিযোগ করেনি। সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের পূর্ব পূয়ালী গ্রামের আব্দুর রহিম হাওলাদারের একমাত্র ছেলে রাব্বি হাওলাদার।
২৫ বছর বয়সী রাব্বির দুটি কিডনিই নষ্ট। ডাক্তারের পরামর্শ তার কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট করতে হবে। বর্তমানে তার চিকিৎসার জন্য প্রায় ১০ লাখ টাকার প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।
রাব্বির কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য এতো টাকা লাগবে শোনার পর থেকেই তার কৃষক বাবা সাহায্যের জন্য ছুটছেন চেয়ারম্যান, মেম্বারসহ স্থানীয় বিত্তবানদের কাছে। কেন না তার সবকিছুই বিক্রি করে দিলেও এক থেকে দেড় লাখ টাকার বেশি জোগাড় করার সামর্থ্য হচ্ছে না।
রাব্বি বর্তমানে ঢাকার মিরপুর কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এমন অবস্থায় কৃষক বাবা তার সন্তানকে বাঁচাতে দেশবাসীর কাছে সাহায্যের আবেদন করেছেন। দেশের বিত্তবানরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেই হয়ত বেঁচে যাবে তার সন্তান।
রাব্বির পরিবার সূত্রে জানা যায়, রাব্বি হাওলাদার কয়েক মাস আগে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (সেবাচিম) হাসপাতালে নিয়ে যান তার পরিবার। সেখানে চিকিৎসক তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বলেন রাব্বির দুটি কিডনিই নষ্ট হয়ে গেছে। পরে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত চিকিৎসা চলছিল রাব্বির, কিন্তু কিছুদিন আগে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাকে মিরপুর কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এরই মধ্যে প্রায় আড়াই লাখ টাকার ওপরে শুধু হাসপাতাল ও ওষুধের বিল দিতে হয়েছে। দরিদ্র এই পরিবারটি আত্মীয়স্বজনসহ সবার সহায়তায় ওই বিল দেয়া সম্ভব হয়।
রাব্বির মা রেভা বেগম কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘এভাবে আর কয়দিন চিকিৎসা করাতে পারব জানি না। কারণ আমাদের সামর্থ্য শেষ হয়ে এসেছে। শুধু টাকার অভাবে তাকে ভালো কোনো হাসপাতালেও নিতে পারছি না, কিন্তু কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য অপারেশনের ধকল সহ্য করার মতো সুস্থ অবস্থায় আনা খুব জরুরি।’
রাব্বির বাবা আব্দুর রহিম বলেন, ‘আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে সবার কাছে অনুরোধ করা হচ্ছে আপনাদের ভালোবাসা ও সাহায্য আমাদের খুব প্রয়োজন। কারণ শুধু টাকার অভাবে বিনা চিকিৎসায় আমার একমাত্র ছেলে অকালে ঝরে যাবে তা আমার জীবন থাকতে মানতে পারছি না।’
তাকে কেউ সাহায্য করতে চাইলে ০১৯৯৭-২২৮৯৭৫ ও ০১৯৮৭-৩৬৬৫৬৮ (বিকাশ-পার্সোনাল) নাম্বারে পাঠাতে পারেন ও যোগাযোগ করতে পারেন।
আরও পড়ুন:ময়মনসিংহের ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার তিন যাত্রী নিহত হয়েছেন।
এ দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও চারজন।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে উপজেলার উজানপাড়া এলাকায় বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
ত্রিশাল থানার ওসি কামাল হোসেন জানান, বেলা ১১টার দিকে মাদানী সিএনজি পাম্প সংলগ্ন উজানপাড়ায় একটি বাস ইউটার্ন নেয়ার সময় অটোরিকশাকে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই দুই বছর বয়সী এক মেয়ের মৃত্যু হয়। ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে ৩৩ বছর বয়সী অটোরিকশার চালক শরিফুল ইসলাম ও অন্য একজনের মৃত্যু হয়।
তিনি জানান, এ দুর্ঘটনায় আহত চারজনের মধ্যে দুজনের পরিচয় পাওয়া গেছে, যারা হলেন ত্রিশালের রুদ্র গ্রামের জালাল উদ্দিনের ৪৫ বছর বয়সী স্ত্রী মনি আক্তার ও একই গ্রামের শামীম আহমেদের ৪৫ বছর বয়সী স্ত্রী সাহিদা আক্তার।
আগামী মাসে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির বাংলাদেশ সফরে কিছু বিষয়ে গুরুত্ব পাবে বলে ইউএনবিকে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র।
ওই সূত্র বার্তা সংস্থাটিকে জানায়, শেখ তামিমের সফরে জনশক্তি, জ্বালানি, বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বৃহত্তর সহযোগিতার মাধ্যমে বিদ্যমান সম্পর্ক আরও জোরদার করতে চায় উভয় দেশ।
কাতারের আমিরের সফরে দুই দেশের মধ্যে প্রায় ডজনখানেক সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) ও চুক্তি চূড়ান্ত করার বিষয়ে আলোচনা চলছে জানিয়ে সূত্রটি বলেছে, সফরকালে এসব এমওইউ ও চুক্তি সই করা হবে।
ইউএনবির প্রতিবেদনে বলা হয়, কাতারের আমিরের দুই দিনের সফরটি হতে পারে আগামী ২১ থেকে ২২ এপ্রিল।
বার্তা সংস্থাটি জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আমিরের বৈঠকের পর যেসব এমওইউ ও চুক্তি সই হবে, সেগুলো নিয়ে দুই পক্ষ এখন কাজ করছে। সফরের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে আন্তমন্ত্রণালয় সভা করেছে।
গত বছরের মার্চে কাতারের রাজধানী দোহায় স্বল্পোন্নত দেশগুলোর বিষয়ে জাতিসংঘের সম্মেলন এলডিসি-৫-এর পার্শ্ববৈঠকে কাতারের আমির শেখ তামিমের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ওই বৈঠকে কাতারের কাছে বিশেষ করে এলএনজি সরবরাহে সহযোগিতার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
১৯৭৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় ওআইসি শীর্ষ সম্মেলনের পর একই বছরের ৪ মার্চ বাংলাদেশকে সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় কাতার।
১৯৭৫ সালের ২৫ জুন দোহায় বাংলাদেশ তার কূটনৈতিক মিশন চালু করে। ১৯৮২ সালে ঢাকায় কূটনৈতিক মিশন খোলে কাতার।
আরও পড়ুন:ফরিদপুর সদরে যৌনপল্লি থেকে দুই তরুণীকে উদ্ধার করেছে কোতোয়ালি থানা পুলিশ।
এ ঘটনায় ওই পল্লির এক নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ওসি মো. হাসানুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বুধবার রাতে এসব তথ্য জানানো হয়।
গ্রেপ্তারকৃত পারুল বেগম ওরফে পারু (৪৮) জেলার রথখোলা যৌনপল্লির বাসিন্দা।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন আপন (৩০), জহির (৩০) ও ববি (৩৮)।
গ্রেপ্তার না হওয়া এ তিনজনের মধ্যে ববি যৌনপল্লির সর্দারনি হিসেবে পরিচিত। আপন ও জহিরের পূর্ণাঙ্গ পরিচয় পাওয়া যায়নি।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পার্লারে ভালো বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে চাঁদপুরের কচুয়া থানা এলাকা থেকে এক তরুণীকে গত ১০ মার্চ ঢাকায় নিয়ে আসেন আপন। দুই দিন সেখানে রেখে তাকে (তরুণী) তিন ব্যক্তির হাতে তুলে দেন তিনি। ওই তিন ব্যক্তি ১৩ মার্চ সন্ধ্যায় তরুণীকে রথখোলা যৌনপল্লিতে এনে পারুর কাছে দেড় লাখ টাকায় বিক্রি করে দেন। পরের দিন একটি সাদা কাগজে তরুণীর স্বাক্ষর নিয়ে জানানো হয়, এখন থেকে তিনি যৌনপল্লির লাইসেন্সধারী সদস্য।
এতে আরও বলা হয়, মেয়েটিকে পারুর বাসায় রেখে ববি ও অন্যদের মাধ্যমে জোর করে দেহ ব্যবসায় বাধ্য করা হয়। এর মাঝে মেয়েটি বাড়িতে যোগাযোগের জন্য একজন খদ্দেরকে তার ছোট বোনের মোবাইল নম্বর দেন। পরে ওই খদ্দেরের মোবাইল কলের মাধ্যমে মেয়েটির সন্ধান পায় তার পরিবার। এরপর তার মা ও ফুফা রথখোলায় এসে তাকে দেখতে পেয়ে স্থানীয় থানা পুলিশকে জানায়।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, পুলিশ যৌনপল্লিতে অভিযান চালানোর পর ফেনীর পূর্ব ছাগলনাইয়ার আরেক তরুণীও তাকে উদ্ধারে পুলিশের সাহায্য চান। ওই তরুণী জানান, তাকেও চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে প্রথমে ঢাকার মিরপুরের একটি বাসায় এক রাত রেখে রথখোলা যৌনপল্লিতে এনে পারুর কাছে বিক্রি করা হয়।
কোতোয়ালি থানার ওসি হাসানুজ্জামান জানান, যৌনপল্লিতে তরুণীকে নেয়ার ঘটনায় তার মায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে কোতোয়ালি থানায় মামলা করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ফাহিম ফয়সাল মামলার তদন্তভার গ্রহণ করে অভিযান চালিয়ে পারুল বেগম ওরফে পারুকে গ্রেপ্তার করে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের জোর চেষ্টা চলছে।
মন্তব্য