বাজারে আছে চিকন, মোটা দুই ধরনের চাল। আগের দিনে মোটা চালের ভাতের কদর ছিল মধ্যবিত্তের ঘরে। তবে দিন বদলে মোটার জায়গা দখল করে নিচ্ছে চিকন চাল।
অটোমেটিক মেশিনের চাল দেখতে সুন্দর সরু-ঝরঝরে, না বেছেই সহজে চড়িয়ে দেয়া যায় চুলায়। আর হাসকিং মিলের চাল মোটা, গায়ে খানিকটা লালচে আথবা কালো আভা। থাকতে পারে কাকরের মিশেলও।
বিশেষজ্ঞদের মত, চালের উপরিভাগের আবরণেই প্রোটিন, ভিটামিন ও মিনারেল বেশি থাকে। আর পুরো চালেই থাকে কার্বোহাইড্রেট। চাল সরু করতে উপরের আবরণ তুলে ফেলায় হারিয়ে যায় প্রোটিন, ভিটামিন ও মিনারেল।
প্রচলিত আছে, মোটা চাল মেশিনে কেটে তৈরি করা হয় সরু চাল। সেটা কতটা ঠিক- জানার চেষ্টা করেছে নিউজবাংলা। কুষ্টিয়ার মিল মালিক, পাইকারি বিক্রেতা ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে চালের নানান রকমফের।
কুষ্টিয়ার খাজানগরে রয়েছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চালের মোকাম (উৎপাদন ও পাইকারি বিক্রয়কেন্দ্র)। এখানে প্রায় দুই হাজার চাতাল (ধান সিদ্ধ করে শুকিয়ে প্রস্তুত করা হয় যেখানে) রয়েছে। আর হাসকিং মিল (ধান ভাঙানোর ছোট মিল) আছে পাঁচ শতাধিক। বড় অটো রাইস মিল রয়েছে ৩৩টি। এখান থেকে প্রতিদিন গড়ে তিন শ’ ট্রাক চাল সরবরাহ হয় সারাদেশে।
খাজানগরে নিজের চালকলে কথা হয় বাংলাদেশ অটো রাইস মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের কুষ্টিয়া জেলা সাধারণ সম্পাদক ও ফোর স্টার রাইস মিলের মালিক মো. মফিজুল ইসলামের সঙ্গে।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মানুষের মধ্যে ধারণা রয়েছে মোটা চাল কেটে ছোট করা হয়। আমরা মিডিয়াতেও তেমনি দেখি। কিন্তু আমার জানামতে এমন কোনো মেশিন নেই যাতে মোটা চাল কেটে চিকন করা যায় বা চিকন চাল কেটে আরো সরু করা হয়।’
মফিজুল ইসলাম বলছেন, ‘ময়লা কাপড় পরিষ্কার করলে যেমন পাতলা মনে হয়, তেমনি চাল পলিশ মেশিনে দিলে জামার মতোই পাতলা হয়। একসময়ে ঢেকিছাঁটা চাল খেত মানুষ। সেই চালেও ওপর ময়লাজাতীয় একটা বাদামি আবরণ থাকত। এরপরে এলো হাসকিং মিল। এতে চাল পরিষ্কার হতো। এই চালটি অটোমেটিক কালার সর্টার মেশিনে দিলে আরো পরিষ্কার হয় ও পাতলা হয়ে যায়। চালটি দেখতে বেশ চকচক হয়। এই চাল দেখেই মানুষ ধারণা করে চাল কেটে সরু করা হয়েছে।’
মফিজুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আগে ঢেকিছাঁটা চালে ভাত রান্নার সময় মাড় হতো। এখন হয় না, কারণ যা থেকে মাড় হবে সগুলো পলিশ মেশিনে বের হয়ে যাচ্ছে। গুড়া আকারের এই অবশেষ থেকে এখন তৈরি হয় রাইস ব্র্যান্ড অয়েল। এ দিয়ে মাছ ও গবাদি পশুর খাবারও তৈরি হচ্ছে।’
মিল মালিক হলেও চালের উপরের আবরণ তুলে ফেলা একদম পছন্দ নয় মফিজুলের। তিনি মনে করেন, এতে চালের ভিটামিন বের হয়ে যাচ্ছে। মানুষ পুষ্টির পরিবর্তে এখন চালের চেহারাকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে- এমন আক্ষেপও আছে তার।
খাজানগরে কুমিল্লা হাসকিং মিলের মালিক মো. হান্নান হাতেকলমে দেখালেন চালের চেহারা বদলের পদ্ধতি।
মিল থেকে সাধারণভাবে ভাঙানো চাল বের করে হাতের ওপরে রেখে বৃদ্ধাঙুলি চাপ দিতেই অনেকটা পরিষ্কার ও চেকনাই চেহারা পেল সেই চাল। হান্নান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মেশিনে এভাবে নিখুঁতভাবে চাল পরিষ্কার করে পলিশ করা হয়।’
চাল পলিশ করার কৌশল দেখাতে হান্নান নিয়ে যান পাশের একটি অটোমেটিক কালার সর্টার মেশিনের কাছে।
একেকটি মেশিন মানে বিশাল কারখানা। মেঝেতে নির্দিষ্ট জায়গায় ঢালা হচ্ছে সাধারণ চাল। তা মেশিনের সাহায্যে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে প্রায় চার তলা উপরে। সেখানে পানি মিশিয়ে চাপ এবং তাপ দিয়ে চালের উপরিভাগের আবরণ তুলে ফেলা হচ্ছে। এরপর ওই চাল যাচ্ছে অটোমেটিক কালার সর্টার মেশিনে।
একেকটি মেশিনে সেট করা আছে অর্ধশতাধিক ক্যামেরা। কম্পিউটারাইজড সেই ক্যামেরা বাছাই করছে বিভিন্ন রঙের চাল, যেগুলো বের হচ্ছে আলাদা আলাদা পথে। কোনো পথ দিয়ে বের হচ্ছে কালো-বিবর্ণ চাল, কোনোটিতে কাকরের টুকরো। আবার গুড়ো বা চালের ভাঙা অংশ বের হয় আরেকটি পথ দিয়ে। একটি পথে বের হচ্ছে সরু চকচকে চাল।
হান্নান জানান, চাল আগে পরিষ্কার চকচকে করা না হলে কালার সর্টার মেশিন ভালোভাবে শনাক্ত করতে পারে না। তাই আগে মেশিনে চাপ দিয়ে সেটাকে পলিশ করা হয়। এভাবে চিকন হয়ে যায় চাল। আলাদা করে কেটে চিকন করার কোনো মেশিন নেই।
রোজ এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. রফিকুল ইসলামও বলছেন, চাল কেটে সরু করার ধারণা ভিত্তিহীন।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘চালে কালো দানা, মাছি (যেসব চালের এক অংশ সাদা, অন্য পাশ মাছির মতো কালো), খুদ (চালের খণ্ডিত অংশ) থাকলে সেটা এখন আর কেউ কিনতে চান না। তাই আমাদের অটোমেটিক মেশিনে বাছাই করতে হয়। এতে চালের উপরের আবরণ উঠে যায়।’
রফিকুল বলেন, ‘অটোমেটিক ড্রায়ার রাইস মিলে একবারে ধান দিয়ে দেয়া হয়। সেগুলো সিদ্ধ হয়ে কালার সর্টার মেশিনের মধ্য দিয়ে ঝকঝকে চাল বের হয়ে আসে। আবার হাসকিং মিলের চালও কালার সর্টারে দিয়ে চকচকে করা হচ্ছে।’
চাল দেখে বোঝার উপায় বাতলে দিয়ে তিনি বলেন, ‘হাসকিং চালের মধ্যে তিন প্রকারের ময়লা (আবরণযুক্ত) চাল থাকে। মাছি থাকে, লালচে থাকে, পাথর ও কাটা দানা থাকে। আর অটোর চাল একবারে চকচকে। এসব কিছুই থাকবে না।’
মিল মালিক ছাড়াও নিউজবাংলা কথা বলেছে চালের পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে।
কুষ্টিয়া শহরের বড়বাজারের মেসার্স বাঁধন ট্রেডার্সের মালিক আব্দুল হামিদের বলেন, ‘আমাদের কাছে সব ধরনের চালই আসে, তবে অটো ড্রায়ার মেশিনের চালের চাহিদা বেশি। অটো মিলের চাল সাধারণত পিচ্ছিল এবং সফট্ হয়। ক্রিম কালারের হয়। আর হাসকিং মিলের চাল সাদা বর্ণের, হাতে নিলে একটু রুক্ষ মনে হয়।’
বাজারের প্রবীণ ব্যবসায়ী শিব বাবু ৩৮ বছর ধরে চালের ব্যবসা করছেন। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অটো মেশিনের পলিশ চাল যেটা সাধারণত মিনিকেট নামে বিক্রি হয়, সেটা দেখতে চকচকে-ঝকঝকে। এটা ইচ্ছা করলে ক্রিম কালার করা যায়, আবার সাদাও করা যায়। মেশিনে যেমন কমান্ড দেবেন তেমনি চাল বের হবে।’
অটোমিলের চালের দিকেই এখন ক্রেতার ঝোঁক বেশি বলে জানালেন শিব বাবুও। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘কেউই এখন আর বাড়িতে নিয়ে চাল ঝেড়ে বা বেছে ভাত রাঁধতে চান না। কিন্তু অ-বাছাই হাসকিং মিলের চালের ভাত সুস্বাদু, মিষ্টি হয়ে থাকে।’
কোন চালের পুষ্টিগুণ কেমন- জানতে নিউজবাংলা কথা বলেছে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাপ্লাইড নিউট্রিশন অ্যান্ড ফুড টেকনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মো. আবুল কাশেম তালুকদারের সঙ্গে।
তিনি বলেন, ‘চালের উপরিভাগের আবরণে কার্বোইড্রেটের সঙ্গে প্রোটিন, ভিটামিন ও মিনারেল থাকে। এই আবরণ ছেঁটে ফেললে শুধু কার্বোহাইড্রেটই পাওয়া যাবে, বাকি পুষ্টি থাকবে না।’
বাজার থেকে জনপ্রিয় আটটি ব্র্যান্ডের মিনিকেট নামের চালের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করেছেন আবুল কাশেম তালুকদার। জানালেন, ‘স্বাভাবিক চাল থেকে ফ্যাট ও ভিটামিন বি-২সহ যেসব খাদ্য ক্যালোরি পাওয়ার কথা, বাজারে বিক্রি হওয়া মিনিকেটে তার কিছুই নেই।’
তিনি বলেন, ‘তিন দশক আগেও ঢেকিছাঁটা চালের সঙ্গে হাসকিং মিলের চালের তুলনা করা হতো। তখনই ঢেকিছাঁটা চাল অর্থাৎ বাদামি আবরণের চাল খাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী করা হতো। এখন চাল ছেটে ছোট করা হচ্ছে। এগুলো খেয়ে আমরা অনেক পুষ্টি উপাদান হারাচ্ছি।’
মিনিকেট নিয়ে বিভ্রান্তি
বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মিনিকেট চালের দেখা মিললেও সরকারের হিসেবে, দেশে মিনিকেট ধানের কোনো আবাদ নেই। মোটা চাল মেশিনে চিকন করে মিনিকেট নামে বিক্রি করছেন মিল মালিকেরা। তবে চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশে মিনিকেট জাতের ধানের আবাদ হয়।
চালের উৎস ও ধানের জাত নির্ণয়ের জন্য ২১টি জেলায় সমীক্ষা চালানোর ঘোষণা দিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়।
এই তালিকায় আছে যশোর, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, বগুড়া, নওগাঁ, সিলেট, সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, কুড়ি়গ্রাম, গাইবান্ধা, রংপুর, শেরপুর, ময়মনসিংহ, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, জামালপুর, টাঙ্গাইল, কুমিল্লা, নোয়াখালী, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা।
এসব জেলা থেকে তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের চাল কোন কোন জাতের ধান থেকে তৈরি করা হচ্ছে- তা চিহ্নিত করা হবে। মাসখানেক আগে নেয়া এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করার দায়িত্ব পেয়েছেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা ও পরিধারণ ইউনিটের (এফপিএমইউ) ১৩ জন কর্মকর্তা।
কুষ্টিয়ার মিল মালিকদের দাবি, কিছু ক্ষেত্রে মোটা চাল পলিশ করে মিনিকেট হিসেবে বাজারজাত করার ঘটনা ঘটছে। তবে দেশে মিনিকেটের প্রচুর আবাদও হচ্ছে। এই ধান থেকে পাওয়া চাল বাজারজাত করছেন মিল মালিকেরা।
ফোর স্টার রাইস মিলের মালিক মো. মফিজুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘১৯৯২ সালে প্রথম ভারত থেকে মিনিকেট জাতের ধান বাংলাদেশে আসে। সরকারি খাতা-কলমে হিসাব না থাকলেও এখন দেশে মিনিকেটের বিপুল আবাদ হচ্ছে।’
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন কমান্ডার আরাফাত ইসলাম।
বাহিনীটি বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানায়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘কমান্ডার আরাফাত ইসলাম, (এনডি), বিপিএম (সেবা), এনইউপি, পিসিজিএম, বিএন অদ্য ২৪ এপ্রিল, ২০২৪ তারিখে লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। তিনি কমান্ডার খন্দকার আল মঈন (সি), বিপিএম (বার), পিএসসি, বিএনের স্থলাভিষিক্ত হলেন।
‘কমান্ডার আরাফাত ইসলাম বাংলাদেশ নৌবাহিনীর একজন চৌকস অফিসার। তিনি ১৯৯৫ সালে ৩৫তম বিএমএ লং কোর্সের সাথে বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে অফিসার ক্যাডেট হিসেবে যোগদান করেন এবং ১৯৯৭ সালের ১ জুলাই এক্সিকিউটিভ ব্রাঞ্চে কমিশন লাভ করেন। তিনি দীর্ঘদিন নৌ বাহিনীতে ছোট ও মাঝারি বিভিন্ন জাহাজের অধিনায়ক হিসেবে অত্যন্ত সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। কমান্ডার আরাফাত ইসলাম দেশ ও বিদেশে নৌবাহিনীর বিভিন্ন অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ওপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।’
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, কমান্ডার আরাফাত ২০২২ সালের ২৬ ডিসেম্বর প্রেষণে র্যাবে যোগ দেন। তিনি ২০২৩ সালের ২০ জানুয়ারি থেকে ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত র্যাব-১৩-এর অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করতে থাইল্যান্ডের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
থাই প্রধানমন্ত্রী স্রেথা থাভিসিনের আমন্ত্রণে ছয় দিনের সরকারি সফরে বুধবার সকালে ব্যাংককের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন তিনি। খবর বাসসের
প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা লেখক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট সকাল ১০টা ১৩ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করে।
স্থানীয় সময় দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে ব্যাংককের ডন মুয়াং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমানটির অবতরণের কথা রয়েছে।
২৪ থেকে ২৯ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার থাইল্যান্ড সফর উপলক্ষে সোমবার তার মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘এটি একটি দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় উভয় সফর।’
তিনি বলেন, এই সফর উভয় পক্ষের জন্যই তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ এতে দুই বন্ধুপ্রতিম দেশের (বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ড) মধ্যে সহযোগিতার নতুন জানালা উন্মোচিত হবে।
গত জানুয়ারিতে সরকার গঠনের পর এটিই প্রধানমন্ত্রীর প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফর।
সফরকালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী থাভিসিনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা করবেন এবং জাতিসংঘের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশনের (ইউএনএসক্যাপ) ৮০তম অধিবেশনে যোগ দেবেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ড দুই দেশের মধ্যে একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির জন্য আলোচনার অভিপ্রায়পত্রসহ বেশ কিছু সহযোগিতার নথিতে স্বাক্ষর করবে।
বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ড সরকারী পাসপোর্টধারীদের জন্য ভিসা অব্যাহতি, শক্তি সহযোগিতার বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) এবং সম্পর্ক সম্প্রসারণের জন্য পর্যটন খাতে সহযোগিতা এবং শুল্ক সংক্রান্ত পারস্পরিক সহযোগিতার বিষয়ে আরও দুটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করার সম্ভাবনা রয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এই সফর বাণিজ্য সম্প্রসারণ এবং আমদানি-রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য দুই দেশের মধ্যে সম্ভাব্য ‘মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি’ পর্যালোচনার সুযোগ তৈরি করবে।
সফরকালে হাছান বলেন, আসিয়ানের ‘সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনার’ হওয়ার জন্য বাংলাদেশের আবেদনের বিষয়টি ঢাকা জোরালোভাবে উত্থাপন করবে।
তিনি বলেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান রাজনৈতিক সংঘাতের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় আরও সক্রিয় ভূমিকা পালনের জন্য বাংলাদেশ আসিয়ানের সদস্য হিসেবে থাইল্যান্ডের প্রতি তার তাগিদ পুনর্ব্যক্ত করবে।
তিনি বলেন, যেহেতু থাইল্যান্ড ও মিয়ানমার উভয়ই আসিয়ানভুক্ত, তাই রোহিঙ্গা ইস্যুটি যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।
হাছান বলেন, উচ্চ পর্যায়ের সফরে বিনিয়োগ, পর্যটন, জ্বালানি, স্থল ও সমুদ্র সংযোগের ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়েও আলোচনা হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ড যৌথ কার্যক্রমের মাধ্যমে পর্যটন খাতের অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারে এবং মানবসম্পদ উন্নয়ন, বৌদ্ধ সার্কিট কর্মসূচি প্রচারের পাশাপাশি ভ্রমণ ও অবকাশ শিল্পে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে দক্ষতা বিনিময় করতে পারে।
মন্ত্রী বলেন, পর্যটন শিল্পে এই সহযোগিতা উভয় দেশে উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে।
২৬ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীকে আনুষ্ঠানিকভাবে থাই প্রধানমন্ত্রী থাভিসিন স্বাগত জানাবেন এবং তাকে একটি আনুষ্ঠানিক গার্ড অব অনার প্রদান করা হবে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী থাভিসিনের সঙ্গে গভর্নমেন্ট হাউসে (প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়) একান্ত দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন, নথিতে স্বাক্ষরে উপস্থিত থাকবেন, একটি যৌথ সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেবেন এবং এরপর সেখানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে থাই প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া একটি রাষ্ট্রীয় মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেবেন।
সফরকালে, প্রধানমন্ত্রী রাজপ্রাসাদে থাইল্যান্ডের রাজা মহা ভাজিরালংকর্ন ফ্রা ভাজিরাক্লাওচাওয়ুহুয়া এবং রানী সুথিদা বজ্রসুধাবিমলালক্ষণের রাজকীয় দর্শকদের সঙ্গে থাকবেন।
প্রধানমন্ত্রী ২৫ এপ্রিল ইউএনএসক্যাপ-এর ৮০ তম অধিবেশনে যোগদান করবেন এবং সেখানে ভাষণ দেবেন।
একই দিনে জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি-জেনারেল এবং এসক্যাপের নির্বাহী সচিব আরমিদা সালসিয়াহ আলিসজাবানা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।
‘লিভারেজিং ডিজিটাল ইনোভেশন ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট ইন এশিয়া অ্যান্ড দ্য প্যাসিফিক’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ৮০তম অধিবেশনটি টেকসই উন্নয়নের জন্য ২০৩০ এজেন্ডা দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য ডিজিটাল উদ্ভাবনকে কাজে লাগাতে অঞ্চলব্যাপী সহযোগিতামূলক পদক্ষেপ জোরদার করার একটি সুযোগ হবে।
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ডিজিটাল উদ্ভাবন কীভাবে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলকভাবে অবদান রাখতে পারে তা নিয়ে আলোচনা করতে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সরকারি নেতা ও মন্ত্রী এবং অন্যান্য মূল অংশীজনদের এই অধিবেশনে একত্রিত করা হবে।
দেশজুড়ে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে জানিয়ে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছে, জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে বিরাজ করতে পারে অস্বস্তি।
রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি বুধবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এমন বার্তা দিয়েছে।
পূর্বাভাসে সিনপটিক অবস্থা নিয়ে বলা হয়, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে।
বৃষ্টিপাতের বিষয়ে বলা হয়, সিলেট বিভাগের দুই-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলা বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যান্য জায়গায় অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
তাপপ্রবাহ বা দাবদাহ নিয়ে বলা হয়, রাজশাহী, পাবনা, খুলনা, বাগেরহাট, যশোর ও পটুয়াখালী জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। মৌলভীবাজার, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, বান্দরবান জেলাসহ ঢাকা, রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগ এবং রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের অবশিষ্টাংশের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা বিস্তার লাভ করতে পারে।
তাপমাত্রার বিষয়ে বলা হয়, সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বিরাজ করতে পারে।
আরও পড়ুন:মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের সিতোয়ে কারাগার থেকে ১৭৩ জন বাংলাদেশি নাগরিক দেশে ফিরছেন। মঙ্গলবার ইয়াঙ্গুনে বাংলাদেশ দূতাবাস এ তথ্য জানিয়েছে।
একই দিন সকালে এসব বাংলাদেশি নাগরিককে নিয়ে মিয়ানমারের নৌ-জাহাজ চিন ডুইন সিতোয়ে বন্দর ত্যাগ করেছে। জাহাজটি রাখাইন রাজ্যে সংঘাতের কারণে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আসতে বাধ্য হওয়া মিয়ানমারের প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের ফিরিয়ে নিতে কক্সবাজারে আসছে।
বুধবার জাহাজটি বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় পৌঁছবে এবং পরে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বাংলাদেশের নাগরিকদের হস্তান্তর করা হবে।
দূতাবাস জানায়, বাংলাদেশি ১৭৩ জনের মধ্যে ১২৯ জন কক্সবাজার, ৩০ জন বান্দরবান, সাতজন রাঙ্গামাটি এবং খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, রাজবাড়ী, নরসিংদী ও নীলফামারী জেলার একজন করে বাসিন্দা রয়েছেন।
ইয়াঙ্গুনে বাংলাদেশ দূতাবাস মিয়ানমারের জাহাজটির বাংলাদেশ সফরে যাওয়ার তথ্য পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বাংলাদেশের পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং মিয়ানমারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি তুলে ধরে। সর্বোচ্চসংখ্যক যাচাই করে বাংলাদেশি নাগরিকদের দ্রুত ও সহজে ফেরত পাঠানোর পরিকল্পনায় দূতাবাস মিয়ানমারের বিভিন্ন কারাগারে অবস্থানরত ১৪৪ জন ‘যাচাই করা বাংলাদেশি নাগরিক, যাদের কারাভোগের মেয়াদ পূর্ণ হয়েছে বা ক্ষমা পেয়েছেন’ তাদেরকে সিতোয়ে কারাগারে আনার উদ্যোগ নেয়।
পাশাপাশি আরও ২৯ জন যাচাই করা বাংলাদেশি নাগরিক, যারা এখনও কারাভোগ করছেন কিংবা বিচারাধীন, একইসঙ্গে তাদেরও মুক্তি দেয়ার বিষয়টি মিয়ানমারের কাছে তুলে ধরা হয়। এর ভিত্তিতে সাজা মওকুফ করে তাদেরকেও দেশে পাঠানো হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, সবশেষ গত বছরের ৩ অক্টোবর দুই দেশের সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে অনুষ্ঠিত পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে মিয়ানমারে কারাভোগ শেষ করা ২৯ জন বাংলাদেশি নাগরিককে দেশে পাঠানো হয়।
আরও পড়ুন:কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি বাংলাদেশে তার দু’দিনের রাষ্ট্রীয় সফর শেষে মঙ্গলবা বিকেলে ঢাকা ত্যাগ করেছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কাতার আমিরের সফর দু’দেশের মধ্যে অসাধারণ সদিচ্ছা ও বোঝাপড়া তৈরি করেছে। সর্বোচ্চ পর্যায়ের এ সফর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আরও সুসংহত এবং পরবর্তী স্তরে উন্নীত করতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারে।
কাতারের আমির বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণে ২২-২৩ এপ্রিল দু’দিনব্যাপী বাংলাদেশ সফর করেন। তিনি সরকারি ও বেসরকারি সেক্টরের সদস্যদের সমন্বয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন।
প্রতিনিধি দলে অন্যদের মধ্যে ছিলেন আমির-ই দেওয়ান প্রধান, বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী, কাতারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, কাতার চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির চেয়ারম্যান, কাতার ইনভেস্টমেন্ট অথরিটির (কিউআইএ) এশিয়া ও আফ্রিকা ইনভেস্টমেন্টের প্রধান, এশিয়ান অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড স্টাডিজ অ্যান্ড রিসার্চের পরিচালক।
সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল এবং কাতারি আমিরের নেতৃত্বে কাতারি প্রতিনিধিদল মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ফলপ্রসূ দ্বিপক্ষীয় আলোচনা করেন।
দ্বিপক্ষীয় আলোচনার সময় উভয় পক্ষই দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার প্রশংসা করে এবং বর্ধিত পারস্পরিক আলাপ-আলোচনা, দু’দেশের জনগণের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ এবং রাষ্ট্রীয়, ব্যবসা ও রাজনৈতিক নেতৃত্বসহ সকল স্তরে সফর বিনিময়ের মাধ্যমে সম্পর্ককে আরও বাড়ানো ও এগিয়ে নেয়ার পন্থা ও উপায় নিয়ে আলোচনা হয়। আলোচনায় যেসব বিষয় উঠে এসেছে- সেগুলো ছিল বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ, জনশক্তি, প্রতিরক্ষা, শিক্ষা, কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা ইত্যাদি।
উভয়পক্ষ গাজা যুদ্ধ এবং মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনসহ পারস্পরিক স্বার্থের আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক ইস্যুতেও মতবিনিময় করেছে। উভয় নেতা মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা ও সহিংসতা বৃদ্ধির বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং ফিলিস্তিনের সমস্যার টেকসই সমাধানের জন্য বিশ্ব নেতাদের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী তার উদ্বোধনী বক্তব্যে একটি উন্নত জ্ঞানভিত্তিক বহু-সাংস্কৃতিক সমাজ হিসাবে কাতারের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ও রূপান্তর এবং আমিরের নেতৃত্বে মধ্যস্থতা ও বহুপক্ষীয় কূটনীতিতে কাতারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার প্রশংসা করেন। তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবদ্দশায় বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়া কয়েকটি উপসাগরীয় দেশের অন্যতম হওয়ার জন্য কাতারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
কাতারের আমির প্রধানমন্ত্রীর গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রশংসা করেন। তিনি বাংলাদেশকে একটি উদীয়মান বিনিয়োগ গন্তব্য হিসেবে প্রশংসা করেন এবং কাতার ও বাংলাদেশের মধ্যে বিনিয়োগ প্রসার ও সুরক্ষা সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য উভয় পক্ষকে ধন্যবাদ জানান এবং বাংলাদেশে সম্ভাবনার ক্ষেত্রে ব্যবসা অনুসন্ধানে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ থেকে আরও কর্মী, পেশাদার, নার্স, টেকনিশিয়ান, কেয়ারগিভার ইত্যাদি নিয়োগের বিষয়টি বিবেচনা করার জন্য কাতারের আমিরকে অনুরোধ করেন। আমির এতে ইতিবাচকভাবে সাড়া দেন।
মতবিনিময়কালে কাতারের আমির ইইজেড ও কক্সবাজারের পর্যটন স্পটগুলোতে বিনিয়োগের প্রস্তাবকে স্বাগত জানান। তিনি কাতারের ফ্রি ইকোনমিক জোন সম্পর্কেও বৈঠকে অবহিত করেন এবং প্রধানমন্ত্রীকে ব্যবসায়িক প্রতিনিধি দল পাঠানোর অনুরোধ জানান।
দ্বিপক্ষীয় আলোচনা শেষে প্রতিনিধি দলের নেতারা বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে মোট ১০টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর প্রত্যক্ষ করেন।
উভয় নেতা কাতারের আমিরের নামে ইসিবি সার্কেল থেকে কালশী পয়েন্ট পর্যন্ত একটি বিশেষ এভিনিউ এবং রাজধানীর মিরপুরে একটি পার্কের নামকরণ ও উদ্বোধন প্রত্যক্ষ করেন।
আমির ও তার প্রতিনিধি দলের সদস্যরা বিকেলে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সেখানে তারা দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয়ে মতবিনিময় করেন।
পরে আমির বঙ্গভবনে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পর তার সম্মানে রাষ্ট্রপতির দেয়া আনুষ্ঠানিক মধ্যাহ্নভোজে যোগ দেন।
মধ্যাহ্নভোজে প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য ও অন্যান্য গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশে বিগত ২০২৩ সালে মানবাধিকার পরিস্থিতিতে উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন হয়নি বলে নতুন এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সূত্র: ইউএনবি
ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস মঙ্গলবার বলেছে, ২০২৩ সালের মানবাধিকার প্রতিবেদনে (এইচআরআর) থাকা দেশভিত্তিক প্রতিবেদনগুলো আইনি সিদ্ধান্ত, দেশগুলোর ক্রমবিন্যাস বা তুলনা করে না।
যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অফ স্টেট প্রকাশিত ২০২৩ সালের মানবাধিকার প্রতিবেদনটি বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার পরিস্থিতির একটি বাস্তব ও বস্তুনিষ্ঠ দলিল। প্রায় পাঁচ দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্র এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে।
হিউম্যান রাইটস রিপোর্ট (এইচআরআর) সদ্য গত ২০২৩ সালে ১৯৮টি দেশ ও অঞ্চলকে নিয়ে কাজ করেছে। মানবাধিকার প্রতিবেদনে পৃথকভাবে মানবাধিকার অবমাননা ও লঙ্ঘনের ওপর বিশ্বাসযোগ্য তথ্যের বিস্তৃত বর্ণনা দেয়া হয়েছে। এটা সরকার, মানবাধিকারের সমর্থনে কাজ করা ব্যক্তি, সাংবাদিক এবং নির্দিষ্ট দেশ ও অঞ্চলগুলোতে মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের অবস্থা সম্পর্কে উদ্বিগ্ন ব্যক্তিদের ব্যবহারযোগ্য একটি হাতিয়ার সরবরাহ করে।
মানবাধিকার প্রতিবেদনটি ওয়াশিংটন ও বিভিন্ন দেশের মিশনে যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অফ স্টেটে তাদের সহকর্মীদের বেশ কিছু মাসের কাজের প্রতিনিধিত্ব করে। এটা যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতির সিদ্ধান্ত সম্পর্কে অবহিত করে এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি বিষয়ে সঠিক তথ্যের প্রয়োজন হলে কংগ্রেস, এক্সিকিউটিভ ব্রাঞ্চ ও অভিবাসন আদালতকে সহায়তা করে।
মানবাধিকার প্রতিবেদন সুশীল সমাজের কাজ সম্পর্কেও জানায়, যার মাঝে অন্তর্ভুক্ত আছে মানবাধিকার রক্ষাকারীসহ বিভিন্ন দেশের আইনপ্রণেতা, স্কলার, অভিবাসন বিচারক, আশ্রয় কর্মকর্তা, বহুপক্ষীয় প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য সরকার।
অন্যান্য দেশের প্রতিবেদনের পাশাপাশি বাংলাদেশের প্রতিবেদনটি state.gov এ পাওয়া যাবে।
পাহাড়ে কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট-কেএনএফ বিরোধী যৌথ অভিযানের কারণে বান্দরবানের থানচি, রোয়াংছড়ি ও রুমা উপজেলা নির্বাচন স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
মঙ্গলবার আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা শেষে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব মো. জাহাংগীর আলম সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান।
তিনি বলেন, আমাদের পার্বত্য তিনটি উপজেলাতে বিশেষ করে বান্দরবানের থানচি, রুমা এবং রোয়াংছড়িতে যৌথ বাহিনীর অপারেশন চলমান রয়েছে। আপাতত এই তিনটি উপজেলা নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। পরে সুবিধাজনক সময়ে আয়োজনের চেষ্টা করব।
গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সুপারিশের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। থানচি, রোয়াংছড়িতে আগামী ৮ মে ও রুমায় ২১ মে ভোট হওয়ার কথা ছিল।
গত ২ এপ্রিল রুমার সোনালি ব্যাংকে ডাকাতি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অস্ত্র লুট করা হয়। এছাড়া ব্যাংক ম্যানেজারকে অপহরণ করা হলেও পরে ছাড়া পান তিনি। পর দিন রুমায় সোনালি ও কৃষি ব্যাংকে দিন দুপুরে ডাকাতির ঘটনা ঘটে।
এ সব ঘটনায় কেএনএফ জড়িত বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছে। এরপর যৌথ বাহিনীর অভিযানে এখন পর্যন্ত ২১ নারীসহ ৭২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কেএনএফ-এর সদস্য অভিযানে নিহতও হয়েছেন।
নির্বাচন ভবনে আয়োজিত সভায় নির্বাচন কমিশন সদস্য, সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বিভিন্ন দপ্তর প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য