৪ ডিসেম্বর। বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে আলহাজ্ব রহমাতিয়া (রহম আলী) স্মৃতি শিশু সদন হাফেজি ও কওমি মাদ্রাসার পাশে ১১ বছর বয়সী এক শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় গ্রেফতার হন মাদ্রাসার শিক্ষক ও ইমাম হাফিজুর রহমান। ধারণা করা হচ্ছে, বলাৎকারের কারণে মারা গেছে শিশুটি।
এর আগে ১৪ নভেম্বর বলাৎকারের অভিযোগে গ্রেফতার হন কুমিল্লার দেবিদ্বারের জামিয়া ইসলামিয়া বাইতুল নূর মাদ্রাসার কারি মো. শাহজালাল।
গত ৮ নভেম্বর ছাত্রকে বলাৎকারের অভিযোগে গ্রেফতার হন নারায়ণগঞ্জের জামিয়াতুল ইমান মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক মিজানুর রহমান।
মাদ্রাসায় এ রকম যৌন নির্যাতনের অভিযোগ পুরনো। এ নিয়ে সমাজে ফিসফাস থাকলেও প্রকাশ্যে আলোচনা হয়েছে কমই। তবে সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে, সভা-সমাবেশে এ নিয়ে কথা উঠছে। তথ্যচিত্র প্রদর্শন হচ্ছে।
দেশে অপরাধ, নির্যাতন নিয়ে সারা বছর নানা ধরনের জরিপ প্রকাশ হলেও এতদিন মাদ্রাসায় কতসংখ্যক বলাৎকারের খবর গণমাধ্যমে আসে তা জানা যায়নি কেউ লিপিবদ্ধ না করায়। তবে গত এক মাসে প্রকাশিত সংবাদগুলো সংকলন করে ‘মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ’ নামে একটি সংগঠন জানতে পেরেছে, ৩০ দিনে ৪০টি বলাৎকারের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে দুটি ঘটনায় মারা গেছে দুটি শিশু। একটি শিশু লাঞ্ছনা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছে।
মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের জয়েন্ট সেক্রেটারি হামজা রহমান অন্তর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যত ঘটনা ঘটে তার খুব সামান্যই মিডিয়াতে আসে। কারণ এই বলাৎকারের বিষয়টিকে পবিত্র কোরআন, হাদিসের ভয় দেখিয়ে বাচ্চাদেরকে মুখ না খুলতে ভয় দেখানো হয়। আর এই ঘটনাগুলোতে কেবল গ্রেফতার হয়েছে। আপনারা সহজেই বুঝতে পারেন আসলে কী হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ছোটবেলা থেকেই এসব নিয়ে জানতাম, নিজেরা নিজেরা কথা বলতাম। কিন্তু এতদিন প্রকাশ্যে বলা হয়নি। কিন্তু যথেষ্ট হয়েছে। এ নিয়ে আর চুপ থাকার সুযোগ নেই।’
মাদ্রাসায় বলাৎকারের সমস্যা নিয়ে সোচ্চার হওয়ার শুরু মূলত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ইস্যুতে। রাজধানীর ধোলাইপাড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্ নির্মাণের বিরুদ্ধে কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক কয়েকটি রাজনৈতিক দলের অবস্থানের পর পাল্টা কর্মসূচিতে এই বিষয়টি সামনে এনে ব্যাখ্যা চাওয়া হচ্ছে।
তবে আক্রমণের মুখেও কওমি আলেমরা এ নিয়ে কোনো জবাব দিচ্ছেন না। যদিও তারা বলছেন, আলেমদের দুর্নাম করা হচ্ছে। এ নিয়ে সতর্কও করে দিয়েছেন তারা। যদিও কী নিয়ে দুর্নাম করা হচ্ছে, সে ব্যাখ্যা দেয়নি ধর্মভিত্তিক কোনো দল ও সংগঠন।
কেবল ধর্মভিত্তিক দলগুলোর সমালোচক না, গত কয়েক বছর ধরে নানা বক্তব্য-বিবৃতি দিয়ে তাদের কাছাকাছি আসা গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরীও। তিনি বলেছেন, মাদ্রাসায় যৌন নির্যাতনে মৌলভী সাহেবদের সম্মান কমছে। আবার বলেছেন, ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতা করার আগে আলেমদের বলাৎকার সমস্যার সমাধান করা উচিত।
তবে যাদেরকে ঘিরে আক্রমণ সেই কওমি আলেমরা এই সমালোচনার কোনো জবাব দিচ্ছেন না।
গত ৮ ডিসেম্বর চরমোনাই পীরের ডাকা সংবাদ সম্মেলনে এ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে তার ছোট ভাই সৈয়দ ফয়জুল করীম এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, এই অপবাদ তাদের ওপর আসতে পারে না।
তিনি বলেন, “আজকে দেখেন হুমায়ূন আহমেদের ‘ঘেটুপুত্র কমলা’র মাধ্যমে এটা (বলাৎকার) গোটা দুনিয়ায় ছড়িয়ে দেয়ার অপচেষ্টা তারা করছে। কাজেই এই অপবাদ তো তাদের উপরে আসবে। আমাদের উপরে কেন আসবে?’
হেফাজতে ইসলামের আমির জুনাইদ বাবুনগরীকে বারবার বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে বলা হলেও তিনি মুখ খুলছেন না।
কেন কথা বলেন না জানতে চাইলে কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক সংগঠনটির নায়েবে আমির আব্দুর রব ইউসুফী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বলাৎকার নিয়ে আমরা কথা বলি না এটা আসলে যথার্থ নয়। আমরাই এ বিষয়ে আসলে বেশি বলি। বিশেষ করে ধর্ষণ ও বলাৎকার নিয়ে আমরা জোরালো বক্তব্য রেখে আসছি।’
তবে ইউসুফী এও বলেছেন, বলাৎকার নিয়ে সম্প্রতি যেসব কথাবার্তা বলা হচ্ছে, তার পেছনে অন্য উদ্দেশ্য রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের মানসিকভাবে দুর্বল করার জন্য তারা এসব কথাবার্তা বলে। তবে এসব অভিযোগ এনে ভাস্কর্যকে হালাল বা জায়েজ করা যাবে না। আমরা এর বিরুদ্ধে বলেই যাব। এ ছাড়া নির্দিষ্ট কোন অন্যায় অপরাধ সামনে আসলে আমরা তার বিরুদ্ধেও বলব। আমরা অন্যায়-অবিচারকে প্রশ্রয় দেয়ার পক্ষে নই।’
‘তাহলে কি আপনারা ভাস্কর্যের পাশাপাশি বলাৎকার নিয়ে সমানভাবে বলবেন?’
উত্তরে হেফাজতের এ নেতা বলেন, ‘এখন ভাস্কর্য হলো প্রথম ইস্যু। যখন যেটা প্রথম ইস্যু হয়, সেটা নিয়েই বেশি বলতে হয়।’
তিনি বলেন, ‘একটা অন্যায়কে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য আর একটা অন্যায়কে সামনে নিয়ে আসা উচিত নয়।‘
হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকের রাজনৈতিক দল খেলাফত মজলিসের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব জালাল উদ্দিন আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ভাস্কর্যর মধ্যে বলাৎকার ঢুকিয়ে দেওয়াটাকে আমি মনে করি ইসলাম বিদ্বেষের একটা অংশ। বলাৎকারের কথা বলে ওলামায়ে কেরামকে ঘায়েল করার চেষ্টা হচ্ছে।…একটা ইস্যুর মধ্যে আর একটা ইস্যু ঢুকিয়ে দেয়াটা আমি মনে করি চক্রান্ত।’
‘তাহলে কি মাদ্রাসায় এই সমস্যা নেই?’
এমন প্রশ্নে এই কওমি আলেম বলেন, ‘এটা শুধু আমাদের মহলে আছে বিষয়টা এমন না। এটা সব মহলে আছে। আমাদের তো হঠাৎ দুই একটা ধরা পড়ে যায়। কিন্তু এর বাইরে অনেক আছে। আমরা সবসময় এর বিরুদ্ধে বলে আসতেছি।’
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রচার সম্পাদক মাওলানা আব্দুল কাইয়ুম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা বলাৎকারের বিরুদ্ধে অবশ্যই কথা বলছি। বলাৎকার যেখানে হয়েছে সেখানেই আমরা এ নিয়ে কথা বলতেছি। আর ধর্ষণ নিয়ে তো আমরা কথা বলেছি। তবে দেশে কিন্তু বলাৎকারের চাইতে ধর্ষণ বেশি হইছে।‘
তিনি বলেন, ‘বলাৎকারের বিষয়ে আমরা বলেছি, প্রচলিত আইনে এর যে বিচার আছে, যদি প্রমাণিত হয় তবে তাই দিতে হবে।’
তবে এই নেতা এমনও মনে করেন, বলাৎকারের সংখ্যা খুবই কম। তিনি বলেন, ‘বলাৎকার তো ধর্ষণকে ছাড়িয়ে যায়নি। বলাৎকারে ঘটনা সারা দেশে হইছে দুইটা কিংবা তিনটা।’
আরও পড়ুন:আগামী বছরের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে শেষ দিন বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ২ হাজার ৭১২ জন প্রার্থী।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের পরিচালক (জনসংযোগ) শরিফুল আলম শনিবার জানান, নিবন্ধিত ২৯টি রাজনৈতিক দলের ১ হাজার ৯৬৫ জন প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন ৭৪৭ জন।
ইসি প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লড়তে সবচেয়ে বেশি ৩০৪টি মনোনয়নপত্র জমা দেন আওয়ামী লীগের (নৌকা) প্রার্থীরা। লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে লড়তে যাওয়া জাতীয় পার্টিরও ৩০৪ জন জমা দেন মনোনয়নপত্র।
নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম দুটি মনোনয়নপত্র জমা দেয় হারিকেন প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে লড়তে যাওয়া বাংলাদেশ মুসলিম লীগ।
অন্য দলগুলোর মধ্যে জাতীয় পার্টি তথা জেপি (বাইসাইকেল) ২০, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (চাকা) ছয়, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ (গামছা) ৩৪, গণতন্ত্রী পার্টি (কবুতর) ১২, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি তথা ন্যাপ (কুঁড়েঘর) ছয়, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি (হাতুড়ি) ৩৩, বিকল্পধারা বাংলাদেশ (কুলা) ১৪, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল তথা জাসদ (মশাল) ৯১, জাকের পার্টি (গোলাপ ফুল) ২১৮, বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন (ফুলের মালা) ৪৭, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন (বটগাছ) ১৪, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (আম) ১৪২, গণফোরাম (উদীয়মান সূর্য) ৯, গণফ্রন্ট (মাছ) ২৫, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (কাঁঠাল) ১৩, ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশ (চেয়ার) ৩৯, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি (হাতঘড়ি) ১৮, ইসলামী ঐক্যজোট (মিনার) ৪৫, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট (মোমবাতি) ৩৭, বাংলাদেশ মুসলিম লিগ তথা বিএমএল (পাঞ্জা) পাঁচ, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট (ছড়ি) ৭৪, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট তথা বিএনএফ (টেলিভিশন) ৫৫, বাংলাদেশ কংগ্রেস (ডাব) ১১৬, তৃণমূল বিএনপি (সোনালি আঁশ) ১৫১, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (নোঙ্গর) ৪৯ ও বাংলাদেশ সুপ্রীম পার্টি (একতারা) ৮২টি মনোনয়নপত্র জমা দেয়।
গত ১৫ নভেম্বর দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ তারিখ ছিল ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত।
মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর নাগাদ। আপিল নিষ্পত্তি ৬ থেকে ১৫ ডিসেম্বর। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৭ ডিসেম্বর।
১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচার শুরু হবে, যা চলবে ২০২৪ সালের ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত।
আরও পড়ুন:রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শনিবার সকালে ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। রিখটার স্কেলে ৫.৫ মাত্রার এ ভূমিকম্প টেরই পাননি অনেকে।
এ ধরনের কম্পনের পর একটি আলোচনা ঘুরেফিরে আসে। সেটি হলো বড় কোনো ভূমিকম্পের কবলে দেশ পড়তে যাচ্ছে কি না।
ভূমিকম্প নিয়ে গবেষকদের পূর্বাভাসও আলোচনায় আসে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ঢাকায় গত ৫ মের ভূমিকম্পের পর ডাচ ভূতত্ত্ববিদ ফ্র্যাংক হুগারবিটসের একটি পূর্বাভাস নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা শুরু হয়।
নেদারল্যান্ডসভিত্তিক সোলার সিস্টেম জিওমেট্রি সার্ভে (এসএসজিইওএস) নামের সংস্থার ইউটিউব চ্যানেলে ২ মে একটি ভিডিও পোস্ট করেছিলেন এ ভূতত্ত্ববিদ, যেখানে তিনি ভারতের আসাম, বাংলাদেশসহ এশিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে চলতি বছর বড় ধরনের ভূমিকম্পের সম্ভাব্যতা নিয়ে কথা বলেছেন। ৫ মে তার সেই ভিডিওর কমেন্ট সেকশনে গিয়ে অনেকে বাংলাদেশে ভূমিকম্প হয়েছে বলে জানিয়ে আসেন।
এর আগে চলতি বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি তুরস্ক-সিরিয়ায় ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পের সময়ও ভূতত্ত্ববিদ হুগারবিটস আলোচনায় এসেছিলেন। কেউ কেউ বলেছিলেন, তিনি ‘সঠিক’ পূর্বাভাস দিয়েছিলেন।
হুগারবিটসের পোস্ট করা ভিডিও দেখে কারও কারও মধ্যে জিজ্ঞাসা দেখা দিতে পারে যে, ভূমিকম্প আগে থেকে আঁচ করা যায় কি না। এর স্পষ্ট উত্তর দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএসের ভাষ্য, ইউএসজিএস কিংবা অন্য কোনো সংস্থার বিজ্ঞানীরা কখনও বড় ভূমিকম্প নিয়ে পূর্বাভাস দেননি।
ইউএসজিএসের বিজ্ঞানীরা বলেছেন, নির্দিষ্ট কয়েক বছরের মধ্যে কোনো এলাকায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকম্পের সম্ভাব্যতা নিয়ে হিসাব-নিকাশ করতে পারেন তারা।
যুক্তরাষ্ট্রের আরেক নামী প্রতিষ্ঠান ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির (ক্যালটেক) মতে, ঠিক কখন এবং কোথায় ভূমিকম্প হবে, সেটা আগে থেকে ধারণা করা সম্ভব নয়। ভূমিকম্প কতটা ব্যাপক হবে, তা নিয়েও পূর্বাভাস দেয়া যায় না।
এ বিষয়ে বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ মেহেদী হাসান আনসারী নিউজবাংলাকে বলেন, ভূমিকম্পের বিষয়ে আগে থেকে অনুমান করা যায় না।
আরও পড়ুন:আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের ‘মাথাব্যথার কারণ’ হয়ে উঠেছেন দলটির মনোনয়নবঞ্চিতরা। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন এসব নেতা। ব্যতিক্রম কেবল তিন মন্ত্রীর আসনসহ চারটি। বৃহস্পতিবার ছিল মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ দিন।
সিলেট বিভাগের ১৯টি আসনের মধ্যে ১৫টিতেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিতরা। সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনের আসনেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন একজন। তবে তিন মন্ত্রী এমএ মান্নান, ইমরান আহমদ ও শাহাবুদ্দিন আহমদের আসনে দলের কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হননি।
সিলেট বিভাগের চার রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিভাগের মধ্যে কেবল সিলেট-৪, সুনামগঞ্জ-৩, মৌলভীবাজার-১ ও হবিগঞ্জ-৩ আসনে আওয়ামী লীগের কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হননি। এ আসনগুলোতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী যথাক্রমে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ, পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান, পরিবেশ ও বনমন্ত্রী শাহাবুদ্দিন আহমদ এবং হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবু জাহির।
এবার দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত করার পরই নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করার লক্ষ্যে মনোনীত প্রার্থীর পাশাপাশি ডামি প্রার্থী রাখার নির্দেশ দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই নির্দেশনা পেয়ে ক্ষমতাসীন দলটির মনোনয়নবঞ্চিতদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার হিড়িক পড়ে।
দেশের প্রায় প্রতিটি সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিতরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের ঘোষণা দেন। এসব ডামি প্রার্থীই ‘যন্ত্রণার কারণ’ হয়ে উঠেছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থীদের। তবে এ ক্ষেত্রে অনেকটা স্বস্তিতে আছেন মান্নান, ইমরান ও শাহাবুদ্দিন। তাদের আসনে নেই কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী।
সুনামগঞ্জ-৩ (জগন্নাথপুর-শান্তিগঞ্জ) আসনে দলের কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে না ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নানকে। এ আসনে মন্ত্রীসহ সাত প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র জমা দেন। বাকি ছয়জন হলেন তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য মাওলানা শাহীনুর পাশা চৌধুরী, জাতীয় পার্টির দলীয় প্রার্থী যুক্তরাজ্যপ্রবাসী তৌফিক আলী মিনার, গণফ্রন্টের মকবুল হোসেন, জাকের পার্টির নজরুল ইসলাম ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মাহফুজুর রহমান খালেদ।
এই আসনে এমএ মান্নান ছাড়াও চারজন আওয়ামী লীগের পক্ষ তেকে চারজন মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। তারা হলেন- কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির সদস্য আজিজুস সামাদ ডন, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য খায়রুল কবীর রুমেন, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক ও যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ নেতা আশরাফুল ইসলাম। তবে তাদের কেউ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হননি।
এ বিষয়ে জগন্নাথপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রিজু বলেন, ‘জগন্নাথপুরের আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ হয়ে নৌকার পক্ষে কাজ করবে। এখানে কেউ দলের বিরুদ্ধে যাবে না।’
মৌলভীবাজার-১ (জুড়ী-বড়লেখা) আসনেও আওয়ামী লীগের কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হননি। এ আসনে নৌকার প্রার্থী শাহাব উদ্দিন আহমদ। এর আগে টানা দুবারসহ তিনবারের সংসদ সদস্য ছিলেন তিনি।
এ আসনে ছাত্রলীগের সাবেক সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন, বড়লেখা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম সুন্দর, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক সদস্য অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম, কুলাউড়া থানা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমও দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন। তবে তাদের কেউই ডামি প্রার্থী হতে আগ্রহী হননি।
এস এম জাকির হোসাইন বলেন, ‘এই দুই উপজেলার মানুষ নানাভাবে অনুরোধ করেছে বিদ্রোহী প্রার্থী হতে। কিন্তু নৌকার বাইরে গিয়ে নির্বাচন করার মনমানসিকতা নেই। দলীয় প্রার্থীর জয়ের জন্য কাজ করব।’
রফিকুল ইসলাম সুন্দর বলেন, ‘নৌকা পেলে নির্বাচন করার প্রস্তুতি ছিল। নেত্রী বর্তমান সংসদ সদস্য, পরিবেশমন্ত্রীকে নৌকা দিয়েছেন। দলীয় পদধারী বা আওয়ামী লীগের সমর্থক কেউ এ আসনে ডামি প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে নেই।’
এ আসনে শাহাবুদ্দিন ছাড়াও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন জাতীয় পার্টির আহমেদ রিয়াজ উদ্দিন, তৃণমূল বিএনপির আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, ধর্মভিত্তিক সংগঠন আল ইসলাহ নেতা কাজী ময়নুল ইসলাম ও ব্যবসায়ী ফারুক আহমেদ (ভান্ডারি)।
সিলেট-৪ (গোয়াইনঘাট-জৈন্তাপুর-কোম্পানীগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ। এ আসনে নৌকার মনোনয়ন চেয়েছিলেন আরও সাতজন। তবে তারা কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হননি। ইমরানকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন তারা।
এখানে আওয়ামী লীগের অপর মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে ছিলেন গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ফারুক আহমদ, সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি অ্যাডভোকেট মাহফুজুর রহমান, গোয়াইনঘাট উপজেলা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মো. ফজলুল হক, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও গোয়াইনঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি গোলাপ মিয়া, গোয়াইনঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. গোলাম কিবরিয়া হেলাল, জাতীয় শ্রমিক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য ও জাতীয় শ্রমিক লীগ সিলেট মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক নাজমুল আলম রোমেন এবং কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শাহজাহান চৌধুরী।
এ বিষয়ে শ্রমিক লীগ সিলেট মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক নাজমুল আলম রোমেন বলেন, ‘আমরা কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হব না। দলের প্রার্থীর বিজয়ে কাজ করব।’
সিলেট বিভাগের তিন মন্ত্রী ‘ডামির যন্ত্রণা’ থেকে রেহাই পেলেও সিলেট-১ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনকে পড়তে হচ্ছে ডামির চ্যালেঞ্জে। তার আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ।
আরও পড়ুন:সকাল-সন্ধ্যা হিমেল হাওয়া এসে লাগলেও গা গরম রাখার পোশাকের কাটতি বাড়েনি মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে।
সরকারি ছুটির দিন শুক্রবার উপজেলার কয়েকটি বাজারের বিভিন্ন দোকানে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
উপজেলার ভানুগাছ, শমশেরনগর ও পতনঊষার বাজারের দোকানগুলোতে দেখা যায়, শীতের পোশাক সাজিয়ে রেখেছেন কাপড় ব্যবসায়ীরা, তবে বেচাকেনা তেমন হচ্ছে না।
বিক্রি জমজমাট হওয়ার প্রত্যাশায় আছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের ভাষ্য, শীতের শুরুতে গরম কাপড় কেনার প্রবণতা এবার কম। তাই চাহিদা নেই বললেই চলে। ঘুরতে এসে কেউ কেউ কিনছেন ছোটদের শীত কাপড়।
বড় ব্যবসায়ীরা জানান, সাধারণত শীতের কাপড় বিক্রির বাজার জমে ওঠে অক্টোবরের শেষে ও নভেম্বর মাসে, তবে এবার এখনও ব্যবসা জমেনি।
ফুটপাতের খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, শীতের গরম কাপড়ের ব্যবসা মূলত হয় নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে। এ মাসে ভালো বেচাবিক্রির আশা করছেন তারা।
খুচরা বিক্রেতারা আরও জানান, শীত বাড়েনি বলে গরম কাপড়ের বিক্রি বাড়েনি। এ ছাড়া স্বাভাবিক বিক্রি কম হওয়ার পেছনে হরতাল-অবরোধের মতো রাজনৈতিক কর্মসূচির প্রভাবও রয়েছে।
কেন বিক্রি কম জানতে চাইলে কমলগঞ্জের পতনঊষার বাজারের কাপড় ব্যবসায়ী মাইদুল ইসলাম বলেন, ‘শীতের সিজনে প্রতিদিন বিক্রি করতাম ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। সারা দিনে এখন বিক্রি হয় এক থেকে দুই হাজার টাকা। আবার সব দিন এ রকম বিক্রিও হয় না।
‘হরতাল-অবরোধের কারণে বেচাকেনা অনেক কম। দোকান ভাড়া ও কর্মচারীদের বেতন দেওয়া মুশকিল হয়ে পড়েছে।’
ভানুগাছ বাজারের মা মনি বস্ত্রালয়ের প্রতিষ্ঠাতা মো. সোলাইমান বলেন, ‘হরতাল-অবরোধের কারণে বেচাকেনা কম হচ্ছে। দূরদুরান্ত থেকে এই এলাকায় মানুষ ঘুরতে এসে এসব পোশাক কিনে নেন, কিন্তু হরতাল-অবরোধের কারণে মানুষ তেমন আসছেন না। এ কারণে আমাদের বিক্রিও বাড়ছে না।
‘গ্রামগঞ্জের মানুষ কতই আর কেনাকাটা করবে। আমাদের পণ্য বিক্রির বেশির ভাগ ক্রেতা দূরদুরান্তের মানুষরাই।’
তিনি জানান, স্থানীয়ভাবে যেসব ক্রেতা আসছেন, তারা শিশুদের জন্য কিছু কাপড় কিনে চলে যাচ্ছেন। কেউ কেউ আবার দরদাম পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকছেন।
আরও পড়ুন:ভালোবাসার টানে এক হয়ে গেল দুই দেশের কয়েক হাজার মাইলের দূরত্ব। সূদুর ইউরোপ থেকে ৫ বছরের প্রণয়কে বিয়েতে রূপ দিতে বাংলাদেশে ছুটে এসেছেন সাইপ্রাসের এক তরুণী। সাতসমুদ্র পাড়ি দিয়ে অবশেষে বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন সাভারের যুবক শামীম আহমেদের সঙ্গে। এরই মধ্যে শ্বশুড়বাড়ি, আত্মীয়স্বজন আর প্রতিবেশীদের মন জয় করে নিয়েছেন ভিনদেশী এই নারী। পরদেশী বউ পেয়ে দারুণ খুশি শামীমের পরিবারও।
শুক্রবার সাভারের আশুলিয়ার গাজীরচট আয়নাল মার্কেট এলাকায় মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান শামীমের স্ত্রীকে ঘিরে চলছে উৎসব। আত্মীয়স্বজন আর পাড়াপ্রতিবেশীরা ছুটে আসছেন ভিনদেশী বউকে একবার দেখতে। সাইপ্রাসের নাগরিক আন্থি তেলেবান্থুও সবাইকে আপন করে নিয়েছেন।
গত ২৭ নভেম্বর আশুলিয়ায় শামীমের বাড়িতে আসেন আন্থি তেলেবান্থু। ৩০ নভেম্বর ঢাকা জজকোর্টে বাংলাদেশের আইন অনুসারে বিয়ে করেন আন্থি ও শামীম।
আন্থির সঙ্গে পরিচয় ও প্রণয়ের বিষয়ে শামীম আহমেদ বলেন, ‘স্টুন্ডেন্ট ভিসায় ২০১৫ সালে আমি সাইপ্রাস চলে যাই। সেখানকার সিডিএ কলেজে ভর্তি হওয়ার পর লেখাপড়ার পাশাপাশি একটি প্রতিষ্ঠানে পার্টটাইম চাকরি নেই। একই প্রতিষ্ঠানে কাজের সুবাদে আন্থির সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। একসময় আমরা দুইজনকে পছন্দ করা শুরু করি। পরে তা প্রণয়ে রূপ নেয়।
‘সাইপ্রাসের লিমাসোল শহরে আন্থির বাসায় আমার যাওয়া-আসা শুরু হয়। ওর পরিবারের সঙ্গেও আমার সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয়। এরপর ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে আসলে আমি দেশে ফিরে আসি। তারপরও আমাদের দুজনের মধ্যে অনলাইনে যোগাযোগ ছিল। সে আমার পরিবারের সঙ্গেও ভিডিও কলে কথা বলত।’
তিনি বলেন, ‘অনেক আগে থেকেই সে বাংলাদেশে আমার বাড়িতে আসার জন্য উদগ্রীব ছিল। এরপর গত ২৭ নভেম্বর সে সত্যি সত্যিই বাংলাদেশে চলে আসে। পরে উভয় পরিবারের সম্মতিতে আমরা দুজন গতকাল ঢাকা জজকোর্টে বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হই।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার পরিবারের সঙ্গে আন্থি নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে। আট-দশটা বাঙালি বউদের মতোই সবার সঙ্গে মিশতেছে। তার বাঙালি বউ হওয়ার ইচ্ছা পূরণ হয়েছে। পরিবার ও আত্মীয়স্বজন সবাইকে মাতিয়ে রাখছে সে।’
নিউজবাংলাকে নববধূ আন্থি তেলেবান্থু বলেন, ‘আমরা দুজন একসঙ্গে কাজ করেছি। তারপর বন্ধু হয়েছি এবং আমি তাকে ব্যক্তিগতভাবে একজন ভালো চরিত্রের মানুষ হিসেবেই জানি। সে অসহায় মানুষকে সাহায্য করতে পছন্দ করে। এসব থেকেই আস্তে আস্তে আমি তার প্রেমে পড়ে যাই। আমার পরিবার শামীমকে অনেক পছন্দ করে। তারাও আমাদের এই সম্পর্ক মেনে নিয়েছে। আমি বাংলাদেশের মানুষের আতিথেয়তায় মুগ্ধ।’
শামীমের চাচা ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘বিদেশী মেয়ে হলেও ওর সঙ্গে আমাদের পারিবারিক সম্পর্ক হয়ে গেছে। গত তিন দিন ধরে যখনই সে আমার সামনে এসেছে ঘোমটা পরে এসেছে, বাঙ্গালি মেয়েদের মতো। সে আমাদের মতোই শাকসবজি, তরকারি খাচ্ছে। আমার পূত্রবধূকে নিয়ে কোনো সমস্যা পরিবারে নাই।’
আরও পড়ুন:কুমিল্লায় চাষ হচ্ছে সাদা ইঁদুর। ‘কুমিল্লা মাইস ফার্ম’ নামের এ খামারের ইঁদুরগুলো ব্যবহৃত হচ্ছে কুমিল্লাসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার কাজে।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ল্যাব সহকারী আবদুল আউয়াল ও অফিস সহকারী নাসির উদ্দিন এ ইঁদুরের খামারের উদ্যোক্তা।
বিশ্বদ্যিালয়ের পাশে তাদের বাড়ি। চাকরির পাশাপাশি সেখানেই তারা ছোট খামারে তৈরি করে পালন করছেন সুইস অ্যালবিনো জাতের ইঁদুর।
কুবির অফিস সহকারী নাসির উদ্দিন জানান, তার আরেক সহকর্মী ল্যাব সহকারী আবদুল আউয়াল ২০২২ সালের অক্টোবরে বাণিজ্যিকভাবে ইঁদুর পালন শুরু করেন। এক বছরের মধ্যেই আসে সফলতা। বাণিজ্যিকভাবে শুরু করা ইঁদুর পালনে চাকরির পাশাপাশি বাড়তি আয়ের সুযোগ হয়েছে।
কুবির ফার্মেসি বিভাগের ল্যাব সহকারী আবদুল আউয়াল বলেন, ‘আমাদের চাষ করা সুইজারল্যান্ডের সুইস অ্যালবিনো জাতের সাদা ইঁদুরগুলো গবেষণার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। এটি কারিকুলামেরও অংশ।’
তিনি বলেন, ‘কোনো একটি ওষুধ তৈরি করা এবং এর কার্যকারিতা পরীক্ষা করার ক্ষেত্রে ইঁদুর ব্যবহার করতে হয়। আগে দূরদূরান্ত থেকে আনতে হতো সাদা ইঁদুর। এতে ঝুঁকি থাকে, দামও বেশি।
‘এ বিষয়টির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেই আমি ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অফিস সহকারী নাসির উদ্দিন মিলে গড়ে তুলি সুইস অ্যালবিনো প্রজাতির ইঁদুরের ফার্ম।’
কথা হয় কুবির ফার্মেসি বিভাগের সপ্তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ইয়াছিন আরাফাত, সানিয়া রহমান ও ইশরাত জাহান কেয়ার সঙ্গে।
তারা জানান, কুমিল্লায় সাদা ইঁদুরের চাষ শুরু হওয়ায় তাদের অনেক সুবিধা হয়েছে। এখন তাদের অ্যাকাডেমিক কাজে ইঁদুরের জন্য অপেক্ষা করতে হবে না।
কুবি উপাচার্য এএফএম আবদুল মঈন ‘কুমিল্লা মাইস ফার্ম’ উদ্যোক্তাদের প্রশংসা করে বলেন, ‘সাদা ইঁদুরের চাষ অবশ্যই ভালো উদ্যোগ। এখানে উৎপাদিত ইঁদুর গবেষণার কাজে লাগছে এটা অবশ্যই আনন্দের।’
আরও পড়ুন:সিলেটে নির্বাচনি প্রচার শুরুর আগেই আচরণবিধি লঙ্ঘনের হিড়িক পড়েছে। বৃহস্পতিবার মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ দিনে আচরণবিধি ভেঙে শোডাউন করেন প্রার্থীরা।
আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের পাশপাশি জাতীয় পার্টি (জাপা) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ক্ষেত্রেও আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে। বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী নিয়ে মিছিল করে এসে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন তারা।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আচরণ বিধিমালা অনুযায়ী, প্রার্থীরা মনোনয়পত্র জমার সময় কোনো ধরনের মিছিল বা শোডাউন করতে পারবেন না।
সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস বৃহস্পতিবার সকাল থেকে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল আহসানের কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিতে ভিড় করেন প্রার্থীরা। সকালেই মনোনয়নপত্র জমা দিতে আসেন সিলেট-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী এবং সিলেট-৫ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ।
বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিতে আসেন শফিকুর রহমান চৌধুরী। ওই সময় শফিকুর রহমানের সমর্থকদের নৌকা মার্কার সমর্থনে জেলা প্রশাসক কার্যালয় প্রাঙ্গণে স্লোগান দিতে দেখা যায়। শফিকুর রহমান ও মাসুক উদ্দিনের সঙ্গে আওয়ামী লীগের অনন্ত ২০ নেতা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে ঢুকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন।
দুপুরে মিছিল নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিতে আসেন সিলেট-৩ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বর্তমান এমপি হাবিবুর রহমান হাবিব। শতাধিক নেতা-কর্মী নিয়ে রিটার্নি কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে শোডাউন করেন তিনি।
শোডাউন দেয়ার কথা অস্বীকার করে হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা আগেই এখানে জড়ো হয়েছিলেন। আমি মাত্র চার-পাঁচজন নেতা নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছি। বাকি যারা এসেছেন, তাদের আমি নিয়ে আসিনি।’
শোডাউন করে মনোনয়নপত্র জমা দেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদও। তিনি সিলেট-৪ আসন থেকে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন। দুপুরে রিটার্নি কর্মকর্তার কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র জমাদানকালে তার সঙ্গে সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের পদধারী অর্ধশতাধিক নেতা উপস্থিত ছিলেন।
সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ও সিলেট-৬ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী নুরুল ইসলাম নাহিদ বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন।
সিলেট-২ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী দলটির ভাইস চেয়ারম্যান ইয়াহইয়া চৌধুরী এহিয়া মনোনয়পত্র জমা দেন দুপুরে। তিনিও শতাধিক নেতা-কর্মীসহ মিছিল নিয়ে এসে মনোনয়নপত্র জমা দেন।
এ ব্যাপারে ইয়াহইয়া চৌধুরী বলেন, ‘আমি কোনো শোডাউন নিয়ে আসিনি। আমাকে দেখে কর্মীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে জড়ো হয়ে কিছু স্লোগান দিয়েছেন, তবে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে কয়েকজন নেতা নিয়েই আমি প্রবেশ করি।’
সিলেট-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ। দুপুরে তিনি শোডাউন করে মনোনয়নপত্র জমা দিতে আসেন।
জানতে চাইলে শোডাউন করার কথা অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘আমি নির্বাচনি আচরণবিধির প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আচরণবিধি মেনেই মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছি।’
বিকেলে মনোনয়নপত্র জমা দেন সিলেট-৬ আসনে তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী ও দলটির চেয়ারপারসন শমসের মবিন চৌধুরী। তিনি চার থেকে পাঁচজন নেতা-কর্মী নিয়েই মনোনয়নপত্র জমা দেন।
এ বিষয়ে সিলেটের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল আহসান বলেন, ‘আমি সকাল থেকেই মনোনয়নপত্র জমা দিতে ব্যস্ত। এখানে কেউ শোডাউন করেননি, তবে বাইরে কেউ আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন কি না, তা খেয়াল করিনি। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য