কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভাঙচুর নিয়ে তোলপাড়ের মধ্যে দুই সপ্তাহের মধ্যে জেলায় দ্বিতীয় ভাস্কর্যে হামলা হলো।
এবার ভাঙা হয়েছে কুমারখালীতে ব্রিটিশবিরোধী বিপ্লবী বাঘা যতীন নামে পরিচিত যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের ভাস্কর্য। এবারও রাতের আঁধারে এসেছে দুর্বৃত্ত। ভাস্কর্যের নাক ও মুখের একটি অংশ ভেঙে ফেলা হয়েছে।
কুষ্টিয়া যাদের নামে গর্ব করে, তাদের একজন এই বাঘা যতীন। স্বভাবতই এই ভাস্কর্যটি ভাঙচুরের ঘটনায় তীব্র নিন্দা করছে এলাকাবাসী।
পুলিশ জানায় বৃহস্পতিবার রাতের কোনো এক সময়ে হাতুড়ি দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে ভাস্কর্যটি। শুক্রবার সকালে স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে সেখানে যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীটি।
ভাস্কর্যটি কুমারখালী উপজেলার কয়া মহাবিদ্যালয় চত্বরে অবস্থিত। ২০১৬ সালের ৬ ডিসেম্বর এটি নির্মিত হয়।
বিপ্লবী যতীনের বাবার বাড়ি ঝিনাইদহে হলেও তার জন্ম কুমারখালীর কয়া ইউনিয়নে তার মামার বাড়িতে।
কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মজিবুর রহমান বলেন, ‘কারা ভাঙচুর করেছে তা এখনও জানা যায়নি। জড়িতদের শিগগিরই আইনের আওতায় আনা হবে। বিভিন্ন স্থানে অভিযান চলছে।’
ভাস্কর্যটি সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় ছিল না বলে জানিয়েছেন থানার ওসি। সিসিটিভি ক্যামেরা না থাকার কারণ হিসেবে অধ্যক্ষ জানিয়েছেন, বাজেট স্বল্পতা।
অধ্যক্ষ হারুনার রশীদ বলেন, ভাস্কর্যের নিরাপত্তায় মিটিং করার কথা ভাবছিলাম। কিন্তু এরই মধ্যে ঘটে গেল দুর্ঘটনা। আসলে মিটিং করেও কোনো লাভ হতো না, সিসিটিভি ক্যামেরা বসাতে যে অর্থের প্রয়োজন তার সংস্থান নেই।
আরও পড়ুন: বাঘা যতীনের নাতি যখন বাঙালির মুক্তিযোদ্ধা
নিরাপত্তাকর্মী খলিলুর রহমান বলেন, ‘রাত ১২টার পর আমি তিনটি আঘাতের শব্দ শুনে দৌড়ে যাই। দেখতে পাই দুটি মোটরসাইকেল রাস্তার দুই দিকে চলে যাচ্ছে। এরপর ভাস্কর্যে আঘাতের চিহ্ন পাই। রাতেই বিষয়টি অধ্যক্ষ স্যারকে জানাই।’
ভাস্কর্য ভাঙচুরের বিষয়ে কথা বলার জন্য পুলিশ কলেজের পরিচালনা কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট নিজামুল হক, অধ্যক্ষ হারুনুর রশিদ, নৈশপ্রহরী খলিলুর রহমান ও ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আনিসুর রহমানকে থানায় নিয়েছে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো. আসলাম হোসেন। এই ভাস্কর্য কেন সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়নি এ প্রশ্নের জবাবে জেলা প্রশাসক বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তিনি জানান, এ ব্যাপারে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সিরাজুল ইসলামকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি রিপোর্ট দিলেই আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গত ৪ ডিসেম্বর প্রথম প্রহরে কুষ্টিয়া শহরের পাঁচ রাস্তা মোড়ে রাতের আঁধারে ভাঙচুর করা হয় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য। সেই ঘটনাটি ধরা পড়েছে সিসিটিভি ক্যামেরায়। আর ফুটেজ পর্যালোচনা করে স্থানীয় ইবনি মাসউদ কওমি মাদ্রাসার দুই ছাত্র ও দুই শিক্ষককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
আদালতে চার জনই এর দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। তারা জানিয়েছে, হেফাজতে ইসলামের নেতা মামুনুল হক ও ইসলামী আন্দোলনের নেতা ফয়জুল করীমের বয়ান শুনে উদ্বুদ্ধ হয়ে তারা ভাস্কর্যটি ভাঙচুর করেছে।
রাজধানীর ধোলাইপাড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতা করে প্রথমে মাঠে নামে ইসলামী আন্দোলন। পরে মামুনুল হক হুমকি দেন, ভাস্কর্যটি নির্মাণ হলে তিনি ২০১৩ সালের ৫ মের মতো পরিস্থিতি তৈরি করবেন।
পরে তাদের বিরুদ্ধে রাজপথে বিক্ষোভের পর কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক এই নেতারা নরম হয়েছেন। এখন তারা বলছেন, ভাস্কর্য নিয়ে সরকারের সঙ্গে ‘যুদ্ধে’ যাবেন না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কওমি প্রতিনিধি দলের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, ভাস্কর্যবিরোধীরা আর মাঠে নামবে না। আর সরকারের মুখপাত্র তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ জানিয়েছেন, ভাস্কর্য নির্মাণ অব্যাহত থাকবে।
বঙ্গবন্ধুর ওই ভাস্কর্য ভাঙচুরের পর কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক জানিয়েছিলেন, জেলার সব ভাস্কর্যে তারা নিরাপত্তা জোরদার করেছেন।
ভাস্কর্য ইস্যুতে রাষ্ট্রবিরোধী অবস্থান নেয়ার অভিযোগে হেফাজতে ইসলামের আমির জুনাইদ বাবুনগরী, যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির ফয়জুল করীমের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয়েছে।
আর সারা দেশে ভাস্কর্য ও ম্যুরালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।
কে এই বাঘা যতীন
বাঘা যতীনের জন্ম ১৮৭৯ সালের ৮ ডিসেম্বর মামার বাড়ি কুষ্টিয়ার কুমারখালীর কয়া ইউনিয়নে। পৈতৃক নিবাস ঝিনাইদহে। তার আসল নাম যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়।
তিনি ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। ১৯১৫ সালে ৩৬ বছর বয়সে ভারতের বালেশ্বর বুড়িবালামের তীরে তিনি ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধ করেন। ৯ সেপ্টেম্বর পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক গোলাগুলির পর পুলিশ তার মরদেহ উদ্ধার করে।
স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঘা যতীনের সেই ভিটায় জাদুঘর ও ক্যান্টনমেন্ট করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর তা আর বাস্তবায়িত হয়নি। বাকি সব সম্পত্তিসহ বাঘা যতীনের ভিটেবাড়ি হয়েছে বেদখল।
আরও পড়ুন:সরকারি এবং কূটনীতিক পাসপোর্টে পারস্পারিক ভিসা অব্যাহতি সুবিধা পেতে পাকিস্তানের সঙ্গে চুক্তির অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এই অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।
পরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এ তথ্য জানান।
প্রেস সচিব বলেন, ‘পাকিস্তানের মতো এ রকম চুক্তি আমরা আরও ৩১টি দেশের সঙ্গে করেছি। এই চুক্তি পাঁচ বছরের জন্য করা হবে । এর ফলে যারা অফিসিয়াল পাসপোর্ট এবং কূটনীতিক পাসপোর্ট ব্যবহার করছেন, তারা এখন বিনা ভিসায় পাকিস্তান সফর করতে পারবেন। একইভাবে পাকিস্তানের যারা অফিসিয়াল এবং কূটনীতিক পাসপোর্ট ব্যবহার করছেন— তারাও বাংলাদেশে সফর করতে পারবেন কোন ভিসা ছাড়াই। এটা একটা স্ট্যান্ডার্ড প্র্যাকটিস।’
উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার জানান, এ বিষয়ে পাকিস্তান সরকারের সম্মতি পাওয়া গেছে।
উপদেষ্টা পরিষদের ৩৯তম বৈঠকে আজ ‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন হয়েছে।
ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়।
বৈঠকে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের কূটনৈতিক ও অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীগণের পারস্পরিক ভিসা অব্যাহতি চুক্তির খসড়া অনুমোদন করা হয়।
এছাড়া, উপদেষ্টা পরিষদকে সংস্কার কমিশনসমূহের সুপারিশ বাস্তবায়ন অগ্রগতি সম্পর্কে অবহিত করা হয়।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নতুন সচিব ড. মোহাম্মদ আবু ইউছুফ উপস্থিত সকলের প্রতি শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেছেন, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় যে গতিতে এগোচ্ছে আরও গতি বাড়াতে সমন্বয় টিমের মাধ্যমে কাজ করতে চাই। আমি সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যাবতীয় সেবা দরিদ্র, দুঃস্থ, অসহায়, অসচ্ছল মানুষের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিতে সকলের সহযোগিতা চাই। এজন্য আমরা সবাই একসাথে কাজ করবো।
তিনি আজ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের সাথে পরিচিতি ও মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন।
নতুন সচিব বলেন,
আমি এই মন্ত্রণালয়ের সুনাম কাজের মাধ্যমে, আইন কানুন মেনে মানুষের সেবা দ্রুত নিশ্চিত করতে আপনাদের সহযোগিতা চাই। তিনি বলেন, সচিবের রুম আপনাদের জন্য সার্বক্ষণিক খোলা থাকবে এবং ফাইল দ্রুত নিষ্পত্তি করে কাজের যথার্থতা নিশ্চিত করবেন। আপনারা নির্ভয়ে কাজ করবেন, আমার সার্বিক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। পাশাপাশি আমিও আপনাদের থেকে শিখতে চাই এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দেশের নয়টি সরকারি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে আয়োজন করা হচ্ছে জাতীয় নীতি প্রতিযোগিতা ২০২৫। জাতীয় নীতি প্রতিযোগিতা ২০২৫ এর প্রতিপাদ্য "বাংলাদেশ ২.০: তারুণ্যের নেতৃত্বে আগামীর পথে " নির্ধারণ করা হয়েছে। এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীরা ধারণাপত্র জমা দিয়ে শুরু করবে এবং নির্বাচিত দলসমূহ পূর্ণাঙ্গ নীতিপত্র প্রস্তুত ও উপস্থাপনা করবে। বিজয়ীরা পুরস্কৃত হওয়ার পাশাপাশি তাদের নীতি প্রস্তাবগুলো সরকারিভাবে পলিসি প্রণয়নের ক্ষেত্রে বিবেচনায় নেওয়া সুযোগ সৃষ্টি করা হবে।
নীতি প্রতিযোগিতার বিষয়গুলো হল-
১. রাজনীতিতে তরুণদের অংশগ্রহণ ও গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ
২. জুলাই পরবর্তীতে সময়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি: জাতীয় স্বার্থ ও বৈদেশিক সম্পর্কের পুনঃসংজ্ঞায়ন
৩. নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ: শিক্ষা ও দক্ষতার রূপান্তর
৪.দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠা ও সাংস্কৃতিক সংযোগ: জুলাই অভ্যুত্থানের পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশী তরুণদের ভূমিকা
৫. গুজব প্রতিরোধে বাংলাদেশের করণীয় ও বাংলাদেশের বৈশ্বিক ভাবমূর্তি
৬. জুলাই গণভুত্থান ও সাংবিধানিক পুনর্গঠন: তরুণদের আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ
৭.বাংলাদেশের এলডিসি থেকে উত্তরণ: সম্ভাবনার ব্যবহার ও নতুন চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা প্রস্তুতি
৮. সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা অর্জনের পথে: ব্যবস্থা পুনর্গঠন ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ
৯. চতুর্থ শিল্প বিপ্লব: বাংলাদেশের উদ্বোধনী সম্ভাবনা ও প্রয়োগের ক্ষেত্র
রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারণী বিষয়সহ রাষ্ট্র পরিচালনার সকল ক্ষেত্রে তারুণ্যের অন্তর্ভুক্তি ও অংশগ্রহণ অপরিহার্য। আমাদের কাঙ্ক্ষিত দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তনের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন নীতিগতভাবে অগ্রসর হওয়া। তরুণদের চিন্তাপ্রক্রিয়া, মননশীলতা এবং গবেষণাধর্মী সক্ষমতাকে সামনে রেখে এক নতুন পরিবর্তনের সূচনা করা সম্ভব আর সেটি হতে হবে রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারণী প্রক্রিয়ায় তারুণ্যের অন্তর্ভুক্তির মধ্য দিয়ে।
এ সময় যুব ও ক্রীড়া সচিব বলেন, এই প্রতিযোগিতা কেবল একটি প্রতিযোগিতা নয় এটি আগামী প্রজন্মের নেতৃত্বে বিনিয়োগ। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, তরুণদের বুদ্ধিবৃত্তিক অংশগ্রহণই আমাদের রাষ্ট্রকে দীর্ঘমেয়াদি টেকসই উন্নয়নের পথে এগিয়ে নেবে এবং বাংলাদেশ ২.০-কে বাস্তবায়নের ভিত্তি গড়ে তুলবে।
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আগামী ১০ সেপ্টেম্বর খসড়া ভোটকেন্দ্রের তালিকা প্রকাশ করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
আজ বুধবার ইসির উপ-সচিব মো. মাহবুব আলম শাহ স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে, যা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের পাঠানো হয়েছে।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র স্থাপন ও ব্যবস্থাপনা নীতিমালা-২০২৫’ কমিশনে অনুমোদিত হয়েছে এবং তা ২৬ জুন ২০২৫ তারিখে বাংলাদেশ গেজেটের অতিরিক্ত সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর অনুচ্ছেদ ৮ (১) ও (২) অনুযায়ী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটকেন্দ্রের তালিকা সংরক্ষণ ও চূড়ান্তকরণের জন্য গেজেটে কমপক্ষে ২৫ দিন পূর্বে তা প্রকাশ করার বিধান রয়েছে।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে এলাকা ভিত্তিক ভোটকেন্দ্রের খসড়া তালিকা প্রকাশ, এই তালিকার ওপর দাবি/আপত্তি গ্রহণ এবং তা নিষ্পত্তির মাধ্যমে নীতিমালা অনুযায়ী চূড়ান্ত তালিকা প্রস্তুতের নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কমিশন নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী : খসড়া ভোটকেন্দ্রের তালিকা প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর, দাবি/আপত্তি গ্রহণের শেষ তারিখ: ২৫ সেপ্টেম্বর, দাবি/আপত্তি নিষ্পত্তির শেষ তারিখ: ১২ অক্টোবর, সম্ভাব্য চূড়ান্ত ভোটকেন্দ্রের তালিকা প্রস্তুত ও প্রকাশ: ২০ অক্টোবর।
উল্লেখিত সময়সূচি অনুযায়ী এবং ভোটকেন্দ্র স্থাপন নীতিমালা অনুসারে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করতে জেলা পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে নির্ধারিত ছকের আলোকে খসড়া ও সম্ভাব্য চূড়ান্ত ভোটকেন্দ্রের সংখ্যাগত তথ্য (সফটকপিসহ) আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্বাচন সহায়তা-১ শাখায় পাঠাতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, সারাদেশ জলাশয়গুলো চিহ্নিত করে দেশি মাছের প্রজাতি রক্ষা করতে হবে। তিনি বলেন, বিভিন্ন জলাশয়ে মাছের নানান প্রজাতি রয়েছে। এসব জলাশয় চিহ্নিত করে দেশীয় প্রজাতির মাছ সংরক্ষণ ও বৃদ্ধি করতে হবে।
উপদেষ্টা বুধবার (২০ আগষ্ট) রাজধানীর ফার্মগেটে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলে 'টেকসই মৎস্যসম্পদ ব্যবস্থাপনায় অভয়াশ্রমের গুরুত্ব ও ভবিষ্যত করণীয়' -শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন। সেমিনারটির আয়োজন করে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই)।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, অভয়াশ্রম গড়ে তোলা ও রক্ষা করা মৎস্যসম্পদ উৎপাদনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা মুক্ত জলাশয়ের পরিমাণ দিন দিন আশঙ্কাজনক হারে কমছে।
এর পেছনের কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এখানে আগে নীতি-নির্ধারণীতে হয়তোবা মনোযোগ কমছিল। তাই আমরা এখাতে গুরুত্ব দিচ্ছি। আমাদের মুক্ত জলাশয় গড়ে তুলতে যা করণীয় তা করতেই হবে।
জিনগত বিলুপ্তি রোধ করা দরকার উল্লেখ করে মৎস্য উপদেষ্টা বলেন, মাছের প্রজাতিগুলো রক্ষা করা এটি শুধু বাংলাদেশের জন্য নয় বরং আন্তর্জাতিক মৎস্যসম্পদের প্রয়োজনে করতে হবে। কারণ আমরা প্রাকৃতিকভাবে এমন স্থানে রয়েছি যেখানে মাছ না খেয়ে বাঁচার উপায় নেই।
৪১ প্রজাতির মাছ ফিরিয়ে আনা হয়েছে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, দেশে ৬৪ প্রজাতির মাছ বিলুপ্তপ্রায় হয়ে গিয়েছিল। সেখানে বিএফআরআইর গবেষণার ফলে ৪১ প্রজাতির মাছ ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।
মাছ শিকারে বিষ ও বিদ্যুতের ব্যবহারকে উদ্বেগের কারণ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মানুষ কত নিষ্ঠুর তারা মাছ শিকারে বিষ ও বিদ্যুতের ব্যবহার করছে। এটি হচ্ছে মানুষের লোভ ও তাৎক্ষণিক লাভের কারণে।
প্লাস্টিকদূষণ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মৎস্যসম্পদ ধ্বংসের পেছনে পানি ও প্লাস্টিকদূষণ অন্যতম ক্ষতির কারণ। সম্প্রতি প্লাস্টিক বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে কোন সমঝোতায় আসতে পারেনি। প্লাস্টিক চুক্তি মানুষের পক্ষে ও প্রকৃতির জন্য ক্ষতিকর হওয়ায় বাংলাদেশও স্বাক্ষর না করে চলে এসেছে।
বিএফআরআইর মহাপরিচালক ড. অনুরাধা ভদ্রের সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন মন্ত্রণালয়ের সচিব (রুটিন দায়িত্ব) মো. তোফাজ্জেল হোসেন, সম্মানিত অতিথি ছিলেন মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের চেয়ারম্যান ফারাহ শাম্মী ও মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবদুর রউফ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএফআরআইর ঊধ্বর্তন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. মশিউর রহমান। এসময় বিএফআরআই এর বিজ্ঞানীবৃন্দ, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, মৎস্যজীবী ও সুধীজন উপস্থিত ছিলেন।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO)-এর সহযোগিতায় নরওয়ের গবেষণা জাহাজ “R.V. Dr. Fridtjof Nansen” আগামী ২১ আগস্ট থেকে ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের সামুদ্রিক জলসীমায় মৎস্যসম্পদ ও ইকোসিস্টেম জরিপ পরিচালনা করবে। প্রায় ৩২ দিনব্যাপী এ অভিযানে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ১৩ জন বিজ্ঞানীসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মোট ২৬ জন গবেষক অংশগ্রহণ করবেন।
উপদেষ্টা আজ দুপুরে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে Norwegian সামুদ্রিক গবেষণা জাহাজ "R.V. Dr.Fridtjof Nansen" কতৃক বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের সামুদ্রিক জলসীমায় মৎস্য সম্পদ ও ইকোসিস্টেম জরিপ পরিচালনা সংক্রান্ত আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, বঙ্গোপসাগর থেকে আহরিত মৎস্যসম্পদ দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, খাদ্য নিরাপত্তা ও কর্মসংস্থানে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশের সামুদ্রিক জলসীমার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা গেলে এ খাত জাতীয় অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করতে সক্ষম হবে।
মৎস্য উপদেষ্টা বলেন, এ জরিপে ছোট পেলাজিক ও মেসোপেলাজিক মাছের প্রাচুর্য ও মজুদ নিরূপণ, তলদেশীয় মৎস্যসম্পদের প্রজাতিগত বৈচিত্র্য মূল্যায়ন এবং সামুদ্রিক ইকোসিস্টেমের সার্বিক অবস্থা বিশ্লেষণ করা হবে। পাশাপাশি সমুদ্রের তাপমাত্রা, লবণাক্ততা, স্রোতের গতি, উৎপাদনশীলতা, গভীর সমুদ্র সঞ্চালন ব্যবস্থা ও জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করা হবে। উপদেষ্টা বলেন, মাইক্রোপ্লাস্টিক, সামুদ্রিক আবর্জনা, অক্সিজেন মিনিমাম জোন, কার্বন-ডাই-অক্সাইড ও সমুদ্রপানির অম্লতা বিষয়েও গবেষণা পরিচালিত হবে, যা ভবিষ্যতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় কার্যকর নীতি প্রণয়নে সহায়তা করবে।
তিনি বলেন, “R.V. Dr. Fridtjof Nansen”-এর ২০২৫ সালের জরিপ বাংলাদেশের সামুদ্রিক সম্পদ ব্যবস্থাপনায় এক মাইলফলক হয়ে থাকবে। প্রাপ্ত বৈজ্ঞানিক তথ্য মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ, টেকসই আহরণ, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিযোজন এবং সামুদ্রিক পরিবেশ সুরক্ষায় জাতীয় নীতি প্রণয়নে সহায়তা করবে। পাশাপাশি এটি বাংলাদেশের বিজ্ঞানীদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদার করবে।
রয়্যাল নরওয়েজিয়ান দূতাবাস, ঢাকা-এর চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স মিসেস মারিয়ানে রাবে ক্নায়েভেলস্রুদ (Ms.Marianne Rabe Knaevelsrud) বলেছেন, নরওয়ে সবসময় বাংলাদেশের টেকসই মৎস্যসম্পদ ব্যবস্থাপনা ও সামুদ্রিক গবেষণায় সহযোগিতা করে আসছে। তিনি আরো বলেন, "Dr. Fridtjof Nansen" গবেষণা জাহাজের মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্য দুই দেশের বন্ধুত্ব আরও জোরদার করবে এবং বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখবে।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (FAO) বাংলাদেশ প্রতিনিধি মি. জিয়াকুন শী (Mr. Jiaoqun Shi) বলেছেন, নরওয়ে সরকারের সহযোগিতায় FAO-এর EAF-Nansen Programme বাংলাদেশের জন্য বিজ্ঞানভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক হবে। এর মাধ্যমে টেকসই মৎস্যসম্পদ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে, যা জাতীয় ও বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তার জন্য অপরিহার্য।
এসময় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব (রুটিন দায়িত্ব) মো: তোফাজ্জেল হোসেন, অতিরিক্ত সচিব মো: ইমাম উদ্দীন কবীর, মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো: আবদুর রউফসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য