ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক জন নার্স অবৈধ গর্ভপাত ঘটানোর কাজ করে কোটিপতি হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
মমতাজ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সংলগ্ন দিউ এলাকায় নিজের বাড়িতে বসবাস করেন। তার স্বামী আবু বকর সিদ্দিক স্থানীয় একটি কিন্ডারগার্টেনে শিক্ষকতা করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ফুলপুর পৌর শহরের বাসিন্দা এক নারী বলেন, ২০১৪ সালে কলেজে পড়ার সময় এক ব্যবসায়ীর প্রেমে পড়েন। একপর্যায়ে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। দুঃশ্চিন্তায় ভেঙে পড়েন। পরে এক জনের পরামর্শে উপায় খোঁজার জন্য যান নার্স মমতাজ বেগমের কাছে। তিনি ৬ হাজার টাকায় গর্ভপাত ঘটান।
এরপর নানা শারীরিক সমস্যায় ভোগেন তিনি। বলেন, গর্ভপাতের কিছুদিন পর জরায়ুতে ব্যথা অনুভব করেন। দুই বছর পর বিয়ে হয়। কিন্তু তার গর্ভে আর কোনো বাচ্চা আসেনি। এজন্য নার্স মমতাজের মাধ্যমে অপরিকল্পিত গর্ভপাত ঘটনোকেই দায়ী করেন তিনি।
তিনি বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, প্রাইভেট ক্লিনিক ও বাসাবাড়িতে চুক্তিতে অনেকের গর্ভপাত ঘটানোর কাজ করেন মমতাজ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কয়েক জন নার্স বলেন, মমতাজের কাছাকাছি সময়ে তারাও চাকরিতে যোগ দিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। আর মমতাজ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কাছে জায়গা কিনে চারতলা ফাউন্ডেশন দিয়ে একতলা ভবন করেছেন।
তা ছাড়া মমতাজ ময়মনসিংহ নগরীর চয়না মোড়ে ছয় শতাংশ জমি কিনেছেন। যার বাজার মূল্য কোটি টাকা। তার এক মেয়ে কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (সিবিএমসিবি) পড়াশোনা শেষ করে ইন্টার্ন করছেন। যেখানে ভর্তি হতেই কয়েক লাখ টাকা লাগে। মমতাজের স্বামীর আয়ও খুব বেশি নয়।
তারা বলেন, ফুলপুর, হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া এবং তারাকান্দায় মমতাজের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট রয়েছে। গর্ভপাত ঘটাতে চান, এমন তরুণী ও নারীদের তার কাছে নিয়ে আসেন এই চক্রের সদস্যরা। একেক জনের গর্ভপাতের কাজ করতে তিনি ৩ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা নেন।
অনেকেই গর্ভপাত করাতে গিয়ে সমস্যায় পড়েছেন। কিন্তু লোকলজ্জার ভয়ে কেউ মুখ খোলেননি। মমতাজও থেকে গেছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।
স্থানীয় বাসিন্দা রুহুল আমিন ও মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নার্স মমতাজের মতো অনেকেই আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন। আমরা এর সঠিক তদন্ত চাই। মমতাজের বিষয়টি সামনে এলেই, বাকিদেরও আসবে।’
তবে মমতাজ বেগম বলেন, তিনি ২৫ বছর ধরে সুনামের সঙ্গে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চাকরি করছেন। এক সময় তিনি গর্ভপাত ঘটাতে সাহায্য করতেন। অন্যায় কিছু করেনেনি। তবে এখন আর বিবেকের তাড়নায় এসব করেন না। বাড়ি ও জমি তিনি অন্যায়ভাবে করেননি।
মমতাজের স্বামী আবু বকর সিদ্দিক বলেন, তিনি ফুলপুরে একটি কিন্ডার গার্টেনে শিক্ষকতা করেন। প্রাইভেট শিক্ষক হিসেবে তার জনপ্রিয়তা রয়েছে। প্রাইভেট পড়িয়ে তিনিও সংসারে টাকা দেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা প্রাণেশ চন্দ্র পণ্ডিত বলেন, তিনি যোগ দেয়ার পর গর্ভপাত করানো নিয়ে মমতাজের বিরুদ্ধে অভিযোগ এলে তা তদন্ত করে সত্যতা পান। মমতাজকে সতর্কও করেন। এসব আর করবেন না মর্মে মমতাজ অঙ্গীকার করেছেন। তার জানামতে, মমতাজ এখন আর গর্ভপাত ঘটানোর কাজ করেন না।
বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন (বিএনএ) ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল শাখার সভাপতি লুৎফুর রহমান বলেন, এক জন নার্সের দায়িত্ব রোগীর সেবা করা। গর্ভপাত করানো তার দায়িত্ব না। তবে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হলে চিকিৎসকের অনুমতি নিয়ে তা করতে পারবেন। অন্যথায় তিনি অপরাধী বলে গণ্য হবেন।
সিভিল সার্জন এবিএম মসিউল আলম বলেন, চিকিৎসকের অনুমতি নিয়েই এক জন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্স গর্ভপাতে সাহায্য করতে পারেন। তবে কেউ গণহারে এসব করতে পারবেন না।
মমতাজ বেগমের বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। সত্যতা পেলে, আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেছেন, ‘আন্দোলন-সংগ্রাম অনেক হয়েছে, ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হয়েছে। এখন আমাদের পড়ার টেবিলে ফিরে যেতে হবে এবং পড়ার প্রতি মনোযোগ দিতে হবে।’
রোববার বিকেলে মানিকগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হতাহতদের পরিবারের সদস্য ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
সারজিস আলম বলেন, ‘রাষ্ট্র সংস্কার হচ্ছে এবং রাষ্ট্র কাঠামো গঠন করতে হবে। প্রতিটি সেক্টরে মেধাবীর প্রয়োজন রয়েছে। কারণ দেশের বাইরের মেধাবী লোকজন এসে চাকরি করছে। আর আমাদের দেশের টাকা নিয়ে যাচ্ছে তারা। এতে করে আমাদের রাজস্ব ঘাটতি হচ্ছে। সেই লক্ষ্যে আমাদের কাজ করতে হবে এবং যোগত্যা দিয়ে দেশের জন্য কাজ করতে হবে।’
সারজিস আলম আরো বলেন, একটা সফল অভ্যুত্থান ঘটিয়ে দেশকে স্বৈরাচর মুক্ত করেছি। আমরা যখন রাষ্ট্রকে গঠন করতে যাব, তখন আমাদের মানসম্মত মেধা দরকার। আর সে মেধার জন্য পড়াশোনার বিকল্প নেই। দেশ গঠন করতে হলে প্রতিটি ক্ষেত্রে মেধা সম্পন্ন মানুষ লাগবে।
এই সমন্বয়ক বলেন, ‘এতো প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা রক্ষা করতে না পারলে ইতিহাস আমাদের ক্ষমা করবে না। তবে দেশে আবার কোনো রাজনৈতিক দল স্বৈরাচারী কর্মকাণ্ড করতে চাইলে প্রয়োজনে আবারও আন্দোলনের মাধ্যমে তাদেরকে প্রতিহত করা হবে। তার জন্য আমরা সব সময় প্রস্তুত থাকব।’
এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আবদুল্লা সালেহিন নয়ন, সামিয়া মাসুদ মুমু, মবাশ্বিরু জামান হাসান মৃধা, মেহেরাব হোসেন সিফাত, মুহাম্মদ হৃদয় হোসেন, আদিনা খান. খোন্দকার রায়হা, কাজী ইসমাইল হোসেন রুদ্র ও কাজী জুবায়ের উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বলেছেন, ‘সরকারি ও আধাসরকারি প্রতিষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় কতজনের চাকরি হয়েছে, এর একটি তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে।’
একইসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ না করে যারা মুক্তিযোদ্ধার সনদ নিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। সূত্র: ইউএনবি
ফারুক-ই-আজম বলেন, ‘বিগত আন্দোলনে প্রধান বক্তব্য ছিল মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের কোটা। তাই মুক্তিযোদ্ধা কোটায় কতজনের চাকরি হয়েছে তার একটি তালিকা প্রস্তুত হওয়ার পর পুরো বিষয়টি নিয়ে আমরা আপনাদের সামনে উপস্থাপন করব।’
রোববার সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, ‘যাদের মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি হয়েছে তারা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কি না, ন্যায্যভাবে হয়েছে কি না- বিষয়টি আপনাদের সামনে উপস্থাপন করব। এ বিষয়ে কাজ হচ্ছে। সেখানে বহুবিধ মামলা রয়েছে। তিন হাজার সাত শ’র মতো মামলা পেন্ডিং আছে, রিট করা আছে। সেই মামলাগুলো অ্যাড্রেস করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার মাঝখানে একটা প্রাতিষ্ঠানিক বিষয় রয়েছে, সেটা হচ্ছে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল জামুকা। কারা মুক্তিযোদ্ধা হবে না হবে- সেটা জামুকা নির্ধারণ করে দিত। মন্ত্রণালয় শুধু তাদের নির্ধারিত হওয়া বিষয়টি বাস্তবায়নে যেত।
‘এটার আইনগত বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এছাড়া বহু জায়গা থেকে অভিযোগ আসছে। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা হয়েছে, মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞার ক্ষেত্রেও আপত্তি আছে। এসব বিষয়ে আমরা যখন একটা পর্যায়ে যাব তখন আপনাদের ডেকে জাতিকে জানিয়ে দেয়া হবে।’
মুক্তিযোদ্ধার তালিকা রিভিউ হবে কি না- এ বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘অবশ্যই হবে, যেন মুক্তিযোদ্ধারা তাদের সম্মানটা ফিরে পান। মুক্তিযুদ্ধ তো আমাদের জাতীয় জীবনে অনন্য ঘটনা। আমরা হাসি-মশকরা বা অবহেলা দিয়ে তা নষ্ট করতে পারি না।
‘এরকম গৌরবোজ্জ্বল ও ত্যাগের বীরত্বের মহিমা জাতির কাছে তো আর আসেনি। যারা সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধা তারা ওটাই ফিরে পেতে চান। এটাই তাদের ফিরে পাওয়ার আকুতি।’
ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের চিহ্নিত করতে পারলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কেন নেব না। এটা তো জাতির সঙ্গে প্রতারণা। এটা তো শাস্তিযোগ্য অপরাধ। যারা সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধা তারা এ বিষয়টি নিয়ে অপমানিত বোধ করছেন।’
আরও পড়ুন:অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশ পুনর্গঠন, গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়ন এবং পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা চেয়েছেন।
রোববার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় সফররত উচ্চ পর্যায়ের যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি দলের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি এই সহায়তা চান।
শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের চ্যালেঞ্জগুলো উল্লেখ করে বলেন, তার সরকার দ্রুততার সঙ্গে অর্থনীতি পুনর্গঠন, সংস্কার ও পুনরায় সচল করার পাশাপাশি আর্থিক খাতে সংস্কার এবং বিচার বিভাগ ও পুলিশের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যকর করার উদ্যোগ নিয়েছে।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘বর্তমান সময়টি আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং আমাদের ইতিহাসের এক তাৎপর্যপূর্ণ মুহূর্ত। ছাত্রদের নেতৃত্বে সংগঠিত বিপ্লব বাংলাদেশে নতুন আশা জাগানিয়া যুগের সূচনা করেছে।’
প্রধান উপদেষ্টা যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি দলের কাছে অন্তর্বর্তী সরকারের গৃহীত সংস্কারের রূপরেখা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ভোট কারচুপি প্রতিরোধে নির্বাচন কমিশন সংস্কার এবং বিচার বিভাগ, পুলিশ, জনপ্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশন ও সংবিধান সংশোধনের লক্ষ্যে ছয়টি কমিশন গঠন করেছে।’
স্বৈরাচার সরকারের ঘনিষ্ঠ দুর্নীতিবাজ ব্যক্তিদের দ্বারা আত্মসাৎকৃত ও পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ বলে উল্লেখ করেন তিনি।
অন্তর্বর্তী সরকারকে দুর্নীতির মতো বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে উল্লেখ করে অধ্যাপক ড. ইউনূস বলেন, ‘আমরা দুর্নীতির এক গভীর সমুদ্রে নিমজ্জিত ছিলাম।’
যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব ও অর্থ দপ্তরের আন্তর্জাতিক অর্থায়নবিষয়ক সহকারী আন্ডার সেক্রেটারি ব্রেন্ট নেইম্যানের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি দল অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বের প্রশংসা করে বলেন, ‘ওয়াশিংটন অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়নে সহায়তা করতে পারলে আনন্দিত হবে।’
বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা জানান, ড. ইউনূস সরকারের বাস্তবায়নাধীন সংস্কার কর্মসূচিতে তারা প্রযুক্তি ও আর্থিক সহায়তা দিতে আগ্রহী।
ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে আর্থিক খাতের সংস্কার, বিনিয়োগ, শ্রম পরিস্থিতি, রোহিঙ্গা সঙ্কট এবং জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগদান উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টার আসন্ন নিউ ইয়র্ক সফর নিয়ে আলোচনা হয়।
ব্রেন্ট নেইম্যানের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলে আরও ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু, যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি ব্রেন্ডন লিঞ্চ এবং ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের পরিচালক জেরড ম্যাসন।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয় সংক্রান্ত বিশেষ দূত ড. লুৎফে সিদ্দিকী, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক (সিনিয়র সচিব) লামিয়া মোরশেদ, পররাষ্ট্র সচিব মো. জসিম উদ্দিন এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:সফররত যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা সম্প্রসারণ, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা গড়ে তোলা এবং মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে। সূত্র: ইউএনবি
ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস এমনটা জানিয়ে বলেছে, ‘আমরা আমাদের অংশীদার বাংলাদেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা সম্প্রসারণ, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা গড়ে তোলা, মানবাধিকার সমুন্নত রাখা এবং জলবায়ু ঝুঁকি কমিয়ে আনতে সহায়তা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন ও সফররত প্রতিনিধি দলের মধ্যে বৈঠক শেষে রোববার দূতাবাস তাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে এ কথা জানায়।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন সে দেশের ট্রেজারি বিভাগের আন্তর্জাতিক অর্থবিষয়ক সহকারী সচিব ব্রেন্ট নেইম্যান এবং যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক ব্যুরোর সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু।
পদ্মা হাউসে পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টিকে দারুণ বলে উল্লেখ করেছে দূতাবাস।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্র সচিবের দেয়া একটি ওয়ার্কিং লাঞ্চে যোগ দেয়ার কথা রয়েছে।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র বলেছিলেন, সাক্ষাৎকালে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, আর্থিক স্থিতিশীলতা এবং উন্নয়ন অগ্রাধিকারে অবদান রাখতে পারে তা নিয়ে আলোচনা করা হবে।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশের জনগণের কল্যাণে অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, প্রাতিষ্ঠানিক গঠন ও উন্নয়নে সহযোগিতার কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় রোববার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে এ কথা বলেন সফররত প্রতিনিধি দল। সাক্ষাতে পারস্পরিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন তারা।
সাক্ষাৎ শেষে ঢাকার যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস বলেছে, ‘প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বাংলাদেশের জনগণের কল্যাণে অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, প্রাতিষ্ঠানিক গঠন ও উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার ইচ্ছার কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে আমাদের প্রতিনিধি দল।’
দূতাবাসের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, ‘যেহেতু বাংলাদেশ আরও ন্যায়সঙ্গত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ভবিষ্যতের রূপরেখা খুঁজছে, তাই যুক্তরাষ্ট্র এই প্রচেষ্টায় সহায়তা করতে প্রস্তুত।’
ভারত সফর শেষে রোববার সকালে ঢাকায় এসে এই সাক্ষাতে অংশ নেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু।
যুক্তরাষ্ট্রের সফররত প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ‘মাল্টি-ডাইমেনশনাল’ আলোচনার অপেক্ষায় রয়েছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে বৈঠকে প্রতিনিধি দলে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগের আন্তর্জাতিক অর্থবিষয়ক সহকারী মন্ত্রী ব্রেন্ট নেইম্যান।
প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী বৈঠকে যোগ দেন।
এছাড়া রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের সঙ্গেও বৈঠক করেন যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা।
দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে আলোচনার জন্য প্রতিনিধি দলটিতে আরও রয়েছেন সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি ব্রেন্ডন লিঞ্চ।
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের সম্মানে মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করেন পররাষ্ট্র সচিব মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন।
গত ৮ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর বাংলাদেশে এটাই প্রথম যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের সফর।
পররাষ্ট্র সচিব মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে কতটা গুরুত্ব দেয় এই সফর তারই বড় প্রতিফলন। এ থেকে বোঝা যায় যে, এই আলোচনা হবে বহুমাত্রিক। এটি শুধু একটি বিষয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না।’
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে সহায়তা করতে পারে তা নিয়ে দুই দেশের প্রতিনিধিরা আলোচনা করেছেন।
আরও পড়ুন:কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলে আরও একজনের মরদেহ ভেসে এসেছে।
শহরের পশ্চিম কুতুবদিয়াপাড়া সমুদ্র উপকূলে রোরবার সকালে মরদেহটি ভেসে আসে বলে জানান সি সেইফ লাইফগার্ডের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ ওসমান গণি।
তিনি জানান, সকালে একটি মরদেহ ভেসে আসতে দেখে স্থানীয়রা লাইফ গার্ডের কর্মী ও প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের অবহিত করেন। পরে সৈকতের কর্মীসহ লাইফগার্ড কর্মীদের একটি দল মরদেহটি উদ্ধার করে। খবর পেয়ে পুলিশের একটি দল সেখানে পৌঁছে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে। পরে মরদেহটি কক্সবাজার জেলা সদর হাসাপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
তাৎক্ষণিকভাবে মরদেহের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া না গেলেও এটি বঙ্গোপসাগরে ট্রলারসহ নিখোঁজ জেলের বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এর আগে শুক্রবার ও শনিবার বিভিন্ন সময় ৫ জেলের মরদেহ ভেসে এসেছিল।
কক্সবাজার জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন জানান, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কবলে সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া আটটি ফিশিং ট্রলারসহ ৭০ জেলে নিখোঁজ ছিল। এ পর্যন্ত ছয়জনের মরদেহ পাওয়া গেছে। অপরাপর জেলেদের ভাগ্যে কী ঘটেছে, বলা যাচ্ছে না।
আরও পড়ুন:ঢাকা, বরিশাল ও খুলনা বিভাগে নদ-নদীর পানি বাড়তে পারে বলে রোববার জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র (এফএফডব্লিউসি)।
দেশের সব প্রধান নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলেও জানিয়েছে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটি।
সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে এ তথ্য জানানো হয়।
এফএফডব্লিউসির পূর্বাভাসে বলা হয়, ‘ঢাকা, বরিশাল ও খুলনা বিভাগের নদ-নদীর পানি বাড়ছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় একটি স্থল গভীর নিম্নচাপ অবস্থান করছে, যার প্রভাবে আগামী ২৪ ঘণ্টায় উপকূলীয় অঞ্চল ও দেশের মধ্যাঞ্চলে ভারি বৃষ্টিপাতের (৪৪-৮৮ মিলিমিটার/২৪ ঘণ্টা) সম্ভাবনা রয়েছে।’
চট্টগ্রাম বিভাগের ফেনী, সাঙ্গু ও মাতামুহুরী নদীর পানি কমছে এবং মুহুরী, হালদা ও গোমতী নদীর পানির স্তর অপরিবর্তিত ও বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পূর্বাভাসে আরও বলা হয়, সারা দেশ ও উজানে ভারি বর্ষণের প্রবণতা কমে আসায় আগামী ৩ দিন চট্টগ্রাম বিভাগের নদ-নদীর পানির স্তর নেমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়াও ব্রহ্মপুত্র নদের পানিও কমছে এবং যমুনা নদীর পানি অপরিবর্তিত ও বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
আগামী পাঁচ দিন ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ-নদীর পানির স্তর ধীর গতিতে নামতে থাকবে বলে পূর্বাভাসে জানিয়েছে এফএফডব্লিউসি।
অন্যদিকে গঙ্গা নদীর পানি অপরিবর্তিত থাকলেও বাড়ছে পদ্মার পানি, তবে তা বিপৎসীমার নিচ দিয়েই প্রবাহিত হচ্ছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানির স্তর আগামী দুই দিন অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং আরও তিন দিন পানি বাড়ার সম্ভাবনা থাকলেও বিপৎসীমার নিচেই থাকবে।
রংপুর বিভাগের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদ-নদীগুলোতে পানি বাড়েনি, তবে আগামী তিন দিন পানি ধীরগতিতে কমতে পারে।
সিলেট বিভাগের সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি কমছে এবং মনু ও খোয়াইয়ের পানির স্তর অপরিবর্তিত ও বিপৎসীমার নিচে রয়েছে।
আগামী তিন দিন সিলেট বিভাগের প্রধান নদ-নদীর পানি কমার সম্ভাবনা রয়েছে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য