× হোম জাতীয় রাজধানী সারা দেশ অনুসন্ধান বিশেষ রাজনীতি আইন-অপরাধ ফলোআপ কৃষি বিজ্ঞান চাকরি-ক্যারিয়ার প্রযুক্তি উদ্যোগ আয়োজন ফোরাম অন্যান্য ঐতিহ্য বিনোদন সাহিত্য শিল্প ইভেন্ট উৎসব ধর্ম ট্রেন্ড রূপচর্চা টিপস ফুড অ্যান্ড ট্রাভেল সোশ্যাল মিডিয়া বিচিত্র সিটিজেন জার্নালিজম ব্যাংক পুঁজিবাজার বিমা বাজার অন্যান্য ট্রান্সজেন্ডার নারী পুরুষ নির্বাচন রেস অন্যান্য আফগানিস্তান ১৫ আগস্ট কী-কেন স্বপ্ন বাজেট আরব বিশ্ব পরিবেশ বিশ্লেষণ ইন্টারভিউ মুজিব শতবর্ষ ভিডিও যৌনতা-প্রজনন মানসিক স্বাস্থ্য অন্যান্য উদ্ভাবন প্রবাসী আফ্রিকা ক্রিকেট শারীরিক স্বাস্থ্য আমেরিকা দক্ষিণ এশিয়া সিনেমা নাটক মিউজিক শোবিজ অন্যান্য ক্যাম্পাস পরীক্ষা শিক্ষক গবেষণা অন্যান্য কোভিড ১৯ ইউরোপ ব্লকচেইন ভাষান্তর অন্যান্য ফুটবল অন্যান্য পডকাস্ট বাংলা কনভার্টার নামাজের সময়সূচি আমাদের সম্পর্কে যোগাযোগ প্রাইভেসি পলিসি

জাতীয়
কলিমউল্লাহর অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে ইউজিসি
google_news print-icon

ভিসি কলিমউল্লাহর অনিয়মের প্রমাণ ইউজিসির তদন্তে

ভিসি-কলিমউল্লাহর-অনিয়মের-প্রমাণ-ইউজিসির-তদন্তে
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ। ছবি: নিউজবাংলা
‘রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাহী প্রধান এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বিশেষ ওই উন্নয়ন প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্বে থাকার জন্য বর্তমান উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহকে এই দায় দায়িত্ব অবশ্যই বহন করা উচিত।’

রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকারে পাওয়া ‘বিশেষ উন্নয়ন প্রকল্পে’ উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের তদন্ত কমিটি।

একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও ওয়ার্কস কমিটির সদস্য মঞ্জুর কাদেরকে অব্যাহতি দিতে সুপারিশ করা হয়েছে। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি তদন্ত প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেয় কমিটি।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানিয়েছে, ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে একনেকের এক বৈঠকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের একটি হল ও ড. ওয়াজেদ রিসার্চ ইনস্টিটিউট ভবন নির্মাণের জন্য বিশেষ উন্নয়ন প্রকল্পের অনুমোদন দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ জন্য বরাদ্দ দেয়া হয় ৯৭ দশমিক ৫০ কোটি টাকা।

প্রকল্পটি তৈরি করে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. জলিল মিয়ার আমলে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী ছাত্রীদের হল ১০ তলা করা এবং সেখানে সব ধরনের সর্বাধুনিক সুযোগ-সুবিধা রাখার নির্দেশ দেন।

একইভাবে ড. ওয়াজেদ রিসার্চ ইনস্টিটিউটকেও আধুনিক মানসম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। পরে ভবনের নকশা পরিবর্তন করে আধুনিক যুগোপযোগী নকশা তৈরি করে প্রকল্পটি তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. নূর-উন-নবীর আমলে অনুমোদন দেয়া হয়। তাতে সায় দেন প্রধানমন্ত্রী নিজেই।

এই দুটি স্বতন্ত্র ভবন নির্মাণের জন্য ৭৮ কোটি ২২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে ‘শেখ হাসিনা’ ছাত্রী হলের ১০ তলা ভবন নির্মাণের জন্য কার্যাদেশ দেয়া হয় ২০১৬ সালের ২১ জুলাই। কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালের ৪ জানুয়ারি। কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৮ সালের ২১ জানুয়ারি। এর ব্যয় ধরা হয় ৫১ কোটি ৩৫ লাখ ৫৫ হাজার টাকা।

ভিসি কলিমউল্লাহর অনিয়মের প্রমাণ ইউজিসির তদন্তে
নির্মাণাধীন শেখ হাসিনা হল। ছবি: নিউজবাংলা

ড. ওয়াজেদ রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের জন্য একটি ভবন নির্মাণের চুক্তি মূল্য দেয়া হয় ২৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। এ ভবন নির্মাণের কার্যাদেশ দেয়া হয় ২০১৬ সালের ২১ জুলাই। কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালের ৪ জানুয়ারি এবং কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৮ সালের ২১ আগস্ট।

আর প্রকল্পের মেয়াদ নির্ধারণ করা হয় ২০১৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত।

অবশিষ্ট টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা স্মারক, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ ও ইলেক্ট্রনিকস অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের কম্পিউটার ল্যাবের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়।

২০১৭ সালের ৪ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন অধ্যাপক ড. এ কে এম নূর-উন-নবী।

উন্মুক্ত দরপত্রে অংশ নেয় ওয়াহেদ কনস্ট্রাকশন ও আব্দুস সালাম কনস্ট্রাকশন।

পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আর্কিটেক্ট মনোয়ার হাবিব ও প্রাকৃত নির্মাণ লিমিটেড যৌথভাবে অংশগ্রহণকারী কোম্পানিকে কার্যাদেশ দেয়া হয়। কার্যাদেশ ও নকশা অনুযায়ী একতলার ছাদ পর্যন্ত কাজ হয়।

২০১৭ সালের ১৪ জুন ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ নতুন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান। এরপর কিছুদিন কাজ বন্ধ থাকে।

মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দেখা গেছে, একনেকে ড. ওয়াজেদ রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের জন্য ৯ হাজার স্কয়ার ফুটের মধ্যে ১০ তলা ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেয়া হলেও ১০ হাজার ৬৬৭ দশমিক ৮৭ ফুট জায়গায় কাজ নেয়া হয়েছে। একটি ভবনের জায়গায় করা হচ্ছে তিনটি ভবন।

এই তিন ভবনের মধ্যে অ্যাকাডেমিক ভবন ১০ তলা, একটি আবাসিক ভবন ১০ তলা এবং একটি দোতলা কনফারেন্স ভবন। প্রতিটি ভবনের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে। যা অনিয়ম ও নকশা পরিবর্তন বলছে ইউজিসির তদন্ত কমিটি।

অন্যদিকে, ১০ তলা ‘শেখ হাসিনা’ হলের অনুমোদন দেয়া হলেও জায়গা নির্ধারণ করা হয় ১৭ হাজার স্কয়ার ফুট। কিন্তু বর্তমানে সেখানে ১৭ হাজার ৮৬৫ দশমিক ৫৯ স্কয়ার ফুট এলাকা নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে গ্র্যাউন্ড ফ্লোর ২ হাজার ৯২৭ দশমিক ৫০, প্রথম ফ্লোরে ১ হাজার ৯০৮ দশমিক ১৯, দ্বিতীয় থেকে নবম ফ্লোরে ১২ হাজার ৯১৯ দশমিক ৩৬ এবং ফায়ার অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ফ্লোর ১০১ দশমিক ৫৪ স্কয়ার ফুট।

এ দুই ভবনের কাজের ভিত্তিপ্রস্তর করা হয়েছে সাবেক উপাচার্য প্রফেসর একেএম ড. নূর-উন-নবীর সময়। কিন্তু ভিত্তিপ্রস্তর ঠিক থাকলেও পরিবর্তন করা হয় নকশায়।

নতুন নকশা করা হয়েছে বর্তমান উপাচার্যের আমলে। এগুলোতে অনিয়মের অভিযোগ এনেছে তদন্ত কমিটি।

ভিসি কলিমউল্লাহর অনিয়মের প্রমাণ ইউজিসির তদন্তে
ভিসির স্বৈরতান্ত্রিক নির্দেশনার প্রতিবাদে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষ থেকে ক্যাম্পাসে ৯ ফেব্রুয়ারি মৌন মিছিল করা হয়। ছবি: নিউজবাংলা

শেখ হাসিনা ছাত্রী হলের মূল আর্কিটেক্ট মনোয়ার হাবিব নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ভবনের কাজ যখন একতলা হয়, তখন বর্তমান উপাচার্য যোগ দেন। অনেকবার দেখা করতে গিয়েও আমি তাকে পাইনি। আমাকে তারা কোনো চিঠিও দেননি। কিন্তু হঠাৎ একদিন আমাকে বলেন আপনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নকাজ থমকে আছে।

আমি অবাক হয়ে যাই। এরপর তারা একটি চিঠি দেন। সেই চিঠিতে বলা হয় আপনি ৬ তারিখে দেখা করবেন। কিন্তু চিঠিটি ৬ তারিখই পোস্ট করা হয়। এরপর দেখা করতে গেলে বলেন আপনাকে লাগবে না। আমরা মঞ্জুর কাদের নামের একজনকে নিয়োগ দিয়েছি।

‘কিছুদিন পর মঞ্জুর কাদের আমাকে কাজ ছাড়তে চাপ প্রয়োগ করেন এবং বলেন, আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আদিষ্ট হয়ে বলছি, আপনি কাজে অপারগতা প্রকাশ করেন। আমি করিনি।’

মনোয়ার হাবিব আরও বলেন, বর্তমান যে নকশায় ছাত্রীদের জন্য হল নির্মাণ করা হচ্ছে তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনার বাইরে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী চাইছিলেন ছাত্রী হলের প্রতিটি ফ্লোরে যেন রান্নাঘর থাকে, মেয়েরা যেন রান্না করতে পারে, পারলার থাকে। কিন্তু বর্তমানে মঞ্জুর কাদের সেই নির্দেশনা উপেক্ষা করে টয়লেটনির্ভর হল তৈরিতে নকশা করেছেন। কারণ প্রতিটি রুমের সঙ্গেই একটি করে বাথরুম। সব আলো-বাতাস বন্ধ হয়ে যাবে। করিডোরে কোনো ভেন্টিলেশন নেই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহর ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) আমিনুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় উপাচার্য ড. একেএম নূর-উন-নবীর আমলে শুরু হওয়া দুটি উন্নয়নকাজের জন্য পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় আর্কিটেক্ট মনোয়ার হাবিব ও প্রাকৃত নির্মাণ লিমিটেডকে।

মনোয়ার হাবিবের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নকাজে কোনো সহযোগিতা করেননি। দুবার চিঠি দেয়ার পরও সহযোগিতা না পাওয়ায় তার কার্যাদেশ বাতিল করা হয়েছে।

এরপর ২০১৯ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও ওয়ার্কস কমিটির দ্বিতীয় পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় মেসার্স একিউম্যান আর্কিটেক্ট অ্যান্ড প্ল্যানার্স লিমিটেডকে। এই প্রতিষ্ঠানের মালিক প্রকৌশলী মঞ্জুর কাদের।

তিনি বর্তমান উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহর ঘনিষ্ঠ বলে জানা গেছে।

এসব বিষয়ে জানতে মঞ্জুর কাদেরের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি মোবাইল ফোন ধরেননি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অনুমোদিত ভবন দুটির জন্য ভিভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রোপোজাল (ডিপিপির) যে নকশা রয়েছে, বর্তমানে সেই নকশার আমূল পরিবর্তন করা হয়েছে। প্রস্তাব অনুযায়ী, ড. ওয়াজেদ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ভবনে নির্মাণ ব্যয় ২৬ কোটি ৮৭ লাখ থেকে বাড়িয়ে ধরা হয় ৬১ কোটি টাকা। আর ৫১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে শেখ হাসিনা ছাত্রী হল নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ১০৭ কোটি টাকা ।

ভিসি কলিমউল্লাহর অনিয়মের প্রমাণ ইউজিসির তদন্তে
ক্যাম্পাসে মিছিল সমাবেশে ভিসি কলিমউল্লার নিষেধাজ্ঞা বাতিলের দাবিতে ৯ ফেব্রুয়ারি প্রগতিশীল ছাত্র সংঠনের প্রতিবাদ সভা ও মানববন্ধন। ছবি: নিউজবাংলা

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী শাহরিয়ার আকিব নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বর্তমানে যে এরিয়াজুড়ে ছাত্রী হল ও ড. ওয়াজেদ ইনস্টিউিটটের কাজ হচ্ছে, এগুলো সাবেক উপাচার্য ড. নুর-উন-নবী স্যারের আমলে ভিত্তি দেয়া। সেই ভিত্তির ওপরই কাজ করা হচ্ছে। নতুন করে কোনো ভিত্তি দেয়া হয়নি। তবে কিছু নকশার পরিবর্তন করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, কাজের ৬০ শতাংশ শেষ হয়েছে। ৯৭ কোটি ৫০ লাখের যে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, তার মধ্যে ৫৫ কোটি ৩৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। বাকি টাকা এখনও আছে।

তিনি বলেন, ‘যে নকশা অনুযায়ী ভবনগুলো হচ্ছে, তাতে নতুন করে অর্থের প্রয়োজন হবে। এই অর্থের জন্যই মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। তবে নতুন করে কোনো অর্থই আমরা পাইনি।’

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র বলছে, ২০১৯ সালের ১২ ডিসেম্বর শিক্ষামন্ত্রীর সভাপতিত্বে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্প পরিচালকদের নিয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের নানা অসংগতি নজরে এলে ইউজিসিকে তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়।

গত বছরের ১৭ ডিসেম্বরে শিক্ষাসচিবের সভাপতিত্বে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প স্টিয়ারিং কমিটির (পিএসসি) মিটিংয়ে নতুন নকশার বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়। সেখানে শিক্ষাসচিব তখনই জানান, প্রকল্প নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ আছে। ইউজিসি তদন্ত করবে। ওই প্রতিবেদন না আসা পর্যন্ত কাজ বন্ধ রাখতে হবে। সে কারণে কাজ বন্ধ আছে।

মঞ্জুরী কমিশন গত বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি ইউজিসির সদস্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীরকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক ড. ফেরদৌস জামান এবং অতিরিক্ত পরিচালক ড. দুর্গা রানী সরকার।

চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারি সরেজমিন পরিদর্শনে আসে তদন্ত কমিটি। পরিদর্শনকালে তারা বিশেষ উন্নয়ন প্রকল্পের নির্মাণাধীন স্থাপনাসহ প্রকল্পের কাগজপত্রাদি যাচাই করেন।

ইউজিসির তদন্ত কমিটির প্রধান প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে বস্তুনিষ্ঠ প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছি। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বসেছি, তাদের বক্তব্য নেয়া হয়েছে।’

তদন্ত কমিটি যা সুপারিশ করেছে

প্রতিবেদনে বলা হয়, পরামর্শক প্রতিষ্ঠান জয়েন্ট ভেঞ্চার অব আর্কিটেক্ট মনোয়ার হাবিব অ্যান্ড প্রাকৃত নির্মাণ লিমিটেডের সঙ্গে সমঝোতা না করে নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ দ্বিতীয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান মেসার্স একিউম্যান আর্কিটেক্ট অ্যান্ড প্ল্যানার্স লিমিটেডকে নিয়োগ দিয়েছেন। যা পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অ্যাক্ট ২০০৬, পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস ২০০৮ এবং প্রকল্প পরিচালকের সঙ্গে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান চুক্তির নিয়মাবলির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে কমিটি মনে করে।

প্রথম পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের করা শেখ হাসিনা ছাত্রী হল এবং ড. ওয়াজেদ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের জন্য প্রকৃত নকশা বা ডিজাইনের ওপর ভিত্তি করে প্রধানমন্ত্রী ২০১৭ সালের ৪ জানুয়ারি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভবন নির্মাণের কাজ উদ্বোধন করেন। তা ছাড়া ইতিমধ্যে ভবনটির অর্ধেকের বেশি কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তাই এখানে দ্বিতীয় ড্রয়িং বা ডিজাইনের কোনো ধরনের প্রয়োজন আছে বলে কমিটি মনে করে না।

প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের যথাযথ প্রক্রিয়ায় অনুমোদিত মূলধন ডিজাইন অনুযায়ী নির্মাণ সম্পন্ন করা উচিত। সরকারি সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে অযাচিতভাবে দ্বিতীয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় কার্যাদেশ দেয়া হয়; যা সরকারি ক্রয় পদ্ধতি নিয়মবহির্ভূত। এ ধরনের অনৈতিক কাজের জন্য সংশ্লিষ্টদের শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে।

স্বাধীনতা স্মারকের অসমাপ্ত কাজ কীভাবে সম্পন্ন করা হবে, তার সুষ্ঠু সমাধান মূল পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ও আর্কিটেক্ট মনোয়ার হাবিবই করতে পারবেন।

বর্তমানে আর্কিটেক্ট মঞ্জুর কাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন ওয়ার্কস কমিটির সদস্য হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমান উপাচার্যের মনোনীত আছেন।

এ সময় দ্বিতীয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিয়োগ পাওয়া মেসার্স একিউম্যান আর্কিটেক্ট অ্যান্ড প্ল্যানার্স লিমিটেড ভবন সংশোধিত ড্রইং বা ডিজাইন প্রণয়ন করে বর্তমান প্রকল্প পরিচালক উপাচার্যের কাছ থেকে অনুমোদন নিয়েছেন। এই সময়ে আর্কিটেক্ট মঞ্জুর কাদের পরিকল্পনা উন্নয়ন, ওয়ার্কস কমিটির সদস্য থাকা সত্ত্বেও এ রকম একটি অগ্রহণযোগ্য এবং ঝুঁকিপূর্ণ ড্রয়িং বা ডিজাইন অনুমোদিত হয়েছে। তাই তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে আর্কিটেক্ট মঞ্জুর কাদেরকে কমিটি থেকে অব্যাহতি দেয়া স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার স্বার্থে প্রয়োজন।

দুটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের দুটি ভবনের যথাক্রমে শেখ হাসিনা ছাত্রী হল ও ড. ওয়াজেদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের ড্রয়িং বা ডিজাইনের এরিয়া এক হলেও, আরডিপিপিতে দুটি ভবনের অতিরিক্ত এরিয়ার অনুকূলে অর্থ প্রাক্কলন করে প্রকল্প পরিচালক ও উপাচার্যের স্বাক্ষরসহ ইউজিসিতে পাঠানো হয়েছে। দুটি ভবনের এরিয়া এক থাকলেও অতিরিক্ত এরিয়া ও অতিরিক্ত প্রাক্কলন ব্যয়সহ আরডিপিপি প্রণয়ন করা নৈতিক বিচ্যুতি।

যেহেতু প্রথম পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ও আর্কিটেক্ট মনোয়ার হাবিবের ডিজাইনের ওপর তিনটি অবকাঠামো নির্মাণ চলমান, তাই তার এবং উক্ত পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা নিয়ে অবশিষ্ট অবকাঠামো নির্মাণ সম্পন্ন করা যেতে পারে।

ভিসি কলিমউল্লাহর অনিয়মের প্রমাণ ইউজিসির তদন্তে
শেখ হাসিনা হলের অনুমোদিত নকশা। কিন্তু পরে তা পরিবর্তন করা হয়। ছবি: সংগৃহীত

বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি অবকাঠামো নির্মাণের জন্য যে অবহেলা, দীর্ঘসূত্রতা, অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, তা বর্তমান প্রশাসনের অনৈতিকতা, অদক্ষতা এবং ব্যক্তিগত ইচ্ছা- অনিচ্ছার বহিঃপ্রকাশ। এতে সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ও শিক্ষা গবেষণার সুযোগ সৃষ্টির পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তিও চরমভাবে ভূলুণ্ঠিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাহী প্রধান এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্বে থাকার জন্য বর্তমান উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহকে এই দায় দায়িত্ব অবশ্যই বহন করা উচিত।

এসব অভিযোগের বিষয়ে তার বক্তব্য জানার জন্য একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ মোবাইল ফোন ধরেননি।

আরও পড়ুন:
ভিসি কলিমুল্লাহকে ক্যাম্পাসে ‘আসতে হবে’

মন্তব্য

আরও পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত সংবাদ

জাতীয়
Another 120 people from Libya have been brought back home

লিবিয়া থেকে আরও ১২৩ জনকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে

লিবিয়া থেকে আরও ১২৩ জনকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে

লিবিয়া থেকে স্বেচ্ছায় দেশে ফেরার আগ্রহ প্রকাশ করা আরও ১২৩ অনিবন্ধিত বাংলাদেশি নাগরিককে গতকাল বৃহস্পতিবার দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এসব বাংলাদেশির সবাই বুরাক এয়ারের একটি বিশেষ চার্টার্ড ফ্লাইটে (ইউজেড ০২২২) সকাল ৯টা ৫০ মিনিটে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান।

উল্লেখ্য, প্রত্যাগতদের অধিকাংশই মানবপাচারের শিকার। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে, ত্রিপোলিতে বাংলাদেশ দূতাবাস, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) সমন্বিত উদ্যোগে প্রত্যাবাসন কার্যক্রমটি বাস্তবায়িত হয়েছে।

দেশে ফেরার পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং আইওএম-এর প্রতিনিধিরা তাদের স্বাগত জানান ।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অধিকাংশ বাংলাদেশি সমুদ্রপথে ইউরোপে পৌঁছানোর উদ্দেশে অনিবন্ধিতভাবে লিবিয়ায় প্রবেশ করেছিলেন। লিবিয়ায় অবস্থানকালে তাদের অনেকেই মানব পাচারকারীদের দ্বারা অপহরণ ও নির্যাতনের শিকার হন।

সরকারি কর্মকর্তারা এসব অভিবাসীকে পরামর্শ দেন, যেন তারা অন্যদের এই ধরনের বিপজ্জনক ও অবৈধ পথে বিদেশ গমনের ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন করেন এবং ভবিষ্যতে এমন যাত্রা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেন।

পুনর্বাসন সহায়তার অংশ হিসেবে আইওএম প্রত্যেককে নগদ ৬ হাজার টাকা, জরুরি খাদ্য সহায়তা, প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা এবং প্রয়োজনে অস্থায়ী আবাসনের ব্যবস্থা করেছে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, বর্তমানে লিবিয়ার বিভিন্ন বন্দিশিবিরে আটক থাকা অন্যান্য বাংলাদেশির নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের কাজ চলছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ত্রিপোলিতে বাংলাদেশ দূতাবাস, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং আইওএম যৌথভাবে এ বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছে।

মন্তব্য

তদন্ত কমিশনের সংবাদ সম্মেলন

গুমের শিকার ব‍্যক্তিদের চার ধরনের পরিণতি হতো

গুমের শিকার ব‍্যক্তিদের চার ধরনের পরিণতি হতো

রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই গুম করা হতো বলে জানিয়েছেন গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিটির সভাপতি বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী। গুমের শিকার ব্যক্তিদের সম্ভাব্য ৪ ধরনের পরিণতি হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানে সংবাদ সম্মেলনে গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিটির সভাপতি এসব তথ্য জানান। কমিশনে দাখিল করা অভিযোগ বিশ্লেষণে এসব তথ্য দেন তিনি।

তিনি বলেন, গুমের শিকার ব্যক্তিদের সম্ভাব্য যে ৪ ধরনের পরিণতি হয়েছে, তা হলো: ১. গুমের শিকার ব্যক্তিকে হত্যা করা। ২. বিচারের আগেই মিডিয়ার সামনে উপস্থাপন করে জঙ্গি তকমা দিয়ে বাংলাদেশেই বিচারাধীন বা নতুন ফৌজদারি মামলায় গ্রেফতার দেখানো।৩. তাকে সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাঠিয়ে সে দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মাধ্যমে গ্রেপ্তারের ব্যবস্থা করা। ৪. ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে, অল্পসংখ্যক ক্ষেত্রে মামলা না দিয়ে ছেড়ে দেওয়া।

গুম কমিশনের ২য় অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন গত ৪ জুন প্রধান উপদেষ্টা বরাবর জমা দেওয়ার পর আজ দুপুরে রাজধানীর গুলশানে গুম সংক্রান্ত কমিশন অফ ইনকোয়ারির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মইনুল ইসলাম চৌধুরী এ সব কথা বলেন।

গুম কমিশনের সভাপতি বলেন, বিগত কর্তৃত্ববাদী সরকারের আমলে বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি এবং ভিন্ন মতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে পদ্ধতিগত দমননীতির অংশ হিসেবে গুমকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল।

তিনি বলেন, ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পরেও বহু অপরাধী ও তাদের শুভাকাঙ্ক্ষীরা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকায় অনেক জোরালো প্রমাণ ও নিদর্শন ধ্বংস, অনেক ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক অসহযোগিতা, সাক্ষীদের ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ নানারকম ভীতিকর ও আতঙ্কজনক পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। তবুও বহু ভুক্তভোগী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাদের অভিযোগ ও অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন। তারা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বিস্তারিতভাবে সে কাহিনি তুলে ধরেছেন।

গুম সংক্রান্ত কমিশন অফ ইনকোয়ারির সভাপতি আরো বলেন, বিগত সরকারের শাসনামলে গুম একটি সুশৃঙ্খল ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপে ‘জঙ্গিবাদবিরোধী’ অভিযানের ছায়াতলে ইসলামি উগ্রবাদের হুমকিকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করা, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন ও শাসন দীর্ঘায়িত করার উদ্দেশে পরিচালিত হয়েছিল। ভুক্তভোগীদের মধ্যে ছিলেন- মেধাবী শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক কর্মী ও সাংবাদিক থেকে সাধারণ জনগণ।

মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, এ প্রক্রিয়ায় তারা ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থাকে অস্ত্র বানিয়েছিল। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও নিরাপত্তা বাহিনীকে রাজনৈতিক প্রভাবাধীন করে এবং নির্যাতন ও গোপন আটকের সংস্কৃতি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে চালু করেছিল। এমনকি সাধারণ নাগরিকদের বেআইনি পন্থায় বারবার ভারতীয় বাহিনীর হাতেও তুলে দেওয়া হয়েছিল।

কমিশন অফ ইনকোয়ারি অ্যাক্টের ধারা ১০ এ(১) ও (২) অনুযায়ী কমিশনে দাখিলকৃত ১৩১টি অভিযোগের বিষয়ে আইন মোতাবেক জিডি রেকর্ডপূর্বক ভিকটিমদের সন্ধান ও উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পুলিশ মহাপরিদর্শক বরাবর প্রেরণ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, গোপন আটক কেন্দ্রের অস্তিত্ব এখন আর অস্বীকার করা যায় না। সকল ক্ষেত্রেই ভুক্তভোগীরা প্রায় একই ধরনের প্রক্রিয়ার শিকার হয়েছেন। পদ্ধতিগত নির্যাতন, সন্ত্রাসী হিসেবে প্রচার, একই ধরনের আইন অনুযায়ী অভিযোগ দায়ের ও একই ধরনের ভাষায় বর্ণনা। বিভিন্ন পটভূমি থেকে আসা ব্যক্তিদের অভিজ্ঞতার এই সামঞ্জস্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যকে স্পষ্ট করে।

তিনি বলেন, প্রতিবেদনে ১৯ শতাংশ ফেরত না আসা ১২ জন ভিকটিমের বিষয়ে অগ্রগতি তুলে ধরেছি, যাদের বিষয়ে প্রাথমিকভাবে অনুসন্ধান সম্পন্ন হয়েছে। তাদের গুমের জন্য কারা দায়ী, তা প্রাথমিকভাবে আমরা শনাক্ত করতে পেরেছি। চলমান অনুসন্ধানের স্বার্থে এই মুহূর্তে এর চেয়ে বেশি প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছে না।

ফিরে না আসা ভিকটিমদের বিষয়ে অপরাধী ও গুমের অপরাধ সংঘটনের স্থানসহ নানাবিধ বিষয়ে তথ্যের ঘাটতি বা পুরোনো কললিস্ট না পাওয়াসহ নানারকম বিলম্বঘটিত প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হলেও কমিশন আন্তরিকতার সঙ্গে অনুসন্ধান কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।

প্রতিবেদনে কমিশন সন্ত্রাসবিরোধী যে সব মামলায় অপব্যবহার হয়েছে, তা ন্যায় বিচারের মানদণ্ড বিবেচনায় নিয়ে দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যবস্থা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতনের সঙ্গে আলোচনার প্রেক্ষিতে মালয়েশিয়া-ইন্দোনেশিয়ার মতো উপযুক্ত কাউন্টার টেরোরিজম মেথড বের করার জন্য দুটি সুপারিশ করা হয়।

এ সময় গুম সংক্রান্ত কমিশন অফ ইনকোয়ারির সদস্য অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত বিচারক মো. ফরিদ আহমেদ শিবলী, মানবাধিকার কর্মী নূর খান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কমিশনের সদস্য নাবিলা ইদ্রিস, মানবাধিকার কর্মী ও কমিশনের সদস্য সাজ্জাদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

মন্তব্য

জাতীয়
The accused in the murder case

আদালত থেকে পালাল হত্যা মামলার আসামি

আদালত থেকে পালাল হত্যা মামলার আসামি

ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের এজলাস থেকে হাজতখানায় নেওয়ার পথে পুলিশকে মারধর করে পালিয়েছেন হত্যা মামলার এক আসামি।

আসামি শরিফুল ইসলাম (২২) দিনাজপুর জেলার নবাবগঞ্জ থানার হরিপুর গ্রামের মৃত শফিক আহম্মেদের ছেলে। তিনি রাজধানীর খিলগাঁও থানার জিসান হোসেন (১৪) হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি। মামলাটি বর্তমানে সাক্ষ্যগ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১ টার পর সংশ্লিষ্ট আদালতের দায়িত্বে থাকা পুলিশ কনস্টেবল শহিদুল্লাহকে মারধর করে ছুটে পালিয়ে যান আসামি শরিফুল। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের হাজতখানার ইনচার্জ এসআই রিপন।

তিনি বলেন, আসামিকে আদালত থেকে হাজতখানায় নেওয়ার সময় পুলিশকে আঘাত করে তিনি পালিয়ে যায় আসামি শহিদুল।

ডিএমপির প্রসিকিশন বিভাগের এডিসি মাইন উদ্দিন বলেন, আসামির হাতে হাতকড়া পরানো ছিল। তিনি ধাতব কিছু দিয়ে হাতকড়া ঢিলা করে কৌশলে খুলে ফেলে। পরে পুলিশ কনস্টেবলের হাতে আঘাত করে পালিয়ে যায়।

তিনি বলেন, আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি। কোতোয়ালি থানাকে জানানো হয়েছে আসামিকে গ্রেপ্তারের জন্য। তার বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলমান।

মন্তব্য

জাতীয়
The 5th Annual Senate Meeting in the BUP

বিইউপিতে ১৭তম বার্ষিক সিনেট সভা অনুষ্ঠিত

বিইউপিতে ১৭তম বার্ষিক সিনেট সভা অনুষ্ঠিত

১৯ জুন ২০২৫ তারিখে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি) এর ১৭তম বার্ষিক সিনেট সভা বিইউপির বিজয় অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিইউপির উপাচার্য ও সিনেট চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মোঃ মাহ্বুব-উল আলম, বিএসপি, এনডিসি, এএফডব্লিউসি, পিএসসি, এমফিল, পিএইচডি।

সভার শুরুতে বিইউপির উপাচার্য ও সিনেট চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মোঃ মাহ্বুব-উল আলম বিদায়ী সদস্যদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এবং নবনিযুক্ত সদস্যদের স্বাগত জানান। পরে বিইউপির ট্রেজারার এয়ার কমডোর মোঃ রেজা এমদাদ খান, জিইউপি, বিইউপি, এনডিসি, পিএসসি, জিডি(পি), ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট ১৩৪ কোটি ৮ লক্ষ টাকা ও ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের ১৩৪ কোটি ৯৭ লক্ষ টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন।

সিনেট সদস্যগণ ট্রেজারার এর বক্তৃতার ওপর আলোচনা করেন এবং সর্বসম্মতিক্রমে বাজেট প্রস্তাব অনুমোদন করেন। এছাড়াও সিনেট সভায় ১৭তম বার্ষিক প্রতিবেদন উপস্থাপিত ও সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদিত হয়। ১৭তম বার্ষিক সিনেট সভাটি সার্বিকভাবে সঞ্চালনা করেন বিইউপির রেজিস্ট্রার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ রাব্বি আহসান, এনডিসি, পিএসসি।

সভায় সিনেট চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মাহ্বুব তাঁর বক্তব্যে বলেন, বিইউপি বয়সে নবীন হলেও এর শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও গবেষকগণের বিভিন্ন প্রতিযোগিতা, সেমিনার, ওয়ার্কশপ ও গবেষণা ভিত্তিক কার্যক্রমের অর্জনসমূহ জাতীয় আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সুনাম বয়ে আনছে। যুগোপযোগী শিক্ষা প্রদান, গবেষণা ও উদ্ভাবনী কার্যক্রমে বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নিত হওয়ার লক্ষ্যে অত্র বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক একটি সুনির্দিষ্ট Academic Strategic Plan –২০৫০ প্রণয়ন করা হয়েছে।

Academic Strategic Plan এর মাধ্যমে পাঠ্যক্রমের আধুনিক মান নির্ধারণ, Outcome Based Education (OBE) কারিকুলাম প্রনয়ণ, গবেষণা, উদ্ভাবন, প্রকাশনা ও গবেষণা সহায়তার সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

মাননীয় উপাচার্য সকলকে অবহিত করেন যে বিইউপি’র গবেষণাভিত্তিক অগ্রযাত্রায় BUP Research Centre (BRC) অংঙ্গীভূত ফ্যাকাল্টি ও অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠানসমূহে গবেষণা, উদ্ভাবন ও পরামর্শমূলক কার্যক্রমে গতিশীলতা আনার লক্ষ্যে কাজ করছে। 'Inspiring Innovation for Advancing Knowledge' শ্লোগানকে ধারণ করে, BUP Research Centre, গবেষকদের মানসম্মত গবেষণায় উৎসাহ দিচ্ছে এবং শিল্প-প্রতিষ্ঠান ও একাডেমিয়ার মধ্যে সংযোগ স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

এছাড়াও তিনি উল্লেখ করেন, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গবেষকদের গবেষণালব্ধ জ্ঞান প্রসারের উদ্দেশ্যে বিইউপি থেকে ৫টি জার্নাল প্রতিবছর নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে যা সকলের মাঝে সমাদৃত। সিনেট চেয়ারম্যান আরও উল্লেখ করেন যে, শিক্ষার্থীদের শিক্ষার পাশাপাশি একজন সুশৃঙ্খল, নৈতিকতা সম্পন্ন সু-নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বিইউপি বদ্ধপরিকর এবং সে লক্ষ্যে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের চারিত্রিক গুণাবলি ও আত্মিক উন্নয়নের লক্ষ্যে সকল প্রোগ্রামের পাঠ্যক্রমে নৈতিক শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে Need Based Education - কেও গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হচ্ছে। তিনি বলেন যে, আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের মানসম্মত কারিকুলাম ও শিক্ষা পরিবেশের পাশাপাশি বৈচিত্র‍্যময় সাংস্কৃতিক সান্নিধ্যের গুরুত্বকে সামনে রেখে বিইউপি'তে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া, নবপ্রজন্মের মধ্যে নৈতিক মূল্যবোধ, সততা, চরিত্র গঠন ও সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা এবং দেশপ্রেম জাগ্রত করতে পড়াশোনার পাশাপাশি বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য, জাতীয় দিবসগুলোর তাৎপর্য ও মাহাত্ম্য তুলে ধরে বিইউপি’র বিভিন্ন আলোচনা সভা, সিম্পোজিয়াম, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজনের কথা উল্লেখ করেন।

এই সিনেট সভায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং বিইউপির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

মন্তব্য

জাতীয়
BNP does not support the electoral college in the presidential election

রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ইলেকট্রোরাল কলেজব্যবস্থা সমর্থন করে না বিএনপি

রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ইলেকট্রোরাল কলেজব্যবস্থা সমর্থন করে না বিএনপি

রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রস্তাবিত ইলেকট্রোরাল কলেজব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য বলে মন্তব্য করেছে বিএনপি। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘জনগণের ভোটাধিকার হরণে এই ব্যবস্থাকে আরেকটি ছলচাতুরী হিসেবে দেখা হচ্ছে।’

গতকাল বুধবার বিকালে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এমন মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য কমিশনের যে প্রস্তাব তাতে একটা ইলেক্টোরাল কলেজ করা হবে। এবং প্রায় ওনাদের ভাষ্য অনুযায়ী ৭০ হাজারের মতো ভোটার থাকবে। ইউনিয়ন পর্যায় থেকে শুরু করে স্থানীয় সরকার পর্যায়ের প্রতিনিধিগণ এখানে ভোটার হবেন। এবং রাষ্ট্রপতিকে সৎ, দক্ষ ও অভিজ্ঞ একজন ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য ওখানে প্রস্তাব করা হয়েছে।

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনের প্রস্তাবে আগের মতোই একমত নয় বিএনপি।

এই কাউন্সিলের জবাবদিহি না থাকায় সমর্থন করে না বিএনপি। এই কাউন্সিলে আরেকটি ভারসাম্যহীন অবস্থা তৈরি হবে বলে মনে করি আমরা।’

স্বাধীন বিচারব্যবস্থার দাবি জানিয়ে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘স্বাধীন বিচারব্যবস্থা হলে ভারসাম্যহীনতা দূর হবে, ফ্যাসিবাদ দমন করবে। প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্য, অন্য সাংবিধানিক পদ, সংস্থা স্বাধীন করতে পারলে সমস্যা থাকবে না।’

বিএনপি মনে করে সুশাসন নিশ্চিত করতে ন্যায়পাল করা যেতে পারে। বিদ্যমান ব্যবস্থা বজায় রেখে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ হলে তাদের যোগ করা যেতে পারে, বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন আইন সংশোধন করা যেতে পারে। জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। বিএনপি মনে করে, দুদক ও মানবাধিকার কমিশনের মতো প্রতিষ্ঠান শক্তিশালী করতে বিদ্যমান আইনগুলো সংস্কারের প্রয়োজন।

মন্তব্য

জাতীয়
Bhawal Chandipur Agrakhola road is like a death

ভাওয়াল-চন্ডিপুর-অগ্রখোলা সড়ক যেন মরণফাঁদ

চরম দুর্ভোগে এলাকাবাসী   
ভাওয়াল-চন্ডিপুর-অগ্রখোলা সড়ক যেন মরণফাঁদ

কেরানীগঞ্জের শাক্তা ও তারানগর ইউনিয়নের বুক চিরে চলা ভাওয়াল-চন্ডিপুর-অগ্রখোলা সড়কের বেহাল দশায় নিত্যদিন ভোগান্তিতে পড়ছে হাজারো মানুষ। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের অভাবে সড়কজুড়ে এখন গর্ত আর ধুলাবালি। সামান্য বৃষ্টিতে কাদায় যানবাহন আটকে যায়, আর শুকনো মৌসুমে উড়ে ধূলোর ঝড়।

রাস্তাটির বেহাল অবস্থার কারণে প্রায় প্রতিদিনই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন পথচারী ও যানবাহনের চালকরা। ছোট-বড় গর্তে হোঁচট খেয়ে পড়ে আহত হন অনেক পথচারী। অন্যদিকে, যানবাহন চলাচলের অযোগ্য এই সড়কে প্রতিনিয়তই নষ্ট হয়ে পড়ে ভ্যান, অটোরিকশা, ট্রাকসহ বিভিন্ন গাড়ি। আকিজ ফাউন্ডেশন স্কুল, মেকাইল মাদ্রাসা ও অগ্রখোলা কমিউনিটি হাসপাতালের সামনের অবস্থা এতটাই খারাপ যে মাঝে মাঝেই উল্টে যায় যাত্রী বোঝাই যানবাহন ।

সড়কের করুণ অবস্থার কারণে অনেক চালক ও পথচারী এখন পাশের বেলনা, কলাতিয়া ও নয়াবাজার হয়ে বিকল্প রাস্তায় যাতায়াত করছেন। এতে সময়, অর্থ ও দুর্ভোগ বাড়ছে।

এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন কেরানীগঞ্জ ছাড়াও নবাবগঞ্জ, দোহার, সিরাজদিখানসহ দক্ষিণবঙ্গের হাজার হাজার মানুষ মোহাম্মদপুর হয়ে রাজধানীতে প্রবেশ করে। অথচ বছরের পর বছর ধরে অবহেলায় পড়ে আছে সড়কটি।

স্থানীয় বাসিন্দা কবির হোসেন বলেন, ‘রাস্তাটার অবস্থা এমন যে, অটোরিকশা সিএনজিতে ওঠা মানেই কোমর ভাঙা। মাঝে মাঝেই যানবাহন পড়ে মানুষ আহত হয়। স্কুলের বাচ্চারা পর্যন্ত ভয়ে এই রাস্তায় যেতে চায় না। কোন এমপি-মন্ত্রী একবার এই রাস্তা দিয়ে গেলে বুঝত কষ্টটা কেমন।

একই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পণ্যবাহী ট্রাকচালক রাকিব হাওলাদার। তিনি বলেন, একবার গর্তে পড়লে গাড়ির যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে যায়। ট্রাকে থাকা জিনিসপত্র পড়ে যায়, এভাবে থাকলে এই রাস্তা দিয়ে আর চলাচল করা সম্ভব নয়। এটি দ্রুত সংস্কার করা উচিত।

এ বিষয়ে কেরানীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-প্রকৌশলী আব্দুল লতিফ বলেন, সড়কটি ইতোমধ্যে ডিপিপিতে অনুমোদন পেয়েছে। তাই এখন সংস্কার করা হচ্ছেনা। বছরের শেষ দিকে ২০ ফুট প্রশস্ত করে এবং আরও শক্তিশালী করে কাজ শুরু হবে। তখন রাস্তাটি আরো টেকসই হবে।

এদিকে এলাকাবাসীর দাবি, সংস্কার কাজ শুরুর আগ পর্যন্ত অন্তত গর্ত ভরাট করে সাময়িক চলাচলের উপযোগী করে তুলতে হবে। নইলে প্রতিদিন দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।

মন্তব্য

জাতীয়
Twenty four bucks the family of four runs a family of four

আড়াইশ টাকা আয়ে চারজনের সংসার চালায় কিশোর তোফাজ্জল!

আড়াইশ টাকা আয়ে চারজনের সংসার চালায় কিশোর তোফাজ্জল!

একটা ভাঙাচোরা বাইসাইকেলই তার ভরসা। এ সাইকেল চালিয়ে ১৫ কিলোমিটার দুরের দুর্গম খাসিয়া পল্লীতে কাজ করে দুই-আড়াইশ টাকা রোজগার করে কিশোর তোফাজ্জল (১৪)। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী ৯নং ইসলামপুর ইউনিয়নের কাঁঠালকান্দী গ্রামের আলী আহমেদ (৬৫) এর ছেলে তোফাজ্জল হোসেন। পরিবারে সে একমাত্র উপার্জনক্ষম। বাবা হার্টের রোগী, বোন আয়েশা খাতুন (২৫) মানসিক ভারসাম্যহীন আর বয়োবৃদ্ধ দাদী সমিতা বিবি (৮২) দীর্ঘদিন ধরে শয্যাশায়ী।

তোফাজ্জল কান্নাজড়িত কন্ঠে এ প্রতিবেদককে বলেন, প্রতিদিনি সকালে ভাঙাচোরা একটি সাইকেল নিয়ে ১৫ কিলোমিটার দুরের খাসিয়া পল্লীতে কাজে যাই। সন্ধ্যায় ফিরি। যা রোজগার হয়, দুবেলাও খেতে পাইনা। এ দুনিয়ায় আল্লাহ ছাড়া আমাদের আর কেউ নাই। প্রতিবেশী ফজল মিয়া, আবু শহীদ এ পরিবারের দুরাবস্থার কথা জানিয়ে বলেন, প্রকৃতই তারা খুব অসহায় ও মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। তিনজনই অসুস্থ। মাঝে মধ্যে আমরা যতটা সম্ভব সহযোগিতা করার চেষ্টা করি।

সরেজমিন তোফাজ্জলদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সরকারি আবাসন প্রকল্পের ছোট্ট একটি ঘরে মেঝেয় জীর্ণ-শীর্ণ কাঁথায় শুয়ে আছেন সমিতা বিবি। অপুষ্টি আর ক্ষুধার যন্ত্রণায় ক্লান্ত। ঠিকমতো কথা বলতে পারছেন না। যা বললেন বোঝা গেলো, ডালভাত খেয়ে ঈদের দিন পার করেছি। ক্ষিদের জ্বালায় রাতে ঘুম আসে না। একরত্তি নাতি আর কিইবা করবে। তবু যা করছে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। চাল ডাল আনলে ওষুধ আনতে পারে না। তবু প্রায়ই অনাহারে থাকতে হয়। ঈদে চান্দে প্রতিবেশীরা কেউ খাবার দেয়, কেউ সামান্য টাকা-পয়সা দেয়। এইভাবেই টিকে আছি।

স্থানীয়দের সহযোগিতাই একমাত্র ভরসা। মানুষের সাহায্যে দুমুঠো ভাত খেতে পারেন, যদি কেউ সাহায্যে না করে তাহলে না খেয়েই থাকতে হয়। তার বিলাপে চোখে জল চলে আসে। এ যেন দারিদ্র্যের এক করুণ চিত্র। এই অসহায় নারীর জীবন কাটছে অভাব আর কষ্টে। পা ভেঙে এক বছর ধরে শয্যাশায়ী। ছেলে আলী আহমেদও হার্টের রোগী। কোন কাজকর্ম করতে পারেন না। তাই ১৩/১৪ বছরের নাতি তোফাজ্জলের কাঁধেই সংসারের ভার। দুর্গম খাসিয়া পুঞ্জিতে কাজ করে দিনে আয় করে দুই-আড়াইশ টাকা মাত্র। এ টাকায় দুবেলা খাবার যোগানোই মুশকিল। তার ওপর অসুস্থ দাদি, বাবা আর মরার উপর খাঁড়ার ঘা মানসিক প্রতিবন্ধী বড় বোন আয়েশা খাতুন।

ইসলামপুর ইউনিয়নের স্থানীয় ইউপি সদস্য ফারুক আহমেদ জানান, একসময় তাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই ছিলো না। কয়েক বছর আগে সরকারি আবাসন প্রকল্পের মাধ্যমে এ পরিবারের জন্য একটি ঘরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোফাজ্জলদের দুরাবস্থা জেনে অনেকে খাদ্য সামগ্রী দিয়ে তাদের সহায়তা করছেন। তবে বয়োবৃদ্ধ সমিতা বিবি ও মানসিক প্রতিবন্ধী আয়েশা খাতুনের সুচিকিৎসা ও তোফাজ্জলদের আত্মনির্ভরশীল হওয়ার ব্যবস্থা জরুরি।

মন্তব্য

p
উপরে