রাজধানীর ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টসের (ইউল্যাব) ছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমার তারিখ আবার পিছিয়েছে।
২৩ মার্চ নতুন তারিখ দিয়েছে আদালত।
এই মামলার প্রতিবেদন দেয়ার দিন ছিল বৃহস্পতিবার। সকালে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নিভানা খায়ের জেসি নতুন দিন নির্ধারণ করেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদপুর থানার এসআই সাজেদুল হক প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেননি। এ নিয়ে এই প্রতিবেদন জমার তারিখ দ্বিতীয় দফা পেছাল।
গত ৩১ জানুয়ারি চারজনকে আসামি করে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেন তরুণীর বাবা। মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় আরও একজনকে আসামি করা হয়।
আদালত এজাহার গ্রহণ করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ১৫ ফেব্রুয়ারি তারিখ রাখে। এরপর প্রতিবেদন দেয়ার তারিখ দুই দফা পেছাল।
এই মামলায় তরুণীর বন্ধু মর্তুজা রায়হান চৌধুরী, নুহাত আলম তাফসীর, সাফায়েত জামিল ও বান্ধবী ফারজানা জামান নেহা কারাগারে আছেন। আসামিদের মধ্যে মর্তুজা রায়হান চৌধুরী আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত ২৮ জানুয়ারি বিকেল ৪টায় মর্তুজা রায়হান ওই তরুণীকে নিয়ে মিরপুর থেকে আসামি আরাফাতের বাসায় যান। সেখানে স্কুটার রেখে আরাফাত, ওই তরুণী ও রায়হান একসঙ্গে উবারে করে উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টরের ব্যাম্বুসুট রেস্টুরেন্টে যান।
সেখানে আগে থেকেই আরেক আসামি নেহা ও এক সহপাঠী ছিলেন। তারা ওই তরুণীকে জোর করে অতিরিক্ত মদ পান করান।
এজাহারে আরও বলা হয়, মদ পানের একপর্যায়ে তরুণীটি অসুস্থ বোধ করলে রায়হান তাকে মোহাম্মদপুরে তার এক বান্ধবীর বাসায় পৌঁছে দেয়ার কথা বলে নুহাতের বাসায় নিয়ে যান। সেখানে তরুণীকে ধর্ষণ করেন রায়হান। এ সময় রায়হানের বন্ধুরাও কক্ষে ছিল।
ধর্ষণের পর রাতে ওই তরুণী অসুস্থ হয়ে বমি করলে রায়হান তার আরেক বন্ধু অসীম খানকে ফোন করেন। সেই বন্ধু পরদিন এসে তরুণীকে প্রথমে ইবনে সিনা ও পরে আনোয়ার খান মডার্ন মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতালে ভর্তি করেন। দুই দিন লাইফ সাপোর্টে থাকার পর ৩১ জানুয়ারি ওই তরুণীর মৃত্যু হয়।
তবে নিহত ওই শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি বলে জানান ময়নাতদন্ত করা চিকিৎসক শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান সেলিম রেজা।
স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী দিনে আরও অনেকের সঙ্গে সাক্ষী হতে নিজের নৌকা নিয়ে মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ী আওয়ামী লীগের জনসভায় এসেছেন শরীয়তপুরের জাজিরার আবু বকর মাতুব্বর।
শনিবার সকাল ১০টার দিকে কাঁঠালবাড়ীতে দেখা হয় তার সঙ্গে। সমাবেশস্থল থেকে অনেকটা দূরে নৌকার ওপর বসে ছিলেন তিনি।
আবু বকর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি বয়স্ক মানুষ। এখন গায়ে তেমন শক্তি পাই না। তারপরও প্রধানমন্ত্রীকে দেখতে এসেছি।’
এত দূরে বসে প্রধানমন্ত্রীকে দেখতে পাবেন কি-না এমন প্রশ্নে বলেন, ‘এখন তো শরীরে শক্তি নাই। এত মানুষ ঠেলে ভেতরে যাইতে পারুম না। এখানে বসে শুনতে পারলেই দেখা হয়ে যাবে।
‘আমারও বয়স হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীরও বয়স হয়েছে। কত দিন আর বাঁচব। প্রধানমন্ত্রী আমাদের এত বড় উপহার দিয়েছেন। আমরা তাকে ধন্যবাদ জানাই।
একই জেলার ওসমান ব্যাপারীও সকাল ছয়টায় রওনা দিয়ে সমাবেশ স্থলে এসেছেন। তিনি নিউজবাংলাকে জানান, সেতু দেখতে আর প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শুনতে এসেছি।
আরও পড়ুন:
পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে সুধী সমাবেশে যোগ দেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী। হুইলচেয়ারে করে তিনি সুধী সমাবেশে আসেন।
শনিবার সকাল ৮টার দিকে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে সমাবেশস্থলে ডা. জাফরুল্লাহকে দেখা যায়। এ সময় তার পরনে ছিল সাদা-কালো রঙের শার্ট ও খাকি লুঙ্গি।
পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে সকাল ১০টায় মাওয়া প্রান্তে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে হেলিকপ্টারে শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার পর মাওয়ার উদ্দেশে রওনা হন তিনি। সকাল ১০টার দিকে তিনি মাওয়া প্রান্তে পৌঁছান।
প্রধানমন্ত্রী মাওয়ায় যোগ দেন সুধী সমাবেশে। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সাড়ে তিন হাজার নাগরিককে আমন্ত্রণ জানানো হয় এই সমাবেশে। ভোর সাড়ে ৬টা থেকে শুরু হয় অতিথিদের আগমন।
ফুরিয়ে এলো ক্ষণগণনার পালা। আর অল্প সময়ের মধ্যে বহুল প্রতীক্ষার পদ্মা সেতুর উদ্বোধন ঘোষণা করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
উচ্ছ্বাসে মুখর গোটা মাওয়া প্রান্ত। অপেক্ষার অবসান হলো বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার আগমনের মধ্য দিয়ে।
দুর্নীতিচেষ্টার মিথ্যে অভিযোগ এনে পদ্মা সেতুর অর্থায়ন থেকে বিশ্বব্যাংকের সরে দাঁড়ানোর ঘোষণার পর নিজস্ব অর্থায়নের এই সেতু নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। তার নেতৃত্বেই নির্মিত হয়েছে সেতুটি। আজ তার হাত ধরেই খুলে যাবে সেতুটি।
এর মধ্য দিয়ে দক্ষিণাঞ্চল সরাসরি যুক্ত হচ্ছে রাজধানীর সঙ্গে।
সুধী সমাবেশ শেষে বেলা ১১টার দিকে স্মারক ডাকটিকিট, স্যুভেনির শিট, উদ্বোধনী খাম ও সিলমোহর অবমুক্ত করবেন সরকারপ্রধান। পদ্মা সেতু নির্মাণসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে ফটোসেশনে অংশ নেয়ার কথাও রয়েছে তার।
বেলা ১১টা ১২ মিনিটে টোল দিয়ে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে সেতুর উদ্বোধনী ফলক ও ম্যুরাল-১ উন্মোচন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ১১টা ২৩ মিনিটের দিকে পদ্মা সেতু পাড়ি দেবেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। ওই সময় কিছুক্ষণের জন্য গাড়ি থেকে নেমে সেতুতে পায়চারি করতে পারেন তিনি।
বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটে শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে পৌঁছেই পদ্মা সেতুর আরেকটি উদ্বোধনী ফলক ও ম্যুরাল-২ উন্মোচন করবেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর কাঁঠালবাড়ীর ইলিয়াছ আহমেদ চৌধুরী ফেরিঘাটে আওয়ামী লীগের জনসভায় দলপ্রধান হিসেবে যোগ দেবেন শেখ হাসিনা।
আরও পড়ুন:আর কিছু মুহূর্ত। এরপরই বর্ণিল আয়োজনে ফলক উন্মোচিত হবে দেশের সক্ষমতার প্রতীক পদ্মা সেতুর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই আয়োজনে যোগ দিতে রাজধানীর তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে হেলিকপ্টারযোগে রওনা হন শনিবার সকাল সাড়ে ৯টায়। ১০টায় যোগ দেন সেতুর মাওয়া প্রান্তের সুধী সমাবেশে। এরপরই সেই মাহেন্দ্রক্ষণ, সেতুর শুভ উদ্বোধন।
সকাল থেকেই সমাবেশে যোগ দিতে সুধীরা এসেছেন রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে। ইতিমধ্যেই অধিকাংশ অতিথিরা সমাবেশস্থলে হাজির হয়েছেন। এখন সেখানে উপস্থিত প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে আগে থেকেই সেতু ও আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তার স্তর বাড়ানো হয়েছে। এরইমধ্যে সেতুর মাওয়া প্রান্তের সমাবেশস্থল থেকে ১ কি.মি. দূরত্ব পর্যন্ত আশপাশের এলাকায় সাধারণদের চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
বন্ধ রয়েছে সকল দোকান পাট। আশপাশের অলিগলিতে উৎসুক সাধারণদের কিছু জটলা থাকলেও সকাল সাড়ে ৮টা থেকে কাউকেই সড়কে দাঁড়াতে দেয়া হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী সমাবেশস্থল ত্যাগ করার আগে সকল বাসিন্দাদের নিজ নিজ বাসায় অবস্থান করার অনুরোধ জানিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এমনকি অনেক গণমাধ্যমকর্মীরাও নিজেদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে বিভিন্ন ভবনের ছাদে অবস্থান নিয়েছেন।
মাওয়া বাজার এলাকার বাসিন্দা গৌতম শীল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি বাজারে চায়ের দোকানে বসে চা খাচ্ছিলাম। এমন সময় পুলিশ এসে বলল বাসায় চলে যান, এখানে বসা যাবে না। এই কথা শুনে বুঝেছি প্রধানমন্ত্রীর জন্য এই ব্যবস্থা। এখন আমি বাসায় চলে যাচ্ছি।’
বাজার এলাকার পাশের একটি বাড়ির ফটক থেকে রাস্তার দিকে উৎসুক দৃষ্টি রাখা মনোয়ারা বলেন, বাসার কেউ বাইরে যাচ্ছে না, যারা বাইরে গিয়েছিল তারা এসে জানাল এখন সবার বাসায় থাকতে হবে। আমি একটু উঁকি দিয়ে দেখি আরকি কেমন অবস্থা। এইখান থেকেতো প্রধানমন্ত্রীকে দেখা যাবে না তাও দেখি আরকি।’
আরও পড়ুন:গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি এসে লাগছে পদ্মা সেতুতে। সেতু এলাকায় সকাল থেকে চলছে রোদ বৃষ্টির লুকোচুরি। এ নিয়ে সকাল ১০টা পর্যন্ত দুই দফা গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি ছুঁয়ে গেছে স্বপ্নের পদ্মা সেতুকে।
শনিবার সেতু উদ্বোধনের দিন সকাল পৌনে ৯টার দিকে প্রথম দফা বৃষ্টি নামে। মিনিট না পেরোতেই তা থেমে যায়। আবারও রোদ হেসে ওঠে।
তবে পদ্মা সেতুর ঠিক ওপরে আকাশের রং এখন শরতের মতো। নীল আকাশে তুলার মতো উড়ছে সাদা মেঘ। মেঘের ওড়াউড়িতে কখনও পড়ছে ছায়া, কখনও কড়া রোদ্দুর।
নদীর পাড়ে বইছে শরীর জুড়ানো বাতাস। সকাল ঠিক ৯টা ২৯ মিনিটে আবারও নামে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি। মিনিট দুয়েক স্থায়ী ছিল বৃষ্টি।
মাওয়াপ্রান্ত ছাড়াও বৃষ্টি হয়েছে মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ী আওয়ামী লীগের জনসভাস্থলেও। বৃষ্টির পানিতে ভিজেছে সভায় যোগ দিতে আসা অসংখ্য মানুষ।
পূর্বাভাস দিয়ে অবশ্য আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের সময় সেতু এলাকায় বৃষ্টির শঙ্কা নেই, তবে উদ্বোধনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হওয়ার পর বিকেলে বৃষ্টির পানি ছুঁয়ে যেতে পারে প্রমত্তা পদ্মার বুকে গড়ে ওঠা এই সেতুকে।
ঢাকা আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ তরিফুল নেওয়াজ কবির বলেন, ‘পদ্মা সেতু এলাকায় শনিবার বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা খুবই কম। এই এলাকায় দিনে রৌদ্রোজ্জ্বল থাকার সম্ভাবনা বেশি। তবে বেলা ৩টার দিকে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা থাকতে পারে।’
আরও পড়ুন:বর্ণিল সাজে সেজেছে পদ্মার পাড়। স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে উৎসবে মেতেছে জনতা। পদ্মার দক্ষিণপ্রান্তে মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ীতে আওয়ামী লীগের জনসভাস্থলে এখন জনস্রোত। ভোর রাত থেকে দেশের নানা অঞ্চল থেকে মানুষ আসছে এই সভায় যোগ দিতে।
বাস, ট্রাক, লঞ্চ ও নৌকায় মানুষ দলে দলে জনসভায় হাজির হচ্ছে। জনসভাস্থল থেকে আশপাশের সব দিকেই মানুষ আর মানুষ। বিভিন্ন স্লোগান, বর্ণিল সাজে উপস্থিত হচ্ছেন সবাই।
সেতুর উত্তর প্রান্তে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া আর দক্ষিণ প্রান্তে কাঁঠালবাড়ী। শনিবার সকাল ১০টায় মাওয়া প্রান্তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমাবেশে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের ঘোষণা দেবেন। এরপর সেতুর ফলক ও ম্যুরাল উদ্বোধন করবেন তিনি। পরে টোল দিয়ে সেতু পার হয়ে জনসভায় যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জনসভাস্থলে দেখা গেছে, সোয়া ৯টায় পবিত্র ধর্মগ্রন্থ পাঠের মধ্য দিয়ে সমাবেশের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালীসহ দক্ষিণ অঞ্চল থেকে একের পর এক লঞ্চ এসে ভিড়ছে কাঁঠালবাড়ী ঘাটে। মিছিলে মিছিলে মানুষের বিশাল সমাবেশ জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে।
সকাল ১০টার দিকে জনসভাস্থলে বৃষ্টি নেমেছে। আচমকা বৃষ্টি থেকে রক্ষা পেতে দিকবিদিক ছুটছেন নেতাকর্মীরা। আশপাশে আশ্রয় নিয়েছেন অনেকে।
প্রতীক্ষার পালা শেষ হতে যাচ্ছে। উদ্বোধন হতে যাচ্ছে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর।
মুন্সীগঞ্জের মাওয়ায় শনিবার সকালে সুধী সমাবেশে যোগ দিয়ে সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বক্তব্যে আবেগাপ্লুত দেখা গেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে।
ফুরিয়ে আসছে ক্ষণগণনার পালা। আর অল্প সময়ের মধ্যে বহুল প্রতীক্ষার পদ্মা সেতুর উদ্বোধন ঘোষণা করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
উচ্ছ্বাসে মুখর গোটা মাওয়া প্রান্ত। অপেক্ষা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার আগমনের।
দুর্নীতিচেষ্টার মিথ্যে অভিযোগ এনে পদ্মা সেতুর অর্থায়ন থেকে বিশ্বব্যাংকের সরে দাঁড়ানোর ঘোষণার পর নিজস্ব অর্থায়নের এই সেতু নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। তার নেতৃত্বেই নির্মিত হয়েছে সেতুটি। আজ তার হাত ধরেই খুলে যাবে সেতুটি।
এর মধ্য দিয়ে দক্ষিণাঞ্চল সরাসরি যুক্ত হচ্ছে রাজধানীর সঙ্গে। শনিবার সকাল সাড়ে ৯টায় তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তের উদ্দেশে হেলিকপ্টারে রওনা হবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যোগ দেবেন সুধী সমাবেশে।
রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সাড়ে তিন হাজার নাগরিককে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে এই সমাবেশে। এর মধ্যেই খুলে দেয়া হয়েছে সুধী সমাবেশ স্থল। আসতে শুরু করেছেন আমন্ত্রিত অতিথিরা।
দূরদুরান্ত থেকে যারা অনুষ্ঠানস্থলে আসছেন, তারা একটু আগেই রওনা হয়েছেন। ফলে ভোর সাড়ে ৬টা থেকে শুরু হয় অতিথিদের আগমন।
সমাবেশস্থল থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহাসড়ক বা এক্সপ্রেসওয়েজুড়ে সতর্ক অবস্থানে দেখা গেছে নিরাপত্তাকর্মীদের। সমাবেশস্থলের কাছাকাছি আসতেই অতিথিদের পথ চেনাতে ব্যতিব্যস্ত দেখা গেছে তাদের।
পদ্মা সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্রের সঙ্গেই পাঠানো হয়েছে গাড়িতে ব্যবহারের বিশেষ স্টিকার। লালরঙা বা সবুজরঙা স্টিকার দেখে নিরাপত্তাকর্মী অতিথিদের চিনিয়ে দিচ্ছিলেন সুধী সমাবেশস্থলে প্রবেশের মুখ। ওই সময় তৎপরতা দেখা গেছে পর্যটন করপোরেশনের কর্মীদেরও। আমন্ত্রিত অতিথিদের গাড়িতে তারা তুলে দিচ্ছিলেন সকালের খাবার।
এখন পর্যন্ত সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের অনুষ্ঠানস্থলে দেখা গেছে। এদের মধ্যে আছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান, বেসামরিক বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী।
আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের মধ্যে আছেন দলের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু, প্রেসিডিয়াম সদস্য অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল ফারুক খান।
অন্য দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে দেখা গেছে সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া, জাতীয় পার্টির মসিউর রহমান রাঙ্গাসহ কয়েকজন নেতাকে।
জমকালো এই আয়োজনের বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলটির সাত নেতাকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও তারা আসবেন না বলেই আগেই জানিয়েছেন।
পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধে অন্যতম অনুঘটক হিসেবে সরকারের পক্ষ থেকে দায়ী করা গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনূসও বাদ পড়েনি আমন্ত্রিত অতিথিদের তালিকা থেকে। তিনি আসবেন কি না সে বিষয়টি নিশ্চিত করা যায়নি। অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করেছেন সংবাদমাধ্যমকর্মীরাও।
সুধী সমাবেশ শেষে বেলা ১১টার দিকে স্মারক ডাকটিকিট, স্যুভেনির শিট, উদ্বোধনী খাম ও সিলমোহর অবমুক্ত করবেন সরকারপ্রধান। পদ্মা সেতু নির্মাণ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে ফটোসেশনে অংশ নেয়ার কথাও রয়েছে তার।
বেলা ১১টা ১২ মিনিটে টোল দিয়ে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে সেতুর উদ্বোধনী ফলক ও ম্যুরাল-১ উন্মোচন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ১১টা ২৩ মিনিটের দিকে পদ্মা সেতু পাড়ি দেবেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। ওই সময় কিছুক্ষণের জন্য গাড়ি থেকে নেমে সেতুতে পায়চারি করতে পারেন তিনি।
বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটের দিয়ে শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে পৌঁছেই পদ্মার সেতুর আরেকটি উদ্বোধনী ফলক ও ম্যুরাল-২ উন্মোচন করবেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর কাঁঠালবাড়ীর ইলিয়াছ আহমেদ চৌধুরী ফেরিঘাটে আওয়ামী লীগের জনসভায় দলপ্রধান হিসেবে যোগ দেবেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতু পাড়ি দেয়ার সময় পদ্মায় নৌ মহড়ার আয়োজন করা হয়েছে। ৩১টি বিমান ও হেলকপ্টার নিয়ে ফ্লাইং পাস্ট করার জন্য প্রস্তুত রয়েছে বিমানবাহিনী। এই বহরে আছে মিগ-২৯ এর মতো যুদ্ধবিমানও।
উদ্বোধনের পর রোববার ভোর ৬টা থেকে যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে পদ্মা সেতু। এতে ফুরাবে ফেরি পারাপারের বিড়ম্বনা, বাঁচবে সময়। বদলে যাবে দৃশ্যপট, আরও সচল হবে দেশের অর্থনীতির চাকা।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য