বাংলাদেশ একদিন যুদ্ধবিমান নিজেরাই বানাবে বলে আশা প্রকাশ করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার সকালে যশোরে বিমানবাহিনী একাডেমিতে রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এ আশা প্রকাশ করেন তিনি।
‘সম্প্রতি আমরা চালু করেছি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন এন্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়। এটা লালমনিরহাটে আমরা স্থাপন করছি। এ বিশ্ববিদ্যালয় বিমান চলাচল, নির্মাণ, গবেষণা, মহাকাশ বিজ্ঞান চর্চা করবে’, বলেন সরকারপ্রধান।
‘আমি আশা করি এর মাধ্যমে হয়তো একদিন আমরা এ বাংলাদেশে যুদ্ধবিমান, পরিবহন বিমান, হেলিকপ্টার তৈরিও করতে পারব। আর তা ছাড়া মহাকাশ বিজ্ঞান চর্চা করা। হয়তো একদিন আমরা মহাকাশে পৌঁছেও যেতে পারি। সে প্রচেষ্টাও আমাদের থাকবে’, যোগ করেন তিনি।
বিমান বাহিনীকে আধুনিক ও যুগপোযোগী করে গড়ে তুলতে সরকারের নানা পদক্ষেপ তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘বিমানবাহিনীকে আধুনিক করতে পাঁচটি সি-১৩০জে বিমান ক্রয়ে চুক্তি হয়েছে, যার তিনটি এরই মধ্যে এসে পৌঁছেছে। বৈমানিকদের উচ্চতর প্রশিক্ষণে সাতটি অত্যাধুনিক কেএইট ডব্লিউ জেড ট্রেইনার বিমান সংযোজন করা হয়েছে এবং অচিরেই যুক্ত হচ্ছে পিটি সিক্স সিমুলেটর।
‘এ ছাড়াও শিগগিরই যুক্ত হবে এয়ারডিফেন্স এন্টিগ্রেশন, মোবাইল গ্যাপ ফিলার রাডার এবং সর্বাধুনিক এয়ার ডিফেন্স রাডার।’
বাহিনীর লক্ষ্যমাত্রা ২০৩০ বাস্তবায়নে বিমানবাহিনীতে আরও আধুনিক ও উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন যুদ্ধবিমান ও অন্যান্য সরঞ্জাম কেনার কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন আছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
করোনাভাইরাস মহামারির কারণে সে পরিকল্পনায় ছেদ পড়েছে বলে জানান সরকারপ্রধান।
তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে আমরা এখন অত ব্যয় করতে পারছি না। তবে আমাদের পরিকল্পনা আছে আমাদের বিমানবাহিনীকে যুগোপযোগী করে গড়ে তোলার।’
প্রধানমন্ত্রী জানান, বিমানবাহিনীর জন্য হেলিকপ্টার সিমুলেটর ট্রেনিং ইন্সটিটিউট ও এয়ারম্যান ট্রেনিং ইন্সটিটিউটের কাঠামো এরই মধ্যে অনুমোদন দিয়েছে সরকার।
এ সময় বিমানবাহিনীর নবীন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যুদ্ধ করে বিজয় অর্জনকারী একটি দেশ, একটি জাতি। এ কথা সব সময় মাথায় রেখে, মনে সাহস রেখে, মাথা উঁচু করে বিশ্ব দরবারে চলতে হবে এবং নিজেদেরকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে হবে।’
‘কোনো দিক দিয়েই বাংলাদেশ যেন কোনো কিছুতেই পিছিয়ে না থাকে, এটা মাথায় রেখেই যা করা দরকার আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা আমরা সেটা করে যাচ্ছি। কাজেই সেভাবেই নিজেদের গড়ে তুলতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধে লাখো শহিদের রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। এদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা, দেশের মানুষের কল্যাণ করা, সার্বিক উন্নতি করা এটাই আমাদের লক্ষ্য। বাংলাদেশকে আমরা ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত দেশ হিসেবে গড়তে চাই।’
‘নিজেদের এমনভাবে গড়ে তুলবে যেন আমাদের এই বাংলাদেশ, তোমাদের মতো তরুণদের কাছে যে প্রত্যাশা করে তা যেন তোমরা পূরণ করতে পারো। নবীনদের প্রতি জাতির পিতার নির্দেশনা, দেশাত্মবোধ, দায়িত্ববোধ এটা থাকতে হবে। সেই সাথে আত্মবিশ্বাসও থাকতে হবে।’
করোনার সময় বিমানবাহিনীর ভূমিকার প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আপনারা চীন ও দক্ষিণ কোরিয়া থেকে নিয়ে এসেছেন বিপুল পরিমাণ চিকিৎসা সরঞ্জাম। মানবিক সাহায্যসহ বিমানবাহিনী বাংলাদেশ সরকারের বন্ধুত্বের বার্তা নিয়ে পৌঁছে গেছে মালদ্বীপ, লেবাননসহ বিভিন্ন দেশে।’
‘করোনা প্রাদুর্ভাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আটকে থাকা বাংলাদেশিদের দেশে ফেরত এনেছেন। করোনায় অসুস্থ রোগীদের ঢাকায় নিয়ে আসা বা তাদের দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, সেটাও বিমানবাহিনী অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে করেছে।’
পরিবেশের উন্নয়নে বিমানবাহিনীর বিভিন্ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরেন সরকার প্রধান। তিনি বলেন, ‘বিমানবাহিনীর সহায়তায় বনবিভাগের নিঝুম দ্বীপ ও ডোমার চরে ভবিষ্যতে দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় উন্নতমানের গাছের বীজ বপনের মাধ্যমে যে সবুজ বিপ্লব সূচিত হতে যাচ্ছে তা দেশের প্রকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ভূমিকা রাখবে।’
এছাড়াও বিভিন্ন উদ্ধার অভিযানে বিমানবাহিনীর ভূমিকাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। বলেন, ‘হিমছড়িতে আটকে পড়া কয়েকজন ছাত্রকে বিমানবাহিনী উদ্ধার করেছে। তারা অত্যন্ত দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে যে হেলিকপ্টার না নেমেও তাদেরকে উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয়েছে।’
করোনার কারণে অনুষ্ঠানে নিজে উপস্থিত থাকতে না পেরে দুঃখও প্রকাশ করে বলেন, ‘করোনার কারণে আমার যাতায়াত সীমিত থাকায় উপস্থিত থাকতে পারলাম না। তবুও প্যারেডটা হচ্ছে এ জন্য আমি আনন্দিত।’
আরও পড়ুন:আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশগ্রহণ করতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন কমিশনার ইসি মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার।
তিনি বলেন, ‘আইনগতভাবে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। স্থগিত দল হওয়া মানে তাদের যাবতীয় কার্যক্রম স্থগিত। তাই আগামী নির্বাচনে তারা অংশগ্রহণ করতে পারবে না।’
তিনি আজ রোববার সকালে সিলেটে সাংবাদিকদের এই কথা বলেন।
নির্বাচন কমিশনার জেলা পুলিশ লাইনে নির্বাচনী দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনে পুলিশের দক্ষতা বৃদ্ধিতে আয়োজিত প্রশিক্ষণের উদ্বোধন করেন।
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)’র প্রতীক সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রতীক নির্ধারণ সংবিধান ও নির্বাচনী বিধিমালার আওতায় করা হয়। শাপলা প্রতীক সেই তালিকায় নেই।
তাই তা বরাদ্দ দেওয়ার সুযোগও নেই।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে না হওয়ার মতো কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। রমজানের আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’
নির্বাচনকে সামনে রেখে সব বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কোনো চ্যালেঞ্জ হিসেবে থাকবে না বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
ইসি আনোয়ারুল বলেন, ‘অতীতের মতো বিতর্কিত নির্বাচন আর হবে না। সবার সহযোগিতায় একটি সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিতর্কিত বা প্রশ্নবিদ্ধ কোনো কর্মকর্তা যাতে নির্বাচনী দায়িত্বে না থাকেন, সে বিষয়ে নির্বাচন কমিশন কঠোর অবস্থানে রয়েছে।’ সূত্র: বাসস
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান পাটওয়ারীকে।
অন্য সদস্যরা হলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রথম সচিব মুঃ রইচ উদ্দিন খান ও মোঃ তারেক হাসান এবং ঢাকা কাস্টম হাউসের যুগ্ম কমিশনার মুহাম্মদ কামরুল হাসান। কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের উপসচিব পঙ্কজ বড়ুয়া।
কমিটি দ্রুততম সময়ের মধ্যে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে সরকারের কাছে প্রতিবেদন দেবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডও বিশেষ ব্যবস্থায় ঢাকা কাস্টম হাউসে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম অব্যাহত রাখার উদ্যোগ নিয়েছে। সূত্র: বাসস
বিএনপির কেন্দ্রীয় জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা আহ্বায়ক কমিটির ১ নং সদস্য মানিকগঞ্জ-১ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী এস.এ জিন্নাহ কবির বলেছেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কর্তৃক জাতির সামনে ঘোষিত রাস্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফায় বিএনপি ক্ষমতায় গেলে দেশ কীভাবে চলবে, শিক্ষিত যুবকদের চাকরি ব্যবস্থা করা হবে, চাকরী যতদিন না হবে তাদের বেকার ভাতা দেওয়া হবে। ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে কৃষকদের উৎপাদিত ফসল সরকার ক্রয় করবে। ৩১ দফায় কৃষকদের কৃষি উপকরণ, কৃষক-শ্রমিক গ্রাম-গঞ্জে খেটে খাওয়া দিনমুজুর, মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের কথা রয়েছে। শনিবার রাতে মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলা কলিয়া ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের বিএনপির উদ্যোগে তালুকনগক ডিগ্রী কলেজ মাঠে তারেক রহমানের ৩১ দফার প্রচারণা সভা ও লিফলেট বিতরণে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, আগামী নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে ভোট দিতে হবে। আমি নির্বাচিত হলে রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট, মসজিদ, মাদ্রাসা, মন্দিরের উন্নয়ন ও কৃষক শ্রমিক, দু:স্থ জনগণের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করব।
তালুকনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল মালেকের সভাপতিত্বে ও কলিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক আব্দুস সামাদ এবং উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার রবিউজ্জল রবির সঞ্চলানায় আরো বক্তব্য রাখেন, জেলা যুবদলের আহ্বায়ক কাজী মোস্তাক হোসেন দিপু, উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম, জেলা বিএনপি সাবেক কৃষিবিষয়ক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও দৌলতপুর উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি লোকমান হোসেনসহ নেতারা।
দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় পর চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার আমুচিয়া এলাকার রাবার বাগানে আবারো শুরু হয়েছে রাবারের রস সংগ্রহ। অক্টোবরের শুরু থেকে স্থানীয় কয়েকজন উদ্যোক্তা বাগানটির গাছ থেকে রস সংগ্রহের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
উদ্যোক্তা অলক বড়ুয়া জানান, আমুচিয়ার বাগানটিতে প্রায় ১০ হাজার রাবার গাছ রয়েছে। প্রতিদিন ভোর ৫টা থেকে শ্রমিকরা গাছের নির্দিষ্ট অংশের বাকল কেটে দেন। সেখান থেকে গড়িয়ে পড়া দুধের মতো সাদা নির্যাস পাত্রে জমা হয়। সকাল ৯টার মধ্যেই এসব পাত্র থেকে রস সংগ্রহ করে প্লাস্টিকের ড্রামে সংরক্ষণ করা হয়।
তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন গড়ে ২৫০ কেজি রাবার সংগ্রহ হচ্ছে। প্রতি কেজি রাবারের দাম ২৭০ থেকে ২৭৫ টাকা। এসব রাবার দেশের বিভিন্ন কোম্পানিতে সরবরাহ করা হয়, পাশাপাশি বিদেশেও রপ্তানি হয়। অলক বড়ুয়া আরো জানান, স্থানীয় বাসিন্দা কালু বড়ুয়া ও গিয়াস উদ্দিনকে সঙ্গে নিয়ে প্যারাগন কোম্পানির কাছ থেকে ৬ লাখ টাকায় দুই বছরের জন্য বাগানটি ইজারা নিয়েছেন। বর্তমানে সেখানে ১৫ জন শ্রমিক মাসিক ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা বেতনে কাজ করছেন।
জানা গেছে, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ‘কানুনগোভ্যালি’ প্রায় ৭০ একর পাহাড়ি জায়গাজুড়ে এই রাবার বাগান গড়ে তোলে। দীর্ঘদিন উৎপাদন চললেও লোকসানের কারণে প্রতিষ্ঠানটি কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। পরবর্তীতে প্যারাগন কোম্পানি বাগানটি ক্রয় করে সেখানে ফলের বাগান তৈরি করে।
অলক বড়ুয়ার হিসাব অনুযায়ী, অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়টাতে রাবারের রস সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায়। প্রতিদিন ২৫০ কেজি হারে মাসে প্রায় সাড়ে সাত হাজার কেজি রস সংগ্রহ সম্ভব, যার বাজারমূল্য প্রায় ২০ লাখ টাকা। শ্রমিকদের বেতন ও অন্যান্য খরচ বাদ দিয়ে মাসে প্রায় ১৮ লাখ টাকা লাভের সম্ভাবনা রয়েছে।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদলের ৪৭ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিক উপলক্ষে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে জনদুর্ভোগ কমাতে চলাচলের অনুপযোগী খানাখন্দে ভরা রাস্তায় সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে ফরিদপুর জেলা যুবদলের নেতারা। গত শনিবার ও রোববার শ্রমিক এনে দিনভর এ বেহাল রাস্তার সংস্কার কাজ শুরু করা হয়। ফরিদপুর শহরের চর টেপাখোলা বেরিবাঁধ থেকে ধলার মোড় পর্যন্ত পাঁকা রাস্তা খানাখন্দের সৃষ্টি হয়ে পরিবহন ও মানুষ চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছিল এবং দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় ওই রাস্তায় পানি জমে থাকত। শুকনো মৌসুমে মানুষ যাতায়াতে ধুলাবালিতে কষ্ট পোহাতে হতো।
এ অবস্থায় ফরিদপুর জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের নির্দেশনায় এবং ফরিদপুর জেলা যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমান সাগর ও প্রচার সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান সেন্টুর অর্থায়নে ওই রাস্তাটি সংস্কারের উদ্যোগ নেন তারা।
এ সময় স্থানীয় বাসিন্দা ও পথচারীরা জানান, রাস্তাটি বড় বড় গর্তে ভরা থাকায় চলাচল ছিল কষ্টসাধ্য। এখন সংস্কার হওয়ায় মানুষের যাতায়াতের দুর্ভোগ লাঘব হয়েছে।
যুবদল নেতা সিদ্দিকুর রহমান সেন্টু বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এই রাস্তাটি চলাচলের অনুপযোগী ছিল। শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষের কষ্ট দেখে আমরা যুবদলের নেতারা এই উদ্যোগ নিয়েছি। আমরা সবসময় মানুষের পাশে থেকে কাজ করতে চাই। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় এ ধরনের জনকল্যাণমূলক কাজ অব্যাহত থাকবে।
উত্তর চট্টগ্রামের আতঙ্কের জনপদ হিসাবে খ্যাত রাউজান উপজেলার ধারাবাহিক রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ও ব্যবসায়ী হত্যার ঘটনার সর্বশেষ শিকার বিএনপির কর্মী ও ব্যবসায়ী আবদুল হাকিম চৌধুরী। স্থানীয় একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাউজানে নেতাকেন্দ্রিক রাজনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের দ্বন্দ্ব থেকেও এ হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে। তবে রাউজান বিএনপির দুই ‘শিরোমণি’ হিসেবে পরিচিত গোলাম আকবর খন্দকার ও গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী নেতৃত্বাধীন উভয় গ্রুপই এ হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চাঁদাবাজি, মাটি-বালুর ব্যবসা, রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব, আধিপত্য বিস্তারসহ নানা কারণে গত বছরের ২৮ আগস্ট ২০২৪ থেকে সর্বশেষ চলতি বছরের ৭ অক্টোবর ২০২৫ পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ১২টি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। বিএনপির দুপক্ষের সংঘর্ষ হয় শতাধিকবার। এসব ঘটনায় ৩৫০ এর বেশি মানুষ গুলিবিদ্ধ হন। মামলা করা হয় অর্ধশতাধিক। তবে আসামি গ্রেপ্তারের সংখ্যা খুবই কম বলে জানিয়েছেন মামলার বাদীরা। হত্যাকাণ্ডগুলোতে আগ্নেয়াস্ত্র, ছুরি ব্যবহৃত হয়েছে। কখনো পিটিয়ে হত্যার ঘটনাও ঘটেছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে রাউজান থানার পুলিশ। বেপরোয়া সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সামনে চট্টগ্রামের জেলা পুলিশও যেন অসহায়। তবে সর্বশেষ হত্যার ঘটনায় হওয়া মামলায় ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে জানিয়েছেন হাটহাজারী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী মো. তারেক আজিজ। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিবদমান একটি পক্ষের নেতৃত্বে রয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী। আরেকপক্ষে রয়েছেন উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক গোলাম আকবর খোন্দকার। স্থানীয় বাসিন্দাদের তথ্যমতে, গত বছরের ৫ আগস্টের পর কিছু বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষ ও মারামারি হলেও হত্যাকাণ্ড শুরু হয় ওই বছরের ২৮ আগস্ট থেকে। ওই দিন পিটিয়ে হত্যা করা হয় আব্দুল মান্নান নামের একজনকে। ১ সেপ্টেম্বর মো. ইউসুফ মিয়া এবং ২৯ অক্টোবর আজম খান নামের দুজনের লাশ পাওয়া যায়। ১১ নভেম্বর মেলে আবু তাহেরের লাশ। চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম। ১৯ ফেব্রুয়ারি মুহাম্মদ হাসানকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ১৫ মার্চ পিটুনি ও ছুরিকাঘাতে নিহত হন কমরউদ্দিন জিতু। ২১ মার্চ পিটিয়ে হত্যা করা হয় মো. রুবেলকে। ৪ এপ্রিল মা ও দুই ভাইয়ের হাতে খুন হন প্রকৌশলী নূর আলম বকুল। ১৭ এপ্রিল মো. জাফর নামের একজনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ১৯ এপ্রিল রাতে গুলি করে এবং চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয় আবদুল্লাহ মানিককে। ২২ এপ্রিল দোকানে ডেকে এনে মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয় ইব্রাহিমকে। গত ৬ জুলাই স্ত্রী-কন্যার সামনে মো. সেলিম উদ্দিনকে গুলি করে হত্যা করেছে বোরকা পরা অস্ত্রধারীরা। সর্বশেষ চট্টগ্রাম হাটহাজারী মডেল থানায় হাজির হয়ে নিহত আবদুল হাকিম চৌধুরীর স্ত্রী তাসফিয়া আলম গত ৯ অক্টোবর রাতে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ডের একটি মামলা দায়ের করেন।
হাটহাজারী মডেল থানার ওসি মনজুর কাদির ভূঁইয়া মামলার রেকর্ডের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
রাউজান থানার ওসি মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, রাউজানে হত্যাকাণ্ড ঠেকানো যাচ্ছে না। কারণ অনেক হত্যাকাণ্ড পরিকল্পিতভাবে করা হচ্ছে। এছাড়া পারিবারিক সমস্যায় হত্যাগুলো তাৎক্ষণিক হচ্ছে। অন্যান্য অপরাধ প্রতিরোধ করা যতটা সহজ, হত্যাকাণ্ড প্রতিরোধ ততটা সহজ নয়। তবে সব হত্যাকাণ্ডের অভিযুক্ত আসামিদের গ্রেপ্তারের কঠোর অভিযান চলমান আছে।
নওগাঁয় আলুর দাম কম থাকায় হিমাগার থেকে কৃষক ও ব্যবসায়িরা কম পরিমাণ আলু বের করছে। লোকসানের আশঙ্কা করছেন তারা। মৌসুমের শুরুতে খোলা বাজারে ৬০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা মন বিক্রি হলেও হিমাগারে ৭ মাস সংরক্ষণের পর একই দাম বিক্রি হচ্ছে। এতে প্রতি বস্তায় (৬০কেজি) অন্তত ৫০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা লোকসান হচ্ছে। সরকার ২২ টাকা দাম নির্ধারণ করলেও হিমাগারে বিক্রি হচ্ছে ১২-১৬ টাকা কেজি। সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছেন তারা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলায় এ বছর ২৫ হাজার ৯৪০ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে। যা থেকে উৎপাদন হয়েছে ৫ লাখ টন। জেলায় ৭টি হিমাগারে ধারণক্ষমতা ৪৬ হাজার ৫৩০ টন। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত আলু পাশের জেলাসহ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়।
ভালো দাম পাওয়ার আশায় এ বছর জেলার আলু চাষিরা আশায় বুক বেঁধে চাষাবাদ করেছিল। যেখানে উন্নত জাতের আলু ডায়মন্ড, স্টিক ও কাটিনাল চাষ করা হয়েছিল। ভালো দাম পাওয়ার আশায় কৃষক ও ব্যবসায়িরা মার্চ মাসে হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করেছিল। যেখানে খরচ পড়েছিল আলুর জন্য বস্তা কেনা, হিমাগার পর্যন্ত বস্তা পরিবহন ও হিমাগার ভাড়াসহ অন্তত ৫৫০ টাকা। কিন্তু সংরক্ষণের ৭ মাস পরও ৬০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা মন বিক্রি হচ্ছে।
বদলগাছী উপজেলার বেগুন জোয়ার গ্রামের কৃষক আইনুল হক। দুই বিঘা জমিতে দেশি জাতের আলু রোপণে খরচ পড়েছিল ৩৫ হাজার টাকা। যেখানে আলু পেয়েছিলেন ১২০ মন। মৌসুমের শুরুতে ৬০০ টাকা হিসেবে ১০০ মন বিক্রি করে অবশিষ্ট আলু হিমাগারে সংরক্ষণ করেছিলেন। যেখানে প্রতিবস্তা আলু হিমাগারে রাখতে খরচ পড়েছে অন্তত ৫৫০ টাকা। ৭মাস সংরক্ষণের পর আলুর দাম বলছে ৬০০ টাকা। এতে তার লোকসান বস্তাপ্রতি ৬০০ টাকা।
কৃষক আইনুল হক বলেন, প্রতি বিঘাতে আলু রোপণে বীজ আলুর প্রয়োজন হয় প্রায় ১৮০ কেজি। বীজ আলু বাড়ির হওয়ার আলু চাষবাদে খরচ তুলনামূলক কম পড়েছে। তবে যারা বীজ আলু কিনে রোপণ করেছেন তাদের ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা বস্তা (৬০ কেজি) কিনতে হয়েছে এবং খরচ বেশি পড়েছে। এ বছর আলুর উৎপাদন বেশি হওয়ায় দাম কমেছে। দাম কম হওয়ায় কৃষকদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। এতে আগামীতে অনেকে আলু চাষ কমিয়ে দিবে এবং বেশি দামে কিনে খেতে হবে। বাজার সামঞ্জস্য থাকলে সবার জন্য সুবিধা হবে।
একই অবস্থা অন্য কৃষক ও ব্যবসায়ীদের। বাজারে আলুর দাম কম থাকায় লোকসানের শঙ্কায় অনেকে হিমাগার থেকে আলু বের করছেন না। দাম না পাওয়ায় কৃষকদের আলু চাষের আগ্রহ কমে যাবে এবং আগামীতে সরবরাহ কমে আসায় বাজারও উর্ধ্বগতি হবে। তবে বীজ আলু নিয়ে অনেকে আগাম জাতের আলু চাষের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
বদলগাছী উপজেলার পারসোমবাড়ী গ্রামের আলু ব্যবসায়ী শাহজাহান বলেন, পাটনাই জাতের ৪০০ বস্তা আলু হিমাগারে সংরক্ষণ করেছি। প্রতি বস্তায় আলুর দাম ১ হাজার ২০০ টাকার এবং পরিবহন, বস্তা ও হিমাগার খরচ ৪৫০-৫০০ টাকা পড়েছে। প্রতি কেজি আলুর বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকা। প্রতি বস্তায় লোকসান হবে ৭০০-৭৫০ টাকা পর্যন্ত। আমার যে পুঁজি ছিল তা শেষ হওয়ার উপক্রম। এতে সাংসারিকভাবে অর্থনেতিক দিক দিয়েও ক্ষতিগ্রস্ত হতে হলো।
ব্যবসায়ী হামিদুর রহমান বলেন, দেশি আলু ৩২ টাকা কেজি এবং স্টিক আলু ২৭ টাকা কেজি কিনে হিমাগারে সংরক্ষণ করেছিলাম। এখন দেশি আলু ১৫ টাকা কেজি এবং স্টিক আলু ১০ টাকা কেজি বিক্রি করতে হচ্ছে।
সদর উপজেলার সরাইল গ্রামের কৃষক রহিদুল দেওয়ান বলেন- ১ বিঘা জমিতে আলু চাল করেছিলাম। মৌসুমের শুরুতে ব্যবসায়ীরা ৮৫০ টাকা মন দাম বলেছিল। আলু বিক্রি না করে হিমাগারে ৮ বস্তা রেখেছিলাম। আগাম জাতের আলু রোপণ করার জন্য সবগুলো বের করেছি। ২ বস্তা বিক্রি করতে চাইলাম এখন ৬০০ টাকা বস্তা দাম বলছে। তাহলে হিমাগারে এতদিন সংরক্ষণ করে কি লাভ হলো। আমরা কৃষক লাভ বা লোকসান যায় হোক না কেন আবাদ করা ছাড়া তো জমি ফেলে রাখতে পারি না। ২২ টাকা আলুর দাম কার্যকরে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
নওগাঁ ইষ্টার্ণ প্রডিউস কোল্ড স্টোর লিমিটেড এর ম্যানেজার সেতু মৈত্র বলেন- হিমাগারের ধারণ ক্ষমতা ৭০ হাজার বস্তা। এর বিপরীতে ৭৫ হাজার ৬০০ বস্তা (৩ হাজার ৮১৩ টন) সংরক্ষণ করা হয়েছে। যেখানে বীজ আলু ২ হাজার ১৪১ টন এবং খাবারের আলু ৭৩ হাজার ৪৫৯ টন। এ পর্যন্ত প্রায় ৫৫ হাজার বস্তা এখনো মজুত আছে। চলতি (অক্টোবর) মাসে আলু বের হওয়ার সময়। বাজারে আলুর দাম কম থাকায় কৃষক ও ব্যবসায়ীরা আলু বের করছেন না। নভেম্বর মাস পর্যন্ত হিমাগার চালু রাখতে হবে। এতে একমাসেই প্রায় সাড়ে ৬ লাখ টাকার বিদ্যুৎ বিল আসবে। তারপর বন্ধ হয়ে যাবে। এতে আলু নষ্ট হয়ে যাবে। নষ্ট ও পঁচা আলু নিজ খরচে হিমাগার থেকে অপসারণ করতে হবে। এতে প্রায় ১ কোটি টাকার ওপর লোকসান হবে।
নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোছা. হোমায়রা মন্ডল বলেন- চলতি বছর আলুর উৎপাদন বেশি হওয়ায় কৃষকরা ভাল দাম পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বাজারে দাম কম থাকায় হিমাগার থেকে আলু কম পরিমাণ বের হচ্ছে।
নওগাঁর জেলা প্রশাসক মোঃ আব্দুল আউয়াল বলেন, মৌসুমের শুরুতে আলু হিমাগারে রাখার সময় একবার সমস্যা হয়েছিল। সেসময় ভোক্তা অধিদপ্তরকে সাথে নিয়ে সমস্যা সমাধান করা হয়েছিল। একটি বিষয় অবগতি হয়েছি- হিমাগারে কৃষকদের স্বল্প মূল্যে আলু বিক্রি করতে বাধ্য করা হচ্ছে। যৌথ অভিযান পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে তার আগে ব্যবসায়িদের সিন্ডিকেট ভাঙতে কৃষক ও হিমাগার কর্তৃপক্ষকে নিয়ে বসে আলোচনা করা হবে।
মন্তব্য