স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বাংলাদেশ সফরে এসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদি যেসব জায়গায় যাবেন, তার একটি গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলায় ওড়াকান্দি। সেখানে হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মস্থান পরিদর্শন করবেন নরেন্দ্র মোদি।
কিন্তু বাংলাদেশের ভেতরেও প্রায় অখ্যাত একটি স্থানে কেন যাচ্ছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী? কে-ই বা এই হরিচাঁদ ঠাকুর?
বিষয়টি কৌতূহল জাগাচ্ছে সাধারণ মানুষের মধ্যে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই সফরের পেছনে রয়েছে ভারতের নিজস্ব ভোটের রাজনীতি।
এ মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গে চলছে বিধানসভা নির্বাচনের তোড়জোর। ২৭ মার্চ থেকে শুরু হচ্ছে ভোটাভুটি। কয়েক দফায় চলবে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত। মোদির দল বিজেপির জন্য পশ্চিমবঙ্গে মমতা ব্যানার্জির তৃণমূলকে হটিয়ে দেয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
পশ্চিমবঙ্গের ভোটের রাজনীতির সঙ্গে পরোক্ষভাবে জড়িয়ে আছে গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানীর ওড়াকান্দির নাম। এ অঞ্চল থেকে ছড়িয়ে পড়া ‘মতুয়া’নামে একটি হিন্দু সম্প্রদায় পশ্চিমবঙ্গে বড় ভোট ব্যাংক, যারা তৃণমূলে ভোট দিয়ে থাকে বলে মনে করা হয়।
১৯৪৭ সালে ঔপনিবেশিক শাসন থেকে ভারত এবং পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার সময় সবচেয়ে বেশি মানুষের দেশত্যাগের ঘটনা ঘটে বাংলা অঞ্চলে। তাই রাজনৈতিক সীমারেখা থাকলেও পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের মানুষের মানসিক নৈকট্য দীর্ঘদিনের।
নরেন্দ্র মোদি ২৭ মার্চ গোপালগঞ্জ সফরে যাবেন। আর সেদিনই প্রথম দফা ভোট হবে পশ্চিমবঙ্গে।
টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানানোর পরপরই মোদি হেলিকপ্টারে চেপে যাবেন ওড়াকান্দির ঠাকুরবাড়িতে।
মোদির ওড়াকান্দি সফর নিয়ে শুধু বাংলাদেশেই নয়, কৌতূহল রয়েছে ভারতেও। অনেকেই জানতে এবং বুঝতে চাইছেন এই সফরের কার্যকারণ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পশ্চিমবঙ্গে ভোটের মাঠে প্রভাব ফেলতেই মোদির সফরে যোগ হয়েছে ওড়াকান্দির নাম।
ওড়াকান্দি হচ্ছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মতুয়া সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মগুরু হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মস্থান।
হরিচাঁদ ঠাকুরের প্রপৌত্র ও কাশিয়ানী উপজেলা চেয়ারম্যান সুব্রত ঠাকুর বলেন, ‘এরশাদ সাহেব প্রেসিডেন্ট থাকাকালে ওড়াকান্দি তীর্থে এসেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বিরোধী দলের নেতা থাকার সময় ঠাকুরবাড়ি ভ্রমণ করেছেন। এখন মোদির সফর ঘিরে নিরাপত্তা বাহিনীর লোক, এসএসএফ ও প্রশাসন নিয়মিত ভ্রমণ করছে। তারা হেলিপ্যাডের জায়গা খুঁজছে। ঠাকুরবাড়ি ও ঠাকুরবাড়ির ৫০০ গজের মধ্যে দুইটা মাঠ আছে। সেখানেই হেলিপ্যাড হবে।’
বাংলাপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, ১৮১১ সালে গোপালগঞ্জের ওড়াকান্দিতে নমশূদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন হরিচাঁদ ঠাকুর। পরবর্তীতে উচ্চ বর্ণের হিন্দুদের বিভিন্ন প্রথার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ওঠেন তিনি। সংস্কারমূলক বিভিন্ন মতবাদের কারণে নিম্নবর্ণের হিন্দুদের কাছে ‘অবতার’ হিসেবে বিবেচিত হতে থাকেন হরিচাঁদ ঠাকুর। গোপালগঞ্জের গণ্ডি ছাড়িয়ে তার মতাদর্শ ছড়িয়ে যায় দেশের বিভিন্ন স্থানে। ক্রমেই বাড়তে থাকে ভক্ত সংখ্যা।
১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান রাষ্ট্রের সৃষ্টির সময় বহু মানুষ স্থানান্তরিত হয়। সেই ধারাবাহিকতায় হিন্দুদের অনেকে আশ্রয় নেয় পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে। ওই সময় হরিচাঁদ ঠাকুরের নাতি পি আর ঠাকুর যশোর সীমান্তঘেঁষা পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁর কাছে ঠাকুরনগরে গড়ে তোলেন মতুয়া মহাসংঘের সদরদপ্তর। তখন থেকে পশ্চিমবঙ্গে মতুয়া সম্প্রদায় ব্যাপক বিস্তৃতি লাভ করে।
বিশেষ করে উত্তর চব্বিশ পরগনা এবং নদিয়ায় রয়েছে মতুয়া সম্প্রদায়ের আধিক্য। শুধু ভক্তের বিচারেই নয়, পশ্চিমবঙ্গে ভোটের রাজনীতিতেও মতুয়াদের রয়েছে ব্যাপক প্রভাব।
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে মতুয়া ভোটারের সংখ্যা অন্তত আড়াই কোটি। রাজ্যে ২৯৪টি আসনের মধ্যে ৬৩টি সংরক্ষিত তফসিলি জাতির জন্য। এই তফসিলিদের মধ্যে মতুয়াদের প্রভাব সবচেয়ে বেশি। শুধু তফসিলি আসনই নয়, অসংরক্ষিত বহু আসনেও ফলাফল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন মতুয়ারা।
ভারত ভাগের পর প্রথম দিকে পশ্চিমবঙ্গে মতুয়ারা ছিলেন কংগ্রেসের সমর্থক। পরে বামপন্থিদের সমর্থন করতে থাকেন তারা। সাম্প্রতিক সময়ে তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জির প্রতি অধিকাংশ মতুয়া সমর্থন দেয়।
২০১৪ সালে মতুয়া পরিবারের সদস্য কপিলকৃষ্ণ ঠাকুর তৃণমূলের টিকিটে বনগাঁ আসন থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন। কপিলকৃষ্ণের মৃত্যুর পর সাংসদ হন তার স্ত্রী মমতাবালা। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিও বিভিন্ন সময়ে নিজেকে মতুয়াদেরই একজন বলে দাবি করেছেন।
তবে সময়ের সাথে সাথে বিভক্তি এসেছে মতুয়াদের মধ্যেও। এই পরিবারের সদস্য শান্তনু ঠাকুর বিজেপির টিকিটে হারিয়ে দেন মমতাবালাকে। সর্বশেষ নির্বাচনে পাশের রানাঘাট আসনেও জয় পান বিজেপির জগন্নাথ সরকার। এই পরিসংখ্যান বলছে, মতুয়া ভোটে আর একচ্ছত্র আধিপত্য নেই তৃণমূলের। সেখানে শক্ত থাবা বসিয়েছে বিজেপি।
মতুয়া ভোটে ভাগ বসাতেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মস্থান ওড়াকান্দি সফর করছেন বলে মত বাংলাদেশ ও ভারতের রাজনীতি বিশ্লেষকদের।
আরও পড়ুন: ওড়াকান্দির মন্দিরে পূজা দেবেন মোদি
তৃণমূলের মুখপাত্র কুনাল ঘোষের মতে, ‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিধানসভা ভোটে দলের জয় নিশ্চিত করতেই ওড়াকান্দি যাচ্ছেন। এটি খুবই দুর্ভাগ্যজনক। মানুষ অবশ্যই এর বিচার করবে।’
অন্যদিকে, বিজেপি নেত্রী ডাক্তার অর্চনা মজুমদার মানতে নারাজ কুনাল ঘোষের অভিযোগ। তার মতে, প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক সফর নিয়ে এভাবে কটাক্ষ করা যায় না। হরিচাঁদ ঠাকুরকে নিয়ে রাজনীতি করাও ঠিক নয় বলে মন্তব্য করেন অর্চনা মজুমদার।
তৃণমূলের সাবেক সাংসদ মমতাবালা ঠাকুরের অভিযোগ, বিজেপি প্রতিশ্রুতিভঙ্গ করেছে। এখন ভোটের জন্য আবার মতুয়াদের ভোটের লোভ দেখাচ্ছে।
বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুর অবশ্য মনে করেন, মতুয়া ভোটের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ওড়াকান্দি সফরের কোনো সম্পর্ক নেই।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ওড়াকান্দি সফর তাই যতটা না ভাবাবেগের, তার চেয়ে অনেক বেশি রাজনৈতিক মোড়কে মোড়া বলেই মত বিশ্লেষকদের।
আরও পড়ুন:ঈদুল ফিতরকেন্দ্রিক যাত্রায় দেশের সড়ক-মহাসড়কে ৩৯৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪০৭ জন নিহত ও এক হাজার ৩৯৮ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
যাত্রীদের স্বার্থ সংরক্ষণ নিয়ে কাজ করা সংস্থাটির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী শনিবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য তুলে ধরেন।
ঈদযাত্রায় অন্যান্য পথে দুর্ঘটনার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘একই সময়ে রেলপথে ১৮টি দুর্ঘটনায় ২৪ জন নিহত, ২১ জন আহত হয়েছে। নৌপথে দুটি দুর্ঘটনায় সাতজন নিহত, পাঁচজন আহত হয়েছে।
‘সড়ক, রেল ও নৌপথে সর্বমোট ৪১৯টি দুর্ঘটনায় ৪৩৮ জন নিহত ও ১ হাজার ৪২৪ জন আহত হয়েছে।’
যাত্রী কল্যাণ সমিতির সমিতির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে মোজাম্মেল বলেন, ‘প্রতি বছর ঈদকেন্দ্রিক সড়ক দুর্ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় সংগঠনটি ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও যাত্রী হয়রানীর বিষয়টি দীর্ঘদিন যাবত পর্যবেক্ষণ করে আসছে। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, এবারের ঈদে লম্বা ছুটি থাকায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২০ শতাংশ মানুষের বেশি যাতায়াত হয়েছে। বর্তমান সরকারের বিগত ১৫ বছরে ধারাবাহিক উন্নয়নের ফলে দেশের সড়ক-মহাসড়কের অবস্থা আগের তুলনায় ভালো থাকায় যানবাহনে গতি বেড়েছে।
‘দেশের সবকটি সড়ক-মহাসড়কের পাশাপাশি পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেলের অবাধ চলাচলের কারণে মোট যাত্রীর সাত দশমিক পাঁচ শতাংশ মোটরসাইকেলে যাতায়াত করেছে। সরকারের বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাঠে থাকলেও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য ও পথে পথে যাত্রী হয়রানি চরমে উঠেছিল। গণপরিবহনগুলোতে ঈদকে কেন্দ্র করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্যর কারণে বাসের ছাদে, ট্রেনের ছাদে, খোলা ট্রাকে, পণ্যবাহী পরিবহনে যাত্রী হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দরিদ্র লোকজনের ঈদে বাড়ি যেতে হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঈদযাত্রা শুরুর দিন ৪ এপ্রিল থেকে ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফেরা ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত বিগত ১৫ দিনে ৩৯৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪০৭ জন নিহত ও ১ হাজার ৩৯৮ জন আহত হয়েছে। বিগত ২০২৩ সালের ঈদুল ফিতরে ৩০৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩২৮ জন নিহত ও ৫৬৫ জন আহত হয়েছিল।
‘বিগত বছরের সঙ্গে তুলনা করলে এবারের ঈদে সড়ক দুর্ঘটনা ৩১ দশমিক ২৫ শতাংশ, প্রাণহানি ২৪ দশমিক ০৮ শতাংশ, আহত ১৪৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ বেড়েছে।’
আরও পড়ুন:সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে ও সেই সঙ্গে অস্বস্তি বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি শনিবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এমন বার্তা দিয়েছে।
পূর্বাভাসে সিনপটিক অস্থান নিয়ে বলা হয়েছে, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে।
শনিবারের তাপমাত্রা নিয়ে পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বাড়তে পারে।
তাপপ্রবাহ নিয়ে বলা আছে, রাজশাহী, পাবনা ও টাঙ্গাইল জেলাসহ খুলনা বিভাগের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং চাঁদপুর ও মৌলভীবাজার জেলাসহ ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগের অবশিষ্টাংশ এবং বরিশালের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে যা অব্যাহত থাকতে পারে।
বৃষ্টিপাত নিয়ে বলা আছে, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্য স্থানে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
আরও পড়ুন:কদিন ধরেই তীব্র গরম। দেশের কোথাও মাঝেমধ্যে বৃষ্টি হচ্ছে, তবে গরম অবশ্য কমছে না। আবহাওয়া আপাতত এমনই থাকবে।
শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে এ তথ্য দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কুমিল্লা ও কিশোরগঞ্জ অঞ্চলসহ ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
এতে বলা হয়, একই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
অধিদপ্তর বলছে, রাজশাহী, পাবনা ও টাঙ্গাইল জেলাসহ খুলনা বিভাগের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং চাঁদপুর ও মৌলভীবাজার জেলাসহ ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগের অবশিষ্টাংশ ও বরিশাল বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বৃদ্ধি পেতে পারে।
আবহাওয়ার সার্বিক পর্যবেক্ষণে বলা হয়, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।
আগামী পাঁচ দিনের পূর্বভাসে বলা হয়েছে, তাপপ্রবাহ প্রায় একই রকম থাকতে পারে। আবহাওয়ায় তেমন পরিবতর্তন আসবে না।
দেশে চলমান দাবদাহ শুক্রবার থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর।
রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি শুক্রবার তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তায় এ কথা জানায়।
আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক স্বাক্ষরিত সতর্কবার্তায় বলা হয়, ‘দেশের ওপর দিয়ে চলমান তাপপ্রবাহ আজ (১৯ এপ্রিল, ২০২৪) হতে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে এবং তাপমাত্রা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।
‘জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বৃদ্ধি পেতে পারে।’
৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাস
আবহাওয়া অধিদপ্তর শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে সিনপটিক অবস্থা নিয়ে বলেছে, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে রয়েছে।
তাপপ্রবাহ বা দাবদাহের বিষয়ে বলা হয়, বাগেরহাট, যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে দিনাজপুর, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, খুলনা, সাতক্ষীরা, বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলা এবং ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এটি অব্যাহত থাকতে পারে।
আরও পড়ুন:প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে মোট বৈধ প্রার্থী দাঁড়িয়েছে এক হাজর ৭৮৬ জন। মাঠ পর্যায় থেকে পাঠনো তথ্য একীভূত করার পর এ তথ্য জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ।
তিনি জানান, প্রথম ধাপে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন এক হাজার ৮৯০ জন। এদের মধ্যে বাছাইয়ে ১০৪ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল, আর বৈধতা পেয়েছে এক হাজার ৭৮৬ প্রার্থীর।
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ১৮ থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত আপিল করা যাবে। আপিল নিষ্পত্তি ২১ এপ্রিল, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২২ এপ্রিল। এরপর প্রতীক বরাদ্দ ২৩ এপ্রিল এবং ১৫০ উপজেলায় ভোটগ্রহণ হবে আগামী ৮ মে।
অপপ্রচার রোধে প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হলে ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের সহায়তা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত।
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে প্রতিমন্ত্রীর নিজ দপ্তরে ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মার সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
আরাফাত বলেন, ‘অপপ্রচার রোধে ভারতের কিছু প্রতিষ্ঠান কাজ করে। তারা কীভাবে কাজ করে, তাদের অভিজ্ঞতা এবং প্রক্রিয়া-পদ্ধতি বিনিময় জানা-বোঝার চেষ্টা করব। এক্ষেত্রে কোনো প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হলে আমরা তাদের কাছ থেকে সহায়তা নেব।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে যেসব কো-অপারেশন আছে, সেসব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে বিটিভিতে দুই ঘণ্টার একটি চাংক নিয়ে আমরা আন্তর্জাতিক সংবাদ বিশ্লেষণ, চলমান ঘটনাপ্রবাহ এবং সংবাদ উপস্থাপনা শুরু করতে যাচ্ছি। সেক্ষেত্রে ভারতের যে সংবাদ সংস্থাগুলো আছে, বিশেষ করে এএনআইয়ের সঙ্গে কোলাবরেশন করা যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
‘যেহেতু বিটিভি ইন্ডিয়াতে দেখানো হয়, সেহেতু দুই ঘণ্টার এ চাংক আমরা ধীরে ধীরে দুই, তিন, চার ঘণ্টা পর্যন্ত বাড়াব। আমরা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী করতে চাচ্ছি, যেখানে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের খবর থাকবে। এর বাইরেও বিভিন্ন দেশের খবর থাকবে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করব ভারতীয় দর্শকদের আকৃষ্ট করতে। এ ছাড়া ইন্ডিয়ান ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন নিয়ে ইনস্টিটিউশন আছে, তাদের সঙ্গে কোলাবরেশন করা, বিভিন্ন ধরনের প্রোগ্রাম ও ট্রেনিং করা।’
‘সম্প্রতি মুজিব শিরোনামের যে সিনেমাটি সহ-প্রযোজনা হয়েছে, এমন অন্য কোনো সিনেমায় সহ-প্রযোজনার সুযোগ আছে কি না তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে’- যোগ করেন প্রতিমন্ত্রী।
ভারতের সিনেমা যেহেতু বাংলাদেশের বাজারে চলে সেহেতু বাংলাদেশেরও ভালো মানের সিনেমা ভারতে চালানোর বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘দর্শককে জোর করে কিছু দেখানো যায় না। বাজারে কোনো জিনিসের চাহিদা থাকলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই যাবে-আসবে। সিনেমা যেহেতু প্রোডাক্ট, সেহেতু ভারতের বাজারে দর্শক থাকলে অবশ্যই যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যে বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের আরও কো-অপারেশনের সুযোগ আছে, সেসব নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। আমি মনে করি- বাংলাদেশ এ বিষয়ে বেশি লাভবান হবে। কারণ ভারতের ফিল্মে, টেলিভিশনে বা অন্যান্য জায়গায় যে অভিজ্ঞতা আছে, তা আমরা যত বেশি নেয়ার চেষ্টা করা যায়। দেশের উন্নয়নের জন্য এসব জরুরি।’
আরও পড়ুন:সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি অর্জনে অবদান রাখতে এবং দেশকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত করায় অবদান রাখতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সবকিছু করছে।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) মিলনায়তনে ‘ডিফেন্স ডিপ্লোমেসি: স্ট্র্যাটেজি ফর বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সূত্র: ইউএনবি
সেনাপ্রধান বলেন, ‘মাতৃভূমিকে রক্ষা করা, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য এবং আমরা তার জন্য প্রস্তুত আছি। আমরা সবকিছুই করছি।’
বঙ্গবন্ধুর পররাষ্ট্র নীতির বাণী ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই পররাষ্ট্রনীতি বাস্তবায়নে আমরা সবকিছু করছি।’
জাতীয় নিরাপত্তা বজায় রেখে টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করে সেনাপ্রধান বলেন, ‘কূটনীতি যেকোনো ধরনের জাতীয় স্বার্থ অর্জনের প্রচেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়।’
বেসামরিক শক্তির সহায়তায় সেনাবাহিনী কীভাবে দেশে গঠনমূলক কর্মকাণ্ড, দেশ-বিদেশে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে সে কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
সেনাপ্রধান বলেন, ‘যেখানেই সুযোগ আছে, তা প্রত্যক্ষ হোক বা পরোক্ষ, আমরা সুযোগ গ্রহণ করি এবং বাংলাদেশের স্বার্থে সবকিছু করি।’
সামরিক কূটনীতির কথা বলতে গিয়ে জেনারেল শফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আরও সম্পদ ও বাজেট বরাদ্দ করে তাদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। আমরা জানি কীভাবে এটা করতে হয়। কিন্তু আমাদের এটা করার সামর্থ্য থাকা উচিত।’
মিয়ানমার ইস্যু প্রসঙ্গে সেনাপ্রধান বলেন, ‘মিয়ানমারের সামরিক নেতাদের কেউ কেউ আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হচ্ছেন এবং এখানে নিজেদের সমস্যায় ফেলার ঝুঁকি রয়েছে।
‘এক বন্ধুকে খুশি করার জন্য আমরা আরেক বন্ধুর বিরোধিতা করতে পারি না। বেশকিছু বিষয় রয়েছে যা আমাদের খেয়াল করতে হবে। এসব ঘটনার প্রভাবও বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি এবং আমরা সঠিক পথেই রয়েছি।’
জেনারেল শফিউদ্দিন বলেন, দূর থেকে চালানো যায় এমন কিছু যানবাহন দেশেই তৈরি হচ্ছে যা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্য বেশ উপকারে আসবে। আগে এসব যন্ত্রপাতি আমদানি করতে হতো। তাই এখন আমাদের প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হচ্ছে।’
সেনাপ্রধান বলেন, ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কেবল যুদ্ধে লড়াই করাই শেখে না, বরং জাতীয় স্বার্থে কীভাবে যুদ্ধ প্রতিরোধ বা এড়াতে হয় তা-ও জানে। আমরা সঠিক পথেই আছি এবং আমরা আমাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হবো না।’
একইসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা সামরিক বাহিনীর প্রধান দায়িত্ব। এটি তারা কখনও ভুলে যায় না এবং এ কাজে সবসময় তাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।
‘উদ্দেশ্য রাতারাতি পরিবর্তন হতে পারে। কিন্তু সক্ষমতা রাতারাতি পরিবর্তন হয় না। আজ আপনি আমার বন্ধু, আগামীকাল বন্ধু না-ও হতে পারেন। কিন্তু জাতীয় স্বার্থ, মাতৃভূমি রক্ষায় আমাদের সক্ষমতা থাকতে হবে- পররাষ্ট্রনীতির এই আদেশ আমাদের সবার জন্য সমান।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিআইআইএসএস চেয়ারম্যান রাষ্ট্রদূত এ এফ এম গওসোল আযম সরকার ও মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. আবু বকর সিদ্দিক খান।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য