বাংলাদেশকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে দেখে বঙ্গবন্ধুর আত্মা ‘নিশ্চয়ই খুশি হচ্ছেন’ বলে মন্তব্য করেছেন তার বড় মেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সোমবার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বাংলাদেশ অবকাঠামো উন্নয়ন তহবিলের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এ মন্তব্য করেন তিনি।
নিজস্ব অর্থায়নে এটিই দেশের প্রথম বৈদেশিক মুদ্রার তহবিল। এ তহবিল থেকে প্রথম অর্থায়ন পেয়েছে পায়রা বন্দরের রাবনাবাদ চ্যানেলের ক্যাপিটাল ও মেইনটেনেন্স ড্রেজিং প্রকল্প।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু আজ আমাদের মধ্যে নেই। কিন্তু আমি জানি, বাংলাদেশকে তিনি এতই গভীরভাবে ভালোবেসেছেন, আর তার পাশে ছিলেন সব সময় আমার মা। তাদের আত্মাও নিশ্চয়ই খুশি হবে এটা দেখে যে বাংলাদেশ আজ নিজের পায়ে দাঁড়াচ্ছে।
‘শুধু উন্নয়নশীল দেশ না, আমরা নিজস্ব অর্থায়নে অবকাঠামো উন্নয়ন করার সক্ষমতা অর্জন করেছি।’
নানা নেতিবাচক মন্তব্যের পরও পায়রা সমুদ্রবন্দর নির্মাণের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমাদের চট্টগ্রাম পোর্টে সক্ষমতা বৃদ্ধির পদক্ষেপও আমরা নিয়েছি, পাশাপাশি মোংলা পোর্টও চালু হয়েছে। এ দুটো হলে অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখতে পারবে। এটাও অনেক বড় চ্যালেঞ্জ ছিল।
‘সত্যি কথা বলতে কি, যখন পায়রা পোর্ট করি তখন অনেকের কাছে কথা শুনতে হয়েছে, চলবে না, এটা কীভাবে হবে, কাজে লাগবে না ইত্যাদি। এগুলো নিয়ে আমি এত চিন্তা করি না। এ দেশটাকে আমি চিনি, আর দেশের উন্নয়নে চিন্তাভাবনা বাবার বড় সন্তান হিসেবে পাশে থেকে জানার সুযোগ পেয়েছি। যখন সব হারিয়ে বাংলাদেশে ফিরি একটা চিন্তা মাথায় নিয়ে। যে স্বপ্ন নিয়ে আমার বাবা এ দেশ স্বাধীন করেছেন সেটা পূরণ করতেই হবে।’
বাংলাদেশ অবকাঠামো উন্নয়ন তহবিল সম্বন্ধে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই প্রথম আমাদের নিজস্ব একটা বৈদেশিক মুদ্রার তহবিল করে আমাদের উন্নয়নের ক্ষেত্রে নিজস্ব অর্থায়নের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারলাম। ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। তখন থেকেই আমাদের প্রচেষ্টা এ দেশটাকে আমরা কীভাবে উন্নত করে গড়ে তুলব।
‘প্রথমবার সরকারে আসার পর অনেক কাজই অনেক দূর এগিয়েছে। এরপর আমরা আট বছর ক্ষমতায় থাকতে পারিনি। দ্বিতীয়বার যখন সরকারে আসলাম তারপর থেকে এ পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে সরকারে আছি বলেই আজকে দেশে উন্নয়নটা দৃশ্যমান হচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার সকালে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে বাংলাদেশ অবকাঠামো উন্নয়ন তহবিল উদ্বোধন করেন।
‘দেশকে চেনা মানুষকে ভালোবাসাই উন্নয়ন’
দেশকে চেনা এবং ভালোবাসা ছাড়া দেশের উন্নয়ন সম্ভব না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেন, ‘আসলে উন্নয়নটা তখনই হবে, দেশটাকে যদি কেউ চিনতে পারে, জানতে পারে। দেশের মানুষকে ভালোবাসতে পারলে এবং দেশের উন্নয়ন যে অপরিহার্য, এটা যদি কারও চিন্তা-চেতনায় থাকে, তখনই সে দেশের উন্নতি সম্ভব।
‘আমাদের সীমিত সম্পদ, জনসংখ্যা অনেক বেশি ভৌগোলিক সীমারেখার তুলনায়। এ দেশে ধারাবাহিক গণতন্ত্র চলেনি। মিলিটারি ডিক্টেটররা সময় সময়, কখনও দৃশ্যমান হয়ে কখনও অদৃশ্যমান থেকে এ রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে। ক্ষমতা যুদ্ধাপরাধী আর খুনিদের হাতে থাকলে সে দেশের উন্নতি সম্ভব না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আমরা অনেকগুলো পদক্ষেপ নিয়েছি যা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব করতে চেয়েছিলেন। বিভিন্ন মেয়াদি পরিকল্পনা নিয়েছি বলেই আজকের বাংলাদেশ উন্নয়নশীল বাংলাদেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে।’
আওয়ামী লীগ সরকারে এসেছে বলেই উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ছাড়া যারা ক্ষমতায় ছিল, পঁচাত্তরের পর তাদের একটা প্রবণতাই ছিল বিদেশিদের কাছে হাত পেতে চলা। ভিক্ষা চাওয়া। নিজের মর্যাদা নিয়ে চলতে হবে বা নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে, এই চিন্তাটাই তাদের মাথায় ছিল না, এটাই হলো বাস্তবতা।
‘আওয়ামী লীগ যখন সরকারে এসেছে, আওয়ামী লীগের চিন্তা হলো আত্মমর্যাদা নিয়ে চলতে হবে, দেশকে উন্নত করতে হবে। আর আমাদের উন্নয়নের মূল পরিকল্পনাই হচ্ছে তৃণমূল পর্যায়ে পর্যাপ্ত অর্থ সরবরাহ করে একেবারে গ্রামের মানুষকেও স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলা।’
তিনি বলেন, ‘আমরা উচ্চ প্রবৃদ্ধি যেমন অর্জন করব, সেই সঙ্গে মূল্যস্ফীতিও নিয়ন্ত্রণে থাকবে যার সুফল সাধারণ মানুষ পাবে। আর উন্নয়নটা যেন সমগ্র বাংলাদেশে একেবারে সমানভাবে হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমাদের সকল পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি বলেই আজকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পেরেছি।
‘যদিও করোনা ভাইরাস বিশ্ব অর্থনীতিতেই প্রভাব ফেলেছে কিন্তু এর মাঝেও আমাদের নিজেদের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। সেই লক্ষ্য নিয়েই এ তহবিল গঠন।’
দেশের সমুদ্রবন্দরগুলোর উন্নয়নের ফলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড আরও বাড়বে বলে আশাবাদী প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘রামনাবাদ চ্যানেলটা ড্রেজিং করা, এখানে যাতে আরও ড্রাফট বাড়ে, আরও জাহাজ আসতে পারে এবং পোর্টটা যাতে আরও চালু হতে পারে।
‘এর ফলে আমাদের পুরো দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতিতে বিরাট প্রভাব পড়ছে। সেই অঞ্চলের মানুষগুলো যারা সব সময় ঝড়-জলোচ্ছ্বাস, দুর্যোগ মোকাবিলা করেই জীবন-জীবিকা নির্বাহ করতে হতো, তাদের জীবনমান উন্নত হচ্ছে।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আজকের বাংলাদেশ সারা বিশ্বের কাছেই এখন উন্নয়নের রোল মডেল। অনেকেই অনেক সময় জিজ্ঞেস করে ম্যাজিকটা কী? বলি ম্যাজিকটা কিছুই না। ম্যাজিকটা হলো দেশপ্রেম। দেশের প্রতি দায়িত্ববোধ। দেশের মানুষকে নিজের বলে চিন্তা করা।
‘কেউ হয়তো তার সন্তানকে দুপায়ে দাঁড় করানোর কথা চিন্তা করবে। আর আমার চিন্তা, আমার বাবার কাছে যেটা শিখেছি, দেশের মানুষকে দুপায়ে দাঁড় করানো, তাদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলা। এটাই আমার লক্ষ্য, অন্য কিছু না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে এটা আরও বড় কর্তব্য আমাদের সামনে, বড় চ্যালেঞ্জ আমাদের সামনে। যদি সেটা আমরা করতে চাই, নিজের দেশের উৎপাদন বৃদ্ধি করা, বাজার সম্প্রসারণ করা। দেশের মানুষের চাহিদা পূরণ করে বিদেশেও রপ্তানি করা। বিশ্ব গ্লোবাল ভিলেজ, এখানে একা একা কেউ চলতে পারে না।
‘এই রামনাবাদ চ্যানেল শুধু ড্রেজিং করলে হবে না, প্রতিবছর মেইনটেন্যান্স করতে হবে। এভাবে আমাদের দক্ষিণের নদীগুলো যদি আমরা খুলে দিতে পারি, নদীর নাব্যতা বৃদ্ধি পাবে। নদীপথে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য আরও সুগম হবে। শুধু তাই না, এখান থেকে ভারতের আসাম বা ভুটান থেকে নৌপথেই পণ্য পরিবহন করার সুযোগ হবে। এই পোর্টগুলো ব্যবহার করা যাবে। এর ফলে আমাদের অর্থনীতি আরও মজবুত হবে।’
এ সময় করোনা মোকাবিলায় স্বাস্থ্যবিধির গুরুত্বও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। বলেন, ‘করোনা ভাইরাসের মধ্যে সকলেই স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিয়ে চলবেন। দ্বিতীয় ওয়েভটা কিছু কিছু দেখা যাচ্ছে। স্বাভাবিকভাবে সবাই যেন স্বাস্থ্যবিধিটা মেনে চলেন, সে অনুরোধটা আমার থাকবে।
‘টিকা কর্মসূচি আমরা শুরু করেছি কিন্তু তারপরেও সবাইকে সুরক্ষাবিধি মেনে চলতে হবে।’
আরও পড়ুন:সরকার দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীকে প্রেস কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে মনোনীত করেছে। বৃহস্পতিবার তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপসচিব খাদিজা তাহের ববির সই করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘প্রেস কাউন্সিলের ৫ নম্বর ক্রমিকের প্রতিনিধি নিউএজ পত্রিকার সম্পাদক নুরুল কবীর পদত্যাগ করায় তার পরিবর্তে সংবাদপত্র ও সংবাদ সংস্থার সম্পাদক সমিতির প্রতিনিধি হিসেবে দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীকে প্রেস কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে মনোনয়ন প্রদান করা হলো।’
বর্তমান কাউন্সিলের অবশিষ্ট মেয়াদের জন্য এ মনোনয়ন কার্যকর থাকবে। জনস্বার্থে জারিকৃত এ প্রজ্ঞাপন অবিলম্বে কার্যকর হবে বলেও প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে।
প্রেস কাউন্সিলের বর্তমান চেয়ারম্যান বিচারপতি একেএম আব্দুল হাকিম, সচিব (উপসচিব) মো. আব্দুস সবুর।
এছাড়া ১২ জন সদস্য হচ্ছেন—১. বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন, ২. ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি মিস দৌলত আকতার মালা, ৩. ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. শহিদুল ইসলাম, ৪. ডেইলি স্টারের সম্পাদক ও প্রকাশক মাহফুজ আনাম, ৫. দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, ৬. দৈনিক বণিক বার্তার প্রকাশক ও সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ, ৭. দ্য ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ, ৮. দৈনিক পূর্বকোণের সম্পাদক ডা. রমিজ উদ্দিন চৌধুরী, ৯. নিউজপেপার্স ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (নোয়ার) উপদেষ্টা আখতার হোসেন খান, ১০. বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম, ১১. বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সচিব ড. মো. ফখরুল ইসলাম এবং ১২. বার কাউন্সিলের ভাইস-চেয়ারম্যান জয়নুল আবেদীন।
অন্তর্বর্তী সরকারের ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী মিয়া শাহবাজ শরিফের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। পাকিস্তানের ইসলামাবাদে পিএম হাউসে উভয়ের এ সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়।
বৃহস্পতিবার ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ধর্ম উপদেষ্টা ও তার প্রতিনিধিদলকে স্বাগত জানিয়ে পাকিস্তান প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক এবং সখ্যের বন্ধনে আবদ্ধ। এ সম্পর্ক আগামী দিনগুলোতে আরও জোরদার হবে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নিউইয়র্ক ও কায়রোতে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে অনুষ্ঠিত বৈঠকের কথা উল্লেখ করে দূরদর্শী নেতৃত্ব এবং দারিদ্র্য দূরীকরণে তার অবদানের প্রশংসা করেন। এছাড়া তিনি পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সম্পর্ককে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে প্রধান উপদেষ্টার আকাঙ্ক্ষাকে সাধুবাদ জানান।
এদিকে ধর্ম উপদেষ্টা বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের একটি পত্র পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন।
পাকিস্তান প্রধানমন্ত্রীকে লেখা এ পত্রে প্রধান উপদেষ্টা পাকিস্তানে নজিরবিহীন বন্যায় সে দেশের সরকার ও জনগণের প্রতি গভীর সহমর্মিতা ও আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং ভয়াবহ এ দুর্যোগে নিহতদের পরিবার ও ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।
এ পত্রে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, কঠিন এ সময়ে বাংলাদেশের জনগণ পাকিস্তানের ভ্রাতৃপ্রতিম জনগণের পাশে রয়েছে। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আপনার সুদক্ষ নেতৃত্বে পাকিস্তানের জনগণ তাদের অসাধারণ ধৈর্য ও সহনশীলতার মাধ্যমে এ চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করবে। প্রয়োজনে ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রমে বাংলাদেশ সর্বাত্মক সহযোগিতা ও সহায়তা প্রদানে প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।
সাক্ষাৎকালে ঢাকা ও করাচীর মধ্যে সরাসরি বিমান চলাচল দ্রুত পুনঃস্থাপনের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করা হয়। এছাড়া কৃষি, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, ধর্মতত্ত্ব ও চিকিৎসা বিষয়ে উভয়দেশের শিক্ষার্থী বিনিময়ে বৃত্তি প্রদানের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার, প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ, ধর্মবিষয়ক ও আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি মন্ত্রী সরদার ইউসুফ খান, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী আতা তারার, ইসলামাবাদে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. ইকবাল হোসেন খান, উপদেষ্টার একান্ত সচিব ছাদেক আহমদ ও শরীফ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের প্রভাষক মুফতি জাহিদ হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
পুলিশের একটি স্বাধীন তদন্ত সার্ভিস গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আজ বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সভায় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস সভাপতিত্ব করেন।
পরে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘উপদেষ্টা পরিষদ সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুলিশের একটি স্বাধীন তদন্ত সার্ভিস গঠন করা হবে, যাতে কোনো রাজনৈতিক বা অন্য কোনো প্রভাব ছাড়াই তদন্ত সম্পন্ন করা যায়।’ এর পাশাপাশি পুলিশের ভেতরে অভ্যন্তরীণ অভিযোগ যাচাইয়ের জন্য একটি কমিশন গঠনের বিষয়েও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও জানান, ‘এই দুই সিদ্ধান্ত দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য আইন মন্ত্রণালয় কাজ করবে। এ কাজে উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, আদিলুর রহমান খান এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বখশ চৌধুরী যুক্ত থাকবেন।’
সভায় স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করার বিষয়েও গুরুত্ব দেওয়া হয়। প্রেস সচিব বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা বারবার জোর দিয়েছেন যে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও ক্ষমতায়িত করতে হবে। ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন যেন নিজস্ব তহবিল সংগ্রহ ও স্বচ্ছভাবে পরিচালনা করতে পারে সে বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
স্বাস্থ্য খাত নিয়েও সভায় আলোচনা হয়। শফিকুল আলম জানান, ‘কিছু মেডিকেল কলেজে যোগ্য শিক্ষকের সংকট রয়েছে। তাই অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের পরামর্শক বা অন্যভাবে সম্পৃক্ত করে শিক্ষা কার্যক্রমের মান উন্নত করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
নেপালে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের বিষয়েও সভায় আলোকপাত করা হয়। প্রেস সচিব বলেন, ‘নেপালে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা ভালো আছেন, দূতাবাস তাদের দেখভাল করছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর বিশেষ ফ্লাইটে জাতীয় ফুটবল দলকে দেশে আনার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।’
এ বৈঠক প্রসঙ্গে শফিকুল আলম আরও বলেন, ‘আজকের বৈঠকের প্রতিটি সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের অর্থনীতি, শাসনব্যবস্থা ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমাদের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করবে।’
ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।
ক্যাডার কর্মকর্তাদের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণের মেয়াদ ছয় মাস থেকে কমিয়ে চার মাস করা হয়েছে। এর মধ্যে তিন মাস প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে এবং এক মাস মাঠপর্যায়ে ওরিয়েন্টেশন ও গ্রাম সংযুক্তি অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
আজ বুধবার প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে জাতীয় প্রশিক্ষণ কাউন্সিলের নবম সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সভায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোখলেস উর রহমান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান উপস্থিত ছিলেন।
সভায় আরও সিদ্ধান্ত হয়, কর্মকর্তাদের মাস্টার্স ও পিএইচডি কোর্সে ভর্তির সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৪৫ থেকে বাড়িয়ে ৪৭ বছর করা হবে। পিএইচডি কোর্সে অধ্যয়নকালে প্রতি বছর তত্ত্বাবধায়কের অগ্রগতিমূলক প্রত্যয়ন মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে হবে, অন্যথায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বেতন বন্ধ রাখা হবে।
সভায় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘সরকারি যত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আছে সেগুলোর ওপর মূল্যায়ন করতে হবে। কী ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, প্রশিক্ষণের ধরন-মান ইত্যাদির মানদণ্ড নির্ধারণ করে ক্যাটাগরিভিত্তিক প্রতিটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রকে র্যাংকিং করতে হবে এবং নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘একটি স্বাধীন ইউনিট গঠন করতে হবে। তারা সমস্ত গবেষণা প্রতিষ্ঠানের ওপর পদ্ধতিগতভাবে, স্বাধীনভাবে মূল্যায়ন করবে। গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর সামগ্রিক দর্শন জানতে হবে। সেগুলো সঠিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে কি না দেখতে হবে। সরকারি কর্মকর্তারা যারা বিদেশ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছেন তাদের তথ্য সেখানে থাকবে।’
সভায় সঞ্জীবনী প্রশিক্ষণের নাম পরিবর্তন করে ‘দক্ষতা নবায়ন প্রশিক্ষণ’ করার সিদ্ধান্ত হয়। এ প্রশিক্ষণ হালনাগাদকৃত কারিক্যুলামে মাঠপর্যায়ে সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে আয়োজন করা হবে। এছাড়া উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে কর্মকর্তারা আংশিক বৃত্তিপ্রাপ্ত হলেও প্রেষণ অনুমোদন করা যাবে।
কর্মচারীদের সততা ও নৈতিকতা বিকাশ এবং দুর্নীতি বিরোধী মনোভাব তৈরিতে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কোর্সে সদ্গুণ, নৈতিকতা, আচরণবিজ্ঞান ও আচরণবিধি অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়। পাশাপাশি প্রশিক্ষণ ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলোর সার্বিক মূল্যায়ন এবং প্রশিক্ষণ বিষয়ক সিদ্ধান্ত গ্রহণের লক্ষ্যে গবেষণা, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন কার্যক্রম পরিচালনারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সভায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদকে সভাপতি করে একটি নির্বাহী কমিটি (ইসিএনটিসি) গঠন করা হয়।
জাতীয় লেখক ফোরাম আয়োজিত সাপ্তাহিক সাহিত্য আড্ডা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাজধানীর ধানমন্ডিতে হওয়া এ সাহিত্য আড্ডায় উপস্থিত ছিলেন সংগঠেনর সভাপতি ড. দেওয়ান আযাদ রহমান, মহাসচিব কবি-কথাসাহিত্যিক জাহাঙ্গীর হোসাইন এবং উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য মো. আবদুল মান্নানসহ বাংলাদেশের খ্যাতিমান লেখকরা। অনুষ্ঠানটি একটি সাধারণ প্রাণবন্ত আড্ডার মধ্যেই শুরু হয়। অনুষ্ঠানটি ৩টি পর্বে সাজানো হয়েছে। প্রতি পর্বে চারজন কবিকে মঞ্চে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তারা তাদের গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য এবং কবিতা পাঠ করেছেন। পুরো অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেছেন কবি-কথা সাহিত্যিক জাহাঙ্গীর হোসাইন।
শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি পরিশোধের জন্য সরকার প্রদত্ত সুদমুক্ত ঋণ যথাসময়ে ফেরত না দিলে সংশ্লিষ্ট শিল্প কারখানার মালিকদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
বুধবার সচিবালয়ে আয়োজিত এক সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব, ব্যাংকিং ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধি, বিজিএমইএ-এর সভাপতি এবং সংশ্লিষ্ট ঋণগ্রহীতা কারখানার মালিকদের নিয়ে এ সভার আয়োজন করা হয়।
ড. এম সাখাওয়াত হোসেন জানান, বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকরা শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় শ্রম অসন্তোষ নিরসনের লক্ষ্যে সরকার বার্ডস গ্রুপ, টিএনজেড গ্রুপ, বেক্সিমকো গ্রুপ, ডার্ড গ্রুপ, নায়াগ্রা টেক্সটাইলস লিমিটেড, রোয়ার ফ্যাশন লিমিটেড, মাহমুদ জিন্স লিমিটেড, স্টাইল ক্রাফট লিমিটেড এবং গোল্ডস্টার গার্মেন্টস লিমিটেডকে অর্থ বিভাগ এবং কেন্দ্রীয় তহবিল, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে সুদমুক্ত ঋণ প্রদান করে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণ চুক্তির আওতায় উক্ত অর্থ পরিশোধ করছেন না।
তিনি বলেন, তাদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর অবস্থানে যাবে। তাদের পাসপোর্ট জব্দের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
ইতোমধ্যে কয়েকজন পলাতক মালিকের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তিনি পলাতক মালিক ও প্রতিষ্ঠানের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের পাসপোর্ট স্থগিত রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার নির্দেশনা দেন।
উপদেষ্টা বলেন, "এই ঋণের টাকা শ্রমিকের টাকা এবং জনগণের ট্যাক্সের টাকা। এ টাকা আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে।"
তিনি বলেন, এই ক্ষেত্রে কোনোরকম ছাড় দেওয়া হবে না।
তিনি সংশ্লিষ্ট শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিক ও প্রতিনিধিদের সংশ্লিষ্ট লিয়েন ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করে প্রতিষ্ঠানের জমি, কারখানা, যন্ত্রপাতি বিক্রি করে হলেও ডিসেম্বর মাসের মধ্যে ঋণের সকল টাকা পরিশোধ করতে বলেন।
এ বিষয়ে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ-কে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা সভায় উপস্থিত ছিলেন।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি, ইসরাইলের নৃশংসতার জন্য জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এবং ওই অঞ্চলে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছেন।
বাংলাদেশে সফররত ফিলিস্তিনের প্রধান বিচারপতি ড. মাহমুদ সিদকি আল-হাব্বাশের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় গতকাল মঙ্গলবার এক বৈঠকে উপদেষ্টা এ মন্তব্য করেন। আজ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ বিষয়ে জানানো হয়।
বৈঠকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ফিলিস্তিনের জনগণের প্রতি বাংলাদেশের অবিচল সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন এবং ১৯৬৭ সালের আগের সীমানা অনুযায়ী দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের প্রতি সমর্থন জানান।
ফিলিস্তিনের প্রধান বিচারপতি ড. আল-হাব্বাশ বাংলাদেশের নেতৃত্ব ও জনগণের স্থায়ী সমর্থনের জন্য গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ঐক্য আরও সুদৃঢ় করার গুরুত্বের ওপরও জোর দেন।
ফিলিস্তিনিদের নিরন্তর সমর্থনের জন্য দেশটির প্রধান বিচারপতি বাংলাদেশের নেতৃত্ব ও জনগণের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি এ বিষয়ে মুসলিম উম্মাহর মধ্যে বৃহত্তর ঐক্যের ওপরও জোর দেন।
বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির আমন্ত্রণে ড. আল-হাব্বাশ তিন দিনের সরকারি সফরে বাংলাদেশে এসেছেন।
মন্তব্য