দুপুর পৌনে একটা। গুলিস্তানের ফুলবাড়িয়ায় সুন্দরবন স্কয়ার সুপার মার্কেটের নকশা বহির্ভূত দোকান উচ্ছেদে অভিযান চালাচ্ছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। ঘটনাস্থলে শত শত উৎসুক জনতা ও ব্যবসায়ীদের ভিড়। সতর্ক অবস্থানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
এর মধ্যেই ডিএসসিসির এক কর্মচারীর দিকে তেড়ে গেলেন ব্যবসায়ীদের একাংশ। তাদের অভিযোগ, মার্কেটের ভেতর অবৈধভাবে গড়ে তোলা দোকানগুলোর বৈধতা দেওয়ার কথা বলে হানিফ হাওলাদার নামে ডিএসসিসির বাজার শাখার এই কর্মচারী তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন।
এক সপ্তাহ আগে ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেটের অবৈধ দোকান উচ্ছেদে অভিযানের সময়েও ডিএসসিসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতি একই ধরনের অভিযোগ এনেছিলেন সেখানকার ব্যবসায়ীরা। বাধা দিয়েছিলেন উচ্ছেদে।
বৃহস্পতিবার সুন্দরবন স্কয়ার সুপার মার্কেটে উচ্ছেদের ব্যাপারে ব্যবসায়ীদের দিক থেকে কোনো ধরনের বাধা না আসলেও অভিযানের আগে মানববন্ধন করে তারা তাদের অভিযোগের বিষয়টি জানিয়ে রাখেন।
বেলা ১২টার দিকে অভিযানের শুরুতেই মার্কেটের চারপাশে ফুটপাতে গড়ে তোলা স্থাপনাগুলো ভেঙে দেন অভিযান পরিচালনাকারীরা। পরে ভবনের বাইরের নকশাবহির্ভূত অংশগুলো ভেঙে ফেলা হয়। এর পর ভূতলে (বেজমেন্ট) গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গায় গড়ে তোলা দোকানগুলো ভাঙা হতে থাকে।
এর মধ্যেই উচ্ছেদের বিরুদ্ধে মার্কেটের ৩৪ জন ব্যবসায়ীর করা এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত ৩৪টি দোকান উচ্ছেদে স্থিতাবস্থা জারি করেন। বেলা তিনটা নাগাদ আদেশের সেই কাগজ অভিযান পরিচালনাকারীদের হাতে পৌঁছালে গোটা উচ্ছেদ বন্ধ হয়ে যায়।
মূল নকশার বাইরের অবৈধ স্থাপনা অপসারণের নোটিশ দিয়ে গত রোববার ওই সব দোকান উচ্ছেদের ঘোষণা দিয়েছিল ডিএসসিসি। ঘোষণা অনুসারে সোমবার এই অভিযান পরিচালনার কথা ছিল।
তবে সেই নোটিশ চ্যালেঞ্জ করে রোববারই উচ্চ আদালতে রিট করেন ৩৪ দোকানের মালিক। এরপর সিটি করপোরেশনে আবেদন করে উচ্ছেদের আগে সময় নেন তারা।
কিন্তু বৃহস্পতিবার আরেকটি নোটিস দিয়ে সিটি করপোরেশন জানায়, দুপুরেই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।
একই দিন সকালে সম্পূরক আবেদন করে ডিএসসিসির নোটিশটি চ্যালেঞ্জ করলে আদালত তিন মাসের স্থিতাবস্থা জারি করে।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ‘এই বিষয়ে আমরা কিছু বলতে পারব না। মেয়রের নির্দেশেই এই উচ্ছেদ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।’
ব্যবসায়ীদের যত অভিযোগ
ব্যবসায়ীরা বলছেন, দোকান বৈধ করার আশ্বাস দিয়ে সাবেক মেয়রের সাঈদ খোকনের নাম ভাঙিয়ে যুবলীগ নেতা শাহাবুদ্দিন, আওয়ামী লীগ নেতা মনোয়ার হোসেন ও ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফরিদ উদ্দিন রতন দোকানিদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
আবার নতুন মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের নাম ভাঙিয়ে কাউন্সিলর ফরিদ উদ্দিন রতন সম্প্রতি দোকানির কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। যারা মেয়রের নাম ভাঙিয়ে ব্যবসায়ীদের সর্বস্বান্ত করেছেন, তাঁদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান দোকানিরা।
অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ডিএসসিসির ২০ নম্বর ওয়োর্ডের কাউন্সিলর ফরিদ উদ্দিন রতন। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমি জীবনে কোনোদিন ওই মার্কেটের (সুন্দরবন স্কয়ার সুপার মার্কেট) ভেতর ঢুকি নাই। টাকা নেয়ার তো প্রশ্নই আসে না। বরং মেয়র সাহেবকে (ফজলে নূর তাপস) আমি বার বার ওখানে উচ্ছেদ অভিযান চালাতে বলেছি।’
মার্কেটের ব্যবসায়ী আজিজুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সাঈদ খোকন সাহেব আমাদের বৈধতা দিয়েছেন। আমাদেরকে ট্রেড লাইসেন্স থেকে শুরু করে হস্তান্তর নামা ও বরাদ্দপত্র দেয়া হয়েছে। ভেঙে ফেলার আগে আমরা সব কাগজ ডিএসসিসিতে জমা দিয়েছি। আমাদের কাছ থেকে এতদিন খাজনা নিয়েছে তারা।’
নিউজবাংলার কাছে আজিজুর রহমানের খাজনা জমা দেয়ার রশিদের একটি কপিও রয়েছে। সেখানে ২০১২ সালের নভেম্বর মাস থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৭৪ মাসের খাজনা হিসেবে ৮২ হাজার ৮৮০ টাকা জমা দেয়ার কথা উল্লেখ আছে। তবে রশিদে ডিএসসিসির রাজস্ব কর্মকর্তার সই থাকলেও সিল নেই।
আরেক ব্যবসায়ী উজ্বল হোসেন বলেন, ‘আমি গত ১৯ বছর ধরে এই মার্কেটে ব্যবসা করছি। প্রথম দোকান কিনি ২০ লাখ টাকা দিয়ে। এরপর আবার ৭০ লাখ টাকা দিয়ে দুইটা দোকান কিনেছি। আমার সব টাকা এখানে লগ্নি করা করা। তিন বছর আগে জোর করে ছয় লাখ টাকা নেয় মালিক সমিতি। এরপর সিটি করপোরেশন থেকে ট্রেড লাইসেন্সও দেয়া হয়।’
ব্যবসায়ীরা জানান, এর আগে তারা বিভিন্ন সময়ে সিটি করপোরেশন বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। সেখানে তারা টাকার বিনিময়ে দোকান বরাদ্দ দেয়ার বিষয়টি উল্লেখ করলেও পরে সিটি করপোরেশন তাদের খাজনা ও ট্রেড লাইসেন্সের অনুমতি দেয়।
নকশা বহির্ভূত দোকানের সংখ্যা নিয়ে ধোঁয়াশা
নকশা অনুসারে ডিএসসিসির নিয়ন্ত্রণাধীন এই বিপনীবিতানের চারতলা পর্যন্ত বৈধ। তবে অনুমতি ছাড়াই নির্মিত পঞ্চম তলা ও বেজমেন্টে গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গায় অবকাঠামো নির্মাণ করে ব্যবসা পরিচালনা করা হচ্ছে অনেক দিন থেকেই। এ ছাড়া নকশায় থাকা খোলা জায়গা, শৌচাগার ও সিঁড়িঘরসহ বিভিন্ন ফাঁকা জায়গাতেও গড়ে তোলা হয়েছে অনেক দোকানঘর।
গত সপ্তাহে ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেটে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার আগে সেখানকার নকশাবহির্ভূত দোকানের নির্দিষ্ট সংখ্যা জানিয়েছিল ডিএসসিসি। তবে আজকের অভিযানের এ সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি।
নকশা বহির্ভূত দোকানের সংখ্যা জানতে চাইলে প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন বলেন, ‘এই বিপণিবিতানে ছয় শতাধিক নকশাবহির্ভূত দোকান রয়েছে। তবে সংস্থার জরিপকারীদের মতে এই সংখ্যা ৭৫০টির মতো। আবার ব্যবসায়ী ও দোকানমালিকদের মতে এই সংখ্যা ৫৫৯ টি।’
উচ্ছেদের পরবর্তী কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিএসসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাছের নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যেহেতু আদালত এ বিষয়ে একটা নির্দেশনা দিয়েছে, সেটা পর্যালোচনা করেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’
আরও পড়ুন:সরকার ও বিরোধী দলের সদস্য এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের পর আগামীতে গণমাধ্যমও যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতিতে যুক্ত হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকায় দেশটির রাষ্ট্রদূত পিটার হাস।
রোববার বেসরকারি ‘চ্যানেল ২৪’-এর কার্যালয়ে এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা জানান।
পিটার হাস বলেন, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার পেছনে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এর আওতায় সরকারি দল, বিরোধী দল ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কথা এসেছে। আগামীতে গণমাধ্যমও ভিসানীতিতে যুক্ত হবে।’
সম্প্রতি মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে এমন ব্যক্তির ওপর ভিসানীতি প্রয়োগে পররাষ্ট্র দপ্তর পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে। এই ব্যক্তিদের মধ্যে আছেন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধী ব্যক্তিরা।
ভিসানীতি প্রয়োগ প্রক্রিয়ার বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জানায়, (গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্তকারী) এসব ব্যক্তি ও তাদের নিকটতম পারিবারিক সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে অযোগ্য ঘোষিত হতে পারেন। এছাড়া একই অপরাধে জড়িত অন্য ব্যক্তিরাও ভিসানীতির আওতায় যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশাধিকার হারাবেন। এদের মধ্যে আছেন বর্তমান ও সাবেক সরকারি কর্মকর্তা, সরকারি ও বিরোধীদলের সদস্য, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য, বিচার বিভাগ ও নিরাপত্তা সংস্থার সদস্য।
বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সহায়তার লক্ষ্যে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন গত ২৪ মে নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করেন। সে সময় গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার অর্থ হিসেবে বলা হয়, ভোট কারচুপি, ভোটারকে ভয়ভীতি দেখানো, শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশে বাধাদান, রাজনৈতিক দল, ভোটার, সুশীল সমাজ, মিডিয়াকে মতপ্রকাশে বাধা দেয়া।
আরও পড়ুন:কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের প্রাথমিক নির্মাণকাজ সফলভাবে শেষ হয়েছে। মূল টানেলটি যানবাহন চলাচলের জন্য পুরোপুরি সজ্জিত।
দেশের প্রথম পানির নিচের এই টানেল এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায়। ইতোমধ্যে এই টানেলে চলাচল করা যানবাহনের টোল হার নির্ধারণ করা হয়েছে। সূত্র: ইউএনবি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৮ অক্টোবর বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামে আনুষ্ঠানিকভাবে টানেলটি উদ্বোধন করবেন। এ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী টানেলের আনোয়ারা প্রান্তে সমাবেশে তিনি বক্তব্য দেবেন। পরদিন থেকে টানেলটি যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে।
এ প্রসঙ্গে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘টানেলের প্রাথমিক নির্মাণকাজ সফলভাবে শেষ হয়েছে। বর্তমানে টানেলের মধ্যে প্রযুক্তিগত বিষয়গুলো সমাধানের দিকে মনোনিবেশ করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এই অসাধারণ প্রকল্পের উদ্বোধন পানির নিচে টানেলের যুগে বাংলাদেশের প্রবেশের সূচনা করছে। এই স্মরণীয় অর্জন দেশের অভ্যন্তরে যোগাযোগের একটি নতুন যুগের সূচনা করবে, যা জাতির জন্য গর্বের বিষয়।’
সেতু বিভাগের সচিব মনজুর হোসেন বলেন, ‘টানেলটি প্রাথমিকভাবে যানবাহন চলাচলের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। চলমান প্রচেষ্টায় ফায়ার সার্ভিস এবং থানা ভবনের মতো প্রয়োজনীয় অবকাঠামো স্থাপনসহ বিভিন্ন দিক অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। টানেল প্রকল্প কাজের সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ৯৮ শতাংশ।’
তিনি বলেন, ‘টানেলকেন্দ্রিক একটি পুলিশ স্টেশন, একটি ডাম্পিং এলাকা এবং একটি স্টেশন স্থাপনের বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে এবং এর জন্য প্রয়োজনীয় জায়গাও সহজেই পাওয়া যাচ্ছে।
‘উদ্বোধনের পরও আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। যারা এই অভিযানের সঙ্গে জড়িত এবং যারা রক্ষণাবেক্ষণ করবেন তাদের নিজস্ব গাড়ি থাকবে।’
সচিব মনজুর হোসেন বলেন, ‘নিরবচ্ছিন্ন পরিবহন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে টানেল এলাকার অভ্যন্তরে এবং এর আশপাশে যানবাহন চলাচল পরিচালনার জন্য ট্রাফিক বিভাগ একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে।
‘টানেলে কী ধরনের যানবাহন চলবে তা ঠিক করা হয়েছে। টোলও নির্ধারণ করা হয়েছে। টানেলের অভ্যন্তরে যানবাহনগুলো ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার গতিতে চলতে সক্ষম হবে।’
সচিব বলেন, ‘টানেলের ধারণাটি আমাদের কাছে নতুন। এজন্য এর কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এটি অন্যান্য সেতু বা রাস্তা থেকে আলাদা। সেক্ষেত্রে আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে টানেলটি নিরাপদ থাকবে এবং যারা এটি ব্যবহার করবে তারাও নিরাপদে থাকবে।
এই দৃষ্টিকোণ থেকে আমি মনে করি না যে এই মুহূর্তে দুই বা তিন চাকার গাড়ির জন্য এটি নিরাপদ।’
টানেলের প্রকল্প পরিচালক হারুন-অর-রশিদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল চালু হলে চট্টগ্রাম শহরের পরিধি বাড়বে।’
বদলে যাচ্ছে আনোয়ারা
টানেলের এক প্রান্ত চট্টগ্রাম শহর এবং অপর প্রান্ত আনোয়ারা উপজেলার দিকে। টানেলের উন্নয়ন আনোয়ারাকে একটি ক্রমবর্ধমান শহরে রূপান্তরিত করছে। একই সঙ্গে আনোয়ারা উপজেলায় জমির দামও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।
আনোয়ারা উপজেলায় টানেলের টার্মিনাসে যাওয়ার রাস্তার দু’পাশে গড়ে উঠছে ছোট-বড় অসংখ্য শিল্প-কারখানা। টানেলটি চালু হলে কর্ণফুলী নদী পারাপারের সময় কমে দাঁড়াবে মাত্র ৩ মিনিটে।
টানেলের আদ্যোপান্ত
টানেলটি রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরের পাশাপাশি পর্যটন নগর কক্সবাজারের মধ্যে সড়ক যোগাযোগে একটি রূপান্তরমূলক পরিবর্তন আনতে প্রস্তুত।
মূল টানেলটির দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার এবং দুটি চার লেনের প্রতিটির দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার। এ ছাড়া মূল টানেলের পশ্চিম ও পূর্ব প্রান্তে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার লিংক রোড এবং আনোয়ারা প্রান্তে ৭২৭ মিটার দীর্ঘ ফ্লাইওভার থাকবে।
টানেলটি কর্ণফুলী নদীর তলদেশে ১৮ থেকে ৩১ মিটার গভীরে অবস্থিত।
২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি পতেঙ্গা থেকে আনোয়ারা পর্যন্ত প্রথম বা উত্তর টানেলের বোরিং শুরু হয়।
২০১১ সালে প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা যাচাই এবং ২০১৪ সালে একটি সমঝোতা স্মারকের পর ২০১৫ সালের ৩০ জুন ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ঠিকাদার নিয়োগের পর ২০১৭ সালের ৫ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে নির্মাণ কাজ শুরু হয়।
বাংলাদেশ ও চীন সরকারের (জিটুজি) যৌথ অর্থায়নে মোট ১০ হাজার ৬৯৮ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হচ্ছে। টানেলের নির্মাণ কাজ করছে চায়না কমিউনিকেশন অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিসিসিসি)।
কর্ণফুলী নদীর দুই পাড়ে চীনের সাংহাইয়ের অনুরূপ ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ ধারণা তৈরির লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।
টোল নির্ধারণ
৩ দশমিক ৪৩ কিলোমিটার দীর্ঘ বঙ্গবন্ধু টানেল ব্যবহারে মোট ১২ ধরনের যানবাহনে টোল চার্জ দিতে হবে। প্রাইভেটকারের ক্ষেত্রে ন্যূনতম টোল ফি ২০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। পিকআপ ট্রাককে প্রতি ক্রসিংয়ে ২০০ টাকা এবং মাইক্রোবাসে ২৫০ টাকা টোল নেয়া হবে।
৩১টির কম আসনের বাসগুলোর ৩০০ টাকা এবং ৩২টির বেশি আসনের বাসগুলোর জন্য ৪০০ টাকা টোল দিতে হবে।
পাঁচ টন পর্যন্ত পণ্য বহনে সক্ষম ট্রাকের জন্য টোল নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০০ টাকা। আট টনের ট্রাকে ৫০০ টাকা এবং ১১ টনের ট্রাকে ৬০০ টাকা দিতে হবে। তিন এক্সেল কনটেইনার ট্রেইলারের জন্য দিতে হবে ৮০০ টাকা।
চার এক্সেলের একটি ট্রেলারের টোল এক হাজার টাকা। তবে প্রতিটি অতিরিক্ত এক্সেলের জন্য অতিরিক্ত ২০০ টাকা দিতে হবে। টানেলটি যানবাহন চলাচলের জন্য চালুর দিন থেকেই এ টোল হার কার্যকর হবে।
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষক দল না পাঠানোর সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়া চিঠির জবাব দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। ইইউ রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলিকে তিনি বলছেন, অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সব সহায়তা নিতে যথাসাধ্য চেষ্টা করব।
২৩ সেপ্টেম্বর স্বাক্ষরিত চিঠিতে সিইসি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘গত ১৯ সেপ্টেম্বর আমি আপনার চিঠি পেয়েছি, যেখানে বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণের বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে। অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সব সহায়তা নিতে যথাসাধ্য চেষ্টা করব বলে আপনাকে আশ্বস্ত করছি। সরকারও বারবার নিজের জায়গা থেকে সহায়তা করার বিষয়ে অঙ্গীকার করছে। তা সত্ত্বেও দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকদের পর্যবেক্ষণ সুষ্ঠু নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতার ক্ষেত্রে দেশে-বিদেশে বিশ্বাসযোগ্যতা যোগ করবে।’
হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘যাই হোক না কেন, আমি বিশ্বাস করি যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন তবুও আসন্ন সাধারণ সংসদ নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক এবং বিশ্বাসযোগ্য করার জন্য আমাদের প্রচেষ্টাকে যেভাবেই সমীচীন বলে মনে করা হোক না কেন, সমর্থন অব্যাহত রাখবে।’
এর আগে চার্লস হোয়াইটলি এক চিঠিতে সিইসিকে লেখেন, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাজেট স্বল্পতার কারণে পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষক দল পাঠাবে না ইইউ। চিঠিতে আরও বলা হয়, বর্তমান পরিস্থিতিতে এটা পরিষ্কার নয় যে, নির্বাচনের সময় সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রয়োজনীয় শর্তাবলীয় পূরণ হবে কি না। তবে তারা পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষক দল না পাঠালেও সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে অন্যান্যভাবে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় সহায়তা দেবে এবং যোগাযোগ অব্যাহত রাখবে।
ইসির পরিকল্পনা অনুযায়ী, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল আগামী নভেম্বরে ঘোষণা করা হতে পারে এবং ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ অথবা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ভোটগ্রহণ হতে পারে।
বাংলাদেশকে উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তি আখ্যা দিয়ে ঢাকায় নিযুক্ত সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত ইসা বিন ইউসেফ আল দুহাইলান বলেছেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি।
সৌদি আরবের ৯৩তম জাতীয় দিবস উপলক্ষে দেয়া বার্তায় তিনি এ আগ্রহের কথা জানান বলে বার্তা সংস্থা ইউএনবির রোববারের প্রতবেদনে জানানো হয়েছে।
সৌদি রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘(বাংলাদেশের) বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের বিষয়ে ব্যাপক আগ্রহ দেখিয়েছে সৌদি আরবের নামী অনেক কোম্পানি ও বিনিয়োগকারী।’
সৌদির জাতীয় দিবস ২৩ সেপ্টেম্বর। আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর ঢাকায় নিজেদের জাতীয় দিবস উদযাপন করবে সৌদি দূতাবাস।
রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশে বাড়ি, স্কুল, মসজিদ, এতিমখানা, প্রাকৃতিক দুর্যোগে সুরক্ষার জন্য আশ্রয়কেন্দ্র, হাসপাতাল, সেতু ও বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো প্রকল্পে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে সৌদি আরব।
তিনি বলেন, ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সৌদি সফর ও দেশটির বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদের সঙ্গে বৈঠক এবং সৌদির বেশ কয়েকজন মন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের ফলে দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক আরও মজবুত হয়েছে।
সৌদি দূত আরও বলেন, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক শক্ত বন্ধনের ওপর প্রতিষ্ঠিত দুই দেশের সম্পর্কের মূল গভীরে প্রোথিত।
আরও পড়ুন:দেশের আট বিভাগে বৃষ্টির আভাস দিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছে, তিনটিতে হতে পারে মাঝারি ধরনের ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ।
রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি রোববার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এমন তথ্য দিয়েছে।
পূর্বাভাসে সিনপটিক অবস্থা নিয়ে বলা হয়, মৌসুমি বায়ুর অক্ষ পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত অবস্থান করছে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের উত্তরাংশে সক্রিয় ও বাংলাদেশের অন্যান্য জায়গায় মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে।
বৃষ্টিপাতের বিষয়ে পূর্বাভাসে বলা হয়, রংপুর, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের অধিকাংশ জায়গা এবং ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে রংপুর, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে।
তাপমাত্রার বিষয়ে বলা হয়, সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশন ও অন্যান্য উচ্চ পর্যায়ের পার্শ্ব ও দ্বিপক্ষীয় অনুষ্ঠানে যোগদান শেষে যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে পৌঁছেছেন।
স্থানীয় সময় শনিবার সন্ধ্যায় নিউ ইয়র্ক থেকে সড়কপথে ওয়াশিংটন ডিসিতে পৌঁছান তিনি।
বার্তা সংস্থা বাসসের প্রতিবেদনে জানানো হয়, ওয়াশিংটন ডিসিতে পৌঁছানোর পর যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ ইমরান ফুলের তোড়া দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানান।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী স্থানীয় সময় শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় নিউ ইয়র্কে তার আবাসস্থল দ্য লোটে থেকে ওয়াশিংটন ডিসির উদ্দেশে রওনা হন।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৭ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কে পৌঁছান।
প্রধানমন্ত্রী ২৯ সেপ্টেম্বর যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনের উদ্দেশে ওয়াশিংটন ডিসি ছাড়বেন। ৩ অক্টোবর পর্যন্ত লন্ডনে অবস্থান করবেন তিনি।
সফর শেষ করে প্রধানমন্ত্রী দেশের উদ্দেশে লন্ডন ছাড়বেন। আগামী ৪ অক্টোবর তার ঢাকায় আসার কথা রয়েছে।
আরও পড়ুন:গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বাংলাদেশ চিন্তিত নয় বলে আল জাজিরার কাছে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন।
সংবাদমাধ্যমটিকে শনিবার তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র গণতান্ত্রিক দেশ। আমরাও তাই।’
অবাধ ও সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার সক্ষম বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে বক্তব্য দিয়েছেন, মোমেনের বক্তব্যে তার প্রতিফলন দেখা গেছে।
তিনি মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যমটিকে বলেন, ‘বৈশ্বিক পরাশক্তি হিসেবে তারা (যুক্তরাষ্ট্র) অবশ্যই অন্যদের ওপর ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে, তবে আমরা চিন্তিত নই। কারণ আমরা জানি কীভাবে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে হয়।’
বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে খর্ব করায় দায়ী বাংলাদেশিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা বৃহস্পতিবার জানায় যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট।
ওই ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের বিবৃতিতে বলা হয়, ভিসা নিষেধাজ্ঞায় পড়া ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দল ও রাজনৈতিক বিরোধী এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা, যারা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অযোগ্য বিবেচিত হতে পারেন।
ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী ভিসা রেকর্ড গোপনীয় বিষয় হওয়ায় নিষেধাজ্ঞায় পড়া লোকজনের নাম প্রকাশ করেনি স্টেট ডিপার্টমেন্ট।
এমন বাস্তবতায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী আল জাজিরাকে বলেন, ভিসা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আওয়ামী লীগের কর্মীরা উদ্বিগ্ন নন। কারণ তাদের বেশির ভাগ এই ‘উন্নত দেশে’ বসবাস করতে চান।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের ভোটাররাও চিন্তিত নয়। কারণ তারা হয়তো যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার কথা একেবারেই ভাবছে না।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য