পদ্মা সেতু প্রকল্পের শুরু যার হাত ধরে তিনি সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন। শুরুতেই বিশ্বব্যাংকের দুর্নীতির অভিযোগের মুখে পড়ে পদ্মা সেতু প্রকল্প। আর সেই সঙ্গে অভিযোগের মুখে মন্ত্রিসভা থেকে সরে যান সৈয়দ আবুল হোসেন। পরে অবশ্য কানাডার আদালতে দুর্নীতির সব অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণ হয়। পদ্মা সেতু প্রকল্পে নিজের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ও সেতু নিয়ে অনুভূতি নিউজবাংলাকে প্রকাশ করেছেন সাবেক এ যোগাযোগমন্ত্রী।
পদ্মা সেতুর শেষ স্প্যান বসানোর সময় থাকতে পারলে কি ভালো লাগত?
পদ্মা সেতুর শেষ স্প্যান বসানো একটি সুসংবাদ। বাংলাদেশের মানুষের জন্য একটি আনন্দের, খুশির খবর। শেষ স্প্যান বসানোর ফলে ৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু দৃশ্যমান হবে। এটা দেশের জনগণের স্বপ্নের পদ্মা সেতুর বাস্তবায়নের অগ্রযাত্রার নিয়ামক। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সফলতা ও নেতৃত্বের ফসল। এই সেতুর নির্মাণ প্রক্রিয়ায় আমি সম্পৃক্ত ছিলাম এবং দ্রুত বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করেছি। এটা আমার গর্ব।
আপনার মনের কোণে কি কোনো কষ্ট আছে? সেতুটি আপনার হাত দিয়েই শেষ হতে পারত।
না, আমার মনে কোনো কষ্ট নেই। কারণ আমি পদ্মা সেতু নির্মাণ শুরু করেছিলাম। দুই বছরে ভূমি অধিগ্রহণ, ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন, পরামর্শক নিয়োগে দরপত্র আহ্বান, মূল সেতুর দরপত্র আহ্বান এবং সেতুর অর্থায়নে বিশ্বব্যাংক, জাপানের জাইকা, ইসলামী উন্নয়ন সংস্থা এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের সাথে ঋণচুক্তি স্বাক্ষর করি। ক্ষতিগ্রস্থদের পুনর্বাসনকাজ শেষ পর্যায়ে নিয়ে আসি। প্রাকযোগ্য দরদাতা নির্বাচন প্রক্রিয়াও শেষ করি। যেখানে বঙ্গবন্ধু সেতুর প্রস্তুতি কাজ করতে ১০ বছর লেগেছে, সে ক্ষেত্রে আমি পদ্মা সেতুর প্রস্তুতি কাজ দুই বছরে শেষ করি। কাজেই এটা আমার সাফল্য। পদ্মা সেতু নির্মাণে আমার অবদান কি কোন অংশে কম। কেউ কি বা ইতিহাস কি আমার অবদান অস্বীকার করতে পারবে? যারা পদ্মা সেতু নিয়ে ষড়যন্ত্র করেছে, আমার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করেছে, তাদের অভিযোগ যে অসত্য তা কানাডার আদালত ও দুদকের তদন্তে মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। যেকোনো কাজের সফলতা রিলে রেসের মতো। পদ্মা সেতুর কাজ আমি শুরু করেছি, আমি এগিয়ে নিয়েছি। অন্য হাতে শেষ হবে- এটাই স্বাভাবিক। আমি কষ্ট নয়, আমি আনন্দিত। আমি গর্বিত।
একটি বায়বীয় অভিযোগে মন্ত্রিত্ব হারাতে হয়েছে। নির্বাচনেও মনোনয়ন পাননি। এটা কি অবিচার হিসেবে দেখেন?
আমি মন্ত্রী না থাকা বা এমপি নির্বাচনে মনোনয়ন না নেয়া অথবা নির্বাচন না করা অবিচার হিসেবে দেখি না। আমি মন্ত্রিত্ব হারাইনি। দেশের স্বার্থ বিবেচনায় আমি মন্ত্রিত্ব ছেড়ে এসেছি, পদত্যাগ করেছি। আমি পরপর চারবার বিপুল ভোটে জাতীয় সংসদের সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছি। এতে আমার প্রতি কোনো অবিচার নয়, আমার মর্যাদা বেড়েছে। বিশ্বব্যাংকের কাছে আমার মর্যাদা, আমার সততা ও সুনাম প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সরকারের কাছে আমার গ্রহণযোগ্যতা ও সম্মান বেড়েছে। জনগণের মধ্যে, এলাকার জনগণের মধ্যে আমার সম্মান ও গ্রহণযোগ্যতা বহু গুণ বেড়েছে। পদ্মা সেতুতে আমি যে অনিয়ম করিনি, তা প্রমাণিত হওয়ায় সর্বমহলে আমার সুনাম বৃদ্ধি পেয়েছে।
অর্থায়ন নিয়ে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে জটিলতার শুরুটা কীভাবে হয়েছিল?
পদ্মা সেতুতে সব ডোনার এজেন্সির কো-অর্ডিনেটরের ভূমিকায় ছিল বিশ্বব্যাংক। তাই বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুর প্রস্তুতি কাজের প্রত্যেক পর্যায় অবলোকন ও অনুমোদন করে। পরামর্শক ও ঠিকাদার নিয়োগের প্রতিটি পর্যায় তাদের অনুমোদনে অগ্রসর হয়। অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীর নেতৃত্বে কারিগরি কমিটি ঠিকাদার নিয়োগ ও কনসালট্যান্ট নিয়োগের কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছিল। কিন্তু ঠিকাদার নিয়োগের একপর্যায়ে বিশ্বব্যাংক, কারিগরি কমিটিকে একটি কোয়ালিফাইড ঠিকাদারকে, বিশ্বব্যাংকের কালো তালিকাভুক্ত থাকার কারণে বাদ দিতে বলে এবং একটি আনকোয়ালিফাইড ঠিকাদারকে কোয়ালিফাইড করতে বলে। কারিগরি কমিটি কোয়ালিফাইড দরদাতাকে বিশ্বব্যাংকের কালো তালিকাভুক্তির কারণে বাদ দেয়। কিন্তু আনকোয়ালিফাইড দরদাতাকে অভিজ্ঞতার জাল সার্টিফিকের দেয়ায় কোয়ালিফাইড করতে অস্বীকৃতি জানায়। কিন্তু বিশ্বব্যাংক আনকোয়ালিফাইড দরদাতা প্রতিষ্ঠানকে কোয়ালিফাইড করতে তার অনুকুলে বারবার কোয়ারি করে। আনকোয়ালিফাইড দরদাতাকে কোয়ালিফাইড করতে কারিগরি কমিটিকে নমনীয় করতে বিশ্বব্যাংক ব্যর্থ হয়। এরপরই তারা পদ্মা সেতুর কার্যক্রমে বাধা দিতে থাকে; নানা কর্নার দিয়ে মিথ্যা অভিযোগ উত্থাপন করে। উদ্দেশ্য পদ্মা সেতুর বাস্তবায়ন বিলম্বিত করা। তারা সোজা পথে তাদের উদ্দেশ্য সফল করতে না পেরে ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নেয়।
আপনাদের সঙ্গে যখন বিশ্বব্যাংকের বৈঠক হতো, তখন তাদের কর্মকর্তারা কী বলতেন? আপনাকে কেন তারা টার্গেট করেছে?
বিশ্বব্যাংক যখন তাদের সমর্থিত অযোগ্য ঠিকাদারকে নিয়োগ দিতে ব্যর্থ হয়, তখনই তারা ষড়যন্ত্র শুরু করে। তারা তাদের এই অবৈধ কার্যক্রমকে আড়াল করার জন্য আমার বিরুদ্ধে সমর্থিত ঠিকাদারের স্থানীয় এজেন্ট দিয়ে ভুয়া বেনামি অভিযোগপত্র দেয়া শুরু করে এবং এসব ভুয়া সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশে প্রভাব বিস্তার করে। অনেক নামীদামি পত্রিকাও বিশ্বব্যাংকের এ ষড়যন্ত্র বুঝে হোক, আর না বুঝে হোক, তাতে হাত মিলায়। এমন একটা পরিবেশ সৃষ্টি করে যেন পদ্মা সেতু নির্মাণ কার্যক্রম বিলম্বিত হয়। এ সময় বিশ্বব্যাংক তাদের ষড়যন্ত্রকে কাজে লাগানোর জন্য পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত জনৈক বিহারিকে পদ্মা সেতু নির্মাণের কো-অর্ডিনেটর নিয়োগ করে। ফলে আমার বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, পদ্মা সেতু দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের কবলে পড়েছে। তাই একপর্যায়ে যখন ঠিকাদার নিয়োগে কোনো ত্রুটি বা অনিয়ম প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়ে বিশ্বব্যাংক আমাকে টার্গেট করে এবং আমি সরে গেলেই বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন করবে, সেতুর কাজ চালিয়ে যাবে, এমন কথা বলতে থাকে। অযোগ্য ঠিকাদার নিয়োগে ব্যর্থ হয়ে বিশ্বব্যাংক আমাকে টার্গেট করে যাতে পদ্মা সেতু নির্মাণ বিলম্বিত হয়। এ সময় তৎকালীন ঢাকাস্থ বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধি মিস গোল্ড স্টেইন আমাকে এক ডিনারে বলেছিলেন, ‘মিস্টার হোসেন, ডোন্ট গো ফাস্ট। ডোন্ট কমপ্লিট দ্য ব্রিজ ডিউরিং দ্য টেনর অফ দিজ গভর্নমেন্ট।’ এ বিষয়টি আমি প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেছিলাম। তাদের ষড়যন্ত্রের কারণে পদ্মা সেতু নির্মাণের স্বার্থে আমি মন্ত্রিসভা থেকে একপর্যায়ে পদত্যাগ করি। এরপরও বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন কার্যক্রম শুরু করেনি। এটা ছিল দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র।
দুর্নীতিচেষ্টার এই অভিযোগ তোলার পেছনে আসলে কী কারণ থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন?
বিশ্বব্যাংক প্রথমে অভিযোগ করে পদ্মা সেতুতে দুর্নীতি হয়েছে। পরে বলে দুর্নীতির চেষ্টা হয়েছে। এরপর বলে দুর্নীতির আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। অথচ তখন পর্যন্ত কোনো অর্থ বরাদ্দ হয়নি, অর্থছাড় করেনি। তাদের অর্থায়নে কোনো ঠিকাদার নিয়োগ হয়নি। তাহলে দুর্নীতির চেষ্টার অভিযোগ আসে কীভাবে? দুর্নীতির অভিযোগের আসল কারণ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র। আমি পদ্মা সেতুর প্রস্তুতি কাজ এমনভাবে দ্রুত এগিয়ে নিয়েছিলাম যে, ২০১৩ সালের ডিসেম্বরেই পদ্মা সেতুর কাজ শেষ হবে। পদ্মা সেতুর কাজ এ সময়ে দ্রুত শেষ হবে এটা রাজনৈতিকভাবে দেশের কতিপয় স্বার্থান্বেষী ব্যক্তি যেমন চাননি, তেমনি পছন্দের ঠিকাদারকে নির্বাচিত করতে ব্যর্থ হয়ে বিশ্বব্যাংক ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নেয়। সেতুর কাজকে ধীরগতি করার জন্য বিশ্বব্যাংক ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নেয়।
দুদক যখন বারবার বলছিল তারা সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পায়নি। তখন বলা হচ্ছিল তারা সরকারকে বাঁচাতে চাইছে। কানাডার আদালতের মামলায় তো দুর্নীতির অভিযোগকে গালগপ্প বলা হলো। এরপর বিশ্বব্যাংক সরকারকে কী বলেছে?
স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের সরকার এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা ও জবাবদিহিতাকে দাতা সংস্থা সবসময় খাটো করে দেখে। তাই দুদক যখন বিশ্বব্যাংকের অভিযোগের ভিত্তি ও সত্যতা খুঁজে পায়নি, তখন তা বিশ্বব্যাংক জানিয়ে দিলে তাদের চিরায়ত বিশ্বাসে বলীয়ান হয়ে তারা এ তদন্তকে সরকারকে বাঁচানোর ক্ষেত্র হিসেবে দেখে। কিন্তু কানাডার আদালতের রায় তাদেরকে বোকা করে দেয়। এরপর তারা নিশ্চুপ হয়ে যায়। পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বন্ধ করা ছিল বিশ্বব্যাংকের একটি ভুল সিদ্ধান্ত। এই ভুল সিদ্ধান্তের কারণে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুর মতো একটি বড় প্রকল্পে অর্থায়নের সুযোগ হারাল। পরে শুনেছি বিশ্বব্যাংকের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রবার্ট জোয়েলিক প্রভাবিত হয়ে বিশ্বব্যাংকের বোর্ড সভায় আলোচনা না করে এবং অনুমোদন না নিয়েই নিজ উদ্যোগে পদ্মা সেতুর অর্থায়ন স্থগিত করেছেন। বিশ্বব্যাংকের অধিকাংশ কর্মকর্তাই অর্থায়ন স্থগিতের বিষয় সমর্থন করেননি। বিশ্বব্যাংকের তৎকালীন প্রেসিডেন্টের সাথে চায়নায় বোয়া ফোরামে এক অনুষ্ঠানে আমার সাক্ষাৎ হয়, পরিচয় হয়। তখন তিনি পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বাতিল করার বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন। রবার্ট জোয়েলিকের মতো বিশ্বব্যাংকের হাতে গোনা কতিপয় কর্মকর্তার ষড়যন্ত্রের কারণে পদ্মা সেতু অর্থায়ন না করার দায় বিশ্বব্যাংকের নিতে হলো। আমি মনে করি, বিশ্বব্যাংক সৃষ্টির পর থেকে আরও ১০০ বছরেও পদ্মা সেতুর মতো মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে আর বিশ্বব্যাংক সুযোগ পাবে না। উল্লেখ্য, বিশ্বব্যাংকের সেই রবার্ট জোয়েলিক এখন কোথায়? মিস গোল্ড স্টেইন এখন কোথায়? সেই লুইস ওকাম্পো কোথায়? তাদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। এ খবর দেশ-বিদেশের পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। অথচ তারা বাংলাদেশে এসে সততার নাটক করেছে। এখন বিশ্বব্যাংকের কর্মকর্তাদের সাথে দেখা হলে পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন করতে না পারায় দুঃখ প্রকাশ করেন, লজ্জিত হন। আমাকে সমীহ করেন। আমি সম্মানিত হই।
আপনি সম্ভবত একটি বা দুটি গণমাধ্যমকে আইনি নোটিশ দিয়ে আপনার বিরুদ্ধে নানা কথা লেখার জন্য ক্ষমা চাইতে বলেছিলেন। তারা কি কোনো জবাব দিয়েছিল?
আমি পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে নানা অসত্য কথা প্রকাশের জন্য আমি কোনো পত্রিকাকে কোনো আইনি নোটিশ প্রদান করিনি। তবে অসত্য প্রতিবেদন প্রকাশের জন্য প্রতিবাদ জানিয়ে চিঠি লিখেছি। আমার লেখা এ চিঠিগুলো ‘আমার খোলা চিঠি’ বইতে আপনারা শিগগিরই দেখতে পারবেন। এ চিঠির তারা কোনো জবাব দেয়নি।
বিশ্বব্যাংকের এই অভিযোগ কি শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের জন্য শাপে বর হলো? এত বড় প্রকল্প যদি নিজ অর্থে করা যায়, তাহলে আরও ছোট প্রকল্প তো অবলীলায় করা যাবে।
আমি বিষয়টা এভাবে দেখি না। বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুতে যে অভিযোগ এনেছিল, তা ছিল বায়বীয়। এ বায়বীয় অভিযোগ উত্থাপন করে কোনো প্রকল্পের ঋণদান স্থগিত করা যায় না। বাংলাদেশের সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের পদ্মা সেতুর অর্থায়ন ঋণচুক্তি হয়েছে পদ্মা নদীতে। সুবিশাল জাহাজে। বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন স্থগিত করে পদ্মা নদীতে ডুবে গেছে। আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করে আমাদের সক্ষমতা দেখিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের উন্নয়নের নেত্রী হিসেবে অভিষিক্ত হয়েছেন। বিশ্বব্যাংক নিজেদের ভুল সিদ্ধান্তে পদ্মা সেতুর মতো একটি প্রকল্পে অর্থায়নের সুযোগ হারাল। বিশ্বব্যাংক কোনো দিন এ ধরনের একটি সামাজিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির নিয়ামক প্রকল্পে অবদান রাখতে পারবে বলে মনে হয় না। হ্যাঁ একটি সুযোগ তাদের আছে। যদি তার কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের কঙ্গো নদীতে সেতু নির্মাণে অর্থায়ন করতে পারে। কঙ্গো নদীর প্যাটার্নও পদ্মা নদীর মতো।
অর্থায়নের আলোচনায় দাতা সংস্থার সঙ্গে যে অবস্থান এতদিন ছিল, পদ্মা সেতু কি তা পুরোটাই পাল্টে দিল?
হ্যাঁ, অনেকটা পাল্টিয়ে দিয়েছে। আমাদের সততা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা সম্পর্কে তাদের নেতিবাচক ধারণার পরিবর্তন হয়েছে। পদ্মা সেতুতে বায়বীয় অভিযোগ এনে তারা ভেবেছিল, আমরা তাদের শর্ত বা ঠিকাদার নিয়োগে তাদের পছন্দের অযোগ্য ঠিকাদারকে নির্বাচন করতে এগিয়ে যাব। তাদের ডিক্টেশন আমরা শুনব। কিন্তু বাস্তবতা তাদের সঠিক পথে টেনে এনেছে বলে প্রতীয়মান হয়। এখন নানা প্রকল্পে অর্থায়ন করার জন্য বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের পিছনে ঘুরছে। বাংলাদেশের সাথে নমনীয়ভাবে, সতর্কভাবে কথা বলছে। পদ্মা সেতুর কার্যক্রমের জন্য লজ্জিত হচ্ছে।
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার পদ্মা নদীতে জেলের জালে ধরা পড়েছে বিলুপ্ত সাড়ে ২২ কেজি ওজনের একটি ঢাই মাছ। বৃহস্পতিবার সকালে দৌলতদিয়া মৎস্য আড়তে উন্মুক্ত নিলামে উঠলে মাছটি দৌলতদিয়া ৬ নম্বর ফেরিঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সম্রাট শাহজাহান কিনে নেন। এসময় মাছটি দেখতে উৎসুক জনতা ভিড় করে।
তিনি জানান, প্রতিদিনের মতো জেলে জীবন হালদার মধ্যরাতে তার ইঞ্জিন চালিত ট্রলার ও তার সহযোগীদের নিয়ে পদ্মা নদীর উজানে চর কর্ণেশন এলাকায় মাছ ধরতে যায়। ভোররাতে জাল তুলতেই দেখতে পায় বড় একটি ঢাই মাছ ধরা পড়েছে। পরে ২২ কেজি ৬০০ গ্রাম ওজনের ঢাই মাছটি
সকালে দৌলতদিয়া মৎস্য আড়তে আনলে উন্মুক্ত নিলাম উঠলে সম্রাট শাহাজান প্রতি কেজি ৪৬০০'শ টাকা কেজি দরে কিনে নেন নিয়ে ফেরিঘাটে তার আড়তঘরে নিয়ে আসেন।
তিনি আরও বলেন, মাছটি সর্বমোট আমি ১ লক্ষ ৩ হাজার ৯৬০ টাকায় কিনে নেই। মাছটি বিক্রয়ের জন্য আমি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ক্রেতাদের সাথে যোগাযোগ করছি। আরও বলেন, আমার জীবনে এতো বড় ঢাই মাছ কখনো দেখিনি, আজ মাছটি কিনতে পেরে আমার সবচেয়ে ভালো লাগছে।
দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের স্থানীয়া মৎস্য ব্যবসায়ীরা জানান, পদ্মার এ ধরনের বড় মাছ নিলামে উঠলে ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের ভিড় লেগে যায়। দাম যতোই বেশি হোক, মাছটি কেনার চেস্টা করে সবাই। তাছাড়া ঢাই মাছ অনেক সুস্বাদু।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. নাজমুল হুদা বলেন, ঢাই মাছ এখন খুবই কম দেখা যায়, তাছাড়া এটি বিলুপ্তির পথে। মাছগুলো খেতেও অনেক সুস্বাদু। পদ্মার এ ধরনের মাছ আকারে বড় হয়ে থাকে। এই মাছের দামও তুলনামূলক বেশি। এ ধরনের মাছ কিনতে বড় বড় ব্যবসায়ী, প্রবাসীদের চাহিদা থাকে।
পুলিশের একটি স্বাধীন তদন্ত সার্ভিস গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আজ বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সভায় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস সভাপতিত্ব করেন।
পরে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘উপদেষ্টা পরিষদ সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুলিশের একটি স্বাধীন তদন্ত সার্ভিস গঠন করা হবে, যাতে কোনো রাজনৈতিক বা অন্য কোনো প্রভাব ছাড়াই তদন্ত সম্পন্ন করা যায়।’ এর পাশাপাশি পুলিশের ভেতরে অভ্যন্তরীণ অভিযোগ যাচাইয়ের জন্য একটি কমিশন গঠনের বিষয়েও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও জানান, ‘এই দুই সিদ্ধান্ত দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য আইন মন্ত্রণালয় কাজ করবে। এ কাজে উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, আদিলুর রহমান খান এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বখশ চৌধুরী যুক্ত থাকবেন।’
সভায় স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করার বিষয়েও গুরুত্ব দেওয়া হয়। প্রেস সচিব বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা বারবার জোর দিয়েছেন যে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও ক্ষমতায়িত করতে হবে। ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন যেন নিজস্ব তহবিল সংগ্রহ ও স্বচ্ছভাবে পরিচালনা করতে পারে সে বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
স্বাস্থ্য খাত নিয়েও সভায় আলোচনা হয়। শফিকুল আলম জানান, ‘কিছু মেডিকেল কলেজে যোগ্য শিক্ষকের সংকট রয়েছে। তাই অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের পরামর্শক বা অন্যভাবে সম্পৃক্ত করে শিক্ষা কার্যক্রমের মান উন্নত করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
নেপালে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের বিষয়েও সভায় আলোকপাত করা হয়। প্রেস সচিব বলেন, ‘নেপালে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা ভালো আছেন, দূতাবাস তাদের দেখভাল করছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর বিশেষ ফ্লাইটে জাতীয় ফুটবল দলকে দেশে আনার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।’
এ বৈঠক প্রসঙ্গে শফিকুল আলম আরও বলেন, ‘আজকের বৈঠকের প্রতিটি সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের অর্থনীতি, শাসনব্যবস্থা ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমাদের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করবে।’
ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।
দুয়ারে কড়া নাড়ছে দেবী দুর্গার আগমনী বার্তা। কিছুদিন পরেই বাঁজবে দুর্গাপূজার সুর। সারাদেশের মত রাউজানেও চলছে পূজার প্রস্তুতি। শুরু হয়েছে উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায়ে সভা-সমাবেশ। প্রতিমা তৈরির কাজও শেষের দিকে। প্রতীমাকে রংতুলিতে সাঁজাতে ব্যস্ত সময় পার করছে প্রতিমা শিল্পীরা। এ ব্যস্ততা শুধু প্রতিমা তৈরির নয়; অমল-সুজন-সুশান্তদের এ ব্যস্ততা করোনার ক্ষত সারানোরও। সনাতন ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজাকে ঘিরে থাকে নানা আয়োজন। সরজমিনে দেখা যায়, উপজেলার বিভিন্নস্থানে প্রতিমা তৈরির কারিগরদের দম ফেলবার ফুসরত নেই। প্রতিমালয়গুলো ঘুরে দেখা গেছে মৃৎশিল্পীদের নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় নবরুপ পাচ্ছেন দেবী দুর্গা। একইসঙ্গে চলছে লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক ও গণেশের প্রতিমার ফিনিশিং। নানা রঙে দৃষ্টিনন্দন সাজে সাজিয়ে তোলা হয়েছে প্রতিমাগুলোকে। উৎসুক অনেক দর্শনার্থী ভিড় করছেন এসব প্রতিমার তৈরির কারখানায়। মৃৎশিল্পীরা জানান, প্রতিমার তৈরির কাজ ৯৫ ভাগ প্রায় শেষ। দিন-রাত কাজ চলছে। বাকি পাঁচ ভাগ কাজ তিন-চারদিনের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে। এরপর অর্ডার অনুযায়ী বুঝিয়ে দেওয়া হবে প্রতিমা। রাউজান উপজেলায় প্রতিবছরের ন্যায় ২৩৩ টি মন্ডপে অনুষ্ঠিত হবে শারদীয়া দুর্গাপূজা। রাউজানের উত্তর ও দক্ষিণ অংশের ২৩৩ টি মন্ডপের স্থানগুলো পরিদর্শন করেছে পূজা উদযাপন কমিটির নেতাকর্মিরা। উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অরুণ কান্তি ও সাধারণ সম্পাদক সুমন দাশ গুপ্ত বলেন, সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্যে পূজা মন্ডপে স্বেচ্ছাসেবক টিম থাকবে। তদারকি করা হবে সকল কার্যক্রম। আমরা প্রশাসনের সাথে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে পূজার কর্মকান্ড পরিচালনা করবো। ইতোমধ্যে পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসনের সাথে আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, রাউজানের ২৩৩টি মন্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। পৌর এলাকায় থাকবে মন্ডপ। সড়কে যাতায়াতের সুবিধার্থে ট্রাফিক পুলিশ থাকবে। পূ
রাউজান থানার ওসি মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, পূজারীরা যাতে সুশৃঙ্খলভাবে পূজা দিতে পারে সেজন্যে পুলিশ তদারকিতে থাকবে। আমরা পূজা কমিটির সাথে বৈঠক করেছি। তাদের জানিয়েছে, কোন অবস্থাতে বিশৃঙ্খলা মেনে নেয়া হবে না। কোন মাদকাসক্ত পূজা মন্ডপে থাকতে পারবে না।
৫ হাজার ডিডব্লিউটির বেশি ধারণক্ষমতা সম্পন্ন সমুদ্রগামী জাহাজ আমদানিতে আরোপিত সাড়ে ৭ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (মূসক) অব্যাহতির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
আজ বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের সভায় এ প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। সভায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস সভাপতিত্ব করেন।
পরে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, ৫ হাজার ডিডব্লিউটির বেশি ধারণক্ষমতা সম্পন্ন সমুদ্রগামী জাহাজ আমদানিতে আমদানি পর্যায়ে আরোপিত সাড়ে ৭ শতাংশ মূসক অব্যাহতির সিদ্ধান্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, উপদেষ্টা পরিষদ মনে করছে, এ অব্যাহতির ফলে সরকারি-বেসরকারি উভয় খাতেই জাহাজ সংগ্রহ সহজ হবে, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন ও কর্মসংস্থানে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। এটা শুধু ব্যবসার জন্য নয়, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বাংলাদেশের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
সভায় ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি বাংলাদেশের অবিচল সমর্থনের প্রসঙ্গও গুরুত্ব পায়।
এ বিষয়ে প্রেস সচিব বলেন, আমরা ফিলিস্তিনি প্রশ্নে সবসময়ই স্পষ্ট অবস্থান নিয়েছি। নিউইয়র্কে জাতিসংঘ আয়োজিত ‘হাই লেভেল ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন দ্য পিসফুল সেটেলমেন্ট অব দ্য কোশ্চেন অব প্যালেস্টাইন’ সম্মেলনে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরবেন। এ ছাড়া আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর দোহায় ওআইসির জরুরি সম্মেলনে অংশ নেবেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।
সংস্কার কমিশনের অগ্রগতির বিষয়েও বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এ প্রসঙ্গে প্রেস সচিব জানান, এ পর্যন্ত ৫১টি সুপারিশ বাস্তবায়িত হয়েছে, ৩৭টি সুপারিশ আংশিক বাস্তবায়নের পথে এবং বাকি সুপারিশগুলোও বাস্তবায়নাধীন। কিছু সুপারিশ রাজনৈতিক প্রকৃতির, যা নির্বাচিত সরকারের সময় বাস্তবায়ন করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, অনেকে ভুলভাবে মনে করছেন যে সংস্কার হচ্ছে না। আসলে প্রতিটি মন্ত্রণালয় নিয়মিতভাবে বড় বড় সংস্কার করছে। ব্যাংকিং, এনার্জি, রাজস্ব, শ্রম—প্রায় সব খাতেই সংস্কার হয়েছে এবং এগুলো অব্যাহত আছে।
সভায় শ্রম খাতের অগ্রগতি নিয়েও আলোচনা হয়। প্রেস সচিব বলেন, শ্রম কমিশনের ৮২টি সুপারিশের অনেকগুলো ইতোমধ্যেই বাস্তবায়িত হয়েছে। শ্রম আইন সংশোধন হলে বাকি সুপারিশগুলোর বেশিরভাগই কার্যকর হয়ে যাবে। আমাদের শ্রম মন্ত্রণালয় আইএলও’র সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করছে। গত বছর যে ১৮ দফা ত্রিপক্ষীয় চুক্তি হয়েছে, সেটা বড় অর্জন। ওই অনুযায়ী শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধির সিদ্ধান্তও কার্যকর হয়েছে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় পদ্মা নদীতে বেশ কয়েক স্থানে অতি সম্প্রতিকালে তীব্র ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে।গত কয়েক দিনের ভাঙ্গনে উপজেলার জুনিয়াদহ ইউনিয়নের ফয়েজুল্লাপুর, হাটখোলাপাড়া এবং বাহাদুরপুর ইউনিয়নের আড়কান্দি ও মাধবপুর এলাকার বিস্তীর্ণ ফসলি জমিসহ হিন্দুদের ব্যবহৃত শ্মশানঘাটও নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।এতে ৭০--৮০ জনের পান চাষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে এবং তাদের ৩০০০ পান বরজের সারি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার জুনিয়াদহ ইউনিয়নের ফয়জুল্লাহপুর, হাটখোলাপাড়া ও বাহাদুরপুর ইউনিয়নের আড়কান্দি ও মাধবপুরে গত কয়েকদিন ধরে পদ্মা নদীর পাদদেশে কয়েক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ব্যাপক ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। জুনিয়াদহ ইউপি'র ভাঙ্গন কবলিত এলাকা থেকে পদ্মা নদী রক্ষা বাঁধের রায়টা-মহিষকুন্ডি বেরিবাঁধের দূরত্ব ৫০ মিটারেরও কিছুটা কম। উক্ত এলাকার বসতবাড়িসহ সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনা নিয়ে ভাঙ্গন আতঙ্কে দিন কাটচ্ছে।
গত কয়েক দিনের ভাঙ্গনে ৭০-৮০ জন পান চাষির প্রায় ৩০০০ পিলি পান বরজ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। তাছাড়া এ অঞ্চলে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের সৎকারে ব্যবহৃত একমাত্র শ্মশান ঘাটটিও নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
মবির পন্ডিত, রেজাউল, জামশেদ, রাব্বি, রহমান, কাশেম, নুরা,নাসির, আনেজ, আজগর, আবু, শিহাব নামের কৃষকরা সকলেই ১০০ পিলি করে পানের বরজ হারিয়েছেন।
পানচাষি আবুল আলী জানান, মাধবপুর এলাকায় গত দুই বছর আগে এই সমস্ত বরজ আগুনে পুড়ে গিয়েছিল।এবার তা পদ্মা নদী গ্রাস করলো। আমরা কৃষকরা খুবই অসহায়ভাবে দিন কাটাচ্ছি।
কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন,বাহাদুরপুর ইউনিয়নের ভাঙ্গনের বিষয়টি আমরা আপনাদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। অতি শীঘ্রই আমরা সেখানে পরিদর্শনে যাবো।
ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, পদ্মা নদীতে ভাঙ্গনের বিষয়টি আমরা জেনেছি।ক্ষতিগ্রস্ত পান চাষিদের আবেদনের ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
‘চিক্ চিক্ করে বালি, কোথা নাই কাদা, একধারে কাশবন ফুলে ফুলে সাদা’ কাশবনে গেলেই কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই কবিতাটি মনে পড়ে যায়। শরতের বিকেলের স্নিগ্ধতা যেন বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে এই কাশবন। কাশফুলের মাঝে ছবি তোলার হিড়িক পড়ে যায় তরুণ-তরুণীদের। এলোমেলো বাতাসের সাথে খোলা রাস্তায় হেঁটে বেড়ানো, দুইধারে সাদা মেঘের মতন ফুলের মেলা যেন পাগল করে তোলে এখানে ঘুরতে আসা মানুষের।
শরতের এতো রূপ. এতো রঙধনুর রং, এতো নীল আকাশের নীলা, এতো ছায়াপথের আলোছায়া, এতো সূর্য্যাস্তের রক্তরাগ, এতো ভোরের শিশির, এতো কাঁশ ফুলের হেলা দোলা, আর এই বাংলা মা ছাড়া কোথায় পাবো? চোখ জুড়িয়ে যায়, মন জুড়িয়ে যায়, জীবন জুড়িয়ে যায়, সব পেয়েছি আমার এই দেশের সোনার বাংলায়।
আকাশে নরম তুলার মতো শুভ্র মেঘের ভেসে বেড়ানো আর দিগন্তজোড়া প্রান্তরে কাশফুলের মনোরম দৃশ্য দেখে বুঝতে হবে শরতের আবির্ভাব ঘটেছে। এ সময়ে নদীর ধার, জলাভূমি, চরাঞ্চল কিংবা গ্রামের কোনো উঁচু জায়গায় কাশের ঝাড় বেড়ে ওঠে প্রকৃতিকে দেয় এক অপরূপ ভিন্ন সৌন্দর্য। এভাবেই রূপগঞ্জ উপজেলার বালু ও শীতলক্ষ্যা নদীর তীরের কাশফুলের শুভ্রতা নজর কাড়ছে পথচারীদের। সিনথিয়া নামের এক পথচারী জানান, শহর থেকে নদী পথে যাওয়ার সময় হঠাৎ কাশফুলের এমন চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্য দেখে না থেমে পারলাম না।
আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে সাদা মেঘের ভেলা। নীল আকাশজুড়ে অলস মেঘের অবাধ বিচরণ। খণ্ড খণ্ড মেঘের নিরুদ্দেশ যাত্রা। রোদের ঝলকানির পাশেই মেঘের ছায়া। মেঘ আর রোদের কানামাছি খেলার মাঝে বৃষ্টিও অংশ নিচ্ছে। এমন দিনে রূপগঞ্জে আপনাকে স্বাগত জানাতে কাশফুল ‘সাদা ডালি’ সাজিয়ে বসে থাকে। ফাঁকা জমিতে শরতের সৌন্দর্যের ডালি সাজিয়ে বসে আছে এ কাশফুল।
সৌন্দর্যে ঐশ্বর্যে প্রকৃতির রূপ লাবণ্যে শরৎরাণীর রূপ বর্ণনায় শ্যামল ছায়া বাংলাদেশের মাঠ-ঘাট, নদী-নালা ও বিলের পাড়ে বালুচরে নীল আকাশে রূপালী তারায় ভরে উঠেছে সাদা কাশবন। মেঘ মুছে যাওয়া বর্ষণ শেষের আকাশে হাজার হাজার তারা ঝিকিমিকি করে জ্বলছে। রোদে ঝল মল করছে চারিদিক। দেখা যাচ্ছে নীল আকাশ স্বচ্ছ সাদা মেঘ। আর সাদা মেঘের ভেলায় ভাসছে কাশফুলের ছোঁয়া। দৃষ্টিনন্দন এ কাশফুলের স্বর্গ রাজ্য এখন রূপগঞ্জের নদীর তীরে ও পূর্বাচলের বালুময় বিস্তৃর্ণ এলাকা। আর এ কাশফুলের ছোঁয়া নিতে সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিনই ছুটে আসছে দর্শনার্থীরা।
বালুর মধ্যে গুচ্ছ গুচ্ছ কাশফুল দেখে মনে হবে, প্রকৃতি আপনার মনের প্রশান্তির জন্য এ রূপে সেজেছে। শেষ প্রান্তের দুদিকে সাজানো কাশফুল দেখে মনে হবে, যেন আপনি দাঁড়িয়ে আছেন কাশফুলের রাজ্যে। যত দূর চোখ যায়, তত দূর কাশ ফুলের শুভ্রতা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কাশবনে এ সৌন্দর্য দেখতে রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের জেলার ভ্রমণ প্রেমীরাও ভিড় করেছে। অনেকে দলবেধে নৌকা বা ট্রলার নিয়েও বেড়াতে যান এ কাশফুলের রাজ্যে। কাঁশফুল কাছে পেলেই ছবি তোলার হিড়িক পড়ে যায়। কেউ সেলফি তুলছেন আবার কেউবা ভিডিও করছেন। সূর্যাস্তের সময় নদীতে গোধূলির লাল, একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকার মতো। যে কেউই এর অপার সৌর্ন্দযে নীরব সাক্ষী হতে চাইবে।
কথা হলো কাশফুল দেখতে আসা কয়েকজন দর্শনার্থীর সাথে। রিতা মিতা বিথী জুয়েল তারা তাৎক্ষণিক অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, ‘কাশফুলের কাছে এসে খুবই আনন্দ পাচ্ছি। মনকে পরিষ্কারের জন্য আমরা এখানে আসি। কাশফুলের সান্নিধ্য পাওয়াটা একটু বাড়তি বিনোদন। অবসর সময়টা কাটানোর ভিন্ন একটা স্থান কাশফুলে জেগে এ প্রকৃতি। আরেকটা বিষয় আমাদের খুব ভালো লাগে। সেটা হচ্ছে, এই যে নদী তার পাশে কাশফুলের এ রাজ্য। বিষয়টা দেখতেও বেশ রোমাঞ্চকর।
আজ ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ খ্রিঃ তারিখে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী এবং ল্যাবএইড গ্রুপ, ল্যাবএইড ক্যানসার হাসপাতাল ও ল্যাবএইড সুপার স্পেশালিটি সেন্টারের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যসেবা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। বাহিনীর সদর দপ্তরে আয়োজিত এই ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন বাহিনীর অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফিদা মাহমুদ এবং ল্যাবএইড মেডিক্যাল সার্ভিসেসের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল আলীম।
এই চুক্তির আওতায় আনসার ব্যাটালিয়ন, অঙ্গীভূত সাধারণ আনসার, ভিডিপি সদস্য এবং তাঁদের পরিবারবর্গ ল্যাবএইড মেডিক্যাল সার্ভিসেসের সারাদেশব্যাপী ৩২টি শাখায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে উন্নত স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের সুযোগ পাবেন। এর মধ্যে রয়েছে ডোপ টেস্ট, সিটি স্ক্যান, এমআরআই, ইসিজি, আল্ট্রাসনোগ্রাম, ইকো, ইটিটি সহ অত্যাধুনিক চিকিৎসা পরীক্ষা-নিরীক্ষা। পাশাপাশি, হাসপাতালে ভর্তি ও বহির্বিভাগীয় চিকিৎসা সেবায় বিশেষ ছাড়ের সুবিধাও ভোগ করবেন তাঁরা।
বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি ইতোমধ্যেই গ্রামীণ ডিজিটাল হেলথ কেয়ারের সাথে চুক্তির মাধ্যমে সদস্যদের স্বাস্থ্যসেবায় এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে। ‘সুখী’ অ্যাপের মাধ্যমে দেশের যেকোন প্রান্ত থেকে সহজে স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের এই প্রক্রিয়া সদস্যদের মধ্যে সাড়া জাগিয়েছে। ল্যাবএইডের সাথে নতুন এ সহযোগিতা সদস্যদের স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করবে।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বাহিনীর অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফিদা মাহমুদ বলেন- “ল্যাবএইডের সাথে এ চুক্তি বাহিনীর চিকিৎসা কার্যক্রমের একটি মাইলফলক। এটি কেবল শুরু, ভবিষ্যতে এ কার্যক্রম আরও সম্প্রসারিত করা হবে।”
অন্যদিকে ল্যাবএইড মেডিক্যাল সার্ভিসেসের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল আলীম বলেন- "শিগগিরই সারাদেশে ল্যাবএইডের প্রতিটি শাখায় আনসার ও ভিডিপি সদস্যদের জন্য বিশেষায়িত চিকিৎসা কার্যক্রম চালু করা হবে।”
উভয় পক্ষই ভবিষ্যতে যৌথভাবে স্বাস্থ্যসচেতনতা বৃদ্ধি, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং উন্নত চিকিৎসা কর্মসূচি বাস্তবায়নের পরিকল্পনা ব্যক্ত করেন। আশা করা হচ্ছে, এর ফলে আনসার ও ভিডিপি সদস্যদের স্বাস্থ্যঝুঁকি হ্রাস পাবে, চিকিৎসা গ্রহণ হবে আরও সহজলভ্য এবং বাহিনীর সামগ্রিক কর্মদক্ষতা বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাহিনীর উপমহাপরিচালক (অপারেশন্স) মোঃ সাইফুল্লাহ রাসেল, উপমহাপরিচালক (প্রশিক্ষণ) মোঃ রফিকুল ইসলামসহ অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ।
মন্তব্য