রাজধানীর শনির আখরা এলাকায় একটি চলন্ত পিকআপ ভ্যানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে কেউ হতাহত হয়নি।
সোমবার দুপুর একটার দিকে আয়েশা-মোশারফ মার্কেটের সামনে এই ঘটনা ঘটে।
কদমতলী থানার কর্তব্যরত কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম আজাদ নিউজবাংলাকে তথ্যটি নিশ্চিত করেন।
আবুল কালাম আজাদ জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, পিকআপটির ত্রুটিপূর্ণ সিএনজি সংযোগ থেকে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি নিশ্চিত হতে তদন্ত করে দেখা হবে।
পুড়ে যাওয়া পিকআপটি উদ্ধার করে থানায় নিয়েছে পুলিশ।
রিতা,
তুমি বোধহয় ভালই আছ। আর থাকবে নাই বা কেন। তুমি এখন এক স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশের নাগরিক হয়েছ। আমাদের দুঃখ-দুর্দশা হয়ত তোমার অজানা নেই। আমাদের অবস্থা যে কতদূর চরম তা তুমি কল্পনাও করতে পারবে না।
একদিন আমাদের বাড়ীতে একদল লোক এসে আমাদের কিছু জিনিসপত্রসমেত আমাকে একটি জিপে তুলে নিয়ে যায়। কোথায় যাচ্ছি তাও জানি না। কেবল শুনতে পাচ্ছি আমাদের পেছনেও কয়েকটি গাড়ি আসছে। পথে গাড়ির মধ্যেই অমানসিক অত্যাচার শুরু হল। শিবিরে জীপ পৌঁছাল এবং আমায় শিবিরে ঠেলে নামিয়ে দেওয়া হল। সেখানে দেখলাম আমার মতই আরও কয়েকজন মেয়ে রয়েছে।
কিছুক্ষণ পর একদল ‘পশু’ শিবিরে এসে আমাদের উপর অত্যাচার শুরু করে দিল। দিনের পর দিন সন্ধ্যায় আমাদের নিয়ে যওয়া হয় এবং ভোর ৪টার সময় ছেড়ে দিয়ে যাওয়া হয়। কোনরকম বাধা দিলে যে অত্যাচার শুরু হতো তা অবর্ণনীয়। রবারের চাবুক দিয়ে তারা আমাদের নির্দয়ভাবে পেটায়। এই আতঙ্কে আমরা চরম অসম্মানজনক জীবনযাপন করতে বাধ্য হই।
...আমাদের চিঠি লেখার অধিকারও নেই। খাদ্য পাওয়াও কষ্টকর। রেডক্রস যদি কোন খাবার দেয় তাহলে ঐসব ‘পশুরা’ এসে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। দিনে একবার মাত্র আমাদের খাবার দেওয়া হয়। খাবার হলো দেড় পিস রুটি আর এক গ্লাসস পানি। দিনে মাত্র তিন গ্লাস পানি দেওয়া হয়।
এই অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে অনেক মেয়েই আত্মহত্যা করেছে। তাদের কবর অবধি দেওয়া হয় না। এসিড দিয়ে দেহ পুড়িয়ে দেওয়া হয়। যারা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে তারা সাধারণত সন্তান জন্মাবার আগেই মারা যায়। কয়েকজন আবার সন্তানের জন্ম দিয়েই মারা যায়। আমিও অন্তঃসত্ত্বা। কিন্তু আমরা কি করতে পারি? বাঙালী মেয়ে জন্মানই পাপ। এই অত্যাচার সহ্য করে আমি এখনও বেঁচে আছি। তবে আধমরা হয়ে আছি। মুজিব ভাই কি আমাদের রক্ষা করবে না? আমাদের এই চরম দুঃখ-দুর্দশার কথা বঙ্গবন্ধুর কানে তুলো।
-শীলা
পাকিস্তানি হানাদারের বন্দি শিবির থেকে লেখা এক নির্যাতিতা বাঙালির চিঠি এটি। বান্ধবী রিতার কাছে শীলা নামের এক বীরাঙ্গনার লেখা এই চিঠিতে উঠে এসেছে আমাদের স্বাধীনতার জন্য এ দেশের নারীদের অপরিসীম ত্যাগ আর হানাদার বাহিনীর নির্যাতনের চিত্র। দেশ তখন মুক্ত। তবু মুক্তি মেলেনি শীলাদের। নিজের মুক্তির জন্য এই নারীও তাই পথ চেয়ে আছেন সেই মহানায়কের, যার তর্জনীতে লুকিয়ে ছিলো বাঙালির স্বাধীনতা।
১৯৭২ সালের ২১ জুন সুনামগঞ্জ থেকে প্রকাশিত, গোলাম রব্বানী সম্পাদিত সাপ্তাহিক ‘বিন্দু বিন্দু রক্তে’ প্রকাশিত হয় এ চিঠি। কেবল নাম ব্যতীত চিঠিটির প্রেরক ও প্রাপকের আর কোনো পরিচয় উল্লেখ করা হয়নি।
প্রায় সমসাময়িক সময়ে সিলেট থেকে প্রকাশিত, আমীনুর রশীদ চৌধুরী সম্পাদিত সাপ্তাহিক ‘যুগভেরী’তে প্রকাশিত হয় স্বাধীনতা পরবর্তীকালেও পাকিস্তানি বন্দিশিবিরে আটক থাকা এক ব্যক্তির চিঠি। চিঠিটি লেখা হয়েছিল ১৯৭২ সালের ২৯ মার্চ। যুগভেরীতে এই পত্র লেখকের নাম ছাপানো হয়নি।
পিতার কাছে লেখা চিঠির শেষাংশে পত্র লেখক লিখেছেন, ‘... ধুপাদিঘীর পশ্চিমপাড়ে যাহা আছে এবং সেখানে যারা থাকে, যে হালে থাকে ঠিক সেভাবেই আছি। আর কাজ হচ্ছে- ওখানে তারা যে কাজ করে সেই কাজ। অনেকে আছি। এখানে যাদেরকে রাখা হয়েছে তাদের নামের পাশে লালকালি দিয়ে অনেক কিছু লেখা হচ্ছে। সবকিছু খুলিয়া লেখা সম্ভব নয়। কারণ তো বুঝতেই পারছেন। এখানে ১২০০-এর বেশী বিমান বাহিনীর লোক।’
উল্লেখ্য, পত্রে উল্লিখিত ধোপাদিঘির পশ্চিমপাড় বলতে কারাগার বুঝানো হয়েছে। এই স্থানে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার-২ অবস্থিত।
এ তো গেলো বন্দিশিবির থেকে লেখা নির্যাতিতদের চিঠি। যুদ্ধের ময়দান থেকেও অনেক মুক্তিযোদ্ধা অস্ত্র পাশে সরিয়ে কখনো কখনো হাতে তুলে নিয়েছিলেন কলম। প্রিয়জন আর সহযোদ্ধাদের কাছে নিজের, যুদ্ধের আর দেশের অবস্থা জানিয়ে লিখেছিলেন চিঠি।
সেসব চিঠিতে মুক্তিযোদ্ধাদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ, সর্বগ্রাসী অভাব, দালালদের দৌরাত্ম্য সত্ত্বেও বীর যোদ্ধাদের সাফল্য গাঁথা ও চূড়ান্ত জয়ের দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত হয়েছে। এসব টুকরো টুকরো আশা, হতাশা, সান্ত্বনা, প্রতীজ্ঞাই হয়ে উঠেছে এখন মুক্তিযুদ্ধের দলিল।
মুক্তিযুদ্ধে সিলেট অঞ্চলের এক অনন্য যোদ্ধা সুলেমান হোসেন। ৪ নম্বর সেক্টরের হয়ে যুদ্ধ করেছেন তিনি। ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর সিলেট শহরের ধুবড়ী হাওড়ের (অধুনা শাহজালাল উপশহর) কাছে প্যারাসুট দিয়ে হেলিকাপ্টার থেকে নামার পরই পাকিস্তানি সেনারা তাকে ঘিরে ফেলে। এরপর দীর্ঘক্ষণ ধরে চলা সম্মুখযুদ্ধ শেষে তিনি আহত অবস্থায় ধরা পড়েন। চূড়ান্ত বিজয়ের ঠিক আগ মূহূর্তে ১৪ ডিসেম্বর হানাদাররা তাকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করে।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সিলেটের জিন্নাহ হলের নাম পাল্টে ‘শহীদ সুলেমান হল’ করা হয়। যুদ্ধচলাকালীন পরিবার-পরিজনকে বেশকিছু চিঠি লিখেছিলেন সুলেমান। চিঠিগুলোর বেশিরভাগই তার প্রবাসী বড় ভাইয়ের কাছে অর্থ সাহায্য চেয়ে লেখা।
একাত্তরের ১৬ এপ্রিল আসাম থেকে বড় ভাইকে লেখা সুলেমানের চিঠিতে ফুটে উঠেছে আর্থিক দৈন্য আর দুর্ভোগের চিত্র। চিঠির একাংশে সুলেমান লিখেছেন, ‘... বর্তমানে আমাদের মৃত্যুর দুইটি পথ খোলা আছে। একটি হইল বুলেট, অন্যটি হইল পেট।’
২৮ নভেম্বর একই ব্যক্তিকে লেখা আরেকটি পত্রে সুলেমান লিখেছেন, ‘...আমার বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। কারণ টাকাপয়সা আমার কাছে ঔষধের মতই হয়েছে। ...শীতের দাপটে রাতে ডিফেন্সে থাকা যায় না। কারণ শীতের একটি কাপড়ও আমার নেই।’
এসব প্রতিকূলতা সত্ত্বেও সুলেমান দেশকে স্বাধীনতা এনে দিতে ছিলেন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। ৭ জুলাই প্রবাসী বড় ভাইকে লেখা এক চিঠিতে ফুটে উঠেছে সেই দৃঢ় প্রতিজ্ঞারই চিত্র।
সুলেমান লিখেন, ‘... বাংলাদেশের স্বাধীনতা কোন শক্তিই দমিয়ে রাখতে পারবে না। আমাদের বাংলার সাড়ে সাত কোটি মানুষ পরাধীনতার নাগপাশকে পদদলিত করিতে বদ্ধপরিকর। এতে যদি আমার বাংলাদেশ শ্মশানে পরিণত হয় তবু আমরা কিছু ছাড়ব না। বাংলা স্বাধীন ও শত্রুমুক্ত হবে সত্য, তবে কবে এবং কি অবস্থায় স্বাধীন হব সেটা বলা যায় না।
... পাঞ্জাবী বেনিয়ারা এবার বুঝে নিয়েছে যে তাহারা আর এখানে থাকতে পারবে না। আমরা জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিয়া মা-বোন ও মাতৃভূমির পবিত্রতা রক্ষা করিব।
...আমার সকল পণ প্রতিজ্ঞাকে কেউ নস্যাৎ করতে পারবে না। দালালদের খতম করার জন্য আমাদের গেরিলা বাহিনী শহরে প্রবেশ করেছে। দুই তিন সপ্তাহের মধ্যে দালালদের বংশ থাকিবে না। এরাই আমারে বড় শত্রু। যাক, জয় আমাদের হবেই। আমাদের জন্য চিন্তা করিবেন না। বাঁচিয়া থাকিলে দেখা হইবে।...’
তারিখ ও ঠিকানা উল্লেখ না করে মায়ের কাছে লেখা একটি চিঠিতে সুলেমান লিখেছেন, ‘... মা, আজকে আপনার সবচেয়ে বড় গৌরব যে আপনার ছেলে সত্যিকারের দেশসেবার উপায় পেয়েছে। সত্যিকারের দেশসেবা করে যদি প্রাণ বিসর্জন দিতে হয় সেটা ভাল। যাক, আমার জন্য চিন্তা করিবেন না। অদূর ভবিষ্যতেই দেখা হবে। আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জনের আর বেশি বাকী নয়।...’
মাকে অদূর ভবিষ্যতেই দেখা হওয়ার আশ্বাস দিলেও আর কখনোই মায়ের সাথে দেখা হয়নি শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা সুলেমানের।
মুক্তিযুদ্ধে সাচনা বাজারে পাকিস্তানি বাংকার ধ্বংসের সময় শহীদ হন সিরাজুল ইসলাম। এর আগে সুনামগঞ্জে সুরমা নদীতে পাকিস্তানি সেনাদের পরিবহন বহরে গেরিলা আক্রমণ চালান তিনি। ১৯৭১ সালের ৩০ জুলাই সুনামগঞ্জের টেকেরঘাট থেকে নিজের পিতাকে লেখা একটি চিঠিতে উল্লেখ করেছেন নিজের ও দেশের অবস্থা আর অবস্থানের কথা।
সিরাজুল লিখেন, ‘... দেশের জন্য আমরা সকলেই জান কোরবান করিয়াছি। আমাদের জন্য ও দেশ স্বাধীন হইবার জন্য দোয়া করিবেন। আমি জীবনকে তুচ্ছ মনে করি। কারণ দেশ স্বাধীন না হইলে আমাদের জীবনের কএনা মূল্য থাকিবে না। তাই যুদ্ধকেই জীবনের পাথেয় হিসেবে নিলাম।
মৃত্যুর মুখে আছি। যেকোন সময় মৃত্যু হইতে পারে এবং মৃত্যুর জন্য সর্বদা প্রস্তুত। দোয়া করিবেন মৃত্যু হইলেও যেন দেশ স্বাধীন হয়। তখন দেখবেন লাখ লাখ ছেলে বাঙলার বুকে পুত্রহারাকে বাবা বলে ডাকবে। এই ডাকের অপেক্ষায় থাকুন।
দেশবাসী, স্বাধীন বাংলা কয়েমের জন্য দোয়া কর, মীর জাফরী করিও না। কারণ মুক্তি ফৌজ তোমাদের ক্ষমা করিবে না এবং বাঙলায় তোমাদের জায়গা দেবে না।
ছালাম, দেশবাসী সালাম।’
সিলেট অঞ্চলের কিংবদন্তি গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি দাসের শহীদ হওয়ার ঘটনা আরও বেশি বিক্ষুব্ধ করে তুলেছিলো এ অঞ্চলের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের। জগৎজ্যোতির মৃত্যু সংবাদ জানিয়ে তার সহযোদ্ধা সানু মিয়া আরেক মুক্তিযোদ্ধা গৌরাঙ্গ দেশীকে একটি চিঠি লেখেন। সংক্ষিপ্ত এই চিঠিতে প্রতিভাত হয়েছে জ্যোতির প্রাণের বদলা নেয়ার দৃপ্ত শপথ।
‘দাদা,
এখানে এসে জ্যোতিকে পেয়েছিলাম। চারদিন হলো, সে আমাদের ছেড়ে চলে গেছে। তাঁর কাজ সে শেষ করেছে, এবার আমাদের পালা। জ্যোতিকে ম্লান হতে দেবো না, রক্তের প্রতিশোধ আমরা রক্তেই নেব।
ইতি
সানু মিয়া’
রক্তের বদলা নিয়েই বীর মুক্তিসেনারা সূর্যের লালটুকু ছিনিয়ে আনেন বাঙলার সবুজ জমিনে। বাংলাদেশের পতাকা হয়ে ওঠে টিয়ে পাখির মতো লাল আর সবুজ। যুদ্ধজয় ও বঙ্গবন্ধুর দেশে ফেরার পর সিলেটের মহিলা মুক্তিফৌজ গঠনের অন্যতম উদ্যেক্তা ও নারীনেত্রী প্রীতিরানী দাশ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার অর্ঘ্য হিসেবে জাতির পিতাকে তাঁতের তৈরি একটি বস্ত্র উপহার পাঠান। এই উপহার পেয়ে প্রীতিরানীকে চিঠি লেখেন শেখ মুজিব।
১৯৭২ সালের ২১ নভেম্বর চিঠিটি বঙ্গবন্ধুর নিজ হাতে লেখা।
‘শ্রদ্ধেয়া প্রীতিরানী দাস
আমার আদাব গ্রহণ করবেন। তাঁতশিল্পের নিদর্শনস্বরূপ আপনার দেয়া উপহারখানা জেনারেল ওসমানী সাহেবের মারফত পেয়ে খুবই খুশি হয়েছি। শিল্প জগতে তাঁতশিল্প এক বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের উন্নতমানের তাঁতশিল্প একটি গৌরবের বিষয়। দেশের ভাঙ্গা অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করার প্রশ্নে আপনাদের ভূমিকা কোন অংশে কম নয়। সেহেতু আমাদের তাঁতশিল্পের ক্রমবিকাশ এবং বিশ্বের হস্তশিল্পাঙ্গনে এর সুপ্রতিষ্ঠিত স্থান আমার একমাত্র কাম্য।
সরকার এ ব্যাপারে পূর্ণ সহযোগীতা করে যাবে। দেশের বেকার সমস্যা দূরীকরণ এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে আপনাদের প্রচেষ্টাকে আমি আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
ইতি
শেখ মুজিব”
[এই প্রতিবেদনে উল্লিখিত চিঠিগুলো সাপ্তাহিক ‘বিন্দু বিন্দু রক্ত’, সেই সময়ের সাপ্তাহিক ও বর্তমানে দৈনিক ‘যুগভেরী’ এবং গবেষক দীপংকর মোহান্ত সম্পাদিত ‘চিঠিপত্রে মুক্তিযুদ্ধ’ বই থেকে সংগৃহীত।]
আরও পড়ুন:সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেছেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এখনো একাত্তরের গণহত্যার আর্ন্তজাতিক স্বীকৃতি অর্জন সম্ভব হয়নি। এ স্বীকৃতি অর্জনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাজ করে যাচ্ছেন। তার উদ্যোগে ২০১৭ সাল থেকে জাতীয়ভাবে ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করা হচ্ছে। সম্প্রীতি বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠন এ বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগসহ সবার সম্মিলিত ও সমন্বিত প্রয়াসে একাত্তরের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন সম্ভব হবে।
জাতীয় গণহত্যা দিবস উপলক্ষে সম্প্রীতি বাংলাদেশ-এর উদ্যোগে শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘গণত্যার আর্ন্তজাতিক স্বীকৃতি’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এসব কথা বলেন।
সরকারিভাবে অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনের নেতৃত্বে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প ‘গণহত্যা-নির্যাতন ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণা কেন্দ্র’ দেশব্যাপী গণহত্যা বিষয়ক জরিপ কার্যক্রমের মাধ্যমে গণহত্যার প্রমাণক ও তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে যাচ্ছে। এরই মধ্যে ৩৪টি জেলায় সাড়ে চার হাজার বধ্যভূমিসহ ১৭ হাজার ২৮৬টি গণহত্যা, গণকবর চিহ্নিত হয়েছে।
এতে ধারণা করা যায় যে, একাত্তরের গণহত্যার প্রকৃত সংখ্যা ৩০ লাখ ছাড়িয়ে যাবে এবং এর মাধ্যমে গণহত্যার সংখ্যাতাত্ত্বিক বিতর্কের অবসান ঘটবে। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগসহ সবার সম্মিলিত ও সমন্বিত প্রয়াসে একাত্তরের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন সম্ভব হবে।
‘সম্প্রীতি বাংলাদেশ’-এর আহ্বায়ক পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আলোচনা করেন মুজিবনগর সরকারের কর্মকর্তা সাবেক সচিব মুসা সাদিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বঙ্গবন্ধু পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আ ব ম ফারুক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক চন্দ্রনাথ পোদ্দার, মিরপুর ব্যাপ্টিস্ট চার্চের রেভারেন্ড মার্টিন অধিকারী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সবুজবাগ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি লায়ন চিত্ত রঞ্জন দাস। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ‘সম্প্রীতি বাংলাদেশ’-এর সদস্য সচিব অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল।
আলোচকরা উল্লেখ করেন, ১৯৪৮ সালের ৯ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গৃহীত সিদ্ধান্তে যে বিষয়গুলোর উল্লেখ করা হয়েছে, তাতে একাত্তরের বর্বরতা অবশ্যই গণহত্যার স্বীকৃতির দাবি রাখে। বাংলাদেশের এমন কোনো অঞ্চল নেই, যেখানে গণহত্যার চিহ্ন নেই। পাকিস্তানি নেতাদের লেখাতেই প্রমাণিত যে তারা তিন মিলিয়ন বাঙালিকে হত্যা করবে। প্রবাসী বাঙালি, সংগঠন, মানবতাবাদী, বিশ্বসংগঠনগুলোর আরও জোরদার কর্মসূচি নিতে হবে।
বক্তারা বলেন, আমরা ৫৩ বছর ধরে স্বীকৃতির দাবি করে আসছি। প্রয়োজনে আরও ৫৩ বছর এ দাবি করেই যাবো। গণহত্যার স্বীকৃতির দাবি এখন বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের।
সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বলেন, বসনিয়া, রুয়ান্ডা, মিয়ানমারসহ বেশ কয়েকটি দেশে গণহত্যার আর্ন্তজাতিক স্বীকৃতি মিলেছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্র ও চীনসহ কয়েকটি পরাশক্তি পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান করার কারণে একাত্তরের (তখন) গণহত্যার আর্ন্তজাতিক স্বীকৃতি মিলেনি। তবে আমরা আশা করছি, দ্রুতই একাত্তরের গণহত্যার আর্ন্তজাতিক স্বীকৃতি মিলবে।
সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী বলেন, একাত্তরের গণহত্যার আর্ন্তজাতিক স্বীকৃতির বিষয়ে যেসব বই ও প্রকাশনা বের হয়েছে সেগুলোকে বাংলা একাডেমির মাধ্যমে ইংরেজিসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণভাষায় অনুবাদের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, বসনিয়া, আর্মেনিয়া, রুয়ান্ডা, মিয়ানমারসহ বেশ কয়েকটি দেশে গণহত্যার আর্ন্তজাতিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে এবং আর্ন্তজাতিক আদালতে এসব গণহত্যার বিচার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
বক্তারা অনুরূপভাবে একাত্তরের গণহত্যার দ্রুত আর্ন্তজাতিক স্বীকৃতির দাবি জানান।
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দল ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের ইফতার মাহফিল বা পার্টি আয়োজন না করার নির্দেশ দিয়েছেন।
শনিবার বিকেলে বঙ্গবন্ধু এভনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত সামাবেশে এ কথা জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘পবিত্র রমজান মাসে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনগুলো কোনো ইফতার মাহফিল বা পার্টির আয়োজন করবেন না। আমাদের নেত্রী নির্দেশ দিয়েছেন। সেই টাকা দিয়ে গরিব মানুষের মাঝে ইফতার সামগ্রী বিতরণ করবেন।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ইফতারের আয়োজন না করে পার্টির পক্ষ থেকে, যারা কষ্টে আছেন, যারা দরিদ্র মানুষ তাদের হাতে খাবার তুলে দেব।’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফির সভাপতি সমাবেশে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম ও কামরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সরকার এবং তৎকালীন শান্তিবাহিনী ও বর্তমান পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর হয়। দুই যুগের কালো অধ্যায় শেষে আলো ফেরে পাহাড়ে।
পার্বত্য তিন জেলার মধ্যে আবার সবচেয়ে শান্ত ও সম্প্রীতির জেলা হিসেবে পরিচিত বান্দরবান। কিন্তু গত বছর থেকে এই জনপদ পুনরায় অশান্ত হয়ে ওঠার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) নামে বিচ্ছিন্নতাবাদী একটি সংগঠনের সশস্ত্র কর্মকান্ড, জঙ্গিদের অভয়ারণ্য, হত্যা, প্রায় প্রতিদিন গোলাগুলি, অপহরণের ঘটনায় শান্তিচুক্তির পূর্বাবস্থায় ফিরছে না তো পাহাড়?- এমন প্রশ্ন এখন স্থানীয়দের মুখে মুখে।
সূত্রে জানা যায়, ‘কুকি-চিন রাজ্য’ নামে পৃথক রাজ্যের দাবিতে সশস্ত্র তৎপরতা চালানো কেএনএফ মনে করে, পাহাড়ের ৯টি উপজেলা তাদের পূর্ব-পুরুষদের আদিম নিবাস। দখলদাররা অনুপ্রবেশ করে তাদের ভূমি দখল করে নেয় এবং কোটাসহ সরকারি বিভিন্ন সুবিধা থেকে তারা বঞ্চিত। জেএসএসসহ অন্য সংগঠনগুলো তাদের ভূমি ব্যবহার করে সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে পরিণত করে বিভিন্ন অপরাধ করছে।
এসব থেকে মুক্তির যুক্তি তুলেই গড়ে তোলা হয় কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট-কেএনএফ।
পাহাড়ে ২০১৭ সালে কেএনভি নামে একটি সামাজিক সংগঠন আত্মপ্রকাশ করে। পরবর্তীতে এটি কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট-কেএনএফ নামে সশস্ত্র সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করে। সশস্ত্র এই সংগঠনের নেতারা শতাধিক সক্রিয় সদস্যকে প্রতিবেশী দেশের কাচিন, কারেন প্রদেশ ও মনিপুর রাজ্যে প্রশিক্ষণে পাঠায়। সেসব স্থানে কমান্ডো প্রশিক্ষণ শেষে ২০১৯ সালে তারা সশস্ত্র অবস্থায় ফিরে আসে বান্দরবানে।
দেশের রুমা সীমান্ত ও ভারতের মিজোরাম সীমান্তের জাম্পুই পাহাড়ে ভারি অস্ত্রে সজ্জিত এই সংগঠনের সশস্ত্র ও নিরস্ত্র মিলিয়ে ৬ শতাধিক সদস্য রয়েছে।
কেএনএফ-এর সশস্ত্র সদস্যরা বর্তমানে বান্দরবান ও রাঙামাটির অন্তত ৫টি উপজেলায় ঘাঁটি গেড়ে এসবিবিএল, একে-৪৭, এসএমজি, পিস্তল ও নিজস্ব পদ্ধতিতে তৈরি ল্যান্ড মাইন ব্যবহার করে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে।
পর্যটন শিল্পে ধস
বান্দরবানের সীমান্ত এলাকায় জঙ্গি সংগঠন ও কেএনএফ-এর বিরুদ্ধে নিরাপত্তা বাহিনীর যৌথ অভিযান চলছে। ১৭ অক্টোবর শুরু হওয়া এই অভিযানের কারণে পর্যটক যাতায়াতে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। এ অবস্থায় পর্যটক-শূন্যতায় জেলার দুই শতাধিক হোটেল-মোটেল কার্যত পথে বসার যোগাড়। অনেক হোটেল-মোটেল মালিক কর্তৃপক্ষ কর্মচারী ছাঁটাই করতে বাধ্য হয়েছে।
অন্যদিকে জেলার থানচি ও রুমা উপজেলার ২ শতাধিক নৌযান, জেলার পর্যটক বহনকারী ৩ শতাধিক চাঁদের গাড়ি ও ৩শ’ জন ট্যুরিস্ট গাইড বেকার সময় কাটাচ্ছে। জুম চাষাবাদ ব্যাহত হওয়ায় পাহাড়িরা নিজেদের খাদ্য সংগ্রহ করতে পারছে না। অর্থনৈতিকভাবে চরম সংকট পার করছেন ব্যবসায়ীরা।
থমকে গেছে উন্নয়ন কার্যক্রম
বান্দরবানের তিন উপজেলায় অপহরণ, গুলি, হত্যা ও অপহরণ-বন্দিত্বের বাস্তবতায় ব্যহত হচ্ছে উন্নয়ন কার্যক্রম। সরকারের নেয়া বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় সড়ক নির্মাণ, ব্রিজ, কালভার্ট ও স্কুল ভবন নির্মাণে কাজ করা শ্রমিকরা তিন উপজেলা ছেড়ে যাচ্ছে। যেকোনো সময় অপহরণের শিকার হতে পারে এমন ভাবনায় তারা জেলা সদরে ফিরছে। অন্যদিকে জেলা থেকে শ্রমিকরা উপজেলায় উন্নয়ন কাজ করতে যেতে চাচ্ছে না। ফলে স্থবিরতা বিরাজ করছে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে।
শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত
কেএনএফ ও জঙ্গিবিরোধী যৌথ বাহিনীর অভিযানের কারণে গত জানুয়ারি থেকে রুমার ৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ হয়ে যায়। ফলে দেড় শতাধিক শিশুর শিক্ষা জীবন অনিয়শ্চতার মধ্যে পড়েছে।
বন্ধ থাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে- পাইন্দু ইউনিয়নের মুয়ালপি পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আরথাহ পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাসতলাং পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মুননুয়াম পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রেমাক্রি প্রাংসা ইউনিয়নের পাকনিয়ার পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কেসপাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
যান ও জনচলাচলে বাধা
রুমা, থানচি ও রোয়াংছড়িতে চলাচল করা পরিবহনের মালিক সমিতিকে যৌথ বাহিনীর চলমান অভিযানে গাড়ি না পাঠানোর জন্য ‘নিষেধাজ্ঞা জারি করে’ কেএনএফ। ৮ ফেব্রুয়ারি তাদের এই ‘নিষেধাজ্ঞা জারির’ পর গাড়িচালকদের ওপর গুলিবর্ষণ ও দু’দফায় অপহরণের ঘটনা ঘটে।
১৫ মার্চ রাত ৭টার পর থেকে বান্দরবান-রুমা, রোয়াংছড়ি, থানছিসহ চিম্বুক সড়কে সব ধরনের গাড়ি চলাচলে অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। ফলে ওই তিন উপজেলা সড়কে চলাচলকারী যানবাহন চালকদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
অপহরণ, গুলি, জিম্মি
যৌথ অভিযানের সময় ২ কেএনএফ সদস্য ও কেএনএফ-এর গুলিতে মগ পার্টির ৩ জন নিহত হয় এবং ১১ মার্চ থানচি থেকে কেএনএফ ১২ জন নির্মাণ শ্রমিককে অপহরণ করে। এদের মধ্যে একজন শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হয় এবং ৪ জনকে জিম্মি করে রাখা হয়।
১২ মার্চ দুপুরে কেএনএফ-এর গুলিতে সেনাবাহিনীর মাস্টার ওয়ারেন্ট অফিসার নাজিম উদ্দিন নিহত হন। আহত হন আরও দুই সেনা সদস্য।
১৫ মার্চ রুমার লংথাসি ঝিরি এলাকায় সড়কে কাজ করতে গিয়ে কেএনএফ সদস্যরা অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট আনোয়ারসহ ৯ জনকে ধরে নিয়ে যায়। গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত বম সম্প্রদায়ের ৩০ জনকে যৌথ বাহিনী আটক করার দাবি জানিয়ে গত ১৮ মার্চ এক বার্তায় কেএনএফ তাদের মুক্তির দাবি জানায়। অন্যথায় আনোয়ার হোসেনকে হত্যার হুমকি দেয়। তারা দাবি করে, তাদের দাবিকৃত জায়গায় ল্যান্ড মাইন এবং বোমা ফাঁদ পাতা হয়েছে।
অন্যদিকে যৌথ বাহিনী জানায়, এই সময়ে পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার ৬৮ জঙ্গি ও কেএনএফ-এর বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়।
এলাকাছাড়া ১৩২ পরিবার
গত বছরের ১৫ নভেম্বরের পর বান্দরবানের ১৩২টি পরিবারের ৫৪৮ জন মানুষ মিজোরামে আশ্রয় নিয়েছে। গত ২৮ জানুয়ারি মুলপিপাড়া থেকে রুমা সদরে ১৪০ মারমা নারী-পুরুষ ও শিশু আশ্রয় নিলেও তারা ৫ ফেব্রুয়ারি নিজ বাড়িতে ফিরে আসে।
১০ মার্চ রাঙ্গামাটির বিলাইছড়ির ৪ নং বড়থলি ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ৩টি পাড়া থেকে ৫৬ পরিবারের ২২০জন তংচঙ্গ্যা রেইছা ও রোয়াংছড়ি সদরে আশ্রয় নেয়।
আসাম রাইফেলসের হাত ফসকে পালিয়েছে কেএনএফ প্রধান
সূত্রে জানা যায়, কেএনএফ-এর সহায়তায় বম সম্প্রদায়ের অনেকে মিজোরামে আশ্রয় নিলেও তাদের অনেকে চেন্নাই ও ব্যাঙ্গালুরুর বিভিন্ন হোটেলে কাজ করতে পাড়ি জমান। তারা সশস্ত্র যুদ্ধে অংশ নেয়ায় ক্ষুব্ধ হয় কেএনএফ।
এসব বিষয়ে তাদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় কেএনএফ প্রধান নাথান বম ও সংগঠনটির চিফ অফ স্টাফ পানতালা হেডম্যানপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ভানচুন লিয়ান মাস্টারের উপস্থিতিতে মিজোরামের লংতালাই জেলার হুমুনুয়াম গ্রামে এই ১০ মার্চ বৈঠক ডাকা হয়।
আসাম রাইফেলস ওই বৈঠক থেকে কুকি চিন ন্যাশনাল আর্মির (কেসিএনএ) দুই ক্যাডার রুমার রেমাক্রি প্রাংসা ইউনিয়নের সালাপি পাড়ার নাথান বমের সহকারী জিংরামলিয়ান বম ও রোয়াংছড়ির অবিচলিত পাড়ার (গিলগার) কেএনএফ কমান্ডো পাজাউ বমকে গ্রেপ্তার করে। আসাম রাইফেলস দাবি করে, তারা মিয়ানমারে অস্ত্র পাচার করছে। এ সময় নাথান ও ভানচুন লিয়ান মাস্টার পালিয়ে যায়।
দ্রুত অবস্থার উন্নতি চান ব্যবসায়ীরা
জেলা শহর থেকে রোয়াংছড়িতে রং-এর কাজ করতে যাওয়া ঠিকাদার আশিষ দেবনাথ বলেন, ‘পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার কারণে জীবনের নিরাপত্তার কথা ভেবে আমরা কাজ ফেলে শ্রমিকদের নিয়ে জেলা সদরে চলে এসেছি।’
বান্দরবান হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির অর্থ সম্পাদক রাজিব বড়ুয়া বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতির কারণে আমাদের পর্যটন ব্যবসায়ীদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। আমরা কতটা বিপাকে পড়েছি তা বলে বুঝাতে পারব না। আমরা এসব থেকে দ্রুত পরিত্রাণ কামনা করছি।‘
বান্দরবান জেলা ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি মো. মুসা বলেন, ‘আগে কখনও কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী গাড়ি চালকদের আক্রমণ করতো না। এখন যেভাবে আক্রমণ ও অপহরণ হচ্ছে তাতে আমার উদ্বিগ্ন। আশা করি সবার প্রচেষ্টায় এসব বন্ধ হবে।’
এই ব্যাপারে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা বলেন, ‘এলাকার সব সম্প্রদায়ের শান্তির জন্য তাদের সব অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীর অস্ত্র সমর্পণ করা উচিত। তাহলে এই এলাকায় শান্তি বিরাজ করবে।’
আরও পড়ুন:দেশের ছয় বিভাগ ও দুটি অঞ্চলে বর্ষণের আভাস দিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছে, কোথাও কোথাও হতে পারে শিলা বৃষ্টি।
রাষ্ট্রীয় সংস্থাটির শনিবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে এমন বার্তা দেয়া হয়েছে।
এতে সিনপটিক অবস্থা নিয়ে বলা হয়, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে রয়েছে।
দিনভর আবহাওয়া কেমন থাকবে, তা নিয়ে জানানো হয়, কুমিল্লা ও নোয়াখালী অঞ্চলসহ রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা ও সিলেট বিভাগের দুই-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলা বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যান্য জায়গার আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
তাপমাত্রার বিষয়ে অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়, সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে।
ঢাকায় শনিবার সন্ধ্যা ৬টা ১১ মিনিটে সূর্যাস্ত হবে জানিয়ে অধিদপ্তর বলেছে, রোববার ঢাকায় সূর্যোদয় হবে ভোর ৫টা ৫৭ মিনিটে।
পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার অবস্থা নিয়ে বলা হয়, সামান্য পরিবর্তন হতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, শনিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে ঢাকায়।
সংস্থাটির পূর্বাভাসে বলা হয়, শুক্রবার দেশের সর্বোচ্চ ৩৪ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল যশোরে। শনিবার দেশের সর্বনিম্ন ১৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়।
আরও পড়ুন:আগামী নির্বাচন নিয়ে মতামত দিতে বিএনপিকে নির্বাচন কমিশন (ইসি) যে আমন্ত্রণ জানিয়েছে, সেটি আকস্মিক নয় বলে দাবি করেছেন কমিশনার মো. আহসান হাবিব।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিএনপিকে আমন্ত্রণ জানানোর সিদ্ধান্ত হঠাৎ করে হয়নি। কমিশন সার্বিকভাবে আলোচনা করেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর আগেও বিএনপিকে একাধিকবার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।’
এ কমিশনার বলেন, ‘বর্তমান কমিশন দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের কথা অনুধাবন করে আলোচনার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে আসছে। ইসি মনে করে বিএনপির মতো নিবন্ধিত অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক না হোক, অনানুষ্ঠানিক মতবিনিময় হতেই পারে।
‘বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হওয়ার সম্ভাবনা কিছুটা হলেও কমে যাবে। তাই আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে অর্থবহ করার জন্য বিএনপিকে অনানুষ্ঠানিক মতবিনিময় এবং আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, যা বর্তমান নির্বাচন কমিশনের আন্তরিকতা ও সদিচ্ছারই বহিঃপ্রকাশ।’
সিইসির চিঠি
আলোচনা ও মতবিনিময়ের জন্য বিএনপিকে ২৩ মার্চ চিঠি দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।
চিঠিতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে দলীয় অন্য নেতা এবং প্রয়োজনে সমমনা দলগুলোর নেতাসহ আমন্ত্রণ জানানো হয়।
চিঠিতে সিইসি লিখেন, ‘২০২২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি আমরা দায়িত্ব গ্রহণের পর ধারাবাহিকভাবে স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচন করে আসছি। বর্তমান কমিশন দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ সংসদ নির্বাচনের কথা অনুধাবন করে আসছে।’
চিঠিতে বর্তমান ইসি ও আগামী নির্বাচন নিয়ে বিএনপির অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বর্তমান কমিশনের প্রতি অনাস্থা ব্যক্ত করে প্রত্যাখ্যান করে আসছে। আপনারা নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যদিও আপনাদের এমন রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ও কৌশলের বিষয়ে কমিশনের কোনো মন্তব্য নেই।’
চিঠিতে সিইসি বলেন, ‘আপনাদের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হলেও কমিশন মনে করে বৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে আনুষ্ঠানিক না হোক, অনানুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা বা মতবিনিময় হতে পারে। আপনাদের নির্বাচন কমিশনে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। সদয় সম্মত হলে দিনক্ষণ আলোচনা করে নির্ধারণ করা যেতে পারে। প্রত্যুত্তর প্রত্যাশা করছি।’
আরও পড়ুন:গণহত্যা দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের জন্য জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছে সরকার।
২৫ মার্চের কালরাত স্মরণে এসব কর্মসূচির অংশ হিসেবে শনিবার রাত সাড়ে ১০টা থেকে ১০টা ৩১ মিনিট পর্যন্ত সারা দেশে এক মিনিট আলো বন্ধ রেখে প্রতীকী ব্ল্যাকআউট পালন করা হয়। তবে কেপিআই ও জরুরি স্থাপনাগুলো এ কর্মসূচির আওতামুক্ত ছিল।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকাসহ সারা দেশে ‘অপারেশন সার্চ লাইট’ নামে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালায়। ২০১৭ সাল থেকে বাংলাদেশে দিনটিকে ‘জাতীয় জেনোসাইড দিবস’ হিসেবে পালন করা হচ্ছে।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন। সংবাদপত্রগুলোতে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ হয়েছে।
সকাল সাড়ে ৯টায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে গণহত্যা দিবসের ওপর আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সারা দেশে গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গীতিনাট্য ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়।
স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিশিষ্ট ব্যক্তি ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কণ্ঠে ২৫ মার্চ গণহত্যার স্মৃতিচারণ ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
ঢাকাসহ সব সিটি করপোরেশনের মিনিপোলগুলোতে গণহত্যার ওপর দুর্লভ আলোকচিত্র ও প্রামাণ্যচিত্র প্রচার করা হয়েছে।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে জোহরের নামাজের পর বা সুবিধাজনক সময়ে দেশের সব মসজিদে বিশেষ মোনাজাত এবং অন্য উপাসনালয়গুলোতে প্রার্থনার আয়োজন করা হয়।
জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এবং বিদেশে বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশনগুলোতে দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য