কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাঙচুরে যাদের নাম এসেছে তারা শহরতলীর ইবনি মাসউদ (রা.) এর ছাত্র ও শিক্ষক।
মাদ্রাসাটি জুগিয়া মাদার শাহ পশ্চিম পাড়া এলাকায় অবস্থিত। শহর থেকে এর দূরত্ব চার কিলোমিটারের মতো।
মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকরা চরমোনাই পীরের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। এই দলটির সিনিয়র নায়েবে আমির ফয়জুল করীম প্রথমে বিক্ষোভ করেন বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ইস্যুতে।
ভাস্কর্য ভাঙার ফুটেজ পর্যালোচনা করে পুলিশ সিদ্ধান্তে আসে যে, এই মাদ্রাসার হেফজ বিভাগের শিক্ষার্থী আবু বক্কর ও মো. নাহিদুল ইসলাম এই কাজ করেছেন।
পুলিশ জানিয়েছে, তারা শুক্রবার রাতে মাদ্রাসা থেকে হেঁটে বের হয়ে এই কাজ করেছেন। আর হেঁটে মাদ্রাসায় ফিরেছেন। সকালে ঘুম থেকে উঠে দুই শিক্ষককে ঘটনা জানান। আর তারা দুই ছাত্রকে পালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।
এই দুই শিক্ষককেও গ্রেফতার করা হয়েছে। এরা হলেন আল আমিন ও ইউসুফ আলী।
পুলিশ জানিয়েছে, ইউটিউবে হেফাজত নেতা মামুনুল হক ও চরমোনাইয়ের পীরের দল ইসলামী আন্দোলনের ফয়জুল করীমের বক্তব্য শুনে উদ্বুদ্ধ হয়ে এই কাজ করেছেন।
অবশ্য ইসলামী আন্দোলনের যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান নিউজবাংলাকে বলেছেন, তারা ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধী হলেও এটা ভেঙে ফেলতে হবে, সে কথা কখনও বলেননি। ফলে পুলিশ যা বলেছে, সেটা গ্রহণযোগ্য নয়।
মাদ্রাসার জ্যেষ্ঠ শিক্ষক হাফেজ মাওলানা মো. মুসা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আগে কোনোভাবেই যদি জানতে পারতাম, তাদের এ কাজ করতে দিতাম না। তারা এ কাজ করে চরম অন্যায় করেছে।’
গ্রেফতার আবু বক্কর ও নাহিদের একাধিক সহপাঠী জানিয়েছেন, এই দুই ছাত্র ইউটিউবে ওয়াজ শুনতেন। সেখান থেকে এ কাজে উদ্বুদ্ধ হতে পারেন।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. আরিফ জানান, মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের পার্শ্ববর্তী মঙ্গলবাড়িয়া, আলফার মোড় ও ত্রিমোহনী বাজারে আড্ডা দিতে দেখা যায়। সেখানে তারা ইউটিউবে বিভিন্ন হুজুরের ওয়াজ শোনেন এবং এ নিয়ে আলোচনা করেন। বিশেষ করে মাওলানা মামুনুল হকের ভাস্কর্যবিরোধী ওয়াজ শুনতেন তারা।
গ্রেফতার দুই জনের এক সহপাঠী বলেন, ‘সে যে এ রকম একটা কাজ করবে সেটা আমরা কল্পনা করি নাই। আমরা একসঙ্গে থাকি, নানা বিষয়ে কথাও বলি। কিন্তু এটা ভাঙতে হবে, এমন কোনো আলোচনা কখনও হয়নি।’
আরেক সহপাঠী বলেন, ‘এরা ওয়াজ শুনতে খুবই পছন্দ করত। ভেতরে মোবাইল রাখার নিয়ম নেই। তাই তারা বাইরে চলে যেত।’
খবর শুনে আবু বক্করের খোঁজ নিতে মাদ্রাসায় আসেন তার চাচা ছবির আলী। তিনি এই ঘটনায় বিস্মিত বলে জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘বক্করকে এমনভাবে জানে না তার পরিবারের কেউই। তারা জানেন, বক্কর মাদ্রাসায় ইসলামি শিক্ষা নিচ্ছে।’
বক্করের বাড়ি কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার সিংপুর গ্রামে। তিনি খুব একটা বাড়িতে যেতেন না বলে জানিয়েছেন তার চাচা।
নাহিদুল ইসলামের বাড়ি দৌলতপুরের ফিলিপনগরে।
২০১৪ সালে কওমি মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। কুষ্টিয়া শহর থেকে পশ্চিমে প্রধান সড়ক ধরে তিন কিলোমিটার যওয়ার পর ত্রিমোহনীর কিছুটা আগে বাম দিকে রয়েছে মাদ্রাসাটির সাইনবোর্ড। এখান থেকে কাঁচা রাস্তায় আরও আধা কিলোমিটার এগিয়ে গিয়ে মাঠের মধ্যে মাদ্রাসাটিকে দেখা যায়।
মাদ্রাসায় গিয়ে এর পরিচালক মাওলানা আফজাল হোসেন কাশেমীকে পাওয়া যায়নি। সিনিয়র শিক্ষক হাফেজ মাওলানা মো. মুসা বলেন, ‘অন্যান্য কওমি মাদ্রাসার মতোই এর শিক্ষাক্রম। মক্তব, হেফজ, জামাত ও মাওলানা বিভাগ রয়েছে। শিক্ষার্থীদের বেতন মানুষের সাহায্য থেকে আসা অর্থ দিয়েই চলে।’
ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও এই মাদ্রাসায় বর্তমানে আবাসিক ও অনাবাসিক মিলিয়ে ৬১ জন শিক্ষার্থী রয়েছে।
স্থানীয় শিক্ষার্থীরা খুব একটা পড়ে না এই মাদ্রাসায়। ভর্তি হন দূর দূরান্ত থেকে আসা শিক্ষার্থীরা।
আরও পড়ুন:বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেছেন, ‘আন্দোলন-সংগ্রাম অনেক হয়েছে, ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হয়েছে। এখন আমাদের পড়ার টেবিলে ফিরে যেতে হবে এবং পড়ার প্রতি মনোযোগ দিতে হবে।’
রোববার বিকেলে মানিকগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হতাহতদের পরিবারের সদস্য ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
সারজিস আলম বলেন, ‘রাষ্ট্র সংস্কার হচ্ছে এবং রাষ্ট্র কাঠামো গঠন করতে হবে। প্রতিটি সেক্টরে মেধাবীর প্রয়োজন রয়েছে। কারণ দেশের বাইরের মেধাবী লোকজন এসে চাকরি করছে। আর আমাদের দেশের টাকা নিয়ে যাচ্ছে তারা। এতে করে আমাদের রাজস্ব ঘাটতি হচ্ছে। সেই লক্ষ্যে আমাদের কাজ করতে হবে এবং যোগত্যা দিয়ে দেশের জন্য কাজ করতে হবে।’
সারজিস আলম আরো বলেন, একটা সফল অভ্যুত্থান ঘটিয়ে দেশকে স্বৈরাচর মুক্ত করেছি। আমরা যখন রাষ্ট্রকে গঠন করতে যাব, তখন আমাদের মানসম্মত মেধা দরকার। আর সে মেধার জন্য পড়াশোনার বিকল্প নেই। দেশ গঠন করতে হলে প্রতিটি ক্ষেত্রে মেধা সম্পন্ন মানুষ লাগবে।
এই সমন্বয়ক বলেন, ‘এতো প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা রক্ষা করতে না পারলে ইতিহাস আমাদের ক্ষমা করবে না। তবে দেশে আবার কোনো রাজনৈতিক দল স্বৈরাচারী কর্মকাণ্ড করতে চাইলে প্রয়োজনে আবারও আন্দোলনের মাধ্যমে তাদেরকে প্রতিহত করা হবে। তার জন্য আমরা সব সময় প্রস্তুত থাকব।’
এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আবদুল্লা সালেহিন নয়ন, সামিয়া মাসুদ মুমু, মবাশ্বিরু জামান হাসান মৃধা, মেহেরাব হোসেন সিফাত, মুহাম্মদ হৃদয় হোসেন, আদিনা খান. খোন্দকার রায়হা, কাজী ইসমাইল হোসেন রুদ্র ও কাজী জুবায়ের উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বলেছেন, ‘সরকারি ও আধাসরকারি প্রতিষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় কতজনের চাকরি হয়েছে, এর একটি তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে।’
একইসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ না করে যারা মুক্তিযোদ্ধার সনদ নিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। সূত্র: ইউএনবি
ফারুক-ই-আজম বলেন, ‘বিগত আন্দোলনে প্রধান বক্তব্য ছিল মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের কোটা। তাই মুক্তিযোদ্ধা কোটায় কতজনের চাকরি হয়েছে তার একটি তালিকা প্রস্তুত হওয়ার পর পুরো বিষয়টি নিয়ে আমরা আপনাদের সামনে উপস্থাপন করব।’
রোববার সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, ‘যাদের মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি হয়েছে তারা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কি না, ন্যায্যভাবে হয়েছে কি না- বিষয়টি আপনাদের সামনে উপস্থাপন করব। এ বিষয়ে কাজ হচ্ছে। সেখানে বহুবিধ মামলা রয়েছে। তিন হাজার সাত শ’র মতো মামলা পেন্ডিং আছে, রিট করা আছে। সেই মামলাগুলো অ্যাড্রেস করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার মাঝখানে একটা প্রাতিষ্ঠানিক বিষয় রয়েছে, সেটা হচ্ছে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল জামুকা। কারা মুক্তিযোদ্ধা হবে না হবে- সেটা জামুকা নির্ধারণ করে দিত। মন্ত্রণালয় শুধু তাদের নির্ধারিত হওয়া বিষয়টি বাস্তবায়নে যেত।
‘এটার আইনগত বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এছাড়া বহু জায়গা থেকে অভিযোগ আসছে। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা হয়েছে, মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞার ক্ষেত্রেও আপত্তি আছে। এসব বিষয়ে আমরা যখন একটা পর্যায়ে যাব তখন আপনাদের ডেকে জাতিকে জানিয়ে দেয়া হবে।’
মুক্তিযোদ্ধার তালিকা রিভিউ হবে কি না- এ বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘অবশ্যই হবে, যেন মুক্তিযোদ্ধারা তাদের সম্মানটা ফিরে পান। মুক্তিযুদ্ধ তো আমাদের জাতীয় জীবনে অনন্য ঘটনা। আমরা হাসি-মশকরা বা অবহেলা দিয়ে তা নষ্ট করতে পারি না।
‘এরকম গৌরবোজ্জ্বল ও ত্যাগের বীরত্বের মহিমা জাতির কাছে তো আর আসেনি। যারা সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধা তারা ওটাই ফিরে পেতে চান। এটাই তাদের ফিরে পাওয়ার আকুতি।’
ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের চিহ্নিত করতে পারলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কেন নেব না। এটা তো জাতির সঙ্গে প্রতারণা। এটা তো শাস্তিযোগ্য অপরাধ। যারা সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধা তারা এ বিষয়টি নিয়ে অপমানিত বোধ করছেন।’
আরও পড়ুন:অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশ পুনর্গঠন, গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়ন এবং পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা চেয়েছেন।
রোববার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় সফররত উচ্চ পর্যায়ের যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি দলের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি এই সহায়তা চান।
শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের চ্যালেঞ্জগুলো উল্লেখ করে বলেন, তার সরকার দ্রুততার সঙ্গে অর্থনীতি পুনর্গঠন, সংস্কার ও পুনরায় সচল করার পাশাপাশি আর্থিক খাতে সংস্কার এবং বিচার বিভাগ ও পুলিশের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যকর করার উদ্যোগ নিয়েছে।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘বর্তমান সময়টি আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং আমাদের ইতিহাসের এক তাৎপর্যপূর্ণ মুহূর্ত। ছাত্রদের নেতৃত্বে সংগঠিত বিপ্লব বাংলাদেশে নতুন আশা জাগানিয়া যুগের সূচনা করেছে।’
প্রধান উপদেষ্টা যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি দলের কাছে অন্তর্বর্তী সরকারের গৃহীত সংস্কারের রূপরেখা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ভোট কারচুপি প্রতিরোধে নির্বাচন কমিশন সংস্কার এবং বিচার বিভাগ, পুলিশ, জনপ্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশন ও সংবিধান সংশোধনের লক্ষ্যে ছয়টি কমিশন গঠন করেছে।’
স্বৈরাচার সরকারের ঘনিষ্ঠ দুর্নীতিবাজ ব্যক্তিদের দ্বারা আত্মসাৎকৃত ও পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ বলে উল্লেখ করেন তিনি।
অন্তর্বর্তী সরকারকে দুর্নীতির মতো বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে উল্লেখ করে অধ্যাপক ড. ইউনূস বলেন, ‘আমরা দুর্নীতির এক গভীর সমুদ্রে নিমজ্জিত ছিলাম।’
যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব ও অর্থ দপ্তরের আন্তর্জাতিক অর্থায়নবিষয়ক সহকারী আন্ডার সেক্রেটারি ব্রেন্ট নেইম্যানের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি দল অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বের প্রশংসা করে বলেন, ‘ওয়াশিংটন অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়নে সহায়তা করতে পারলে আনন্দিত হবে।’
বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা জানান, ড. ইউনূস সরকারের বাস্তবায়নাধীন সংস্কার কর্মসূচিতে তারা প্রযুক্তি ও আর্থিক সহায়তা দিতে আগ্রহী।
ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে আর্থিক খাতের সংস্কার, বিনিয়োগ, শ্রম পরিস্থিতি, রোহিঙ্গা সঙ্কট এবং জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগদান উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টার আসন্ন নিউ ইয়র্ক সফর নিয়ে আলোচনা হয়।
ব্রেন্ট নেইম্যানের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলে আরও ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু, যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি ব্রেন্ডন লিঞ্চ এবং ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের পরিচালক জেরড ম্যাসন।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয় সংক্রান্ত বিশেষ দূত ড. লুৎফে সিদ্দিকী, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক (সিনিয়র সচিব) লামিয়া মোরশেদ, পররাষ্ট্র সচিব মো. জসিম উদ্দিন এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:সফররত যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা সম্প্রসারণ, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা গড়ে তোলা এবং মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে। সূত্র: ইউএনবি
ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস এমনটা জানিয়ে বলেছে, ‘আমরা আমাদের অংশীদার বাংলাদেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা সম্প্রসারণ, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা গড়ে তোলা, মানবাধিকার সমুন্নত রাখা এবং জলবায়ু ঝুঁকি কমিয়ে আনতে সহায়তা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন ও সফররত প্রতিনিধি দলের মধ্যে বৈঠক শেষে রোববার দূতাবাস তাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে এ কথা জানায়।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন সে দেশের ট্রেজারি বিভাগের আন্তর্জাতিক অর্থবিষয়ক সহকারী সচিব ব্রেন্ট নেইম্যান এবং যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক ব্যুরোর সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু।
পদ্মা হাউসে পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টিকে দারুণ বলে উল্লেখ করেছে দূতাবাস।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্র সচিবের দেয়া একটি ওয়ার্কিং লাঞ্চে যোগ দেয়ার কথা রয়েছে।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র বলেছিলেন, সাক্ষাৎকালে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, আর্থিক স্থিতিশীলতা এবং উন্নয়ন অগ্রাধিকারে অবদান রাখতে পারে তা নিয়ে আলোচনা করা হবে।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশের জনগণের কল্যাণে অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, প্রাতিষ্ঠানিক গঠন ও উন্নয়নে সহযোগিতার কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় রোববার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে এ কথা বলেন সফররত প্রতিনিধি দল। সাক্ষাতে পারস্পরিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন তারা।
সাক্ষাৎ শেষে ঢাকার যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস বলেছে, ‘প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বাংলাদেশের জনগণের কল্যাণে অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, প্রাতিষ্ঠানিক গঠন ও উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার ইচ্ছার কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে আমাদের প্রতিনিধি দল।’
দূতাবাসের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, ‘যেহেতু বাংলাদেশ আরও ন্যায়সঙ্গত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ভবিষ্যতের রূপরেখা খুঁজছে, তাই যুক্তরাষ্ট্র এই প্রচেষ্টায় সহায়তা করতে প্রস্তুত।’
ভারত সফর শেষে রোববার সকালে ঢাকায় এসে এই সাক্ষাতে অংশ নেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু।
যুক্তরাষ্ট্রের সফররত প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ‘মাল্টি-ডাইমেনশনাল’ আলোচনার অপেক্ষায় রয়েছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে বৈঠকে প্রতিনিধি দলে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগের আন্তর্জাতিক অর্থবিষয়ক সহকারী মন্ত্রী ব্রেন্ট নেইম্যান।
প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী বৈঠকে যোগ দেন।
এছাড়া রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের সঙ্গেও বৈঠক করেন যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা।
দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে আলোচনার জন্য প্রতিনিধি দলটিতে আরও রয়েছেন সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি ব্রেন্ডন লিঞ্চ।
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের সম্মানে মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করেন পররাষ্ট্র সচিব মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন।
গত ৮ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর বাংলাদেশে এটাই প্রথম যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের সফর।
পররাষ্ট্র সচিব মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে কতটা গুরুত্ব দেয় এই সফর তারই বড় প্রতিফলন। এ থেকে বোঝা যায় যে, এই আলোচনা হবে বহুমাত্রিক। এটি শুধু একটি বিষয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না।’
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে সহায়তা করতে পারে তা নিয়ে দুই দেশের প্রতিনিধিরা আলোচনা করেছেন।
আরও পড়ুন:কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলে আরও একজনের মরদেহ ভেসে এসেছে।
শহরের পশ্চিম কুতুবদিয়াপাড়া সমুদ্র উপকূলে রোরবার সকালে মরদেহটি ভেসে আসে বলে জানান সি সেইফ লাইফগার্ডের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ ওসমান গণি।
তিনি জানান, সকালে একটি মরদেহ ভেসে আসতে দেখে স্থানীয়রা লাইফ গার্ডের কর্মী ও প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের অবহিত করেন। পরে সৈকতের কর্মীসহ লাইফগার্ড কর্মীদের একটি দল মরদেহটি উদ্ধার করে। খবর পেয়ে পুলিশের একটি দল সেখানে পৌঁছে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে। পরে মরদেহটি কক্সবাজার জেলা সদর হাসাপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
তাৎক্ষণিকভাবে মরদেহের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া না গেলেও এটি বঙ্গোপসাগরে ট্রলারসহ নিখোঁজ জেলের বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এর আগে শুক্রবার ও শনিবার বিভিন্ন সময় ৫ জেলের মরদেহ ভেসে এসেছিল।
কক্সবাজার জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন জানান, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কবলে সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া আটটি ফিশিং ট্রলারসহ ৭০ জেলে নিখোঁজ ছিল। এ পর্যন্ত ছয়জনের মরদেহ পাওয়া গেছে। অপরাপর জেলেদের ভাগ্যে কী ঘটেছে, বলা যাচ্ছে না।
আরও পড়ুন:ঢাকা, বরিশাল ও খুলনা বিভাগে নদ-নদীর পানি বাড়তে পারে বলে রোববার জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র (এফএফডব্লিউসি)।
দেশের সব প্রধান নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলেও জানিয়েছে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটি।
সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে এ তথ্য জানানো হয়।
এফএফডব্লিউসির পূর্বাভাসে বলা হয়, ‘ঢাকা, বরিশাল ও খুলনা বিভাগের নদ-নদীর পানি বাড়ছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় একটি স্থল গভীর নিম্নচাপ অবস্থান করছে, যার প্রভাবে আগামী ২৪ ঘণ্টায় উপকূলীয় অঞ্চল ও দেশের মধ্যাঞ্চলে ভারি বৃষ্টিপাতের (৪৪-৮৮ মিলিমিটার/২৪ ঘণ্টা) সম্ভাবনা রয়েছে।’
চট্টগ্রাম বিভাগের ফেনী, সাঙ্গু ও মাতামুহুরী নদীর পানি কমছে এবং মুহুরী, হালদা ও গোমতী নদীর পানির স্তর অপরিবর্তিত ও বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পূর্বাভাসে আরও বলা হয়, সারা দেশ ও উজানে ভারি বর্ষণের প্রবণতা কমে আসায় আগামী ৩ দিন চট্টগ্রাম বিভাগের নদ-নদীর পানির স্তর নেমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়াও ব্রহ্মপুত্র নদের পানিও কমছে এবং যমুনা নদীর পানি অপরিবর্তিত ও বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
আগামী পাঁচ দিন ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ-নদীর পানির স্তর ধীর গতিতে নামতে থাকবে বলে পূর্বাভাসে জানিয়েছে এফএফডব্লিউসি।
অন্যদিকে গঙ্গা নদীর পানি অপরিবর্তিত থাকলেও বাড়ছে পদ্মার পানি, তবে তা বিপৎসীমার নিচ দিয়েই প্রবাহিত হচ্ছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানির স্তর আগামী দুই দিন অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং আরও তিন দিন পানি বাড়ার সম্ভাবনা থাকলেও বিপৎসীমার নিচেই থাকবে।
রংপুর বিভাগের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদ-নদীগুলোতে পানি বাড়েনি, তবে আগামী তিন দিন পানি ধীরগতিতে কমতে পারে।
সিলেট বিভাগের সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি কমছে এবং মনু ও খোয়াইয়ের পানির স্তর অপরিবর্তিত ও বিপৎসীমার নিচে রয়েছে।
আগামী তিন দিন সিলেট বিভাগের প্রধান নদ-নদীর পানি কমার সম্ভাবনা রয়েছে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য