নারায়ণগঞ্জ শহরে হকার উচ্ছেদ দিয়ে মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী ও সংসদ সদস্য শামীম ওসমান সমর্থকদের মধ্যে আলোচিত সংঘর্ষের ঘটনায় শেষ পর্যন্ত কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
দুই পক্ষের সংঘর্ষে আইভীসহ অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হওয়ার পর যে দুটি মামলা হয়েছিল, তার একটিতে কাউকে শনাক্ত করতে না পেরে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে পুলিশ। অন্য একটি মামলার তদন্ত এখনও শেষ করা যায়নি।
ওই সংঘর্ষের সময় অস্ত্র হাতে যুবলীগ নেতার যে ছবি এসেছিল গণমাধ্যমে, সেটির লাইসেন্সের মেয়াদ পার হয়ে গিয়েছিল। সংঘর্ষে সে অস্ত্র ব্যবহারের ঘটনায় তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কে ফুটপাতে হকার বসানোকে কেন্দ্র করে আইভী ও শামীম সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
এ ঘটনায় জেলা প্রশাসন যে তদন্ত কমিটি করেছিল, সেটির প্রতিবেদন আর জমা দেয়াই হয়নি। অথচ সরকারের ঘোষণা ছিল, প্রতিবেদন দেখে ব্যবস্থা নেয়ার।
তখন জেলা প্রশাসন তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল। দফায় দফায় সময় বাড়ানোর হয় প্রতিবেদন জমা দেয়ার। পরে এক সময় কমিটির কর্মকর্তারা বদলি হয়ে যান অন্য জেলায়।
পাল্টাপাল্টি অভিযোগ ও মামলা
ঘটনার পরদিন ১৭ জানুয়ারি মেয়র আইভীর ভাই ও সমর্থকসহ ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় অস্ত্র ছিনতাই ও হত্যাচেষ্টার লিখিত অভিযোগ দেন যুবলীগ নেতা নিয়াজুল ইসলাম, যার হাতে অস্ত্রসহ ছবি প্রকাশ হয় গণমাধ্যমে।
অন্যদিকে আইভীকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এনে ২২ জানুয়ারি নিয়াজুলসহ ৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও এক হাজার জনকে আসামি করে থানায় অভিযোগ দেন সিটি করপোরেশনের আইন কর্মকর্তা জিএম সাত্তার।
তবে পুলিশ অভিযোগ দুটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হিসেবে রেকর্ড করে। ২২ মাস ১৮ দিন পর ২০১৯ সালের ৪ ডিসেম্বর উচ্চ আদালতের নির্দেশে সদর মডেল থানায় দেয়া অভিযোগটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়।
মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা, জখম, নাশকতা, ভাঙচুরসহ অরাজকতার অভিযোগ আনা হয়।
আরও এক মাস পর পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশে তদন্তে নামে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের উপপরিদর্শক (এসআই) টিপু সুলতান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তদন্ত চলছে। ঘটনার সময়ের বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে প্রত্যক্ষদর্শী, ঘটনার সাক্ষী ও আহত ব্যক্তিদের সাক্ষ্য নেয়া হচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে আদালতে মামলার অভিযোগপত্র জমা দেয়া হবে।’
মামলার আসামি নয় জন। তারা হলেন অস্ত্র প্রদর্শনকারী নিয়াজুল ইসলাম খান, নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজাম, সাংগঠনিক সম্পাদক জাকিরুল আলম হেলাল, মহানগর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন সাজনু, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি জুয়েল হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা জানে আলম বিপ্লব, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান সুজন, যুবলীগকর্মী নাসির উদ্দিন ওরফে টুন্ডা নাসির, যুবলীগ নেতা চঞ্চল মাহমুদ।
আইভীর পক্ষে মামলার কয়েক দিন পর এক অনুষ্ঠানে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান বলেন, ‘এই মামলায় আমার কোনো কর্মীকে গ্রেফতার বা হয়রানি করা হলে নারায়ণগঞ্জ অশান্ত হয়ে উঠবে।’
অভিযুক্তদের গ্রেফতার নিয়ে নারায়ণগঞ্জ পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আইভীকে হত্যার চেষ্টার মামলাটির তদন্ত চলছে। তদন্তে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হবে তাদের গ্রেফতার করা হবে।’
মেয়র আইভীর ওপর হামলার মামলার বাদী নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত আইন কর্মকর্তা জি এম এ সাত্তার বলেন, ‘সাংসদ শামীম ওসমানের ইন্ধনে ও প্রচারণাতেই মেয়র আইভীর ওপর হামলার ঘটনা ঘটে এবং তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়।’
সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সড়কে প্রকাশ্যে মেয়রের ওপর অস্ত্রসহ হামলা করেছে নিয়াজুলসহ আরও অনেকে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংঘর্ষের ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে।
‘কিন্তু পুলিশ ঘটনার সাথে জড়িতদের পায় না। প্রশাসন অপরাধীদের আড়াল করতে চায়। এতে অপরাধীরা আরও উৎসাহিত হয়ে উঠছে।’
তবে শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ নিজাম পুলিশের ভূমিকায় খুশি। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘পুলিশ তাদের তদন্তে সত্য প্রকাশ করেছে। তবে মেয়র আইভী অন্য কাউকে দেখানোর জন্য তার কর্মকর্তাকে দিয়ে আমাদের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নামে আরেকটি মামলা করেছে, যা শামীম ওসমানকে উদ্দেশ্য করে। আশা করি, সেটিতেও পুলিশ ফাইনাল রিপোর্ট দেবে।’
পুলিশের মামলায় কেউ শনাক্ত হয়নি
মেয়র আইভী ও সাংসদ শামীম ওসমান সমর্থকদের সংঘর্ষের ঘটনার আট দিন পর ২৪ জানুয়ারি রাতে আরেকটি মামলা করেছিলেন নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) জয়নাল আবেদীন।
ওই মামলায় পুলিশের কাজে বাধা ও হামলার অভিযোগ এনে অজ্ঞাত ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করা হয়।
মামলার তদন্ত করেন পুলিশ পরিদর্শক মিজানুর রহমান। সদর থানার রেজিস্ট্রারে দেখা যায়, ২০১৯ সালের ২৯ আগস্ট তিনি আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন (এফআরটি) দাখিল করেছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, ঘটনা সত্য। তবে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।
২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর মামলাটি নিষ্পত্তি করা হয়েছে বলে উল্লেখ রয়েছে রেজিস্ট্রারে।
পিস্তলধারী নিয়াজুল ধরাছোঁয়ার বাইরে
চাষাড়ায় সেই সংঘর্ষে মেয়র আইভী ও তার সমর্থকদের ওপর হামলার সময় পিস্তল উঁচিয়ে ধরেছিলেন যুবলীগের নেতা নিয়াজুল ইসলাম খান। ঘটনার পরদিন সন্ধ্যায় সেই পিস্তলটি পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে হেফাজতে নেয় পুলিশ।
২০১৯ সালের জানুয়ারির শুরুতে ওই পিস্তলের লাইসেন্স নবায়নের জন্য আবেদন করেন নিয়াজুল। ২২ জানুয়ারি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাব্বী মিয়া স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে নিয়াজুলের পিস্তলের লাইসেন্স নবায়নের বিষয়ে আইনি মতামত জানতে চাওয়া হয়। পরে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানা ও ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়।
তদন্তে বলা হয়, নিয়াজুল ইসলামের অস্ত্র নবায়ন করা হলে যেকোনো সময় লাইসেন্সধারী অস্ত্র দিয়ে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে। আগ্নেয়াস্ত্র শাখা থেকে ইস্যু করা পিস্তলটি ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত নবায়ন করা ছিল।
পুলিশের মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নারায়ণগঞ্জ সদর থানার সাবেক পরির্দশক (বর্তমান ঝিনাইদহ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) মিজানুর রহমান বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করব না।’
পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ওই ঘটনার সময় আমি এই জেলায় ছিলাম না। পুলিশ দেয়া প্রতিবেদনের সময়ও ছিলাম না। তবে যদি তদন্তে কারও গাফলতি থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
কেউ মেনে নেবে না: আইভী
তার করা মামলার তদন্তে বিলম্ব আর পুলিশের নিজের মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়ায় ক্ষুব্ধ মেয়র আইভী।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘ওই দিনের ঘটনা সারা দেশের মানুষ দেখেছে। কারা কারো জড়িত তাদের ছবি, ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
‘পুলিশ জড়িতদের খুঁজে পায় না, এটা হাস্যকর। পুলিশের মামলায় এই চূড়ান্ত প্রতিবেদন (এফআরটি) নারায়ণগঞ্জের মানুষ মেনে নেবে না।’
এ বিষয়ে শামীম ওসমানের মন্তব্য পাওয়া যায়নি তিনি ফোন না ধরায়। তার ঘনিষ্ঠ একজন নেতা জানান, সংসদ সদস্য বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ নেই।
আরও পড়ুন:পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বর্তমান অবস্থান নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। বর্তমানে তিনি ভারতেই আছেন নাকি অন্য কোনো দেশে পাড়ি জমিয়েছেন সে বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে নিশ্চিত কোনো বার্তা নেই।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মঙ্গলবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এমনটাই জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।
তিনি বলেন, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বর্তমান অবস্থানের বিষয়ে আমরা নিশ্চিত হতে পারিনি। আমরা দিল্লিতেও এ বিষয়ে খোঁজ করেছি। কনফারমেশন (নিশ্চয়তা) কেউ দিতে পারেনি।
‘মিডিয়ায় আপনারা যেমন দেখেছেন, আমরাও দেখেছি যে তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতের আজমানে গেছেন। তবে আমরা কনফার্ম (নিশ্চিত) হতে পারিনি।’
সরকারের পতনের পর ভারতে অবস্থান নেয়া সদ্য ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ট্রাভেল পাস নিয়ে অন্য দেশে পালিয়ে যাচ্ছেন। এমনটা উল্লেখ করে তাদেরকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হলে বাংলাদেশে ফেরার জন্য ট্রাভেল পাস ইস্যু করা হয়ে থাকে। এটা অন্য কোনো দেশে যাওয়ার জন্য নয়।’
যুক্তরাষ্ট্রের চাপের মুখে ভারত শেখ হাসিনাকে অন্য কোনো দেশে পাঠিয়ে দিল কি না- এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকেই জেনে নেয়ার পরামর্শ দেন।
আরও পড়ুন:গুম সংক্রান্ত কমিশনে অভিযোগ দেয়ার সময় আরও সাতদিন বাড়ানো হয়েছে। আগামী ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত গুম সংক্রান্ত কমিশন অফ ইনকোয়ারিতে এ সংক্রান্ত অভিযোগ দেয়া যাবে।
মঙ্গলবার কমিশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এর আগে ১০ অক্টোবর পর্যন্ত অভিযোগ জানানোর সময় বেঁধে দিয়েছিল কমিশন।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময়ের মধ্যে গুমের ঘটনার ভিকটিম নিজে বা পরিবারের কোনো সদস্য বা আত্মীয়-স্বজন বা গুমের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী যে কোনো ব্যক্তি সশরীরে কমিশনের কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত অভিযোগ দায়ের করতে পারবেন। ডাকযোগে বা ই-মেইলেও অভিযোগ জানানো যাবে।
অভিযোগ জানানোর ঠিকানা: গুম সংক্রান্ত কমিশন অফ ইনকোয়ারি, ৯৬, গুলশান অ্যাভিনিউ, ঢাকা-১২১২। ই-মেইল: [email protected]
অন্তর্বর্তী সরকার গত ২৭ আগস্ট এই কমিশন গঠন করে। কমিশন ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে গত ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময়ের মধ্যে আইন-শৃঙ্খলা প্রয়োগকারী সংস্থার মাধ্যমে গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধান, তাদের শনাক্ত এবং কোন পরিস্থিতিতে গুম হয়েছিল তা নির্ধারণ করবে।
কমিশন ‘কমিশন অফ ইনকোয়ারি অ্যাক্ট, ১৯৫৬’ অনুসারে তদন্ত কাজ সম্পন্ন করে তিন মাসের মধ্যে সরকারের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবে।
এই কমিশনের সভাপতি হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী। কমিশনে সদস্য হিসেবে রয়েছেন- হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. ফরিদ আহমেদ শিবলী, মানবাধিকার কর্মী নূর খান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নাবিলা ইদ্রিস ও মানবাধিকার কর্মী সাজ্জাদ হোসেন।
আরও পড়ুন:বাগেরহাটের রামপাল কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের দূষণ সীমার মধ্যে রয়েছে কি না, সরকার তা নিরপেক্ষভাবে মূল্যায়নের কাজ শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
সচিবালয়ে মঙ্গলবার ‘সুন্দরবন বাঘ জরিপ-২০২৪’-এর ফল ঘোষণা উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা এ কথা জানান।
তিনি বলেন, ‘রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য সুন্দরবনের হুমকি বাস্তবতা থেকে সরে যায়নি। এটা নিয়ে ইউনেসকোর কাছে একটা স্ট্র্যাটেজিক এনভায়রনমেন্ট অ্যাসেসমেন্ট বিগত সরকার জমা দিয়েছে। সেখানে ইউনেসকো আপত্তি দিয়েছে। যে এলাকাটা চিহ্নিত করা হয়েছে, সেখানে রক্ষিত এলাকাটা অনেকাংশেই বাদ দিয়েছে।
‘এখন সেই অ্যাসেসমেন্ট আবার নতুন করে ইউনেসকোর অবজারভেশনের আলোকে আমাদের দেখতে হচ্ছে, যাতে সুন্দরবনের পুরো এলাকা থেকে কোনো রক্ষিত জায়গা বাদ না দিই।’
উপদেষ্টা বলেন, ‘হয়তো বিগত সরকার ঝুঁকি কম দেখাতে পুরো রক্ষিত এলাকাকে কম দেখিয়ে অন্য জায়গা বেশি দেখিয়েছে। আর জাতীয় পর্যায়ে যে কাজ করা হচ্ছে, সেটা হচ্ছে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে যে দূষিত বায়ু বা ধোঁয়া বের হওয়ার ফলে বায়ুদূষণ হচ্ছে, সেটা আমরা নিরপেক্ষভাবে মনিটর করার চেষ্টা করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘সবসময় তো আমরা মনিটর করে বলে দিই, ধলেশ্বরীর পানি পরিষ্কার, ট্যানারি নোংরা করেনি; রামপালের বাতাস খুব পরিষ্কার, সুন্দরবনের ক্ষতি হবে না, কিন্তু সেখানে যারা থাকে তারা কিছু অসুবিধার কথা বলছেন।
‘ফলে যে নিঃসরণটা হচ্ছে, সেটা আসলে আইনের সীমার মধ্যে আছে কি না, সেটা দেখতে হবে। এ জন্য আমরা একটা নিরপেক্ষ অ্যাসেসমেন্টের কাজ শুরু করেছি।’
রিজওয়ানা বলেন, ‘শুধু সুন্দরবন নয়, শালবন বাঁচানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। ৪১ হাজার একর শালবন ছিল। সেটা কমতে কমতে এখন ২০ হাজার একরে চলে এসেছে।
‘আমার চেষ্টা থাকবে আমি কতটুকু বাড়াতে পারি। সেখানে আপনাদের সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।’
আরও পড়ুন:দুর্গাপূজার ছুটি এক দিন বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম।
এ বিষয়ে মঙ্গলবারের মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি করে বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) ছুটি ঘোষণা করা হবে বলে জানান তিনি।
রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দিরে পূজা উদযাপন পরিষদের নেতাদের সঙ্গে মঙ্গলবার মতবিনিময়ের পর প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ তথ্য জানান।
মাহফুজ বলেন, ‘হিন্দু সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে নিরাপত্তাহীনতা নিয়ে যেসব অভিযোগ করা হয়েছে, সেগুলোর বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে আর্থিক সহায়তা দেয়া হবে।’
বৌদ্ধ সম্প্রদায় যেন কঠিন চীবরদান অনুষ্ঠান নির্বিঘ্নে করতে পারে, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলেও জানান মাহফুজ আলম।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম ও প্রেস সচিব শফিকুল আলমসহ প্রেস উইংয়ের কর্মকর্তারা মঙ্গলবার সকালে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির পরিদর্শন করেন।
আরও পড়ুন:সুন্দরবনে ২০২৩-২৪ সালের জরিপে ১২৫টি বাঘ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে মঙ্গলবার প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান তিনি।
ব্রিফিংয়ে উপদেষ্টা জানান, ২০২৩-২৪ সালে সুন্দরবনের জাতীয় পশু বাঘ জরিপে ১২৫টি বাঘ পাওয়া গেছে। প্রতি ১০০ বর্গকিলোমিটারে বাঘের ঘনত্ব ২.৬৪।
তিনি জানান, ২০১৮ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে বাঘের সংখ্যা বেড়েছে ১১টি। বৃদ্ধির এ হার ৯.৬৫ শতাংশ। ২০১৫ সালের তুলনায় বৃদ্ধির হার ১৭.৯২ শতাংশ।
রিজওয়ানা জানান, ২০১৫ সালে সুন্দরবনে ১০৬টি বাঘ ছিল। আর ঘনত্ব ছিল ২.১৭। ২০১৮ সালে ১১৪টি বাঘ পাওয়া যায়। আর ঘনত্ব ছিল ২.৫৫। ২০১৮ সালে বাঘের সংখ্যা আটটি বেড়েছিল এবং বৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ৮ শতাংশ।
তিনি আরও জানান, ২০২৩-২৪ সালের জরিপে ২১টি বাঘ শাবকের ছবি পাওয়া গেছে, তবে শাবকদের সংখ্যা অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। কারণ ছোট বয়সে শাবকের মৃত্যুর হার অনেক বেশি। ২০১৫ ও ২০১৮ সালে মাত্র পাঁচটি শাবকের ছবি পাওয়া গিয়েছিল।
পরিবেশ উপদেষ্টা জানান, জরিপের ছবি ও তথ্য বিশ্লেষণ করে বাঘের সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়। এ কাজে ভারত, নিউজিল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষজ্ঞদের মতামতও নেয়া হয়।
ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, জরিপটি ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে শুরু হয়ে ২০২৪ সালের মার্চে শেষ হয়। সুন্দরবনের ৬০৫টি গ্রিডে ১ হাজার ২১০টি ক্যামেরা ৩১৮ দিন রেখে দেয়া হয়, যার মধ্যে ৩৬৮টি গ্রিডে বাঘের ছবি পাওয়া যায়।
ব্রিফিংয়ে উল্লেখ করা হয়, ১০ লক্ষাধিক ছবি ও ভিডিও থেকে সাত হাজার ২৯৭টি বাঘের ছবি পাওয়া যায়। এত বেশিসংখ্যক বাঘের ছবি এর আগে পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন:নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর বাজার পরিস্থিতি ও সরবরাহ চেইন তদারক এবং পর্যালোচনার জন্য জেলা পর্যায়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে আহ্বায়ক করে ৯ সদস্যবিশিষ্ট ‘বিশেষ টাস্কফোর্স’ গঠন করেছে সরকার।
সোমবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দ্রব্যমূল্য পর্যালোচনা ও পূর্বাভাস সেলের সিনিয়র সহকারী সচিব মো. মেহদি হাসান স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়।
বিশেষ টাস্কফোর্সে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালককে সদস্য সচিব করা হয়েছে।
কমিটির সদস্য হিসেবে রয়েছেন- অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক বা উপযুক্ত প্রতিনিধি, জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বা উপযুক্ত প্রতিনিধি, জেলা মৎস্যসম্পদ কর্মকর্তা বা উপযুক্ত প্রতিনিধি, কৃষি বিপণন কর্মকর্তা বা সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা, ক্যাবের প্রতিনিধি এবং শিক্ষার্থী প্রতিনিধি দু’জন।
টাস্কফোর্স প্রয়োজনে সদস্য কো-অপ্ট করতে পারবে।
টাস্কফোর্সের কার্যপরিধি
টাস্কফোর্স নিয়মিত বিভিন্ন বাজার/বৃহৎ আড়ত/গোডাউন/কোল্ড স্টোরেজ ও সাপ্লাই চেইনের অন্যান্য স্থান সরেজমিনে পরিদর্শন করবে এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য যৌক্তিক পর্যায়ে রাখার বিষয়টি তদারক করবে।
টাস্কফোর্স উৎপাদন, পাইকারি ও ভোক্তা পর্যায়ের মধ্য দামের পার্থক্য ন্যূনতম থাকা নিশ্চিত করবে। সব স্টেক হোল্ডাররের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করবে।
টাস্কফোর্স প্রতিদিনের মনিটরিং শেষে প্রতিবেদন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দ্রব্যমূল্য পর্যালোচনা ও পূর্বাভাস সেল হোয়াটসঅ্যাপ (০১৯১২৯৩০৫৯২), ই-মেইল [email protected] জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষে (০১৭১১৩৭৩৮০২ নম্বরে (হোয়াটসঅ্যাপ) ও ই-মেইল [email protected] ঠিকানায় প্রেরণ করবে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার রক্ষণ অধিদপ্তর বিভিন্ন জেলা থেকে প্রাপ্ত প্রতিবেদন সংকলন ও পর্যালোচনা করে প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠাবে।
আরও পড়ুন:সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সঙ্গে পরামর্শের ভিত্তিতে গঠিত হবে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন। আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিকভাবে গণমাধ্যম-সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করা হচ্ছে।
তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘সংবাদমাধ্যমের সংস্কার: কেন, কীভাবে?’ শীর্ষক মুক্ত আলোচনায় এসব কথা বলেন।
সাংবাদিকদের ওয়েজবোর্ডসহ বেতনের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, ‘সাংবাদিকদের সঙ্গে দাসসুলভ আচরণের সুযোগ নেই। আর সাংবাদিকরা কেন পেশাদারত্বের সঙ্গে কাজ করতে পারেন না, সেসব বিষয় পর্যালোচনা করা হচ্ছে।’
দেশে গণমাধ্যম সক্ষমতা গড়ে ওঠেনি উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশের গণমাধ্যমে পেশাদারত্বের সংস্কৃতি অনুপস্থিত। অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে ঐকমত্যের ভিত্তিতে এ বিষয়ে কাজ করা হবে। এ ক্ষেত্রে সাংবাদিক সংগঠনগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।’
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের প্রসঙ্গ টেনে উপদেষ্টা বলেন, ‘এই অভ্যুত্থান গণমাধ্যমের জন্য বড় কেস স্টাডি। এই অভ্যুত্থানে গণমাধ্যমের কী ভূমিকা ছিল তা নিবিড়ভাবে পর্যালোচনা করতে হবে।
‘আন্দোলনের সময় মাঠ পর্যায়ে অনেক সাংবাদিক সংবাদ সংগ্রহ করলেও মিডিয়া হাউজ পলিসির কারণে সেসব সংবাদ প্রকাশ করেনি। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া আন্দোলনের পক্ষে কোনো তথ্যই প্রচার করেনি। এই অভ্যুত্থানে সাংবাদিকদের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিরোধও দেখা যায়নি।’
মুক্ত গণমাধ্যমের জন্য সাংবাদিকদের পেশাদারত্ব গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সামনের দিনগুলোতে সাংবাদিকদের পেশাদারত্ব নিশ্চিত করার পাশাপাশি তরুণদের এই পেশায় আগ্রহী করে তুলতে হবে।’
তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা এ সময় রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে সংস্কারের বিষয়েও গুরুত্বারোপ করেন।
মুক্ত আলোচনায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, প্রেস ইনস্টিটিউট অফ বাংলাদেশের মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ড. সাইফুল আলম চৌধুরী প্রমুখ।
মিডিয়া সাপোর্ট নেটওয়ার্কের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন সাংবাদিক জিমি আমির। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য