করোনার সময়ে ঘর থেকে বের হয়ে যেখানেই যান, মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। চলছে ‘নো মাস্ক-নো সার্ভিস’ নীতি।
মাস্ক এখন একপ্রকার পোশাক হয়ে গেছে; হয়ে গেছে ফ্যাশনের অংশ।
সুন্দর দেখাতে, মনের ভাব প্রকাশে কিংবা অনেক সময় প্রতিবাদের ভাষা বোঝাতেও ব্যবহার হচ্ছে মাস্ক।
ফ্যাশন ডিজাইনাররা বলছেন, মানুষ জামার সাথে ম্যাচিং করে টিপ পরে, চুড়ি পরে। যে জিনিসটি মুখের অর্ধেক অংশ ঢেকে রাখে সেটিকে কেন না ফ্যাশনেবল করা হবে না? অনেক ফ্যাশন হাউজ জামার সাথে এখন ম্যাচিং করে মাস্কও দিচ্ছে।
সাধারণ মানুষের জন্য কাপড়ের মাস্কই ভালো, এমন কথা বিশেষজ্ঞদের। সেই কাপড়ের মাস্কে জমে উঠেছে আবার নকশার বৈচিত্র্য।
সুন্দর দেখাতে নকশা মাস্ক
দেশজ সংস্কৃতি আর ঐতিহ্য যেমন আসছে মাস্কে, তেমনি বৈশ্বিক ধারার আধুনিক নকশাও দেখা যাচ্ছে। রিকশা পেইন্টিংয়ের থিম যেমন রয়েছে, তেমনি সুপারহিরো থিমও বাদ যায়নি।
জামদানি প্রিন্ট, গামছা প্রিন্টসহ অন্যান্য ধাঁচের প্রিন্ট রয়েছে বাজারের মাস্কে। রয়েছে পলকা ডট, চেক, ডোরাকাটা নকশাসহ নানা প্যাটার্নের ব্যবহার। মোম বাটিকও মিলবে। ফুল, প্রজাপতি, মোমবাতি, পতাকার ‘থিম’ সবই উঠে আসছে এখনকার মাস্কে।
কেউ পছন্দ করেন ভেজিটেবল ডাই। কেউ চান একরঙা মাস্ক। কেউ চান ‘করপোরেট লুক’। পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে মাস্ক বেছে নিতে পারেন।
শিশুদের পছন্দসই রঙিন ফুল-ফল, গাড়ি কিংবা কার্টুন চরিত্রভিত্তিক মাস্কও পাওয়া যায়। কোথাও আবার মাস্ক পাওয়া যায় পুরো পরিবারের সব সদস্যের সঙ্গে মিলিয়ে, যাতে শিশুরা অভিভাবকদের মতো মাস্ক পরতে উৎসাহ পায়।
মুখের আকার অনুযায়ী মাস্কের আকার বেছে নেওয়ার সুযোগ থাকছে কোথাও কোথাও। আবার মাস্কের পেছনের অংশ সুবিধাজনক উপায়ে ‘ফিট’ করার বা সামঞ্জস্য রাখার ব্যবস্থাও থাকতে পারে। শিশুর বয়স ও মুখের গঠনভেদে ভিন্ন আকারের মাস্ক প্রয়োজন হয়।
রাজধানীর ধানমন্ডিতে রবীন্দ্র সরোবরে বন্ধুদের সাথে বেড়াতে এসেছেন তাহমিনা হক। সুতি কাপড়ের মাস্কে আবার লতাপাতার ডিজাইন।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, আমরা মেয়েরা যারা লিপস্টিক দিতাম, তারা তো এখন সেটা দিতে পারছি না। সেক্ষেত্রে কালারফুল মাস্ক হলে দেখতে ভালো লাগে। আর কাপড়টা তো নরম, পরেও আরাম পাওয়া যায়।’
লেকের আরেকপাশে বন্ধুক নিয়ে বেলুন শ্যুট করছেন মিতুশি খন্দকার। সুতি কাপড়ের মধ্যে ডিজাইন করা মাস্ক। নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখন তো মুখ পুরোপুরি ঢেকে থাকে। সেজে এসেও লাভ নাই। ডিজাইন করা মাস্ক থাকলে ছবি তুললে সুন্দর লাগে।’
তিনি জানান, ড্রেসের সাথে ম্যাচিং করে তার সাতটি মাস্ক আছে।
‘জামার সাথে ম্যাচিং করেই পরি আসলে। সাত-আটটা মাস্ক আছে এখন পর্যন্ত, যেগুলা জামার সাথে ম্যাচিং করে কিনেছি। একটা আবার জামার সাথে ফ্রি পেয়েছি।’
সাশ্রয়ী মূল্যে দীর্ঘদিন ব্যবহার করা যায়
করোনার শুরু থেকে সার্জিক্যাল মাস্ক, এন-৯৫, কেএন-৯৫ এর চাহিদা অনেক বেশি ছিল। এন-৯৫ কিংবা কেএন-৯৫ এর যে দাম, তা অনেকেই বহন করতে পারে না। আবার কম দামে পেলেও সার্জিক্যাল মাস্ক ব্যবহারের হ্যাপাও কম নয়। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, সার্জিক্যাল মাস্ক একবার মুখ থেকে সরিয়ে ফেললে আবার তা পরা উচিত নয়। সেদিক থেকে ধুয়ে একাধিকবার পরার সুবিধার পাশাপাশি ফ্যাশনের জন্যে সুতির নকশা-করা মাস্কগুলোকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন অনেকে।
সবুজ রঙের কটন কাপড়ের উপর হাতে আঁকা জবা ফুলের মাস্ক পরা অফিসগামী মারজিয়া জাহান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সার্জিক্যাল মাস্কের দাম কম হলেও ওভারঅল চিন্তা করলে দাম আসলে বেশি পরে। কারণ সার্জিক্যাল মাস্ক একটা একবারের বেশি পরা যায় না। সেক্ষেত্রে ১৫০ টাকা দিয়ে কটনের মাস্ক কিনলে সেটা ধুয়ে দীর্ঘদিন পরা যায়। আর দেখতেও আসলে রুচিশীল, পরেও আরাম।’
জামদানি নকশার কাজ করা মাস্ক পরে হেঁটে যাচ্ছিলেন এনজিওকর্মী মোশরেফ রিফাত। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘মাস্ক এখন আর অপশনাল কিছু না, এটি এখন এসেনশিয়াল জিনিস হয়ে গেছে। তাই সুন্দর রুচিশীল মাস্ক পরলে নিজেকে দেখতে ভালো লাগে, কনফিডেন্স বাড়ে।
‘এই ধরুন আমি ঘড়ি পরি। সব ঘড়িই সময় দেখায়। তবে, আমরা কিন্তু ঘড়ি চয়েস করে কিনি। মাস্কও ঠিক তাই। দেখেশুনে বাছাই করে কেনার সুযোগ থাকলে কেন নয়।’
অভিব্যক্তি অনুযায়ী মাস্ক
বাংলার জনপ্রিয় অভিনেতা জসীম হুংকার দিয়ে আছেন – এমন একটি রিকশা পেইন্টিংয়ের মাস্ক ব্যবহার করেন সাদ্দিফ অভি।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘এই মাস্কটাতে তিনটি লেয়ার ব্যবহার করা হয়েছে, যা বাজারের অন্য মাস্কের তুলনায় ভালো মনে হয়েছে আমার কাছে।’
জসীমের হুংকার দেয়া প্রিন্ট দিয়ে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, মাস্ক না পরলে সাজা ভোগ করতে হবে। তিনি বলেন, ‘আবার এই মাস্ক পরাতে অনেকেই আমাকে খেয়াল করে। তাকিয়ে দেখার চেষ্টা করে। এতে করে তারাও মাস্ক পরার জন্য উৎসাহ পাবে বলে আমি মনে করি।’
প্রেমিকার সাথে দেখা করতে পার্কে বসে আছেন তাবিদ রায়হান। মুখে কালো রঙের মাস্ক। নীল রঙ্গে লেখা ‘ক্ষ্যাপা’।
তিনি বলেন, ‘গার্লফ্রেন্ডের সাথে ঝগড়ার পর আজ ১৭ দিন বাদে দেখা হচ্ছে। আমি রেগে আছি বুঝাইতেই এই মাস্কে ক্ষ্যাপা পড়ছি। আমি নিজেই আঁকাআঁকি করি। অনেকেই এমন কাস্টমাইজড মাস্ক কেনে। এক রঙের মাস্ক কিনে সেটাতে চাহিদা অনুযায়ী এঁকে দিই।’
ফ্যাশনের জন্য দেখছেন না মূল্য কত
চাহিদা অনুযায়ী মাস্ক তৈরি করে দেয় এমন একটি প্রতিষ্ঠি ‘সূর্যপ্রভা’র প্রধান এলিনা ত্রিপুরা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অভ্যাস নাই বলে অনেকেই মাস্ক পরতে চায় না। সুন্দর নকশার মাস্ক মানুষকে মাস্ক পরতে অভ্যস্ত করে তোলে। এই ভাবনা থেকেই কাস্টমাইজড মাস্ক তৈরির কথা মাথায় আসে।
‘মাস্ক কেবল মুখে সেঁটে থাকা একটা আবরণ নয়, মুখোশের আড়ালের মানুষটির পরিচয়, আবেগ-অনুভূতি, জীবনভাবনা, ভালোবাসাকে ধারন করে থাকার গল্প হয়ে উঠতে পারে এই মুখোশ।’
অনলাইন বিক্রি ছাড়াও বিভিন্ন ফ্যাশন হাউজগুলোতেও বিক্রি হচ্ছে মাস্ক। ফ্যাশন হাউস ‘ইয়োলো’-তে বিক্রি হচ্ছে নানানরকম মাস্ক। প্রতিষ্ঠানটির জিগাতলা শাখার বিক্রয় ব্যবস্থাপক জানান, এখন মাস্কই তাদের সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া আইটেম। ৭০, ১২৫ ১৪৫, ১৪৫, ৩৯৫ ও ৮৯৫ টাকার মাস্ক রয়েছে।
ফ্যাশন ডিজাইনার লায়লা আঞ্জুমান নিউজবাংলাকে বলেন, মানুষ নিজেকে সুন্দর দেখাতে নানান রকম আয়োজন করে। যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী মানুষ এই খাতে ব্যয় করে। তাই দামের কথা কেউ মাথায় রাখে না।
তিনি বলেন, ‘ফ্যাশন আসলে সময়ের সাথে পরিবর্তনশীল। আর যে জিনিসটা মানুষ বেশি ব্যবহার করে সেটাকে ঘিরেই ফ্যাশন তৈরি হয়। এক সময় হাতে গোণা কিছু মানুষ মাস্ক পরত। তাও বিশেষ কারণে। এখন সেটা সবার জন্য বাধ্যতামূলক।’
সাধারণ মানুষের জন্য কাপড়ের মাস্ক ভালো
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম বলেন, ‘এখন মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো নয়। তাই যেটা ধুয়ে ব্যবহার করা যাবে তেমন মাস্কই আসলে ভালো। সার্জিক্যাল মাস্ক একবার মুখ থেকে খোলার পর আবার না পরার জন্যই আমরা বলি। সে ক্ষেত্রে একজন মানুষকে দৈনিক অনেক মাস্ক কিনতে হবে। তার থেকে কাপড়ের মাস্কগুলো ধুয়ে দীর্ঘদিন ব্যবহার করা যায়।’
আরও পড়ুন:দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩১২টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৩ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। তবে এ সময়ের মধ্যে কেউ মারা যায়নি। আজ মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়। এ দিন প্রতি ১০০ নমুনায় শনাক্তের হার ৪ দশমিক ১৭ শতাংশ বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, ‘২০২০ সালের ১৮ মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত দেশে করোনায় মৃত্যু ২৯ হাজার ৫২১ জন। এর মধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২২ জনের। এছাড়া ২০২০ সালের ৮ মার্চ থেকে মোট শনাক্ত হয়েছে ২০ লাখ ৫২ হাজার ১২৭ জন। এর মধ্যে গত জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ৫৮২ জন।
এডিশ মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। সারা দেশে মশা নিধন কার্যক্রমের দুর্বলতার কারণে ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক মোড় নিয়েছে। চলতি বছরের মে মাসের তুলনায় জুন মাসে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় তিনগুণ বেড়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, বছরের শুরুর দিকে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম ছিল। জানুয়ারিতে ১,১৬১ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৭৪, মার্চে ৩৩৬ এবং এপ্রিলে ৭০১ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। তবে মে মাস থেকে পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু করে এবং জুনে এসে তা ভয়াবহ রূপ নেয়। আশঙ্কার বিষয় হলো, ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে, বিশেষ করে বরগুনায়, ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেক বেশি।
এদিকে চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ২৯৬ জনে পৌঁছেছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ৪২৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ সময়ে কারও মৃত্যু হয়নি।
সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নতুন শনাক্ত ৪২৯ জন ডেঙ্গুরোগীর মধ্যে— বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৪৯ জন; চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৭ জন; ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৬১ জন; ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ৪২ জন; ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ৪৫ জন; খুলনা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ২১ জন ও রাজশাহী বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৪ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছাড়পত্র পেয়েছেন ৩৫৮ জন রোগী। চলতি বছরে এ পর্যন্ত মোট ৯ হাজার ৮৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন।
চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষ ৫৯ দশমিক ১ শতাংশ এবং নারী ৪০ দশমিক ৯ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে কোনো মৃত্যুর ঘটনা না ঘটলেও চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৪২ জন মারা গেছেন। মৃতদের মধ্যে একজন রাজশাহী বিভাগের বাসিন্দা।
এদিকে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, এডিস মশার বিস্তার এখনই নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে। বিশেষ করে রাজধানীর বাইরের এলাকাগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার গণমাধ্যমকে বলেন, 'মে মাসের তুলনায় জুনে আক্রান্তের সংখ্যা তিনগুণ হয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে জুলাইয়ে এ সংখ্যা চার থেকে পাঁচগুণ এবং আগস্টে দশগুণ পর্যন্ত বাড়তে পারে।'
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ২৯৬ জনে। এর আগে ২০২৩ সালের পুরো বছরে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন এবং মারা যান ১ হাজার ৭০৫ জন। ২০২৪ সালের পুরো বছরের (১ জানুয়ারি–৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত) সর্বমোট হিসাব অনুযায়ী, ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন এবং মৃতের সংখ্যা ছিল ৫৭৫ জন।
করোনা সংক্রমণের নতুন ঢেউয়ের মধ্যে দেশে আরও ২১ জনের শরীরে প্রাণঘাতী ভাইরাসটি শনাক্ত করা হয়েছে।
রবিবার (২৯ জুন) সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় এসব শনাক্ত হয়েছে। তবে, নতুন করে কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি এই সময়ের মধ্যে।
সোমবার (৩০ জুন) স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৮৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ২০ লাখ ৫২ হাজার ১১৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ২২ জন। আর দেশে ভাইরাসটিতে মোট মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৫২১ জনের।
গত শনিবার সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত (একদিনে) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৩৮৩ জন রোগী। এসব রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৩৬ জন আক্রান্ত বরিশাল বিভাগে। একইসঙ্গে এই সময়ে ডেঙ্গুতে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে।
রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়েছে, হাসপাতালে নতুন ভর্তিদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ১৩৬ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫৫ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৪৮, ঢাকা উত্তর সিটিতে ৩২ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ২৮, খুলনা বিভাগে ৪১ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১০ জন এবং রাজশাহী বিভাগে ৩৩ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
এদিকে গত এক দিনে সারাদেশে ৩৪৯ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছর ছাড়পত্র পেয়েছেন ৮ হাজার ৭২৮ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এবছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৯ হাজার ৮৬৭ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তবে বছরের এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ৪২ জনের।
সারাদেশে করোনা ভাইরাসের নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট এর সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় পর সিলেট এ ভাইরাসে আক্রান্ত একজনের মৃত্যু হয়েছে।
শনিবার দুপরে এ তথ্যটি নিশ্চিত করেছে সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। নতুন করে করোনার আক্রমন শুরুর পর সিলেটে প্রথম এই কোন রোগী মারা গেলেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, করোনায় আক্রান্ত ৬৯ বছর বয়েসি পুরুষ ১৯ জুন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে মারা যান তিনি। এছাড়া সিলেটে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২০ জন বলে জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার মো. মিজানুর রহমান জানান, নিহত ব্যক্তির বাড়ি সিলেট সদর উপজেলায়। তিনি করোনা ছাড়াও আরও অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত ছিলেন।
চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে; গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন আরও ছয়জন। এ নিয়ে চলতি জুন মাসেই জেলায় করোনায় মৃতের সংখ্যা সাতজনে দাঁড়াল।
২৮ জুন চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে পাঠানো সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জেলার মিরসরাই উপজেলার বাসিন্দা সালেহা বেগম (৪০) নামে এক নারী শুক্রবার নগরের জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আগে থেকেই তিনি হৃদরোগসহ নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।
এদিকে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৯১টি নমুনা পরীক্ষা করে ছয়জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে চারজন নগরের এবং দুজন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা।
শনাক্ত হওয়া রোগীদের মধ্যে নগরের শেভরন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চারজন এবং এভারকেয়ার হাসপাতালে দুজনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে চলতি জুন মাসে মোট ১৩০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে ৬৬ জন পুরুষ, ৬৩ জন নারী ও একজন শিশু রয়েছে।
মশাবাহীত রোগ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশালের দুই জেলায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময় গোটা বিভাগের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন আরও ১০৫ জন আক্রান্ত রোগী। এ নিয়ে বর্তমানে বিভাগের ছয় জেলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন। মৃত্যুবরণ করা দুজন হলেন- বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার কালিকাবাড়ি এলাকার বাসিন্দা আ. করিম (৫০) ও পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নের রাজপাড়া এলাকার মো. ইউসুফ খন্দকার (৭২)। এর মধ্যে আ. করিম বরিশাল শেরইবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতালে ও বৃদ্ধ মো. ইউসুফ খন্দকার কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। গতকাল শুক্রবার দুপুরে বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বর্তমানে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা উদ্বেগ ও আশঙ্কাজনক। এ পরিস্থিতি থেকে বেরোতে হবে। চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ জরুরি। তাই মশার বিস্তার রোধ করতে বাড়ির আশেপাশে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে। মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষায় ব্যবস্থা নিতে হবে।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ৪ হাজার ৩০৫ জন। এদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। বর্তমানে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন।
বরগুনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। মৃত ১১ জনের মধ্যে ছয়জনেরই বরগুনার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে। শুধু মৃত্যুই নয় এ জেলায় আক্রান্তের সংখ্যাও বেশি, বরগুনা জেলায় এ পর্যন্ত ২ হাজার ৬৩২ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
মন্তব্য