রাজধানীর কূটনৈতিক পাড়া হিসেবে পরিচিত গুলশাল-বনানী সাত বছর আগে ভিক্ষুকমুক্ত এলাকা ঘোষণা করা হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। অভিজাত এই এলাকায় ঢাকার অন্যান্য এলাকার মতোই ভিক্ষুকদের অবাধ বিচরণ এখন।
সবচেয়ে বেশি ভিক্ষুক চোখে পড়ে গুলশান-১ মোড় থেকে গুলশান-২ মোড় সড়কে। সিগন্যালে গাড়ি থামলেই তারা হাজির হন টাকার জন্য। এতে অনেকে বিরক্ত হন; অনেকে তাদের টাকা দিয়ে চলে যান।
২০১৩ সালে মন্ত্রিপরিষদের অনুমতি নিয়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় রাজধানীর ভিভিআইপি এলাকা বিমানবন্দর, সোনারগাঁও হোটেল, হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টাল, হোটেল র্যাডিসন, বেইলি রোড, মিন্টো রোড এবং কূটনৈতিক এলাকা ভিক্ষুকমুক্ত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। এ অনুসারে ঘোষণাও দেয়া হয়।
পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সমাজসেবা অধিদপ্তরের নেতৃত্বে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) সমন্বয়ে একটি কমিটি করা হয়।
পুলিশ বলছে, এই কমিটির কার্যক্রমের অংশ হিসেবে রাজধানীর নির্দিষ্ট এসব এলাকা ভিক্ষুকমুক্ত করতে নিয়মিত বিশেষ অভিযান চালানো হয়।
তবে নিউজবাংলার অনুসন্ধানে জানা গেছে, নিয়মিত এসব অভিযান চালানো হয় না। মাঝেমধ্যে অভিযান চলে। ভিক্ষুকদের ‘দৌড়ানি’ দেয়া হয়। এতেও কাজ না হলে আটক করে আদালতে পাঠানো হয়। কিন্তু তারা জামিনে মুক্ত হয়ে আবারও রাজপথে নামেন।
ঢাকার নবাবগঞ্জের রিপন শেখ ভিক্ষা করেন গুলশান-২-এর মোড়ে। তিনি দৃষ্টিহীন। থাকেন কড়াইল বস্তিতে স্ত্রী ও চার সন্তান নিয়ে।
ভিক্ষুকমুক্ত এলাকায় ভিক্ষা করার কারণ জানতে চাইলে রিপন শেখ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পুলিশ চইলা যাইতে কইলে চইলা যাই। মাঝে মাঝে অভিযান চললে ধইরা নিয়া যায়। গুলশান এলাকায় আমি ৩৫ বচ্ছর ধইরা আছি।
‘সরকার তো সবকিছুই মুক্ত কইরা দেয়। পলিথিনমুক্ত, মাদকমুক্ত, সন্ত্রাসমুক্ত, ভ্যাজালমুক্ত। তয় কোনডা মুক্ত হইছে আমারে কন দেহি? মুক্ত হইতে গিয়া আরও যুক্ত হইয়া যায়।’
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘সবাই খালি কইতে পারে। কইয়া ১০-২০ ট্যাহা ধরাইয়া দিয়া চইলা যায়। এমন কিছু কইরা দেক, যা দিয়া বউ-পোলাপাইন লইয়া খাইতে পারি।
‘সরকারি ভাতা পাই তিন মাস পর পর। তিন মাস পরে ২২৫০ টাকা দেয় সরকারে। অহন আপনে কন বউ-পোলাপাইন নিয়া এই ২২৫০ ট্যাহা দিয়া তিন মাস কেমনে বাঁচুম?’
গুলশানের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন খায়রুল ইসলাম।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘এই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় সিগন্যালে সিগন্যালে গাড়ি থামলেই জানালায় এসে ভিক্ষা চায়। সবাইকে দিই না। শারীরিক কন্ডিশন দেখে টাকা দিই। তবে এই এলাকায় ভিক্ষা করলে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। কারণ, এই এলাকার আশেপাশে বিভিন্ন দেশের দূতাবাস। তা ছাড়া ভিআইপি লোকেরা থাকেন এই এলাকায়।’
বনানী মোড়ে সাইনবোর্ডে লেখা আছে ভিক্ষুকমুক্ত এলাকা। রোববার সেই সাইনবোর্ডের পাশে ভিক্ষা করতে দেখা যায় ছয়-সাতজনকে। সিগন্যালে গাড়ি থামলেই গাড়ির জানালায় গিয়ে হাত পাতছিলেন তারা।
তাদের একজন জোহরা খাতুনের কাছে জানতে চাওয়া হয় নিষিদ্ধ এলাকায় ভিক্ষা করছেন কেন?
জবাবে নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘পুলিশ মাজে-মদ্দি দৌড়ানি দেয়। আমারে একলা কইতাছেন ক্যা? দেহেন না আরও কত মাইনসে ভিক্ষা করছে। আমরা তো চুরি-ডাহাতি করি না। ভিক্ষা কইরা খাই।’
বৃদ্ধ আব্বাস আলী গুলশান-১ মোড়ে ভিক্ষা করেন। তিনিও নিউজবাংলাকে পুলিশের অভিযানের কথা জানান।
বলেন, ‘পাঁচ থেইকা সাত বচ্ছর এই এলাকায় ভিক্ষা করি। মাঝে মাঝে ধইরা লইয়া যায়। পরে জেলখানা থেইকা ছাড়ে। ধইরা লইয়া গেলে আর কি করা, খাইতে তো হইবো।’
গুলশান এলাকায় এত ভিক্ষুক থাকার কারণ হিসেবে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কথা বলছে পুলিশ।
গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সমাজসেবা অধিদপ্তরের সঙ্গে এই বিষয়টা নিয়ে আমরা কাজ করি। কোভিডের কারণে একটু স্লো কাজ হচ্ছে। ভিক্ষুকদের রাখার সমস্যা হচ্ছে। কয়েক দিন আগেও ভিক্ষুকদের আমরা আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠিয়েছি। এই অভিযান চলমান আছে।’
অভিজাত এই এলাকায় এত ভিক্ষুক থাকার কারণ জানতে কথা হয় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান সমাজকল্যাণ ও বস্তি উন্নয়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মামুন-উল-হাসানের সঙ্গে।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমাদের অভিযান চলে নিয়মিতই। তবে কোভিডের কারণে ভিক্ষুক একটু বেড়ে গেছে। ভাইরাসের কারণে তাদের আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়া হয় নাই।
‘ভিক্ষুক বেড়ে যাওয়ার বিষয়টা আমরা সমাজসেবা অধিদপ্তরকে অবহিত করেছি। তারা সম্ভবত আগামী মাস থেকে কার্যক্রম শুরু করবে।’
এই প্রকল্পে অনেকেই জড়িত জানিয়ে মোহাম্মদ মামুন-উল-হাসান বলেন, ‘আমরা যে ভিক্ষুক ধরব, ধরে রাখব কোথায়? আমরা তাদের ধরে সমাজসেবা অধিদপ্তরের কাছে দিই। তারা তাদের আশ্রয়কেন্দ্রে রাখে। এই আশ্রয়কেন্দ্র যখন পূর্ণ হয়ে যায় তখন ভিক্ষুকদের রাখার জায়গা খুঁজে পাওয়া যায় না।’
ঢাকা উত্তরের মতো দক্ষিণ সিটিরও ভিক্ষুকমুক্ত এলাকায় ভিক্ষুকদের দেখা যায়।
এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান সমাজকল্যাণ ও বস্তি উন্নয়ন কর্মকর্তা আকন্দ মোহাম্মদ ফয়সাল উদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি নতুন আসছি তো, তাই ভিক্ষুকদের ভিআইপি এলাকায় ভিক্ষার বিষয়টা সঠিক জানি না। আমি কথা বলে দেখব। আমি জেনে আপনাকে জানাব।’
দক্ষিণ সিটিরও কোথাও কোথাও ভিক্ষুকমুক্ত এলাকার সাইনবোর্ড নাই, আবার থাকলেও লেখা উঠে গেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি কথা বলে সব ঠিক করব।’
চন্দ্রিমা উদ্যান থেকে বিজয় সরণি মোড়ে ঢুকতেই ভিক্ষুকমুক্ত এলাকার সাইনবোর্ড আছে। তবে লেখা অনেকটা মুছে গেছে। ফার্মগেট থেকে বিজয় সরণির রাস্তার মোড়ের সাইনবোর্ডে লেখা স্পষ্টই আছে।
তারপরও বিজয় সরণিতে পাঁচ-ছয়জনকে নিয়মিতই ভিক্ষা করতে দেখা যায়।
ভিক্ষুকমুক্ত এলাকায় ভিক্ষা করছে, আপনারা কিছু বলেন না- এমন প্রশ্নে সেখানে কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশ মো. মাজেদুল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তাদের একদিক দিয়ে তাড়িয়ে দিলে তারা আরেক দিক দিয়ে চলে আসে। তা ছাড়া আমরা গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করব, না ভিক্ষুক নিয়ন্ত্রণ করব? মাঝে মাঝে থানার পুলিশ এসে তাদের তাড়িয়ে দেয়।’
এ প্রসঙ্গে সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ভিক্ষুকদের নিয়ে আমাদের একটা প্রোগ্রামই ছিল। জেলায় জেলায় ফান্ড দেয়া আছে। ঢাকা থেকে সব ভিক্ষুককে তাদের বাড়িতে পাঠানো হয়েছিল। তাদের বাড়িতে ঘরও করে দেয়া হয়। কিন্তু তারা আবার ঢাকায় চলে আসে।
‘আপনারা ঢাকায় এখন যে ভিক্ষুক দেখেন তারা প্রফেশনাল ভিক্ষুক। করোনার সময়ে অনেকে বাড়ি থেকে এসে ভিক্ষা করছে। তারপরও আমরা তাদের খাবার দিয়েছি। বস্তিতেও খাবার দেয়া হয়েছে সে সময়।’
ভিক্ষুকমুক্ত করার চেষ্টা চলছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী আশরাফ বলেন, ‘তবে ভিক্ষুকমুক্ত করাটা খুব কঠিন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভিক্ষুকদের প্রতিষ্ঠিত করা, তাদের এলাকায় পাঠানোর, বাড়ি করে দেয়া ও কিছু টাকা দেয়ার প্রোগ্রামই ছিল। এই প্রোগ্রাম চলমান। মুজিববর্ষের যে ঘর দেয়া হচ্ছে সেখানে ভিক্ষুকরাও পাচ্ছে।’
ভিক্ষুকদের ভাষ্যমতে, তাদের তিন মাস পর পর ২২৫০ টাকা দেয়া হয়। এই টাকায় তারা কীভাবে চলবে?
এমন প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আপনি তাদের জিজ্ঞাসা করবেন, তোমাদের আগে যে টাকা দেয়া হয়েছে, তোমাদের বাড়িতে পাঠানো হয়েছে- তারপরেও তো তোমরা বাড়ি ছিলা না। ২০১৩ সালে আইন পাসের পর তাদের যেখানে যেখানে বাড়ি সেখানে ঘরও করে দেয়া হয়েছিল।’
তিনি জানান, গ্রাম ও ছোট শহরে ভিক্ষুক পাওয়া যায় না। ভিক্ষুক পাওয়া যায় ঢাকা শহরে। তাও মাঝে কম ছিল, এখন কিছুটা বাড়ছে।
তাদের নিয়ে কি নতুন কোনো প্রকল্প হবে, জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘প্রকল্প তো চলমান। আমরা আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতেও তাদের পাঠিয়েছি। সেখানে দেখা যায়, কিছুদিন পরে কোনো আত্মীয় এসে তাদের নিয়ে যায়। নিয়ে যাওয়ার কিছুদিন পরেই তারা আবার ঢাকা চলে আসে। এটা তাদের ব্যবসা।’
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। ফাইল ছবি
আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনে সরকারের প্রস্তুতি রয়েছে বলে পুনরায় জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
তিনি বলেন, “আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনে আমাদের কোনো সমস্যা হবে না। সরকারের সার্বিক প্রস্তুতি রয়েছে।”
আজ সোমবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক কোর কমিটির সভা শেষে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নির্বাচনের সফল আয়োজনের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা, বিশেষ করে গণমাধ্যমের সহযোগিতা কামনা করেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বডিওর্ন ক্যামেরা কেনা হবে এবং এ বিষয়ে সরকার ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে।
তিনি আরও বলেন, বিগত তিনটি সাধারণ নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারীদের আগামী সংসদ নির্বাচনে দায়িত্ব থেকে বিরত রাখা হবে। সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডসহ সাম্প্রতিক কিছু বড় অগ্নিকাণ্ডের পেছনে নাশকতা আছে কিনা- এমন প্রশ্নে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, এসব ঘটনা তদন্তের জন্য একাধিক কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর আগুন লাগার প্রকৃত কারণ জানা যাবে।
তিনি বলেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশি মিশনগুলোতে ই-পাসপোর্ট সেবা চালু করা হবে।
প্রবাসীদের জন্য পাসপোর্ট ফি কমানো এবং বিমান ও বিমানবন্দরে সর্বোত্তম সেবা প্রদানের বিষয়টি সরকার বিবেচনা করছে বলেও তিনি জানান। সূত্র: বাসস
নির্বাচন কমিশনার ইসি মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার। ফাইল ছবি
আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশগ্রহণ করতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন কমিশনার ইসি মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার।
তিনি বলেন, ‘আইনগতভাবে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। স্থগিত দল হওয়া মানে তাদের যাবতীয় কার্যক্রম স্থগিত। তাই আগামী নির্বাচনে তারা অংশগ্রহণ করতে পারবে না।’
তিনি আজ রোববার সকালে সিলেটে সাংবাদিকদের এই কথা বলেন।
নির্বাচন কমিশনার জেলা পুলিশ লাইনে নির্বাচনী দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনে পুলিশের দক্ষতা বৃদ্ধিতে আয়োজিত প্রশিক্ষণের উদ্বোধন করেন।
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)’র প্রতীক সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রতীক নির্ধারণ সংবিধান ও নির্বাচনী বিধিমালার আওতায় করা হয়। শাপলা প্রতীক সেই তালিকায় নেই।
তাই তা বরাদ্দ দেওয়ার সুযোগও নেই।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে না হওয়ার মতো কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। রমজানের আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’
নির্বাচনকে সামনে রেখে সব বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কোনো চ্যালেঞ্জ হিসেবে থাকবে না বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
ইসি আনোয়ারুল বলেন, ‘অতীতের মতো বিতর্কিত নির্বাচন আর হবে না। সবার সহযোগিতায় একটি সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিতর্কিত বা প্রশ্নবিদ্ধ কোনো কর্মকর্তা যাতে নির্বাচনী দায়িত্বে না থাকেন, সে বিষয়ে নির্বাচন কমিশন কঠোর অবস্থানে রয়েছে।’ সূত্র: বাসস
ছবি: বাসস
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান পাটওয়ারীকে।
অন্য সদস্যরা হলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রথম সচিব মুঃ রইচ উদ্দিন খান ও মোঃ তারেক হাসান এবং ঢাকা কাস্টম হাউসের যুগ্ম কমিশনার মুহাম্মদ কামরুল হাসান। কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের উপসচিব পঙ্কজ বড়ুয়া।
কমিটি দ্রুততম সময়ের মধ্যে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে সরকারের কাছে প্রতিবেদন দেবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডও বিশেষ ব্যবস্থায় ঢাকা কাস্টম হাউসে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম অব্যাহত রাখার উদ্যোগ নিয়েছে। সূত্র: বাসস
গত ১৬ অক্টোবর, ২০২৫ তারিখে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড SRO No-404-Law/2025 এর মাধ্যমে বাংলা ভাষায় প্রণীত আয়কর আইন, ২০২৩ এর Authentic English Text সরকারি গেজেট আকারে প্রকাশ করেছে।
আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪ বাতিল করে ২০২৩ সালে বাংলা আয়কর আইন, ২০২৩ প্রণয়ন করার পর হতেই বিদেশি বিনিয়োগকারীগণ সরকারি গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে আয়কর আইনের Authentic English Text প্রকাশের দাবি জানাচ্ছিলেন।
আয়কর আইনের Authentic English Text না থাকায় বিদেশী বিনিয়োগকারীগণ আইনের সঠিক ব্যাখ্যা ও অনুশীলনের বিষয়ে সংশয়ের মধ্যে থাকতেন এবং বিভিন্ন আইনি জটিলতার সম্মুখীন হতেন।
আয়কর আইনের Authentic English Text সরকারী গেজেটে প্রকাশ হবার ফলে দেশী-বিদেশি বিনিয়োগকারীগণ আয়কর আইন সম্পর্কে স্বচ্ছ ব্যাখ্যা পাবেন বিধায় করদাতাগণের আস্থা অধিকতর বৃদ্ধি পাবে এবং আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে দ্ব্যর্থবোধকতা দূর করে স্বচ্ছতা ও সঠিকতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
কাস্টমস আইন, ২০২৩ এবং মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ এর Authentic English Text সরকারি গেজেটে প্রকাশের প্রক্রিয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। অচিরেই এই দুটি আইনের Authentic English Text সরকারি গেজেট আকারে প্রকাশের মাধ্যমে দেশি-বিদেশী বিনিয়োগকারীগনের দীর্ঘদিনের অপেক্ষার অবসান ঘটবে মর্মে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আশা করছে।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের আওতাধীন পদ্মা সেতুতে আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর ক্যাশলেস, টোল কালেক্টর ব্যতীত ননস্টপ ইলেকট্রনিক টোল কালেকশন (ETC) সিস্টেম চালু করা হয়েছে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে দেশের টোল পরিশোধ প্রক্রিয়া আরও দ্রুত, স্বচ্ছ ও ডিজিটাল ব্যবস্থার আওতায় এসেছে।
বর্তমানে বিকাশ, ট্রাস্ট ব্যাংকের TAP অ্যাপ এবং মিডল্যান্ড ব্যাংকের অ্যাপ এর মাধ্যমে পদ্মা সেতুর টোল পরিশোধ করা যাচ্ছে। ব্যবহারকারীরা বিকাশ অ্যাপে গিয়ে “টোল” অপশনের অধীনে “মোটরযান রেজিস্ট্রেশন করুন” এ প্রবেশ করে গাড়ির নম্বর ও চেসিস নম্বরের শেষ ৪ (চার) ডিজিট প্রদান করে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করতে পারবেন। সফল রেজিস্ট্রেশনের পর ফিরতি এসএমএসে একটি Ekpass ID প্রেরণ করা হবে।
এই Ekpass ID ব্যবহার করে বিকাশ অ্যাপের “Pay Bill” অপশনের “D-Toll Top-Up” সেবার মাধ্যমে রিচার্জ করতে হবে। এরপর পদ্মা সেতুর মাওয়া টোল প্লাজার নিকটস্থ রেজিস্ট্রেশন বুথে বিআরটিএ অনুমোদিত RFID ট্যাগ প্রথমবারের মতো যাচাই করে রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। একবার রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হলে, যানবাহন কমপক্ষে ৩০ কিলোমিটার/ঘণ্টা গতিতে ETC লেন ব্যবহার করে নির্বিঘ্নে পারাপার হতে পারবে।
১৮ অক্টোবর সেতু বিভাগের সচিব এবং বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক জনাব মোহাম্মদ আবদুর রউফ পদ্মা সেতুর ইটিসি বুথ পরিদর্শন করেন এবং ইটিসি সেবা ব্যবহার করে পদ্মা সেতু পারাপার করেন।
গত ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে ট্রাস্ট ব্যাংকের TAP অ্যাপের মাধ্যমে পদ্মা সেতুর ETC সিস্টেমের লাইভ পাইলটিং কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর থেকে ধীরে ধীরে এই সেবার পরিসর বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইতোমধ্যে ETC সিস্টেমের মাধ্যমে মোট ১,৮১৪টি যানবাহন পারাপার হয়েছে এবং মোট ৩৪,৯১,৭০০ টাকা টোল আদায় সম্পন্ন হয়েছে।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা জনাব মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান মহোদয়ের বিশেষ নির্দেশনা ও দিকনির্দেশনায় পদ্মা সেতুতে এই ETC সিস্টেম বাস্তবায়িত হয়েছে। এটি দেশের টোল ব্যবস্থাপনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক, যা সময়, জ্বালানি ও মানবসম্পদের অপচয় হ্রাসে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।
ভবিষ্যতে আরও বিভিন্ন ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাপ এই সেবার আওতায় যুক্ত হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। এ লক্ষ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ-এর a2i (এটুআই) কার্যক্রম পরিচালনা করছে এবং নতুন ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস প্রোভাইডারদের সাথে সংযুক্তির কাজ অব্যাহত রয়েছে।
এই টোল কালেক্টর ব্যতীত নন স্টপ ইলেকট্রনিক টোল কালেকশন সিস্টেমের মাধ্যমে পদ্মা সেতু ব্যবহারকারীরা দ্রুত, নিরাপদ ও স্বচ্ছভাবে টোল পরিশোধ করতে পারবেন—যা বাংলাদেশের ডিজিটাল রূপান্তরের যাত্রায় একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ-এর মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞ এবং ২০২১ সালের মার্চ মাসে বিক্ষোভ কর্মসূচি দমনে পরিচালিত হত্যাকাণ্ডে শাহাদাতবরণকারী শহিদ পরিবারের সদস্যদের মাঝে চেক বিতরণ অনুষ্ঠান ২০২৫ আজ ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। স্থানীয় সরকার বিভাগ কর্তৃক আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা জনাব আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া প্রধান অতিথি হিসেবে এবং ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা ডা. আ ফ ম খালিদ হোসেন বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ-এর মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞে শহিদ ৫৮ টি পরিবার এবং ২০২১ সালের মার্চ মাসে বিক্ষোভ কর্মসূচি দমনে পরিচালিত হত্যাকাণ্ডে শহিদ ১৯টি পরিবারের সদস্যদের মাঝে পরিবার প্রতি ১০ লক্ষ টাকা করে, মোট ৭ কোটি ৭০ লক্ষ টাকার চেক প্রদান করা হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা জনাব আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, "শহীদদের রক্ত কখনো বৃথা যায় না। ঐতিহাসিক শাপলা চত্বর এবং মোদি বিরোধী আন্দোলনে শহীদদের আজকের এই স্বীকৃতি তারই প্রমাণ।" শহীদ পরিবারদেরকে স্বীকৃতি দিতে পেরে সরকার গর্বিত উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন ইতিহাস থেকে যেনো কেউ ঐতিহাসিক শাপলা চত্বরের শহীদদের নাম মুছতে না পারে, এজন্য শাপলা চত্বরেই খোদাই করে লেখা হবে শহীদদের নাম।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ধর্ম বিষয়ক উপদেষ্টা ডা. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন,"শাপলা চত্বর এবং মোদি বিরোধী আন্দোলনে শহিদদের আর্থিক সহায়তা প্রদান স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের এক ঐতিহাসিক উদ্যোগ।" এই উদ্যোগের মাধ্যমে দুই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার স্বীকৃতি দেওয়ার প্রক্রিয়ার সূচনা হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
২০১৩ সালের শাপলা চত্বরের হত্যাযজ্ঞ এবং ২০২১ সালের মোদি বিরোধী বিক্ষোভ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডে শাহাদতবরণকারী শহিদ পরিবারের সদস্যদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদকে আন্তরিক সাধুবাদ জানিয়ে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির মাওলানা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী বলেন, "স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার এই মহতী উদ্যোগে সারা বাংলার আলেম সমাজ সম্মানিত হয়েছে। "
স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব জনাব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তৃতা করেন জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, এবি পার্টির চেয়ারম্যান জনাব মজিবুর রহমান ভূঁইয়া মঞ্জু, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি জনাব নুরুল হক নুর, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা সাজিদুর রহমান এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক জনাব মোঃ শাহজাহান মিয়া।
ইইউ রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার । ফাইল ছবি
‘জুলাই সনদ’ স্বাক্ষরকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ঐক্য ও সংস্কারের পথে বড় ধরনের অগ্রগতি হিসেবে অভিহিত করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার।
তিনি আরও বলেন, এটি ২০২৬ সালের নির্বাচনের প্রস্তুতিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে দিয়েছে।
শুক্রবার ফেসবুক পোস্টে মিলার লেখেন, ‘জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পেরে আমি আনন্দিত। এই দলিল মৌলিক সংস্কার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গড়ে ওঠা ব্যাপক ঐকমত্যের প্রতিফলন।’
ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক পালাবদলের এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। ২০২৬ সালের নির্বাচনের পথে দেশটি ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যাচ্ছে এটি তারই প্রমাণ।
‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ মোট ২৫টি রাজনৈতিক দল যোগ দেয়।
অনুষ্ঠানে মিলারের উপস্থিতি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা ও শাসনব্যবস্থা সংস্কারে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহযোগীতা অব্যাহত রাখার ইঙ্গিত বহন করে।
সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও প্রাতিষ্ঠানিক জবাবদিহিতা বাড়াতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করছে।
সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশে অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিতের পক্ষে তাদের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে।
এ লক্ষ্যে ইইউ কারিগরি সহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি প্রয়োজনে নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল পাঠানোর প্রস্তাবও দিয়েছে। এসব উদ্যোগ গণতান্ত্রিক চর্চা ও টেকসই উন্নয়নের প্রতি ইইউর প্রতিশ্রুতির অংশ। সূত্র: বাসস
মন্তব্য