রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকারে পাওয়া ‘বিশেষ উন্নয়ন প্রকল্পে’ উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের তদন্ত কমিটি।
একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও ওয়ার্কস কমিটির সদস্য মঞ্জুর কাদেরকে অব্যাহতি দিতে সুপারিশ করা হয়েছে। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি তদন্ত প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেয় কমিটি।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানিয়েছে, ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে একনেকের এক বৈঠকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের একটি হল ও ড. ওয়াজেদ রিসার্চ ইনস্টিটিউট ভবন নির্মাণের জন্য বিশেষ উন্নয়ন প্রকল্পের অনুমোদন দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ জন্য বরাদ্দ দেয়া হয় ৯৭ দশমিক ৫০ কোটি টাকা।
প্রকল্পটি তৈরি করে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. জলিল মিয়ার আমলে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী ছাত্রীদের হল ১০ তলা করা এবং সেখানে সব ধরনের সর্বাধুনিক সুযোগ-সুবিধা রাখার নির্দেশ দেন।
একইভাবে ড. ওয়াজেদ রিসার্চ ইনস্টিটিউটকেও আধুনিক মানসম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। পরে ভবনের নকশা পরিবর্তন করে আধুনিক যুগোপযোগী নকশা তৈরি করে প্রকল্পটি তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. নূর-উন-নবীর আমলে অনুমোদন দেয়া হয়। তাতে সায় দেন প্রধানমন্ত্রী নিজেই।
এই দুটি স্বতন্ত্র ভবন নির্মাণের জন্য ৭৮ কোটি ২২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে ‘শেখ হাসিনা’ ছাত্রী হলের ১০ তলা ভবন নির্মাণের জন্য কার্যাদেশ দেয়া হয় ২০১৬ সালের ২১ জুলাই। কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালের ৪ জানুয়ারি। কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৮ সালের ২১ জানুয়ারি। এর ব্যয় ধরা হয় ৫১ কোটি ৩৫ লাখ ৫৫ হাজার টাকা।
ড. ওয়াজেদ রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের জন্য একটি ভবন নির্মাণের চুক্তি মূল্য দেয়া হয় ২৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। এ ভবন নির্মাণের কার্যাদেশ দেয়া হয় ২০১৬ সালের ২১ জুলাই। কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালের ৪ জানুয়ারি এবং কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৮ সালের ২১ আগস্ট।
আর প্রকল্পের মেয়াদ নির্ধারণ করা হয় ২০১৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত।
অবশিষ্ট টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা স্মারক, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ ও ইলেক্ট্রনিকস অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের কম্পিউটার ল্যাবের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়।
২০১৭ সালের ৪ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন অধ্যাপক ড. এ কে এম নূর-উন-নবী।
উন্মুক্ত দরপত্রে অংশ নেয় ওয়াহেদ কনস্ট্রাকশন ও আব্দুস সালাম কনস্ট্রাকশন।
পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আর্কিটেক্ট মনোয়ার হাবিব ও প্রাকৃত নির্মাণ লিমিটেড যৌথভাবে অংশগ্রহণকারী কোম্পানিকে কার্যাদেশ দেয়া হয়। কার্যাদেশ ও নকশা অনুযায়ী একতলার ছাদ পর্যন্ত কাজ হয়।
২০১৭ সালের ১৪ জুন ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ নতুন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান। এরপর কিছুদিন কাজ বন্ধ থাকে।
মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দেখা গেছে, একনেকে ড. ওয়াজেদ রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের জন্য ৯ হাজার স্কয়ার ফুটের মধ্যে ১০ তলা ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেয়া হলেও ১০ হাজার ৬৬৭ দশমিক ৮৭ ফুট জায়গায় কাজ নেয়া হয়েছে। একটি ভবনের জায়গায় করা হচ্ছে তিনটি ভবন।
এই তিন ভবনের মধ্যে অ্যাকাডেমিক ভবন ১০ তলা, একটি আবাসিক ভবন ১০ তলা এবং একটি দোতলা কনফারেন্স ভবন। প্রতিটি ভবনের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে। যা অনিয়ম ও নকশা পরিবর্তন বলছে ইউজিসির তদন্ত কমিটি।
অন্যদিকে, ১০ তলা ‘শেখ হাসিনা’ হলের অনুমোদন দেয়া হলেও জায়গা নির্ধারণ করা হয় ১৭ হাজার স্কয়ার ফুট। কিন্তু বর্তমানে সেখানে ১৭ হাজার ৮৬৫ দশমিক ৫৯ স্কয়ার ফুট এলাকা নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে গ্র্যাউন্ড ফ্লোর ২ হাজার ৯২৭ দশমিক ৫০, প্রথম ফ্লোরে ১ হাজার ৯০৮ দশমিক ১৯, দ্বিতীয় থেকে নবম ফ্লোরে ১২ হাজার ৯১৯ দশমিক ৩৬ এবং ফায়ার অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ফ্লোর ১০১ দশমিক ৫৪ স্কয়ার ফুট।
এ দুই ভবনের কাজের ভিত্তিপ্রস্তর করা হয়েছে সাবেক উপাচার্য প্রফেসর একেএম ড. নূর-উন-নবীর সময়। কিন্তু ভিত্তিপ্রস্তর ঠিক থাকলেও পরিবর্তন করা হয় নকশায়।
নতুন নকশা করা হয়েছে বর্তমান উপাচার্যের আমলে। এগুলোতে অনিয়মের অভিযোগ এনেছে তদন্ত কমিটি।
শেখ হাসিনা ছাত্রী হলের মূল আর্কিটেক্ট মনোয়ার হাবিব নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ভবনের কাজ যখন একতলা হয়, তখন বর্তমান উপাচার্য যোগ দেন। অনেকবার দেখা করতে গিয়েও আমি তাকে পাইনি। আমাকে তারা কোনো চিঠিও দেননি। কিন্তু হঠাৎ একদিন আমাকে বলেন আপনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নকাজ থমকে আছে।
আমি অবাক হয়ে যাই। এরপর তারা একটি চিঠি দেন। সেই চিঠিতে বলা হয় আপনি ৬ তারিখে দেখা করবেন। কিন্তু চিঠিটি ৬ তারিখই পোস্ট করা হয়। এরপর দেখা করতে গেলে বলেন আপনাকে লাগবে না। আমরা মঞ্জুর কাদের নামের একজনকে নিয়োগ দিয়েছি।
‘কিছুদিন পর মঞ্জুর কাদের আমাকে কাজ ছাড়তে চাপ প্রয়োগ করেন এবং বলেন, আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আদিষ্ট হয়ে বলছি, আপনি কাজে অপারগতা প্রকাশ করেন। আমি করিনি।’
মনোয়ার হাবিব আরও বলেন, বর্তমান যে নকশায় ছাত্রীদের জন্য হল নির্মাণ করা হচ্ছে তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনার বাইরে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী চাইছিলেন ছাত্রী হলের প্রতিটি ফ্লোরে যেন রান্নাঘর থাকে, মেয়েরা যেন রান্না করতে পারে, পারলার থাকে। কিন্তু বর্তমানে মঞ্জুর কাদের সেই নির্দেশনা উপেক্ষা করে টয়লেটনির্ভর হল তৈরিতে নকশা করেছেন। কারণ প্রতিটি রুমের সঙ্গেই একটি করে বাথরুম। সব আলো-বাতাস বন্ধ হয়ে যাবে। করিডোরে কোনো ভেন্টিলেশন নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহর ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) আমিনুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় উপাচার্য ড. একেএম নূর-উন-নবীর আমলে শুরু হওয়া দুটি উন্নয়নকাজের জন্য পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় আর্কিটেক্ট মনোয়ার হাবিব ও প্রাকৃত নির্মাণ লিমিটেডকে।
মনোয়ার হাবিবের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নকাজে কোনো সহযোগিতা করেননি। দুবার চিঠি দেয়ার পরও সহযোগিতা না পাওয়ায় তার কার্যাদেশ বাতিল করা হয়েছে।
এরপর ২০১৯ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও ওয়ার্কস কমিটির দ্বিতীয় পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় মেসার্স একিউম্যান আর্কিটেক্ট অ্যান্ড প্ল্যানার্স লিমিটেডকে। এই প্রতিষ্ঠানের মালিক প্রকৌশলী মঞ্জুর কাদের।
তিনি বর্তমান উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহর ঘনিষ্ঠ বলে জানা গেছে।
এসব বিষয়ে জানতে মঞ্জুর কাদেরের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি মোবাইল ফোন ধরেননি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অনুমোদিত ভবন দুটির জন্য ভিভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রোপোজাল (ডিপিপির) যে নকশা রয়েছে, বর্তমানে সেই নকশার আমূল পরিবর্তন করা হয়েছে। প্রস্তাব অনুযায়ী, ড. ওয়াজেদ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ভবনে নির্মাণ ব্যয় ২৬ কোটি ৮৭ লাখ থেকে বাড়িয়ে ধরা হয় ৬১ কোটি টাকা। আর ৫১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে শেখ হাসিনা ছাত্রী হল নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ১০৭ কোটি টাকা ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী শাহরিয়ার আকিব নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বর্তমানে যে এরিয়াজুড়ে ছাত্রী হল ও ড. ওয়াজেদ ইনস্টিউিটটের কাজ হচ্ছে, এগুলো সাবেক উপাচার্য ড. নুর-উন-নবী স্যারের আমলে ভিত্তি দেয়া। সেই ভিত্তির ওপরই কাজ করা হচ্ছে। নতুন করে কোনো ভিত্তি দেয়া হয়নি। তবে কিছু নকশার পরিবর্তন করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, কাজের ৬০ শতাংশ শেষ হয়েছে। ৯৭ কোটি ৫০ লাখের যে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, তার মধ্যে ৫৫ কোটি ৩৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। বাকি টাকা এখনও আছে।
তিনি বলেন, ‘যে নকশা অনুযায়ী ভবনগুলো হচ্ছে, তাতে নতুন করে অর্থের প্রয়োজন হবে। এই অর্থের জন্যই মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। তবে নতুন করে কোনো অর্থই আমরা পাইনি।’
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র বলছে, ২০১৯ সালের ১২ ডিসেম্বর শিক্ষামন্ত্রীর সভাপতিত্বে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্প পরিচালকদের নিয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের নানা অসংগতি নজরে এলে ইউজিসিকে তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়।
গত বছরের ১৭ ডিসেম্বরে শিক্ষাসচিবের সভাপতিত্বে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প স্টিয়ারিং কমিটির (পিএসসি) মিটিংয়ে নতুন নকশার বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়। সেখানে শিক্ষাসচিব তখনই জানান, প্রকল্প নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ আছে। ইউজিসি তদন্ত করবে। ওই প্রতিবেদন না আসা পর্যন্ত কাজ বন্ধ রাখতে হবে। সে কারণে কাজ বন্ধ আছে।
মঞ্জুরী কমিশন গত বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি ইউজিসির সদস্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীরকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক ড. ফেরদৌস জামান এবং অতিরিক্ত পরিচালক ড. দুর্গা রানী সরকার।
চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারি সরেজমিন পরিদর্শনে আসে তদন্ত কমিটি। পরিদর্শনকালে তারা বিশেষ উন্নয়ন প্রকল্পের নির্মাণাধীন স্থাপনাসহ প্রকল্পের কাগজপত্রাদি যাচাই করেন।
ইউজিসির তদন্ত কমিটির প্রধান প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে বস্তুনিষ্ঠ প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছি। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বসেছি, তাদের বক্তব্য নেয়া হয়েছে।’
তদন্ত কমিটি যা সুপারিশ করেছে
প্রতিবেদনে বলা হয়, পরামর্শক প্রতিষ্ঠান জয়েন্ট ভেঞ্চার অব আর্কিটেক্ট মনোয়ার হাবিব অ্যান্ড প্রাকৃত নির্মাণ লিমিটেডের সঙ্গে সমঝোতা না করে নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ দ্বিতীয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান মেসার্স একিউম্যান আর্কিটেক্ট অ্যান্ড প্ল্যানার্স লিমিটেডকে নিয়োগ দিয়েছেন। যা পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অ্যাক্ট ২০০৬, পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস ২০০৮ এবং প্রকল্প পরিচালকের সঙ্গে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান চুক্তির নিয়মাবলির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে কমিটি মনে করে।
প্রথম পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের করা শেখ হাসিনা ছাত্রী হল এবং ড. ওয়াজেদ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের জন্য প্রকৃত নকশা বা ডিজাইনের ওপর ভিত্তি করে প্রধানমন্ত্রী ২০১৭ সালের ৪ জানুয়ারি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভবন নির্মাণের কাজ উদ্বোধন করেন। তা ছাড়া ইতিমধ্যে ভবনটির অর্ধেকের বেশি কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তাই এখানে দ্বিতীয় ড্রয়িং বা ডিজাইনের কোনো ধরনের প্রয়োজন আছে বলে কমিটি মনে করে না।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের যথাযথ প্রক্রিয়ায় অনুমোদিত মূলধন ডিজাইন অনুযায়ী নির্মাণ সম্পন্ন করা উচিত। সরকারি সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে অযাচিতভাবে দ্বিতীয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় কার্যাদেশ দেয়া হয়; যা সরকারি ক্রয় পদ্ধতি নিয়মবহির্ভূত। এ ধরনের অনৈতিক কাজের জন্য সংশ্লিষ্টদের শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে।
স্বাধীনতা স্মারকের অসমাপ্ত কাজ কীভাবে সম্পন্ন করা হবে, তার সুষ্ঠু সমাধান মূল পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ও আর্কিটেক্ট মনোয়ার হাবিবই করতে পারবেন।
বর্তমানে আর্কিটেক্ট মঞ্জুর কাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন ওয়ার্কস কমিটির সদস্য হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমান উপাচার্যের মনোনীত আছেন।
এ সময় দ্বিতীয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিয়োগ পাওয়া মেসার্স একিউম্যান আর্কিটেক্ট অ্যান্ড প্ল্যানার্স লিমিটেড ভবন সংশোধিত ড্রইং বা ডিজাইন প্রণয়ন করে বর্তমান প্রকল্প পরিচালক উপাচার্যের কাছ থেকে অনুমোদন নিয়েছেন। এই সময়ে আর্কিটেক্ট মঞ্জুর কাদের পরিকল্পনা উন্নয়ন, ওয়ার্কস কমিটির সদস্য থাকা সত্ত্বেও এ রকম একটি অগ্রহণযোগ্য এবং ঝুঁকিপূর্ণ ড্রয়িং বা ডিজাইন অনুমোদিত হয়েছে। তাই তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে আর্কিটেক্ট মঞ্জুর কাদেরকে কমিটি থেকে অব্যাহতি দেয়া স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার স্বার্থে প্রয়োজন।
দুটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের দুটি ভবনের যথাক্রমে শেখ হাসিনা ছাত্রী হল ও ড. ওয়াজেদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের ড্রয়িং বা ডিজাইনের এরিয়া এক হলেও, আরডিপিপিতে দুটি ভবনের অতিরিক্ত এরিয়ার অনুকূলে অর্থ প্রাক্কলন করে প্রকল্প পরিচালক ও উপাচার্যের স্বাক্ষরসহ ইউজিসিতে পাঠানো হয়েছে। দুটি ভবনের এরিয়া এক থাকলেও অতিরিক্ত এরিয়া ও অতিরিক্ত প্রাক্কলন ব্যয়সহ আরডিপিপি প্রণয়ন করা নৈতিক বিচ্যুতি।
যেহেতু প্রথম পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ও আর্কিটেক্ট মনোয়ার হাবিবের ডিজাইনের ওপর তিনটি অবকাঠামো নির্মাণ চলমান, তাই তার এবং উক্ত পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা নিয়ে অবশিষ্ট অবকাঠামো নির্মাণ সম্পন্ন করা যেতে পারে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি অবকাঠামো নির্মাণের জন্য যে অবহেলা, দীর্ঘসূত্রতা, অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, তা বর্তমান প্রশাসনের অনৈতিকতা, অদক্ষতা এবং ব্যক্তিগত ইচ্ছা- অনিচ্ছার বহিঃপ্রকাশ। এতে সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ও শিক্ষা গবেষণার সুযোগ সৃষ্টির পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তিও চরমভাবে ভূলুণ্ঠিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাহী প্রধান এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্বে থাকার জন্য বর্তমান উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহকে এই দায় দায়িত্ব অবশ্যই বহন করা উচিত।
এসব অভিযোগের বিষয়ে তার বক্তব্য জানার জন্য একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ মোবাইল ফোন ধরেননি।
আরও পড়ুন:দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে ওয়েস্টিন পারনাস হোটেলে আজ থেকে ০৩(তিন) দিনব্যাপী (১৬-১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫) গ্লোবাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার কো-অপারেশন কনফারেন্স (জিআইসিসি)-২০২৫ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আজ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সেতু বিভাগের সচিব ও বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক জনাব মোহাম্মদ আবদুর রউফ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করেন। সম্মেলনে সেতু সচিব সেতু বিভাগের বিভিন্ন প্রকল্পের উপর প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন। সেতু সচিব প্রেজেন্টেশনে উল্লেখ করেন সেতু বিভাগের কয়েকটি প্রকল্পে কোরিয়ান ইডিসিএফ/ইডিপিএফ (EDCF/EDPF) অর্থানয়ের সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশের পরিবহন খাতে দক্ষিণ কোরিয়ার কাজ করার অনেক সুযোগ রয়েছে।
জিআইসিসি-২০২৫ সম্মেলনের লক্ষ্য কোরিয়ান নির্মাণ সংস্থাগুলোর জন্য আন্তর্জাতিক বাজারে সম্প্রসারণের সুযোগ তৈরি করা এবং বিভিন্ন দেশের প্রকল্প বাস্থবায়নকারীদের সাথে কৌশলগত সম্পর্ক স্থাপন করা। এটি মূলত একটি বিজনেস-টু-বিজনেস প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করে, যেখানে কোরিয়ান কোম্পানিগুলো বিদেশী সরকার, প্রজেক্ট ডেভেলপার এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারে। সম্মেলনে প্রায় ৫০০ জন অংশগ্রহণকারী উপস্থিত ছিলেন, যার মধ্যে ৩০টি দেশের মন্ত্রী ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা, আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা এবং কোরিয়ান শীর্ষস্থানীয় নির্মাণ সংস্থাগুলির কর্মকর্তারা রয়েছেন।
এই সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্যগুলো হলো: বিভিন্ন দেশের আসন্ন অবকাঠামো প্রজেক্ট সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ ও আদান-প্রদান, বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী, উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা, এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নির্বাহীদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন, নতুন প্রজেক্টে অংশগ্রহণের জন্য চুক্তি এবং সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর এবং কোরিয়ান উন্নত প্রযুক্তি যেমন স্মার্ট সিটি, হাই-স্পিড রেল, এবং স্মার্ট পোর্ট সিস্টেমের সাথে পরিচিতি করা।
এছাড়াও সম্মেলনের বাকী অংশে বিভিন্ন দেশের অবকাঠামো উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগ নিয়ে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের প্যানেল আলোচনা, বিভিন্ন দেশের প্রজেক্ট ব্রিফিং, ব্যক্তিগত বিজনেস মিটিং, কোরিয়ান শীর্ষস্থানীয় কোম্পানিগুলো তাদের নতুন প্রযুক্তি প্রদর্শন করবে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, সারা দেশে দেশীয় মাছের সংকট প্রকট হয়ে উঠছে। এই সংকট নিরসনে উন্মুক্ত জলাশয়ের কোন বিকল্প নাই। সরকার দেশের নদ-নদীতে মাছের অভয়ারণ্য তৈরি করতে কার্যক্রম গ্রহণ করছে।
উপদেষ্টা আজ সকালে কুড়িগ্রামে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা, জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান,নারী কৃষক এবং স্হানীয় এনজিও প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন। জেলা প্রশাসন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর আলোচনা সভার আয়োজন করে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, বন্যায় নদীগুলোতে পলি পরার কারণে নাব্যতা হ্রাস, পানি দূষণ, চায়না জাল ব্যবহার ও ইলেকট্রিক শর্ট দিয়ে মাছ কারণে দিনদিন মাছের পরিমাণ কমছে। জোরালো অভিযান চালিয়ে এসব অবৈধ মাছ ধরার যন্ত্রপাতি উদ্ধার করতে হবে। অভিযান চলমান রাখতে নদীগুলোতে স্পীড বোটের ব্যবহার করা হবে।
চরাঞ্চলের মানুষের জীবনমান প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন, যোগাযোগ ব্যবস্থার অপ্রতুলতার কারণে তারা সরকারি অনেক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এছাড়া তিনি প্রতিটি মন্ত্রণালয়কে এই অঞ্চলের মানুষের জন্য বিশেষ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের আহ্বান জানান।
খামারিদের উৎপাদিত দুধ সংরক্ষণ বিষয়ে প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, যথাযথ সংগ্রহ ও সংরক্ষণের অভাবে খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাই এই অঞ্চলে চিলিং সেন্টার স্থাপনের প্রকল্প গ্রহণ করা হবে।
জুলাই যোদ্ধাদের আত্মত্যাগ প্রসঙ্গে বলেন, জুলাই যোদ্ধাগণ অনেকে জীবন উৎসর্গ করেছেন আবার অনেকে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। তাদের এই ঋণ ভুলবার নয়। এজন্য তিনি সরকারি ও এনজিওর উদ্যোগে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে আহ্বান জানান।
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক সিফাত মেহনাজের সভাপতিত্বে আরো উপস্হিত ছিলেন সিভিল সার্জন ডা. স্বপন কুমার বিশ্বাস, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোক্তাদির খান, জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. হাবিবুর রহমান, কৃষি সম্প্রসারণের অতিরিক্ত উপপরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ রানাসহ জেলা প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
এরপর উপদেষ্টা কুড়িগ্রাম সদরের পাঁচগাছি ইউনিয়নের ছড়ারপাড় গ্রামে নারী কৃষকের বাড়ি পরিদর্শন করেন।
সরকার দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীকে প্রেস কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে মনোনীত করেছে। বৃহস্পতিবার তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপসচিব খাদিজা তাহের ববির সই করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘প্রেস কাউন্সিলের ৫ নম্বর ক্রমিকের প্রতিনিধি নিউএজ পত্রিকার সম্পাদক নুরুল কবীর পদত্যাগ করায় তার পরিবর্তে সংবাদপত্র ও সংবাদ সংস্থার সম্পাদক সমিতির প্রতিনিধি হিসেবে দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীকে প্রেস কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে মনোনয়ন প্রদান করা হলো।’
বর্তমান কাউন্সিলের অবশিষ্ট মেয়াদের জন্য এ মনোনয়ন কার্যকর থাকবে। জনস্বার্থে জারিকৃত এ প্রজ্ঞাপন অবিলম্বে কার্যকর হবে বলেও প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে।
প্রেস কাউন্সিলের বর্তমান চেয়ারম্যান বিচারপতি একেএম আব্দুল হাকিম, সচিব (উপসচিব) মো. আব্দুস সবুর।
এছাড়া ১২ জন সদস্য হচ্ছেন—১. বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন, ২. ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি মিস দৌলত আকতার মালা, ৩. ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. শহিদুল ইসলাম, ৪. ডেইলি স্টারের সম্পাদক ও প্রকাশক মাহফুজ আনাম, ৫. দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, ৬. দৈনিক বণিক বার্তার প্রকাশক ও সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ, ৭. দ্য ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ, ৮. দৈনিক পূর্বকোণের সম্পাদক ডা. রমিজ উদ্দিন চৌধুরী, ৯. নিউজপেপার্স ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (নোয়ার) উপদেষ্টা আখতার হোসেন খান, ১০. বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম, ১১. বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সচিব ড. মো. ফখরুল ইসলাম এবং ১২. বার কাউন্সিলের ভাইস-চেয়ারম্যান জয়নুল আবেদীন।
অন্তর্বর্তী সরকারের ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী মিয়া শাহবাজ শরিফের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। পাকিস্তানের ইসলামাবাদে পিএম হাউসে উভয়ের এ সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়।
বৃহস্পতিবার ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ধর্ম উপদেষ্টা ও তার প্রতিনিধিদলকে স্বাগত জানিয়ে পাকিস্তান প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক এবং সখ্যের বন্ধনে আবদ্ধ। এ সম্পর্ক আগামী দিনগুলোতে আরও জোরদার হবে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নিউইয়র্ক ও কায়রোতে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে অনুষ্ঠিত বৈঠকের কথা উল্লেখ করে দূরদর্শী নেতৃত্ব এবং দারিদ্র্য দূরীকরণে তার অবদানের প্রশংসা করেন। এছাড়া তিনি পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সম্পর্ককে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে প্রধান উপদেষ্টার আকাঙ্ক্ষাকে সাধুবাদ জানান।
এদিকে ধর্ম উপদেষ্টা বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের একটি পত্র পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন।
পাকিস্তান প্রধানমন্ত্রীকে লেখা এ পত্রে প্রধান উপদেষ্টা পাকিস্তানে নজিরবিহীন বন্যায় সে দেশের সরকার ও জনগণের প্রতি গভীর সহমর্মিতা ও আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং ভয়াবহ এ দুর্যোগে নিহতদের পরিবার ও ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।
এ পত্রে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, কঠিন এ সময়ে বাংলাদেশের জনগণ পাকিস্তানের ভ্রাতৃপ্রতিম জনগণের পাশে রয়েছে। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আপনার সুদক্ষ নেতৃত্বে পাকিস্তানের জনগণ তাদের অসাধারণ ধৈর্য ও সহনশীলতার মাধ্যমে এ চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করবে। প্রয়োজনে ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রমে বাংলাদেশ সর্বাত্মক সহযোগিতা ও সহায়তা প্রদানে প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।
সাক্ষাৎকালে ঢাকা ও করাচীর মধ্যে সরাসরি বিমান চলাচল দ্রুত পুনঃস্থাপনের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করা হয়। এছাড়া কৃষি, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, ধর্মতত্ত্ব ও চিকিৎসা বিষয়ে উভয়দেশের শিক্ষার্থী বিনিময়ে বৃত্তি প্রদানের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার, প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ, ধর্মবিষয়ক ও আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি মন্ত্রী সরদার ইউসুফ খান, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী আতা তারার, ইসলামাবাদে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. ইকবাল হোসেন খান, উপদেষ্টার একান্ত সচিব ছাদেক আহমদ ও শরীফ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের প্রভাষক মুফতি জাহিদ হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
পুলিশের একটি স্বাধীন তদন্ত সার্ভিস গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আজ বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সভায় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস সভাপতিত্ব করেন।
পরে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘উপদেষ্টা পরিষদ সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুলিশের একটি স্বাধীন তদন্ত সার্ভিস গঠন করা হবে, যাতে কোনো রাজনৈতিক বা অন্য কোনো প্রভাব ছাড়াই তদন্ত সম্পন্ন করা যায়।’ এর পাশাপাশি পুলিশের ভেতরে অভ্যন্তরীণ অভিযোগ যাচাইয়ের জন্য একটি কমিশন গঠনের বিষয়েও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও জানান, ‘এই দুই সিদ্ধান্ত দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য আইন মন্ত্রণালয় কাজ করবে। এ কাজে উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, আদিলুর রহমান খান এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বখশ চৌধুরী যুক্ত থাকবেন।’
সভায় স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করার বিষয়েও গুরুত্ব দেওয়া হয়। প্রেস সচিব বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা বারবার জোর দিয়েছেন যে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও ক্ষমতায়িত করতে হবে। ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন যেন নিজস্ব তহবিল সংগ্রহ ও স্বচ্ছভাবে পরিচালনা করতে পারে সে বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
স্বাস্থ্য খাত নিয়েও সভায় আলোচনা হয়। শফিকুল আলম জানান, ‘কিছু মেডিকেল কলেজে যোগ্য শিক্ষকের সংকট রয়েছে। তাই অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের পরামর্শক বা অন্যভাবে সম্পৃক্ত করে শিক্ষা কার্যক্রমের মান উন্নত করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
নেপালে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের বিষয়েও সভায় আলোকপাত করা হয়। প্রেস সচিব বলেন, ‘নেপালে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা ভালো আছেন, দূতাবাস তাদের দেখভাল করছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর বিশেষ ফ্লাইটে জাতীয় ফুটবল দলকে দেশে আনার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।’
এ বৈঠক প্রসঙ্গে শফিকুল আলম আরও বলেন, ‘আজকের বৈঠকের প্রতিটি সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের অর্থনীতি, শাসনব্যবস্থা ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমাদের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করবে।’
ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।
ক্যাডার কর্মকর্তাদের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণের মেয়াদ ছয় মাস থেকে কমিয়ে চার মাস করা হয়েছে। এর মধ্যে তিন মাস প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে এবং এক মাস মাঠপর্যায়ে ওরিয়েন্টেশন ও গ্রাম সংযুক্তি অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
আজ বুধবার প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে জাতীয় প্রশিক্ষণ কাউন্সিলের নবম সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সভায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোখলেস উর রহমান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান উপস্থিত ছিলেন।
সভায় আরও সিদ্ধান্ত হয়, কর্মকর্তাদের মাস্টার্স ও পিএইচডি কোর্সে ভর্তির সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৪৫ থেকে বাড়িয়ে ৪৭ বছর করা হবে। পিএইচডি কোর্সে অধ্যয়নকালে প্রতি বছর তত্ত্বাবধায়কের অগ্রগতিমূলক প্রত্যয়ন মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে হবে, অন্যথায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বেতন বন্ধ রাখা হবে।
সভায় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘সরকারি যত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আছে সেগুলোর ওপর মূল্যায়ন করতে হবে। কী ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, প্রশিক্ষণের ধরন-মান ইত্যাদির মানদণ্ড নির্ধারণ করে ক্যাটাগরিভিত্তিক প্রতিটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রকে র্যাংকিং করতে হবে এবং নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘একটি স্বাধীন ইউনিট গঠন করতে হবে। তারা সমস্ত গবেষণা প্রতিষ্ঠানের ওপর পদ্ধতিগতভাবে, স্বাধীনভাবে মূল্যায়ন করবে। গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর সামগ্রিক দর্শন জানতে হবে। সেগুলো সঠিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে কি না দেখতে হবে। সরকারি কর্মকর্তারা যারা বিদেশ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছেন তাদের তথ্য সেখানে থাকবে।’
সভায় সঞ্জীবনী প্রশিক্ষণের নাম পরিবর্তন করে ‘দক্ষতা নবায়ন প্রশিক্ষণ’ করার সিদ্ধান্ত হয়। এ প্রশিক্ষণ হালনাগাদকৃত কারিক্যুলামে মাঠপর্যায়ে সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে আয়োজন করা হবে। এছাড়া উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে কর্মকর্তারা আংশিক বৃত্তিপ্রাপ্ত হলেও প্রেষণ অনুমোদন করা যাবে।
কর্মচারীদের সততা ও নৈতিকতা বিকাশ এবং দুর্নীতি বিরোধী মনোভাব তৈরিতে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কোর্সে সদ্গুণ, নৈতিকতা, আচরণবিজ্ঞান ও আচরণবিধি অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়। পাশাপাশি প্রশিক্ষণ ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলোর সার্বিক মূল্যায়ন এবং প্রশিক্ষণ বিষয়ক সিদ্ধান্ত গ্রহণের লক্ষ্যে গবেষণা, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন কার্যক্রম পরিচালনারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সভায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদকে সভাপতি করে একটি নির্বাহী কমিটি (ইসিএনটিসি) গঠন করা হয়।
জাতীয় লেখক ফোরাম আয়োজিত সাপ্তাহিক সাহিত্য আড্ডা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাজধানীর ধানমন্ডিতে হওয়া এ সাহিত্য আড্ডায় উপস্থিত ছিলেন সংগঠেনর সভাপতি ড. দেওয়ান আযাদ রহমান, মহাসচিব কবি-কথাসাহিত্যিক জাহাঙ্গীর হোসাইন এবং উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য মো. আবদুল মান্নানসহ বাংলাদেশের খ্যাতিমান লেখকরা। অনুষ্ঠানটি একটি সাধারণ প্রাণবন্ত আড্ডার মধ্যেই শুরু হয়। অনুষ্ঠানটি ৩টি পর্বে সাজানো হয়েছে। প্রতি পর্বে চারজন কবিকে মঞ্চে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তারা তাদের গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য এবং কবিতা পাঠ করেছেন। পুরো অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেছেন কবি-কথা সাহিত্যিক জাহাঙ্গীর হোসাইন।
মন্তব্য