সিরাজগঞ্জ-বগুড়া মহাসড়কের পাশে চন্ডিদাসগাঁতি বাজার সংলগ্ন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের স্কুল মাঠের এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে মহান মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য ‘দুর্জয় বাংলা’।
২৮ ফুট দীর্ঘ এই ভাস্কর্যটি নতুন প্রজন্মকে জানান দিচ্ছে মহান মুক্তিযুদ্ধের কথা। দেশের কিশোর, নারী, যুবকসহ সব শ্রেণির মানুষের আত্মত্যাগের কথা। এর ফলেই এসেছে আমাদের এই সোনার বাংলা।
বগুড়ার বিখ্যাত ভাস্কর শিল্পী আমিনুল করিম দুলাল ও তার তিন সহযোগী মিলে এই ভাস্কর্যটি নির্মাণ শুরু করেন।
১৯৯২ সালে নির্মাণ করা হয় ভাস্কর্য ‘দুর্জয় বাংলা’। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের অর্থায়নে প্রায় সোয়া ছয় লাখ টাকা ব্যয়ে করা হয় ভাস্কর্যটি। ২৬ জন শ্রমিক প্রায় তিন মাস ধরে এই ভাস্কর্যটির নির্মাণ করেন।
নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগেই ভাস্কর আমিনুল করিম দুলাল মারা যান। সে সময় ভাস্কর্যের মুখের অবয়ব দেয়া হয়েছিল না। এরপর শিল্পী দুলালের তিন সহযোগী এই ভাস্কর্যটির মুখের অবয়ব নির্মাণ করেন।
ভাস্কর্যটি নির্মাণের অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন তৎকালীন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র সিরাজগঞ্জের প্রকল্প উপদেষ্টা সাইফুল ইসলাম শিশির।
নিউজবাংলাকে তিনি জানান, মুক্তিযুদ্ধের এই ভাস্কর্যটি নির্মাণ করতে তাকেও নানা প্রতিকূলতার মধ্যে পড়তে হয়েছিল। বিশেষ করে ভাস্কর্যটির স্থাপনের স্থান থেকে খানিকটা দূরে রয়েছে একটি কবরস্থান। এ সময় স্থানীয় স্কুলের শিক্ষক ওয়াজেদ আলী ভাস্কর্যটি নির্মাণে তাকে নানাভাবে সহায়তা করেছিলেন।
তিনি আরও জানান, সে সময়ে এই ভাস্কর্যটি নির্মাণ করতে ভাস্কর্য বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করা হয়। এতে সিরাজগঞ্জের তৎকালীন জেলা প্রশাসক জেড এম শফিকুল ইসলাম, পুলিশ সুপার মোখলেসুর রহমান, জেলা পরিষদ সচিব মশিউর রহমান, উপজেলা ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা ভীম চরণ রায় এবং তিনি নিজে এই কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।
এ ছাড়া উপদেষ্টা কমিটিতে ছিলেন বিএনপি দলীয় তৎকালীন সংসদ সদস্য মির্জা মোরাদুজ্জামান, তৎকালীন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহার হোসেন তালুকদার এবং জেলা জাসদের সভাপতি আবদুল হাই তালুকদার।
আবদুল হাই তালুকদার জানান, সিরাজগঞ্জ জেলার প্রথম মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ ‘দুর্জয় বাংলা’। এই শিল্পকর্মটির মাধ্যমে ফুটে উঠেছে মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তান বাহিনীকে রুখতে বাংলার সব শ্রেণি-পেশার মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টার চিত্র।
ভাস্কর্যটি ত্রিকোণ বেদির ওপর নির্মিত। বেদির তিন পাশের এক পাশে শোভা পাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বিপ্লবী সরকারের তথ্য অধিদফতর থেকে প্রকাশিত কয়েকটি পোস্টারের প্রতিচ্ছবি।
আরেক পাশে রয়েছে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের ওপর আরও একটি পোস্টারের প্রতিচ্ছবি।
বেদির উপরে মাছ ধরার টেটা হাতে দীপ্ত পায়ে দাঁড়িয়ে আছে ১০-১২ বছর বয়সী এক কিশোর মুক্তিযোদ্ধা। তার পাশেই মাথায় গামছা বেঁধে দৃপ্ত পদক্ষেপে দাঁড়িয়ে আছেন এক মহিলা মুক্তিযোদ্ধা। তার শক্ত মুঠিতে রয়েছে বাংলাদেশের মানচিত্রখচিত পতাকা। আরেক পাশে রয়েছে লুঙ্গি পরনে উদোম গায়ে পেশিবহুল শরীরের এক যুবক মুক্তিযোদ্ধা। তার উত্তোলিত ডান হাতে শোভা পাচ্ছে রাইফেল আর বুকে রয়েছে বন্দুকের গুলিবোঝাই কার্তুজ।
৭ই মার্চে দেয়া বঙ্গবন্ধুর ভাষণে ‘তোমাদের যার কাছে যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করো’ এমন নির্দেশ বাস্তবায়নের পাশাপাশি বাংলার কৃষক-শ্রমিক কামার-কুমার- তাঁতি ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতিবিদ আর বাংলার নারীদের সরাসরি সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণের সম্মিলিত প্রয়াসের চিত্র ফুটে উঠেছে এই ভাস্কর্যটিতে।
সে সময়ে পাকিস্তান থেকে স্টোন চিপস এনে সাদা সিমেন্ট দিয়ে নিরেট ঢালাইয়ের মাধ্যমে এটি নির্মাণ করা হয়। সে সময়ে দেশে মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন ভাস্কর্য নির্মিত হলেও জীবিত মানুষের ছাঁচে করা এই ভাস্কর্যটি ছিল অন্যতম।
ভাস্কর্যটিকে ঘিরে যে পোস্টারগুলো স্থাপন করা হয়েছে তাতে রয়েছে বরেণ্য চিত্রশিল্পী পটুয়া কামরুল হাসানের চিত্র ‘ওরা মানুষ হত্যা করছে আসুন আমরা পশু হত্যা করি’। তাতে আরও রয়েছে রক্তলোলুপ ইয়াহিয়া খানের ছবি।
আরেকটি পোস্টারে শোভা পাচ্ছে ‘বাংলার কৃষক বাংলার শ্রমিক আজ সবাই মুক্তিযোদ্ধা’। আরেকটিতে রয়েছে গামছা মাথায় এক নারী মুক্তিযোদ্ধার ছবি।
ভাষা আন্দোলনকে ঘিরে আরও একটি পোস্টার শোভা পাচ্ছে বেদির পিছন অংশে। এই পোস্টারটি জানান দিচ্ছে ভাষা আন্দোলনের সিঁড়ি বেয়ে এসেছে আমাদের স্বাধীনতা।
সিরাজগঞ্জ জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের সভাপতি মামুনুর রশিদ মামুন জানান, প্রায় ৩০ বছর ধরে ‘দুর্জয় বাংলা’ মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বহন করে চলেছে। তবে দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় তা কিছুটা হয়ে ক্ষয়ে গেছে।
মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস সংরক্ষণের জন্য ভাস্কর্যটি সংস্কার ও সংরক্ষণের দাবি জানান তিনি।
আরও পড়ুন:চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে ফের সচিবালয়ের সামনে অবস্থান নিয়েছেন পুলিশের ৪০তম ব্যাচের অব্যাহতিপ্রাপ্ত শিক্ষানবিশ উপপরিদর্শকরা (এসআই)।
আব্দুল গনি রোডে সচিবালয়ের ১ ও ২ নম্বর গেটের বিপরীত পাশে সোমবার সকাল থেকে অবস্থান নেন তারা।
বিভিন্ন ধরনের প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে তারা শান্তিপূর্ণভাবে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তারা দাবি পূরণে কোনো আশ্বাস না পেলে বিকেল ৫টা পর্যন্ত এ কর্মসূচি পালন করবেন বলে জানান।
অব্যাহতি পাওয়া এসআইদের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘ট্রেনিং থেকে অন্যায়ভাবে অব্যাহতি দেওয়ার প্রতিবাদ ও চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে আমরা ৩২১ জন সাব-ইন্সপেক্টর গত ৫ ও ৬ জানুয়ারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি পালন করি। আমাদের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে স্বরাষ্ট্র সচিব দেখা করে আমাদের দাবির বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
‘এখন পর্যন্ত আমাদের বিষয়ে কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখতে না পাওয়ায় আমরা সবাই (৩২১ জন) আজ আবার অবস্থান কর্মসূচি পালন করছি। সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত এ কর্মসূচি চলমান থাকবে।’
অব্যাহতি পাওয়া এসআই অম্লান মিত্র বলেন, ‘আমি ২০২৩ সালের ৪ নভেম্বর ট্রেনিংয়ে অংশ নিই। অব্যাহতি দেওয়া হয় ২০২৪ সালের ৪ নভেম্বর। আমাকে বলা হচ্ছে ক্লাসে অমনোযোগী এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী। কিন্তু আমি অর্ধ-বার্ষিক পরীক্ষায় ৮০৪ জনে ১০০ জনের মধ্যে ছিলাম। অমনোযোগী থাকলে তো এমন ফলাফল হওয়ার কথা না।’
কর্মসূচিতে আসা আরেকজন নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘আমরা এক বছর অনেক ত্যাগ স্বীকার করে প্রায় বিনা বেতনে ট্রেনিং করেছি। যখন চাকরিতে নিয়মিত হব, তখনই আমাদের বাদ দেওয়া হলো। এর থেকে কষ্টের আর কিছু হতে পারে না।’
৪০তম ক্যাডেট এসআই ব্যাচে প্রশিক্ষণের জন্য মোট ৮২৩ জন ছিলেন। তারা গত বছরের ৪ নভেম্বর থেকে রাজশাহীর সারদায় পুলিশ একাডেমিতে বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ শুরু করেন।
তাদের মধ্যে তিন ধাপে ৩১৩ জন এসআইকে মাঠে ও ক্লাসে বিশৃঙ্খলার অভিযোগ তুলে শোকজ করে একাডেমি। এরই মধ্যে তাদের চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন:সরকারি কর্ম কমিশনে (পিএসসি) সদ্য নিয়োগ পাওয়া ছয় সদস্যের নিয়োগ বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আবুল হায়াত মো. রফিকের সই করা প্রজ্ঞাপনে সোমবার এ তথ্য জানানো হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সরকারি কর্মকমিশনে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত নিম্ন বর্ণিত ছয় সদস্যের নিয়োগ আদেশ বাতিল করা হলো।
নিয়োগ বাতিল করা ছয় সদস্য হলেন অধ্যাপক ড. শাহনাজ সরকার, মো. মুনির হোসেন, অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ড. এ এফ জগলুল আহমেদ, ড. মো. মিজানুর রহমান, সাব্বির আহমেদ চৌধুরী ও অধ্যাপক ডা. সৈয়দা শাহিনা সোবহান।
প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে জারি করা এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর করা হবে।
দেশে হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাসের (এইচএমপিভি) প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে বেশ কিছু নির্দেশনা জারি করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
এক বিজ্ঞপ্তিতে অধিদপ্তর জানায়, চীনসহ উপমহাদেশের বিভিন্ন দেশে ভাইরাসটি উদ্বেগজনকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। বিশেষ করে ১৪ বছরের কম বয়সী শিশু ও ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সীদের মধ্যে এ সংক্রমণ দেখা যাচ্ছে।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ‘সেই সাথে দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য সমস্যা, যেমন: হাঁপানি বা ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ, গর্ভবতী নারী ও দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য উচ্চ ঝুঁকি সৃষ্টি হতে পারে।’
পৃথিবীর অন্যান্য অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও এই রোগের সংক্রমণ দেখা গেছে। কিন্তু রোগটি যাতে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়তে না পারে, সে জন্য বেশ কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সংক্রমণ প্রতিরোধে নির্দেশনা
১. শীতকালীন শ্বাসতন্ত্রের রোগ থেকে বাঁচতে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে
২. হাঁচি-কাশির সময় বাহু/টিস্যু দিয়ে নাক মুখ ঢেকে রাখুন
৩. ব্যবহৃত টিস্যুটি অবিলম্বে ঢাকনাযুক্ত ময়লা ফেলার ঝুড়িতে ফেলুন এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার অথবা সাবান পানি দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলুন
৪. আক্রান্ত হয়েছেন এমন ব্যক্তিদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন এবং কমপক্ষে তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখুন
৫. ঘন ঘন সাবান ও পানি কিংবা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধুইতে হবে(অন্তত ২০ সেকেন্ড)
৬. অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক, মুখ ধরবেন না
৭. আপনি জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হলে সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত বাড়িতে থাকুন। প্রয়োজনে কাছের হাসপাতালে যোগাযোগ করুন।
স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা রোববার জানান, বাংলাদেশের এক নারী এইচএমপিভি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তবে এইচএমপিভি না, নিউমোনিয়ার কারণে তার স্বাস্থ্যের অবস্থার অবনতি ঘটেছে। বর্তমানে ঢাকার একটি হাসপাতালে তিনি চিকিৎসাধীন।
চীনের উত্তরাঞ্চলে রোগটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লে এতে আরেকটি মহামারির ঝুঁকি নেই বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
এ ভাইরাস থেকে সুরক্ষায় নাগরিকদের পূর্ব সতর্কতা অবলম্বন করতে বলেছে চীনের রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (সিডিসি)।
দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিয়াং জানান, শীত মৌসুমে শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত রোগটির সংক্রমণ বেশি ঘটে। তবে আগের বছরগুলোর তুলনায় এবার কমই ছড়িয়েছে।
আরও পড়ুন:যুক্তরাজ্যের লন্ডন ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে।
তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন রোববার এমন তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘তার স্বাস্থ্যের রুটিন পরীক্ষা প্রতিদিনই চলছে। তবে সোমবার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শে বিশেষ কিছু পরীক্ষা করা হতে পারে। হাসপাতালে খালেদা জিয়াকে দেখেছেন বিখ্যাত হেপাটোলজিস্ট অধ্যাপক জন প্যাট্রিক কেনেডি। এ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অধীনেই তার চিকিৎসা চলছে।
‘হাসপাতালে ভর্তির পরই খালেদা জিয়ার ফিজিওথেরাপি করানো হয়েছে। এতে তার শারীরিক অবস্থার আরও উন্নতি হয়েছে।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জুবাইদা রহমান হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার সার্বক্ষণিক পরিচর্যা করছেন বলেও জানান জাহিদ হোসেন।
উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ৮ জানুয়ারি খালেদা জিয়া লন্ডনে যান। ওই দিনই হিথ্রো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সরাসরি বিশেষায়িত হাসপাতাল দ্য লন্ডন ক্লিনিকে তাকে ভর্তি করা হয়।
খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের বিভিন্ন পরীক্ষা এরই করা হয়েছে। সেই পরীক্ষার ফলের ওপর ভিত্তি করে তার চিকিৎসা চলছে।
লিভার সিরোসিস, কিডনি, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও আর্থ্রাইটিসসহ শারীরিক নানা অসুস্থতায় ভুগছেন ৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া।
আরও পড়ুন:শতাধিক পণ্যে শুল্ক ও কর বাড়ানো হলেও দেশের মানুষের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটানোর জন্যই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর ফলে দেশের অর্থনীতির স্বাস্থ্যটা ভালো হবে। দেশের মানুষেরই উন্নয়ন হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারের অজনপ্রিয় হওয়ার কোনো কারণ নেই।
রাজধানীর ফরেন একাডেমিতে রোববার প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
প্রেস সচিব বলেন, ‘বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশে ট্যাক্স আদায় সবচেয়ে কম। সরকার চায় ট্যাক্স, জিডিপি এমন জায়গায় থাক, যাতে বাংলাদেশের অর্থনীতির উন্নয়ন ঘটে। তাহলে সামনে দেশের মানুষেরও উন্নয়ন হবে।
‘ম্যাক্রো ইকোনমি বাড়ানোর জন্য ট্যাক্স বাড়াতে হবে। এ ক্ষেত্রে আইএমএফের চাহিদার সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশেও তো ভালো অর্থনীতিবিদ আছেন। তাদের পরামর্শেই এটা করা হয়েছে। এটা করা না হলে ডলারের দাম ১২৫ টাকা থেকে বেড়ে ১৯০ টাকা হয়ে যাবে। বিদেশি বিনিয়োগ আসবে না। কারণ বিদেশি বিনিয়োগকারীরা দেখেন দেশের ট্যাক্স আদায়ের পরিমাণ কেমন; অর্থনৈতিক স্বাস্থ্যটা কতটা মজবুত।
‘এ ক্ষেত্রে গণমাধ্যমেরও উচিত বিষয়টি নিয়ে জনগণকে বোঝানো।’
শফিকুল আলম বলেন, ‘খরচ কীভাবে কমানো যায়, সরকার সে জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। আগের প্রধানমন্ত্রী ৩০০ লোক নিয়ে বিদেশে যেতেন। এখন প্রধান উপদেষ্টার বহরে ৫০ জন যাচ্ছেন। তারও একটি বড় অংশ থাকছে নিরাপত্তার জন্য।
‘আগে দেখা গেছে, একজন মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর জন্য কর্ণফুলী টানেল করা হয়েছে। টানেল থেকে নেমে তার বিশ্রাম নেওয়ার জন্য সাড়ে ৪০০ কোটি টাকা খরচ করে সেভেন স্টার হোটেল বানানো হয়েছে।’
পাচার করা অর্থ ফেরত আনার বিষয়ে প্রেস সচিব বলেন, ‘সেগুলো ফেরত আনার চেষ্টা চলছে। গতকালও পূর্বাচলের একটি প্লট নিয়ে দুদকের মামলা হয়েছে। এগুলো সরকারের কোষাগারে আনা যায় কি না, সেই চেষ্টা চলছে।’
গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দেখতে হবে বাজারে সরবরাহ চাহিদা মতো আছে কি না। বাংলাদেশের স্বাস্থ্যটা ভালো থাকলে মূল্যস্ফীতিও কমিয়ে আনা যাবে।
‘যারা ভ্যাট-ট্যাক্সের সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, তারা অনেক বুঝে-শোনেই দিয়েছেন। মানুষের ভালোর জন্যই এটা করা হয়েছে।’
আরও পড়ুন:রাজনৈতিক কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে বিঘ্ন ঘটলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার কুসুমপুর জাগরণী সংসদ মাঠে রোববার বেলা তিনটার দিকে ঢাকা ব্যাংকের কৃষিজ যন্ত্রপাতি হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ হুঁশিয়ারি দেন।
ওই সময় স্থানীয় ৩০ জন কৃষকের মাঝে শ্যালো মেশিন ও ট্রাক্টর বিতরণ করেন উপদেষ্টা।
অনুষ্ঠানে সরকারি কর্মকর্তাদের কাউকে ছাড় না দিয়ে কাজ করার নির্দেশ দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশে আরও অগ্রসর হতে হবে সাংবাদিকদের।
উপদেষ্টা বিক্রমপুর কুঞ্জবিহারী সরকারি কলেজে তারুণ্য মেলায় অংশ নেন।
অনুষ্ঠানে মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসক ফাতেমা তুল জান্নাত, পুলিশ সুপার মুহাম্মদ শামসুল আলম সরকার, জেলা কৃষি কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার মোহন্ত, ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ মো. মারুফ উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:নরওয়েকে বাংলাদেশে আরও বেশি বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি এশিয়াতে নরওয়ের পণ্য বিপণনের জন্য বাংলাদেশ হাব উল্লেখ করে বলেন, এ দেশের যুবশক্তিকে কাজে লাগানোর সুযোগ গ্রহণ করতে পারে দেশটি।
বাংলাদেশে নিযুক্ত নরওয়ের রাষ্ট্রদূত হাকোন আরল্যান্ড গুলব্রান্ডসেন রোববার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এ আহ্বান জানান।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
বাংলাদেশের তরুণ জনশক্তিকে কাজে লাগিয়ে এখানে আরও বেশি বিনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘নরওয়ে থেকে লোক আনতে হবে না। আমাদের তরুণ জনগোষ্ঠীকে কাজে লাগিয়ে আপনারা এশিয়ায় নরওয়েজীয় পণ্য বিপণনের জন্য বাংলাদেশকে হাব হিসেবে ব্যবহার করুন।’
সাক্ষাতে প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশে নরওয়ের টেলিকম জায়ান্ট টেলিনরের প্রথম বিদেশি উদ্যোগ গ্রামীণফোনের উদাহরণ তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, সময়ের সঙ্গে গ্রামীণফোন টেলিনর পরিবারের সবচেয়ে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।
রাষ্ট্রদূত গুলব্রান্ডসেন নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী জোনাস গার স্তোরের একটি চিঠি প্রধান উপদেষ্টার কাছে হস্তান্তর করেন।
চিঠিতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি শক্তিশালী সমর্থন ব্যক্ত করা হয়েছে।
ওই সময় রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আপনার প্রয়োজনীয় সংস্কারের উদ্যোগ এবং সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক নির্বাচন আয়োজনের প্রচেষ্টার প্রতি দৃঢ় সমর্থন জানিয়েছেন।’
রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের মানবাধিকার রক্ষা এবং পরিবেশগত টেকসই উন্নয়নের প্রতি প্রতিশ্রুতির প্রশংসা করেন।
রাষ্ট্রদূত গুলব্রান্ডসেন জানান, বাংলাদেশে জাহাজ পুনর্ব্যবহার শিল্প এবং সবুজ জ্বালানি রূপান্তরে নরওয়ে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে আগ্রহী।
প্রধান উপদেষ্টা মিয়ানমারের পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে নরওয়ের সহায়তা কামনা করেন।
তিনি রাষ্ট্রদূতকে বলেন, ‘নরওয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় বড় ভূমিকা রেখেছে। তাই রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আপনাদের সাহায্য প্রয়োজন।’
প্রধান উপদেষ্টা রাষ্ট্রদূতকে জানান, বাংলাদেশে আগামী সাধারণ নির্বাচনকে ‘সর্বোত্তম ও ঐতিহাসিক’ করতে পরিকল্পনা করছে সরকার।
তিনি বলেন, ‘আমরা এটি একটি উদাহরণ সৃষ্টিকারী, ঐতিহাসিক উদাহরণ সৃষ্টিকারী নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে চাই।’
রাষ্ট্রদূত গুলব্রান্ডসেন জানান, ফিলিস্তিন ইস্যু, আন্তর্জাতিক করব্যবস্থা এবং প্লাস্টিক দূষণ নিয়ে আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে চায় নরওয়ে।
ওই সময় ফিলিস্তিনে মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করতে নরওয়ের নেতৃত্বে জাতিসংঘের প্রস্তাব সমর্থন করায় বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন ইউরোপের দেশটির ডেপুটি হেড অফ মিশন ম্যারিয়ান্নে রাবে কানেভেলস্রুদ।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য