রাজধানীর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকায় বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের গার্ডার লঞ্চার ধসে আহত এক চীনা কর্মীর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছে এভারকেয়ার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
হাসপাতালের সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার (মেডিক্যাল সার্ভিসেস) আরিফ মাহমুদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ওই ব্যক্তিকে (চীনা নাগরিক) এখন আইসিইউতে রাখা হয়েছে। তার মাথায় রক্ত জমাট বেঁধে আছে। মাথার হাড়ও ভেঙে গেছে।’
এ ছাড়া আহত বাংলাদেশি এক কর্মীরও ছোটখাটো একটা অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হতে পারে বলে জানান তিনি। বাকিদের অবস্থা অনেকটা ভালো।
রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনের বিপরীত পাশে বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের গার্ডার লঞ্চার ধসে পড়ে। এতে তিন চীনা কর্মীসহ ছয়জন আহত হয়েছেন।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও প্রকল্পের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রকল্পের ৯ ও ১০ নম্বর পিলারের মাঝে একটা স্প্যান বসানোর সময় হঠাৎ গার্ডার লঞ্চারটি ভেঙে পড়ে। তবে ঠিক কী কারণে এমনটি ঘটল সে বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো ধারণা পাওয়া যায়নি।
যানজট থেকে সড়ক ব্যবহারকারীদের মুক্তি দিতে বিআরটি প্রকল্পের আওতায় বিমানবন্দর-গাজীপুর মহাসড়কে বাসের জন্য বিশেষায়িত এই লেন তৈরি করছে সরকার। যেটা হবে দেশের প্রথম বাস র্যাপিড ট্রানজিট বা বিআরটি করিডোর। করিডোরে বাসের লেন হবে দুটি। একটি দিয়ে বাস আসবে, অন্যটি দিয়ে যাবে।
বিআরটি লেন শুরু হয়েছে ঢাকা বিমানবন্দর গোলচত্বর থেকে। শেষ হবে গাজীপুরের শিববাড়িতে।
আজ দুর্ঘটনার পরপরই সেখানে হাজির হন ঢাকা বাস র্যাপিড ট্রানজিট লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর (এমডি) মো. শফিকুল ইসলাম। উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের তিনি বলেন, এই প্রকল্পের বিমানবন্দর অংশে দুটি স্প্যান বসানো হয়েছে। তিন নম্বর স্প্যান বসানোর জন্য লঞ্চিং গার্ডার স্থাপনের সময় দুর্ঘটনাটি ঘটে।
শুরুতে শফিকুল ইসলাম জানান, এতে চারজন আহত হয়েছেন। তবে বিকেল নাগাদ তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, আহতের সংখ্যা ছয়। যার মধ্যে চীনা নাগরিক তিনজন। বাকি তিনজন বাংলাদেশি কর্মী। ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে সবার চিকিৎসা চলছে।
দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘তদন্ত শেষ হওয়ার আগে এটা বলা যাচ্ছে না। এ জন্য বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটা তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।’
কথা হয় ঘটনাস্থলে উপস্থিত বিআরটি প্রকল্পের এক কর্মীর সঙ্গে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, নয় ও দশ নম্বর পিলারের মাঝে স্প্যান বসানোর সময় গার্ডারের অবস্থান ঠিক মনে হয়নি। মনে হচ্ছিল গার্ডারটি একটু ঝুঁকে আছে।
এ দুর্ঘটনার আগের রাতে আবদুল্লাপুরে পলওয়েল কনভেনশন সেন্টারের কাছে প্রকল্পের একটা পিলারের বর্ধিত অংশ (উইং) ধসে পড়ার ঘটনা ঘটে।
এ বিষয়ে শফিকুল ইসলাম বলেন, উইংটি সদ্য ঢালাই দেয়া হয়েছিল। নিচের অংশে সাপোর্ট বিম কোনো কারণে সরে যাওয়ায় এমনটি ঘটেছে।
সরকারের তিনটি সংস্থা মিলে বাস্তবায়ন করছে বিআরটি প্রকল্প। অ্যাট গ্রেড বা মাটির সমান্তরালে বিআরটি লেন নির্মাণ করছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। ফ্লাইওভার, টঙ্গী সেতু আর উড়াল লেন নির্মাণ করছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। আর ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন আর বাসের ডিপো নির্মাণ করছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর।
বিআরটি লেনে চলবে সরকারি কোম্পানির বাস। লেনটি চালু হলে প্রাথমিকভাবে নামানো হবে ৫০টি বাস। ২৫টি স্টেশনে যাত্রীরা উঠতে-নামতে পারবেন। কর্তৃপক্ষের প্রত্যাশা, করিডোরটি দিয়ে প্রতিদিন কমপক্ষে ৪ লাখ যাত্রী যাতায়াত করতে পারবেন।
বিআরটি প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৬ সালে। তবে কাজ শুরুই হয় এর এক বছর পর। এরপর থেকে ঢিমেতালে চলছে নির্মাণকাজ। রাস্তার ওপর ফেলে রাখা নির্মাণসামগ্রী, সংকুচিত হয়ে যাওয়া সড়ক আর নির্মাণযজ্ঞে শুরু থেকেই ভুগছেন গাজীপুর-বিমানবন্দর মহাসড়ক ব্যবহারকারীরা। আগে থেকেই তীব্র যানজট ছিল এই মহাসড়কে। তবে বিআরটির নির্মাণকাজ এ অঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়িয়েছে।
স্বপ্নের পদ্মা সেতুর মাধ্যমে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে স্থাপন হয়েছে ঢাকার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ। একই সঙ্গে এই প্রকল্পের মাধ্যমেই তৈরি হচ্ছে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ৪০০ কেভি বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন।
এ লক্ষ্যে সেতু থেকে দুই কিলোমিটার ভাটিতে ইতোমধ্যে আলাদা সাতটি পিলার নির্মাণ শেষ করেছে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, তবে এর জন্য সরকারের আলাদা কোনো অর্থ খরচ হয়নি।
মূল সেতুর জন্য বরাদ্দ ১২ হাজার কোটি টাকা থেকেই নদীর গভীরের এই পিলারগুলো তৈরি হয়েছে। সবশেষ পিলারটি ৯ জুন সেতু বিভাগ হস্তান্তর করেছে বিদ্যুৎ বিভাগকে।
পদ্মা সেতু সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কাঠামো স্টিলের হওয়ায় সেখান দিয়ে ৪০০ কেভি হাইভোল্টেজ বিদ্যুৎ লাইন টানা সম্ভব নয়। তাই মূল সেতু থেকে দুই কিলোমিটার ভাটিতে আলাদা করে সাতটি পিলার নির্মাণ করে বিদ্যুতের তার টানা হচ্ছে।
পদ্মা সেতুর পাইলিংয়ের জন্য যে শক্তিশালী হ্যামার বাংলাদেশে আনা হয়েছিল, সেটি দিয়েই বিদ্যুৎ বিভাগের জন্য এসব পিলার তৈরি করেছে সেতু বিভাগ।
পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী (মূল সেতু) দেওয়ান আব্দুল কাদের নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই সাতটি পিলারের সবগুলোর কাজ শেষ করে ৯ জুন আমরা বিদ্যুৎ বিভাগের কাছে হস্তান্তর করেছি। তিন/চার মাস আগে আমরা পাঁচটি পিলার বিদ্যুৎ বিভাগকে হস্তান্তর করেছিলাম। সেগুলোতে ইতোমধ্যে ইস্পাতের টাওয়ার নির্মাণ শেষ করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ।’
তিনি বলেন, ‘এই সাতটি পিলারের তিনটিতে চারটি করে আর চারটিতে ছয়টি করে মোট ৩৬টি খুঁটি নদীর তলদেশে প্রবেশ করানো হয়েছে। একটি পিলার থেকে আরেকটির দূরত্ব ৮৩০ মিটার। এসব পিলারে বসানো টাওয়ারের মাধ্যমে পদ্মা নদীর ওপর দিয়ে বিদ্যুতের তার যাবে দক্ষিণবঙ্গের দিকে।’
দেওয়ান আব্দুল কাদের বলেন, ‘পদ্মা সেতুর পাইলিংয়ের জন্য জার্মানি থেকে যে হ্যামার আনা হয়েছিল, সেটি দিয়েই এই সাতটি পিলারের ৩৬টি পাইলিংয়ের কাজ করা হয়েছে। পিলারের প্ল্যাটফরম থেকে টাওয়ারগুলোর উচ্চতা ১২৬ মিটার। আর নদীর তলদেশে পাইলিং করা হয়েছে অন্তত ১১০ মিটার।’
এর লাইনের মাধ্যমে রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ সরাসরি জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলেও জানান তিনি।
আরও পড়ুন:সৌদি আরবে হজ করতে গিয়ে আরও এক বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত পোর্টালে বুধবার এ তথ্য জানানো হয়।
মারা যাওয়া মো. আব্দুল গফুর মিয়ার বাড়ি টাঙ্গাইলের সখিপুরে। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত এবারের হজযাত্রায় সাতজনের মৃত্যুর খবর জানাল মন্ত্রণালয়।
এর আগে ২১ জুন দুজন, ১৭ জুন দুজন আর ১৬ জুন ও ১১ জুন আরও দুই বাংলাদেশি হজযাত্রীর মৃত্যু হয়।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে এবার হজ হতে পারে ৮ জুলাই। গত ৫ জুন থেকে দেশ থেকে সৌদি আরবে যাওয়ার ফ্লাইট শুরু হয়েছে।
স্বাভাবিক সময়ে প্রতি বছর বিশ্বের ২০ থেকে ২৫ লাখ মুসল্লি পবিত্র হজ পালনের সুযোগ পেলেও করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে গত দুই বছর সৌদি আরবের বাইরের কেউ হজ করার সুযোগ পাননি।
পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় সৌদি সরকার এবার সারা বিশ্বের ১০ লাখ মানুষকে হজ পালনের অনুমতি দিয়েছে। বাংলাদেশ থেকে এ বছর সাড়ে ৫৭ হাজার মুসল্লি হজ পালনের সুযোগ পাচ্ছেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় যাবেন ৪ হাজার মুসল্লি।
সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রীদের জন্য দুটি প্যাকেজ ঘোষণা করে ধর্ম মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে সর্বোচ্চ প্যাকেজটি হলো ৫ লাখ ২৭ হাজার ৩৪০ টাকা। সর্বনিম্নটি ৪ লাখ ৬২ হাজার ১৫০ টাকার।
বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ পালনে জনপ্রতি ন্যূনতম খরচ ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৭৪৪ টাকা নির্ধারণ করেছে হজ এজেন্সিস অফ বাংলাদেশ।
সৌদি আরবে যাত্রার শেষ ফ্লাইট ৩ জুলাই। হজ শেষে ফিরতি ফ্লাইট শুরু হবে আগামী ১৪ জুলাই। ফিরতি ফ্লাইট শেষ হবে ৪ আগস্ট।
আরও পড়ুন:বুড়িগঙ্গা নদীর ওপর নির্মিত পোস্তগোলা ব্রিজে আগামী ১ জুলাই থেকে টোল নেয়া হবে না বলে হাইকোর্টকে জানিয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ।
পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে টোল দিতে হবে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে।
প্রতিবেদনের বিষয়টি উল্লেখ করে বুধবার ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল হাসান জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের হাইকোর্ট বেঞ্চে এটি উপস্থাপন করা হবে।
তিনি বলেন, টেন্ডারের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরও পোস্তগোলা ব্রিজ থেকে টোল আদায় করা হচ্ছিল। এ কারণে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে টোল আদায় বন্ধে হাইকোর্টে আবেদন করা হয়।
এর পরিপ্রেক্ষিতে সড়ক ও জনপথ বিভাগ জানিয়েছে, ১ জুলাই থেকে পোস্তগোলা ব্রিজের জন্য আলাদা করে টোল দিতে হবে না। শুধু এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহারের জন্য টোল দিতে হবে।
বিদেশ থেকে পাচারের টাকা ফেরত আনা ও করপোরেট কর হ্রাসের সুবিধা পেতে শর্ত শিথিলসহ কিছু সংশোধনী এনে প্রস্তাবিত অর্থবিল পাস হচ্ছে।
বুধবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জাতীয় সংসদে বাজেট বিষয়ে এসব সংশোধনী প্রস্তাব উপস্থাপন করবেন এবং পরে তা কণ্ঠভোটে পাস হবে। সংসদ নেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২২-২৩ প্রস্তাবিত অর্থবছরের বাজেটের ওপর সমাপনী বক্তব্য রাখবেন।
যেসব সংশোধনী আনা হচ্ছে, সেগুলো মূলত আয়কর, মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট এবং আমদানি শুল্কসংক্রান্ত। গত ৯ জুন নতুন অর্থবছরের জন্য যে বাজেট ঘোষণা করেছিলেন অর্থমন্ত্রী, তাতে রাজস্ব আহরণ বাড়াতে বিভিন্ন খাতে করহার বৃদ্ধি, করারোপসহ নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়।
এরই মধ্যে দেশের ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্ট মহল কিছু ক্ষেত্রে এসব কর প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন এবং তা প্রত্যাহারের দাবি জানান। তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিবারের মতো এবারও প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হচ্ছে।
অর্থবিল পাসের পরের দিন অর্থাৎ ৩০ জুন পাস হবে প্রস্তাবিত বাজেট, যা ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে।
আগের দুই বছরের ধারাবাহিকতায় এবারের বাজেটে শেয়ারবাজারে লিস্টেড এবং নন-লিস্টেড উভয় ধরনের কোম্পানির ক্ষেত্রে বর্তমানের চেয়ে করপোরেট করহার আড়াই শতাংশ কমানোর প্রস্তাব করা হয়। তবে এই সুবিধা পেতে কঠিন শর্ত জুড়ে দেন অর্থমন্ত্রী।
অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায় বলা হয়, কোনো কোম্পানিকে এই সুবিধা পেতে হলে তাকে অব্যশই বছরে ১২ লাখ টাকার বেশি লেনদেন ব্যাংকিং চ্যানেলে করতে হবে। তা না হলে আগের রেটে কর পরিশোধ করতে হবে। কোম্পানি ছোট হোক বা বড়, সবার ক্ষেত্রে একই শর্ত প্রযোজ্য।
মূলত অর্থিক খাতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে সব লেনদেনকে ব্যাংকিং চ্যানেলের আওতায় নিয়ে আসার এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তবে এ শর্তের বিরোধিতা করে ব্যবসায়ীরা বলেছেন, এর মাধ্যমে ‘ক্যাশলেস লেনদেন’ (নগদ মুদ্রাবিহীন লেনদেন) চালু করতে যাচ্ছে সরকার, যা বাংলাদেশের বাস্তবতার আলোকে সম্ভব নয়। বাজেটের এ উদ্যোগ কার্যকর হলে দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য করা কঠিন হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয় ও এনবিআরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এটি বাতিল হচ্ছে না। বরং ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে শর্ত শিথিল করে এখানে কিছুটা ছাড় দেয়া হচ্ছে। কোম্পানির লেনদেন ১২ লাখ টাকার পরিবর্তে ৩৬ লাখ টাকায় উন্নীত করা হচ্ছে। অর্থাৎ কোনো কোম্পানি বছরে ৩৬ লাখ টাকা পর্যন্ত লেনদেন ব্যাংকের বাইরে করতে পারবে। এর বেশি লেনদেন করতে হলে অব্যশই ব্যাংকের মাধ্যমে করতে হবে।
যেসব কোম্পানি কম হারে করপোরেট কর দিতে চাইবে, তাদের অবশ্যই এই শর্ত মানতে হবে।
অস্থাবর সম্পত্তি আনতে চাইলে ৭ শতাংশ কর
প্রস্তাবিত বাজেটে বিদেশ থেকে নগদ টাকাসহ স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি আনার ক্ষেত্রে নির্ধারিত কর দিয়ে বৈধ করার ঘোষণা দেয়া হয়।
বাজেট ঘোষণার পর দেশজুড়ে এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা ওঠে।
জানা যায়, সরকার তার অবস্থান থেকে সরেনি। তবে শর্ত কিছু শিথিল করে এ ক্ষেত্রে কিছুটা সংশোধনী আনা হচ্ছে।
বাজেটে বলা হয়, বিদেশে অবস্থিত কেউ যদি অস্থাবর সম্পত্তি বৈধ ঘোষণা করতে চান, তা হলে ১০ শতাংশ কর দিলে কোনো প্রশ্ন করা হবে না।
সূত্র জানায়, এখানে করের হার ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৭ শতাংশ করা হচ্ছে।
অন্য দুটি– নগদ টাকা এবং স্থাবর সম্পত্তির ক্ষেত্রে শর্ত একই রাখা হচ্ছে।
কিছু পণ্যের কর প্রস্তাবে সংশোধনী
ব্যবসায়ীর দাবির মুখে ল্যাপটপ কম্পিউটার, স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত মোবাইল হ্যান্ডসেটসহ কিছু পণ্যের করহার তুলে দেয়া হতে পারে।
বাজেট ঘোষণায় কম্পিউটার-ল্যাপটপ আমদানিতে ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করা হয়। সংশোধনীতে এই পণ্যটির ওপর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহার হতে পারে।
স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত মোবাইল হ্যান্ডসেট বিক্রি পর্যায়ে ৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়। স্থানীয় শিল্পের বিকাশের ধারা অব্যাহত রাখতে মোবাইল সেটের ওপর থেকে এই কর প্রত্যাহার হতে পারে।
কম্পিউটার প্রিন্টার আমদানিতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হলেও তা প্রত্যাহার হতে পারে।
আরও পড়ুন:জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক প্রথম বর্ষে ভর্তির সময় বাড়ানো হয়েছে। বন্যার্ত শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে এ সময়সীমা বৃদ্ধি করা হয়েছে।
মঙ্গলবার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক-পূর্ব শিক্ষা বিষয়ক স্কুলের ডিন (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. মো. নাসির উদ্দিনের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা যায়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বন্যার্ত শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনায় রেখে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষে প্রথম বর্ষ স্নাতক (সম্মান) ভর্তি কার্যক্রমে প্রথম মেধা তালিকায় স্থানপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের আবেদন ফরম পূরণের সময় ৬ জুলাই বিকাল ৪টা পর্যন্ত বাড়ানো হলো।
প্রথম মেধা তালিকায় স্থানপ্রাপ্ত ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষে কোনো শিক্ষা কার্যক্রমে ভর্তি হয়ে থাকলে তাকে অবশ্যই ৫ জুলাইয়ের মধ্যে পূর্ববর্তী শিক্ষাবর্ষের ভর্তি বাতিল করে অনলাইনে চূড়ান্ত ভর্তি ফরম পূরণ করতে হবে। অন্যথায় দ্বৈত ভর্তির কারণে শিক্ষার্থীর ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষে প্রথম বর্ষ স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির ভর্তি ও রেজিস্ট্রেশন বাতিল বলে গণ্য হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, প্রথম মেধা তালিকায় স্থানপ্রাপ্ত কোনো শিক্ষার্থী তার বিষয় পরিবর্তন করতে ইচ্ছুক হলে, তাকে চূড়ান্ত ভর্তি ফরমে বিষয় পরিবর্তনের নির্দিষ্ট ঘরে এবং অপশন সিলেক্ট করতে হবে। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের বিষয় পছন্দক্রম অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট কলেজে বিষয়ভিত্তিক শূন্য আসনে মেধার ভিত্তিতে বিষয় পরিবর্তন করা হবে। এ শিক্ষাবর্ষে ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু হবে ২০ জুলাই।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম ব্যবহার নিয়ে নিবন্ধিত দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের সংলাপের তৃতীয় পর্বে অংশ নেয়া ১০টি দলের মধ্যে সাতটি ‘হ্যাঁ’ এবং তিনটি ‘না’ বলেছে।
কোনো কোনো দল ৩০০ আসনেই ইভিএমের ব্যবহারের পক্ষে বলেছে।
মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ইসির ইভিএম যাচাইয়ের মতবিনিময় সভায় দলগুলোর এমন অবস্থান উঠে আসে৷
ইভিএম সংক্রান্ত তৃতীয় দফায় ১৩ টি রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। প্রথম দফায় অনুপস্থিত দল গণফোরাম সময় চাওয়ায় তাদের আজ আবার সভায় উপস্থিত থাকার সুযোগ দেয় ইসি।
এই ১৪ টি দলের মধ্যে ১০ টি এ সভায় অংশ নেয়। তবে এলডিপি, সিপিবি, বিপ্লবী ওয়াকার্স পার্টি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল বাসদ আলোচনায় আসেনি।
যেসব দলগুলো ইভিএমের পক্ষে, তারা হলো ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বিকল্প ধারা, তরিকত ফেডারেশন, সাম্যবাদী দল-এমএল, গণতন্ত্রী পার্টি ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ।
অন্যদিকে ইভিমের বিপক্ষে বলেছে গণফোরাম, বাংলাদেশ ন্যাপ ও বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট।
যারা বিপক্ষে তারা কী বলছেন
গণফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য সুরাইয়া বেগম বলেন, ‘ইভিএমের মাধ্যমে খুব সহজেই জালিয়াতি করার অনেক ম্যাকানিজম রয়েছে। ই ভোটিং পদ্ধতিতে প্রোগামিং পরিবর্তন করে জালিয়াতি করার সুযোগ থেকেই যায়।’
ন্যাপের মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভূইয়া বলেন, ‘ইভিএমে জনগণের কোনো আস্থা নেই৷ রাজনৈতিক দলগুলো মনে করে এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভোট চুরির যন্ত্র। অনেক দেশ ইভিএম থেকে সরে এসেছে।’
সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের সভা প্রধান আবু লায়েন্স মুন্না বলেন, ‘দেশের আশি শতাংশ ভোটার গ্রামে বাস করে। তাদের উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করার অভিজ্ঞতা নেই বললেই চলে।’
ইভিএমের পক্ষে যারা
ইভিএমের পক্ষে, তবে আগামী জাতীয় নির্বাচনে ব্যবহার না করে ক্ষেত্র প্রস্তুতের পক্ষে জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য মোশারফ হোসেন।
তিনি বলেন, ‘ইভিএম পরিচিত করানো নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব। এই মুহূর্তে তড়িঘড়ি করে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএমে ভোট করা ঠিক হবে না। স্থানীয় নির্বাচনসহ পেশাজীবীদের ভোটে ইভিএম পরিচিত করা হোক।’
গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিন শ আসনেই ইভিএমে ভোট করার মত। তিনি বলেন, ‘মেশিন যদি ঠিকঠাক থাকে, ভালো সার্ভিস দেবে।’
বিকল্প ধারার মহাসচিব আব্দুল মান্নান বলেন, ‘আমরা অবশ্যই ইভিএম চাই। তবে প্রশ্ন হলো এই প্রযুক্তিতে ভোটাররা ভোট দিতে পারবে কি না? সবগুলো বুথে ইভিএম ব্যবহারের সক্ষমতা আছে কি না।’
ইভিএমকে উন্নত প্রযুক্তি বলে মনে করেন ওয়াকার্স পার্টি সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা। তিনি বলেন, ‘ইভিএম ব্যবহারে আমাদের কোনো আপত্তি নাই। তবে জাতীয় নির্বাচনের আগে ইভিএম ব্যবহারের আগে স্থানীয় নির্বাচনে ভোট করলে গ্রহনযোগ্যতা বাড়বে।’
তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব রেজাউল হক চাদপুরী বলেন, ‘সবাই যেহেতু ইভিএম বিষয়ে একমত না। এ জন্য কমপক্ষে ১৫০ আসনে ইভিএম ব্যবহার করা যেতে পারে।’
তবে আগামী জাতীয় নির্বাচনে তিন শ আসনেই ইভিএম চায় আওয়ামী লীগ। দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আজকে যে রাজনৈতিক দলগুলো এখানে এসেছে, আমার মনে হয় অধিকাংশই ইভিএমের পক্ষে বলেছে। আমরা সবার কথা শুনেছি। ইভিএম নিয়ে বিরুদ্ধেও বলেছেন দুয়েকজন। এটাই তো গণতন্ত্র। বিউটি অব ডেমোক্রেসি। বিরুদ্ধে তো বলবেনই। ভিন্নমত থাকতেই পারে। সেটা তো কোনো অসুবিধা নেই।’
৩০০ আসনে নির্বাচন করতে ইসি সক্ষম কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দ্যাট ইজ দ্যা ডিসিশন অব ইলেকশন কমিশন। এটা তাদের এখতিয়ার।’
আরও পড়ুন:দেশের ১৮ জেলার ৮৫টি উপজেলায় এক হাজার ১২২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (স্কুল-কলেজ) পাঁচ লাখ ৭৫ হাজার ৮৪৪ জন শিক্ষার্থী বন্যার কবলে পড়েছে।
মঙ্গলবার মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মনিটরিং অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন উইং থেকে এ তথ্য জানা যায়।
মাউশির প্রতিবেদনের তথ্যমতে, দেশের ১৮টি জেলার ৮৫টি উপজেলার মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের ১ হাজার ১২২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (স্কুল-কলেজ) পাঁচ লাখ ৭৫ হাজার ৮৪৪ জন শিক্ষার্থী বন্যার কবলে পড়েছে। তবে বরিশাল, খুলনা ও চট্টগ্রামের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্যার কবলে পড়েনি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বন্যাকবলিত উপজেলাগুলোর ১২৩ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে পাঠদান সম্ভব হচ্ছে। আংশিকভাবে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে ১০৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। আর ৮৮৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এখনও পাঠদান সম্ভব নয়। বন্যাকবলিত এলাকার ৬৫৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র করা হয়েছে।
সিলেটসহ সারা দেশের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অবনতির পর ২২ জুন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মনিটরিং অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন উইং থেকে সব আঞ্চলিক পরিচালক ও উপ-পরিচালককে তথ্য পাঠানোর অফিস আদেশ জারি করা হয়।
এতে বলা হয়, বর্তমানে অতিবৃষ্টির কারণে উজান থেকে পানি নেমে আসায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় মাউশির আওতাধীন জেলা/উপজেলায় কতগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্যাকবলিত এবং কতসংখ্যক শিক্ষার্থী বন্যাকবলিত রয়েছে তার তথ্য সংযুক্ত ছক অনুযায়ী মনিটরিং অ্যান্ড ইভালুয়েশন উইংয়ের ই-মেইলে ([email protected]) পাঠানোর অনুরোধ করা হলো।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য