সিলেট শহরের সুরমা নদীর তীরে চাঁদনীঘাট এলাকায় ১৯৩৬ সালে নির্মাণ করা হয় ‘সারদাস্মৃতি ভবন’। সংস্কৃতি চর্চার বিকাশে সিলেটের এক ব্যবসায়ী পরিবার ৩৯ শতক জমিতে কলকাতা ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউটের আদলে মিলনায়তনটি নির্মাণ করে।
এরপর থেকে সিলেটের প্রথম এ মিলনায়তনে গান, নাটকসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। পর্যায়ক্রমে সিলেট পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হয়ে আসছে ভবনটি।
তবে কয়েক বছর ধরে ঐতিহ্যবাহী এ ভবনকে ভাগাড়ে পরিণত করেছে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)। সারদা হল প্রাঙ্গণে ফেলে রাখা হয়েছে সিসিকের বিকল গাড়িসহ যন্ত্রাংশ। মিলনায়তনের ভেতরে ফেলে রাখা হয়েছে বইয়ের স্তূপ। এর ফলে সারদা হলে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড। ঐতিহ্যবাহী এই ভবনটি অযত্নে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
এ নিয়ে ক্ষুব্ধ সংস্কৃতিকর্মীরা। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিলেট-১ আসনের সাংসদ ড. একে আব্দুল মোমেন সারদা হল চত্বরের জঞ্জাল সরিয়ে দেয়ার জন্য সিসিক মেয়রের কাছে ডিও লেটার পাঠিয়েছেন।
সিলেট নগরীর বন্দরবাজার এলাকার পুরানো নগর ভবন ভেঙে নতুন ভবন নির্মাণ শুরু হয় ২০১২ সালে। তখন সুরমা নদীর পারে তোপখানা এলাকায় সিটি করপোরেশন পরিচালিত ‘পীর হাবিবুর রহমান’ পাঠাগারের অফিস অস্থায়ীভাবে স্থানান্তর করা হয়। এ পাঠাগারের বই এনে স্তূপ করে রাখা হয় সারদা হলে।
এ ছাড়া হলের মূল ভবনের পাশের ছোট ভবনগুলোতে সিসিকের কয়েকটি দপ্তরের কার্যক্রম চালু করা হয়। সে সময় সিসিকের কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, নতুন নগর ভবনের কাজ শেষ হলে আবার পাঠাগার চালু হলে সারদা হল সংস্কৃতি চর্চার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে।
২০১৮ সালের জানুয়ারিতে নবনির্মিত ভবন উদ্বোধনের পর স্থায়ী ভবনে নেয়া হয় সিসিকের কার্যক্রম। তবে স্থায়ী ভবনে আসার প্রায় তিন বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত চালু হয়নি পীর হাবিবুর রহমান পাঠাগার। সংস্কৃতি চর্চার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়নি সারদা হলও।
সারদা হল কমপ্লেক্সের ভেতরে এখনও সিসিকের বিকল গাড়িগুলো ফেলে রাখা হয়েছে। পানির গাড়ি, বুলডোজারের যন্ত্রাংশও রাখা হয়েছে আঙিনাজুড়ে। সিসিকের কিছু কর্মচারীর আবাসনের ব্যবস্থাও করা হয়েছে এই চত্বরে।
আর পীর হাবিবুর রহমান পাঠাগারের বই দীর্ঘদিন ফেলে রাখায় বেশির ভাগ বই নষ্ট হয়ে গেছে। মূল ভবনটিও নষ্ট হয়ে গেছে।
সারদা হলের পাশেই সিলেটের আরও দুই ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা কিনব্রিজ ও আলী আমজদের ঘড়ি। এসব স্থাপনার আশপাশ দখল করে গাড়ি পার্কিংয়ের স্থান হিসেবে ব্যবহার করছে সিটি করপোরেশন। এতে সেখানে বেড়াতে যাওয়া পর্যটকরা পড়েন বিপাকে।
প্রায় এক যুগ আগে নদী পারের স্থানটির অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে দৃষ্টিনন্দনভাবে সাজিয়েছিল সড়ক ও জনপথ বিভাগ।
এ বিষয়ে সিলেট সম্মিলিত নাট্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রজতকান্তি গুপ্ত বলেন, ‘হলটি এক ব্যক্তি সংস্কৃতি চর্চার জন্যই নির্মাণ ও দান করেছিলেন। এ ভবনকে ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা অনৈতিক। এটি রক্ষা করা সবার দায়িত্ব।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভবনটি সংস্কার করে পুরো এলাকা নিয়ে একটি সংস্কৃতিক কমপ্লেক্স নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছি। সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনের কাছেও এ দাবি জানিয়েছি।
‘তারা ভবন পরিদর্শন করে দাবির সঙ্গে একমতও হয়েছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ ব্যাপারে সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর কাছে ডিও লেটারও দিয়েছেন।’
রজতকান্তি বলেন, ‘সিলেট শহরে কবি নজরুল অডিটরিয়াম নামে একটি সরকারি মিলনায়তন রয়েছে। এর ভাড়া অনেক বেশি এবং সারা বছর সরকারি নানা অনুষ্ঠান লেগে থাকে। ফলে অনেক সাংস্কৃতিক সংগঠন ওই মিলনায়তন ব্যবহারের সুযোগ পায় না। এ অবস্থায় সারদা হল শিগগিরই সংস্কৃতি চর্চার জন্য উন্মুক্ত করার দাবি জানাচ্ছি।’
এ ব্যাপারে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) বিধায়ক রায় চৌধুরী বলেন, ‘সিসিকের নিজস্ব কোনো পার্কিং এলাকা নেই। ফলে গাড়ি নদী তীরবর্তী এলাকায় পার্কিং করা হয়। পার্কিং প্লেসের জন্য একটি জায়গা অধিগ্রহণের পরিকল্পনা আছে, যেখানে গাড়ি মেরামতের ব্যবস্থাও থাকবে। এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ে ডিপিপি পাঠানো হবে। নিজস্ব পার্কিং প্লেস হয়ে গেলে নদী তীরবর্তী জঞ্জাল আর থাকবে না।’
সরদা হল সংস্কার এবং সংস্কৃতি চর্চার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি মেয়র দেখভাল করছেন। তিনিই এ ব্যাপারে ভালো বলতে পারবেন।’
সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে কলটি রিসিভ হয়নি।
কেরানীগঞ্জে দীর্ঘ এক দশকের বেশি সময় ধরে মানবিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ভূমিকা রাখছে কেরানীগঞ্জ ব্লাড ডোনার্স ক্লাব। রক্তের অভাবে বিপদে পড়া মানুষদের পাশে দাঁড়ানো থেকে শুরু করে চিকিৎসাসেবা পৌঁছে দেওয়া, সবখানেই তারা পরিচিত এক আস্থার নাম।
২০১৪ সালে সূচনা হওয়ার পর থেকে সংগঠনটি নিয়মিত রক্তদান কর্মসূচি চালিয়ে আসছে। এ পর্যন্ত প্রায় ১৭ হাজার মানুষকে রক্তের গ্রুপ পরীক্ষার সেবা দেওয়া হয়েছে। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের বিনা মূল্যে রক্তের গ্রুপ নির্ণয় ও কার্ড প্রদান কার্যক্রম স্থানীয়ভাবে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে।
সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবীরা শুধু রক্তদানেই সীমাবদ্ধ নয়, নানা সময়ে বিনা মূল্যে মেডিকেল ক্যাম্প আয়োজন করছে। এসব ক্যাম্পে হেপাটাইটিস বি ভাইরাস, ডায়াবেটিস, রক্তচাপ পরীক্ষা এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ বিতরণ করা হয়। অসুস্থ ও অসচ্ছল রোগীদের জন্য তাদের এই উদ্যোগ অনেক পরিবারকে উপকৃত করছে।
সংগঠনের অন্যতম সদস্য সুমন আহমেদ জানান, মানুষের পাশে থাকা এবং মানবিক কাজের ধারা অব্যাহত রাখা আমাদের মূল লক্ষ্য। আমরা মনে করি, সমাজের বিত্তবানরা সহযোগিতার হাত বাড়ালে এই কার্যক্রম আরও বিস্তৃত হবে।
বর্তমানে কেরানীগঞ্জ ব্লাড ডোনার্স ক্লাব তরুণ প্রজন্মকে সামাজিক কাজে সম্পৃক্ত করতে সচেতনতামূলক কার্যক্রমও পরিচালনা করছে। দুর্যোগকালীন ত্রাণ বিতরণ, জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও চিকিৎসা সহায়তা সব মিলিয়ে এটি কেরানীগঞ্জের মানুষের কাছে একটি নির্ভরযোগ্য সংগঠন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
সংগঠনের সদস্য শাহাদাৎ হোসেন বলেন, আমরা শুরু থেকেই চেষ্টা করেছি মানুষের বিপদে পাশে থাকতে। রক্তের অভাবে যেন কোনো মানুষ কষ্ট না পায়, সেই লক্ষ্য নিয়েই কাজ করছি। আজকে সাধারণ মানুষ আমাদের পাশে আছে বলেই কেরানীগঞ্জ ব্লাড ডোনার্স ক্লাব এ পর্যন্ত এতটা পথ এগোতে পেরেছে। আগামীতেও মানবিক সেবা অব্যাহত রাখতে চাই।
সামাজিক সংগঠক মহল বলছে, ব্লাড ডোনার্স ক্লাব ইতোমধ্যে কেরানীগঞ্জে মানবিক কাজের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। ভবিষ্যতে এই সংগঠন যদি আরও সহায়তা পায় তবে মানবতার সেবায় বড় ভূমিকা রাখতে পারবে।
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন ও কাউন্সিলে ভোটগ্রহণ শেষে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত হয়েছে। গত শনিবার সন্ধ্যায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার মো. রেদোয়ান খান এ ফলাফল ঘোষণা করেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আলহাজ জি. কে. গউছ, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সাবেক এমপি এম নাসের রহমান, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফয়জুল করিম ময়ুন, সদস্য সচিব আব্দুর রহিম রিপন, সদস্য অ্যাডভোকেট আবেদ রাজাসহ বিএনপির অন্যান্য নেতারা।
ফলাফলে সভাপতি পদে মো. জয়নাল আবেদীন বাচ্চু ৪৯৩ ভোট, সিনিয়র সহসভাপতি পদে মো. আব্দুল জলিল জামাল ৩৬০ ভোট, সাধারণ সম্পাদক পদে বদরুজ্জামান সজল ৩৯২ ভোট, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে কমর উদ্দিন আহমদ কমরু ৪১৮ ভোট এবং সাংগঠনিক সম্পাদক পদে মো. আব্দুল মুক্তাদির মনু ৩২৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। দীর্ঘদিন পর হওয়া এ নির্বাচনী কাউন্সিলে নেতা-কর্মীদের মধ্যে উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়।
আগামীকাল ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ দুপুর ২:০০ টা থেকে পদ্মা সেতুতে লাইভ পাইলটিং আকারে চালু হচ্ছে আধুনিক নন-স্টপ ইলেকট্রনিক টোল কালেকশন (ETC) সিস্টেম। এ সিস্টেমের মাধ্যমে গাড়ি থামানো ছাড়াই নির্ধারিত লেন ব্যবহার করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে টোল পরিশোধ করে সেতু পার হওয়া যাবে।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা জনাব মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান-এর বিশেষ নির্দেশনায় পদ্মা সেতুতে ইলেকট্রনিক টোল কালেকশন (ইটিসি) সিস্টেম চালু হচ্ছে।
ইটিসি সিস্টেমে আগ্রহী ব্যবহারকারীগণকে প্রথমে ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড এর TAP অ্যাপ-এ গিয়ে “D-Toll” অপশনে গাড়ি রেজিস্ট্রেশন ও রিচার্জ সম্পন্ন করতে হবে। এরপর পদ্মা সেতুর RFID বুথে শুধু প্রথমবারের মতো RFID ট্যাগ চেক ও রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম শেষ করতে হবে।
প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে গাড়ি ব্যবহারকারীগণ ন্যূনতম ৩০ কিলোমিটার/ঘণ্টা গতিতে ETC লেন ব্যবহার করতে পারবেন। এ সময় স্বয়ংক্রিয়ভাবে ব্যবহারকারীর একাউন্ট থেকে নির্ধারিত টোল কর্তন হবে।
ভবিষ্যতে TAP এর পাশাপাশি অন্যান্য ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাপও এই সেবার সঙ্গে যুক্ত হবে মর্মে আশা করা যায়। TAP সহ বিভিন্ন ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাপের সাথে যুক্ত হওয়ার জন্য কাজ করছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের a2i (এটুআই)।
আনোয়ারা উপজেলায় লায়ন্স ক্লাব অব চিটাগাং কর্ণফুলীর উদ্যোগে আয়োজন করা হয়েছে বিশেষ স্বাস্থ্যসেবা ক্যাম্প ও বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি।
রোববার সকালে উপজেলার রায়পুর গাউছিয়া হাশেমীয়া আলিম মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে দিনব্যাপী এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। ক্যাম্পে মাদ্রাসার এক হাজারের অধিক শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের জন্য বিনা মূল্যে বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হয়।
সেবার মধ্যে ছিল রক্তের গ্রুপ নির্ণয়, ডায়াবেটিস পরীক্ষা, চক্ষু পরীক্ষা, ক্যান্সার সচেতনতা ও প্রাথমিক পরীক্ষা এবং ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়াবিষয়ক পরামর্শ।
অনুষ্ঠানে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোহাম্মদ সোলাইমানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে লায়ন্স ইন্টারন্যাশনালের জেলা গভর্নর লায়ন মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ অপু, বিশেষ অতিথি হিসেবে প্রথম সহকারী জেলা গভর্নর লায়ন মো. কামরুজ্জামান লিটন, দ্বিতীয় সহকারী জেলা গভর্নর লায়ন মোহাম্মদ আবু বকর সিদ্দিক, লায়ন্স ক্লাব অব চিটাগাং কর্ণফুলীর সভাপতি লায়ন মো. ইকবাল হোসেন সুমন, রায়পুর গাউছিয়া হাশেমীয়া আলিম মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি লায়ন মোহাম্মদ ফয়সাল মিয়া।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন লায়ন্স ইন্টারন্যাশনালের জেলা গভর্নর লায়ন মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ অপু। তিনি বলেন, লায়ন্স ইন্টারন্যাশনাল বিশ্বব্যাপী ২১২টি দেশে মানুষের সেবা দিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশেও আমরা সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়াতে চেষ্টা করছি। এ স্বাস্থ্যসেবা কর্মসূচি তারই অংশ। পাশাপাশি আয়োজনে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারা রোপণ করা হয়। এই ধরনের সামাজিক ও মানবিক কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
কুমিল্লা নগরীর শান্ত ভোর মুহূর্তেই পরিণত হচ্ছে ছিনতাই আতঙ্কে। শহর পুরোপুরি ঘুম থেকে জাগার আগেই সকালের পথচারী ও বিভিন্ন পেশাজীবীরা পড়ছেন ছিনতাইকারীদের খপ্পরে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভোরের ফাঁকা সড়ককে টার্গেট করছে ছিনতাইকারীরা। মোটরসাইকেলে এসে ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে মুহূর্তেই লুটে নিচ্ছে সর্বস্ব। কখনো কখনো তারা টার্গেট করা ব্যক্তিকে কুপিয়ে আহতও করছে। এতে নগরবাসীর মধ্যে তীব্র উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে।
রোববার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যে নগরীর কাপ্তান বাজার এলাকার বাসিন্দা মো. মঈনুল ইসলাম ঢাকা যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হন। পথে একটি সিএনজিতে উঠতেই তিনি ছিনতাইকারীদের কবলে পড়েন। সিএনজির ভেতরে থাকা দুই ব্যক্তি ছুরি ধরে মঈনুলের কাছ থেকে নগদ টাকা ও মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেয় এবং আঘাত করে আহত করে। থানায় গেলেও আশানুরূপ সহযোগিতা পাননি তিনি। শুধু একটি মোবাইল ফোন হারানোর সাধারণ ডায়েরি করতে বলা হয়। এক সপ্তাহ পার হলেও এখনো ছিনতাইকারীরা ধরা পড়েনি।
দেড় মাস আগে কক্সবাজার ভ্রমণ শেষে বাড়ি ফেরার পথে একইভাবে ছিনতাইয়ের শিকার হন কালীপদ দেবনাথ ও তার বন্ধু পলাশ দে। সালাউদ্দিন মোড়ে অস্ত্রের মুখে তাদের কাছ থেকেও মোবাইল ও মূল্যবান সামগ্রী ছিনিয়ে নেয় দুর্বৃত্তরা। থানায় অভিযোগ করা হলেও সেই চক্রও এখনো ধরা পড়েনি।
গত কয়েক মাস ধরে নগরীতে ভোর হলেই এমন ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। থানায় ও গণমাধ্যমে এসব বিষয়ে নিয়মিত মৌখিক ও লিখিত অভিযোগ আসছে। তবে অনেকেই ঝামেলা এড়াতে ঘটনাগুলো গোপন রাখছেন।
নগরীর ঠাকুরপাড়া বিসিক এলাকার বাসিন্দা আবুল হোসেন জানান, ভোর হলেই ঠাকুরপাড়া ও রানীরবাজার এলাকার বিভিন্ন মোড়ে ছিনতাইকারীরা ওৎ পেতে থাকে। রিকশায় বা হেঁটে যাতায়াতকারী কাউকে দেখলেই অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে সর্বস্ব ছিনিয়ে নেয় তারা।
সম্প্রতি পুলিশ সুপারের বাসভবনের সামনে ছিনতাইয়ের একটি ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, রোববার রাত সোয়া ৩টার দিকে মোটরসাইকেলে আসা তিন ছিনতাইকারী এক অটো রিকশা যাত্রীর মোবাইল ফোন ও টাকা ছিনিয়ে নিচ্ছে।
৭ আগস্ট ভোরে টমছম ব্রিজ সংলগ্ন কাসেমুল উলুম মাদ্রাসার পাশে এক মাদ্রাসার শিক্ষক ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হন। দুর্বৃত্তরা তার কাছ থেকেও নগদ টাকা, মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। এর আগে, ৪ আগস্ট ভোরে শাসনগাছা এলাকায় চান্দিনার বাসিন্দা ইব্রাহীম একইভাবে ছিনতাইয়ের শিকার হন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বর্তমানে নগরীতে কুড়িটির বেশি ছিনতাইকারী গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। এদের অধিকাংশই মাদকাসক্ত। মাদকের টাকা জোগাড় করতেই তারা ছিনতাইয়ে জড়াচ্ছে। তাদের অনেকের বিরুদ্ধে থানায় মামলা রয়েছে।
এদিকে নগরবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বসানো সিসিটিভি ক্যামেরার বেশিরভাগই অকার্যকর। কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এসব ক্যামেরা মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মো. মহিনুল ইসলাম স্বীকার করেছেন- নগরীতে ছিনতাই বেড়েছে এবং ছিনতাইকারী ধরা পড়েছেও। তিনি জানান, গত এক বছরে ৪০ জন ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে পর্যাপ্ত পুলিশ সদস্য, গাড়ি ও কার্যকর সিসিটিভি না থাকায় টহল জোরদার করা যাচ্ছে না। লজিস্টিক সহায়তা বাড়ানো গেলে ছিনতাই প্রতিরোধে আরও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হতো।
রবিবার ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখ সকালে কোস্ট গার্ড মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সিয়াম-উল-হক এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, গত ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখ শুক্রবার বিকাল ৫ টায় নারায়ণগঞ্জের রুপগঞ্জ থানাধীন তারাবো ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীতে একটি নৌ দুর্ঘটনা ঘটে। বাল্কহেডের সাথে নৌকার সংঘর্ষের ফলে ৮ জন মাদ্রাসার ছাত্রসহ নৌকাটি নদীতে ডুবে যায়। অতঃপর ৮ জনের মধ্যে ৬ জন জীবিত উদ্ধার হলেও ২ জনকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। উক্ত বিষয়টি জনৈক এক ব্যক্তি কোস্ট গার্ড কে অবগত করে।
প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে কোস্ট গার্ড স্টেশন পাগলা কর্তৃক একটি উদ্ধারকারী দল অতি দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার অভিযান আরম্ভ করে। পরবর্তীতে আজ ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখ শনিবার বিকাল ৫ টায় কোস্ট গার্ড উদ্ধারকারী দল নিখোঁজ ২ কিশোরের মৃতদেহ উদ্ধার করে।
তিনি আরও বলেন, উদ্ধারকৃত মৃতদেহ ২ টি অভিভাবকদের উপস্থিতিতে ডেমরা নৌপুলিশের নিকট হস্তান্তর করা হয়।
কুষ্টিয়ার পৌর কবরস্থানে বাবা মায়ের কবরে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন ‘লালন সম্রাজ্ঞী’ খ্যাত সঙ্গীতশিল্পী ফরিদা পারভীন। ফরিদা পারভীনের শেষ ইচ্ছানুযায়ী তাকে কুষ্টিয়ায় তার বাবা মায়ের কবরে দাফন করা হয়েছে।
রবিবার এশার নামাজের শেষে রাত সাড়ে ৮টায় কুষ্টিয়া পৌর গোরস্থানের জানাযার স্থানে জানাযা শেষে কুষ্টিয়া পৌর গোরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
দেশবরেণ্য সংগীতশিল্পী ফরিদা পারভীনের জানাযায় অংশ নেন কবি চিন্তক ফরহাদ মজহার, কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মাদ আরেফিনসহ কুষ্টিয়ার রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মী, ললন ভক্ত, অনুরাগীসহ সাধারণ মানুষ।
এর আগে ঢাকা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে জানাযা শেষে কুষ্টিয়ায় নিয়ে আসা হয় লোক সংগীতের বরেণ্যশিল্পী ফরিদা পারভিনকে।
গত শনিবার রাত ১০টা ১৫ মিনিটে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন বরেণ্য সংগীতশিল্পী ফরিদা পারভীন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। দীর্ঘদিন ধরে তিনি কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন।
১৯৫৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর নাটোরের সিংড়ায় জন্মগ্রহণ করেন ফরিদা পারভীন। গানে তাঁর যাত্রা শুরু হয় মাগুরা জেলায় মাত্র চার-পাঁচ বছর বয়সে, ওস্তাদ কমল চক্রবর্তীর কাছে। এরপর রাজশাহী বেতারে ১৯৬৮ সালে তালিকাভুক্ত নজরুল সংগীতশিল্পী হিসেবে যুক্ত হন।
স্বাধীনতার পর কুষ্টিয়ায় বসবাসকালে তাঁর সংস্পর্শে আসে লালন সংগীত। ১৯৭৩ সালে মোকছেদ আলী সাঁইয়ের কাছ থেকে ‘সত্য বল সুপথে চল’ গানটি শেখার মাধ্যমে শুরু হয় তাঁর লালনগীতির যাত্রা। এরপর খোদা বক্স সাঁই, ব্রজেন দাস, বেহাল সাঁই, ইয়াছিন সাঁই এবং করিম সাঁইয়ের কাছ থেকেও তিনি তালিম নেন।
বিদায় বেলায় ফরিদা পারভীন রেখে গেলেন স্বামী ও চার সন্তানকে। তবে তার গানের ভুবন ও লালনচর্চার উত্তরাধিকার বাংলাদেশের সংগীতাঙ্গনে চিরকাল বেঁচে থাকবে।
মন্তব্য