‘যানজটের নগরী’ ঢাকায় অল্প সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে অ্যাপভিত্তিক মোটরবাইকের চেয়ে দ্রুত বাহন আর নেই। তবে জনপ্রিয় এই সেবা আর আগের মতো অ্যাপনির্ভর নেই। অনেক চালক তার অ্যাপ বন্ধ করেই যাত্রী পরিবহন করেন। অনেক যাত্রীও ‘কিছুটা লাভের’ আশায় তাদের সঙ্গে ‘চুক্তিতে’ যান।
চালক ও যাত্রীদের এই অনিয়মের সুযোগে চাঁদাবাজিতে মেতেছেন অনেকে। রাজধানীর ব্যস্ত মোড়ে মোড়ে চাঁদার টাকা তোলার লোক ঠিক করা আছে ‘বড় ভাইদের’। টাকা না দিলে গাড়ি ছাড়তে দেয়া হয় না। প্রশ্ন করলে পড়তে হয় ‘ঝামেলায়’।
অভিযোগ আছে, চাঁদাবাজির এই সিন্ডিকেটে আছে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরাও।
চালক ও যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে আরও জানা যায়, শুরুর দিকে অ্যাপভিত্তিক রাইড শেয়ারিং নিয়ম মাফিকই ছিল। গত মার্চে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর কয়েক মাস আগেই শুরু হয় ‘কন্টাক্টে’ চলাচল। লকডাউন শেষে আবার বাড়তে থাকে চুক্তিতে চলাচল।
এখন নিবন্ধিত বেশিরভাগ চালক ও যাত্রী চুক্তিতে চলাচল করছেন। এর প্রধান কারণ কোম্পানিকে ফাঁকি দিয়ে ‘দুই পয়সা’ বাড়তি আয় করা বা কম ব্যয় করা। অনেকে আবার সঠিকভাবে অ্যাপ ব্যবহার করতে পারেন না। অনেকের অ্যাপ ব্যবহার করার মতো মোবাইল ফোনও নেই।
বাইকচালক মো. সাদ্দাম নিউজবাংলাকে বলেন, যাত্রাবাড়ী, মোহাম্মদপুর, বসিলা, সাইনবোর্ড, মাতুয়াইল, সদরঘাট, স্টাফ কোয়ার্টার, শনির আখড়া, ফুলবাড়িয়াসহ রাজধানীর বেশ কিছু জায়গায় কিছু মানুষ প্রভাব খাটিয়ে চাঁদা তোলেন। যারা চাঁদা তুলছেন তারা বলছেন, এই টাকার ভাগ পুলিশসহ বিভিন্ন ‘জায়গায়’ দেয়া লাগে।
‘আপনারা কি এই চাঁদাবাজির প্রতিবাদ করেন না?’
জবাবে সাদ্দাম বলেন, ‘প্রতিবাদ করতে গেলে ১০-১৫ জন একসঙ্গে এসে ঝামেলা করে। হুমকি দেয়। এ কারণে ১০ টাকা দিয়ে ঝামেলা মুক্ত থাকি।’
কোনো কোনো স্ট্যান্ডে প্রায় এক বছর আগে থেকেই এই চাঁদাবাজি চলছে বলে অভিযোগ করেন বাইক রাইডার আবু জাফর।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমরা যারা গাড়ি চালাই, এই গাড়িকে কেন্দ্র করে অনেক স্ট্যান্ডে আমাদের থেকে চাঁদা নেয়া হয়। কোনো স্ট্যান্ডে ১০ টাকা, কোনো স্ট্যান্ডে ২০ টাকা নেয়া হয়। অন্যান্য জায়গায় ১০ টাকা দিলেও স্টাফ কোয়ার্টারে ২০ টাকা দিতে হয়।’
আবু জাফর আক্ষেপ করে বলেন, ‘এই বাইক চালিয়ে কোনোভাবে জীবন চালাই। আর তারা কোনো কাজ না করে এইভাবে চাঁদা তুলে খায়।’
তিনি বলেন, ‘স্থানীয় ছেলেরাও কিছু সমস্যা করে। আমরা দূর থেকে যারা যাই, আমাদের ট্রিপ না দিয়ে তারা জোর করে ট্রিপ নিয়ে চলে যায়।’
রোববার যাত্রাবাড়ী মোড়ে এ রকম বাইক চালকদের কাছ থেকে চাঁদা তুলছিলেন আজাদ নামের এক তরুণ। চাঁদা তোলার কারণ জানতে চাইলে প্রথমে তিনি কোনো জবাব দিতে চাননি।
এক পর্যায়ে বলেন, ‘আমি এখান থেকে টাকা তুলে আমার বড় ভাই মিরাজকে দেই। উঠানো টাকা থেকে ভাই আমায় টাকা দেন। এটা আমার কর্ম। মানুষ যে কাজ করে এইডাই তার কর্ম।’
এ সময় পাশ থেকে বিপ্লব নামে এক বাইক রাইডার বিরক্তির সুরে বলেন, ‘ভাই আমাগো কে জ্বালায় জানেন না? গাড়ি পার্কিং করলে তো মামলা দেয়। মামলা দেয় কারা? তারাই টাকা নেয়। বুঝেন নাই ব্যাপারডা? এই হানে বড় একটা সিন্ডিকেট আছে ভাই।’
মহাখালীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন বসিলার অপূর্ব রায়। মাঝেমধ্যেই অ্যাপভিত্তিক মোটরবাইকে চলাফেরা করেন জানিয়ে রোববার নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘বেড়িবাঁধ মোড়ে বাস না পেয়ে বাইক নেয়ার কথা ভাবলাম। সঙ্গে স্মার্টফোন না থাকায় অ্যাপ থেকে কল করতে পারছি না। এর মধ্যেই রাস্তার মোড় ঘুরে একজন সামনে এসে জিজ্ঞেস করলো কোথায় যাবেন?
‘মহাখালীর কথা বলতেই ১২০ টাকায় ভাড়া ঠিক হলো। কিন্তু যখনই বাইকে উঠতে যাব, তখনই এক লোক দৌড়ে এসে বলনে, ভাই এই বাইকে উঠতে পারবেন না। এইখানে সিরিয়াল দেয়া আছে। বাইক নিতে হলে এখান থেকেই নিতে হবে বলে প্রথমে আসা লোককে তাড়িয়ে দিলেন তারা। তাদের নিয়ম নাকি এটাই।’
অপূর্ব রায় বলেন, ‘তাদের কথামতো যেই বাইকে উঠে বসলাম, আরেকজন দৌড়ে আসল; তার হাতে বাইকচালক ১০ টাকা দিলেন। জিজ্ঞাসা করলাম কিসের টাকা? বলে এখান থেকে যাত্রী নিলে প্রতি ট্রিপে ১০ টাকা দিতে হয়। এখানকার সিন্ডিকেটের নিয়ম এটাই। সিন্ডিকেট সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাইলে বাইকচালক চুপ হয়ে যান।’
এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার মো. ওয়ালিদ হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যদি কেউ এভাবে টাকা নিয়ে থাকে তবে সেটা সম্পূর্ণ অবৈধ। এটা অবশ্যই শাস্তিযোগ্য অপরাধ; সে যেই হোক না কেন। এই টাকা কারা নিচ্ছে সুনির্দিষ্ট তথ্য পেলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নিব। আমরা বিষয়টা খোঁজ নিয়ে দেখব।’
আরও পড়ুন:সারা দেশের মহাসড়কে রয়েছে ৮৮৩টি বিপজ্জনক বাঁক। তাতে এসব পয়েন্টে তৈরি হয়েছে মরণফাঁদ। এসব বাঁকে প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে দুর্ঘটনা। হতাহত হচ্ছে বিভিন্ন পরিবহনের যাত্রী ও পথচারী।
মহাসড়কে বিগত ১০ বছরে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করে এসব বিপজ্জনক বাঁক চিহ্নিত করেছে হাইওয়ে পুলিশ। বাঁকগুলোতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমাতে মহাসড়কের ওই অংশ সোজা করাসহ বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়েছে হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে।
তথ্যমতে, ৮৮৩টি বাঁকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২৬৪টি বাঁক রয়েছে হাইওয়ে পুলিশের দক্ষিণ বিভাগের মাদারীপুর রিজিওনে। এই রিজিওনের আওতায় রয়েছে মাদারীপুর, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, বরিশাল, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, খুলনা, বাগেরহাট, মাগুরা, যশোর ও নড়াইল।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চসংখ্যক বিপজ্জনক বাঁক রয়েছে বগুড়া রিজিওনে। এই রিজিওনের আওতাধীন বগুড়া, পঞ্চগড়, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী, নাটোর, পাবনা, রংপুর, দিনাজপুর, লালমনিরহাট ও গাইবান্ধার মহাসড়কে বিপজ্জনক বাঁক রয়েছে ২৪৮টি।
এর বাইরে কুমিল্লা রিজিওনে ১৮১টি ও সিলেট রিজিওনে ১২৬টি বিপজ্জনক বাঁক রয়েছে। এই মরণফাঁদ সবচেয়ে কম রয়েছে গাজীপুর রিজিওনে। এখানকার মহাসড়কে বিপজ্জনক বাঁকের সংখ্যা ৬৪টি।
হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি শাহাবুদ্দীন খান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা ঝুঁকি বিবেচনায় মহাসড়কের বাঁকগুলো চিহ্নিত করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে জানিয়েছি। সে অনুযায়ী কাজও হচ্ছে। এসব বাঁকে যে রেগুলার দুর্ঘটনা ঘটছে এমনটা নয়। তবে এই স্পটগুলোতে বাড়তি ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। কোনোটাতে কম ঝুঁকি, কোনোটাতে বেশি।
তিনি জানান, দুর্ঘটনা কমানোর জন্য কিছু সড়কে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কাজ হয়েছে। আরিচা মহাসড়কে কাজ হয়েছে, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে রোড প্রশস্ত করা এবং সার্ভিস লেন করার মাধ্যমে কাজ হয়েছে। এভাবে ঝুঁকি কমানোর কাজ চলছে।
তিনি বলেন, ‘সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে পথচারী ও যানবাহনের চালকদের সচেতন হওয়ার বিকল্প নেই। অন্যান্য সংস্থার পাশাপাশি হাইওয়ে পুলিশ এই সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করছে।
সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে সচেতনতার পাশাপাশি মহাসড়ককে বাঁকমুক্ত করতে পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন বলে অভিমত গবেষকদের। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সড়ক ও দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআরআই) সহকারী অধ্যাপক কাজী মো. সাইফুন নেওয়াজ বলেন, ‘মহাসড়কের এসব বাঁক বছরের পর বছর ধরে আলোচনায় রয়েছে। এর মধ্যে কিছু বাঁক সোজা করা হয়েছে। তবে বেশিরভাগ বাঁকই আগের মতোই বিপজ্জনক অবস্থায় রয়ে গেছে। এ কারণে সড়ক দুর্ঘটনার হার বাড়ছে।
‘পাশাপাশি অনেক যানবাহনের ফিটনেস না থাকার পরও তারা মহাসড়কে বেপরোয়া। বেশিরভাগ দুর্ঘটনার ক্ষেত্রেই তদন্তে ফিটনেস ফেইলের তথ্য বেরিয়ে আসে।’
হাইওয়ে পুলিশের তথ্যমতে, বরিশাল থেকে মহাসড়ক ধরে গৌরনদী পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার দূরত্ব পাড়ি দিতে একজন চালককে অতিক্রম করতে হয় চারটি ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক। গাছের আড়ালে লুকিয়ে থাকা এসব বাঁকে বিপরীত দিক থেকে আসা যানবাহনের অবস্থান চিহ্নিত করা যায় না। চালক যখন বুঝতে পারেন ততক্ষণে ঘটে যায় প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা। সারাদেশে এ ধরনের ৮৮৩টি বাঁক রয়েছে।
মহাসড়কে দুর্ঘটনা রোধে নানামুখী কার্যক্রমের অংশ হিসেবে দুর্ঘটনাপ্রবণ বিপজ্জনক বাঁক চিহ্নিত করার কাজটিও করে থাকে হাইওয়ে পুলিশ।
হাইওয়ে পুলিশের তথ্য বলছে, বরিশাল থেকে ভুরঘাট পর্যন্ত প্রায় ৫০ কিলোমিটার মহাসড়কে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক রয়েছে অন্তত দুই ডজন। এর মধ্যে কাশিপুরের বন বিভাগ ও সমবায় ইনস্টিটিউটের সামনের রাস্তা, গড়িয়ারপাড়ের জননী পেট্রোল পাম্প ও কলাডেমা, ক্যাডেট কলেজ, রহমতপুর সেতুর ঢাল, বিমানবন্দর মোড়, দোয়ারিকা ব্রিজের ঢাল, জয়শ্রী, গৌরনদীর প্রবেশপথ, বামরাইল স্কুল সংলগ্ন, বাটাজোড়, আশুকাঠি, টরকি বাজার, কটকস্থল, বার্থি ও ভুরঘাটা সেতুর আগে বিপজ্জনক এসব বাঁক রয়েছে।
বিপজ্জনক বাঁকগুলোতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি আরও বাড়িয়েছে অবৈধ যানবাহন। এসব যানবাহন মহাসড়কে দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ বলেও মনে করে হাইওয়ে পুলিশ। গত এক বছরে সড়কে শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে সবচেয়ে বেশি জরিমানা আদায় হয়েছে মাদারীপুর রিজিওনে। এরপর পর্যায়ক্রমে রয়েছে কুমিল্লা, গাজীপুর, সিলেট ও বগুড়া রিজিওন।
মহাসড়কে দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে বেশ কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানান হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি (এইচ আর অ্যান্ড মিডিয়া) মো. শামসুল আলম।
তিনি বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকে সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড দেয়া হয়েছে। বাঁকগুলো সম্পর্কে আশপাশ এলাকার স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়ে সচেতনতামূলক সভা করা হয়েছে। পাশাপাশি মহাসড়কে চলাচল করা যানবাহনের চালকদের নিয়েও সভা করা হয়েছে। সচেতনতামূলক কর্মসূচি এখনও পালন করা হচ্ছে।’
আরও পড়ুন:বিশ্বের একক বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনভূমি সুন্দরবন বাঘ, চিত্রা হরিণ, কুমিরসহ নানা প্রজাতির মাছ, সরীসৃপ ও পাখির আবাসস্থল। সম্প্রতি এ বনে গাছকাটা প্রায় শূন্যের কোটায় নামলেও থেমে নেই বেশকিছু অনিয়ম।
হরিণের মাংস ও বাঘের চামড়া পাচার চলছে এখনও। নদ ও খালে অসাধু জেলেরা বিষ দিয়ে মাছ শিকার করায় নষ্ট হচ্ছে জলজ পরিবেশ। এ ছাড়া পরিবেশবান্ধব পর্যটন না হওয়ায় বনে বাড়ছে দূষণও।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা থেকে একটি বাঘের চামড়াসহ দুজনকে আটক করে র্যাব। ওই ব্যক্তিরা বনের মধ্যে ছাগলের মাংসের মধ্যে বিষাক্ত কীটনাশক ব্যবহার করে বাঘ শিকার করেছিলেন।
র্যাব-৬-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোসতাক আহমেদ বলেন, ‘এ শিকার তারা প্রায় কোটি টাকা মূল্য বিক্রি করার জন্য শৌখিন মানুষ খুঁজছিলেন গোয়েন্দা তৎপরতার মাধ্যমে তাদের আটক করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘কারা এই পাচার দলের সঙ্গে সংযুক্ত ও কারা এর ক্রেতা, তার কিছু তথ্য আমাদের কাছে আছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা তদন্তাধীন।’
বিভিন্ন হিসেবে, বর্তমানে বিশ্বের ১৩টি দেশে ৩ হাজার ৮৪০টি বাঘ প্রকৃতিতে টিকে আছে। এর মধ্যে ২০১৮ সালের জরিপ অনুয়ায়ী, বাংলাদেশে সুন্দরবনের বাঘের সংখ্যা আছে ১১৪টি। তবে ২০০৪ সালের জরিপ অনুসারে সুন্দরবনে বাঘ ছিল ৪৪০টি। অর্থ্যাৎ ১৫ বছরে বন থেকে ৩২৬ টি বাঘ কমে গেছে।
বন বিভাগের হিসাব মতে, ২০০১ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত সুন্দরবনে বাঘ মারা গেছে কমপক্ষে ৪৬টি। এর মধ্যে প্রাকৃতিক কারণে মারা গেছে ৮টি, শিকারিদের হাতে মারা গেছে ১৩টি, লোকালয়ে প্রবেশ করায় স্থানীয়দের হাতে মারা গেছে ৫টি, দুর্বৃ্ত্তদের হাতে মারা যাওয়া বাঘের চামড়া উদ্ধার হয়েছে ১৯টি ও ২০০৯ সালে ঘূর্ণিঝড় সিডরে মারা গেছে একটি। বাকি বাঘগুলি কোথায় গেল তার সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই।
বন বিভাগের দাবি, সম্প্রতি সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বেশ বেড়েছে। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি নতুন করে শুরু হয়েছে বাঘ জরিপ। সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) ও বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন বলেন, ‘২০২৪ সালের মার্চ মাসে এ জরিপের ফলাফল প্রকাশ করবে বন বিভাগ।’
বাঘের পাশাপাশি সুন্দরবনে থেমে নেই হরিণ শিকারও। বন বিভাগ ও স্থানীর পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ৪০ জন শিকারিকে হরিণের মাংস ও চামড়াসহ আটক করা হয়েছে।
বনজীবীরা জানান, হরিণ শিকারের জন্য নাইলনের দড়ির ফাঁদ ব্যবহার করা হয়। সাধারণ গহীন বনে বেশি হরিণ শিকার করা হয়। বাজারে প্রতি কেজি হরিণের মাংসের মূল্য ৮০০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত।
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘সুন্দরবনে হরিণ হত্যা ও পাচারের অপরাধে অনেকে আটক হয়েছেন। এই চোরা শিকারিরা অনেক শক্তিশালী। এদের বিরুদ্ধে মানুষ সাক্ষ্য দিতেও ভয় পায়। তারা এই সুযোগ নিয়ে আইনের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে আসে, আবারও অপরাধে লিপ্ত হয়। তবে ব্যাপকভাবে যে হরিণ শিকার হয়, তা নয়।’
তিনি বলেন, আমাদের পূর্ব ডিভিশনে ৫১৬ জনবলের বিপরীতে কর্মরত আছেন ২৯০ জন। এত কম জনবল নিয়েও আমরা যথেষ্ট অপরাধ নিয়ন্ত্রণ কাজ করছি।
সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবু নাসের মোহসিন হোসেন বলেন, ‘সম্প্রতি সুন্দরবনের বন্যপ্রাণী রক্ষায় অপরাধে জড়িতদের তথ্য প্রদানকারীকে পুরস্কার করা হচ্ছে। তথ্য দিলে ৮ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত পুরস্কার দেয়া হচ্ছে। ফলে কেউ হরিণ শিকার করলে আমাদের কাছে তথ্য আসছে, আমরা আটক করতে পারছি।’
২০১৮ সালের জরিপ মতে, এক থেকে দেড় লাখ হরিণ রয়েছে। বাঘ জরিপের আওয়তায় ২০২৪ সালের মার্চ মাসে হরিণের সংখ্যাও জানাবে বন বিভাগ।
খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দে বলেন, ‘সুন্দরবনে বাঘের ৮০ শতাংশ খাবার আসে হরিণ থেকে। তাই একই প্রকল্পের আওতায় বাঘের শিকার হরিণ ও বন্য শূকর-এ ধরনের প্রাণীর জরিপ করা হচ্ছে।'
সুন্দরবন বনদস্যুদের হাত থেকে বনজীবীরা মুক্তি পেলেও, বনজীবীদের বিষের উৎপাত থেকে মুক্তি পাচ্ছে না সুন্দরবন। জেলেদের ভাষ্য মতে, বনে এখন অল্প সংখ্যক স্থানে অধিক পরিমাণে জেলে একত্রে মাছ শিকার করতে যান। ফলে অনেক সময়ে কোন কোন জেলে বেশি মাছ আহরণ করতে পারেন না। তবে বিষ দিয়ে মাছ শিকার করলে একসঙ্গে প্রচুর মাছ পাওয়া যায়।
জেলেরা জানান জানান, একবার কোনো খালে বিষ দিয়ে মাছ শিকার করলে ১৫ দিনের মধ্যে ওই খালে কোনো মাছ তো পাওয়ায় যায় না। এমনকি মাছের ডিম বা পোনা পাওয়া যায় না।
বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো বলেন, কিছু অসাধু জেলে বিষ দিয়ে মাছ শিকারে জড়িত। কিন্তু তারা অল্পদিনে আইনের গণ্ডি পেরিয়ে আবারও বনে গিয়ে অপধার শুরু করে।
বন বিভাগের তথ্যমতে, সুন্দরবনে অভ্যন্তরে বর্তমানে সাতটি পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে। যেগুলে হলো, করমজল, হারবাড়িয়া, কটকা, কচিখালী, দুবলার চর, হিরণ পয়েন্ট ও কলাগাছী। ওইসব স্থানে প্রতি বছর প্রায় ২ থেকে আড়াই লাখ পর্যটক ভ্রমণ করেন। এ ছাড়াও নতুন করে আরও চারটি পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি এন্ড উড ডিসিপ্লিনের প্রফেসর ড. মো. ওয়াসিউল ইসলাম বলেন, সুন্দরবনের পর্যটন কেন্দ্রগুলোকে বনবিভাগ পরিবেশবান্ধব বলে দাবি করলেও, বাস্তবে তা হয়নি। তারা পরিবেশবান্ধব করার চেষ্টা করছে এটা বলা যেতে পারে। আর আমাদের দেশে এটা বাস্তবায়ন হতে আরও অনেক দেরি লাগবে।
তিনি বলেন, ‘বনে পর্যটকরা পলিথিন নিয়ে যাচ্ছেন। খাবারের অংশসহ সেই পলিথিন ফেলে আসছে, এটা বন্যপ্রাণী খাচ্ছে। ফলে তাদের শরীরে এটি ইফেক্ট পড়বে। এখারে বন বিভাগের তদারকির অভাব আছে, কারণ বনে জনবল সংকট। আর আমাদের দেশের মানুষও পরিবেশ সম্পর্ক সচেতন নয়।’
একরাতের বৃষ্টি আর্শীবাদ হয়েই এসেছিল আমের রাজধানী খ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জে। রোববার রাতে হওয়া বৃষ্টিতে আম বাগানগুলোর ধুলাবালি, শুকনো মুকুল, সবই ধুয়ে গেছে। আম বাগানগুলোতে যেন ফিরেছে সজীবতা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২৯.৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রায় ৩৮ হাজার হেক্টর আম বাগানে এবছর মুকুল এসেছে প্রায় ৯৫ ভাগ। বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবার ভালো ফলনের আশা করছেন আম বাগানের মালিক ও ব্যবসায়ীরা। এ বৃষ্টিপাত তাদের স্বপ্ন পূরণে সহায়কই হবে বলছেন তারা।
কৃষক ও আম উদ্যোক্তারা জানান, ৫ থেকে ৬ মাসের ব্যবধানে অনেকদিন পর দীর্ঘ সময় ধরে হওয়া এ বৃষ্টিপাতের ফলে, সার্বিকভাবে কৃষির জন্য উপকার বয়ে এনেছে। বরেন্দ্র এলাকায় পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। এ বৃষ্টিপাতের ফলে মাটি রিচার্জ হবে, যা খুবই দরকার ছিল। অন্যদিকে এ বৃষ্টিতে আমের গুটিগুলো বড় হবে, সেই সঙ্গে পোক্ত হবে।
বৃষ্টিপাতের পর আম বাগানে সজীবতা ফিরে এসেছে জানিয়ে শিবগঞ্জের আম উদ্যোক্তা ইসমাইল খান শামীম বলেন, ‘বৃষ্টি আমের জন্য আশীর্বাদ হয়েই এসেছিল। বৃষ্টি হলেও ঝড়ো হাওয়া তেমন ছিল না। ফলে আম বাগানের কোনো ক্ষতি হয়নি বরং বৃষ্টির কারণে সেচের কাজ হয়ে গেছে।’
শুধু শামীমই নয় অন্য আম বাগানের মালিক ও ব্যবসায়ীরা বেশ উৎফুল্ল বৃষ্টির পর বাগানগুলোর সজীব চেহারা দেখে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, রোববার রাতে সদরে ৪০ মিলিমিটার, শিবগঞ্জে ৩০ মিলিমিটার, গোমস্তাপুরে ১০ মিলিমিটার, নাচোলে ৪৫ মিলিমিটার, ভোলাহাটে ২২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। যার গড় প্রায় ২৯.৪ মিলিমিটার।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মুনজের আলম মানিক জানান, আম বাগানগুলোতে এ সময় সেচের প্রয়োজন ছিল, আবার অনেক বাগানে সেচ দেয়ার সুবিধা নাই, বৃষ্টি হওয়ায় প্রাকৃতিকভাবেই সেচের কাজটি হয়ে গেল। এতে করে বাড়তি খরচ থেকে বাঁচলেন বাগান মালিকরা। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো বৃষ্টির পানিতে আম গাছের ধুলাবালি, পোকামাকড় সবকিছুই ধুয়েমুছে গেছে, সেই সঙ্গে গাছে থাকা গুটিগুলো বড় হওয়া ও পোক্ত হওয়ার জন্য এ একটা বৃষ্টিই অনেক কার্যকর।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. পলাশ সরকার বলেন, ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জে রোববার যে বৃষ্টিপাত হয়েছে, তাতে আমাদের মাঠের বোরো ধান ও আমের জন্য খুবই উপকার বয়ে আনবে। এ সময় যে সেচ দিতে হতো সেটা দেয়া থেকে বেঁচে যাবেন কৃষকরা। সার্বিকভাবে দীর্ঘক্ষণ বৃষ্টিপাতের ফলে মাটিতে যে পানি সঞ্চয় হলো, বিশেষ করে বরেন্দ্র এলাকার মাটি যে রিচার্জ হলো তা সার্বিকভাবে কৃষির জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে।’
আরও পড়ুন:নতুন বছরের সাড়ে তিন মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও সিলেটের শিক্ষার্থীদের হাতে এসে পৌঁছায়নি সবগুলো বই। বিশেষত নবম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও ধর্ম শিক্ষা বিষয়ের একটি বইও এখন পর্যন্ত সিলেট আসেনি। এতে বিপাকে পড়েছে ওই শ্রেণির শিক্ষার্থীরা। বই না থাকায় বিদ্যালয়ে পাঠদানও ব্যাহত হচ্ছে।
আর কিছুদিন পরেই শুরু হবে রমজান। রমজানে একমাসের বেশি সময় বন্ধ থাকবে বিদ্যালয়। ফলে রমজানে আগে বই না পৌঁছলে বছরের প্রায় পাঁচ মাসই বইহীন থাকতে হবে শিক্ষার্থীদের।
তবে শিক্ষা কর্মকর্তারা বলছেন, রমজানের আগেই শিক্ষার্থীদের হাতে সব পৌঁছে দেয়া হবে।
নবম শ্রেণির তিনটি বই এখনও না আসার কথা জানিয়ে সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কবির উদ্দিন খান বলেন, ‘এখনও বেশিরভাগ ক্লাসেরই শতভাগ বই মিলেনি। তবে নবম শ্রেণির তিনটি বই সিলেটে এককপিও আসেনি। গণিতের মতো গুরুত্বপূর্ণ বইও এখন পর্যন্ত আসেনি। এতে শিক্ষার্থীদের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। এভাবে দীর্ঘসময় বইহীন থাকলে এর প্রভাব তাদের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলেও পড়বে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের কাছে পুরনো বইয়ের দু-এক কপি ছিল। এগুলো দিয়ে এখন শিক্ষকরা কোনোমতে ক্লাস নিচ্ছেন। কিন্তু শিক্ষার্থীদের কাছে বই না থাকায় তাদের বাড়ির কাজ দেয়া যাচ্ছে না। তবে শহরের চাইতে গ্রামের শিক্ষার্থীরা আরও বিপাকে পড়েছে।’
গত সপ্তাহে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালকের সঙ্গে বৈঠকেও বই না পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান তিনি।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের সিলেট কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে স্কুল, মাদ্রাসা, ভোকেশনাল, ইংরেজি ভার্সন মিলিয়ে মাধ্যমিক পর্যায়ে সিলেট জেলায় পাঠ্যবইয়ের মোট চাহিদা ছিল ৫৯ লাখ ৫৮ হাজার ১৪৪ সেট। এরমধ্যে পাওয়া গেছে ৫৭ লাখ ৫৫ হাজার ৫৩৮ সেট। ফলে এখনও দুই লাখ দুই হাজার ৬০৬ সেট বইয়ের ঘাটতি রয়েছে। জেলায় মাধ্যমিক পর্যায়ে স্কুলগুলোর চাহিদা ছিল ৪০ লাখ ৮৬ হাজার ৬৪৮ সেট। এরমধ্যে পাওয়া গেছে ৩৮ লাখ ৮৪ হাজার ৪২ সেট।
বই না পাওয়ায় ক্লাসেও তেমন পড়ানো হয় না জানিয়ে সিলেটের গোটাটিকর উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র আবু তাহের বলেন, ‘বই না থাকায় গণিত, বাংলা ও ধর্ম ক্লাসে তেমন পড়ানো হয় না। কিছু কিছু পড়ালেও আমরা তা বুঝতে পারি না। বিশেষত গণিতের একটি অধ্যায়ও এখন পর্যন্ত শেষ করা যায়নি।’
সাড়ে তিন মাসেও বই না আসায় সিলেট অগ্রগামী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক ঝর্ণা দেব ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা এক বছর পর এসএসসি দেবে। তাদের বই সবার আগে আসা উচিত ছিল। অথচ এখন পর্যন্ত গণিতের মতো গুরুত্বপূর্ণ বইও আসেনি। এই ক্ষতি কীভাবে পোষানো হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘রমজানের ছুটির পরই তো পরীক্ষা শুরু হবে। বই না পেলে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দেবে কীভাবে।’
আব্দুর রশিদ নামের আরেক অভিভাবক বলেন, ‘পুরনো বই থেকে ফটোকপি করে মেয়েকে পড়তে দিয়েছি। কিন্তু নতুন বইয়ে কোনো পরিবর্তন এসেছে কি না তা তো জানি না। ফলে এ নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় আছি।’
এবার শুরু থেকেই বই নিয়ে সংকট দেখা দেয়। বেশিরভাগ শিক্ষার্থীদের হাতেই পাঠ্যবই নির্ধারিত সময়ের অনেক পরে। ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে কয়েক ধাপে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির শতভাগ বই হাতে পায় শিক্ষার্থীরা।
তবে এখন ৯৫ শতাংশ পাঠ্যপুস্তক শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে গেছে জানিয়ে সিলেট জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবু সাঈদ মো. আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, ‘কিছু বই এখনও আমরা পাইনি। বিশেষত নবম শ্রেণির তিনটি বই। এগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দেয়া হবে।’
দু-একদিনের মধ্যে চাহিদার সব বই পৌঁছে যাবে জানিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের সিলেট অঞ্চলের উপপরিচালক জাহাঙ্গীর কবীর আহমদ বলেন, ‘রমজানের আগেই শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেয়া হবে।’
আরও পড়ুন:হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার জগদীশপুর-মনতলা সড়কের কৃষ্ণপুর ব্রিজের নির্মাণ কাজ দুই বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। ৮০ শতাংশের বেশি কাজ সম্পন্ন হলেও কোনো এক কারণে কাজ বন্ধ করে পালিয়ে যায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ব্রিজটি সম্পন্ন না হওয়ায় বিকল্প একটি ছোট কাঠের সেতু দিয়ে প্রতিদিন চলাচল করছেন অন্তত পাঁচ হাজার মানুষ। এতে নানা ধরনের ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দাসহ ওই সড়ক দিয়ে যাতায়াতকারীরা। বিশেষ করে সেখানে উৎপাদিত সবজি পরিবহনের ক্ষেত্রে বিপাকে পড়েছেন কৃষক ও পাইকাররা। নষ্ট হচ্ছে এ অঞ্চলের সবজির বাজার।
হবিগঞ্জ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) জানায়, মাধবপুর উপজেলার জগদীশপুর-মনতলা আঞ্চলিক সড়কের কৃষ্ণপুর এলাকায় ছড়ার ওপর পুরোনো ব্রিজটি ২০১৯ সালে পাহাড়ি ঢলে ভেঙ্গে যায়। এরপর সেখানে নতুন করে ব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগ নেয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। ২০২০ সালের শুরুর দিকে ২ কোটি ৩৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ২৫ মিটার দীর্ঘ ব্রিজটির দরপত্র আহ্বান করে এলজিইডি। কাজ পায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হাসান কনস্ট্রাকশন নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
২০২০ সালের মাঝামাঝি সময়ে কাজ শুরু হলেও করোনা মহামারির কারণে কিছুদিন পরই কাজ বন্ধ হয়ে যায়। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ২০২১ সালে পুনরায় কাজ শুরু হয়। ৮০ শতাংশের বেশি কাজ সম্পন্ন হলেও কোনো এক কারণে কাজ বন্ধ করে পালিয়ে যায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এরপর দীর্ঘ দুই বছর ধরে বন্ধ রয়েছে ব্রিজের নির্মাণ কাজ। এতে সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়েছে ওই সড়কে যাতায়াতকারী হাজার হাজার মানুষ।
সড়কটি দিয়ে চলাচল করেন জগদীশপুর, চৌমুহনী, মনতলা ও বহরা ইউনিয়নের জনসাধারণ। ইউনিয়ন চারটি সবজি চাষের জন্য বিখ্যাত। প্রতি বছর এখানে অন্তত ৭ থেকে ৮ শো কোটি টাকার সবজি উৎপাদন হয়। অথচ এই ব্রিজটির কারণে এখানে উৎপাদিত পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে সীমাহীন দুর্ভোগের পাশাপাশি বাড়ছে খরচও। বিশেষ করে সিলেট অঞ্চলের পাইকাররা এই এলাকা থেকে সবজি কিনতে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।
এই পথে নিয়মিত চলাচল করেন একটি বেসরকারি ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের মাঠকর্মী মো. সাইফ উদ্দিন।
তিনি বলেন, ‘দুই বছর ধরে এই ব্রিজটি এভাবে অর্ধেক কাজ করে ফেলে রাখা হয়েছে। ফলে ছোট কাঠের সেতু দিয়ে খাল পার হতে হয় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। এছাড়া বৃষ্টি হলে এই পথটি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। তখন আমাদেরকে অনেক কষ্ট করে যাতায়াত করতে হয়।’
স্থানীয় বাসিন্দা ফারুক মিয়া বলেন, ‘এই সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ চলাচল করে। ব্রিজটি ভাঙ্গা থাকার কারণে তারা অনেক কষ্ট করে চলাচল করেন। রোগী নিয়ে হবিগঞ্জ শহরে যাওয়ার কোনো অবস্থা নেই। রোগীকে নামিয়ে কোলে করে খাল পার হতে হয়। দ্রুত ব্রিজটির কাজ শেষ করার জন্য আমি অনুরোধ জানাই সরকারকে।’
স্থানীয় কৃষক মোতালিক মিয়া বলেন, ‘এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন অনেকগুলো ট্রাক ভরে সবজি যেত হবিগঞ্জ, সিলেট, সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে। পাইকাররা এসে ট্রাক ভরে ভরে সবজি নিয়ে যেতেন। কিন্তু দুই বছর ধরে ব্রিজ ভাঙ্গা থাকার কারণে সিলেট অঞ্চলের কোনো পাইকার আসেন না। তাদের সবজির ট্রাক আরও অন্তত ৭০ কিলোমিটার ঘুরে যেতে হয়। এতে তাদের লোকসান হয়।’
মাধবপুর উপজেলার বহরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আলাউদ্দিন বলেন, ‘আমার এখানে চারটি ইউনিয়ন মূলত সবজির জন্য বিখ্যাত। বছরে বারো মাসই এখানে নানা ধরনের সবজির চাষ হয়। কিন্তু পরিবহনের ক্ষেত্রে অনেক সমস্যা হয়। আমরা বারবার ঠিকাদার ও এলজিইডির সঙ্গে কথা বলেও ব্রিজটি সম্পন্ন করতে পারিনি।’
এ ব্যাপারে জানতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হাসান কনস্ট্রাকশনের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও সাড়া মেলেনি।
এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল বাছির বলেন, ‘প্রথম অবস্থায় করোনার কারণে কাজ বন্ধ ছিল। পরে অর্থ সংকটের কারণে বন্ধ হয়। ব্রিজের কাজ মূলত ৮০ শতাংশ শেষ। এখন অর্থছাড় হওয়ায় দ্রুত কাজ শুরু করতে ঠিকাদারকে নির্দেশ দেয়া হয়। তবে এরপরও তিনি শুরু না করায় কার্যাদেশ বাতিলের জন্য নোটিশও দেয়া হয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে।’
আরও পড়ুন:একটি ভ্যাকসিনের তিন ডোজ নিলে কখনই জরায়ু ক্যানসার হবে না- এই প্রচারণা চালিয়ে গাজীপুরে ছয় হাজারের বেশি নারীর দেহে তিনটি করে নকল ভ্যাকসিনের ডোজ দেয়া হয়েছে। ভ্যাকসিনটি বানানো হয়েছে আমদানি নিষিদ্ধ হেপাটাইটিস-বির ভ্যাকসিন থেকে।
গত তিন বছর ধরে জরায়ু ক্যানসারের ভ্যাকসিন সেরাভিক্স বাংলাদেশে আমদানি বন্ধ রয়েছে। আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে একটি হেপাটাইটিস-বির ভ্যাকসিনের এ্যাম্পল খুলে অন্তত ১০টি জরায়ু ক্যানসারের নকল ভ্যাকসিন বানিয়ে বিক্রি করছে একটি চক্র।
হেপাটাইটিস-বি-এর ভ্যাকসিন একটা নির্দিষ্ট পরিমাণে দেহে পুশ করার পর তা মানবদেহে ইমিউনিটি তৈরি করে। এক ভ্যাকসিন খুলে ১০টি ভ্যাকসিন বানালে এর কোনো কার্যকারিতা থাকবে না। এ ছাড়া ভ্যাকসিনের এ্যাম্পল খুলে অন্য এ্যাম্পলে প্রবেশ করানোর সময় নতুন করে জীবাণু প্রবেশ করতে পারে। যা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন মেডিসিন বিশেষজ্ঞরা।
পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে চোরাই পথে হেপাটাইটিস-বির ভ্যাকসিন জিন ভ্যাক-বি নিয়ে আসে চক্রের সদস্যরা। চোরাইপথে এই ভ্যাকসিনের এক এ্যাম্পল বাংলাদেশে নিয়ে আসতে খরচ হয় ৩৫০ টাকা। একটি এ্যাম্পল খুলে ১০টি এ্যাম্পলে প্রবেশ করানো হয়। নতুন এ্যাম্পলগুলোতে লাগিয়ে দেয়া হয় জরায়ু ক্যানসারের ভ্যাকসিন সেরাভিক্সের লেভেল।
লেভেল লাগানোর পর জরায়ু ক্যানসারের ভ্যাকসিন সেরাভিক্সের প্রতিটি এ্যাম্পল বিক্রি করা হয় আড়াই হাজার টাকা করে। গাজীপুরে ছয় হাজার নারীর কাছে জনপ্রতি তিনটি করে ১৮ হাজার এ্যাম্পল ভ্যাকসিন বিক্রি করে চক্রের সদস্যরা হাতিয়ে নিয়েছেন সাড়ে চার কোটি টাকা।
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের তেজগাঁও বিভাগ রাজধানীসহ পাশ্ববর্তী এলাকা থেকে বুধবার এই প্রতারক চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। তারা হলেন- সাইফুল ইসলাম শিপন, ফয়সাল আহম্মেদ, আল আমিন, নুরুজ্জামান সাগর ও আতিকুল ইসলাম।
পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ‘চক্রটি সুনির্দিষ্ট কিছু ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্যাম্পেইন চালিয়ে জরায়ু ক্যানসারের নকল এই ভ্যাকসিনগুলো বিক্রি করেছে। নকল ভ্যাকসিন এই নারীদের দেহে পুস করার মাধ্যমে মৃত্যুঝুঁকি পর্যন্ত তৈরি হতে পারে।’
যেভাবে বানানো হয় নকল ভ্যাকসিন
গ্রেপ্তার আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্তের মাধ্যমে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ জানতে পেরেছে, নকল ভ্যাকসিন তৈরির জন্য ভারত থেকে চোরাইপথে হেপাটাইটিস-বির ভ্যাকসিন জিন ভ্যাক-বি বাংলাদেশে নিয়ে আসেন সাইফুল ইসলাম শিপন। ফজর আলী নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমে ভ্যাকসিনগুলো সংগ্রহ করে ঢাকার দক্ষিণখান ও কেরানীগঞ্জে মজুত করা হয়।
পরবর্তীতে ভ্যাকসিনের এ্যাম্পলগুলো খুলে নতুন এ্যাম্পলে প্রবেশ করানো হয়। হেপাটাইটিস-বি-এর এক এ্যাম্পল খুলে এক মিলিগ্রাম করে প্রবেশ করানো হয় নতুন ১০টি এ্যাম্পলে। নতুন এ্যাম্পলগুলোতে মোড়ক লাগানো হয় জয়ায়ু ক্যান্সারের ভ্যাকসিন সেরাভিক্সের নাম করে।
তেজগাঁও গোয়েন্দা বিভাগের উপ-কমিশনার মো. গোলাম সবুর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই চক্রের সদস্যরা ভ্যাকসিনগুলো বিক্রি করে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। এমন তিনটি প্রতিষ্ঠানের নাম গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা আমাদের জানিয়েছে।’
গ্রেপ্তার আসামিদের বরাত দিয়ে ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, ‘মিরপুর দারুস সালামের ডা. এ আর খান ফাউন্ডেশন, দক্ষিণখানের আল নূর ফাউন্ডেশন ও চেরাগআলীর পপুলার ভ্যাকসিনেশন সেন্টারের মাধ্যমে নকল জরায়ু ক্যানসারের ভ্যাকসিনগুলো বিক্রি করে আসছিল চক্রটি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা এই তথ্যগুলো আরও যাচাই করে এর বাইরেও কারা কারা জড়িত আছে তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি।’
আরও পড়ুন:দুবাইয়ে জুয়েলারি শপ খুলে তা উদ্বোধন করতে বাংলাদেশের ক্রিকেট তারকা সাকিব আল হাসানসহ বেশকিছু তারকাকে ডাকা আলোচিত আরাব খানের বিরুদ্ধে সবমিলিয়ে ১২টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) এই আসামিকে পুলিশ পরিদর্শক মামুন এমরান খাঁন হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি রবিউল ইসলাম হিসেবে চিহ্নিত করার পাশাপাশি ওই মামলাগুলোর ব্যাপারেও নিশ্চিত হয়েছে। প্রত্যেকটি মামলাতেই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
ডিবি বলছে, গোপালগঞ্জ কোটালিপাড়ার যুবক রবিউল নাম, জাতীয়তা পাল্টিয়ে বাগিয়ে নিয়েছেন ভারতের পাসপোর্ট। আর এই পাসপোর্টেই পাড়ি জমিয়েছেন দুবাইয়ে। তাকে দেশে ফিরিয়ে বিচারের মুখোমুখি করতে ইন্টারপোলের সহায়তা চাইবে বাংলাদেশ পুলিশ।
তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, রবিউলের বিরুদ্ধে মামলার নথি খুঁজতে গিয়ে মিলেছে ১২ মামলার তথ্য। হত্যা, নারী ও শিশু নির্যাতনসহ অন্যান্য ধারায় করা মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। ২০১৬ সাল থেকে ২০২২ সালের মধ্যে এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানাগুলো জারি হয়। এসব মামলার তথ্য সন্নিবেশিত করে ইন্টারপোলের কাছে একটি আবেদন পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।
ডিবি মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার রাজিব আল মাসুদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা তাকে অনেক দিন ধরেই খুঁজছিলাম। দুবাইয় তিনি অবস্থান করছেন, এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে। ফলে এখন আমরা ইন্টারপোলের মাধ্যমে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা নেব।’
রবিউল ওরফে আরাব দীর্ঘদিন পলাতক থাকার পর সম্প্রতি আলোচনায় আসেন বিশ্বের এক নম্বর অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানকে দিয়ে দুবাইয়ে তার শোরুম উদ্বোধন করা হবে- এই ঘোষণার মাধ্যমে। কনটেন্ট ক্রিয়েটর হিরো আলমকেও সে দেশে নেয়ার আমন্ত্রণ জানান তিনি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘোষণাটি ছড়িয়ে যাওয়ার পর নড়েচড়ে বসেন গোয়েন্দারা। দীর্ঘদিন ধরে যাকে খোঁজা হচ্ছিল তিনি দুবাইয়ে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ‘আরাব জুয়েলার্স’ নামে সোনার দোকান দিতে যাচ্ছেন। কিনেছেন বাড়ি-গাড়ি।
গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, রবিউল ২০১৮ সালে পুলিশ পরিদর্শক মামুন এমরান খাঁন হত্যা মামলার ফেরারি আসামি। ২০২০ সালে তিনি দেশ থেকে ভারতে পালিয়ে গিয়েজালিয়াতির মাধ্যমে সেখানকার পাসপোর্ট গ্রহণ করেন, যাতে নাম দেন আরাব খান।
একই বছরে রবিউল প্রলোভনের ফাঁদে ফেলে চাঁদপুরের যুবক আবু ইউসুফকে আদালতে আত্মসমর্পণ করান। ইউসুফ পরিচয় গোপন করে আদালতে নিজেকে রবিউল ইসলাম বলে পরিচয় দিয়ে আত্মসমর্পণ করে জামিন চান।
আদালত জামিন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। কারাগারে থাকা অবস্থায় ইউসুফ তার নিজের পরিচয় ফাঁস করে দেন। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) তদন্তেও বিষয়টি উঠে আসে।
পরিচয়ের স্বপক্ষে যথাযথ কাগজ আদালতে উপস্থাপনের মাধ্যমে হত্যা মামলা থেকে দায়মুক্তি পান ইউসুফ, তবে রবিউলের হয়ে আদালতে আত্মসমর্পণ করায় তার নামে আরও দুটি মামলা হয়, যা এখন চলমান।
ডিএমপি ডিবি সূত্রে জানা যায়, এক পর্যায়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া রবিউল নাম পরিবর্তন করে হয়ে যায় আরাব খান, বাগিয়ে নেয় ভারতের পাসপোর্ট। ২০২১ সালে পেয়ে যান সংযুক্ত আরব আমিরাতে থাকার অনুমতি। বছর ঘুরতে না ঘুরতে বুর্জ খলিফায় ৬৫ তলায় ফাউন্টেইন ভিউ ফ্ল্যাটের মালিক বনে যান আরাব।
এরই মধ্যে ঘোষণা আসে, উদ্বোধন হতে যাচ্ছে আরাবের গোল্ড জুয়েলারি শপ ‘আরাব জুয়েলার্স’। শপটির লোগো বানানো হয় ৬০ কেজি স্বর্ণ দিয়ে।
বাংলাদেশ সময় রাত ১০টার দিকে সাকিব আল হাসানকে জুয়েলারি শপটি উদ্বোধনের জন্য সেখানে যেতে দেখা গেছে। দেশি-বিদেশি শিল্পীদের উপস্থিতিতে উদ্বোধন হয় ফেরারি আসামি রবিউল ওরফে আরাবের জুয়েলারি শপ।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য