পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিমের বেদখল করা শত কোটি টাকার জমি উদ্ধার করে এক সপ্তাহও রাখতে পারল না অগ্রণী ব্যাংক।
ব্যাংকের নির্মাণ সামগ্রী সরিয়ে জমিতে স্ত্রীর মালিকানা দাবির সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিয়েছেন হাজী সেলিম। সীমানা প্রাচীরের ফটকে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে তালা।
ব্যাংকের কর্মকর্তারা ভয়ে জমিতে যাচ্ছেন না। নিউজবাংলাকে তথ্য জানালেও নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করেছেন বারবার।
বিষয়টি স্থানীয় থানাকে জানালে তারা ব্যবস্থা না নিয়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে মামলা করার পরামর্শ দিয়েছে। যদিও এ নিয়ে আগে থেকেই মামলা চলছে। আর এর মধ্যেই শক্তি দেখিয়ে জমিটি দখল করেন হাজী সেলিম।
১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর থেকেই জমিটি সে সময়ের হাবিব ব্যাংকের ছিল। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর হাবিব ব্যাংক ও কমার্স ব্যাংক একীভূত করে গঠন করা হয় অগ্রণী ব্যাংক। আর সেখানেই করা হয় ব্যাংকটির শাখা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই শাখার উদ্বোধন করেন। সেখানে তার একটি ব্যাংক হিসাবও ছিল।
ওই জমিতে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় পরে ব্যাংকটির শাখা পাশের একটি ভবনে সরিয়ে নেয়া হয়। আর এই জমিতে নতুন ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়।
ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, ২০০৩ সালে স্ত্রী গুলশান আরা বেগমের নামে জমিটি দখলে নেয়ার চেষ্টা শুরু করেন হাজী সেলিম। সে সময় এর একটি দলিলও বানান তারা। আর জায়গা না ছাড়ায় ব্যাংক কর্মকর্তাদের হুমকিও দেয়া হয়।
এরপর ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আদালতে মামলা করে। সেই মামলা এখনও চলছে।
চলতি বছরের মার্চে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দেয়ার পর ব্যাংকের কার্যক্রম অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়ে। এই সুযোগে হাজী সেলিমের লোকজন জায়গাটি দখল করে। তারা বুলডোজার দিয়ে পুরনো ভবন গুঁড়িয়ে দিয়ে সীমানা প্রাচীর তুলে দেয়।
এই ঘটনায় গত ২০ মে চকবাজার থানায় লিখিত অভিযোগ করেন ওই শাখার দায়িত্বে থাকা সহকারী মহাব্যবস্থাপক বৈষ্ণব দাস মণ্ডল। ১৫ জুন র্যাব-৩ এর কাছেও অভিযোগ দেন তিনি।
সে সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কোনো ব্যবস্থা না নিলেও গত ২৬ অক্টোবর নৌ বাহিনীর কর্মকর্তাকে মারধরের মামলায় হাজী সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিমকে গ্রেফতারের পরদিন জমিটি উদ্ধার করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেয়া হয়।
তবে ৪ নভেম্বর রাতে আবার হাজী সেলিমের লোকজন জমিটি দখল করে নেয় বলে জানিয়েছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
ব্যাংকের গড়ে তোলা সীমানা প্রাচীর গুঁড়িয়ে দিয়ে প্রবেশদ্বারে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে স্থানীয় সংসদ সদস্যের লোকজন। গেটে একটি সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে। তাতে জমির মালিক হিসেবে হাজী সেলিমের স্ত্রী গুলশানারা বেগমের নাম লেখা রয়েছে।
প্রতিদিন পালা করে সাত থেকে আট জন পাহারা দিচ্ছেন জমিটি। ব্যাংকের কর্মকর্তারা জমির ধারেকাছে যেতে পারছেন না।
নিজেদের দখল ফিরে পেয়ে অগ্রণী ব্যাংক স্থাপনা নির্মাণের জন্য যেসব নির্মাণ সামগ্রী রেখেছিল, সেগুলোও সরিয়ে নিয়েছে হাজী সেলিমের লোকজন।
এ ঘটনার পর ৫ নভেম্বর চকবাজার থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছে অগ্রণী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। র্যাবকেও চিঠি দেয়া হয়েছে।
তবে এসব নিয়ে জানতে চাইলে মৌলভীবাজার শাখার ব্যবস্থাপক বৈষ্ণব দাস মণ্ডল কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
ব্যাংকটির অন্য একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে বলেন, ‘এই জমিটির সঙ্গেই ব্যাংকটির বর্তমান শাখা। সেখানে হাজী সেলিমের লোকজন প্রতিদিন পাহারা দেয়। তাদের কারণে ব্যাংকের কর্মীরা সেখানে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। কিন্তু পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।’
‘এই কারণে আমাদের পক্ষে নাম প্রকাশ করে গণমাধ্যমে কিছু বলাও সম্ভব নয়’, কেন পরিচয় জানাতে রাজি হন না, তার ব্যাখ্যা দিলেন এই কর্মকর্তা।
ছেলে গ্রেফতারের পর আপাতদৃষ্টিতে চাপে পড়ার পর হাজী সেলিমের দখলের বিষয়ে সে সময় খোলাখুলিই কথা বলেছিলেন ব্যবস্থাপক বৈষ্ণব দাস মণ্ডল।
ওই এলাকায় প্রতি শতক জমির দাম সাড়ে চার থেকে পাঁচ কোটি টাকা। ফলে এই জমির দাম হয় প্রায় শত কোটি টাকা।
সরকারের জমি দখল করে নেয়ার বিষয়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সাধারণ ডায়েরি করার পরও ব্যবস্থা না নেয়ার কারণ জানতে চাইলে চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মওদূত হাওলাদার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অগ্রণী ব্যাংকের কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে দেওয়ানি মামলা করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। থানা থেকে তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে বলে আশ্বস্ত করা হয়েছে।’
দখল নিয়ে হাজী সেলিম পক্ষের বক্তব্য
এ বিষয়ে হাজী মোহাম্মদ সেলিমের মোবাইল ফোনে কল করা হলে ফোন ধরে তা কেটে দেয়া হয়। পরে একাধিকবার কল করলেও সেটা ধরা হয়নি।
২৬ অক্টোবর বাড়িতে র্যাবের অভিযানের সময় এক অর্থে উধাও হয়ে যাওয়া হাজী সেলিম গত ৩ নভেম্বর পুরান ঢাকায় জেল হত্যা দিবসের কর্মসূচিতে উপস্থিত হন। এরপর জনসম্মুখে দেখা যাচ্ছে না তাকে।
পরে হাজী সেলিমের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মদিনা গ্রুপের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম, ল্যান্ড প্রকিউরমেন্ট) নুরুল হামিদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘উনাদের কাছে (অগ্রণী ব্যাংকের) কোনো কাগজপত্র নেই। আমরা চ্যালেঞ্জ করছি উনারা একটা কাগজ দেখাক। আমরা যে মালিকের কাছ থেকে জমি কিনেছি, তার প্রমাণ আছে, জমির খাজনাও আমরা পরিশোধ করেছি।’
কার কাছ থেকে কত টাকা দিয়ে কিনেছেন, এটা বলতে পারেননি হামিদ। বলেছেন, ‘এটা কাগজপত্র দেখে বলতে হবে। এখন নামাজে দাঁড়িয়েছি।’ এরপর ফোন কেটে দেন তিনি।
এই কর্মকর্তা ফোন কেটে দেয়ায় আদালতে মামলা থাকা জমি শক্তি দেখিয়ে দখল করার বিষয়ে প্রশ্ন করা যায়নি।
২০০৩ সালে প্রথম জমিটি স্ত্রীর বলে দাবি করেন হাজী সেলিম। ওই জমির দলিল রয়েছে তার কাছে। কিন্তু ব্যাংকের দাবি, ওই দলিল ভুয়া।
অগ্রণী ব্যাংকের মৌলভীবাজার শাখার ব্যবস্থাপক বৈষ্ণব দাস মণ্ডল নিউজবাংলাকে বলেছিলেন, ‘১৯৪৭ সালের পর থেকে জমিটি হাবিব ব্যাংকের দখলে ছিল। দেশ স্বাধীনের পর অগ্রণী ব্যাংকের দখলে আসে জমিটি। তারা (হাজী সেলিম) যে মালিকদের কাছ থেকে কিনেছে বলেছেন, তাদের তো পাওয়া যায়নি।
‘ব্যাংক মামলা করেছে জমির মালিকানা দাবি করে। মামলা উচ্চ আদালতে প্রক্রিয়াধীন। অগ্রণী ব্যাংক রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংক। এর জমিও মূলত সরকারের।’
হাজী সেলিমের যত দখল
পেশিশক্তি দেখিয়ে ছেলে গ্রেফতারের পর পুরান ঢাকায় হাজী সেলিমের দখলের বিষয়টি আবার সামনে এসেছে।
ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ নতুন নয়। বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে সরকারি জমি দখল করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন। চলতি বছরের শুরুর দিকে বিআইডব্লিউটিএ অভিযান চালিয়ে সেই অবৈধ দখল উচ্ছেদ করে।
সাবেক জগন্নাথ কলেজের একাধিক ছাত্রাবাস হাজী সেলিমের দখলে বলেও অভিযোগ আছে।
ঢাকা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অর্পিত সম্পতি শাখার তথ্য বলছে, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেদখলে থাকা ১২টি হলের মাঝে সবচেয়ে বড়টি ছিল ‘তিব্বত হল’। ২০০১ সালে হলের অবকাঠামো পরিবর্তন করে তার স্ত্রীর নাম অনুসারে স্থাপনাটির নাম রাখেন ‘গুলশান আরা সিটি মার্কেট’। ছাত্রাবাস উদ্ধারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা কয়েক বছর ধরে নানা কর্মসূচিও পালন করে আসছেন।
ঢাকা সরকারি বধির হাই স্কুলের নামে বরাদ্দ করা জমিও হাজী সেলিম দখল করে নিয়েছেন বলে স্কুল কর্তৃপক্ষ অভিযোগ করেছে। এ ছাড়া ব্যক্তি পর্যায়ে আরও অনেক সম্পত্তি দখলের অভিযোগ পুরনো।
ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্যের দখল ঢাকা ছাড়িয়ে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের মেঘনাঘাট এলাকাতেও পৌঁছেছে। সেখানে হাজী সেলিমের মদিনা গ্রুপের একটি সিমেন্ট কারখানা করা হচ্ছে।
এই প্রকল্পের জন্য ১৪ একর সরকারি খাস জমি দখল করেন হাজী সেলিমের লোকজন। গত ১ ও ৫ নভেম্বর অভিযান চালিয়ে সে জমি উদ্ধার করে স্থানীয় প্রশাসন।
নারায়ণগঞ্জ ফতুল্লার পিলকুনি এলাকায় চার বছর আগে একটি পরিবারের জমি দখল করে তাকে পানিবন্দি করে রাখেন হাজী সেলিম। এ নিয়ে মামলার পর গত ৩ নভেম্বর ফতুল্লা সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) আজিজুর রহমান ওই পরিবারের পক্ষে রায় দেন।
সাখাওয়াত হোসেন নামে একজনকে জমি বিক্রি করতে চাপ দিয়ে আসছিলেন হাজী সেলিম। তিনি তা বিক্রি করতে রাজি না হওয়ায় তার ১৫ শতক জমির মধ্যে পাঁচ শতক দখল করে নেন। আর জমি বিক্রি করতে চাপ দিতে তার বাড়ি পানিবন্দি করে রাখার অভিযোগ উঠে।
আরও পড়ুন:আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের ‘মাথাব্যথার কারণ’ হয়ে উঠেছেন দলটির মনোনয়নবঞ্চিতরা। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন এসব নেতা। ব্যতিক্রম কেবল তিন মন্ত্রীর আসনসহ চারটি। বৃহস্পতিবার ছিল মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ দিন।
সিলেট বিভাগের ১৯টি আসনের মধ্যে ১৫টিতেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিতরা। সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনের আসনেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন একজন। তবে তিন মন্ত্রী এমএ মান্নান, ইমরান আহমদ ও শাহাবুদ্দিন আহমদের আসনে দলের কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হননি।
সিলেট বিভাগের চার রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিভাগের মধ্যে কেবল সিলেট-৪, সুনামগঞ্জ-৩, মৌলভীবাজার-১ ও হবিগঞ্জ-৩ আসনে আওয়ামী লীগের কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হননি। এ আসনগুলোতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী যথাক্রমে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ, পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান, পরিবেশ ও বনমন্ত্রী শাহাবুদ্দিন আহমদ এবং হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবু জাহির।
এবার দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত করার পরই নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করার লক্ষ্যে মনোনীত প্রার্থীর পাশাপাশি ডামি প্রার্থী রাখার নির্দেশ দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই নির্দেশনা পেয়ে ক্ষমতাসীন দলটির মনোনয়নবঞ্চিতদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার হিড়িক পড়ে।
দেশের প্রায় প্রতিটি সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিতরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের ঘোষণা দেন। এসব ডামি প্রার্থীই ‘যন্ত্রণার কারণ’ হয়ে উঠেছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থীদের। তবে এ ক্ষেত্রে অনেকটা স্বস্তিতে আছেন মান্নান, ইমরান ও শাহাবুদ্দিন। তাদের আসনে নেই কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী।
সুনামগঞ্জ-৩ (জগন্নাথপুর-শান্তিগঞ্জ) আসনে দলের কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে না ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নানকে। এ আসনে মন্ত্রীসহ সাত প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র জমা দেন। বাকি ছয়জন হলেন তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য মাওলানা শাহীনুর পাশা চৌধুরী, জাতীয় পার্টির দলীয় প্রার্থী যুক্তরাজ্যপ্রবাসী তৌফিক আলী মিনার, গণফ্রন্টের মকবুল হোসেন, জাকের পার্টির নজরুল ইসলাম ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মাহফুজুর রহমান খালেদ।
এই আসনে এমএ মান্নান ছাড়াও চারজন আওয়ামী লীগের পক্ষ তেকে চারজন মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। তারা হলেন- কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির সদস্য আজিজুস সামাদ ডন, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য খায়রুল কবীর রুমেন, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক ও যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ নেতা আশরাফুল ইসলাম। তবে তাদের কেউ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হননি।
এ বিষয়ে জগন্নাথপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রিজু বলেন, ‘জগন্নাথপুরের আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ হয়ে নৌকার পক্ষে কাজ করবে। এখানে কেউ দলের বিরুদ্ধে যাবে না।’
মৌলভীবাজার-১ (জুড়ী-বড়লেখা) আসনেও আওয়ামী লীগের কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হননি। এ আসনে নৌকার প্রার্থী শাহাব উদ্দিন আহমদ। এর আগে টানা দুবারসহ তিনবারের সংসদ সদস্য ছিলেন তিনি।
এ আসনে ছাত্রলীগের সাবেক সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন, বড়লেখা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম সুন্দর, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক সদস্য অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম, কুলাউড়া থানা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমও দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন। তবে তাদের কেউই ডামি প্রার্থী হতে আগ্রহী হননি।
এস এম জাকির হোসাইন বলেন, ‘এই দুই উপজেলার মানুষ নানাভাবে অনুরোধ করেছে বিদ্রোহী প্রার্থী হতে। কিন্তু নৌকার বাইরে গিয়ে নির্বাচন করার মনমানসিকতা নেই। দলীয় প্রার্থীর জয়ের জন্য কাজ করব।’
রফিকুল ইসলাম সুন্দর বলেন, ‘নৌকা পেলে নির্বাচন করার প্রস্তুতি ছিল। নেত্রী বর্তমান সংসদ সদস্য, পরিবেশমন্ত্রীকে নৌকা দিয়েছেন। দলীয় পদধারী বা আওয়ামী লীগের সমর্থক কেউ এ আসনে ডামি প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে নেই।’
এ আসনে শাহাবুদ্দিন ছাড়াও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন জাতীয় পার্টির আহমেদ রিয়াজ উদ্দিন, তৃণমূল বিএনপির আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, ধর্মভিত্তিক সংগঠন আল ইসলাহ নেতা কাজী ময়নুল ইসলাম ও ব্যবসায়ী ফারুক আহমেদ (ভান্ডারি)।
সিলেট-৪ (গোয়াইনঘাট-জৈন্তাপুর-কোম্পানীগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ। এ আসনে নৌকার মনোনয়ন চেয়েছিলেন আরও সাতজন। তবে তারা কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হননি। ইমরানকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন তারা।
এখানে আওয়ামী লীগের অপর মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে ছিলেন গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ফারুক আহমদ, সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি অ্যাডভোকেট মাহফুজুর রহমান, গোয়াইনঘাট উপজেলা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মো. ফজলুল হক, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও গোয়াইনঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি গোলাপ মিয়া, গোয়াইনঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. গোলাম কিবরিয়া হেলাল, জাতীয় শ্রমিক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য ও জাতীয় শ্রমিক লীগ সিলেট মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক নাজমুল আলম রোমেন এবং কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শাহজাহান চৌধুরী।
এ বিষয়ে শ্রমিক লীগ সিলেট মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক নাজমুল আলম রোমেন বলেন, ‘আমরা কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হব না। দলের প্রার্থীর বিজয়ে কাজ করব।’
সিলেট বিভাগের তিন মন্ত্রী ‘ডামির যন্ত্রণা’ থেকে রেহাই পেলেও সিলেট-১ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনকে পড়তে হচ্ছে ডামির চ্যালেঞ্জে। তার আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ।
আরও পড়ুন:আগামী বছরের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে শেষ দিন বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ২ হাজার ৭১২ জন প্রার্থী।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের পরিচালক (জনসংযোগ) শরিফুল আলম শনিবার জানান, নিবন্ধিত ২৯টি রাজনৈতিক দলের ১ হাজার ৯৬৫ জন প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন ৭৪৭ জন।
ইসি প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লড়তে সবচেয়ে বেশি ৩০৪টি মনোনয়নপত্র জমা দেন আওয়ামী লীগের (নৌকা) প্রার্থীরা। লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে লড়তে যাওয়া জাতীয় পার্টিরও ৩০৪ জন জমা দেন মনোনয়নপত্র।
নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম দুটি মনোনয়নপত্র জমা দেয় হারিকেন প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে লড়তে যাওয়া বাংলাদেশ মুসলিম লীগ।
অন্য দলগুলোর মধ্যে জাতীয় পার্টি তথা জেপি (বাইসাইকেল) ২০, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (চাকা) ছয়, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ (গামছা) ৩৪, গণতন্ত্রী পার্টি (কবুতর) ১২, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি তথা ন্যাপ (কুঁড়েঘর) ছয়, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি (হাতুড়ি) ৩৩, বিকল্পধারা বাংলাদেশ (কুলা) ১৪, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল তথা জাসদ (মশাল) ৯১, জাকের পার্টি (গোলাপ ফুল) ২১৮, বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন (ফুলের মালা) ৪৭, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন (বটগাছ) ১৪, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (আম) ১৪২, গণফোরাম (উদীয়মান সূর্য) ৯, গণফ্রন্ট (মাছ) ২৫, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (কাঁঠাল) ১৩, ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশ (চেয়ার) ৩৯, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি (হাতঘড়ি) ১৮, ইসলামী ঐক্যজোট (মিনার) ৪৫, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট (মোমবাতি) ৩৭, বাংলাদেশ মুসলিম লিগ তথা বিএমএল (পাঞ্জা) পাঁচ, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট (ছড়ি) ৭৪, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট তথা বিএনএফ (টেলিভিশন) ৫৫, বাংলাদেশ কংগ্রেস (ডাব) ১১৬, তৃণমূল বিএনপি (সোনালি আঁশ) ১৫১, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (নোঙ্গর) ৪৯ ও বাংলাদেশ সুপ্রীম পার্টি (একতারা) ৮২টি মনোনয়নপত্র জমা দেয়।
গত ১৫ নভেম্বর দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ তারিখ ছিল ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত।
মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর নাগাদ। আপিল নিষ্পত্তি ৬ থেকে ১৫ ডিসেম্বর। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৭ ডিসেম্বর।
১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচার শুরু হবে, যা চলবে ২০২৪ সালের ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত।
আরও পড়ুন:রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শনিবার সকালে ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। রিখটার স্কেলে ৫.৫ মাত্রার এ ভূমিকম্প টেরই পাননি অনেকে।
এ ধরনের কম্পনের পর একটি আলোচনা ঘুরেফিরে আসে। সেটি হলো বড় কোনো ভূমিকম্পের কবলে দেশ পড়তে যাচ্ছে কি না।
ভূমিকম্প নিয়ে গবেষকদের পূর্বাভাসও আলোচনায় আসে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ঢাকায় গত ৫ মের ভূমিকম্পের পর ডাচ ভূতত্ত্ববিদ ফ্র্যাংক হুগারবিটসের একটি পূর্বাভাস নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা শুরু হয়।
নেদারল্যান্ডসভিত্তিক সোলার সিস্টেম জিওমেট্রি সার্ভে (এসএসজিইওএস) নামের সংস্থার ইউটিউব চ্যানেলে ২ মে একটি ভিডিও পোস্ট করেছিলেন এ ভূতত্ত্ববিদ, যেখানে তিনি ভারতের আসাম, বাংলাদেশসহ এশিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে চলতি বছর বড় ধরনের ভূমিকম্পের সম্ভাব্যতা নিয়ে কথা বলেছেন। ৫ মে তার সেই ভিডিওর কমেন্ট সেকশনে গিয়ে অনেকে বাংলাদেশে ভূমিকম্প হয়েছে বলে জানিয়ে আসেন।
এর আগে চলতি বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি তুরস্ক-সিরিয়ায় ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পের সময়ও ভূতত্ত্ববিদ হুগারবিটস আলোচনায় এসেছিলেন। কেউ কেউ বলেছিলেন, তিনি ‘সঠিক’ পূর্বাভাস দিয়েছিলেন।
হুগারবিটসের পোস্ট করা ভিডিও দেখে কারও কারও মধ্যে জিজ্ঞাসা দেখা দিতে পারে যে, ভূমিকম্প আগে থেকে আঁচ করা যায় কি না। এর স্পষ্ট উত্তর দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএসের ভাষ্য, ইউএসজিএস কিংবা অন্য কোনো সংস্থার বিজ্ঞানীরা কখনও বড় ভূমিকম্প নিয়ে পূর্বাভাস দেননি।
ইউএসজিএসের বিজ্ঞানীরা বলেছেন, নির্দিষ্ট কয়েক বছরের মধ্যে কোনো এলাকায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকম্পের সম্ভাব্যতা নিয়ে হিসাব-নিকাশ করতে পারেন তারা।
যুক্তরাষ্ট্রের আরেক নামী প্রতিষ্ঠান ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির (ক্যালটেক) মতে, ঠিক কখন এবং কোথায় ভূমিকম্প হবে, সেটা আগে থেকে ধারণা করা সম্ভব নয়। ভূমিকম্প কতটা ব্যাপক হবে, তা নিয়েও পূর্বাভাস দেয়া যায় না।
এ বিষয়ে বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ মেহেদী হাসান আনসারী নিউজবাংলাকে বলেন, ভূমিকম্পের বিষয়ে আগে থেকে অনুমান করা যায় না।
আরও পড়ুন:সকাল-সন্ধ্যা হিমেল হাওয়া এসে লাগলেও গা গরম রাখার পোশাকের কাটতি বাড়েনি মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে।
সরকারি ছুটির দিন শুক্রবার উপজেলার কয়েকটি বাজারের বিভিন্ন দোকানে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
উপজেলার ভানুগাছ, শমশেরনগর ও পতনঊষার বাজারের দোকানগুলোতে দেখা যায়, শীতের পোশাক সাজিয়ে রেখেছেন কাপড় ব্যবসায়ীরা, তবে বেচাকেনা তেমন হচ্ছে না।
বিক্রি জমজমাট হওয়ার প্রত্যাশায় আছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের ভাষ্য, শীতের শুরুতে গরম কাপড় কেনার প্রবণতা এবার কম। তাই চাহিদা নেই বললেই চলে। ঘুরতে এসে কেউ কেউ কিনছেন ছোটদের শীত কাপড়।
বড় ব্যবসায়ীরা জানান, সাধারণত শীতের কাপড় বিক্রির বাজার জমে ওঠে অক্টোবরের শেষে ও নভেম্বর মাসে, তবে এবার এখনও ব্যবসা জমেনি।
ফুটপাতের খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, শীতের গরম কাপড়ের ব্যবসা মূলত হয় নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে। এ মাসে ভালো বেচাবিক্রির আশা করছেন তারা।
খুচরা বিক্রেতারা আরও জানান, শীত বাড়েনি বলে গরম কাপড়ের বিক্রি বাড়েনি। এ ছাড়া স্বাভাবিক বিক্রি কম হওয়ার পেছনে হরতাল-অবরোধের মতো রাজনৈতিক কর্মসূচির প্রভাবও রয়েছে।
কেন বিক্রি কম জানতে চাইলে কমলগঞ্জের পতনঊষার বাজারের কাপড় ব্যবসায়ী মাইদুল ইসলাম বলেন, ‘শীতের সিজনে প্রতিদিন বিক্রি করতাম ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। সারা দিনে এখন বিক্রি হয় এক থেকে দুই হাজার টাকা। আবার সব দিন এ রকম বিক্রিও হয় না।
‘হরতাল-অবরোধের কারণে বেচাকেনা অনেক কম। দোকান ভাড়া ও কর্মচারীদের বেতন দেওয়া মুশকিল হয়ে পড়েছে।’
ভানুগাছ বাজারের মা মনি বস্ত্রালয়ের প্রতিষ্ঠাতা মো. সোলাইমান বলেন, ‘হরতাল-অবরোধের কারণে বেচাকেনা কম হচ্ছে। দূরদুরান্ত থেকে এই এলাকায় মানুষ ঘুরতে এসে এসব পোশাক কিনে নেন, কিন্তু হরতাল-অবরোধের কারণে মানুষ তেমন আসছেন না। এ কারণে আমাদের বিক্রিও বাড়ছে না।
‘গ্রামগঞ্জের মানুষ কতই আর কেনাকাটা করবে। আমাদের পণ্য বিক্রির বেশির ভাগ ক্রেতা দূরদুরান্তের মানুষরাই।’
তিনি জানান, স্থানীয়ভাবে যেসব ক্রেতা আসছেন, তারা শিশুদের জন্য কিছু কাপড় কিনে চলে যাচ্ছেন। কেউ কেউ আবার দরদাম পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকছেন।
আরও পড়ুন:ভালোবাসার টানে এক হয়ে গেল দুই দেশের কয়েক হাজার মাইলের দূরত্ব। সূদুর ইউরোপ থেকে ৫ বছরের প্রণয়কে বিয়েতে রূপ দিতে বাংলাদেশে ছুটে এসেছেন সাইপ্রাসের এক তরুণী। সাতসমুদ্র পাড়ি দিয়ে অবশেষে বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন সাভারের যুবক শামীম আহমেদের সঙ্গে। এরই মধ্যে শ্বশুড়বাড়ি, আত্মীয়স্বজন আর প্রতিবেশীদের মন জয় করে নিয়েছেন ভিনদেশী এই নারী। পরদেশী বউ পেয়ে দারুণ খুশি শামীমের পরিবারও।
শুক্রবার সাভারের আশুলিয়ার গাজীরচট আয়নাল মার্কেট এলাকায় মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান শামীমের স্ত্রীকে ঘিরে চলছে উৎসব। আত্মীয়স্বজন আর পাড়াপ্রতিবেশীরা ছুটে আসছেন ভিনদেশী বউকে একবার দেখতে। সাইপ্রাসের নাগরিক আন্থি তেলেবান্থুও সবাইকে আপন করে নিয়েছেন।
গত ২৭ নভেম্বর আশুলিয়ায় শামীমের বাড়িতে আসেন আন্থি তেলেবান্থু। ৩০ নভেম্বর ঢাকা জজকোর্টে বাংলাদেশের আইন অনুসারে বিয়ে করেন আন্থি ও শামীম।
আন্থির সঙ্গে পরিচয় ও প্রণয়ের বিষয়ে শামীম আহমেদ বলেন, ‘স্টুন্ডেন্ট ভিসায় ২০১৫ সালে আমি সাইপ্রাস চলে যাই। সেখানকার সিডিএ কলেজে ভর্তি হওয়ার পর লেখাপড়ার পাশাপাশি একটি প্রতিষ্ঠানে পার্টটাইম চাকরি নেই। একই প্রতিষ্ঠানে কাজের সুবাদে আন্থির সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। একসময় আমরা দুইজনকে পছন্দ করা শুরু করি। পরে তা প্রণয়ে রূপ নেয়।
‘সাইপ্রাসের লিমাসোল শহরে আন্থির বাসায় আমার যাওয়া-আসা শুরু হয়। ওর পরিবারের সঙ্গেও আমার সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয়। এরপর ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে আসলে আমি দেশে ফিরে আসি। তারপরও আমাদের দুজনের মধ্যে অনলাইনে যোগাযোগ ছিল। সে আমার পরিবারের সঙ্গেও ভিডিও কলে কথা বলত।’
তিনি বলেন, ‘অনেক আগে থেকেই সে বাংলাদেশে আমার বাড়িতে আসার জন্য উদগ্রীব ছিল। এরপর গত ২৭ নভেম্বর সে সত্যি সত্যিই বাংলাদেশে চলে আসে। পরে উভয় পরিবারের সম্মতিতে আমরা দুজন গতকাল ঢাকা জজকোর্টে বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হই।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার পরিবারের সঙ্গে আন্থি নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে। আট-দশটা বাঙালি বউদের মতোই সবার সঙ্গে মিশতেছে। তার বাঙালি বউ হওয়ার ইচ্ছা পূরণ হয়েছে। পরিবার ও আত্মীয়স্বজন সবাইকে মাতিয়ে রাখছে সে।’
নিউজবাংলাকে নববধূ আন্থি তেলেবান্থু বলেন, ‘আমরা দুজন একসঙ্গে কাজ করেছি। তারপর বন্ধু হয়েছি এবং আমি তাকে ব্যক্তিগতভাবে একজন ভালো চরিত্রের মানুষ হিসেবেই জানি। সে অসহায় মানুষকে সাহায্য করতে পছন্দ করে। এসব থেকেই আস্তে আস্তে আমি তার প্রেমে পড়ে যাই। আমার পরিবার শামীমকে অনেক পছন্দ করে। তারাও আমাদের এই সম্পর্ক মেনে নিয়েছে। আমি বাংলাদেশের মানুষের আতিথেয়তায় মুগ্ধ।’
শামীমের চাচা ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘বিদেশী মেয়ে হলেও ওর সঙ্গে আমাদের পারিবারিক সম্পর্ক হয়ে গেছে। গত তিন দিন ধরে যখনই সে আমার সামনে এসেছে ঘোমটা পরে এসেছে, বাঙ্গালি মেয়েদের মতো। সে আমাদের মতোই শাকসবজি, তরকারি খাচ্ছে। আমার পূত্রবধূকে নিয়ে কোনো সমস্যা পরিবারে নাই।’
আরও পড়ুন:কুমিল্লায় চাষ হচ্ছে সাদা ইঁদুর। ‘কুমিল্লা মাইস ফার্ম’ নামের এ খামারের ইঁদুরগুলো ব্যবহৃত হচ্ছে কুমিল্লাসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার কাজে।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ল্যাব সহকারী আবদুল আউয়াল ও অফিস সহকারী নাসির উদ্দিন এ ইঁদুরের খামারের উদ্যোক্তা।
বিশ্বদ্যিালয়ের পাশে তাদের বাড়ি। চাকরির পাশাপাশি সেখানেই তারা ছোট খামারে তৈরি করে পালন করছেন সুইস অ্যালবিনো জাতের ইঁদুর।
কুবির অফিস সহকারী নাসির উদ্দিন জানান, তার আরেক সহকর্মী ল্যাব সহকারী আবদুল আউয়াল ২০২২ সালের অক্টোবরে বাণিজ্যিকভাবে ইঁদুর পালন শুরু করেন। এক বছরের মধ্যেই আসে সফলতা। বাণিজ্যিকভাবে শুরু করা ইঁদুর পালনে চাকরির পাশাপাশি বাড়তি আয়ের সুযোগ হয়েছে।
কুবির ফার্মেসি বিভাগের ল্যাব সহকারী আবদুল আউয়াল বলেন, ‘আমাদের চাষ করা সুইজারল্যান্ডের সুইস অ্যালবিনো জাতের সাদা ইঁদুরগুলো গবেষণার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। এটি কারিকুলামেরও অংশ।’
তিনি বলেন, ‘কোনো একটি ওষুধ তৈরি করা এবং এর কার্যকারিতা পরীক্ষা করার ক্ষেত্রে ইঁদুর ব্যবহার করতে হয়। আগে দূরদূরান্ত থেকে আনতে হতো সাদা ইঁদুর। এতে ঝুঁকি থাকে, দামও বেশি।
‘এ বিষয়টির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেই আমি ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অফিস সহকারী নাসির উদ্দিন মিলে গড়ে তুলি সুইস অ্যালবিনো প্রজাতির ইঁদুরের ফার্ম।’
কথা হয় কুবির ফার্মেসি বিভাগের সপ্তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ইয়াছিন আরাফাত, সানিয়া রহমান ও ইশরাত জাহান কেয়ার সঙ্গে।
তারা জানান, কুমিল্লায় সাদা ইঁদুরের চাষ শুরু হওয়ায় তাদের অনেক সুবিধা হয়েছে। এখন তাদের অ্যাকাডেমিক কাজে ইঁদুরের জন্য অপেক্ষা করতে হবে না।
কুবি উপাচার্য এএফএম আবদুল মঈন ‘কুমিল্লা মাইস ফার্ম’ উদ্যোক্তাদের প্রশংসা করে বলেন, ‘সাদা ইঁদুরের চাষ অবশ্যই ভালো উদ্যোগ। এখানে উৎপাদিত ইঁদুর গবেষণার কাজে লাগছে এটা অবশ্যই আনন্দের।’
আরও পড়ুন:সিলেটে নির্বাচনি প্রচার শুরুর আগেই আচরণবিধি লঙ্ঘনের হিড়িক পড়েছে। বৃহস্পতিবার মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ দিনে আচরণবিধি ভেঙে শোডাউন করেন প্রার্থীরা।
আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের পাশপাশি জাতীয় পার্টি (জাপা) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ক্ষেত্রেও আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে। বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী নিয়ে মিছিল করে এসে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন তারা।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আচরণ বিধিমালা অনুযায়ী, প্রার্থীরা মনোনয়পত্র জমার সময় কোনো ধরনের মিছিল বা শোডাউন করতে পারবেন না।
সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস বৃহস্পতিবার সকাল থেকে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল আহসানের কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিতে ভিড় করেন প্রার্থীরা। সকালেই মনোনয়নপত্র জমা দিতে আসেন সিলেট-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী এবং সিলেট-৫ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ।
বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিতে আসেন শফিকুর রহমান চৌধুরী। ওই সময় শফিকুর রহমানের সমর্থকদের নৌকা মার্কার সমর্থনে জেলা প্রশাসক কার্যালয় প্রাঙ্গণে স্লোগান দিতে দেখা যায়। শফিকুর রহমান ও মাসুক উদ্দিনের সঙ্গে আওয়ামী লীগের অনন্ত ২০ নেতা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে ঢুকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন।
দুপুরে মিছিল নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিতে আসেন সিলেট-৩ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বর্তমান এমপি হাবিবুর রহমান হাবিব। শতাধিক নেতা-কর্মী নিয়ে রিটার্নি কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে শোডাউন করেন তিনি।
শোডাউন দেয়ার কথা অস্বীকার করে হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা আগেই এখানে জড়ো হয়েছিলেন। আমি মাত্র চার-পাঁচজন নেতা নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছি। বাকি যারা এসেছেন, তাদের আমি নিয়ে আসিনি।’
শোডাউন করে মনোনয়নপত্র জমা দেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদও। তিনি সিলেট-৪ আসন থেকে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন। দুপুরে রিটার্নি কর্মকর্তার কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র জমাদানকালে তার সঙ্গে সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের পদধারী অর্ধশতাধিক নেতা উপস্থিত ছিলেন।
সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ও সিলেট-৬ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী নুরুল ইসলাম নাহিদ বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন।
সিলেট-২ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী দলটির ভাইস চেয়ারম্যান ইয়াহইয়া চৌধুরী এহিয়া মনোনয়পত্র জমা দেন দুপুরে। তিনিও শতাধিক নেতা-কর্মীসহ মিছিল নিয়ে এসে মনোনয়নপত্র জমা দেন।
এ ব্যাপারে ইয়াহইয়া চৌধুরী বলেন, ‘আমি কোনো শোডাউন নিয়ে আসিনি। আমাকে দেখে কর্মীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে জড়ো হয়ে কিছু স্লোগান দিয়েছেন, তবে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে কয়েকজন নেতা নিয়েই আমি প্রবেশ করি।’
সিলেট-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ। দুপুরে তিনি শোডাউন করে মনোনয়নপত্র জমা দিতে আসেন।
জানতে চাইলে শোডাউন করার কথা অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘আমি নির্বাচনি আচরণবিধির প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আচরণবিধি মেনেই মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছি।’
বিকেলে মনোনয়নপত্র জমা দেন সিলেট-৬ আসনে তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী ও দলটির চেয়ারপারসন শমসের মবিন চৌধুরী। তিনি চার থেকে পাঁচজন নেতা-কর্মী নিয়েই মনোনয়নপত্র জমা দেন।
এ বিষয়ে সিলেটের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল আহসান বলেন, ‘আমি সকাল থেকেই মনোনয়নপত্র জমা দিতে ব্যস্ত। এখানে কেউ শোডাউন করেননি, তবে বাইরে কেউ আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন কি না, তা খেয়াল করিনি। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য