করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেই নতুন আতঙ্ক হয়ে এসেছে ডেঙ্গু। সাধারণত বর্ষা মৌসুমে এডিস মশাবাহিত এই রোগটির প্রকোপ দেখা দেয়।
এবার বর্ষায় ডেঙ্গুর প্রকোপ ছিল না বললেই চলে। অথচ শীতের শুরুতে নভেম্বর মাসের প্রথম নয় দিনে সারা দেশে ১১৫ জন ব্যক্তির ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার খবর এসেছে।
এর মধ্যে ৮ নভেম্বর রোববার এক দিনে সর্বোচ্চ ২৪ জন ব্যক্তি ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও নিয়ন্ত্রণ কক্ষের তথ্য অনুযায়ী, গত অক্টোবর সারা মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন ১৬৩ জন। আর সেপ্টেম্বরে ৪৭ জন।
গত কয়েক বছরের ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার হিসাব বলছে, বাংলাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা কখনোই অক্টোবর কিংবা নভেম্বর মাসে চূড়ান্ত পর্যায়ে থাকে না। গত বছরেও সর্বোচ্চ আক্রান্ত হয়েছিল আগস্ট মাসে। এরপর সেপ্টেম্বর, অক্টোবর, নভেম্বরে ডেঙ্গুর প্রকোপ আস্তে আস্তে কমে আসতে থাকে।
বিশেষজ্ঞদের অভিমত, চলতি বছর অক্টোবর মাসে ভারি বৃষ্টিপাতের সঙ্গে গরমের প্রকোপ ছিল অনেক বেশি, যা ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার বংশবিস্তারের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করেছে। ফলে মশা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আক্রান্তের সংখ্যাও বেড়েছে।
এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাসার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘২০০০ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ডেঙ্গুর যে ধরন, তা এবারের অক্টোবর-নভেম্বর মাসের ধরনের সঙ্গে মিলছে না। সাধারণত অক্টোবর মাসে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমে যায়, নভেম্বরে যা আরও কমে আসে। কিন্তু এবার আমরা নভেম্বরেও প্রচুর রোগী পাচ্ছি।’
এর কারণ বিশ্লেষণ করে এই কীটতত্ত্ববিদ বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এবার অক্টোবরে যে পরিমাণ বৃষ্টিপাত হলো, তাতে অনেক বেশি এডিস মশার প্রজননস্থল তৈরি হয়েছে। এ কারণে এডিস মশার ঘনত্ব বাড়ার পাশাপাশি রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে।’
দুই দশক আগে ২০০০ সালে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেয়। এরপর গত বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালে সবচেয়ে বেশি মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয় ও মারা যায়। সরকারি হিসাবেই আক্রান্তের সংখ্যা ছিল লাখের বেশি। মৃত্যু হয় ১৭৯ জনের। তবে হাসপাতাল ও চিকিৎসকদের দেওয়া তথ্য অনুসারে এই সংখ্যা আরও বেশি।
এ কারণে এবারও ডেঙ্গু নিয়ে জনমনে আতঙ্ক ছিল। তাই স্থানীয় সরকার বিভাগের পক্ষ থেকেও ডেঙ্গু প্রতিরোধে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বছরব্যাপী মশকনিধন কার্যক্রম চালিয়ে যেতে সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়।
তবে ডেঙ্গুর মৌসুম শুরুর আগেই গত মার্চ মাস থেকে করোনাভাইরাসের কারণে ঘরবন্দি হয়ে পড়ে মানুষ। টানা দুই মাস চলে লকডাউন পরিস্থিতি। এরপর মানুষ বাইরে বের হতে শুরু করলেও পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক হয়নি।
হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর ১ জানুয়ারি থেকে ৯ নভেম্বর সোমবার পর্যন্ত সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৭৪২ জন রোগী। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন ১৯৯ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৪৫ জন, মার্চে ২৭ জন, এপ্রিলে ২৫ জন, মে মাসে ১০ জন, জুনে ২০ জন, জুলাইতে ২৩ জন ও আগস্টে ৬৮ জন।
বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত ৬২ জন রোগী ভর্তি আছেন। এর মধ্যে ঢাকারই ৬০ জন।
এ ছাড়া ডেঙ্গুতে মৃত্যু সন্দেহে এ পর্যন্ত পাঁচজনের তথ্য পাঠানো হয়েছে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইইডিসিআর)। এর মধ্যে দুই জনের তথ্য পর্যালোচনা করে একজনের মৃত্যু ডেঙ্গুর কারণে হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে আইইডিসিআর।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের তৎপরতা
ডেঙ্গু প্রতিরোধে বছরের শুরু থেকেই দুই সিটি করপোরেশন কম-বেশি তৎপর ছিল। তবে চলতি অক্টোবরে হঠাৎ ডেঙ্গু রোগী বেড়ে যাওয়ায় গত ২ নভেম্বর থেকে বিশেষ মশক নিধন ও পরিচ্ছন্নতা অভিযান শুরু করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)।
অভিযানের সপ্তম দিনে সোমবারও ডিএনসিসির বিভিন্ন এলাকার অন্তত ৮০টি স্থাপনায় এডিসের লার্ভা মিলেছে। এ ছাড়া ৮ হাজার ৪০০টি বাড়ি ও স্থাপনায় এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া গেছে।
অভিযানে কোথাও এডিস মশার লার্ভা কিংবা বংশবিস্তারের উপযোগী পরিবেশ পাওয়া গেলে তার ছবি, ঠিকানাসহ প্রয়োজনীয় তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে একটি অ্যাপে সংরক্ষণ হচ্ছে বলে জানান ডিএনসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা এ এস এম মামুন। তিনি বলেন, অ্যাপে সংরক্ষিত তথ্য দিয়ে অভিযান শেষে একটি ডেটাবেজ তৈরি করা হবে পরবর্তী অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য।
এর বাইরে ডিএনসিসি এলাকার হাসপাতালগুলোতে ভর্তি থাকা ডেঙ্গু রোগীদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করে সেই হাসপাতাল ও রোগীদের বাড়ির আশপাশে ওষুধ ছিটানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলেও জানান মামুন।
এদিকে ডেঙ্গু প্রতিরোধে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনও (ডিএসসিসি) নিয়মিত মশক নিধন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানান সংস্থাটির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাছের। তিনি বলেন, এর পাশাপাশি মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করার জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হচ্ছে।
এত কিছুর পরেও অসময়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার জন্য অকাল বৃষ্টি ও আবহাওয়ার পাশাপাশি আরও কিছু বিষয়কে সামনে আনেন কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাসার।
তিনি বলেন, ‘আমাদের মশক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাটা মূলত কিউলেক্স মশা নির্ভর। ড্রেন-ডোবা-নর্দমা অর্থাৎ পঁচা পানিতে যে মশা হয় তার ওপরেই নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাটা বেশি জোরদার করা হয়।’
এ ছাড়া কবিরুল বাসার মনে করেন, দুই সিটির মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বিজ্ঞানসম্মতভাবে করা হচ্ছে না।
তার মতে, ‘মশা নিয়ন্ত্রণের কাজ করতে হবে বছরব্যাপী। এখানে কোনো গ্যাপ দেওয়া যাবে না। একটা মশার জীবনচক্র সম্পন্ন হতে ১৫ দিন সময় লাগে।
‘একটা নির্দিষ্ট জায়গায় প্রতি ১৫ দিন পরপরই নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া চালু রাখতে হবে। যদি এটা ১৬ দিনে হয় তাহলেই কিন্তু মশা উড়ন্ত হয়ে গেল। এ জন্য সাইকেলটা (চক্র) নিয়মিত মেইনটেইন করতে হবে।’
দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩১২টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৩ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। তবে এ সময়ের মধ্যে কেউ মারা যায়নি। আজ মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়। এ দিন প্রতি ১০০ নমুনায় শনাক্তের হার ৪ দশমিক ১৭ শতাংশ বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, ‘২০২০ সালের ১৮ মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত দেশে করোনায় মৃত্যু ২৯ হাজার ৫২১ জন। এর মধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২২ জনের। এছাড়া ২০২০ সালের ৮ মার্চ থেকে মোট শনাক্ত হয়েছে ২০ লাখ ৫২ হাজার ১২৭ জন। এর মধ্যে গত জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ৫৮২ জন।
এডিশ মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। সারা দেশে মশা নিধন কার্যক্রমের দুর্বলতার কারণে ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক মোড় নিয়েছে। চলতি বছরের মে মাসের তুলনায় জুন মাসে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় তিনগুণ বেড়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, বছরের শুরুর দিকে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম ছিল। জানুয়ারিতে ১,১৬১ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৭৪, মার্চে ৩৩৬ এবং এপ্রিলে ৭০১ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। তবে মে মাস থেকে পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু করে এবং জুনে এসে তা ভয়াবহ রূপ নেয়। আশঙ্কার বিষয় হলো, ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে, বিশেষ করে বরগুনায়, ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেক বেশি।
এদিকে চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ২৯৬ জনে পৌঁছেছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ৪২৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ সময়ে কারও মৃত্যু হয়নি।
সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নতুন শনাক্ত ৪২৯ জন ডেঙ্গুরোগীর মধ্যে— বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৪৯ জন; চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৭ জন; ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৬১ জন; ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ৪২ জন; ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ৪৫ জন; খুলনা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ২১ জন ও রাজশাহী বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৪ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছাড়পত্র পেয়েছেন ৩৫৮ জন রোগী। চলতি বছরে এ পর্যন্ত মোট ৯ হাজার ৮৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন।
চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষ ৫৯ দশমিক ১ শতাংশ এবং নারী ৪০ দশমিক ৯ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে কোনো মৃত্যুর ঘটনা না ঘটলেও চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৪২ জন মারা গেছেন। মৃতদের মধ্যে একজন রাজশাহী বিভাগের বাসিন্দা।
এদিকে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, এডিস মশার বিস্তার এখনই নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে। বিশেষ করে রাজধানীর বাইরের এলাকাগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার গণমাধ্যমকে বলেন, 'মে মাসের তুলনায় জুনে আক্রান্তের সংখ্যা তিনগুণ হয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে জুলাইয়ে এ সংখ্যা চার থেকে পাঁচগুণ এবং আগস্টে দশগুণ পর্যন্ত বাড়তে পারে।'
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ২৯৬ জনে। এর আগে ২০২৩ সালের পুরো বছরে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন এবং মারা যান ১ হাজার ৭০৫ জন। ২০২৪ সালের পুরো বছরের (১ জানুয়ারি–৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত) সর্বমোট হিসাব অনুযায়ী, ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন এবং মৃতের সংখ্যা ছিল ৫৭৫ জন।
করোনা সংক্রমণের নতুন ঢেউয়ের মধ্যে দেশে আরও ২১ জনের শরীরে প্রাণঘাতী ভাইরাসটি শনাক্ত করা হয়েছে।
রবিবার (২৯ জুন) সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় এসব শনাক্ত হয়েছে। তবে, নতুন করে কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি এই সময়ের মধ্যে।
সোমবার (৩০ জুন) স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৮৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ২০ লাখ ৫২ হাজার ১১৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ২২ জন। আর দেশে ভাইরাসটিতে মোট মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৫২১ জনের।
গত শনিবার সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত (একদিনে) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৩৮৩ জন রোগী। এসব রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৩৬ জন আক্রান্ত বরিশাল বিভাগে। একইসঙ্গে এই সময়ে ডেঙ্গুতে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে।
রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়েছে, হাসপাতালে নতুন ভর্তিদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ১৩৬ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫৫ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৪৮, ঢাকা উত্তর সিটিতে ৩২ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ২৮, খুলনা বিভাগে ৪১ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১০ জন এবং রাজশাহী বিভাগে ৩৩ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
এদিকে গত এক দিনে সারাদেশে ৩৪৯ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছর ছাড়পত্র পেয়েছেন ৮ হাজার ৭২৮ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এবছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৯ হাজার ৮৬৭ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তবে বছরের এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ৪২ জনের।
সারাদেশে করোনা ভাইরাসের নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট এর সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় পর সিলেট এ ভাইরাসে আক্রান্ত একজনের মৃত্যু হয়েছে।
শনিবার দুপরে এ তথ্যটি নিশ্চিত করেছে সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। নতুন করে করোনার আক্রমন শুরুর পর সিলেটে প্রথম এই কোন রোগী মারা গেলেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, করোনায় আক্রান্ত ৬৯ বছর বয়েসি পুরুষ ১৯ জুন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে মারা যান তিনি। এছাড়া সিলেটে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২০ জন বলে জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার মো. মিজানুর রহমান জানান, নিহত ব্যক্তির বাড়ি সিলেট সদর উপজেলায়। তিনি করোনা ছাড়াও আরও অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত ছিলেন।
চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে; গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন আরও ছয়জন। এ নিয়ে চলতি জুন মাসেই জেলায় করোনায় মৃতের সংখ্যা সাতজনে দাঁড়াল।
২৮ জুন চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে পাঠানো সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জেলার মিরসরাই উপজেলার বাসিন্দা সালেহা বেগম (৪০) নামে এক নারী শুক্রবার নগরের জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আগে থেকেই তিনি হৃদরোগসহ নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।
এদিকে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৯১টি নমুনা পরীক্ষা করে ছয়জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে চারজন নগরের এবং দুজন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা।
শনাক্ত হওয়া রোগীদের মধ্যে নগরের শেভরন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চারজন এবং এভারকেয়ার হাসপাতালে দুজনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে চলতি জুন মাসে মোট ১৩০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে ৬৬ জন পুরুষ, ৬৩ জন নারী ও একজন শিশু রয়েছে।
মশাবাহীত রোগ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশালের দুই জেলায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময় গোটা বিভাগের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন আরও ১০৫ জন আক্রান্ত রোগী। এ নিয়ে বর্তমানে বিভাগের ছয় জেলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন। মৃত্যুবরণ করা দুজন হলেন- বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার কালিকাবাড়ি এলাকার বাসিন্দা আ. করিম (৫০) ও পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নের রাজপাড়া এলাকার মো. ইউসুফ খন্দকার (৭২)। এর মধ্যে আ. করিম বরিশাল শেরইবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতালে ও বৃদ্ধ মো. ইউসুফ খন্দকার কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। গতকাল শুক্রবার দুপুরে বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বর্তমানে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা উদ্বেগ ও আশঙ্কাজনক। এ পরিস্থিতি থেকে বেরোতে হবে। চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ জরুরি। তাই মশার বিস্তার রোধ করতে বাড়ির আশেপাশে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে। মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষায় ব্যবস্থা নিতে হবে।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ৪ হাজার ৩০৫ জন। এদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। বর্তমানে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন।
বরগুনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। মৃত ১১ জনের মধ্যে ছয়জনেরই বরগুনার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে। শুধু মৃত্যুই নয় এ জেলায় আক্রান্তের সংখ্যাও বেশি, বরগুনা জেলায় এ পর্যন্ত ২ হাজার ৬৩২ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
মন্তব্য