৯ মাসের যুদ্ধ শেষে ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় যেদিন পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করে, সেদিনও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবার ধানমন্ডির একটি বাড়িতে অবরুদ্ধ ছিল পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে। পরদিন ১৭ ডিসেম্বর সেখান থেকে তাদের উদ্ধার করেন যৌথ বাহিনীর কয়েকজন ভারতীয় সেনা। যে মানুষটি সেদিন বঙ্গবন্ধুর পরিবারের জন্য ত্রাতা হয়ে এসেছিলেন, তিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীর কর্নেল অশোক তারা।
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ১৯৭১ সালের ১৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশের স্থপতির পরিবারকে উদ্ধার করেন সেদিনের ২৯ বছর বয়সী তরুণ অশোক। ৫০ বছর আগের সেই স্মৃতি, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীসহ নানা বিষয়ে তিনি কথা বলেছেন ডিএনএ ইন্ডিয়ার সঙ্গে।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ২৬ মার্চ বাংলাদেশ সফরে আসছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
১৯৭১ সালে যে বাড়িটি থেকে অশোক শেখ হাসিনা, তার শিশুসন্তানসহ বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্যদের উদ্ধার করেছিলেন, এবারের সফরে ধানমন্ডির সেই বাড়িতে যাওয়ার কথা রয়েছে মোদির।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর উপলক্ষে অশোক তারা বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণের প্রতি আমার বার্তা হলো, ভারতীয় ও বাংলাদেশিরা ভাই ভাই…আমরা একটি পরিবার হয়ে থাকতে চাই।’
চলতি বছরের ১৭ ডিসেম্বর মোদির সঙ্গে এক ভার্চুয়াল বৈঠকের সময়ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্মরণ করেন অশোক তারাকে। সেদিন বলেন, ‘আজ আমার জন্য একটি বিশেষ দিন। ১৭ ডিসেম্বর, পাকবাহিনীর অধীনে তখনও আমার মা, রেহানা, রাসেল, আমি ও ছোট চার মাসের জয় বন্দি ছিলাম। ভারতের কর্নেল অশোক তারা এসে এই দিন সকালে আমাদের সেই বন্দিদশা থেকে মুক্ত করেন।
‘১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ মুক্ত হয়, আমরা ১৭ ডিসেম্বর মুক্ত হই। আজকের এই দিনে কর্নেল অশোক তারাকে কৃতজ্ঞতা জানাই। ভারতের সশস্ত্র বাহিনী ও মুক্তিবাহিনী সবার জন্যই আমার কৃতজ্ঞতা। সেদিন আমরা যারা মুক্ত হয়েছিলাম শুধু জয়, আমি আর রেহানাই বেঁচে আছি, আর কেউ বেঁচে নেই।’
বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বাংলাদেশের জাতির পিতার পরিবারকে উদ্ধারের দিনের বর্ণনায় অশোক তারা বলেন, ‘১৯৭১ সালের যুদ্ধের সময় তাকে (শেখ হাসিনা) খুবই সংকটময় একটি পরিস্থিতিতে উদ্ধার করা হয়। কেননা, তখন পাকিস্তানিরা বাড়িটি পাহারা দিচ্ছিল। বাড়িটির নাগালে যেতে চাওয়া যে কাউকে তারা গুলি করছিল। আমি যখন বাড়িটির কাছে গেলাম, আমাকে থেমে যেতে হয় এবং আমি একজন সংবাদকর্মীর মরদেহ দেখতে পাই। আমার সঙ্গে মাত্র দুজন জওয়ান ছিল এবং বাড়িটিতে আক্রমণের কোনো প্রশ্নই ছিল না, কারণ, বাড়ির ভেতরে মানুষ ছিল, তাদের জীবন হুমকিতে পড়ে যেতে পারত।
‘সাহস এবং বুদ্ধি খাটিয়ে আমি সিদ্ধান্ত নিই, পাকিস্তানিদের মুখোমুখি হওয়ার। দুই জওয়ানসহ আমি অস্ত্রগুলো ফেলে দিই, তাদের পেছনে থাকতে বলি।
‘কোনো অস্ত্র ছাড়াই আমি বাড়িটির দিকে এগিয়ে যাই। বাড়ির কাছে পৌঁছে জিজ্ঞেস করলাম, কেউ আছে কি না। তারা (পাকিস্তানি সেনারা) আমার সঙ্গে পাঞ্জাবি ভাষায় কথা বলল এবং আমি পাঞ্জাবি হওয়ায় তাদের আমি ভাষাটি বোঝতে পারতাম। তারা আমাকে থামতে বলে, অন্যথায় তারা গুলি করবে।
‘আমি তাদের বলি, আমি সেনা অফিসার, এখানে এসেছি তোমাদের বলতে যে, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করেছে।
‘তারা বিশ্বাস করছিল না। বরং জবাবে তারা আমাকে খুব বাজে ভাষায় গালাগাল করে। কিন্তু আমি চুপ থাকি, কারণ আমি জানতাম, আমার দায়িত্ব কী, আমার লক্ষ্য কী।
‘আমি আবারও তাদের পরিস্থিতিটা বুঝতে বলি। তখনই ভাগ্যক্রমে একটি ভারতীয় হেলিকপ্টার বাড়িটির ওপর দিয়ে উড়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে আমি তাদের বলি, হেলিকপ্টারটি দেখুন, আপনারা কী কখনও আপনাদের মাথার ওপর ভারতীয় হেলিকপ্টার উড়তে দেখেছেন।
‘বিষয়টি বুঝতে পারলেও তারা বলে, আত্মসমর্পণের বিষয়ে তারা ঊর্ধ্বতন অফিসারদের জিজ্ঞেস করবে। ওই সময় আমি ঠিক গেটে ছিলাম। আমার শরীরের ডান দিকে রাইফেলের বেয়োনেট লাগানো ছিল। আমি যখন কথা বলছিলাম, শেখ মুজিবুর রহমানের স্ত্রী সাহস করে জোরালো কণ্ঠে বললেন, তারা নিষ্ঠুর, তারা যেকোনো কিছুই করে ফেলতে পারে।
আমি তাদের (পাকিস্তানি আর্মি) বললাম, টেলিফোন লাইন কেটে ফেলায় যোগাযোগের কোনো উপায় নেই। আরও বললাম, দেরি করলে মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় সেনারা তোমাদের মারতে আসবে। পাকিস্তানে অপেক্ষায় থাকা পরিবারের সঙ্গে তোমাদের দেখা হবে না। তোমাদের মরদেহের কী গতি হবে, তা তোমরা কল্পনাও করতে পারবে না।
‘এভাবে কথাবার্তা চলেছিল ২৫ মিনিট। এর মধ্যে পাকিস্তানি বাহিনীর ওই দলের কমান্ডার বন্দুকে গুলি লোড করল। বাড়ির অন্যান্য মানুষের ওপর তখনও সে গুলি চালিয়ে চাচ্ছিল। আমি দাঁড়িয়ে থাকি, তাদের বলি, এই ভয় আমার ওপর প্রভাব ফেলবে না। কারণ, এটা হলে আমার চেয়ে তোমাদেরই বেশি ক্ষতি হবে। তোমরা এখানে ১২ জন, সবাইকে মারা হবে; কখনও বাড়ি ফিরতে পারবে না।
‘যদি আত্মসমর্পণ করো, একজন ভারতীয় সেনা অফিসার হিসেবে কথা দিচ্ছি, আমি তোমাদের হেডকোয়ার্টারে নিয়ে যাব, যাতে তোমরা পাকিস্তানে তোমাদের বাড়িতে পৌঁছাতে পার। একপর্যায়ে তারা সম্মত হয় এবং আত্মসমর্পণ করে।
‘আমি তখন, বাড়িটির দরজা উন্মুক্ত করি। প্রথম যে নারী বের হয়ে আসেন, তিনি ছিলেন মিসেস শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি আমাকে বুকে টেনে নেন। বলেন, তুমি আমার ছেলে এবং আমাদের উদ্ধারে সৃষ্টিকর্তা তোমাকে পাঠিয়েছেন।
‘ওই সময় শেখ মুজিবুর রহমানের এক আত্মীয় ও মুক্তিযোদ্ধা আমার হাতে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা তুলে দেন। আমাকে বলেন, পাকিস্তানি পতাকা ফেলে ওই পতাকা ওড়াতে।
‘আমি এগিয়ে যাই। ওই পতাকা ওড়াই এবং পাকিস্তানি পতাকা মাটিতে ফেলে দিই। মিসেস শেখ মুজিবুর রহমান বাঘিনীর মতো গর্জে ওঠেন। পাকিস্তানি পতাকা পা দিয়ে মাড়িয়ে বলেন, “জয় বাংলা”। এ সময় আরও মানুষ যোগ দেয়। তারা (পাকিস্তানি সেনা) আত্মসমর্পণ করেছিল আমি তাদের পাঠিয়ে দিই।…
‘আমার দ্বারা তার পরিবার উদ্ধার হয়েছে, এটা যেকোনোভাবে জানতে পেরে শেখ মুজিবুর রহমান আমার সঙ্গে দেখা করতে চান। কয়েক দিন পর আমার ব্যাটালিয়ন মিজোরামের উদ্দেশে রওনা হয়। তবে আমাকে থাকতে বলা হলো। কয়েক দিন পর মিসেস শেখ মুজিবুর রহমান তাদের উদ্ধার করায় আমাকে একটি উপহার দেন।
‘১০ জানুয়ারি, ১৯৭২ সালে ঢাকায় আসেন শেখ মুজিবুর রহমান। ১২ তারিখ তিনি তার বাড়িতে আমাকে দাওয়াত করেন। আমরা নাশতা করি। তার সঙ্গে কথা বলার সময় আমি দুঃখকষ্ট, জনগণের ক্ষত কীভাবে সেরে উঠছে, কীভাবে তারা তাদের মর্যাদা, গর্ব, সংস্কৃতি, ভাষা ও দেশের অর্থনীতি ফিরে পেয়েছে, তা দেখতে পাচ্ছিলাম। তিনি ভারতের প্রতি কৃতজ্ঞ ছিলেন।
‘২৩ জানুয়ারি মুজিবুর রহমান ও তার পরিবার আবার আমাকে আমন্ত্রণ করে। কারণ, তারা আমাকে বিদায় জানাতে চেয়েছিল। তখন বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তার তিন মাস বয়সী ছেলের সঙ্গে তোলা একটি ছবি দেয়। ছবিটির পেছনে লেখা ছিল, “জয় বাংলা”।
‘আমি দিল্লিতি চলে আসি। শেখ হাসিনার ছোট বোনের কাছ থেকে দুটি চিঠি পাই। পুরস্কার প্রদানের জন্য ২০১২ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী আমাকে বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানান। পুরস্কারটি ছিল মুক্তিযুদ্ধের বন্ধুত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ। এটা দেয়া হয়েছিল ২০ অক্টোবর, ২০১২ সালে।’
বাংলাদেশ-ভারতের বন্ধন কীভাবে দেখছেন, এমন এক প্রশ্নের জবাবে আশোক তারা বলেন, ‘যুদ্ধের পরপরই দুই দেশের সম্পর্ক খুব গভীর হয়। কিন্তু তিন বছর পর শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর স্বৈরশাসন এলে সম্পর্ক বাজে রূপ নেয়। এরপর বর্তমান প্রধানমন্ত্রী আবার ক্ষমতায় এলে সম্পর্ক দুর্দান্তরূপে ফেরে। বর্তমান (ভারত) সরকারও তাদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক চায়।
‘দুই দেশের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী মোদি অনেকবার বলেছেন। এই মুহূর্তে সম্পর্ক অত্যন্ত ভালো। আমি চাই, এই সম্পর্ক অব্যাহত থাকবে।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বাংলাদেশের জনগণের প্রতি আপনার বার্তা কী? এ প্রশ্নের জবাবে অশোক তারা বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণের প্রতি আমার বার্তা হলো, ভারতীয় ও বাংলাদেশিরা ভাই ভাই। উভয়ের সংস্কৃতি ও মার্যাদার বিষয়টি একই। অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সম্ভাব্য অন্য সব ক্ষেত্রে আমরা অবশ্যই একে অপরকে সম্মান করব এবং সহযোগিতা করব।’
বাংলাদেশে ভারতীয় সেনাদের ভাস্কর্য নির্মাণ পরিকল্পনা নিয়ে অশোক তারা বলেন, আমাদেরও উচিত বাংলাদেশি সেনাদের তুলে ধরা। সেখানে অবশ্যই নিজ নিজ পতাকাসহ ভারতীয় ও বাংলাদেশি সেনাদের উপস্থাপন থাকতে হবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য আমরা একসঙ্গে লড়াই করেছি।
বেসরকারি চ্যানেল একুশে টেলিভিশনে ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’ উদ্বোধন করা হয়েছে। সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ সোমবার বিকেলে কর্নারের উদ্বোধন করেন।
একুশে টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
বঙ্গবন্ধু কর্নার স্থাপনে একুশে টেলিভিশনের উদ্যোগের প্রশংসা করে প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, ‘জাতির পিতার প্রতি তাদের গভীর শ্রদ্ধাবোধ আর দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বসহ গণতন্ত্রের জন্য একুশে টেলিভিশন তাদের প্রচারমাধ্যম ব্যবহার করে।
‘আজকে একুশে টেলিভিশনে বঙ্গবন্ধু কর্নার উদ্বোধন করা হলো, সম্ভবত এটি প্রথম কোনো টিভি স্টেশন যেখানে বঙ্গবন্ধু কর্নার উদ্বোধন হলো। একুশে টেলিভিশনের কলাকুশলী, কর্মকর্তা-কর্মচারী যারা আছেন, তাদের নিরলস প্রচেষ্টার মধ্যে দিয়ে এই টেলিভিশন দেশের ক্রান্তিকালে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা দেখছি, এখন যে বন্যা হচ্ছে, সে সময় একুশে টেলিভিশন অত্যন্ত জোরালো ভূমিকা রাখছে। একই সঙ্গে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন নিয়ে একুশে টেলিভিশন বহু অনুষ্ঠান করেছে।’
পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিকল্পনায় কারওয়ান বাজারের জাহাঙ্গীর টাওয়ারে একুশে টেলিভিশন কার্যালয়ের সপ্তম তলায় ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’ স্থাপন করা হয়েছে।
কর্নারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের একটি প্রতিকৃতি রয়েছে। ফাইবারে তৈরি প্রতিকৃতিটির শিল্পী বিপ্লব দত্ত।
এ ছাড়া এখানে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা বিভিন্ন বই রাখা হয়েছে।
পরে প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ একুশে টেলিভিশনের গ্রন্থাগার পরিদর্শন করেন।
মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধুসহ বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক বই দিয়ে নতুন করে সাজানো হয়েছে গ্রন্থাগারটি।
একুশে টেলিভিশনের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:পদ্মা সেতু কিংবা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটই হোক, বাংলাদেশের এমন যেকোনো সফলতা নিয়েই কিছু মানুষ ইচ্ছাকৃতভাবে বিরোধিতা করবে। এমন মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।
নিজের ফেসবুকে পেজে যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় বুধবার রাতে দেয়া পোস্টে এ মন্তব্য করে তিনি লিখেছেন, “যুদ্ধাপরাধীদের প্রেতাত্মারা যাতে অন্ধকার অধ্যায় ফিরিয়ে আনতে না পারে, সে জন্য আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। ধর্ম ব্যবসায়ীদের প্রতি আমাদের জিরো টলারেন্স দেখাতে হবে।”
গত ৬ মে নিউ ইয়র্কের ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনে ‘গোল্ডেন জুবিলি বাংলাদেশ কনসার্টের’ একটি ভিডিও ওই পোস্টে দিয়েছেন সজীব ওয়াজেদ। তার বর্ণনায় মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের সহায়তায় ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’-এর ভূমিকা তুলে ধরে তিনি এসব কথা লেখেন।
“১৯৭১ সাল, হাজার হাজার মাইল সাগর দূরত্বের একটি দেশ তার লালসবুজ পতাকা রক্ষায় রক্ত ঝরাচ্ছিল। আর বন্ধুর মুখে সেই দেশটির গল্প গভীরভাবে নাড়া দিল বিশ্ব সংগীতের ইতিহাসের অন্যতম জনপ্রিয় একজন শিল্পীকে।
“পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গুলিতে নিরস্ত্র মানুষ হত্যা, অসংখ্য নারীদের ধর্ষণ আর অনাহারে শিশুদের মৃত্যু তাকে মর্মাহত করল। ঠিক তখনই কিছু কাব্যিক শব্দ একটি অবিস্মরণীয় গানের লিরিক আকারে ফুটে উঠল।”
খ্যাতনামা ব্রিটিশ ব্যান্ডদল বিটলসের ভোকাল ও লিড গিটারিস্ট জর্জ হ্যারিসনের গাওয়া ইংরেজি ওই গানটির বাংলা ভাষান্তর নিজের পোস্টে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা।
‘চোখ ভরা বিষাদ নিয়ে আমার বন্ধু আমার কাছে এসেছিল, তার দেশ শেষ হয়ে যাবার আগে পাশে দাঁড়ানো দরকার বলে আমাকে জানিয়েছিল।’
মনে যা এসেছিল, শুধু তাই দিয়ে গানটি রচনা করলেন না বিটলস তারকা জর্জ হ্যারিসন। বরং ইতিহাসের সবচেয়ে নৃশংস একটি গণহত্যার শিকার হওয়া বাংলাদেশের জনগণকে সাহায্য করার চিন্তায় মগ্ন তখন।
‘ছুটে গেলেন বব ডিলান এবং এরিক ক্ল্যাপটনের মতো কিংবদন্তিদের কাছে। তারাও বাংলাদেশকে সমর্থন জোগাতে সম্মত হন। আর বাকিটা তো ইতিহাস।
‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশের মাধ্যমে তারা যুদ্ধের শিকার দেশকে সাহায্য করার নজির স্থাপন করেছে। যখনই আমি এটি ইউটিউবে দেখি, এটি আমাকে একটি সোনালি মুহূর্তে ফিরিয়ে নিয়ে যায়'-
“জর্জ হ্যারিসন বাংলাদেশ গানটি গাইছেন, কানে ভাসছে বব ডিলানের ‘হাউ মেনি রোডস অ্যা ম্যান মাস্ট ওয়াক ডাউন (কতটা পথ পেরোলে বলো পথিক হওয়া যায়)’, ঝড়ের মতো তার সেতারে সুর তুলছেন পণ্ডিত রবিশঙ্কর। একই মঞ্চে সকল তারাদের মেলা!”
বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তীতে সেই মুহূর্তকে আরেকটি কনসার্টের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদনের কথা তুলে ধরেন জয়।
‘বিশ্বের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ রকস্টার ও গানের সম্রাটরা যেমনটি স্বপ্ন দেখেছিলেন, বাংলাদেশের স্বপ্ন সত্যি হল। ১৯৭১ সালের যুদ্ধবিধ্বস্ত সেই দেশটি এখন টেকসই অগ্রগতি এবং উন্নয়নের একটি প্রতিকৃতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।’
বাংলাদেশ স্থাপত্যের দৃষ্টিনন্দন কর্মযজ্ঞ পদ্মা সেতু থেকে শুরু করে আধুনিক প্রযুক্তির বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট- এক অনুপ্রেরণার ইতিহাস রচনা করেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সুবর্ণজয়ন্তীতে সবাইকে সোনার বাংলার প্রতিশ্রুতিতে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আসুন, হ্যারিসনের বাংলাদেশ গানটি আরও একবার গাই এবং বিশ্ব আবার শুনুক। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়াই হলো এবারের সুবর্ণজয়ন্তীতে আমাদের প্রতিশ্রুতি।’
আরও পড়ুন:জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কলকাতায় যে কলেজে পড়েছেন, সেই সাবেক ইসলামিয়া কলেজ বা বর্তমান মৌলানা আজাদ কলেজে বিশ্ববরেণ্য এই ছাত্রের জন্ম শতবর্ষের শ্রদ্ধা জানাতে একটি আন্তর্জাতিক আলোচনা চক্রের আয়োজন করা হয়।
শনিবার মৌলানা আজাদ কলেজের সেমিনার হলে অনুষ্ঠিত এই আলোচনা চক্রে আমন্ত্রিত বক্তা হিসেবে অংশ নেন বাংলাদেশের প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক বাংলা একাডেমির সভাপতি সেলিনা হোসেন। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে অংশ নেন কলকাতার বাংলাদেশ উপ হাইকমিশনের কাউন্সিলর (রাজনৈতিক) সিকদার মোহাম্মদ আশরাফুল রহমান এবং কলেজের অধ্যাপক ও ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ।
সাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর কাছে বাংলা শুধুমাত্র একটা শব্দ ছিল না। তার কাছে বাংলা ছিল একটা দর্শন। তিনি ছিলেন আমার কাছে একজন শিক্ষক। বাংলা সাহিত্যকে অনুবাদ করে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিতে চেয়েছিলেন তিনি।
‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিশ্ববন্দিত এই নেতাকে পাকিস্তানের জেলে আটকে রাখা হয়েছিল। তাকে ফাঁসি দেয়ার প্রস্তুতিতে কবরও খোঁড়া হয়েছিল, পাকিস্তান সরকারের নির্দেশে। তখন বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, মৃত্যুর পর তার দেহ যেন বাংলাদেশের মাটিতে কবর দেওয়া হয়। বাংলাদেশের প্রতি বঙ্গবন্ধুর ভালোবাসার গভীরতা ছিল এতটাই।’
কলকাতার বাংলাদেশ উপহাইকমিশনের কাউন্সিলর মোহাম্মদ আশরাফুল রহমান বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শুধু বাংলাদেশের নয়, তিনি ছিলেন দুই বাংলার বন্ধু। তার মানসিক বিকাশে এই কলেজের একটা অবদান রয়েছে।’
কলেজের অধ্যক্ষ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ছিলেন, এই কলেজের ছাত্র সংসদের সভাপতি। কলেজের হোস্টেলে থাকতেন। একটি জাতিকে তিনি উদ্বুদ্ধ করেছিলেন।’
অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’র কিছু অংশ পাঠ করে শোনান কলেজের ছাত্ররা।
কলেজের ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে বঙ্গবন্ধু কীভাবে তাদের দাবি নিয়ে লড়াই করেছিলেন, কীভাবে ১৯৪৬ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় কলকাতাসহ অন্যান্য এলাকার দাঙ্গাপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন– বক্তারা তা তুলে ধরেন।
আরও পড়ুন:দেশের পিছিয়ে পড়া বেদে সম্প্রদায়কে মূল ধারায় সম্পৃক্ত করতে ভূমিহীন ৫৯টি পরিবারকে মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে জমিসহ আধাপাকা বাড়ি দিচ্ছে সরকার।
ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারোবাজার ইউনিয়নের জগন্নাথপুর গ্রামের মাজদিয়া বাঁওড়ের পাশেই চলছে বিশাল নির্মাণযজ্ঞ। সেখানেই ঠাঁই হবে কালীগঞ্জ উপজেলার ৫৯ পরিবারের প্রায় ৩০০ মানুষের।
দেশের ইতিহাসে বেদে সম্প্রদায়ের জন্য এটাই সবচেয়ে বড় পল্লি হতে যাচ্ছে। সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যের কথা মাথায় রেখে পল্লিটি নির্মাণ হচ্ছে জলাধারের পাশেই।
আগামী জুনের মধ্যেই এ বাড়িগুলো বেদে সম্প্রদায়ের লোকজনের কাছে হস্তান্তর করতে পারা যাবে বলে মনে করছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
দেশে সমতল পর্যায়ে যে ৫০টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী আছে তাদের জন্য মুজিববর্ষের প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায় মিলিয়ে ৬ হাজার ৫০০ গৃহ নির্মাণ করা হচ্ছে, যার মধ্য সবচেয়ে বড় বেদেপল্লি হতে যাচ্ছে কালীগঞ্জের জগন্নাথপুরে।
শুক্রবার গিয়ে দেখা গেছে, পুরো এলাকা মাটি ফেলে ভরাট করা হয়েছে। নির্মাণাধীন এলাকাজুড়ে স্তূপ করে রাখা হয়েছে ইট। ব্যস্ত সময় পার করছেন নির্মাণ শ্রমিকরা।
৫৯ পরিবারের প্রায় ৩০০ লোকের বাসস্থানের ঘরের পাশাপাশি সেখানে নির্মাণ করা হবে মসজিদ, কবরস্থান, শিশুদের জন্য খেলার মাঠ।
যেসব ভূমিহীন বেদেদের বাড়ি দেয়ার জন্য তালিকা করা হয়েছে, তাদের সঙ্গে কথা হয় নিউজবাংলার।
পরম্পরা অনুযায়ী সাপ খেলা দেখান কালীগঞ্জ উপজেলার বারোবাজার ইউনিয়নের মদিনাপারার শহীদুল ইসলাম। নিজের কোনো জমি নেই, পরের জায়গায় থাকি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি গরিব মানুষ, ঘর পাইলে ভালো হবে৷ পরিবেশটা একটু ভালো হয়। ঘর পাইলে নাতি-নাতনিদের শিক্ষিত করে বিদ্যান করব, ওই স্বপ্ন দেখছি।
‘বাবা-দাদা আমাগো মূর্খ বানাইয়া থুইয়া গেছে, যদি আমাদের একটু শিক্ষা দিয়া যাইত, তাইলে ভালো হতো। তালিকা নিয়া গেছে, নাম সব নিয়া গেছে।’
একই পাড়ার রঙ্গিলা বেগম গ্রামে গ্রামে ঘুরে ‘দাঁতের পোকা তুলে’ ও শিঙ্গা লাগিয়ে আয়-রোজগার করেন। ২২ বছর বয়সী নারীর রয়েছে দুই সন্তান। স্বামী দেখান বানরের খেলা। যা উপার্জন হয় তা দিয়েই চলে সংসার।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমরা মাঠে-ঘাটে থাকি, এবার একটা ঠিকানা হবে। সামর্থ্য হলে পোলাপানদের লেখাপড়া করামু।’
ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক মনিরা বেগম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঝিনাইদহ উপজেলার কালীগঞ্জে বেদেদের জন্য ৫৯টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। বেদে সম্প্রদায় এখনই উল্লসিত তাদের ঘর পাওয়ার বিষয়টি জেনে। প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন বিনির্মাণের জন্য এই প্রকল্পটি সফলতার সঙ্গে বাস্তবায়নে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছি।’
মাজদিয়া বাঁওড়ের পাশে জায়গাটা নির্ধারণ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ঘরের পাশাপাশি এখানে মসজিদ, কবরস্থান, শিশুদের জন্য খেলার মাঠ করে দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। প্রতিটা ঘরে দুইটা রুম আছে, একটা রান্নাঘর, বাথরুম থাকবে। ঘরপ্রতি ব্যয় হচ্ছে ২ লাখ ৫৯ হাজার ৫০০ টাকা। ঘরের চারপাশে কিছু খোলা জায়গা রেখেছি, তারা যাতে গবাদি পশু পালন এবং গাছ লাগিয়ে পরিবেশটা সুন্দর রাখতে পারে। সার্বিকভাবে এটা যাতে আধুনিক পল্লিনিবাসের সুবিধা পায়, সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’
যাযাবর জনগোষ্ঠীর মধ্যে অন্যতম বেদে সম্প্রদায় কালীগঞ্জ উপজেলায় দীর্ঘদিন ধরে মানবেতর জীবনযাপন করছিল উল্লেখ করে ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া জেরিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত একটি পরিবারও গৃহহীন থাকবে না। সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জন্য উপজেলা প্রশাসন কালীগঞ্জ বেদে সম্প্রদায়ের ৫৯ পরিবারকে চিহ্নিত করেছে। জলাধারের সঙ্গে তাদের যে জীবনযাপন ইতিহাস-ঐতিহ্য আছে তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি পরিবেশ আমরা নির্ধারণ করেছি।’
প্রায় ২ একর জমি অবৈধ দখলদারদের কাছে ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা দখলমুক্ত করেছি, যার আনুমানিক বাজারমূল্য ৪০ লাখ টাকা। আমরা আশা করছি, এই পরিবারগুলো উন্নত জীবন যাপন করতে পারবে। পুনর্বাসন সম্পন্ন হলে তাদের নতুন প্রজন্ম শিক্ষা স্বাস্থ্যের পাশাপাশি নাগরিক সুবিধা গ্রহণ করে একটি উন্নত প্রজন্ম পাবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’
১৯৯৭ সাল থেকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে চলতি অর্থবছর পর্যন্ত পুনর্বাসিত পরিবারের সংখ্যা ৭ লাখ ৮ হাজার ৩টি। পরিবারের সদস্য ৫ জন ধরে হিসাব করলে সে সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৫ লাখ ৪০ হাজার ১৫ জন।
চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ একক গৃহের সংখ্যা ১ লাখ ৮২ হাজার ৮০৩টি। বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণ ৩ হাজার ৯৭১ কোটি ৬ লাখ ৮৩ হাজার টাকা।
আরও পড়ুন:ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগের তখনকার ছাত্র জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয় ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ। প্রতি বছর গ্রেপ্তারের এই দিনটিকে এখন থেকে দিবস হিসেবে পালন করবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনের নেতাদের নিয়ে অধ্যাপক আব্দুল মতিন চৌধুরী ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে পরিবেশ পরিষদের সভায় এই দিবস পালন নিয়ে আলোচনা হয়।
সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান সভাপতিত্ব করেন। সভায় উপস্থিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন দিবসটি পালনের জন্য প্রস্তাব তোলেন।
সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ভাষা আন্দোলনের সূচনা হয়। আন্দোলন করতে গিয়ে তিনি গ্রেপ্তার এবং কারাবরণ করেন। তাই সার্বিকভাবে আমরা মনে করি, ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ে দিনটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে পালন করা উচিত। ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে আমি এ আহ্বান করেছি। উপাচার্য এতে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন।’
আর কী কী আহ্বান জানানো হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার মূল সুর বহু ভাষিকতাকে রক্ষা করা এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য।
কিন্তু ক্রিয়াশীল সংগঠনগুলোর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের যে সভা সেখানে চাকমাভাষী, গারোভাষী এবং আদিবাসী যারা রয়েছেন তাদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই৷ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যেন এদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত হয় সেটির জন্য আমরা আহ্বান জানিয়েছি।
‘এ ছাড়া আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক পরিবেশ সমুন্নত রাখতে শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় চায়ের টংয়ের বাইরে অতিরিক্ত যেসব ভ্রাম্যমাণ দোকান রয়েছে, সেগুলো সরিয়ে দেয়া এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে ভারী যানবাহন বন্ধের বিষয়ে আহ্বান জানিয়েছি।’
১১ মার্চ দিবসটি উদযাপনের বিষয়ে উপাচার্য বলেন, ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ খুব গুরুত্বপূর্ণ দিন। ভাষা আন্দোলনের এই পর্বে বঙ্গবন্ধু নেতৃত্বে ছিলেন। তাকে রাজবন্দি হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু যেহেতু এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং ছাত্রনেতা ছিলেন, সেহেতু আমাদের দায়িত্বের জায়গাটা আরও বেশি। সুতরাং আমরা যখন এটি করব, তখন আমরা ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারব, বঙ্গবন্ধুর যে অনবদ্য অবদান ছিল সেটিতে শ্রদ্ধা জানানোর সুযোগ পাব।’
উপাচার্য আরও বলেন, ‘এটি আমাদের মূল্যবোধকে জাগ্রত করবে। ইতিহাসে যাদের অসাধারণ অবদান, তাদের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য এসব দিবস আমাদের সুযোগ করে দেয়।’
সভা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ক্যাম্পাসে যানবাহন চলাচল সীমিতকরণ এবং ভ্রাম্যমাণ, অসহায়, দুস্থ ও ছিন্নমূল মানুষের তালিকা প্রণয়ন ও তাদের সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর আওতায় আনার জন্য উদ্যোগ নেয়া হবে বলে সভায় অভিমত প্রকাশ করা হয়।
ছাত্রনেতাদের আলোচনার সূত্র ধরে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের পরিপ্রেক্ষিত ও যৌক্তিকতা তুলে ধরেন।
এ ছাড়া প্রথম বর্ষ স্নাতক সম্মান শ্রেণিতে ভর্তি কার্যক্রম সহজীকরণ, শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি লাঘব, সময়, শ্রম ও অর্থের সাশ্রয় ঘটানো এবং সেমিস্টার শিক্ষাকার্যক্রম আরও কার্যকর ও গতিশীল করার লক্ষ্যে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষ থেকে চারটি ইউনিটের (ক, খ, গ ও চ) অধীনে ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের বিষয়ে সভায় আলোচনা করা হয়।
শিক্ষার্থীদের বিভাগ পরিবর্তনের সুযোগ প্রদানের বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করার ওপরও গুরুত্বারোপ করা হয়।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান সুষ্ঠু, সুশৃঙ্খল, পরিকল্পিত ও নিয়মতান্ত্রিকভাবে এসব উদ্যোগ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাদের সহযোগিতা চান। ছাত্র সংগঠনের নেতারা এসব উদ্যোগ গ্রহণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান এবং এ বিষয়ে সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
সভায় অন্যদের মধ্যে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানীসহ প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যরা ও ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:বঙ্গবন্ধুর অবিনাশী চেতনা ও আদর্শ জীবনী প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য বাংলা এবং ইংরেজি ভাষায় তৈরি করা হয়েছে অ্যাপভিত্তিক গেম ‘আমার বঙ্গবন্ধু’।
গেমটি সবার কাছে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সার্বিক সহায়তা দিচ্ছে। ‘গেমিং অ্যাপস’ শীর্ষক অনুষ্ঠান উপলক্ষে প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে।
মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে গত ১৬ জানুয়ারি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং বিএনসিসি অধিদপ্তরের যৌথ উদ্যোগে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জীবনবৃত্তান্ত ও জীবনাদর্শ নিয়ে নির্মিত ‘আমার বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক গেমিং অ্যাপসের উদ্বোধন করা হয়।
এ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার রমনা রেজিমেন্ট আয়োজিত ভার্চুয়াল আলোচনা সভা শেষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় বিএনসিসি কন্টিনজেন্ট ক্যাডেটরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হকের সঙ্গে তার কার্যালয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এ সময় পিইউও আতিয়ার রহমান, সিইউও মো. মামুন শেখ, আর্মি স্টাফ এবং বিএনসিসি ক্যাডেটরা উপস্থিত ছিলেন।
‘আমার বঙ্গবন্ধু’ অ্যাপসের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর জীবনী ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে সহজভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। এই গেমিং অ্যাপটি ব্যবহারে বঙ্গবন্ধুর দেশপ্রেম, আদর্শ এবং নেতৃত্বের গুণাবলিতে বলীয়ান হওয়ার পাশাপাশি আত্মবিশ্বাসী একটি জাতি গঠন করা সম্ভব হবে।
‘আমার বঙ্গবন্ধু’ মোবাইল গেমিং অ্যাপটি বাংলা এবং ইংরেজি ভাষায় তৈরি এমন একটি গেম, যা খেলার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি বঙ্গবন্ধুর বর্ণাঢ্য জীবনী সহজভাবে জানতে পারবেন এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শে দেশপ্রেম তথা নেতৃত্বের গুণাবলিতে উজ্জীবিত হবে।
‘আমার বঙ্গবন্ধু’ গেমিং অ্যাপস শীর্ষক অনুষ্ঠান উপলক্ষে এক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। ১৬ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এই প্রতিযোগিতায় আগামী ২৬ মার্চ রাত ১২টা পর্যন্ত অংশগ্রহণ করা যাবে।
সর্বপ্রথমে অ্যান্ড্রয়েড গেমিং অ্যাপ ‘আমার বঙ্গবন্ধু’ ডাউনলোড করে মোবাইলে ইনস্টল করতে হবে। ইনস্টল করে গেমসটি চালু করার পর ইন্টারফেস আসবে। যেখানে একজন প্রতিযোগীকে ব্যক্তিগত তথ্য দিয়ে তালিকাভুক্ত হতে হবে।
গেমসটি খেলাকালীন দুটি সময় গণনা করার মাধ্যমে বিজয়ী নির্ণয় করা হবে। সেই ক্ষেত্রে এই সময় গণনা করে একটি ডাটাবেজ সার্ভারে জমা হবে এবং সেখান থেকে ওয়েব ইন্টারফেসের মাধ্যমে তা জানা যাবে। পরে বিভিন্ন পর্যায়ে খেলে সফল প্রতিযোগীরা জাতীয় পর্যায়ে পুরস্কার লাভে সক্ষম হবে।
আরও পড়ুন:একাত্তরে বাংলাদেশের নিরস্ত্র মানুষের ওপর পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীর নির্মম হত্যাযজ্ঞকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে আন্তর্জাতিক সংস্থা জেনোসাইড ওয়াচ।
পাকিস্তানিদের ওই বর্বরতার ৫০ বছর পূর্তিতে জেনোসাইড ওয়াচের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি গ্রেগরি এইচ স্ট্যানটন বৃহম্পতিবার তাদের ওয়েবসাইটে এই ঘোষণা দেন।
এ ঘোষণায় তিনি বলেন, ‘জেনোসাইড ওয়াচ এই স্বীকৃতি দিচ্ছে যে, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বাঙালিদের ওপর যেসব অপরাধ করেছে, তার মধ্যে ছিল জোনোসাইড, মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং যুদ্ধাপরাধ।’
সেই সঙ্গে সংস্থাটি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও পাকিস্তানসহ জাতিসংঘের সব সদস্য দেশকে পাকিস্তানি বাহিনীর করা সেসব অপরাধকে জোনোসাইড, মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং যুদ্ধাপরাধ’হিসেবে স্বীকার করে নিতে আহ্বান জানান।
এই ঘোষণায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক সংগঠন ‘পাকিস্তানি দালাল রুখবে তারুণ্য’ আনন্দ প্রকাশ করেছে। সেই সঙ্গে সংগঠনটি আন্তর্জাতিক সংস্থা জেনোসাইড ওয়াচের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে।
এই স্বীকৃতির নেপথ্যে কাজ করা শহীদ সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেনের ছেলে তৌহিদ রেজা নূরকে অভিনন্দন জানানো পাশাপাশি তার প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে পাকিস্তানি দালাল রুখবে তারুণ্য।
এ বিষয়ে সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হামজা রহমান অন্তর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা খুবই আনন্দিত ও আবেগ আপ্লুত এই খবরে। এটি নিঃসন্দেহে পাকিস্তান কর্তৃক বাঙালির ওপর একাত্তরে যে জেনোসাইড ঘটানো হয়েছিল সেই নৃশংসতার বিচার তরান্বিত করবে। আমরা পাকিস্তান রাষ্ট্র ও সেই সব গণহত্যাকারীদের বিচার দাবি করছি।’
বাঙালি জাতির মুক্তির আন্দোলনকে শ্বাসরোধ করতে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের রাতে এ দেশের নিরস্ত্র মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। ‘অপারেশন সার্চলাইট’নামের সেই অভিযানে কালরাতের প্রথম প্রহরে তৎকালীন পূব-পাকিস্তানের ঢাকায় চালানো হয় গণহত্যা। ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যান; শুরু হয় বাঙালির প্রতিরোধ যুদ্ধ।
নয় মাসের যুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ৩০ লাখ সাধারণ মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করে। এসময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অত্যাচারে এক কোটি মানুষ পাশের দেশ ভারতে আশ্রয় নেয়।
পাকিস্তানি সেনাবাহিনী শহর থেকে গ্রামে সাধারণ মানুষের ঘর বাড়ি আগুনে পুড়িয়ে দেয় ও লুটপাট করে। এসময় তারা দুই লাখের বেশি নারীকে ধর্ষণ করে। যাকে জেনোসাইড বা মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করে স্বীকৃতি দিয়েছ গণহত্যা নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘জেনোসাইড ওয়াচ’।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য