ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে করোনার টিকা কেনা নিয়ে সমালোচকরা যেসব প্রশ্ন তুলছেন, তার সবগুলোর জবাব দিল সিরামের বাংলাদেশের এজেন্ট বেক্সিমকো ফার্মা।
সরকারের কেনা তিন কোটি টিকার মধ্যে প্রথম ধাপে ৫০ লাখ টিকা দেশে আসার আগের বিকালে ধানমন্ডিতে সংবাদ মাধ্যমের সামনে আসেন বেক্সিমকো ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান পাপন।
সিরাম থেকে টিকা কেনায় কেন বেক্সিমকো ফার্মার অন্তর্ভুক্তি, বাংলাদেশ ভারত থেকে বেশি দামে টিকা কিনছে কি না, প্রতি টিকায় কেন বেক্সিমকোকে এক ডলার করে দেয়া হচ্ছে, এই টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কেমন- তার সব প্রশ্নের জবাব দেন পাপন।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নানা কোম্পানির টিকা প্রয়োগ শুরু হলেও বাংলাদেশ অপেক্ষা করেছে অক্সফোর্ড উদ্ভাবিত টিকার জন্য। এই অঞ্চলে এটা তৈরি করছে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান সিরাম ইনস্টিটিউট। এই প্রতিষ্ঠান থেকে তিন কোটি টিকা কিনছে সরকার। আর এই চুক্তিতে বেক্সিমকোও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
গত ২১ জানুয়ারি সিরামের ২০ লাখ টিকা বাংলাদেশ ভারত থেকে উপহার হিসেবে পেয়েছে। চার দিন পর বাংলাদেশের কেনা টিকার ৫০ লাখ আসছে।
তার আগের দিন রোববার বিকালে বেক্সিমকো ফার্মার হয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন প্রতিষ্ঠানটির এমডি নাজমুল হাসান পাপন।
তিনি জানান, সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে টিকা পৌঁছবে ঢাকায়। বিমানবন্দর থেকে সেগুলো নেয়া হবে টঙ্গীতে বেক্সিমকো ফার্মার গুদামে। সেই টিকার নমুনা পরীক্ষা করে ঔষধ প্রশাসন অনুমতি দিলে তা ৬৪ জেলায় পৌঁছে দেবে বেক্সিমকো।
সিরাম-বাংলাদেশের চুক্তির পর সমালোচকরা প্রশ্ন তোলেন এখানে বেক্সিমকো কেন এল।
চুক্তির পর জানানো হয়, বাংলাদেশ টিকা কিনবে চার ডলারে। বেক্সিমকো পাবে এক ডলার করে।
তবে সিরাম ভারতকে আরও কমে টিকা দিচ্ছে বলে সংবাদ প্রকাশ হয়। প্রশ্ন উঠে ভারত কমে পেলেও বাংলাদেশকে কেন বেশি দামে কিনতে হচ্ছে।
আবার অক্সফোর্ডের টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ভারতে বেশ কয়েকজনের শারীরিক সমস্যার বিষয়টিও সামনে এসেছে।
এর সবগুলো প্রশ্নের জবাব দেন পাপন।
চুক্তিতে বেক্সিমকো ফার্মা কেন?
পাপন জানান, আন্তর্জাতিকভাবে ওষুধ কিনতে হলে যেসব শর্ত পূরণ করতে হয়, তার কারণেই বেক্সিমকো ফার্মা সিরাম-বাংলাদেশ চুক্তির অংশ হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘কোনো দেশে যদি ওষুধ এক্সপোর্ট করতে চায়… তাহলে সে দেশে হয় সেই কোম্পানির অফিস থাকতে হবে অথবা লোকাল এজেন্ট বা ডিস্ট্রিবিউটর থাকতে হবে।
‘আমরা বিশ্বের ৬০টি দেশে এক্সপোর্ট করি। প্রতিটি দেশে আইদার উই হ্যাভ ডিস্ট্রিবিউটর অর লোকাল এজেন্ট। কারণ, ওখানে যদি কিছু হয়, কোনো প্রবলেম হয়, তাহলে ওদের সরকার ওই লোকাল কোম্পানিটাকে ধরতে পারে।
‘আমাদের সরকার সরাসরি সিরামের সঙ্গে একটা এগ্রিমেন্ট করেছি। আমরা ওদের লোকাল এজেন্ট, আমরা এখানে একটা পার্টি ছিলাম এজ এ ডিস্ট্রিবিউটর অথবা লোকাল এজেন্ট। কিন্তু তার সঙ্গে সরকার আমাদেরকে এডিশনাল কিছু দায়িত্ব দিয়েছে যেটা আমরা এর আগে কখনও শুনিনি।’
বাংলাদেশ কি ভারতের কাছ থেকে বেশি দামে টিকা নিচ্ছে?
পাপন জানিয়ে দেন, যে চুক্তি হয়েছে, তাতে এর কোনো সুযোগ নেই। ভারত যে দামে কিনবে, বাংলাদেশ তার চেয়ে কমে পাবে, কিন্তু বেশি দাম নেয়া অসম্ভব।
বেক্সিমকো ফার্মার এমডি জানান, তারা সিরামের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন নিজেরা ১০ লাখ টিকা আনবেন বলে। চুক্তি হয়েছে আট ডলার করে।
এর মধ্যেই তারা সিরামের সঙ্গে কথা বলেন বাংলাদেশকে তারা দিতে চায় কি না। তখন সিরাম বলে তিন কোটি দিতে পারবে। এরপর বেক্সিমকো সরকারকে জানায়।
পাপন জানান, দাম ঠিক করার সময় তারাই সরকারকে পরামর্শ দেন, ভারত যে দামে কিনবে, বাংলাদেশ যেন সেই দামে পায়।
পাপন বলেন, ‘যেহেতু সে দেশে উৎপাদন হচ্ছে আমরা ধারণা করেছিলাম ভারত সরকার কিছুটা কমে পাবে টিকা। এই ধারণাবশত আমরা একটা কন্ডিশন লাগাই যে, ভারত সরকারকে যে দামে দেবে, আমাদেরকেও সে দামে দিতে হবে।’
তাহলে চার ডলারের প্রসঙ্গ কেন এল- তারও ব্যাখ্যা দেন পাপন। বলেন, ‘ওরা এগ্রি করল। তখন কথা হলো আমরা যে টাকা পাঠাব, কী দাম ধরে পাঠাব? তখন দাম ধরা হলো চার ডলার।’
বেক্সিমকো এমডি জানান, চুক্তিটা এমন, ভারত যদি চার ডলারের বেশিতে টিকা কেনে, তাহলে বাংলাদেশকে চার ডলারেই দিতে হবে, আর ভারত যদি চার ডলারের কমে নেয়, তাহলে বাংলাদেশকে সে দামেই দিতে হবে।
পাপন বলেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাসে না, আমি পৃথিবীর কোথাও এমন কোনো এগ্রিমেন্ট দেখিনি। চার ডলারে বুক করব, টাকা পাঠিয়ে দেব। কিন্তু ভারত সরকার বেশিতে নিলে বেশি দেব না, আমার কমে নিলে আমাকে কমে দিতে হবে।’
ভারত সরকার কমে টিকা পেলে বাংলাদেশের ভালো
ভারত কম দামে টিকা পাচ্ছে বলে যে বিভিন্ন আলোচনায় যে কথা উঠেছে, সেটা বাংলাদেশের জন্য খুশির খবর বলে মনে করেন পাপন।
তিনি বলেন, ‘একদিন শুনি আড়াইশ, একদিন শুনি দুইশ। লাস্ট শুনলাম দুইশ রুপিতে দিচ্ছে ভারত সরকারকে। এটা নিয়ে এত হুলস্থুল লেগে গেল?
‘আমি তো বলি এটা খুশির খবর। ওরা যদি ৫০ রুপিতে নেয়, আমি আরও খুশি। আমাদের গভর্নমেন্ট আরও কমে পাবে। এই খুশির খবর একটা পজেটিভ নিউজ, কীভাবে এটা আমাদের এখানে নেগেটিভ হয় আমি সেটা বুঝতে পারছি না। এতে তো সবার খুশি হওয়ার কথা। বেক্সিমকোকে কনগ্রেচুলেট করার কথা।’
পাপন জানান, থাইল্যান্ড ৭.৭ ডলারে টিকা কেনার চুক্তি করেছে, তাও সেটা এখন পাবে না। ভারত ছাড়া একমাত্র বাংলাদেশই সিরাম থেকে টিকা পেতে যাচ্ছে।
বেক্সিমকো ফার্মা এমডি জানান, ফিলিপাইন থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়াসহ একশটির বেশি দেশ সিরাম থেকে টিকা নিতে চাইছে। সবাই পাবে জুনের পরে।
তিনি বলেন, ‘ব্রাজিল সরকার প্লেন পাঠিয়ে দিতে চাইছিল ভারতে সরকারের কাছ থেকে নেয়ার জন্য। কিনতে তো পারছে না।’
বেক্সিমকো কি সিরাম থেকে কমিশন পাচ্ছে?
পাপন জানান, একটি টিভি টকশোতে একজনের এমন বক্তব্য শুনে তিনি অনুষ্ঠানের পর তাকে কল দেন।
তাকে তিনি বলেন, ‘ইন্ডিয়ার গভর্নমেন্ট যে প্রাইসে কিনছে, আপনি সেখানে আমাকে একটা কমিশন ফিক্সড করে দেন। …ইন্ডিয়ান গভর্নমেন্ট কিনবে ৬০ কোটি ডোজ। …তো ওখানে কি একটা কমিশন ধরা আছে? বেক্সিমকো ঢাকা? তাহলে আমাকে ওখানে দেন, তিন কোটি ফ্রি দিয়ে দিচ্ছি বাংলাদেশ গভর্নমেন্টকে।’
অক্সফোর্ডের টিকা ছাড়া উপায় ছিল না
পাপন জানান, তারা বেসরকারি পর্যায়ে টিকা আনতে কেবল সিরাম নয়, কথা বলেছেন মডার্না, ফাইজার, অ্যাস্ট্রাজেনকার সঙ্গে। তারা কথা বলেছেন জনসন অ্যান্ড জনসন, ডোবারভেকের সঙ্গেও।
তিনি বলেন, ‘আমরা যে কোনোটাই হয়ত নিতে পারতাম। আমরা প্রথমে চিন্তা করে দেখেছি মাস ভ্যাকসিনেশনের জন্য। আপনি যদি ১০ লক্ষ লোককে দিতে চান, এক জিনিস। সেটা যে কোনো ভ্যাকসিনই দেয়া সম্ভব বাংলাদেশে।
‘কিন্তু আপনি যদি ১৪ কোটি মানুষকে বা ১০ কোটি মানুষকে ভ্যাকসিন দিতে চান, তাহলে মডার্না ও ফাইজার দ্বারা দেয়া সম্ভব না। অনলি অপশন আমাদের কাছে ছিল অক্সফোর্ড।’
অক্সফোর্ডের টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কী
পাপন জানান, ফাইজার ও মডার্নার টিকার কার্যকারিতা ৯০ শতাংশের বেশি। আর অক্সফোর্ডের টিকার ক্ষেত্রে এটা ৬২ থেকে ৭০ শতাংশ।
কিন্তু সেই দুই টিকা বেশি ঝুঁকি তৈরি করে।
তিনি বলেন, ফাইজার ও মডার্না দুইটাই হচ্ছে এমারেনা ভ্যাকসিন। এটা পৃথিবীতে এর আগে কখনও আসেনি। অন্যদিকে অক্সফোর্ডের টিকা যে প্রযুক্তির, সেটা বাংলাদেশে আগে থেকেই ব্যবহার হয়।
পাপন বলেন, ‘এটার কী সাইডইফেক্ট হতে পারে, আমরা কিন্তু জানি। কিন্তু এমারেনা ভ্যাকসিন, যদিও এটা হাইলি এফেকটিভ, আমি কিন্তু বলছি না এটা খারাপ, এটা খুবই ভালো। মাস্ট বি গুড। বলছি, এটার সাইডইফেক্ট কিছু নতুন নতুন ধরা পড়ছে, যেটা আমার আছে অজানা।’
তিনি বলেন, ‘ওরা (অক্সফোর্ড) যা বলছে, তাতে করে এখন পর্যন্ত কাউকে হসপিটালে যেতে হয়েছে এমন খবর আসেনি।’
এই টিকা নিয়ে যদি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, তাহলে দায় কার?
এমন প্রশ্নে পাপন বলেন, ‘মডার্না, ফাইজার সবাই, তারা যেটা করেছে, সেটা হলো কোম্পানিকে কেউ দায়ী করতে পারবে না।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের সরকার বরং বলেছে, এটা নিয়ে যদি কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, তাহলে সেটাও সরকার দেখবে।’
বেক্সিমকো এক ডলার কেন?
চুক্তি অনুযায়ী সিরামের টিকা দেশে নিয়ে আসাসহ নানা কাজ করে বেক্সিমকো টিকা প্রতি এক ডলার করে পাবে।
পাপন জানান, তাদেরকে এই অর্থের বিনিময়ে যে শর্ত দেয়া হয়েছে, আগে জানলে এই কাজ নিতেন না।
তিনি জানান, টিকা আনার পরে তা পরীক্ষা করা, গুদামজাত করা, ড্রাগটেস্টিং ল্যাবরেটরি থেকে ছাড়পত্র নেয়া, ৬৪ জেলায় পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব পালন করতে হবে বেক্সিমকোকেই।
তিনি বলেন, ‘থ্রোআউট দ্য মোমেন্ট আমাদেরকে কোল্ড চেইন মেইনটেইন করতে হবে। এবং ওখানে গিয়ে প্রমাণ করে দিতে হবে প্রত্যেকটা ধাপে কোথাও কোল্ডচেইন ব্রেক হয়নি। এই কাজটা এত সহজ না।
‘ধরেন, একটা শিপিং কার্টুন, বাইরে থেকে ঠিক আছে, ভেতরে যখন খোলা হলো, দেখা গেল যে এটার মধ্যে দুটো বা তিনটা ভাঙা। এমন তো হতেও পারে। কতগুলো ড্যামেজ থাকতে পারে, কোনো বাক্সের মধ্যে দেখা গেল কোল্ডচেইন ব্রেক করা হয়েছে। তখন কী হবে?
‘সাধারণত সরকার যখন কিনে, তখন একটা ওভারেজ ধরা হয়। যে ঠিক আছে, এত পার্সেন্ট পর্যন্ত হতে পারে। আমাদের ক্ষেত্রে কিন্তু কোনো ওভারেজ নেই। সরকার একেবারে তিন কোটি ডোজ ভালো নিয়ম অনুযায়ী আমাদের কাছে চাইবে।‘
পাপন জানান, কোথাও টিকা খোয়া গেলে বা দুর্ঘটনা হলেও সমস্ত দায় দায়িত্ব বেক্সিমকোকে নিতে হবে। আর তখন টিকা তাদেরকে আট ডলার করে কিনে দিতে হবে।
কোনো কোম্পানি চাইলে দিয়ে দেব
পাপন বলেন, তারা যে শর্তে চুক্তি করেছেন, এমন শর্তে বাংলাদেশে কোনো কোম্পানি রাজি হতো না।
তিনি বলেন, ‘আমি তো অনেককার বলেছি, সরকার আমাকে যা দিচ্ছে, আমি এটা কাউকে দিয়ে দিতে চাই। কেউ যদি রাজি হয়, অনেক কোম্পানি তো আছে বাংলাদেশে। আজ পর্যন্ত কেউ কি আসছে?’
পাপন বলেন, ‘না নিক, সরকারকে একটা অফার তো দিতে পারে। কেউ একটা অফার দিয়েছে এখন সরকারের কাছে? কোত্থেকে দেবে? একটা ডোজও তো কেউ নিতে পারবে না, কিনতে পারবে না।’
তাহলে বেক্সিমকো কি সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে এই কাজ নিয়েছে?- এমন প্রশ্নে পাপন বলেন, ‘ইনিশিয়ালি আমরা যখন এটা করেছিলাম তখন আমাদের ধারণা ছিল এটাতে আমাদের কিছু প্রফিট তো থাকবেই। এটাতে তো কোনো সন্দেহ নাই।
‘স্ট্যান্ডার্ড প্রকোটল অনুযায়ী আমাদের দেশে যে ওষুধ আসে, যে ইমপোর্ট করে অ্যারাউন্ড ২০ পারসেন্ট পায়। এটাই তার লাভ।
‘আমরা তাহলে ৮০ সেন্টের মতো এমনি পেয়ে যাব। এবং কোনো দায় দায়িত্ব নেই, কোনো কাজ নেই। সেখানে আমরা এক ডলার পেয়েছিলাম সেফগার্ড হিসেবে।
‘কিন্তু সরকার এটা মেনে নিয়ে যে শর্ত দিয়েছে, এইগুলা যদি জানতাম, তাহলে আমরা এর মধ্যে যেতাম না।’
পাপন বলেন, ‘এই শর্ত মেনে এক ডলারে কেউ রিক্স নেবে বলে আমার মনে হয় না। এমন বোকা কেউ আছে ব্যবসায়ী কেউ আছে বলে আমার মনে হয় না।’
তার পরেও লাভ হতে পারে, কিন্তু ঝুঁকিটা অনেক বেশি বলে মনে করেন পাপন।
পাপন অক্সফোর্ডের টিকাই নেবেন
পাপন এক প্রশ্নের জবাবে জানান, ফাইজারের নয়, তিনি অক্সফোর্ডের টিকাই নেবেন।
তার ইচ্ছা ছিল, বেসরকারি পর্যায়ে তারা যে টিকা দেবেন, তার প্রথম টিকা তিনিই নেবেন। তবে তার কিছু ওষুধে র্যাশ হয়। এ কারণে চার-পাঁচ দিন পরে নেবেন।
অন্য এক প্রশ্নে পাপন জানান, প্রথম টিকা থেকে দ্বিতীয় টিকার পার্থক্য ২৮ দিন থেকে তিন মাস হতে পারে। যত বেশি বিলম্ব, তত বেশি কার্যকারিতা বাড়বে।
ভারত ঠিক করেছে প্রথম টিকা থেকে দ্বিতীয় টিকার পার্থক্য হবে ছয় সপ্তাহ, বাংলাদেশ ঠিক করেছে আট সপ্তাহ।
অন্য এক প্রশ্নে বেক্সিমকো এমডি জানান, তারা নিজেরাও দেশে টিকা উৎপাদন শুরু করতে চান। তবে সে জন্য আরও কিছু সময় অপেক্ষা করতে চান।
তিনি বলেন, ‘আমাদের ধারণা সামনে আরও দুটো ভ্যাকসিন আসবে। এগুলোও ভালো ভ্যাকসিন। একটা আসছে জনসন। এটা সিঙ্গেল ডোজ। এটার দাম হয়ত বেশি হবে, তার পরেও এটা ভালো। নোভাজেক্সও চলে আসবে বাই মে। এটা দিতে দিতেই জুন চলে যাবে। এটা দেখে আমরা ঠিক করব কোনটা উৎপাদন করব।’
বেসরকারি পর্যায়ে টিকা বাইরে বিক্রির জন্য নয়
বেক্সিমকো বেসরকারি পর্যায়ে যে ১০ লাখ টিকা আনতে যাচ্ছে, সেটা ওষুধ শিল্পের কর্মীদের বাইরে বিক্রি করা হবে না বলেও জানান পাপন।
তিনি বলেন, করোনা আসার পর থেকে ওষুধ শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা সব সময় কাজ করছেন। এ কারণে তাদের মধ্যে আক্রান্তের হার বেশি। তাই তারা কেবল এই শিল্পের কর্মীদের জন্য টিকা আনছেন।
এর বাইরে বিজিএমইএসহ কিছু সংগঠন টিকা চাইছে, কিন্তু সেটা তারা দিতে পারছেন না এই মুহূর্তে।
আরও পড়ুন:আগামী মাসে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির বাংলাদেশ সফরে কিছু বিষয়ে গুরুত্ব পাবে বলে ইউএনবিকে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র।
ওই সূত্র বার্তা সংস্থাটিকে জানায়, শেখ তামিমের সফরে জনশক্তি, জ্বালানি, বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বৃহত্তর সহযোগিতার মাধ্যমে বিদ্যমান সম্পর্ক আরও জোরদার করতে চায় উভয় দেশ।
কাতারের আমিরের সফরে দুই দেশের মধ্যে প্রায় ডজনখানেক সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) ও চুক্তি চূড়ান্ত করার বিষয়ে আলোচনা চলছে জানিয়ে সূত্রটি বলেছে, সফরকালে এসব এমওইউ ও চুক্তি সই করা হবে।
ইউএনবির প্রতিবেদনে বলা হয়, কাতারের আমিরের দুই দিনের সফরটি হতে পারে আগামী ২১ থেকে ২২ এপ্রিল।
বার্তা সংস্থাটি জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আমিরের বৈঠকের পর যেসব এমওইউ ও চুক্তি সই হবে, সেগুলো নিয়ে দুই পক্ষ এখন কাজ করছে। সফরের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে আন্তমন্ত্রণালয় সভা করেছে।
গত বছরের মার্চে কাতারের রাজধানী দোহায় স্বল্পোন্নত দেশগুলোর বিষয়ে জাতিসংঘের সম্মেলন এলডিসি-৫-এর পার্শ্ববৈঠকে কাতারের আমির শেখ তামিমের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ওই বৈঠকে কাতারের কাছে বিশেষ করে এলএনজি সরবরাহে সহযোগিতার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
১৯৭৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় ওআইসি শীর্ষ সম্মেলনের পর একই বছরের ৪ মার্চ বাংলাদেশকে সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় কাতার।
১৯৭৫ সালের ২৫ জুন দোহায় বাংলাদেশ তার কূটনৈতিক মিশন চালু করে। ১৯৮২ সালে ঢাকায় কূটনৈতিক মিশন খোলে কাতার।
আরও পড়ুন:দেশের সাত বিভাগে ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এমন বার্তা দিয়েছে।
পূর্বাভাসে আজকের বৃষ্টিপাত নিয়ে বলা আছে, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দুই এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
সিনপটিক অবস্থান নিয়ে পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।
আজকের তাপমাত্রা নিয়ে পূর্বাভাসে বলা আছে, সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
ঢাকায় বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা সোমবার সকালে ছিল ৮৫%।
আরও পড়ুন:যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে এক বাংলাদেশি যুবক নিহত হয়েছেন।
স্থানীয় সময় বুধবার নিউ ইয়র্কের কুইন্সের একটি বাসায় মানসিক অবসাদে ভোগা ওই যুবককে বাধ্য হয়েই গুলি করতে হয় বলে পুলিশ দাবি করেছে।
নিউ ইয়ক টাইমস বলছে, ১৯ বছর বয়সী উইন রোজারিওকে দুপুর পৌনে ২টার দিকে মৃত ঘোষণা করা হয়। তিনি ওজোন পার্কের ১০৩ নম্বর স্ট্রিটে দ্বিতীয় তলার বাসায় তার পরিবারের সঙ্গে থাকতেন।
পুলিশ জনিয়েছে, ৯১১ নম্বরে ফোন পেয়ে পুলিশ ওই যুবকের বাসায় গিয়েছিল। এ সময় কাঁচি দিয়ে অফিসারদের হুমকি দিয়েছিলেন তিনি। এরই এক পর্যায়ে তার পায়ে গুলি চালানো হয়।
নিহতের ভাই উশতো রোজারিও বলেন, মা উইনকে ফেরাতে চেষ্টা করছিলেন। তবে এর মধ্যেই পুলিশ গুলি ছুড়েছে। এই গুলি ছোড়ার কোনো দরকার ছিল না।
পুলিশ ডিপার্টমেন্টের টহল প্রধান জন চেল সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, দুজন অফিসার মানসিক যন্ত্রণায় থাকা ব্যক্তি সম্পর্কে ৯১১ নম্বরে একটি কল পেয়ে সেখানে যায়। বাধ্য হয়েই গুলি চালাতে হয়েছে। বেশ উত্তেজনাপূর্ণ, বিশৃঙ্খল এবং বিপজ্জনক অবস্থা তৈরি হয়েছিল। রোজারিও ৯১১ নম্বরে কল করেছিলেন।
উইনের বাবা ফ্রান্সিস রোজারিও জানান, তার পরিবার ১০ বছর আগে বাংলাদেশ থেকে নিউইয়র্কে যান। উইনের স্বপ্ন ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়া। পরিবারের গ্রিন কার্ড পেতে দেরি হওয়ায় সেটি আর হয়নি।
নিহতের ভাই উশতো রোজারিও জানান, তার ভাই দুই বছর আগে ওজোন পার্কের জন অ্যাডামস হাই স্কুল থেকে স্নাতক করেছে। সম্প্রতি বিষণ্ণ ছিলেন তিনি। মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে গত বছর হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল তাকে।
নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ইউনেস্কো থেকে যে ‘ট্রি অফ পিস’ পুরস্কার পেয়েছেন বলে প্রচার করা হয়েছে, তা প্রতারণামূলক এবং সর্বৈব মিথ্যাচার বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। তিনি বলেছেন, এ ধরনের মিথ্যাচার দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করবে।
বুধবার সচিবালয়ে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির এক সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে ইউনেস্কোর সদর দপ্তরে যোগাযোগ করা হয়েছে। সেখান থেকে তারা আমাদের নিশ্চিত করেছেন যে, ইউনেস্কো ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে এ ধরনের কোনো সম্মাননা প্রদান করেনি।’
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘ড. ইউনূস আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে গজনভি ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশনের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেন। সেখানে ইসরায়েলের ভাস্কর্য শিল্পী মিজ হেদভা সের তাকে ‘ট্রি অফ পিস’ সম্মাননা স্মারক দেন।’
ভাস্কর হেদভা সেরও নিশ্চিত করেছেন যে, এটি ইউনেস্কোর সম্মাননা বা পুরস্কার নয়। এটি গজনভি ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রদত্ত একটি পুরস্কার।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ইউনেস্কো সদর দপ্তরকে বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত করব। ড. ইউনূস ও ইউনেস্কোর নাম নিয়ে যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে সেটি অনৈতিক এবং অপরাধমূলক। সেটি আমাদের দেশের জন্য মানহানিকর- এ তথ্যও জানাব।’
তিনি বলেন, ‘ইসরায়েলি ভাস্কর্য শিল্পীর দেয়া পুরস্কারকে ড. ইউনূস ইউনেস্কোর পুরস্কার হিসেবে প্রচার করেছেন। এটি অত্যন্ত সংবেদনশীল ও অপমানকরও বটে।
‘ইউনূস সেন্টারের ওয়েবসাইটে এটি ইউনেস্কোর পুরস্কার হিসেবে প্রচার করা হয়েছে। ইউনূস সেন্টারকে অনুরোধ করব যে, এভাবে এ ধরনের ভয়াবহ মিথ্যাচার প্রচারণা থেকে তারা যেন বিরত থাকে। তা না হলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব।’
এদিকে বুধবার ড. মুহাম্মদ ইউনুসকে ইউনেস্কো কর্তৃক ‘ট্রি অফ পিস’ পুরস্কার প্রদানের সংবাদটি সঠিক নয় এবং ইউনুস সেন্টার কর্তৃক দাবিকৃত সম্মাননা ইউনেস্কোর কোনো পুরস্কার বা সম্মাননাও নয় বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশনের ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল জুবাইদা মান্নান।
এ ধরনের সংবাদ প্রচারকে ‘প্রতারণামূলক ও পরিকল্পিত মিথ্যাচার’ বলে আখ্যায়িত করে ভবিষ্যতে এ ধরনের সংবাদ প্রচারের ক্ষেত্রে ইউনূস সেন্টারকে সতর্ক করেছে বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশন।
ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “সম্প্রতি ঢাকার কয়েকটি দৈনিক পত্রিকায় এবং ইউনূস সেন্টারের অফিশিয়াল ওয়েব পেইজে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ইউনেস্কো কর্তৃক ‘ট্রি অফ পিস’ পুরস্কার প্রদানের সংবাদটিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়াধীন বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশনের (বিএনসিইউ) দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে।
“ইউনূস সেন্টার কর্তৃক প্রেরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তির বরাত দিয়ে পত্রিকায় যে সংবাদ ছাপা হয়েছে, তাতে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ১৬ মার্চ আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে অনুষ্ঠিত ১১তম গ্লোবাল বাকু ফোরোমে ড. ইউনূসকে এই পুরস্কার প্রদান করা হয়, কিন্তু ইউনেস্কো ঢাকা অফিস জানিয়েছে, প্যারিসস্থ ইউনেস্কো সদরদপ্তর এই বিষয়ে একেবারেই অবহিত নয়।
“১১তম বাকু ফোরাম যেখানে এই সম্মাননা দেয়ার সংবাদ প্রচার হয়েছে, সেখানে ইউনেস্কোর কোন অফিশিয়াল প্রতিনিধিই ছিল না। অধিকন্তু, ইউনূস সেন্টার কর্তৃক দাবিকৃত সম্মাননা ইউনেস্কোর কোনো পুরস্কার বা সম্মাননাও নয়।”
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, “ড. ইউনুসকে ‘ট্রি অফ পিস’ নামক একটি ভাস্কর্য স্মারক/সম্মাননা প্রদান করেন ইসরায়েলি ভাস্কর্য শিল্পী মিজ হেদভা সের। মিজ হেদভা নিজে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন যে, ড. মুহাম্মদ ইউনুসকে ‘ট্রি অফ পিস’ প্রদানে ইউনেস্কোর কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না।
“নিজামী গনজবী ইন্টারন্যাশন্যাল সেন্টারের আমন্ত্রণে ইসরায়েলি ভাস্কর্য শিল্পী মিজ হেদভা সের ড. ইউনুসকে এটি প্রদান করেন। মিস হেদভা সের ইউনেস্কোর সাংস্কৃতিক কূটনীতি বিষয়ক গুইউইল অ্যাম্বাসেডর, কিন্তু ইউনেস্কোর কোনো প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিনিধি নন এবং ইউনেস্কোর কোনো পুরস্কার/সম্মাননা দেয়ার এখতিয়ারও রাখেন না।
“সুতরাং, উল্লিখিত বাস্তবতার নিরিখে বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস পরিচালিত ইউনূস সেন্টার কর্তৃক প্রেরিত এবং প্রচারিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং প্রতারণামূলক বলে মনে করে তার নিন্দা জানাচ্ছে।
“বাংলাদেশ ইউনেস্কোর অন্যতম সক্রিয় সদস্য রাষ্ট্র। ভবিষ্যতে ইউনেস্কোর মতো জাতিসংঘের এমন একটি মর্যাদাপূর্ণ এবং সুখ্যাতিপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের নাম অপব্যবহার থেকে ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং ইউনূস সেন্টারকে সতর্ক করা হলো।”
এই বিষয়টি যেহেতু প্রতারণামূলক এবং পরিকল্পিত মিথ্যাচার, সেহেতু তাদের বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে না, তার ব্যাখা চাওয়া হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ১ জানুয়ারি বাংলাদেশের আদালত ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং গ্রামীণ টেলিকমের আরও তিনজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে শ্রম আইন লঙ্ঘনের দায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ড এবং প্রত্যেককে ৩০ হাজার টাকা করে জরিমানা করে। ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং তার সহযোগীরা এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন, যেটি বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন।
এ ছাড়াও আয়কর আইন লঙ্ঘনের জন্য তার ব্যক্তিগত আয়কর দাবি আদালতে বিচারাধীন। সুতরাং, তিনি যতদিন আদালত কর্তৃক নির্দোষ প্রমাণিত না হন, ততদিন তাকে কোনো মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার কিংবা সম্মাননা প্রদান সমীচীন নয় বলেও উল্লেখ করা হয়।
বাংলাদেশে ইউনেস্কোর সঙ্গে কার্যক্রমের জন্য সরকারের ফোকাল পয়েন্ট হচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়াধীন বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশন। কমিশনের দায়িত্ব হচ্ছে, কেউ যাতে ইউনেস্কোর নামের অপব্যবহার কিংবা অপপ্রয়োগ না করতে পারে, সেটি নিশ্চিত করা। সে হিসেবে ইউনেস্কোর নাম অপব্যবহারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশনের পক্ষ থেকে ইউনেস্কো ঢাকা অফিস এবং ইউনেস্কোতে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধির সঙ্গে পরামর্শ করে ইউনেস্কো সদর দপ্তরকে অবহিত করা হবে।
আরও পড়ুন:একাত্তরের ২৫ মার্চ কালরাতে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানও বাঙালিদের ওপর আক্রমণ করেছিলেন বলে দাবি করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রাজধানীর তেজগাঁওয়ে আওয়ামী লীগের ঢাকা জেলা কার্যালয়ে বুধবার দুপুরে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এমন দাবি করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সোয়াত জাহাজে অস্ত্র এসেছিল পাকিস্তান থেকে। সেই অস্ত্র খালাস করতে গিয়েছিল জিয়াউর রহমান। সেখান থেকে তাকে ধরে নিয়ে আসা হয়। ২৫ মার্চের কালো রাত্রিতে সেও পাকিস্তানিদের সঙ্গে বাঙালিদের ওপরে আক্রমণ করেছিল।’
মুক্তিযুদ্ধের সময় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা পালিয়েছিলেন বলে বিএনপির এক নেতার মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করেন দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা পালিয়ে গেলে যুদ্ধটা করল কে?’
তিনি বলেন, ‘বিএনপির এক নেতাকে বলতে শুনলাম, ২৫ মার্চ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা নাকি পালিয়ে গিয়েছিল। আমি তাদের কাছে জানতে চাই, তাহলে যুদ্ধটা করল কে? আজকে যে দলটি বড় বড় কথা বলছে, ২৫ মার্চ আওয়ামী লীগ পালিয়েছিল, তাহলে যে মুক্তিযুদ্ধের সরকার গঠন করা হলো, সেক্টর ভাগ করা হলো, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় জিয়াউর রহমান ছিল একজন বেতনভুক্ত কর্মচারী।
‘জিয়াউর রহমান যে মেজর থেকে মেজর জেনারেল হলো এই প্রমোশনটা কে দিল? আওয়ামী লীগ দিয়েছে৷’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা প্রশ্ন করেন আওয়ামী লীগ কোথায় ছিল, আমি প্রশ্ন করি, আপনারা কোথায় ছিলেন?’
ভারতীয় পণ্য বর্জনের অংশ হিসেবে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর চাদর পোড়ানো নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটা কথা না বলে পারলাম না। বিএনপির এক নেতা চাদর খুলে পুড়ল। যে নেতারা বলছেন, ভারতীয় পণ্য বর্জন করবেন, তাদের বউদের কয়খানা ভারতীয় শাড়ি আছে?
‘আমি জানি, ঈদের আগে দেখি বিএনপির মন্ত্রীদের বউরা ভারত থেকে শাড়ি এনে বিক্রি করত। আমি এখন বলব বিএনপি নেতারা যদি বাসায় গিয়ে বউদের ভারতীয় শাড়ি পোড়ান, সেদিন বিশ্বাস করব আপনারা সত্যি ভারতীয় শাড়ি বর্জন করলেন। ভারতীয় মসলা তারা খেতে পারবে কি না এ উত্তর তাদের দিতে হবে। আপনারা এ পণ্য সত্যি বর্জন করছেন কি না, এ কথাটাই আমরা জানতে চাই।’
কিছু বুদ্ধিজীবীর সমালোচনা করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমাদের দেশে কিছু আঁতেল আছে। বুদ্ধিজীবী। বুদ্ধি বেচে জীবিকা নির্বাহ করেন যিনি। বাংলাদেশে একটা কাণ্ড আমরা দেখি, অতি বাম, অতি ডান। স্বাভাবিকভাবে গণতান্ত্রিক ধারাটা তারা পছন্দ করেন না।’
যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে গড়ে তুলতে বঙ্গবন্ধুকে সময় দেয়া হয়নি উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়তে বঙ্গবন্ধুকে সহায়তা না করে উল্টো বিরোধিতা করা হয়েছিল। যারা এখন দেশের উন্নয়ন দেখতে পায় না, তারাই জাতির পিতার অবদানকে অস্বীকার করেছিল।’
আরও পড়ুন:আসন্ন ঈদে যাতায়াতে দুর্ভোগ, পথে পথে যাত্রী হয়রানি, ভাড়া নৈরাজ্য ও সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে ভাগে ভাগে যাওয়ার সুবিধার্থে ছুটি দুই দিন বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
ঈদযাত্রা নিরাপদ ও ভোগান্তিমুক্ত করতে বুধবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি জানান সংস্থাটির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে মোজাম্মেল জানান, এবারের ঈদে ঢাকা থেকে এক কোটি, গাজীপুর থেকে ৪০ লাখ, নারায়ণগঞ্জ থেকে ১২ লাখসহ ঢাকা ও আশেপাশের জেলা থেকে এক কোটি ৬০ লাখ মানুষ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত করবে। ঈদের আগের চার দিনে বাস-মিনিবাসে ৩০ লাখ, ট্রেনে চার লাখ, প্রাইভেট কার, জিপ ও মাইক্রোবাসে ৩৫ লাখ, মোটরসাইকেলে ১২ লাখ, লঞ্চে ৬০ লাখ, উড়োজাহাজে প্রায় এক লাখ যাত্রীর যাতায়াত হতে পারে।
তিনি জানান, গণপরিবহন সংকট ও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্যর কারণে বাসের ছাদে, ট্রেনের ছাদে এবং খোলা ট্রাক ও পণ্যবাহী পরিবহনে ১৮ লাখ যাত্রীর যাতায়াত হতে পারে। এ ছাড়াও আন্তজেলায় যাতায়াত করবে প্রায় চার থেকে পাঁচ কোটি যাত্রী।
গণপরিবহনের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করা না গেলে এবারের ঈদযাত্রায় নারকীয় পরিস্থিতি হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব বলেন, ‘কেননা এবার রোজা ৩০টি সম্পন্ন হলে ১১ এপ্রিল ঈদ হতে পারে। ঈদের আগে ১০ এপ্রিল মাত্র এক দিন সরকারি ছুটি রয়েছে। ঈদের পরে ১০ এপ্রিল থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত পাঁচ দিনের লম্বা ছুটি রয়েছে। ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখ হওয়ায় এবারের ঈদযাত্রায় মুসলমানদের পাশাপাশি অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরাও পহেলা বৈশাখ উদযাপনে লম্বা ছুটির সুবাদে গ্রামের বাড়ি যাবে। তাই যাত্রী সংখ্যা বাড়বে।
‘৯ ও ১০ এপ্রিল প্রতিদিন ৬০ থেকে ৭০ লাখ হারে মানুষ রাজধানী ছাড়বে। অথচ আমাদের গণপরিবহনগুলোতে ২২ থেকে ২৫ লাখের মতো মানুষ পাড়ি দেয়ার সক্ষমতা আছে। এমন পরিস্থিতিতে ঈদের আগে ছুটি না বাড়ালে দেশের সকল পথে যাতায়াত পরিস্থিতি কোমায় চলে যেতে পারে। তাই ৮ এবং ৯ এপ্রিল ২ দিন ঈদের ছুটি বাড়ানো হলে ৫ এপ্রিল থেকে সবাই স্বাচ্ছন্দ্যে, ধাপে ধাপে বাড়ি যাওয়ার সুযোগ পাবে। গণপরিবহন সংকট ও যাত্রী ভোগান্তি থেকেও মুক্তি মিলবে।’
আরও পড়ুন:দেশের পাঁচটি বিভাগে বজ্রসহ বৃষ্টির আভাস দিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর।
রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি বুধবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এমন বার্তা দিয়েছে।
পূর্বাভাসে সিনপটিক অবস্থান নিয়ে বলা হয়, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।
বৃষ্টিপাত নিয়ে বলা হয়, রংপুর, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দুই-এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্য জায়গায় অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
তাপমাত্রা নিয়ে পূর্বাভাসে বলা হয়, সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়তে পারে। রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে।
মন্তব্য