গাইবান্ধায় আখক্ষেতে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনাকে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড বলছে পুলিশ। এ ঘটনায় কারও উসকানি আছে কি না তাও খতিয়ে দেখার কথা জানিয়েছেন গোবিন্দগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।
সম্প্রতি রংপুর সুগার মিলের সামনে আন্দোলনরত শ্রমিক, কর্মচারী-কর্মকর্তা ও চাষিদের সংবাদ সম্মেলন চলাকালে নিজেদের ক্ষেতে আগুন দেন মিলটির কর্মচারী ও আখচাষি জোবায়দুর রহমান। এ ঘটনায় ধারণ করার ভিডিও ভাইরাল হয় সামাজিক মাধ্যমে। চিনিকল বন্ধের ‘প্রতিবাদে’ আখ ক্ষেত পুড়িয়ে প্রতিবাদ - এমন শিরোনামে প্রতিবেদন আসে বিভিন্ন গণমাধ্যমে।
অথচ চাষি জোবায়দুর বলছেন, মূলত চাষিদের আন্দোলন বেগবান করতে এবং মিডিয়ায় ঘটনাটি তুলে ধরতেই সেদিন জমিতে আগুন ধরিয়ে দেন তারা দুই ভাই।
লোকসান কমাতে গত ১ ডিসেম্বর কুষ্টিয়া, পাবনা, পঞ্চগড়, শ্যামপুর (রংপুর), রংপুর ও সেতাবগঞ্জ (দিনাজপুর) চিনিকল বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি)। এই ছয় চিনিকলে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের আখ মাড়াই বন্ধ করা হয়েছে। এসব চিনিকলের আখ আশপাশের কলের জন্য সংগ্রহ করবে সরকার। শ্রমিক-কর্মচারীদের পর্যায়ক্রমে ওইসব কলে কর্মসংস্থানেরও আশ্বাস দেয়া হয়েছে।
এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আন্দোলনে নামে চিনিকলগুলোর শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তারা।
কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গত ১৯ ডিসেম্বর শনিবার দুপুরে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মহিমাগঞ্জে অবস্থিত রংপুর চিনিকলের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ ও সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন শ্রমিক, কর্মচারী-কর্মকর্তা ও আখ চাষিরা। পরে সংবাদ সম্মেলন চলাকালে মিলের পশ্চিম দিকে আখের জমিতে আগুন দেন মহিমাগঞ্জ ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামের কৃষক জিল্লুর রহমান ও তার ভাই মিল কর্মচারী জোবায়দুর রহমান।
পরদিন গত ২০ ডিসেম্বর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে চিনিকল নিয়ে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য পরিবেশন থেকে বিরত থাকতে সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিএসএফআইসি।
শনিবারের সংবাদ সম্মেলনেই ২০-২৪ ডিসেম্বর লাগাতার বিক্ষোভ সমাবেশ ও সড়ক অবরোধ কর্মসূচির ঘোষণা দেন আন্দোলনকারীরা। মিল এলাকায় ২৫ ডিসেম্বর অর্ধদিবস হরতালের ডাকও দেন তারা, যেদিন আশপাশের কলগুলোয় আখ মাড়াই শুরু হওয়ার কথা।
আখ ক্ষেতে আগুন দেয়ার ওই ঘটনার পরদিন রোববার শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করেছেন রংপুর চিনিকলের আন্দোলনকারীরা। সোম ও মঙ্গলবার চিনিকলের সামনে আন্দোলনরত কাউকে দেখা যায়নি।
সেদিন আগুনে পুড়ে যায় জিল্লুর রহমান ও তার ভাই মিল কর্মচারী জোবায়দুর রহমানের ছয় বিঘার মধ্যে তিন বিঘা জমির আখ।
তারা দুই ভাই সরকারের কাছ থেকে ‘ক্ষতিপূরণ’ আদায়ে নিজেদের ক্ষেত পুড়িয়ে মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করার কথা বললেও পুলিশ বলছে- এখানে ‘গভীর ষড়যন্ত্র’ থাকতে পারে। কেউ তাদের উসকানি দিতে পারে।
গোবিন্দগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘উৎপাদিত সকল ফসলের মালিক রাষ্ট্র। কিন্তু আপনি তা নিজের দাবি করে আগুনে পুড়ে ক্ষতি সাধন করতে পারেন না। এটা নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড।’
বিষয়টিকে তিনি সন্তানকে খুনের সঙ্গে তুলনা করে বলেন, ‘কেউ যদি আদালতকে বলে আমি আমার সন্তানকে মেরেছি; আপনি বিচার করার কে? এটাও এমন ঘটনা।’
ওসি মেহেদী জানান, তাদেরকে আখের জমিতে আগুন দিতে কারা বা কীভাবে উসকানি দিয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
নিজ হাতে জমিতে আগুন দেয়ার পর ক্ষেতের মালিক চিনিকলের কম্পিউটার অপারেটর জোবায়দুর দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘২০২০-২১ অর্থবছরে মিল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ৯ হাজার টাকা ঋণ নেই। সেই টাকায় ক্ষেতে সার-কীটনাশক ছিটাই। যেহেতু আখ মিলে নেয়া হবে না, তাই রাগ-ক্ষোভ থেকে দুই ভাই জমিতে আগুন দিয়েছি। কাজটা দেশের জন্য খারাপ হলেও নিজেদের দুঃখ জানান দিতে পেরে সঠিক কাজই করেছি বলে মনে করছি।’
জোবায়দুর জানান, মিল কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের কোনো বকেয়া নেই। তবে তার বেতনের প্রায় ৫০ হাজার টাকা পান তিনি।
আখক্ষেতে আগুন দেয়ার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুল লতিফ প্রধান বলেন, ‘আমিও কৃষকের সন্তান। আমার জমিতেও আখ আছে। এ সমস্যায় আমি নিজেও রয়েছি। তাই বলে উসকানিতে ক্ষেত জ্বালিয়ে দেব?’
গত শনিবারের ওই ঘটনা নিয়ে রোববার বিকেলে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সম্মেলন কক্ষে জরুরি সভা হয়। সেখানে উপজেলা প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও চিনিকলের শ্রমিক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও আখ চাষি ফেডারেশনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সরকার তো অন্য মিলের জন্য চাষিদের আখ কিনবে। এরপরও কেন আগুন দিলেন- এমন প্রশ্নে জোবায়দুর রহমান বলেন, ‘রংপুর চিনিকলের চেয়ে ছোট জয়পুরহাট চিনিকলে আখ দিতে গেলে অনেক সময় লাগবে। এতে ক্ষেতের আখ জমিতেই শুকিয়ে যাবে। আখ তুলতে না পারলে ধান চাষও করা যাবে না।’
এসময় তিনি তার অন্য আখের জমিও পুড়িয়ে ফেলার হুমকি দেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত কারও উসকানিতে তারা নিজেদের ক্ষেতে আগুন দেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ প্রসঙ্গে জোবায়দুর বলেন, ‘আমি চিনিকলের রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম। এ সময় সাংবাদিকদের দেখে আন্দোলনকে বেগবান করতেই আগুন দেই।’
আগুন লাগার মিনিট পাঁচেক পর সাংবাদিকরা জমিতে কীভাবে পৌঁছালেন- এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সংবাদ সম্মেলনের স্থল থেকে আখের জমির দূরত্ব আধা কিলোমিটারের কম। আগুন দেয়ার পর কেউ তাদের ফোন করে।’
এ বিষয়ে চিনিকল শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান দুলাল বলেন, ‘মিল বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে শ্রমিক, কর্মচারী ও আখ চাষিদের টানা আন্দোলন কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে চলছে। কিন্তু শনিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনের সময়ে হঠাৎ মোবাইল ফোনে আখের জমিতে আগুন দেয়ার খবর আসে।’
আখের জমিতে আগুন দেয়ার ঘটনার জন্য জিল্লুর রহমান ও তার ভাই জোবায়দুরের ‘হটকারী ও জেদী মনোভাবকে’ দায়ি করেন তিনি।
চিনিকল নিয়ে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য পরিবেশন থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে বিএসএফআইসির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চলতি ২০২০-২১ মৌসুমে আখ মাড়াই স্থগিত থাকা ছয়টি চিনিকলের ক্যাচমেন্ট এলাকায় উৎপাদিত ও কৃষকের সরবরাহকৃত সমুদয় আখ ক্রয় করা হবে। এ সব চিনিকলের ক্যাচমেন্ট এলাকার আখ ক্রয় করা হবে না- মর্মে গুজব ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে।
বিএসএফআইসি জানিয়েছে, সংস্থাটির আওতাধীন চিনিকলগুলোর আধুনিকায়নের মাধ্যমে বহুমুখী খাদ্যপণ্য উৎপাদন করে রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলসমূহকে লাভজনক করার লক্ষ্যে চলতি মৌসুমে ছয়টি চিনিকলে আখ মাড়াই কার্যক্রম স্থগিতের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
এ সব চিনিকলে আখ মাড়াই কার্যক্রম চলতি মৌসুমের জন্য স্থগিত করা হলেও বিগত বছরগুলোর মতো এসব মিলের ক্যাচমেন্ট এলাকায় উৎপাদিত ও কৃষকের সরবরাহকৃত আখ কেনা হবে। পরবর্তীতে তা পার্শ্ববর্তী চালু মিলে মাড়াইয়ের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। চাষিদের আখের মূল্য পরিশোধে সরকার ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দও দিয়েছে।
বিএসএফআইসি বলছে, চলতি মৌসুমে মিলের মাড়াই কার্যক্রম স্থগিত থাকার কারণে কোনো আখ চাষি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। আখ মাড়াই স্থগিতকৃত চিনিকলগুলোতে কর্মরত কোনো শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তাকে ছাঁটাই করা হবে না; যথাযথ বেতন/মজুরি দেয়া হবে।
বিএসএফআইসি জানিয়েছে, আখ মাড়াই চালু থাকা চিনিকলগুলোতে স্থগিত মিল থেকে শ্রমিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পর্যায়ক্রমে বদলি বা সংযুক্তির মাধ্যমে সমন্বয় বা পদায়ন করা হবে।
কোনো ধরনের দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেবেন না বলে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) নবনিযুক্ত উপাচার্য অধ্যাপক ডা. দীন মোহাম্মদ।
তিনি বলেছেন, ‘আমি কোনো দুর্নীতি করব না। কোনো দুর্নীতি প্রশ্রয়ও দেব না। আমি মানুষ হিসেবে ভুল করতেই পারি, তবে ভুল হলে ধরিয়ে দেবেন। আমার কাজের গতি যেন ত্বরান্বিত হয়, সে ব্যাপারে সহযোগিতা করবেন।’
বৃহস্পতিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডা. মিল্টন হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। এর আগে দুপুর ১২টার দিকে উপাচার্যের কার্যালয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করেন নতুন উপাচার্য।
দায়িত্ব নিয়েই সবার প্রতি সহযোগিতার আহ্বান জানিয়ে উপাচার্য বলেন, ‘আমি আপনাদেরই লোক, আমি বঙ্গবন্ধুর লোক, আমি প্রধানমন্ত্রীর লোক। আমাকে সবাই সহযোগিতা করবেন, ভুল হয়ে ধরিয়ে দেবেন। তবে কেউ আমাকে পিছু টানবেন না।’
তিনি বলেন, ‘আমি কারও অন্যায় আবদার শুনব না। সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে চাই। প্রশাসনিক ক্ষমতা দেখাতে নয়, আমি আপনাদের বন্ধু হয়ে কাজ করতে চাই। আমি আপনাদের পাশে থেকে সব সমস্যা সমাধান করব।’
চিকিৎসকদের উদ্দেশে নতুন উপাচার্য বলেন, ‘আপনাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করলেই আমি সবচেয়ে খুশি হব। অন্যকিছু দিয়ে আমাকে খুশি করা যাবে না। কেউ দায়িত্ব পালন করতে না পারলে দায়িত্ব থেকে সরে যেতে হবে। যিনি চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করতে পারবেন, তিনিই দায়িত্ব নেবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ আমার বন্ধু। তিনি আমাকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে বিদায় নিয়েছেন। আমি শারফুদ্দিন আহমেদকে শুভেচ্ছা জানাই।’
ডা. দীন মোহাম্মদ বলেন, ‘আমি সুনির্দিষ্ট কোনো গ্রুপের লোক নই। আমি কোনো ধরনের গ্রুপে যেতে চাই না। এ বয়সে আমার কোনো গ্রুপিংয়ের প্রয়োজন নেই। আমাকে যে আস্থা এবং বিশ্বাস নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখানে পাঠিয়েছেন, আমি সেটাকে মূল্যায়ন করতে চাই।’
উদ্বোধনের দীর্ঘদিন পরও সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল চালু না হওয়া প্রসঙ্গে নতুন উপাচার্য বলেন, ‘সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল চালু করা একটা বড় চ্যালেঞ্জ।’ এ বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও সচিবের সঙ্গে কথা হয়েছে বলে জানান তিনি।
উপাচার্য বলেন, ‘এই বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আমার দায়বদ্ধতা আছে। আমি বিদেশ থেকে অভিজ্ঞ চিকিৎসক-ট্রেইনারদের নিয়ে এসে আমাদের চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করব। আশা করি, সেবায় প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বের অন্যতম জায়গায় অবস্থান করবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়টিকে বিশ্বের অন্যতম একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা উপাচার্য হিসেবে তার একমাত্র অ্যাজেন্ডা বলে উল্লেখ করেন তিনি।
নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ইউনেস্কো ‘ট্রি অফ পিস’ পুরস্কার প্রদান করেনি বলে শিক্ষামন্ত্রীর দাবির একদিন পর এ বিষয়ে বিবৃতি দিয়েছে ইউনূস সেন্টার।
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ওই বিবৃতিতে ইউনূস সেন্টার জানিয়েছে, ২০২৪ সালের ১৪-১৬ মার্চ প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসকে আজারবাইজানের বাকুতে অনুষ্ঠিত বাকু ফোরাম একাদশে বিশিষ্ট বক্তা হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, নিজামি গানজাভি ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার থেকে অধ্যাপক ইউনূসকে পাঠানো বাকু ফোরামের অফিশিয়াল অনুষ্ঠানসূচিতেও অধ্যাপক ইউনূস ইউনেস্কোর পুরস্কার গ্রহণ করবেন বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। অধ্যাপক ইউনূসকে বাকু ফোরামের সমাপনী নৈশভোজে যোগদানের বিষয়টি বিশেষভাবে মনে করিয়ে দেওয়া হয়, যাতে তিনি ‘ট্রি অফ পিস’ পুরস্কারটি গ্রহণের জন্য মঞ্চে সশরীর উপস্থিত থাকেন।
ইউনূস সেন্টার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ইউনেস্কোর পুরস্কারের বিষয়টি উল্লেখ করে। অধ্যাপক ইউনূসকে প্রদত্ত ‘ট্রি অফ পিস’ ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রীকে প্রদত্ত পদকের একই ভাস্করের একই ভাস্কর্য।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এর আগে ২০২৩ সালের জুনে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ইউনেস্কোর প্রধান কার্যালয় পরিদর্শনের সময় ইউনেস্কো এবং অধ্যাপক ইউনূস প্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সংগঠন ইউনূস স্পোর্টস হাবের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যার উদ্দেশ্য ছিল ইউনেস্কোর ফিট ফর লাইফ ফ্ল্যাগশিপের অধীন টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে উভয় প্রতিষ্ঠানের একসঙ্গে কাজ করে যাওয়া।
এর আগে বুধবার শিক্ষামন্ত্রী ও বাংলাদেশ ইউনেস্কো কমিশনের চেয়ারম্যান মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, “নোবেল বিজয়ী প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসকে ইউনেস্কো ‘ট্রি অফ পিস’ পুরস্কার দেয়নি।”
তিনি বলেন, “আজারবাইজানের গঞ্জাভি ফাউন্ডেশনের আমন্ত্রণে ড. ইউনূসকে ইসরাইলের একজন ভাস্কর ‘ট্রি অফ পিস’ পুরস্কারে ভূষিত করেন।”
ইউনেস্কো থেকে পুরস্কার পেয়েছেন বলে ড. ইউনূস যে দাবি করেছেন তা অসত্য বলে দাবি করেন মন্ত্রী।
আরও পড়ুন:শান্তিতে নোবেলজয়ী হয়েও ড. ইউনূস ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার পক্ষ নিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেছেন, হত্যাযজ্ঞে নিশ্চুপ থেকে এবং একজন ইসরায়েলির দেয়া পুরস্কার নিয়ে ড. ইউনূস প্রকারান্তরে গণহত্যায় সমর্থন দিয়েছেন। আর ইউনূস সেন্টার এটিকে ইউনেস্কোর পুরস্কার উল্লেখ করে মিথ্যাচার করছে, যা খুবই দুঃখজনক।
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বৃহস্পতিবার মতবিনিময়কালে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ড. হাছান মাহমুদ এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘ইউনূস সেন্টারের মিথ্যাচারে আমি বিষ্মিত, হতবাক। সম্প্রতি আজারবাইজানের বাকুতে একটি সম্মেলনে মিজ হেদভা সের নামে একজন ইসরায়েলি ভাস্বর ড. ইউনুসকে একটি পুরস্কার দিয়েছেন। এ সম্মেলনে ইউনেস্কো কোনোভাবে জড়িত ছিল না।
‘এই পুরস্কার ইউনেস্কোর পক্ষ থেকে তো নয়ই, একজন ব্যক্তির পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে। আর ইউনূস সেন্টার সেটিকে ইউনেস্কোর পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে বলে মিথ্যাচার ও অপপ্রচার করেছে। তবে এটিই প্রথম নয়, এর আগেও এ ধরনের মিথ্যাচার ইউনূস সেন্টারের পক্ষ থেকে করা হয়েছে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ড. ইউনূস শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। ওদিকে গাজায় আজ নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ চলছে, নারী ও শিশুদের হত্যা করা হচ্ছে। এ নিয়ে তিনি একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি, প্রতিবাদ করেননি।
‘বরং এই সময়ে তিনি একজন ইসরায়েলির কাছ থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেছেন। এর অর্থ কি এটাই নয় যে ড. ইউনূস প্রকারান্তরে গণহত্যায় সমর্থন দিয়েছেন? এটি অত্যন্ত দুঃখজনক।’
সীমান্ত হত্যায় বিজিবি’র মাধ্যমে প্রতিবাদ
মতবিনিময় অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘২৫ মার্চ মধ্যরাতে লালমনিরহাট ও ২৬ মার্চ ভোরে নওগাঁ সীমান্তে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে দুই বাংলাদেশি নিহত হওয়ার ঘটনায় বিজিবি’র মাধ্যমে প্রতিবাদ জানানো এবং সীমান্তে পতাকা বৈঠকও হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমরা অনেকদিন ধরেই ভারতের সঙ্গে আলোচনা করে আসছি। সম্প্রতি ভারত সফরেও এ নিয়ে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকগুলোতে গুরুত্বসহ আলোচনা করেছি। সেই প্রেক্ষিতে সীমান্তে এখন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নন-লেথাল বা প্রাণঘাতী নয় এমন অস্ত্র ব্যবহার করা হয়। রাবার বুলেটে অনেকে আহত হন; কিন্তু প্রাণহানি কমে এসেছে। তবে আমাদের লক্ষ্য প্রাণহানিকে শূন্যের কোটায় নিয়ে আসা।’
নাবিক ও জাহাজ উদ্ধারে নানামুখী তৎপরতা চলছে
সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সোমালি জলদস্যুদের কবল থেকে বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহর নাবিকদের নিরাপদে উদ্ধার ও জাহাজটিকে মুক্ত করাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য।’
তিনি বলেন, ‘জাহাজ সম্পর্কে শুধু এটুকু বলতে চাই, নাবিকদের মুক্ত করার জন্য আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগে আছি। আমরা নানামুখী তৎপরতা চালাচ্ছি। আমরা অনেকদূর এগিয়েছি।’
জাহাজে খাদ্য সংকট নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, জাহাজটিতে খাদ্য সংকট নেই। এর আগে তিন মাস ধরে জলদস্যুদের কবলে থাকা অন্য জাহাজেও খাদ্য সংকট ছিল না।
আরও পড়ুন:ঈদের পর সমাধান করা হবে- স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এমন আশ্বাসে এক মাসের জন্য আন্দোলন থামালেন বেতন-ভাতা বাড়ানো ও বকেয়া ভাতা পরিশোধসহ চার দফা দাবিতে কর্মবিরতি কর্মসূচি পালনকারী পোস্ট গ্রাজুয়েট ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।
বৃহস্পতিবার দুপুরে চিকিৎসকদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক শেষে কর্মবিরতি প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘চিকিৎসকরা যে দাবিগুলো করেছেন সেগুলো যৌক্তিক। চিকিৎসকরা হাসপাতালকে বাঁচিয়ে রাখে। তাদের বেতন বাড়ানোর বিষয়ে আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি বলেছেন, চিকিৎসকদের দাবিগুলো বাস্তবায়ন হবে। তারা কাজে যোগদান করুক।’
বিষয়টি কতদিনে বাস্তবায়িত হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কিছুদিন তো লাগবেই। তবে ঈদের পর হয়তো বলতে পারব, কতদিনের মধ্যে বেতন বাড়বে।’
এর আগে গত শনিবার (২৩ মার্চ) চার দফা দাবিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মানববন্ধন করেন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।
আগামী মাসে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির বাংলাদেশ সফরে কিছু বিষয়ে গুরুত্ব পাবে বলে ইউএনবিকে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র।
ওই সূত্র বার্তা সংস্থাটিকে জানায়, শেখ তামিমের সফরে জনশক্তি, জ্বালানি, বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বৃহত্তর সহযোগিতার মাধ্যমে বিদ্যমান সম্পর্ক আরও জোরদার করতে চায় উভয় দেশ।
কাতারের আমিরের সফরে দুই দেশের মধ্যে প্রায় ডজনখানেক সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) ও চুক্তি চূড়ান্ত করার বিষয়ে আলোচনা চলছে জানিয়ে সূত্রটি বলেছে, সফরকালে এসব এমওইউ ও চুক্তি সই করা হবে।
ইউএনবির প্রতিবেদনে বলা হয়, কাতারের আমিরের দুই দিনের সফরটি হতে পারে আগামী ২১ থেকে ২২ এপ্রিল।
বার্তা সংস্থাটি জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আমিরের বৈঠকের পর যেসব এমওইউ ও চুক্তি সই হবে, সেগুলো নিয়ে দুই পক্ষ এখন কাজ করছে। সফরের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে আন্তমন্ত্রণালয় সভা করেছে।
গত বছরের মার্চে কাতারের রাজধানী দোহায় স্বল্পোন্নত দেশগুলোর বিষয়ে জাতিসংঘের সম্মেলন এলডিসি-৫-এর পার্শ্ববৈঠকে কাতারের আমির শেখ তামিমের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ওই বৈঠকে কাতারের কাছে বিশেষ করে এলএনজি সরবরাহে সহযোগিতার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
১৯৭৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় ওআইসি শীর্ষ সম্মেলনের পর একই বছরের ৪ মার্চ বাংলাদেশকে সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় কাতার।
১৯৭৫ সালের ২৫ জুন দোহায় বাংলাদেশ তার কূটনৈতিক মিশন চালু করে। ১৯৮২ সালে ঢাকায় কূটনৈতিক মিশন খোলে কাতার।
আরও পড়ুন:দেশের সাত বিভাগে ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এমন বার্তা দিয়েছে।
পূর্বাভাসে আজকের বৃষ্টিপাত নিয়ে বলা আছে, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দুই এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
সিনপটিক অবস্থান নিয়ে পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।
আজকের তাপমাত্রা নিয়ে পূর্বাভাসে বলা আছে, সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
ঢাকায় বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা সোমবার সকালে ছিল ৮৫%।
আরও পড়ুন:যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে এক বাংলাদেশি যুবক নিহত হয়েছেন।
স্থানীয় সময় বুধবার নিউ ইয়র্কের কুইন্সের একটি বাসায় মানসিক অবসাদে ভোগা ওই যুবককে বাধ্য হয়েই গুলি করতে হয় বলে পুলিশ দাবি করেছে।
নিউ ইয়ক টাইমস বলছে, ১৯ বছর বয়সী উইন রোজারিওকে দুপুর পৌনে ২টার দিকে মৃত ঘোষণা করা হয়। তিনি ওজোন পার্কের ১০৩ নম্বর স্ট্রিটে দ্বিতীয় তলার বাসায় তার পরিবারের সঙ্গে থাকতেন।
পুলিশ জনিয়েছে, ৯১১ নম্বরে ফোন পেয়ে পুলিশ ওই যুবকের বাসায় গিয়েছিল। এ সময় কাঁচি দিয়ে অফিসারদের হুমকি দিয়েছিলেন তিনি। এরই এক পর্যায়ে তার পায়ে গুলি চালানো হয়।
নিহতের ভাই উশতো রোজারিও বলেন, মা উইনকে ফেরাতে চেষ্টা করছিলেন। তবে এর মধ্যেই পুলিশ গুলি ছুড়েছে। এই গুলি ছোড়ার কোনো দরকার ছিল না।
পুলিশ ডিপার্টমেন্টের টহল প্রধান জন চেল সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, দুজন অফিসার মানসিক যন্ত্রণায় থাকা ব্যক্তি সম্পর্কে ৯১১ নম্বরে একটি কল পেয়ে সেখানে যায়। বাধ্য হয়েই গুলি চালাতে হয়েছে। বেশ উত্তেজনাপূর্ণ, বিশৃঙ্খল এবং বিপজ্জনক অবস্থা তৈরি হয়েছিল। রোজারিও ৯১১ নম্বরে কল করেছিলেন।
উইনের বাবা ফ্রান্সিস রোজারিও জানান, তার পরিবার ১০ বছর আগে বাংলাদেশ থেকে নিউইয়র্কে যান। উইনের স্বপ্ন ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়া। পরিবারের গ্রিন কার্ড পেতে দেরি হওয়ায় সেটি আর হয়নি।
নিহতের ভাই উশতো রোজারিও জানান, তার ভাই দুই বছর আগে ওজোন পার্কের জন অ্যাডামস হাই স্কুল থেকে স্নাতক করেছে। সম্প্রতি বিষণ্ণ ছিলেন তিনি। মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে গত বছর হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল তাকে।
মন্তব্য