গোপালগঞ্জে ৭৬ কেজি বোমা পুঁতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার যে চেষ্টা হয়েছিল, সেই বোমাটি খুঁজে পাওয়া যায় যার কারণে, তিনি একজন সাধারণ চা বিক্রেতা।
২০০০ সালের ২০ জুলাই গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমাবেশস্থলের পাশে ৭৬ কেজি ওজনের বোমা পুঁতে রাখা হয়। ৪০ কেজি ওজনের আরও একটি বোমা পোঁতা হয় হয় তখন।
লুৎফর রহমান মহাবিদ্যালয়ের উত্তর পাশে হেলিপ্যাডের কাছে পোঁতা হয় বড় বোমাটি। জনসভায় যোগ দিতে হেলিকপ্টারে করে আসা বঙ্গবন্ধু কন্যার নামার কথা ছিল সেখানে। আর ছোট বোমাটি পোতা হয় জনসভাস্থলে।
ঘটনার আগের সকালে চায়ের দোকানি বদিউজ্জামান সরদার ঘটনাক্রমে বোমার তারটি খুঁজে পান। এর সূত্র ধরেই এই বোমাটি এবং পরে আরও একটি বোমা পাওয়া যায়।
বোমাটি যখন সেনাবাহিনীর বিশেষজ্ঞ দল খুঁজে যায়, তখন তারা এর শক্তি সম্পর্কে বুঝতে পারে। এটি বিস্ফোরিত হলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে, এই আশঙ্কায় দুই কিলোমিটারের মতো এলাকা থেকে সরানো হয় জনসাধারণকে।
বাবা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার ছয় বছর পর ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনা দেশে ফেরার পর এখন পর্যন্ত ১৯ বার হত্যাচেষ্টার অভিযোগ করছে তার দল। এসব ঘটনায় অন্তত ১৩টি মামলার তথ্য পাওয়া যায়। এর মধ্যে রায় হয়েছে ছয়টির। সাতটি এখনও বিচারাধীন।
আর যে ছয়টি মামলায় রায় হয়েছে, তার মধ্যে কেবল কোটালীপাড়ায় বোমা হামলা মামলার নিষ্পত্তি হলো হাইকোর্টে। এখন বাকি আপিলের মীমাংসা।
এই মামলায় ১০ জনের প্রাণদণ্ডের আদেশ এসেছিল বিচারিক আদালত থেকে। হাইকোর্ট রায় বহাল রাখার দিন সেই দোকানের পাশে বসে বদি স্মৃতিচারণ করেন নিউজবাংলার কাছে।
তিনি বলেন, ‘সকালবেলা ফজরের নামাজের পড়ে আমি দুকান খলি। দুকান খুইলা মালামাল বাইর কইরা কলসি নিয়া পানি আনতে যাই।
‘আমার দুকানের দক্ষিণখানে আমার ঘাট আছিল। তিনখান গাছ দিয়া একটা ঘাট আছিল। সেই ঘাটে পানি আনতে গেলে একটা তার দেখতে পাই।
‘তারটি ধরলে দেখা গেল, তিনটা গাছের নিচ দিয়া নিছে তারটা। একটা মাথা গেছে দক্ষিণ দিয়া, এক মাথা গেছে উত্তর দিকে।
‘দক্ষিণ সাইডের অংশডা টাইনা আমি তার গুছাইয়া ঘাটের পারে রাখলাম। উত্তর মাথার দিকে দেখলাম দোকানের পিছন দিয়া রাস্তার দিকে ওপরে উঠছে।
‘পরবর্তীতে আমি ওইডা থুইয়া দোকানে পানি নিয়া চইলা আইলাম কলসি নিয়া।’
এরপর কোটালীপাড়া পৌরসভার মেয়র কামাল হোসেন ঘটনাস্থলে যান।
শেখ হাসিনার হেলিকপ্টার অবতরণের জন্য যে হেলিপ্যাড তৈরি করা হচ্ছিল, সেখান থেকে জনসভাস্থলে যেতে রাস্তার কাজ তদারক করছিলেন তিনি।
বদিউজ্জামান বলেন, ‘মেয়র মহোদয় আইলেন, কামাল সাব, তারে দেহাইলাম।…সে আমারে বলল, ভাডি (ভাই) এইডা থাকুক, কেউ যেন না ধরে। আমি পার্টি অফিসে যাইয়া থানায় ফোন করব আনে।’
এর কিছুক্ষণ পরে পুলিশ এসে বদিউজ্জামানের দোকান বন্ধ করতে বলে।
তিনি বলেন, ‘থানার থেইক্যা যে দারোগা সাব আসল, দুইজন লোক নিয়া, তার ধইরা টানাটানি করল। তার ছিইড়া গেল। দক্ষিণ দিকের যে অংশডা, ওই অংশডা টানাটানি করলে আর আসে না।
‘একটা গোজার পেচাইয়া দক্ষিণ মাথাত যাইয়া একটা তাল গাছের গোড়া পানির মইদ্যে ডুবাইয়া রাখছিল। পরে তারটা উটাইয়া আমার দোকানে থুইল।
‘আমারে কইল, ‘‘তুমার দোকানে ইয়া থাক, দোকান খোলার দরকার নাই। বেচাকেনার দরকার নাই।‘”
বদিউজ্জামান বলেন, ‘পুলিশ পিছন দিয়া খুঁজতে খুঁজতে যেই রোডের দিকে ওপরে উঠল, দেখল একটা পলিথিন। তহন লোকজন সরাইয়া দিয়া পুলিশ চতুর্দিকে ইয়ে করল।’
পরে কোটালীপাড়া থানা পুলিশ সন্দেহজনক ঘটনাটি জানায় সদরদপ্তরে। সেখান থেকে জানানো হয় সরকারকে। আর সেনাবাহিনীর বোমা নিষ্ক্রিয় দল যায় ঘটনাস্থলে।
বদিউজ্জামান বলেন, ‘রাত্রেবেলা আর্মির একটা টিম আসল। তারা আইসা ই-টি করল, উঠাইল।
‘যহনই আর্মি উঠাইতে গেল, তহন মিটার দিয়া মাপ দিছে, যেডুকুই আসল, বেশি উইঠা গেল। তহন আর্মি ভয় পাইয়া গেল। অত বড় জিনিস এই জায়গায় কী আছে।
‘লোকজন সরাইয়া দিয়া রাইতের বেলায় উঠাইল, ৭২ কেজির (আসলে ৭৬ কেজির) বোমা। পরবর্তীতে আরেকটা পাওয়া গেল। হ্যালিপেডের পূর্ব সাইডে, আমি এই জায়গায় ছিলাম না, থানায় ছিলাম।’
রায় ঘোষণার খবরে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বদিউজ্জামান বলেন, ‘রায় ঘোষণা হইছে, খুশি লাগতাছে। ভালো লাগতাছে। যারা নিরপেক্ষ, তারা মুক্তি পাক, যারা এই কাজ করছে, তাদের শাস্তি হওয়া উচিত। ভবিষ্যতে কোনো দিন যেন কেউ কিছু করতে না পারে।’
রায়ের খুশিতে এলাকায় মিছিল, মিষ্টি বিতরণ
এই মামলায় ২০১৭ সালের ২০ আগস্ট রায় হয়েছিল বিচারিক আদালতে। সাড়ে তিন বছর পর রায় এল হাইকোর্ট থেকে।
এখন আপিল বিভাগে আবেদন করার সুযোগ পাবেন দণ্ডিতরা। সেই রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউয়ের সুযোগ আছে। সবশেষ রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার আইনি সুযোগও পাবেন সাজাপ্রাপ্তরা।
কোটালীপাড়াবাসী অবশ্য অত কিছু নিয়ে ভাবছেন না। রায় হয়েছে, তাতেই খুশি তারা।
হাইকোর্টের আদেশ প্রচার হওয়ার পর পর আনন্দ মিছিল হয়েছে এলাকায়। হয়েছে মিষ্টি বিতরণ।
উপজেলা চেয়ারম্যান বিমল কৃষ্ণ বিশ্বাস নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই রায়ের কারণে কিছুটা হলেও কলঙ্কমুক্ত হতে পেরেছি। প্রধানমন্ত্রী তার নিজ এলাকায় কোনো প্রকারের সিকিউরিটি ছাড়াই চলে ফিরে বেড়াতেন। কিন্তু এই কোটালীপাড়ার কিছু বিপথগামী লোক তাকে হত্যার চেষ্টা করে যেটা আমাদের জন্য ছিল লজ্জাজনক একটি ঘটনা।
‘আজকের রায়ে আমরা গোপালগঞ্জবাসী তথা সারা দেশের মানুষ অনেক আনন্দিত।’
যে সমাবেশে হামলার জন্য বোমা দুটি পোঁতা হয়েছিল, সেটি হওয়ার কথা ছিল শেখ লুৎফর রহমান আদর্শ সরকারি কলেজ মাঠে।
কলেজ সংসদের তৎকালীন ক্রীড়া সম্পাদক জুয়েল সরদার বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার যে পরিকল্পনা করা হয়েছিল তার উপযুক্ত বিচার হয়েছে। আমরা অনেক অনেক খুশি।’
তিনি বলেন, ‘এই ঘটনার দিন সেনাবাহিনী মাইকিং করে ঘটনাস্থল থেকে চারপাশে দুই কিলোমিটার পর্যন্ত জনশূন্য করে রেখেছিল। তাদের ধারণা ছিল, এই বোমা এতটা শক্তিশালী যে এটি ব্লাস্ট হলে দুই কিলোমিটারের মধ্যে যা আছে সব ধ্বংস হয়ে যাবে। সেদিনের সেই বিভীষিকাময় দিনের কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে ওঠে।’
আরও পড়ুন:জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক কার্যালয়ের (ওএইচসিএইচআর) বিভিন্ন সুপারিশ বাস্তবায়নের বিষয়ে সবাইকে নিয়ে বসে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
সচিবালয়ে বৃহস্পতিবার এসবি ইমিগ্রেশনের বিদেশি নাগরিকদের জন্য ভিসা অন অ্যারাইভাল/ট্রানজিট ভিসা আবেদনে অনলাইন অ্যাপ উদ্বোধন, পাসপোর্ট ভেরিফিকেশন সহজীকরণ ও পাসপোর্ট আবেদনকারীদের জটিলতা/অভিযোগ ৯৯৯-এ জানানোর কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান।
জাতিসংঘ র্যাব-বিলুপ্তির প্রস্তাব দিয়েছে। বিজিবিকে সীমান্ত রক্ষার মধ্যে থাকা, ডিজিএফআইকে কেবল সামরিক গোয়েন্দা তৎপরতার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা ও আনসারের ওপর থেকে সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণ না রাখার বিষয়ে প্রস্তাব দিয়েছে জাতিসংঘ।
এ বিষয়ে অবস্থান জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘একটা প্রস্তাব তারা দিয়েছে। আমরা সবাই বসবো। বসার পর আমাদের যা ডিসিশন (সিদ্ধান্ত), সেটা আমরা জানাব।
‘তাদের এই তদন্তের বিষয়ে আমরা তো সবাই স্বাগত জানিয়েছি। তারা একটা ভালো কাজ করেছে। আমরা বসে একটা সিদ্ধান্ত নেব।’
বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার আন্দোলন ঘিরে গত বছরের ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়ের অনুসন্ধানী দল।
জেনেভায় বুধবার সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ফলকার টুর্ক ও অন্যরা।
এতে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সরকার ও সে সময়ের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণ পেয়েছে জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান দল।
স্বৈরাচারী সরকার নিরাপত্তা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা এবং দল ও সহযোগী সংগঠনগুলোকে যুক্ত করে মাত্রাতিরিক্ত বল প্রয়োগ করেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
এতে আরও বলা হয়, বিচার-বহির্ভূত হত্যা, মারণাস্ত্র দিয়ে নির্বিচার গুলি, গ্রেপ্তার, নির্যাতন, চিকিৎসা পেতে বাধা দেওয়ার মতো গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। মূলত ক্ষমতায় টিকে থাকতে আন্দোলনকারীদের ওপর মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগে সরাসরি নির্দেশ দিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
আরও পড়ুন:সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস হ্রাস পেতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটি বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এমন তথ্য জানায়।
এতে বলা হয়, শেষ রাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। এ ছাড়া অস্থায়ীভাবে মেঘলা আকাশসহ সারা দেশে আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। তবে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দুই-এক জায়গায় হালকা অথবা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
পূর্বাভাসে জানানো হয়, বৃহস্পতিবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রংপুর বিভাগের তেঁতুলিয়ায় ১১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বুধবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় বরিশাল বিভাগের পটুয়াখালীতে ৩১ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
লিবিয়ায় আটকে পড়া ১৪৫ অভিবাসনপ্রত্যাশী বাংলাদেশি ঢাকায় পৌঁছেছেন।
বুরাক এয়ারের চার্টার্ড ফ্লাইটে বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে তারা ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পা রাখেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এসব অভিবাসনপ্রত্যাশীর বেশির ভাগই সমুদ্র পথে অবৈধভাবে ইউরোপ গমনের উদ্দেশ্যে মানব পাচারকারীদের প্ররোচনা ও সহযোগিতায় লিবিয়ায় অনুপ্রবেশ করেন। তাদের অধিকাংশই লিবিয়াতে বিভিন্ন সময়ে অপহরণ ও নির্যাতনের শিকার হন।
এতে জানানো হয়, দেশে ফেরত আসার পর এই ভয়ংকর পথ পাড়ি দিয়ে আর যেন কেউ লিবিয়াতে না যান, এ বিষয়ে তাদের সচেতন হওয়ার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা আহ্বান জানিয়েছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার পক্ষ থেকে ফেরত আসা বাংলাদেশিদের প্রত্যেককে ছয় হাজার টাকা, কিছু খাদ্যসমগ্রী উপহার, মেডিক্যাল চিকিৎসা ও প্রয়োজনে অস্থায়ী বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, লিবিয়ার বিভিন্ন বন্দিশালায় আটক বাংলাদেশি নাগরিকদের নিরাপদে প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা করতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ত্রিপোলিতে বাংলাদেশ দূতাবাস এবং আর্ন্তজাতিক অভিবাসন সংস্থা একসঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে।
ওয়ার্ল্ড গভর্নমেন্ট সামিট-২০২৫-এ যোগ দিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
স্থানীয় সময় বুধবার রাত সোয়া ১১টায় তিনি সেখানে পৌঁছান বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের ক্রীড়ামন্ত্রী আহমেদ বেলহৌল আল ফালাসি অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে দুবাইয়ে স্বাগত জানান।
ড. আহমেদ বেলহৌল আল ফালাসি ওয়ার্ল্ড গভর্নমেন্ট সামিটে অংশগ্রহণের জন্য প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানান এবং গত এক দশক ধরে দুবাইয়ে হয়ে আসা আন্তর্জাতিকভাবে অত্যন্ত সমাদৃত এই সম্মেলনের বিষয়ে অবহিত করেন।
উভয় নেতা দুই দেশের মধ্যে ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সম্ভাব্য সহযোগিতা বিনিময়সহ পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
ওই সময় পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ এবং ঢাকায় নিযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত আবদুল্লাহ আলী খাসেফ আল হামৌদি উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে প্রধান উপদেষ্টা ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী এমিরেটস এয়ারলাইনসের বাণিজ্যিক ফ্লাইটটি বুধবার রাত ৭টা ৪৫ মিনিটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছাড়ে।
আরও পড়ুন:অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়েছে।
এ কমিশন ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যক্রম শুরু করবে।
সরকারের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে বুধবার এ কমিশন গঠনের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
কমিশনের সহসভাপতি করা হয় সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজকে। অন্য সদস্যরা হলেন জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী, পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের সদস্য বিচারপতি এমদাদুল হক এবং দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. মো. ইফতেখারুজ্জামান।
কমিশনের কার্যপরিধির বিষয়ে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘কমিশন আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন ব্যবস্থা, পুলিশ, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, সংবিধান ও দুর্নীতি দমন বিষয়ে সংস্কারের জন্য গঠিত কমিশনগুলোর সুপারিশ বিবেচনা ও গ্রহণের লক্ষ্যে জাতীয় ঐক্যমত্য গঠনের জন্য রাজনৈতিক দল ও শক্তিসমূহের সঙ্গে আলোচনা করবে এবং এ মর্মে পদক্ষেপ সুপারিশ করবে।
‘কমিশনের মেয়াদ হবে কার্যক্রম শুরুর তারিখ থেকে ৬ মাস। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় এ কমিশনকে সাচিবিক সহায়তা করবে।’
আরও পড়ুন:বিচার বিবেচনা ছাড়া হুটহাট কাউকে জামিন না দিতে বিচারকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
রাজধানীর রাজারবাগে মঙ্গলবার দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মানবাধিকার ও পরিবেশের ওপর গুরুত্বসহ আইনপ্রয়োগ বিষয়ক কর্মশালায় এ আহ্বান জানান তিনি।
আসিফ নজরুল বলেন, ‘মামলার এজাহার সুন্দর করে লিখেন, তথ্য দিন। গত ১৫ বছর ধরে অরাজকতা, গুম ও খুন হয়েছে। প্রতিটি হত্যার বিচার হতে হবে, এ বার্তা দিতে হবে। তা না হলে এ পদে থাকার কোনো মানে হয় না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। পতিত সরকার ও তার দোসররা লাখ লাখ টাকায় দেশকে অস্থিতিশীলের চেষ্টা করছে।’
আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘মবতন্ত্র ভয়াবহ। বিচার বিভাগ থেকে শুরু করে সব বিভাগ যদি ঠিকঠাক কাজ করে, তাহলে মবতন্ত্র কমে যাবে। সবাইকে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে।’
দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় ২০২৪ সালে ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪তম, যা আগের বছরে ছিল দশম।
১০০ স্কোরের মধ্যে ২৩ পেয়েছে বাংলাদেশ। সমান স্কোর নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে একই অবস্থানে রয়েছে কঙ্গো ও ইরান।
ধানমন্ডিতে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) কার্যালয়ে মঙ্গলবার প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক ড. মো. ইফতেখারুজ্জামান এসব তথ্য জানান।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন টিআইবির টিআইবির উপদেষ্টা (নির্বাহী ব্যবস্থাপনা) অধ্যাপক সুমাইয়া খায়ের, পরিচালক (আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন) মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম।
এর আগে ২০২৩ সালে বিশ্বের ১৮০টি দেশের মধ্যে ‘সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত’ দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান দশম ছিল। সে বছর বাংলাদেশের স্কোর ছিল ২৪।
সংবাদ সম্মেলনের টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন,
‘দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে বাংলাদেশের স্কোর হয়েছে ২৩। সমান স্কোর নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে একই অবস্থানে রয়েছে কঙ্গো ও ইরান। তালিকার উচ্চক্রম অনুযায়ী বাংলাদেশ ১৫১তম অবস্থানে রয়েছে।’
দুর্নীতির ধারণা সূচক (সিপিআই)-২০২৪ প্রকাশ উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘সিপিআই-২০২৪ অনুযায়ী বাংলাদেশের স্কোর ২৩, যা বিগত ১৩ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এ বছর স্কোর বিবেচনায় উচ্চক্রম (ভালো থেকে খারাপ) অনুসারে দুই ধাপ অবনতি হয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৫১তম এবং নিম্নক্রম অনুসারে ১৪তম।
‘দক্ষিণ এশিয়ায় আফগানিস্তান ১৭ পয়েন্ট নিয়ে সর্বনিম্ন স্কোর ও অবস্থানে রয়েছে।’
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘বাংলাদেশের এ বছরের নিম্ন স্কোর ও অবস্থান প্রমাণ করে যে, বিগত ১৩ বছর কর্তৃত্ববাদী সরকার মুখে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বললেও বাস্তবে দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিয়েছে, লালন করেছে, এমনকি দুর্নীতি সংঘটনে সহায়তা ও অংশগ্রহণ করেছে। এর প্রভাবে যথেচ্ছ লুটপাট, দুর্নীতিবাজদের রাষ্ট্রীয়ভাবে তোষণ, আইনের সঠিক প্রয়োগ না করা এবং সার্বিক কাঠামোগত দুর্বলতায় বাংলাদেশের অবস্থানের ক্রমাবনতি হয়েছে।’
টিআইর সিপিআই সূচকের বিশ্লেষণ বলছে, ২০২৪ সালে স্কোর বিবেচনায় বাংলাদেশের নিম্নমুখী যাত্রা সুস্পষ্ট। ২০১২ থেকে সূচকে ব্যবহৃত ১০০ স্কেলে বাংলাদেশের স্কোর ২০২২ সাল পর্যন্ত ২৫ থেকে ২৮-এর মধ্যে আবর্তিত ছিল। ২০২৩ সালে এক পয়েন্ট অবনমন হয়ে ২৪ এবং ২০২৪ সালে আরও এক পয়েন্ট অবনমন হয়ে ২৩ হয়েছে।
সিপিআই স্কোরের ২০১২ থেকে ২০২৪ মেয়াদে প্রবণতা বিশ্লেষণ অনুযায়ী, টানা চার বছরসহ মোট ছয়বার বাংলাদেশের স্কোর ছিল ২৬, তিনবার ২৫ এবং একবার করে ২৪, ২৭ ও ২৮।
নিম্নক্রম অনুযায়ী বাংলাদেশের অবস্থান ছিল সর্বোচ্চ চারবার ১৩তম, তিনবার ১৪তম, দুইবার ১২তম এবং একবার করে ১৫, ১৬ ও ১৭তম।
বেসরকারি সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল ১৯৯৫ সাল থেকে প্রতি বছর এ সূচক প্রকাশ করছে। ২০০১ সালে বাংলাদেশ প্রথম তালিকাভুক্ত হয়।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য