একাত্তরের পরাজিত শক্তির একটি অংশ মিথ্যা ও বানোয়াট বক্তব্য দিয়ে সাধারণ মুসলমানদের বিভ্রান্ত করতে মাঠে নেমেছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘এদেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ, ধর্মান্ধ নয়।’
১৮ মিনিটের ভাষণে ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘জাতির পিতা ১৯৭২ সালে বলেছিলেন, ধর্মকে রাজনীতির হাতিয়ার না করতে। কিন্তু পরাজিত শক্তির দোসররা দেশকে আবার ৫০ বছর আগের অবস্থায় ফিরে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে। রাজনৈতিক মদদে সরকারকে ভ্রুকুটি দেখানোর পর্যন্ত ধৃষ্টতা দেখাচ্ছে।’
এদেশে ধর্মীয় বিভেদকে প্রশ্রয় দেয়া হবে না বলে পরিষ্কার জানিয়ে দেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। বলেন, ‘ধর্মকে রাজনীতির হাতিয়ার করবেন না। প্রত্যেককে নিজ নিজ ধর্ম পালনের অধিকার রাখেন। বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান- সকল ধর্মের-বর্ণের মানুষের রক্তের বিনিময়ে এ দেশ স্বাধীন হয়েছে।
‘এ দেশে ধর্মের নামে আমরা কোনো ধরনের বিভেদ-বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে দেব না। ধর্মীয় মূল্যবোধ সমুন্নত রেখে এ দেশের মানুষ প্রগতি, অগ্রগতি এবং উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাবে।’
ভাষণে, ইসলাম ধর্মের প্রসারে জাতির পিতার ভূমিকা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলেন, ‘তার মতো আর কে বাংলার মানুষের মন-মনন-আকাঙ্ক্ষা বুঝতে পারত!
‘তাই তিনি যখন সংবিধান রচনা করেন, তখন মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটিয়ে বাঙালি জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র- এই চারটি মৌলিক বিষয়কে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে গ্রহণ করেন।’
'৭৫ পরবর্তী সরকারগুলো মুক্তিযুদ্ধের আদর্শবিরোধী রাজনীতির মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ জলাঞ্জলি দিয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার পদক্ষেপ নেয় বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘সামরিক জান্তা সঙ্গীনের খোঁচায় সংবিধানকে ক্ষতবিক্ষত করে। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় ধারাবাহিক অপপ্রচার চালিয়ে, ইতিহাস বিকৃত করে আওয়ামী লীগ এবং বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে কালিমা লেপনের চেষ্টা করে।
‘ধর্ম নিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী জাতির পিতা ইসলাম ধর্মীয় মূল্যবোধ রক্ষা এবং প্রসারে যা করেছেন, ইসলামের নামে মুখোশধারী সরকারগুলো তা কখনই করেনি। আইন করে মদ-জুয়া-ঘোড়দৌড় নিষিদ্ধ করা, ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করা, মাদ্রাসা বোর্ড স্থাপন, ওআইসি’র সদস্যপদ অর্জনের মত কাজগুলো বঙ্গবন্ধুর হাত ধরেই বাস্তবায়িত হয়েছিল।’
স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিজয় উদযাপনের আহ্বান
প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে উঠে আসে করোনা প্রসঙ্গও। বিজয় উদযাপনেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে দেশবাসীকে আহ্বান জানান সরকার প্রধান। তিনি বলেন, ‘প্রতিটি মানুষের জীবনই মহা মূল্যবান। কোনো অবহেলায় একজন মানুষেরও মৃত্যু কাম্য নয়।
‘তাই, আমি সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিজয় দিবস উদ্যাপনসহ যাবতীয় কাজকর্ম সম্পন্ন করার অনুরোধ জানাচ্ছি। আপনারা ঘর থেকে বের হওয়ার সময় অবশ্যই মাস্ক পরিধান করবেন এবং মাঝেমধ্যে হাত সাবান অথবা স্যানিটাইজার দিয়ে পরিষ্কার করবেন। আপনার সুরক্ষা, সকলের জন্য রক্ষাকবচ।’
সরকারের নানা পদক্ষেপে করোনা মহামারির মধ্যেও দেশের অর্থনীতির সচল আছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘করোনা মহামারি স্বাস্থ্য-ব্যবস্থার পাশাপাশি অর্থনীতির উপর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। বিশ্ব অর্থনীতি এক কঠিন সময় অতিক্রম করছে। করোনাভাইরাসের মহামারির ফলে অনেক উন্নত এবং উদীয়মান অর্থনীতির দেশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধির মুখে পড়েছে। বাংলাদেশে আমরা সময়োচিত পদক্ষেপ এবং কর্মসূচি গ্রহণ করে এই নেতিবাচক অভিঘাত কিছুটা হলেও সামাল দিতে সক্ষম হয়েছি।
‘আমরা প্রায় এক লাখ ২১ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছি যা জিডিপির ৪.৩ শতাংশ। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রায় ২.৫ কোটি প্রান্তিক মানুষকে নগদসহ নানা সহায়তা দেয়া হয়েছে। প্রাথমিক ধাক্কা সামলিয়ে আমাদের প্রবাসী আয়, কৃষি উৎপাদন এবং রপ্তানি বাণিজ্য ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। গত অর্থবছরে ৫.২৪ শতাংশ হারে আমাদের প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রক্ষেপণ বলছে ২০২০ সালে বাংলাদেশের আর্থিক প্রবৃদ্ধি হবে দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বোচ্চ।’
করোনার মধ্যেও মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়নের বিষয়টিও প্রাধান্য পায় প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের বৃহৎ প্রকল্পগুলোর কাজ পূর্ণ গতিতে এগিয়ে চলছে। আমাদের স্বপ্নের ও গর্বের পদ্মাসেতুর সবগুলো স্প্যান বসানো শেষ। ঢাকায় মেট্রোরেলের কাজ আবার পুর্ণদ্যোমে শুরু হয়েছে।
‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ এই মহামারিতে একদিনের জন্যও বন্ধ হয়নি। কক্সবাজারের মাতারবাড়িতে বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং চট্টগ্রামের কর্ণফুলির নদীর তলদেশে ট্যানেল নির্মাণের কাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের মহাসড়কগুলো চার-লেনে উন্নয়নের কাজও পুরোদমে এগিয়ে চলছে।’
‘ধর্মীয় শিক্ষার প্রসারে কেউ এতটা করেনি’
ধর্মীয় শিক্ষার প্রসারে সরকারের নানা পদক্ষেপ তার ভাষণে তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমান সরকারের সময় ধর্মীয় শিক্ষার প্রচার এবং প্রসারে যত কাজ হয়েছে, অতীতে কোনো সরকারই তা করেনি। আমরা ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করেছি। ৮০টি মডেল মাদ্রাসায় অনার্স কোর্স চালু করা হয়েছে।
‘কওমি মাদ্রাসাকে স্বীকৃতি দিয়েছি এবং দাওয়ারে হাদিস পর্যায়কে মাস্টার্স মান দেয়া হয়েছে। মাদ্রাসার শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের জন্য বিশেষ বরাদ্দ দিয়েছি। প্রতিটি জেলা-উপজেলায় দৃষ্টিনন্দন মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে। ইমাম- মোয়াজ্জিনদের সহায়তার জন্য কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন করে দিয়েছি।’
এছাড়া ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে সারাদেশে মসজিদভিত্তিক পাঠাগার স্থাপন ও লক্ষাধিক আলেম-ওলামায়ে কেরামের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার কথাও জানান সরকার প্রধান।
‘বাংলাদেশ আর অর্থনৈতিকভাবে ভঙ্গুর নয়’
বাংলাদেশ এখন আর কারো দয়া বা করুনার উপর নির্ভরশীল নয় বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু বলতেন ভিক্ষুক জাতিকে কেউ সম্মান করে না। আমরা বাংলাদেশের সেই দুর্নাম ঘুচিয়েছি। আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশ আজ একটি সমীহের নাম। আজকের বাংলাদেশ আর অর্থনৈতিকভাবে ভঙ্গুর বাংলাদেশ নয়। আজকের বাংলাদেশ স্বাবলম্বী বাংলাদেশ।’
একটা সময় ছিল আমাদের উন্নয়ন বাজেটের সিংহভাগ আসত বিদেশি অনুদান থেকে। আজ বাজেটের ৯৭ ভাগ মেটানো হয় নিজস্ব অর্থায়নে। বাংলাদেশ কারও দয়া বা করুণার উপর নির্ভরশীল নয়।’
প্রধানমন্ত্রী আশা করেন, উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নয়ত দেশে পরিণত হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে সামিল হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছি।
‘জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার। আমরা তার স্বপ্ন বাস্তবায়নের দ্বারপ্রান্তে। উন্নয়নের এই ধারাবাহিকতা আমাদের অব্যাহত রাখতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের সময় যেসব দেশ ও মানুষ বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছিল তাদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।
দেশবাসীকে বিজয়ের শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিজয় দিবসের প্রাক্কালে তাই আসুন, আবারও আমরা শপথ নেই - আমরা যেন লাখো শহিদের রক্তের ঋণ ভুলে না যাই। আমরা যেন মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক চেতনা ভূলুণ্ঠিত হতে না দেই।
‘যুবশক্তি, তরুণ সমাজ এবং নতুন প্রজন্মের কাছে অনুরোধ, তোমরা তোমাদের পূর্বসূরীদের আত্মোৎসর্গের কথা কখনই ভুলে যেও না। তাদের উপহার দেয়া লাল-সবুজ পতাকার অসম্মান হতে দিও না। যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে তোমরা তোমাদের পূর্বপুরুষদের বিজয়-নিশান সমুন্নত রাখার শপথ নাও এই বিজয় দিবসে। প্রতিজ্ঞা কর, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে এদেশকে সোনার বাংলাদেশে পরিণত করবে। তবেই ৩০ লাখ শহিদের আত্মা শান্তি পাবে। জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণ হবে।’
বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের একটি কবিতা আবৃত্তির মাধ্যমে ভাষণ শেষ করেন সরকারপ্রধান।
আরও পড়ুন:আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশগ্রহণ করতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন কমিশনার ইসি মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার।
তিনি বলেন, ‘আইনগতভাবে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। স্থগিত দল হওয়া মানে তাদের যাবতীয় কার্যক্রম স্থগিত। তাই আগামী নির্বাচনে তারা অংশগ্রহণ করতে পারবে না।’
তিনি আজ রোববার সকালে সিলেটে সাংবাদিকদের এই কথা বলেন।
নির্বাচন কমিশনার জেলা পুলিশ লাইনে নির্বাচনী দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনে পুলিশের দক্ষতা বৃদ্ধিতে আয়োজিত প্রশিক্ষণের উদ্বোধন করেন।
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)’র প্রতীক সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রতীক নির্ধারণ সংবিধান ও নির্বাচনী বিধিমালার আওতায় করা হয়। শাপলা প্রতীক সেই তালিকায় নেই।
তাই তা বরাদ্দ দেওয়ার সুযোগও নেই।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে না হওয়ার মতো কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। রমজানের আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’
নির্বাচনকে সামনে রেখে সব বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কোনো চ্যালেঞ্জ হিসেবে থাকবে না বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
ইসি আনোয়ারুল বলেন, ‘অতীতের মতো বিতর্কিত নির্বাচন আর হবে না। সবার সহযোগিতায় একটি সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিতর্কিত বা প্রশ্নবিদ্ধ কোনো কর্মকর্তা যাতে নির্বাচনী দায়িত্বে না থাকেন, সে বিষয়ে নির্বাচন কমিশন কঠোর অবস্থানে রয়েছে।’ সূত্র: বাসস
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান পাটওয়ারীকে।
অন্য সদস্যরা হলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রথম সচিব মুঃ রইচ উদ্দিন খান ও মোঃ তারেক হাসান এবং ঢাকা কাস্টম হাউসের যুগ্ম কমিশনার মুহাম্মদ কামরুল হাসান। কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের উপসচিব পঙ্কজ বড়ুয়া।
কমিটি দ্রুততম সময়ের মধ্যে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে সরকারের কাছে প্রতিবেদন দেবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডও বিশেষ ব্যবস্থায় ঢাকা কাস্টম হাউসে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম অব্যাহত রাখার উদ্যোগ নিয়েছে। সূত্র: বাসস
গত ১৬ অক্টোবর, ২০২৫ তারিখে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড SRO No-404-Law/2025 এর মাধ্যমে বাংলা ভাষায় প্রণীত আয়কর আইন, ২০২৩ এর Authentic English Text সরকারি গেজেট আকারে প্রকাশ করেছে।
আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪ বাতিল করে ২০২৩ সালে বাংলা আয়কর আইন, ২০২৩ প্রণয়ন করার পর হতেই বিদেশি বিনিয়োগকারীগণ সরকারি গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে আয়কর আইনের Authentic English Text প্রকাশের দাবি জানাচ্ছিলেন।
আয়কর আইনের Authentic English Text না থাকায় বিদেশী বিনিয়োগকারীগণ আইনের সঠিক ব্যাখ্যা ও অনুশীলনের বিষয়ে সংশয়ের মধ্যে থাকতেন এবং বিভিন্ন আইনি জটিলতার সম্মুখীন হতেন।
আয়কর আইনের Authentic English Text সরকারী গেজেটে প্রকাশ হবার ফলে দেশী-বিদেশি বিনিয়োগকারীগণ আয়কর আইন সম্পর্কে স্বচ্ছ ব্যাখ্যা পাবেন বিধায় করদাতাগণের আস্থা অধিকতর বৃদ্ধি পাবে এবং আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে দ্ব্যর্থবোধকতা দূর করে স্বচ্ছতা ও সঠিকতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
কাস্টমস আইন, ২০২৩ এবং মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ এর Authentic English Text সরকারি গেজেটে প্রকাশের প্রক্রিয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। অচিরেই এই দুটি আইনের Authentic English Text সরকারি গেজেট আকারে প্রকাশের মাধ্যমে দেশি-বিদেশী বিনিয়োগকারীগনের দীর্ঘদিনের অপেক্ষার অবসান ঘটবে মর্মে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আশা করছে।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের আওতাধীন পদ্মা সেতুতে আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর ক্যাশলেস, টোল কালেক্টর ব্যতীত ননস্টপ ইলেকট্রনিক টোল কালেকশন (ETC) সিস্টেম চালু করা হয়েছে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে দেশের টোল পরিশোধ প্রক্রিয়া আরও দ্রুত, স্বচ্ছ ও ডিজিটাল ব্যবস্থার আওতায় এসেছে।
বর্তমানে বিকাশ, ট্রাস্ট ব্যাংকের TAP অ্যাপ এবং মিডল্যান্ড ব্যাংকের অ্যাপ এর মাধ্যমে পদ্মা সেতুর টোল পরিশোধ করা যাচ্ছে। ব্যবহারকারীরা বিকাশ অ্যাপে গিয়ে “টোল” অপশনের অধীনে “মোটরযান রেজিস্ট্রেশন করুন” এ প্রবেশ করে গাড়ির নম্বর ও চেসিস নম্বরের শেষ ৪ (চার) ডিজিট প্রদান করে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করতে পারবেন। সফল রেজিস্ট্রেশনের পর ফিরতি এসএমএসে একটি Ekpass ID প্রেরণ করা হবে।
এই Ekpass ID ব্যবহার করে বিকাশ অ্যাপের “Pay Bill” অপশনের “D-Toll Top-Up” সেবার মাধ্যমে রিচার্জ করতে হবে। এরপর পদ্মা সেতুর মাওয়া টোল প্লাজার নিকটস্থ রেজিস্ট্রেশন বুথে বিআরটিএ অনুমোদিত RFID ট্যাগ প্রথমবারের মতো যাচাই করে রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। একবার রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হলে, যানবাহন কমপক্ষে ৩০ কিলোমিটার/ঘণ্টা গতিতে ETC লেন ব্যবহার করে নির্বিঘ্নে পারাপার হতে পারবে।
১৮ অক্টোবর সেতু বিভাগের সচিব এবং বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক জনাব মোহাম্মদ আবদুর রউফ পদ্মা সেতুর ইটিসি বুথ পরিদর্শন করেন এবং ইটিসি সেবা ব্যবহার করে পদ্মা সেতু পারাপার করেন।
গত ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে ট্রাস্ট ব্যাংকের TAP অ্যাপের মাধ্যমে পদ্মা সেতুর ETC সিস্টেমের লাইভ পাইলটিং কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর থেকে ধীরে ধীরে এই সেবার পরিসর বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইতোমধ্যে ETC সিস্টেমের মাধ্যমে মোট ১,৮১৪টি যানবাহন পারাপার হয়েছে এবং মোট ৩৪,৯১,৭০০ টাকা টোল আদায় সম্পন্ন হয়েছে।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা জনাব মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান মহোদয়ের বিশেষ নির্দেশনা ও দিকনির্দেশনায় পদ্মা সেতুতে এই ETC সিস্টেম বাস্তবায়িত হয়েছে। এটি দেশের টোল ব্যবস্থাপনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক, যা সময়, জ্বালানি ও মানবসম্পদের অপচয় হ্রাসে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।
ভবিষ্যতে আরও বিভিন্ন ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাপ এই সেবার আওতায় যুক্ত হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। এ লক্ষ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ-এর a2i (এটুআই) কার্যক্রম পরিচালনা করছে এবং নতুন ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস প্রোভাইডারদের সাথে সংযুক্তির কাজ অব্যাহত রয়েছে।
এই টোল কালেক্টর ব্যতীত নন স্টপ ইলেকট্রনিক টোল কালেকশন সিস্টেমের মাধ্যমে পদ্মা সেতু ব্যবহারকারীরা দ্রুত, নিরাপদ ও স্বচ্ছভাবে টোল পরিশোধ করতে পারবেন—যা বাংলাদেশের ডিজিটাল রূপান্তরের যাত্রায় একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ-এর মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞ এবং ২০২১ সালের মার্চ মাসে বিক্ষোভ কর্মসূচি দমনে পরিচালিত হত্যাকাণ্ডে শাহাদাতবরণকারী শহিদ পরিবারের সদস্যদের মাঝে চেক বিতরণ অনুষ্ঠান ২০২৫ আজ ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। স্থানীয় সরকার বিভাগ কর্তৃক আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা জনাব আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া প্রধান অতিথি হিসেবে এবং ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা ডা. আ ফ ম খালিদ হোসেন বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ-এর মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞে শহিদ ৫৮ টি পরিবার এবং ২০২১ সালের মার্চ মাসে বিক্ষোভ কর্মসূচি দমনে পরিচালিত হত্যাকাণ্ডে শহিদ ১৯টি পরিবারের সদস্যদের মাঝে পরিবার প্রতি ১০ লক্ষ টাকা করে, মোট ৭ কোটি ৭০ লক্ষ টাকার চেক প্রদান করা হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা জনাব আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, "শহীদদের রক্ত কখনো বৃথা যায় না। ঐতিহাসিক শাপলা চত্বর এবং মোদি বিরোধী আন্দোলনে শহীদদের আজকের এই স্বীকৃতি তারই প্রমাণ।" শহীদ পরিবারদেরকে স্বীকৃতি দিতে পেরে সরকার গর্বিত উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন ইতিহাস থেকে যেনো কেউ ঐতিহাসিক শাপলা চত্বরের শহীদদের নাম মুছতে না পারে, এজন্য শাপলা চত্বরেই খোদাই করে লেখা হবে শহীদদের নাম।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ধর্ম বিষয়ক উপদেষ্টা ডা. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন,"শাপলা চত্বর এবং মোদি বিরোধী আন্দোলনে শহিদদের আর্থিক সহায়তা প্রদান স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের এক ঐতিহাসিক উদ্যোগ।" এই উদ্যোগের মাধ্যমে দুই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার স্বীকৃতি দেওয়ার প্রক্রিয়ার সূচনা হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
২০১৩ সালের শাপলা চত্বরের হত্যাযজ্ঞ এবং ২০২১ সালের মোদি বিরোধী বিক্ষোভ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডে শাহাদতবরণকারী শহিদ পরিবারের সদস্যদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদকে আন্তরিক সাধুবাদ জানিয়ে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির মাওলানা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী বলেন, "স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার এই মহতী উদ্যোগে সারা বাংলার আলেম সমাজ সম্মানিত হয়েছে। "
স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব জনাব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তৃতা করেন জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, এবি পার্টির চেয়ারম্যান জনাব মজিবুর রহমান ভূঁইয়া মঞ্জু, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি জনাব নুরুল হক নুর, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা সাজিদুর রহমান এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক জনাব মোঃ শাহজাহান মিয়া।
‘জুলাই সনদ’ স্বাক্ষরকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ঐক্য ও সংস্কারের পথে বড় ধরনের অগ্রগতি হিসেবে অভিহিত করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার।
তিনি আরও বলেন, এটি ২০২৬ সালের নির্বাচনের প্রস্তুতিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে দিয়েছে।
শুক্রবার ফেসবুক পোস্টে মিলার লেখেন, ‘জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পেরে আমি আনন্দিত। এই দলিল মৌলিক সংস্কার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গড়ে ওঠা ব্যাপক ঐকমত্যের প্রতিফলন।’
ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক পালাবদলের এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। ২০২৬ সালের নির্বাচনের পথে দেশটি ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যাচ্ছে এটি তারই প্রমাণ।
‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ মোট ২৫টি রাজনৈতিক দল যোগ দেয়।
অনুষ্ঠানে মিলারের উপস্থিতি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা ও শাসনব্যবস্থা সংস্কারে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহযোগীতা অব্যাহত রাখার ইঙ্গিত বহন করে।
সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও প্রাতিষ্ঠানিক জবাবদিহিতা বাড়াতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করছে।
সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশে অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিতের পক্ষে তাদের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে।
এ লক্ষ্যে ইইউ কারিগরি সহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি প্রয়োজনে নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল পাঠানোর প্রস্তাবও দিয়েছে। এসব উদ্যোগ গণতান্ত্রিক চর্চা ও টেকসই উন্নয়নের প্রতি ইইউর প্রতিশ্রুতির অংশ। সূত্র: বাসস
ইতালির রোমে অনুষ্ঠেয় বিশ্ব খাদ্য ফোরাম ২০২৫-এ যোগ দিয়েছেন কৃষি ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল। প্রতিনিধিদলে আরও রয়েছেন কৃষি সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান ও অতিরিক্ত সচিব (পিপিসি উইং) ড. মো. মাহমুদুর রহমান।
উপদেষ্টার নেতৃত্বে প্রতিনিধিদল ফোরামে দেশের কৃষি, খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিয়ে পারস্পরিক অভিজ্ঞতা বিনিময় ও সদস্য দেশসমূহের সাথে বিভিন্ন সেশনে অংশগ্রহণ করবে। সফরকালে স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা ইতালির ইন্টেরিয়র মিনিস্টার এর সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করার কথা রয়েছে।
উল্লেখ্য, ইতালির রোমস্থ জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিতব্য এ ফোরাম ১০ অক্টোবর শুরু হয়ে চলবে ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত। সূত্র: বাসস
মন্তব্য